সুখের সন্ধানে পর্ব ১০

0
514

#সুখের_সন্ধানে
#পর্ব_১০
বহুদিন পর সেলিম আর প্রিয়র সাথে ভালো কিছু সময় কাটালাম। মনে হয়েছিল আমি বোধ হয় সেই পুরানো দিনগুলিতে ফিরে গিয়েছিলাম । শুরুর দিকে এমনই ছিল আমার দিনগুলি। ধীরে ধীরে সেলিম আর আমার মাঝে দুরত্ব বাড়তে থাকে। আমি নিঃসঙ্গ জীবন বেছে নিই। ছেলেটা কাছে থাকলে হয়ত এই নিঃসঙ্গতা কিছুটা হলেও কম হতো। সেলিমের সাথে দুরত্বও এত খারাপ পর্যায়ে পৌঁছাত না।

ঢাকায় পৌঁছেছি গতকাল। প্রিয় আগামীকাল চলে যাবে। মনটা ভীষণ খারাপ আমার। একদিকে সেলিমের টেনশান অন্যদিকে প্রিয় চলে যাবে ভাবতেই পারছি না। সেলিম চাকরিতে না রাখলেও ওই হেলেনের সাথে আবার যোগাযোগ যে করবে সেটা আমি নিশ্চিত। কারণ এই ধরণের মানুষ সহজে শোধরায় না। তবে কাদেরের সাথে কথা বলে যতটুকু বুঝতে পেরেছি। সেলিম হয়ত এই প্রথমই কারো সাথে এ ধরণের রিলেশানে জড়িয়েছে। তাই কিছুটা স্বস্তি। আপাতত এটুকু স্বান্তনা যে আমাকে সেলিম এ ব্যাপারে এখনো ভয় পায়। অবশ্য সে ওপেন কিছু করলেও আমার কোনো শক্তি সামর্থ্য নেই যে তা দিয়ে তাকে ঠেকাতে পারব। সেলিম যে ধরণের পরিবারের ছেলে তাতে এ ধরণের দু’চারটা হেলেনের সাথে সম্পর্ক রাখা তাদের কাছে কিছুই না। এই সোসাইটিতে এটা এক ধরণের বিলাসিতা। অনেকের সাথে মিশেছি এত বছরে। অনেক দেখেছি। সেলিম যদি সত্যিই এটাকে বিলাসিতার পর্যায়ে ভেবে থাকে তবে অপারগ হয়ে হয় সব সহ্য করে আমাকে সংসারে জড় পদার্থের মতো পড়ে থাকতে হবে নয়তো অপমানের যন্ত্রণা মাথায় নিয়ে সংসার ছাড়তে হবে। কারণ সেলিমের সাথে লড়াই করার মতো শারীরিক বা মানসিক কোনো সাপোর্ট পাবার মতো আমার কোনো রাস্তা নেই। আমার শ্বশুর শাশুড়িকে বলে যে কোনো লাভ হবে না সেটা মালিহার সেদিনের কথায়ই বুঝতে পেরেছি। এই মুহূর্তে আমার কী করা উচিত বুঝতে পারছি না। অনেক ভেবে চিন্তা করেছি এই মুহূর্তে আমার একমাত্র হাতিয়ার , একমাত্র ভরসা আমার সন্তান, আমার প্রিয়। ওকে কাছে রাখাটা খুব বেশি জরুরী। ও কাছে থাকলে আমার আর সেলিমের সম্পর্কও স্বাভাবিক হতে পারে। প্রিয় এখন যথেষ্ঠ বড় হয়েছে । সে এখন অনেক কিছুই বুঝে। ওকে জানাতে হবে সত্যিটা । কাদেরের সাথে কথা বলে যতটা বুঝেছি তাতে আমি নিশ্চিত যে এই হেলেন নামের অশান্তি এত তাড়াতাড়ি সেলিমের পিছু ছাড়বে না।

সেলিম এখনো ফিরেনি। আগামীকাল প্রিয় চলে যাবে । মনটা ভীষণ খারাপ আমার। আমি অনেক ভেবেচিন্তে প্রিয়র রুমে গেলাম। দেখলাম প্রিয় কিছু গোছাগুছিতে ব্যস্ত।

