সুখের_সন্ধানে পর্ব_৩০

0
418

#সুখের_সন্ধানে
#পর্ব_৩০

সাজিদদের বাসায় আমাদেরকে বেশ আপ্যায়ন করা হলো। সাজিদের মা খুব বিনয়ী আর পরহেজগার মানুষ। উনাকে আগেও চিনতাম কিন্তু খুব বেশি কথাবার্তা হয়নি তখন। আজ ঘণ্টা দুই থেকেছি ওনার ওখানে। মিথিলাকে মা বলে ডাকলেন নিজের মেয়ের মতো করে। যখন জানলেন মিথিলার মা বেঁচে নেই তখন খুব আফসোস করলেন। মিথিলাকে খুব আদর করে দিলেন। খুবই নরম হৃদয়ের মানুষ সাজিদের মা। কিছুতেই না খাইয়ে ছাড়লেন না আমাদের। ওর বোন শান্তার ব্যবহারও মার্জিত। একদম মায়ের মতোই হয়েছে মেয়েটা। শান্তাকে বিয়ে দেবার জন্য পাত্র খুঁজছেন এটাও আমার সাথে শেয়ার করলেন আপন মানুষের মতো। সাজিদের ছোট ভাইটার সাথে দেখা হয়নি। কোচিং এ গিয়েছে নাকি। বাসার পরিবেশ খুব সুন্দর। আমাদের মতো অনেক বেশি চাকচিক্য বা আভিজাত্যে পূর্ণ না হলেও আমাদের থেকে কমও বলা যায় না। সবকিছু মিলিয়ে আমি নিশ্চিন্ত হলাম কারণ সাজিদের পরিবারে তেমন কোনো ঝামেলা নজরে এল না। মানুষ চিনতে খুব বেশি সময় লাগে না ইদানিং আমার। অল্পতেই বুঝে যাই কোন মানুষের মধ্যে কতটা ফাঁপা আর কতটা ভারি।

সাজিদকে তো আগে থেকেই পছন্দ আমার। ওর পরিবার নিয়ে কিছু সংশয় ছিল সেটাও মোটামুটি এখন কেটে গেছে। এবার মিথিলার সাথে কথা বলে তারপরে পরবর্তী স্টেপে যেতে হবে। যদিও এত তাড়াতাড়ি ওকে বিয়ে দেয়ার ইচ্ছে নেই। এবার মাত্র সেকেন্ড ইয়ার ফাইনাল দিচ্ছে মেয়েটা। সাজিদের সাথে কথা বলে দেখি সে কি বলে! এরপরে দেখি কবে নাগাদ কী করা যায়! একটু সময় তো নিতেই হবে। এংগেজমেন্ট করে রাখা যেতে পারে।
তবে মিথিলাকে আরেকটু সময় দিতে হবে সম্পর্কটাকে বুঝতে তারপরে যা করার করব।

মিথিলাকে আসার সময় সাজিদ কতগুলি ফুল গিফট করেছে। মিথিলা সেগুলি নেড়েচেড়ে দেখছে আর সুবাস নিচ্ছে! রাস্তায় বেশ জ্যাম আছে আজ। ফিরতে ফিরতে কত রাত হয় আল্লাহ মালুম। মেহরাব কয়েকবার এরমধ্যে ফোন দিয়ে ফেলেছে। বাসাতে আমিও নেই তার উপর মিথিলাও নেই। ওর খুবই খারাপ লাগছে। এত করে বললাম খাওয়াটা শেষ কর তাও করেনি। আমি বা মিথিলা ওর পাশে বসে না থাকলে ও কখনই খেতে বসে না। বাড়িতে এই দুইজন মানুষই তো ওর আপন। তাই অন্য কারো সামনে যেতেই চায় না। প্রিয় আজকাল ওর সাথে কিছুটা ফ্রী হলেও প্রিয়র সাথে বয়সের গ্যাপ বেশ তাই হয়ত সেভাবে জমে ওঠে না ওদের।

– ফুলগুলি খুব ফ্রেশ! তাইনা রে মিথিলা !

– একদম। ঘ্রাণ নিবে তুমি?

