সুখের সন্ধানে পর্ব ৯

0
678

#সুখের_সন্ধানে
#পর্ব_৯
রাত বারোটার দিকে সেলিম রুমে ফিরল। ওর কাছে ডুপ্লিকেট চাবি আছে। রুমের লাইট অফ করাই ছিল। আমি একটা সাদা গাউন পরে শুয়ে পড়েছিলাম। সারাদিন অনেক জার্নি করাতে কিছুটা বিধ্বস্ত। তাই বিছানায় গা এলাতেই ঘুম চলে এসেছিল। তবে খুব গভীরভাবে আমি কখনোই ঘুমাই না। কান প্রচণ্ড সজাগ থাকে আমার। একটু খুট করে শব্দ হলেই আমি টের পেয়ে যাই।
সেলিম যে ঢুকেছে রুমে এটা আমি নিশ্চিত ছিলাম। সেলিম শরীর থেকে ভেসে আসা ডার্ক আর সেনসুয়াল স্মেল আমার ভীষণ চেনা। সেলিমের পছন্দের এই ওডি লাকসত হোয়াইট ক্ল্যাসিক পারফিউমের উডি ফ্লোরাল লেমনি স্পাইসি নোট দিয়ে শুরু হয় আর শেষে থাকে সেনসুয়াল লেদার সুয়েড উডি নোটস। আমার খুব পরিচিত আর পছন্দের স্মেল এটা। তাই এ ব্যাপারে ভুল করার মত মানুষ আমি না। আমি কোনো সাড়াশব্দ না দিয়ে চুপচাপ শুয়ে আছি। মনে মনে ভাবছি সেলিম কতটা বোকা হবে আমাকে তার বেডে দেখে। সে হয়তো ওই কালনাগিনীকে ভেবেছে এতক্ষণ। হেলেনের সেল ফোন আমি সিজ করেছি। আর কাদেরকে বলেছি একটা রুমে বন্দি করে রাখতে। তাই এতক্ষণেও যে সেলিমের কাছে তার এই দুর্দশার কথা জানাতে পারেনি এটা নিশ্চিত ছিলাম।
সেলিম কিছুটা ফ্রেশ হয়ে সোজা বেডে চলে আসল। আমার বুকের ভেতরর ঢিপঢিপ বেড়েই চলছে। বেশ লম্বা বিরতির পর সেলিমের কাছাকাছি আসা আমার।
সেলিম বেডে বসেই বেডসাইড লাইট অফ করে দিয়েছে।
কিন্তু রুমে জ্বালানো বেগুনী ডিম লাইটের আভায় পুরো রুমে যেন রোমান্টিকতার আলোকচ্ছটা ঝড়ে পড়ছে। সাথে সেলিমের শরীর থেকে ভেসে আসা সেই খুব পরিচিত সেনসুয়াল স্মেল আমাকে মোহাবিষ্ট করে তুলছে। চারপাশের পরিবেশ যে আমার সাথে বিট্রে করা শুরু করেছে আমি টের পাচ্ছি অলরেডি। আমি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম কোমরে কাপড় গুঁজে সেলিমের কাছে হেলেনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করব সেই আশায়।
সেলিম আমার শরীর স্পর্শ করার সাথেই মনে হলো আমি অলমোস্ট এইটি পার্সেন্ট নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি। দীর্ঘ সময় পড়ে থাকা শূণ্য হৃদয়ে চৈত্রের দাবদাহের মাঝে যেন এক পশলা শ্রাবণধারা প্লাবিত হচ্ছে। এরজন্য চারপাশের পরিবেশটাই দায়ী।
টেবিলল্যাম্পের পাশেই ফ্লাওয়ার ভাসে রাখা রজনীগন্ধার সৌরভ আর বেগুনী আভায় আমার ভেতরে স্বপ্ন ঝিলমিল করে ওঠে। সেলিমের শরীরের লেমনি স্পাইসি সেনসুয়াল স্মেল আমাকে এলোমেলো করে দিলো মুহূর্তে। নিজের মনই নিজের সাথে বেঈমানি করতে শুরু করল। আমি বুঝতে পারলাম এই মুহূর্তে সেলিমের কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই। সব পরিকল্পনা বাতিল।
শরীরে সেলিমের লোমশ হাতের উপস্থিতি আমাকে বিমোহিত করে তুলছে দমকে দমকে। সেলিম আমার চুলে নাক ডুবাতেই আমি সেলিমের দিকে ঘুরলাম। এক ঝটকায় উঠে সেলিমকে বুকের সাথে চেপে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলাম। মনে হলো বৈদ্যুতিক শকড খাওয়ার মত সেলিম কেঁপে উঠল। কোথায় আমি তাকে জিজ্ঞেস করব যে তার বিছানায় একটা নারীদেহ দেখেই সে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ না করেই তার শরীরে হাত দিয়েছে কেন তা না করে আমি নিজেই নেশাগ্রস্ত।