– কী করছ , বাবা। দাও আমি গুছিয়ে দেই।

– না, আম্মু। আমিই করছি। ওখানে তো সবই করতে হয় নিজেকে। আমার অভ্যাস আছে । তোমাকে কষ্ট করতে হবে না। তুমি বসো। গল্প করি আর গুছিয়ে ফেলি। আবার কবে দেখা হয় কি জানি। আমাকে আবার দাদু আর দিদার সাথে দেখা করতে বের হতে হবে। দিদা ফোন দিয়েছিল উনিই আসতে চেয়েছিল । কিন্তু হঠাৎ করে উনার প্রেসার বেড়ে গেছে নাকি। শরীরটা খারাপ লাগছে তাই আসতে নিষেধ করেছি। আমিই যাচ্ছি দেখা করতে। দাদুও এসে যাবে এর মধ্যে বাসায়। দাদুর সাথেও কথা বলেছি।

– তাই নাকি? আচ্ছা, তবে তোমার সাথে আমিও যাব ওখানে। তোমার দিদাকে দেখে আসি।

– আচ্ছা, তবে তো ভালোই হলো। উনারা তোমাকে দেখলেও খুশি হবেন।

– আমাকে দেখে আর কী খুশি হবে সেটা তো আমিই জানিরে, বাবা। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম আমি। যাক ওসব বাদ দাও। তোমাকে আর ক’টা দিন কাছে রাখতে পারলে আমি তোমাকে তোমার টুম্পা মায়ের কাছে নিয়ে যেতাম। ভীষণ খুশি হতো তোমার টুম্পা মা।

– টুম্পা মায়ের সাথে দেখা করার আমারও ভীষণ ইচ্ছা ছিল। যাক নেক্সট বার ইন শা আল্লাহ। টুম্পা মায়ের সাথে রিলেশান ওকে করেছ জেনে খুব ভালো লাগছে।

– হুম। আমারও খুব ভালো লাগছে। আচ্ছা, বাবা। যে কথা বলার জন্য এখানে এসেছি। হাতের কাজটুকু রেখে একটু বসো। কথাগুলি মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে তোমাকে। এটা তোমার কাছে বলা ঠিক হচ্ছে কি না জানি না। তবে আমার মনে হয় তু্মি যথেষ্ঠ বড় হয়েছ। কিছু কথা জানা প্রয়োজন তোমার।

– কী হয়েছে আম্মু? এভাবে বলছ কেন? কিছু কী হয়েছে ?

– বাবা, তুমি আমাদের একমাত্র সন্তান। তোমার শখ হয়েছে তাই ক্যাডেটে পড়াচ্ছি। আমরাও বাঁধা দেইনি তোমাকে। এ বছর তু্মি সেকেন্ডারি লেভেল শেষ করবে। আমি চাই এরপর থেকে তুমি আমাদের কাছে এসে থাকো। তু্মি এভাবে দূরে থাকো আমরা চাই না। তু্মি কী আমাদের কষ্ট বুঝতে পারছ না? একমাত্র ছেলেকে দূরে রেখে এভাবে থাকাটা কত কষ্টের নিজে বাবা হলে বুঝবে।

– খানিককাল থম মেরে থেকে প্রিয় বলল, আব্বুও কী তাই চায়?

– তোমার আব্বু ব্যস্ত মানুষ। তারও খারাপ লাগে তো অবশ্যই। কিন্তু তার হয়ত কাজকর্মের ব্যস্ততার কারণে খারাপ লাগাটা ততটা অনুভব করে না। কিন্তু আমার কথা কখনো ভেবেছ? আমি কী করে একা একা কাটাই? এভাবে থাকলে পাগল হয়ে যাব আমি।

– কিন্তু আম্মু।

– কোনো কিন্তু না রে ,বাবা। তুমি বাসায় চলে আসো। আরো কিছু সমস্যা আছে। তোমার আসাটা খুব জরুরী।

– কী হয়েছে আম্মু? তোমাকে কেমন যেন লাগছে।

– বাবা, এতদিনে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ এ বাড়িতে তোমার মায়ের মূল্য কতটুকু! তোমার দাদু দিদার কাছে আমি শুধুমাত্র তোমার মা ছাড়া আর কোনো পরিচয় বহন করি না । সেটা কষ্ট করে মেনে নিলেও তোমার আব্বুর কাছে একই আচরণ মেনে নিতে পারব না।

– কেনো আব্বু কী করেছে?