– নারে! তুই নে । আমার আবার এলার্জী আছে। দেখা যাবে কোনটা আবার স্যুট করবে না আর সাথে সাথে হাঁচি শুরু হয়ে গেছে। সাজিদের বাগানে এত এত কালেকশান আছে দেখে তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।

– আমারও হতো না , রূম্পা মা। এখানে তো মাত্র কয়েক পদের ফুল। ওনার গার্ডেনে আরো কত ফুলের গাছ আছে! ফলের গাছও আছে। আমি কত করে বললাম রাতের বেলা ফুল না ছিঁড়তে ! কিন্তু উনি শুনলে তো! রাতে অফিস করে এসে বাগানের পেছনে খাটেন। আর ছুটির দিন তো কথাই নেই। সুযোগ পেলেই বাগান নিয়ে পড়ে থাকেন। ওনার বাগানের প্রেমে পড়ে গেছি একদম। কি নেই ওনার কালেকশানে! আর ওনার কবুতরের কালেকশান দেখলে তো তোমার মাথা খারাপ হয়ে যেত। বিশাল বড় কবুতরের ঘর। কবুতরের আবার কী কীসব নাম বলল আমার মনেও নেই । সাজিদ ভাই পারেনও!

– ছেলেটা খুব কর্মঠ আর ব্রিলিয়্যান্ট! আমার তো খুব ভালো লাগে। তুই কি বলিস! কেমন ছেলেটা?

– ভালোই তো! ফ্রেন্ডলি বিহেভ করে সবার সাথে।

– হুম।

প্রিয় অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে আছে ওর দাদীর সামনে।

– কিরে কথা বলছ না কেন?

– কী বলব বলো। আমি তো বলেছি হ্যা , ওদেরকে নিয়ে আমি গিয়েছিলাম দিয়াবাড়িতে। আমাদের সাথে মেহরাবও ছিল। তাতে অন্যায় কী হয়েছে?

– অন্যায় কিছুই না। কিন্তু তুমি আর মিথিলা কি রেস্টুরেন্টে খেয়েছ?

– হ্যা। তাতেই বা প্রবলেম কী? মিথিলা আমার কাজিন। ওকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেলেই বা কী সমস্যা?

– সমস্যা আছে। আছে বলেই বলছি। মিথিলা কাজিন হলেও তার সাথে এমন কোনো সম্পর্ক তোমার না যে তাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে বা ওপেন এয়ারে ঘুরতে যেতে হবে।

– আব্বু কি আমার পেছনে স্পাই লাগিয়েছে?

– স্পাই কেন লাগাবে? অন্য আরেকজন দেখে তোমার আব্বুকে জানিয়েছে।

– সব জায়গাতেই কী আব্বুর পরিচিত মানুষ থাকে যারা আমি কখন কি করি সেগুলি খেয়াল করে?

– কথা বাড়িও না একদম। যেটা বলছি সেটা শোনো। তোমার আব্বু এসব একদম পছন্দ করেন না। আর কখনো এভাবে মিথিলাকে নিয়ে বাইরে যাবে না।

– আমি কোনো ছোটো বাচ্চা না । আব্বুকে বলে দিও। আমি কি করব আর কি না করব সেই জ্ঞান আমার আছে। মিথিলাকে নিয়ে আমি আবারো যাব দেখি কী সমস্যা হয়! আব্বুর এসব তদারকি আমার একদমই ভালো লাগছে না। ডিসগাস্টিং! আমি যা খুশি তাই করব তাকে আমার এসব পার্সোনাল ম্যাটারে একদমই নাক গলাতে নিষেধ করবে।

প্রিয়র দাদী কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রিয় গজগজ করতে করতে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল। প্রিয়র দাদি প্রিয়র সাহস দেখে খুব বেশি অবাক হলেন না। এমনই আচরণ করেছিল একসময় প্রিয়র বাবা সেলিমও। রুম্পাকে বিয়ে করবার জন্য যখন সে বারবার নিষেধ করেছিল তখন এমন করেই তার সাথে বিহেভ করেছিল তার ছেলে সেলিম। ঠিক একই আচরণ ফিরে পাচ্ছে আবার তার নাতীর কাছ থেকে। প্রিয় বরং তার বাবার চেয়েও বেশি বেপরোয়া। তার উপর রূম্পা যদি একবার এই ঘটনা জানতে পারে তাহলে সে তো ছেলেকে তাল দিতে শুরু করবে। কি যে করবে সে বুঝতে পারছে না।

মিথিলা রাতে ঘুমাতে যাবার আগে একবার ভাবল দাদির সাথে দেখা আজ দেখা হয়নি । তাই একবার দেখা করে আসা উচিত। সে হাতমুখ ধুয়ে দোতলায় গেল।

– দাদী আসব?