– রুম্পা! তুমি? হোয়াট আ সারপ্রাইজ! আমি ভুল দেখছি না তো!
সেলিম দু হাতে আমার মাথাটা তার বুক থেকে টেনে এনে তার মুখের সামনে রাখল। দু জোড়া চোখ একে অন্যকে তৃপ্তির সাথে শুধু দেখেই যাচ্ছে। আমার দু’চোখের কোণা বেয়ে গড়িয়ে পড়া জলটুকু সেলিম তার হাত দিয়ে মুছে দিলো!

– তুমি কখন এলে? কিছুই তো জানালে না। আমি তো অবাক হয়ে ভাবছি আমার বিছানায় কে এল? কার এত সাহস? তবে তোমার পেছন সাইডটা দেখেই আন্দাজ করে ফেলেছিলাম। তাছাড়া তুমি ছাড়া এই অধিকারও কারো নেই যে আমার বিছানায় এসে শোয়া তো দূরের কথা, কেউ বসবে?

আমি অবাক হয়ে সেলিমের বানানো মিথ্যে কথাগুলি শুনছিলাম।

– আ… আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। তুমি খুশি হওনি ?

– অফকোর্স। খুশি হবো না কেন? খুব মিস করছিলাম তোমাকে। সিলেটে আরো সপ্তাহখানেক দেরি হবে ভেবে একবার তোমাকে আসতে বলতে চেয়েছিলাম পরে ভাবলাম তুমি ব্যাংকক থেকে এলে মাত্র তাই আর বলিনি। পৌঁছেছ কখন?

– এই তো! সন্ধ্যার আগেই। আমিও তোমাকে মিস করেছিলাম খুব। তাই চলে এলাম। ভুল করিনি তো!

– ভুল করবে কেন? এসেছ ভালোই হয়েছে। কাজের ফাঁকেফাঁকে ঘুরতে যাওয়া যাবে। সিলেট অনেক সুন্দর। তোমার তো আগে এখানে আসা হয়নি। এখন অবশ্য আমাদের নিজস্ব ফ্যাক্টরি হচ্ছে । চাইলেই আসতে পারবে।

সেলিম আধশোয়া অবস্থায় বিছানায় বসা। আমার মাথাটা তার বুকের উপর। আমার চুলের ভেতর সেই আগের মতো আঙ্গুল চালাচ্ছে আর কথা বলছে। হঠাৎ করে সেলিমের এত মহব্বত দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছে। চোর ধরা পড়লে যে অবস্থা হয় সেলিমেরও একই দশা। সেলিম হয়ত মনে মনে ভাবছে তার হেলেন কোথায় উধাও হলো। আমার রাগ হবার পরিবর্তে হাসি পাচ্ছে খুব।

আমি ওয়াশরুমে যাবার নাম করে ওয়াশরুমের দরজার আড়াল থেকে উঁকি মেরে সে কী করছে সেটা দেখার দেখার চেষ্টা করলাম। আমার ধারণাই সত্যি । তড়িঘড়ি করে ফোন হাতে নিয়ে একটা নাম্বারে ডায়াল করল। আমি বুঝতে পারলাম এটা ওই হেলেন ডাইনিকেই করেছে। পরপর দুইবার একই নাম্বারে ডায়াল করছে । দুইবার কেন এক’শ বার করলেও কাজ হবে না। ওর ফোন কাদের বন্ধ করে রেখেছে। এবার আরেকটা নাম্বার সার্চ করছে মনে হলো। তখনই বুঝলাম যে সে তার কোনো ইমিপ্লয়ীকে হয়তো হেলেনের ব্যাপারে জানার জন্য কল করছে। কিন্তু সেই সুযোগ তাকে দেয়া যাবে না। আমি দ্রুত চলে এলাম।

– কী ব্যাপার ! কাউকে কল দিচ্ছিলে মনে হচ্ছে?