– তু্মি বড় হয়েছ। হয়ত বুঝবে। তাই বলছি । এসব কথা না জানাই তোমার জন্য ভালো । কিন্তু না বলে পারছি না।

– এত হেজিটেট না করে বলে ফেলো, আম্মু। কী করেছে আব্বু?

– তোমার আব্বু এক্সট্রা ম্যারিটাল এফেয়ারে জড়িয়ে পড়েছে। আর কিছু জানতে চেও না ,বাবা। আমি যে এসব খবর জানি এটা তোমার আব্বু এখনো জানে না। জানলে আমার সমস্যা আরো বেড়ে যাবে। তাই টেকনিক্যালি হ্যান্ডেল করার চেষ্টা করছি আমি। আমি চাই আমার এই দুঃসময়ে তু্মিও পাশে থাকো।

– এসব কী বলছ? তুমি শিওর?

– হুম। খুব বেশি চিন্তা করো না। এমনিতেই আমি খুবই কন্সার্ন এসব নিয়ে। তবে তুমি পাশে থাকলে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলবে। তাই বলছি ফাইনাল এক্সাম দিয়ে তু্মি চলে আসো, বাবা।

প্রিয় কী বলবে বুঝতে পারছে না। এমন শকিং নিউজ কোনো ছেলের পক্ষেই মেনে নেওয়া সম্ভব না।

– আস্তে করে বলল, কার সাথে কিছু কি জানো?

– না, তেমন কিছু জানি না। তবে এ ব্যাপারে আমি শিওর। বললাম তো তুমি আর কিছু জানতে চেও না। আমি চাই না তোমার আব্বুর প্রতি তোমার শ্রদ্ধাবোধের এতটুকু কোনো ঘাটতি হোক। তবে এটুকু জেনে রাখো কতটা অসহায় হলে একজন মা তার ছেলের কাছে এমন একটা ব্যাপারে কথা বলতে পারে। তোমার আব্বুর সাথে এসব ব্যাপারে একদমই কথা বলবে না। এমন কি তোমার দাদু দিদার কাছেও না।

– বুঝতে পেরেছি। তিমি চিন্তামুক্ত থাকো। দেখি কি করা যায়।

– তোমার কিছুই করতে হবে না। তুমি শুধু আমার পাশে এসে থাকবে। তুমি পাশে থাকলেই আমার সাহস কয়েক শত গুণ বেড়ে যাবে। আর কেউ তখন পাশে না থাকলেও খুব বেশি খারাপ লাগবে না।

– আগে এক্সাম তো শেষ হতে দাও। দেখি ।

– তবে একটা কথা। তোমাকে যে চলে আসতে আমিই বলেছি এ কথা কারো সাথে শেয়ার করবে না। তাহলে আবার নতুন ঝামেলায় পড়তে হবে আমাকে।

প্রিয়কে নিয়ে আমি যখন ওর দাদুর বাসায় পৌঁছালাম তখন রাত এগারোটা । যেয়েই দেখলাম সত্যিই প্রিয়র দিদার অবস্থা বেশ খারাপ। ডায়াবেটিকস, বিপি সব নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ডাক্তার এসে চেক আপ করে গেছেন । সুগার লেভেল খুবই বেড়ে গেছে। উনি খুব বেশি অনিয়ম করেন। একে তো খাওয়া দাওয়ার কোনো ডিসিপ্লিন নেই তার উপর মেডিসিনও ঠিকঠাক খায় না। এ বেলা খেলে ও বেলা খায় না। মনে থাকে না নাকি অবহেলা কী জানি। প্রিয়কে পেয়ে যেন অর্ধেক সুস্থ হয়ে গেলেন। প্রিয় দাদির এমন অবস্থা দেখে খুব ঘাবড়ে গেল। দাদির খুব আদরের ছোটবেলা থেকে। একমাত্র নাতী বলে কথা। তার উপর বংশের বড় নাতী। প্রিয়কে পেয়ে আর কোনো কিছুরই খেয়াল নেই।

– দিদা, কী হাল করেছ নিজের? তুমি নাকি ঠিকঠাক নিজের খেয়াল রাখছ না?

– কী করব রে ভাই। বুড়ি হয়েছি । কিছুই মনে থাকে না।

– তাতে কী ! বাড়িতে আরো মানুষ তো আছে। দাদু আছে ,চাচ্চু, চাচী আছে , ফুপি আছে। তাছাড়া বাড়ি ভর্তি এত সার্ভেন্ট আছে কী করতে?