– হুম।

– ঘুমিয়ে পড়েছিলে?

– না , শুয়ে আছি এমনিতেই। বস!

– কিছু বলবি?

– না, ভাবলাম আজ একদমই দেখা হলো না । তাই এলাম। ঔষধ খেয়েছ ঠিকঠাক ?

– হুম খেয়েছি। আচ্ছা, এসেছিস যখন তবে কয়টা কথা বলি। দরজাটা লক করে দিয়ে এসে বস।

– আচ্ছা।

মিথিলা দরজা লাগাতে লাগাতে অবাক হয়ে ভাবছে কী এমন বলবে দাদী যার জন্য দরজা লক করতে হবে।

– লক করেছিস?

– হুম।

– যা জিজ্ঞেস করব একদম সত্যি কথা বলবি।

– অবশ্যই দাদী। বলেন, প্লিজ।

– তুই প্রিয়কে পছন্দ করিস? বা প্রিয় তোকে?

মিথিলার তো মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থা। দাদী এসব কী জিজ্ঞেস করছে!

– দাদী , এসব কী বলছেন?

– সাফ সাফ জবাব চাই। একদমই কথা এদিক ওদিক করবি না। হ্যা বা না তে উত্তর দিবি।

– ভা…ভাইয়াকে নিয়ে আমি এমন কিছুই ভাবছি না। মিথিলা ঘাবড়ে যেয়ে উত্তর দিলো।

এই একটু কথা বলতেই মিথিলা এসি রুমে বসেও ঘেমে নেয়ে একাকার।

প্রিয়র দাদী কিছু একটা বুঝলেন মিথিলার এই ঘাবড়ে যেয়ে উত্তর দেওয়া শুনেই। উনি কম তো চালাক না। মিথিলার ঘাবড়ে যাওয়া মিথ্যে জবাবের মাঝেই তার জবাব খুঁজে পেলেন।
খানিকক্ষণ কোনো কথাবার্তা না বলে উঠে বসলেন।

– যাক, উত্তর পেয়ে খুশি হলাম। সত্যি বলছিস আশা করি। এখন কয়টা কথা বলব মনোযোগ দিয়ে শুনবি।
মিথিলা মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক উত্তর দিলো।

– তোর রূম্পা মা আর সেলিমের বিয়ে হয়েছে কিভাবে সে তো জানা আছে !
– জি, কিছুটা জানি।
– সেই বিয়ের পরিণতিও দেখেছিস নিশ্চয়ই? সবার অমতে যেয়েও রুম্পাকে এত ভালোবেসে বিয়ে করেছে। তারপরেও আমার ছেলের সাথে তার সম্পর্ক স্বাভাবিক না। আট বছর আলাদা থেকেছে দু’জন। এখনো যে কাছকাছি আছে তা বলব না। দু’জনের মাঝে প্রচুর মতের অমিল।

– মিথিলা বুঝতে পারছে না দাদী আসলে এসব কেন বলছে! প্রিয়কে সে ভালোবাসে এটা একমাত্র সেই জানে। দাদির কানে এ কথা পৌঁছালো কি করে? সে তো আজ পর্যন্ত কাউকে জানাইনি। এমনকি কোনদিন জানাবেও না। সে নিজেও জানে এই সম্পর্কের নাম দেওয়া সম্ভব না। তাছাড়া প্রিয়ও তাকে ভালোবাসে না। তার এই একতরফা ভালোলাগা আদৌ কি ভালোবাসা কিনা এটাও সে জানেনা। সে শুধু জানে প্রিয়কে সে খুব অনুভব করে। কেন করে এটাই সে জানেনা। প্রিয় তো কোনোদিন তার সাথে মিষ্টি করে একটু কথা বলেনি। বা তাকে নিয়ে প্রিয় আকাশকুসুম কোনো স্বপ্নও দেখায় নি। দাদি যে কথাগুলো বলেছে সেটা আগে থেকেই জানে। কোনোভাবে যদি প্রিয়র সাথে তার কোনো সম্পর্ক হয় তার রুম্পা মায়ের সংসারের উপরে যে প্রভাব পড়বে সেটা তার অজানা নয়। খুব সাহস সঞ্চার করে ধীর গতিতে সে বলল,

– – দাদি, আমি কি এমন কোন অন্যায় করেছি যেটা দেখে আপনার মনে হয়েছে যে ভাইয়ার সাথে আমার কিছু থাকতে পারে?