– না মানে! হ্যা , একজনকে কল দিচ্ছিলাম। কিন্তু খুব জরুরী না। চলো গল্প করি। ব্যাংককের গল্প শোনাও । কী করলে সেখানে এ ক’দিন?

সেলিমের এত পরিবর্তন কেন সেতো আমি বুঝতেই পারছি। আমি আর তার সামনে কিছুই বুঝতে দিলাম না। ওর ভেতরের এই ভয়টুকুই আমার হাতিয়ার। একবার যদি সে বুঝে যায় যে আমি তার আর হেলেনের ব্যাপার জানি তবে সে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে। তখন আমার কিছুই করার থাকবে না। এমনিতেই সেলিম আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যতটুকু যা আছে সেটুকুই এখন একমাত্র আশা। এতদিন সেলিম আমার থেকে দূরে দূরে থাকলেও আমি জানতাম আমিই সেলিমের জীবনে একমাত্র নারী। তাই কখনও ভয় হতো না। কিন্তু যখন জানলাম সেলিম আর সেই আগের সেলিম নেই। তখন থেকে অজানা ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠছে । আমি যদি নীরার মত মেয়ে হতাম তবে হয়ত এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথাই থাকত না। সেলিম তার মতো থাকত আর আমিও আমার মতো। কিন্তু আমি শত চেষ্টা করলেও সেলিমের জায়গায় আর কাউকে বসাতে পারব না। আমার বিবেক তা করতে দিবে না। এতদিন সেলিমের থেকে দূরে থাকাটাই আমার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে । সেলিম সেই সুযোগে অন্য ভুবনের বাসিন্দা হবার পায়তারা করছে। কিন্তু এত সহজে হাল ছাড়া যাবে না।

পরদিন সকালে সেলিমের আগেই আমি ঘুম থেকে উঠে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে তাকে ডাকলাম। আজ সেলিম সকালে উঠেই যে কাজটি করবে সেটা আমার জানা। তাই ভেবে রেখেছি সেলিমের সাথে ছায়ার মতো থাকতে হবে।
সেলিমের সাথে নাস্তার জন্য ডাইনিং টেবিলে বসে আছি। সেলিম এদিক সেদিক দেখছে। হয়ত হেলেনকেই খুঁজছে । আমি কাদেরকে ফোন করে আগেই সব সিস্টেম করে রেখেছি।
কাদের ইচ্ছে করেই ডাইনিং এর দিকে ঘুরঘুর করছে যাতে অন্য কাউকে হেলেনের কথা জিজ্ঞেস না করে কাদেরর কাছেই ওই ডাইনির খোঁজখবর নেয় সেলিম।

– কাদের, এদিকে আসো তো!

– স্যার কোনো সমস্যা?

– কিছুই না। আচ্ছা, বলতো আমার পিএস মানে হেলেন কোথায়? দেখছি না কোথাও।

– কাদের কিছু বলার আগেই আমি বলে উঠলাম, ওই ডাইনীটার কথা বলছ?

– ডাইনী ? হু ইস ডাইনী?

– তোমার পিএস!

– সেলিম একটু নড়েচড়ে বসে বলল, তুমি চেন নাকি? কী করেছে সে?

– গতকালই চিনেছি। কাদেরের কাছে জানলাম সে তোমার পি এস। ডিসগাস্টিং! এ ধরণের চোর ছ্যাঁচড় তোমার পিএস হয় কী করে ভেবে পাচ্ছি না।

– মানে? চোর? কী করেছে সে? কোথায় সে?

– কাদের মাথা নিচু করে চোরের মত করে বলল, হেলেনকে ম্যাডাম পানিশমেন্ট দিয়েছেন।

– হোয়াট? কী করেছ ওর সাথে ? সী ইজ নট আ থিফ! আই থিংক তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে , রূম্পা।

ডাইনীটার জন্য দরদ যে উথলে উঠবে সে আমি জানতাম । মন চাচ্ছে ওই ডাইনীটাকে যেভাবে থাপ্পড় মেরেছি ঠিক সেই ভাবে সেলিমের গালেও বসিয়ে দেই দুইটা । কিন্তু সেই ক্ষমতা বা সাহস কোনোটাই আমার নেই।

– আমি কোনো ভুল করিনি , সেলিম। আগে শান্ত হয়ে শোনো। তোমার ইমপ্লয়ি তাই তোমার হয়তো শুনতে খারাপ লাগছে।

– কী করেছে সে?