– যাদের কথা বললি এদের দেখতেই মানুষ লাগে চারজন করে এরা আবার আমার খেয়াল রাখবে কখন? আমার জন্য এদের সময় কই? আর চাকর বাকরের কী এসবের খেয়াল রাখার সময় আছে? আপন মানুষেরই সময় নেই। এরা কী করবে?

– এইটা কোনো কথা ! তাই বলে এমনভাবে অনিয়ম করতে থাকলে বিপদে পড়ে যাবে।

– কী আর করব? একটা নাতবউ এনে দিয়ে যা। আমার পাশে বসে আমার খেয়াল রাখবে সব সময়।

– সময় হলে সেটাও পাবে। আপাতত একটা কাজ করো। ফুপিকে বলো তোমার কয়েকটা কাপড় চোপড় ঝটপট হ্যান্ডব্যাগে দিয়ে দিতে।

– কেন ? আমি কোথাও যাচ্ছি?

– হুম! আমি দাদুর সাথে কথা বলে আসি আগে। তারপর তোমাকে বলছি। তুমি কাপড় প্যাক করাও। কী কী লাগবে ফুপিকে বলো। ফুপি, দিদার ব্যাগটা গুছিয়ে দাও। আমি আসছি এক মিনিট।

আমি বুঝতে পারছি না প্রিয় কী করছে। ও ওর দিদাকে কই নিয়ে যাবে?
আমি ওর দিদার পায়ের কাছে বসে পায়ের আঙ্গুল হালকা করে টেনে দিচ্ছিলাম। টুকটাক কথাবার্তা বলছিলাম উনার সাথে। এর মধ্যে প্রিয় আর ওর দাদু হাজির।

– দিদা, দাদুর থেকে অনুমতি নিয়েছি। তোমাকে ছাড়া থাকতে তার অসুবিধা তো একটু হবে তবে ম্যানেজ করবে।

– আরে ভাই আমি যাচ্ছিটা কই?

– আমার সাথে। মানে আমার সাথে কাল হোস্টেলে যাচ্ছ।

– মানে?

– মানে অতি সোজা। তুমি আমার বাড়িতে যাচ্ছ।

– এটাই তো তোর বাড়ি।

– জানি। আমার আরেকটা বাড়ি আছে সেখানে যাচ্ছ। আম্মু সারাক্ষণ বাসাতে থাকে । তার চাচী আর ফুপির মতো খুব বেশি ব্যস্ততা নেই । তোমার দেখাশোনা করতে পারবে। তোমার যে হাল শুনলাম তাতে প্রপার কেয়ার না হলে বিছানায় পড়তে হবে ক’দিন বাদে বাদেই। তোমার সুগার লেভেল যে পরিমাণ হাই তাতে তুমি সোজা হয়ে দাঁড়াও কীভাবে ভেবেই অবাক হচ্ছি। তার উপর হার্টেও সমস্যা। তুমি নাকি এক্সারসাইজও করো না। উলটাপালটা খাওয়ার রুটিন। সবই দাদু নালিশ করে দিয়েছে আমাকে। তাই আমার মনে হয় তোমার এই মুহূর্তে আব্বু আম্মুর সাথে থাকা দরকার। এরা দু’জনই আবার তুমুল স্বাস্থ্য সচেতন। আমাদের বাসায় খাবার দাবার খুব হিসেব নিকেশ করে রান্না হয়। জানোই তো তোমার ছেলে কেমন? এই যে খেয়ে খেয়ে গোল আলু হয়েছ এটা আমাদের বাসায় থাকলে আব্বুর চাপে পড়ে দেখবা ক্যামনে কত দ্রুত প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ফিগারে চলে আসো।

– কী যে বলিস রে। অনেক বড় হয়ে গেছে আমার ছোট দাদা ভাই টা। আমাদের ছেড়ে অতদূরে থাকিস কী করে রে ভাই? নারে ভাই। আমার পক্ষে এখান থেকে কোথাও যাওয়া সম্ভব নাহ। আমি ব্যালেন্সডভাবে চলব কথা দিলাম।

– দিদা, আমি যেটা বলেছি করো তো! এ বাড়িতে দাদু ছাড়া এমন কিছু নেই যে সেটা ছেড়ে কিছুদিন অন্যখানে যেয়ে থাকা যাবে না।

– আরে দাদু কিছু বলোতো!