– – দেখ, মিথিলা আমরা কেউই বাচ্চা না। তুইও বড় হয়েছিস আর আমি তো বুড়োই হয়েছি। তাই তোকে সব কিছু খুলেই বলি। প্রিয় তোকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়েছিল একথা তো মিথ্যে নয়, তাই না? তারপরে তোকে আর মেহরাবকে নিয়ে দিয়াবাড়িতে গিয়েছে এটাও সত্য কি মিথ্যা বলেছি বল!

মিথিলা এবার বুঝতে পারল ঘটনা তাহলে এখানেই ঘটেছে। কিন্তু এসব কথা তারা কি করে জানবো এটা জেনে সে অবাক। মেহরাব বা প্রিয় এদের বলার কথা না। তবে নিশ্চয়ই অন্য কোন উপায়ে জেনেছে।

– মিথিলা কোন কথা বলছে না দেখে দাদি বলল উত্তর আমি পেয়ে গেছি তোকে আর দিতে হবে না। সেলিম এত বড় বিজনেসম্যান ওর চোখ দুটো না ওর চোখ সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে। এই ঘটনা সেলিম এসে কথা আমার কাছে বলে গেছে। আমি ভাবছি অন্য কথা। এ কথা যদি রুম্পার কানে যায় তাহলে সেলিম আর রুম্পার মধ্যে যে কি পরিমাণ কুরুক্ষেত্র বাঁধবে সেটা একবার ভেবে দেখ।

– সেলিম তো আজকে রীতিমতো আমাকে এসে শাসিয়ে গেছে ১৫ দিনের মধ্যে তোকে বিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বের করতে হবে। তোদের মধ্যে আদৌ কি কিছু চলছে কি চলছে না সেটা তো আমি জানি না কিন্তু দেখ সেলিম সেটাকে অনেক বড় একটা ইস্যু ভেবে কত বড় ডিসিশন নিয়ে ফেলেছে। সেলিম যে কতটা একগুঁয়ে সেটা তো ভালো করেই বুঝেছিস এই ক’বছরে।

– একসময়ে সংসার নিয়ে আম্মি‰8%৳$$$ও খুব মাথা ঘামাতাম কিন্তু এখন আর ঘামাই না। এই সংসার হল একটা মোহ, একটা মায়া যত কাছে টানতে চাইব ততই আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে যাব। কিন্তু জড়িয়ে তো লাভ নেই। ছেড়ে তো যেতেই হবে। তাই শুধু শুধু মায়ার পৃথিবীতে এত মায়া দিয়ে নিজেকে দুর্বল করার কোনো মানে নেই। তোর দাদা যেদিন এই দুনিয়া থেকে চলে গেছেন সেদিন থেকেই আমি এই দুনিয়ার মোহ ছেড়ে দিয়েছি তাই আমিও এখন আর এই সংসার সংসার করে নিজের বাকি সময়টুকু বরবাদ করতে চাই না। নানা ধরনের রোগ শোকে জড়িয়ে আছি। মেয়েটা থাকে সেই দূর দেশে চাইলেই দেখা হয় না। কখন যে ডাক আসে সেই অপেক্ষায় বসে থাকি।
তাই আমি তোদের এসব ঝামেলায় জড়াতে চাই না আর। আমাকে মুক্তি দে রে ভাই।
কি বোঝাতে চেয়েছি নিশ্চয়ই বুঝেছিস।

– মিথিলা মেঝের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে। বেশ কিছুক্ষণ পর বলল, বুঝেছি দাদি। আপনাকে একদমই ঝামেলায় ফেলব না এই যে কথা দিলাম।

– – টেনশান কমিয়ে দিলি। যা ঘুমিয়ে পড়। যাওয়ার সময় দরজাটা লক করে যাস।

– – আচ্ছা।
– মিথিলা চোখ মুছতে মুছতে দাদির রুম থেকে বেরিতে নিচতলায় যাচ্ছিল তখনই প্রিয় এসে হ্যাচকা টান মেরে ওকে উপরে ওঠার সিড়ির দিকে নিয়ে চলল।

– – এসব কী করছ, ভাইয়া?