– গতকাল আমি তোমার রুমে ঢুকে দেখি সে আগে থেকেই তোমার রুমে ঢুকে বসে আছে। সে তোমার আলমারী খুলে কিছু একটা খুঁজছে । আমি পরিচয় জিজ্ঞেস করাতে উলটো আমার উপর ক্ষেপে যায়। আমাকে বলে আমি নাকি কল গার্ল। আমিও এ কথা শুনে ক্ষেপে গেলে সে বলে সে নাকি তোমার সাথেই ওই রুমে থাকে । সে কোনো চোর না। কত বড় একটা বাজে কথা। একবার ভাবতে পারো ? এবার তুমি বলো পৃথিবীর কোন স্ত্রী তার স্বামীর নামে এমন বদনাম শোনার পর নিজেকে স্থির রাখতে পারবে? আমার নামে তোমাকে কেউ এমন বললে তুমি তাকে কী করতে? তুমি যেটা করতে আমিও সেটাই করেছি । কাদের আমাকে বলেছে উনি তোমার ইমপ্লয়ী তাই পুলিশে না দিয়ে একটা রুমে বন্দী করে রেখেছি। তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। গতকাল বেশ রাত হয়ে যাওয়ায় আমি তোমাকে কিছুই জানাইনি। ভেবেছিলাম নাস্তার পর সব জানাব। সেলিম , আমি ওকে আর এক মুহূর্ত এখানে দেখতে চাই না। শুধু এখানেই না। আমি চাই তুমি এই মুহূর্তে জব থেকে ফায়ার করে দাও। এ ধরণের মেয়ে মানুষ কারো পিএস হবার যোগ্যতা রাখে না। ব্যবসা বাণিজ্য পবিত্র স্থান। সেখানে এ ধরণের লো ক্লাস মেয়ে মানুষের জন্য পরিবেশ নষ্ট হোক আমি চাই না। তাছাড়া প্রিয় আসছে আগামীকাল । আমি চাই না ও এসে এই বাজে মেয়ের চেহারা দেখুক। ওর কোনো ভরসা নেই। ও প্রিয়র সামনেও তোমাকে জড়িয়ে কি না কি বাজে কথা বলে ফেলে। তাই আমি কোনো রিস্ক চাই না।

– প্রিয় আসছে? ওহ মাই গড ! এতক্ষণে বললে?

– ভেবেছিলাম সারপ্রাইজ দিব। কিন্তু এখন বাধ্য হয়ে বলতেই হলো। ছেলে বড় হয়েছে। সতেরো বছর বয়স। এনাফ ম্যাচিউরড। তার কাছে তার বাবাকে জড়িয়ে এসব কথা নিশ্চয়ই সে এলাউ করবে না। তাছাড়া ও যে পরিমাণ জেদী আর রাগী তা তো জানোই। তার উপর তোমার পিএসের চলাফেরাও বেশি খোলামেলা। ছেলের সামনে খুবই দৃষ্টিকটু লাগবে। মেয়েটা যে পরিমাণ বেহায়া ওর বিশ্বাস নেই। এসব আজেবাজে কথা যদি সে সবার কাছে বলে বেড়ায় ?
– কিন্তু এ সময় প্রিয়?
– আমি সিলেট আসছি শুনে সেও জিদ ধরল আসার। একসাথে লাস্ট কবে আমরা ভেকেশানে গিয়েছি তোমার মনে পড়ে? আমি হোস্টেল সুপারের সাথে কথা বলেছি। উনি এগ্রি করেছেন। এক সপ্তাহের ছুটি পেয়েছে প্রিয়। আমি আব্বার কাছে শুনলাম তুমি নাকি এখানে আরো সপ্তাহখানেক থাকবে তাই ভাবলাম বাকী সময়টা আমরা একসাথেই থাকি। তোমার কাজের ফাঁকেফাঁকে আমাদের সাথে থাকলে। আর বেশি ব্যস্ত থাকলে আমরা মা ছেলে একটু ঘুরলাম।

– খুবই ভালো করেছ। কতদিন বাপ ব্যাটা একসাথে ঘুরি না। জম্পেশ একটা ভ্যাকেশান হবে প্রিয়র। তাছাড়া এখানে নতুন বিজিনেস প্লান সম্পর্কেও কিছুটা বুঝুক।

– থ্যাংক ইউ ! ভয়ে ছিলাম খুব। আচ্ছা , এখন বলো ওই বেয়াদবটার কী করবে?