– আচ্ছা, যাও তো। প্রিয় যখন বলছে যাও। কোথাও বেড়াতে তো যাও না। এই সুযোগে না হয় ছেলের বাসাতে বেড়ালে। আর তুমি বললে অফিস শেষে আমিও যেতে পারি। ও বাসাতে কোনোদিন তো সেভাবে যাইনিও । এবার না হয় একটু চেঞ্জ করলাম সিস্টেমের। বড় ছেলে আর ছেলে বউকেও একটু সেবা করার সুযোগ দেই।

– প্লিজ, মা। চলুন না। খুব খুশি হবো। আপনারা গেলে আমার কী যে ভালো লাগবে। আমার তো মা বাবা নেই। আপনারা ক’দিন যেয়ে থাকলে আমি সেই অভাবটা কিছুদিনের জন্য হলেও ভুলতে পারব। আপনাদের ছেলেও ভীষণ খুশি হবে। তাছাড়া প্রিয় যখন চাচ্ছে ওর কথাটা রাখলে ও খুব খুশি হবে। না হলে ভীষণ দুশ্চিন্তায় থাকবে আপনাকে নিয়ে।

আমার শ্বশুর শাশুড়ি আমার বাসাতে যাবেন, থাকবেন শুনে আমার কী যে খুশি লাগছে। প্রিয় আর ছোট নেই। আমি প্রিয়র উপর ভরসা করে ভুল করিনি। আমার ছেলে সত্যিই বড় হয়েছে।

প্রিয়র পীড়াপীড়িতে আমার শাশুড়ি আর না করতে পারলেন না। আমার জা আর ননদ তো অবাক। উনি যে যেতে রাজী হয়েছেন এটা কারো বিশ্বাসই হচ্ছে না। তবে প্রিয়কে যে উনারা না করতে পারেম না এটা ওরা জানে। আমার শাশুড়ি আগের থেকে কিছুটা সুস্থবোধ করছে । তাই এতটুকু জার্নিতে সে খুব অসুবিধা অনুভব করবেন না। তাছাড়া রাস্তাঘাটও একদম ফ্রি এখন। জ্যাম নেই কোথাও। শ্বশুর বললেন সে আগামীকাল অফিস শেষ করে যাবেন। তার কিছু কাপড় চোপড়ও নিতে বললেন।

নিচে এসে প্রিয় হঠাৎ আমার কানের কাছে চুপিচুপি বলল, খুশি হয়েছ? দিদার সাথে সম্পর্কটা কিছুটা সহজ হবে আশা করছি। আর আব্বুর ব্যাপারটা দেখছি। তুমি আব্বুর কাছাকাছি থেকো। দাদু দিদার সামনে স্বাভাবিক থেকো । দাদুকে কিছুটা আভাস দিয়েছি আব্বুর ব্যাপারে। দাদু কন্সার্ন এটা নিয়ে। তুমি জানলে খুশি হবে দাদু তোমার সাপোর্টে আছে। দাদু সবকিছু জেনে খুব কষ্ট পেয়েছে।

– কী বলছ? এইটুক সময়ের মধ্যে উনার সাথে এসব ব্যাপারেও কথা বলেছ? ছিঃ ছিঃ! উনি কী ভাবছেন আমাকে নিয়ে? আমি এসব কথা তোমাকে জানিয়েছি শুনে উনি আমার ব্যাপারে কী মনে করছেন আল্লাহ জানেন।

– কিছুই মনে করছে না। বরং খুশি হয়েছেন। দাদুর সাথে মন খুলে কথা বলতে পারো। দাদু তোমার আর দিদার সম্পর্ক সহজ করার জন্যই দিদাকে আমাদের বাসাতে পাঠাতে রাজী হয়েছেন। তুমি তোমার বেস্ট ট্রাই করো।

আমার ছেলেটা সত্যিই বড় হয়ে গেছে। ভাবতেই ভালো লাগছে। ও বাসাতেই খাওয়া দাওয়া সেরে রাত দুইটার দিকে বাসায় ফিরলাম। আমার শাশুড়ি কিছুটা ইততস্তবোধ করছে বোঝাই যাচ্ছে। আমি তার সাথে ফ্রী হওয়ার চেষ্টা করছি। আগেই ফোন দিয়ে উনার রুম ঠিক করে ফেলেছি। আমার পাশের রুমেই দোতলায় উনার থাকার ব্যবস্থা হলো। সেলিমকে কিছুই জানায়নি।