– – ছাদে চল কথা আছে।

– – কেউ দেখে ফেলবে। কী বলবে এখানে বলো।

– – ছাদে যেয়ে বলব। কেউ দেখে দেখুক। আই ডোন্ট কেয়ার।

– – উহু, ব্যাথা পাচ্ছি তো! কী এমন হলো যে এভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছ।

– – বললাম না কথা আছে। তোর খোঁজে তোর রুমে গিয়েছিলাম সেখানে না পেয়ে মেহরাবের কাছে যেয়ে শুনি তুই দাদীর রুমে এসেছিস। তাই এখানে এসে ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়েছিলাম। ভেবেই রেখেছিলাম তুই বের হওয়ার সাথে সাথেই তোকে নিয়ে ছাদে যাব। উহ, এত দেরি করেছিস! অপেক্ষা করতে করতে পা ব্যথা হয়ে গেছে। কী এত কথা বলেছিস দাদীর সাথে? তাও ডোর লক করে।

– – তেমন কিছু না। দাদীর পা’টা মালিশ করে দিলাম আর কিছু না।

– – আচ্ছা, চল। বাকি কথা ছাদে যেয়ে হবে।

মিথিলা আর প্রিয় দোলনায় পাশাপাশি বসা।

– প্রিয় আজ ভেবেই এসেছে তার মনে কথা খুলে বলবে মিথিলাকে। আজ দাদীর সাথে কথা বলার পর সে বুঝতে পেরেছে মিথিলাকে তার জানানো প্রয়োজন তার মনের কথা। না’হলে বেশ দেরি হয়ে যাবে।
তার বাবা যদি সত্যিই মিথিলাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়। সে এটা মেনে নিতে পারবে না। প্রয়োজনে সে সবার অমতে যেয়ে মিথিলাকে বিয়ে করবে তাই সব কথা ওকে জানানো দরকার। তার বাবা পনেরো দিনের মধ্যে মিথিলাকে বাড়ি ছাড়তে বলেছে তাই সেও পণ করেছে পনেরো দিনের মধ্যেই সে মিথিলাকে বিয়ে করবে তাতে যা হয় হবে। তবে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মিথিলার মনের খবর জানা দরকার। সেও কি একই রকম অনুভব করে কিনা তার জন্য এটাও জানা জরুরি।

মিথিলা বারবার তাগাদা দিচ্ছে প্রিয়কে কথা শেষ করার জন্য কিন্তু প্রিয় এ কথা সে কথা বলে সময় নষ্ট করছে আসল কথা তুলতেই পারছে না। যদি মিথিলা তাকে ভাইয়ের অতিরিক্ত কিছুই না ভেবে না থাকে তাহলে কী লজ্জায় না পড়তে হবে তাকে! কিভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছে না। এরমধ্যে মিথিলার ফোন বেজে উঠল। ফোনটা মিথিলার কোলের উপরেই রাখা। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই প্রিয় কেঁপে উঠল।

“সাজিদ ভাই ইজ কলিং”

প্রিয়র চোখে পড়েছে এটা দেখতে পেয়ে মিথিলা তাড়াতাড়ি করে ফোনটা কেটে দিলো।

– – শালা, তোর ফোন নাম্বার যোগাড় করে ফেলেছে অবশেষে! ছ্যাঁচড়া কোথাকার! ক’দিন ধরে মাথা খারাপ করে রেখেছে আমার। ডিসগাস্টিং! কমন সেন্সও নেই। এত রাতে একটা মেয়েকে কল দিয়ে কেউ বিরক্ত করে?

– – ক’দিন ধরে নাম্বার চাইছিল মানে?

– – শালা তোর জন্য লাট্টু। আমাকে জ্বালিয়ে মারছে ক’দিন ধরে। ও নাম্বার কই পেল?

মিথিলা এবার বুঝল তবে সাজিদের অমন হাবভাবের মানে। কিছুটা আন্দাজ অবশ্য সে আগেই করেছিল এখন একদম পরিস্কার। সাজিদ তবে তাকে ভালোবাসে!

– কি রে কথা বলছিস না কেন? আর ওর নাম্বারই বা তোর ফোনে কই থেকে? আমি তো দেইনি।
– না…. মানে ভাইয়া! আজ সাজিদ ভাইদের বাসাতে গিয়েছিলাম রূম্পা মায়ের সাথে। তখন নাম্বার দিয়েছি। উনিও আমার নাম্বার নিয়েছেন।

– অদের বাসায় কি করতে গিয়েছিলি ? আর ওকে নাম্বারই কেন দিয়েছিস? রাগের সাথে বলল, প্রিয়।

– – না মানে ভাইয়া…. আজ ওদিক দিয়ে আসছিলাম। তখন রূম্পা মা সাজিদ ভাইকে কী একটা বিষয়ে কল দিয়েছিল। আমরা ওনাদের বাসার কাছেই জেনে সাজিদ ভাইই জোর করে নিয়ে গিয়েছিল । সেখান থেকেই তো ফিরলাম কিছুক্ষণ আগে।

– তা তো নিবেই। তুই ছিলি যে সাথে। বিড়বিড় করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, প্রিয়।

– কিছু বললে ভাইয়া?