– ওহ! আচ্ছা, কাদের তুমি ওকে নিয়ে আসো?

কিছুক্ষণের মধ্যেই কাদের ওই ডাইনীটাকে নিয়ে হাজির। চেহারা দেখার মতো। পুরাই বিধ্বস্ত। সেই গোলাপি গোলাপি গাল কোথায় এখন আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। গতকাল রাত থেকে কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। এক বোতল পানিসহ স্টোররুমে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। ছাড়া পেয়ে কেমন ফোঁসফোঁস করছে। আমাকে যেন চোখ দিয়েই ভস্ম করে দিবে মনে হচ্ছে। আমার খুব হাসি পাচ্ছে ওর এই অবস্থা দেখে। আমি আড় চোখে সেলিমের চেহারা দেখার জন্য তাকিয়ে আছি তার দিকে। সেলিমের চেহারা দেখে কিছু বোঝার উপায় নেই ভেতরে কী চলছে। তবে এতটুকু মনে হচ্ছে হয়ত সেও বিরক্ত হেলেনের উপর। হেলেন আমার কাছে সত্যটা স্বীকার করেছে এটা নিশ্চয়ই তার কাছে ভালো লাগেনি। সেলিম ভাবছে আমি বুঝি কিছুই বুঝিনি। আমাকে তুমুল বোকাসোকা মনে হচ্ছে তার এই মুহূর্তে।

– স্যার! কই ছিলেন গতকাল? প্রায় কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল, হেলেন।

– এ কী অবস্থা তোমার?

– স্যার , এরা আমাকে অভুক্ত অবস্থায় অন্ধকার একটা স্টোররুমে সারারাত বন্দি করে রেখেছিল। দেখেন কী অবস্থা আমার। আমি অন্যায় কী করেছি সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।

– রূম্পা , এসব কী বলছে?

– রিসোর্টে এক্সট্রা কোনো রুম ছিল না যেখানে তাকে বন্দি করা যায়। আমি তো পুলিশেই দিতাম । কাদের এর পীড়াপীড়িতেই না এখনো মুক্ত বাতাস নসীবে জুটছে। চোর কোথাকার। আমার তো মনে হয় এই কাদেরও জড়িত এর সাথে। নইলে ওকে পুলিশে দিতে নিষেধ করল কেন?

– ম্যাডাম , এসব কী বলছেন? আমি এতবছর আপনাদের সাথে আছি। আমি তো স্যারের ডিসিশান জানার অপেক্ষায় ছিলাম।

– এমন মানুষের সাথে তোমার স্যারও নিশ্চয়ই আদর আপ্যায়ন করবে না। ওর মতো একটা ইডিয়ট এখানে এতদিন কী করে আছে সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। আমাকে বলে কি না, ছিঃ!
কথাগুলি বলা শেষ করে সেলিমের ভাবগতি বোঝার চেষ্টা করছি।

– কাদের !
– জি স্যার!
– ক্যাশ থেকে ওকে কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করে দাও।
– স্যার , প্লিজ! এসব কী বলছেন । আমি কোনো অন্যায় করিনি। আমি তো আপনার রুমে এ এ…
– শাট আপ । কথা শেষ করার আগেই সেলিম হেলেনকে থামিয়ে দিলো।

আমি বুঝতে পারলাম ওই বোকা হেলেনের মুখ বন্ধ করার জন্যই সেলিম এবাবে ধমক দিয়েছে। আমার বেশ মজা লাগছে । সেলিম ভাবছে আমি কিছুই জানি না। আমিও চাই না সেলিম কিছু জানুক। চিৎকার চেঁচামেচি করতে আমার ভালো লাগে না। আর তার পা ধরে কান্নাকাটি করে অধিকার আদায়ের জন্য মাথা কুটে মরার মত মেয়েও আমি না। থাক না এভাবে । দেখা যাক কী হয়? কোথাকার জল কোথায় যেয়ে গড়ায়?