আমরা বাসায় পৌঁছাতেই আমাদের সাথে সে তার মাকে দেখে খুব অবাক। পরে প্রিয়র কাছে সব শুনে সেও ভীষণ খুশি । সন্তান যে বয়সেরই হোক সব সন্তানই মায়ের কাছাকাছি থাকতে চায়। তাছাড়া আজ কতটা বছর সেলিম তার মা বাবার থেকে দূরে থাকে। এ বাসায় তার মা বাবা কিছুদিনের জন্য থাকবে শুনে সে তো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে যেন। প্রিয়কে বারবার ধন্যবাদ দিচ্ছে এমন অসাধ্য সাধন করার জন্য। এর আগে বহুবার সে তার মাকে এ বাড়িতে রাত কাটানোর জন্য বললেও সে থাকেনি। সে জানে তার মা আমাকে পছন্দ করে না। এ জন্যই সে কখনো এ বাড়িতে থাকে না। এজন্য সে সব সময় আমাকে বিয়ে করবার জন্য হীণমন্যতায় ভুগত। মাঝে মাঝে আফসোসও করত। তখন আমার নিজেকে বড় অপরাধী লাগত। যাক আজ আমার ছেলে সেই অসাধ্য সাধন করেছে। সেলিম মায়ের পাশে বসে তার শরীরের খোঁজখবর নিচ্ছে আমি রুমে গেলাম ফ্রেশ হবার জন্য।

হঠাৎ সেলিমের ফোন বেজে উঠল। আমি ফোনটা হাতে নিতেই দেখি হেলেনের নাম ভাসছে। আগে কোনোদিন ওর ফোনে হাত না দিলেও আমি আজ আর কোনো ভয়ডর না পেয়ে ফোন রিসিভ করলাম। আমি কিছু না বলে চুপচাপ থাকলাম।

– হ্যালো সেলিম! কী ভাবলে ? কী করবে? কিছু তো জানালে না। আমি জানার জন্য জেগে বসে আছি। না জানা পর্যন্ত আমি তো ঘুমাতে পারছি না। আমি কী কোনো উপায়েই তোমাদের কোম্পানীতে ব্যাক করতে পারব না? তোমার বউ তো আর জানতে পারবে না। সে তো আর অফিসে আসে না। এভাবে চোরের মত মিট করাটা কোনো সলুউশান না। প্লিজ, কিছু করো।

আমি আর কোনো কথা না বলে কলটা কেটে দিলাম। হারামজাদীর সাথে সেলিম তার মানে ঢাকায় ফিরেই আবার যোগাযোগ করা শুরু করে দিয়েছে। এটাতে অবশ্য আমি আশ্চর্য হইনি। এটা যে করবে আমি নিশ্চিত ছিলাম। মন চাচ্ছে সেলিম আর ওই হেলেন ডাইনীকে একসাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে কতক্ষণ মনের খায়েস মিটিয়ে জুতাপেটা করি।
নাহ! এভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে কাজ হবে না। আগে ওই হেলেনকে সরাতে হবে। এবং সেটা সম্ভব একমাত্র যদি হেলেন নিজে থেকে সরে যায়। এছাড়া করারই বা কী আছে। সেলিমকে এরপরে দেখা যাক কী করা যায়!

অনেক ভেবে একটা উপায় বের করেছি । এজন্য টুম্পার সাহায্য লাগবে। আমি টুম্পাকে ফোন করে সব জানালাম। ও শুনে প্রথমে তো খুব হা হুতোশ করেছে । পরে আমি অনেক বুঝিয়ে শান্ত করেছি। কীভাবে কী করতে হবে ওকে বুঝিয়ে দিলাম। একটা চান্স নিয়েই দেখি । দেখা যাক কাজ হয় কি না! না হলে সেকেণ্ড প্লানে যেতে হবে। তবে কিছুতেই ওই হেলেন আর সেলিমকে বুঝতে দেয়া যাবে না যে আমি তাদের সম্পর্কের কথা জানি। আমাকে খুব বেশি স্বাভাবিক থাকতে হবে সেলিমের সাথে। না হলে ওরা সতর্ক হয়ে যাবে।

চলবে…..

পর্ব- ৯
https://www.facebook.com/111576077291737/posts/341693690946640/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here