– নাহ! এবার বল , ওখানে কি করেছিস এতক্ষণ তোরা?

– সাজিদ ভাইয়ের আম্মা খুব খাতির যত্ন করলেন আমাদের। আমাদের না খাইয়ে আসতেই দেয়নি।

– আর সাজিদ কী করল?

– উনি আমাকে ওনার ছাদে ঘুরিয়েছেন। এত সুন্দর বাগান ওনার ছাদে তুমি বিশ্বাসই করতে পারবে না। এত সুন্দর যে আমার তো বাগান ছেড়ে আসতেই মন চায়নি। ওনার কবুতর দেখারও শখ ছিল কিন্তু রাতের বেলা বলে দেখতে পারলাম না। সাজিদ ভাই বলেছে আরেকদিন দিনের বেলা আমাকে নিয়ে যাবে কবুতর দেখাতে। বাগানে কত কত ফুল ফুটে আছে। কামিনী আর হাসিনাহেনার গন্ধে তো আমার সেখান থেকে নড়তেই মন চায়নি। আমাকে আসার সময় সাজিদ ভাই নিজ হাতে ছিঁড়ে একগাদা ফুল দিয়ে দিয়েছে। আমার রুমে ভাসে রেখেছি। একটূ পানি দিয়ে রেখেছি যাতে অনেকদিন ফ্রেশ থাকে।

– প্রিয়র মেজাজ তো সপ্তমে এসব শুনে!

– তুই ওই ছ্যাঁচড়াটার সাথে গেলি কেন অন্ধকার ছাদে। আর ওর ফুলই বা আনলি কেন? আমাকে বলতি ! দাঁড়া , আগামীকাল পুরো দোকান তুলে নিয়ে আসব আমি তোর জন্য। আর তুইও আমাদের ছাদে তোর পছন্দমত গাছ লাগিয়ে ফেল। আমি টব, চারা সব এনে দিচ্ছি। তুই শুধু আমাকে গাছের লিস্ট করে দে। ওর থেকেও সুন্দর বাগান হবে তোর। আর কখনো ওর সাথে কোনো কথা বলবি না। শালা একটা এক নাম্বারের লুচ্চা। সারাজীবন মেয়েদের পেছনে লাট্টুর মত ঘুরত। নাম্বার ডিলিট কর। আমার কাছে দে একদম ব্লক করে দেই।

– কেন ভাইয়া? ফোন ধরলে অসুবিধা কী?

– অসুবিধা কী মানে? ওই লাট্টু তোকে পছন্দ করে বললম না।

– মিথিলা কিছুটা লজ্জাবনত মুখে আস্তে করে বলল, আমিও যে …সা…সাজিদ ভাইকে প…..পছন্দ ক…করি…ই।

– – হোয়াট!

– – হ্যা, ভাইয়া। তুমি রেগে যাবে তাই ভয়ে এতদিন বলিনি। কালকেই আমাদের মাঝে সব ক্লিয়ার হলো। তুমি বড় ভাই তাই তোমাকে আগে জানাতে চেয়েছিলাম। তুমি যখন নিজে থেকেই ব্যাপারটা তুললে তাই আর লুকাতে পারলাম না।

– কি বলছিস জেনে বুঝে বলছিস তো!

– জেনে বুঝেই বলছি। খুব তাড়াতাড়ি আমরা বিয়েও করছি। তুমি আমাদের জন্য দোয়া করো।

মিথিলা আর কিছু বলতে পারল না। দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেল।

ভেজাচোখে মিথিলার চলে যাবার দিকে তাকিয়ে শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল প্রিয়। সে আজ কী অধিকারে থামাবে মিথিলাকে তার জানা নেই। ফুল হয়ে ফোঁটার আগেই কুঁড়িতেই ঝরে গেল তার মনের অব্যক্ত কথা আর বুকের মধ্যে জন্ম নেওয়া সদ্য ভালোবাসা।

– চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here