– ঢাকায় যেয়ে অফিস থেকে এ মাসের এবং আগামী মাসের স্যালারি নিয়ে নিবে। আমি বলে দিব। আমার অফিসের ত্রি সীমানায় যেন আর না দেখি। আর হ্যা , ঢাকায় কীভাবে যাবে ট্রেনে নাকি বাসে? আর চাইলে কাদের এয়ার টিকেট করে দিতে পারে।

সেলিমের দরদ যেন উথলে উঠছে। তাকে আবার এয়ার টিকেট অফার করছে। আমি তো বুঝতে পারছি ভেতরে ভেতরে কতটা পুড়ছে ওই ডাইনিটার জন্য। কিন্তু ওর বোকামীর জন্য ওকে রাখতেও পারছে না। তার উপর যাও রাখবে সেই রাস্তাটাও বন্ধ করে দিয়েছি প্রিয়র কথা বলে। প্রিয়ই আমার একমাত্র ঢাল এই যুদ্ধে জয়ী হবার। আমি ঢাকা বসেই সব প্লান করে এসেছি। কী করে কী করতে হবে সবই প্লানড। জানি এই হেলেনকে জব থেকে বের করলেই সেলিম ভালো হয়ে যাবে না। হয়ত গোপনে ওর সাথে ঠিকই যোগাযোগ রাখবে। অথবা এক হেলেন গেলে আরেক হেলেন আসবে। যাদের কাছে টাকা আছে তাদের কাছে এমন হাজারটা হেলেন রেডি করা এক সেকেণ্ডের ব্যাপার। তবুও আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা আমার প্রথম বিজয়।

– স্যার, আমি এখানেই থাকতে চাই। প্লিজ! কাল যা কিছু হয়েছে সবই মিস আন্ডারস্টান্ডিং। আমি ম্যাডামকে চিনতে পারিনি। আ’ম ভেরি সরি ম্যাডাম। প্লিজ, জব থেকে ফায়ার করবেন না। আমার পুরো সংসার আমার ইনকামের উপর ডিপেন্ড করে । এই সময়ে হুট করে আরেকটা জব ঠিক করা আমার জন্য টাফ হয়ে যাবে।

– সেটা তোমার রুম্পাকে আজেবাজে কথা বলার আগেই ভাবা উচিত ছিল। আমি দু’মাসের স্যালারি তো দিয়েই দিচ্ছি। জব পেয়ে যাবে অন্যত্র।

– স্যার , এখন জব জোগাড় কতটা টাফ আপনি তো জানেনই।

– টাফ হবে বাট ইম্পসিবল তো নয়। ট্রাই করলেই পেয়ে যাবে। আর এ ক’মাসে যা কামিয়েছ তাতে বেশ ক’মাস বসে খেলেও অসুবিধা হবে না , বললাম আমি।

– প্লিজ, ম্যাম! আমাকে দয়া করুন।

– আচ্ছা, কথা বাড়িয়ে লাভ নেই । ডিসিশান ফাইনাল। তুমি কীভাবে যাবে বলো। আমি টিকেটের ব্যবস্থা করে দেই। বলল, সেলিম।

– বেগারস হ্যাভ নো চয়েস। কথাটা ভুলে গেছ, সেলিম। ওকে বাসের বা ট্রেনের টিকেট করে দাও কাদের। হেলেন কিছু বলে ওঠার আগেই বললাম আমি।

– সেলিম আর কিছু না বলে কাদেরের মুখের দিকে তাকিয়ে পানসে গলায় বলল, ওকে ট্রেন বা বাসের টিকেট যা পাও কেটে তাতে করো এখান থেকে। প্রিয় আসার আগে বিদায় করো।
অসহ্য ।

কথাগুলি বলেই সেলিম রাগে গজগজ করতে করতে সেখান থেকে উঠে গেল।

আমিও সেলিমের পিছুপিছু উঠে রওয়ানা হলাম। যাওয়ার আগে কাদেরকে একটা ইশারা দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম তাড়াতাড়ি এটাকে বিদেয় করতে। কয়েক সেকেণ্ডের জন্য হেলেনের সামনে দাঁড়িয়ে তার চোখের দিকে তাকিয়ে বিজয়িনীর হাসি হেসে সেখান থেকে চলে এলাম।

চলবে

আগের পর্ব-
https://www.facebook.com/111576077291737/posts/340974064351936/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here