সুখের_সন্ধানে পর্ব_২৯

0
371

#সুখের_সন্ধানে
#পর্ব_২৯

ওই মেয়েকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দিয়ে এ বাড়ি থেকে বিদায় করো। আমি তোমার বৌমার সাথে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। কারণ আমি কথা বলতে গেলেই সে অন্য ভাবে নিবে।

– আচ্ছা, তুই এত চিন্তা করিস না। আমি রুম্পার সাথে কথা বলবো।

– মা, কথা একটু তাড়াতাড়ি বলো। কারণ বিয়ে নাম নিলেই হয়ে যায় না। ছেলে দেখা, মেয়ে দেখা। নানা ধরনের স্টেপ পার হয়েই বিয়েটা হবে। ততদিনে না দেরি হয়ে যায়? তাছাড়া ওর বাপ চাচাদের মতামতও জানতে হবে। যদিও এই আদিখ্যেতা না দেখালেও চলবে। জন্ম দিয়ে অন্যের ঘাড়ে বাচ্চাদের চাপিয়ে দিয়ে আরেক বউ নিয়ে আয়েশ করছে। ষ্টুপিড!

– যা করার খুব তাড়াতাড়ি হবে তুই একদম চিন্তা করিস না।

– এই ভয়টাই আমি শুরু থেকে পাচ্ছিলাম যে কারণে ওকে আমি এ বাড়িতে এলাও করতে চাইনি। কিন্তু আমার কথা কেউ শুনলে তো!
পাশাপাশি একটা ছেলে এবং একটা মেয়ে অনেকদিন ধরে থাকতে থাকতে এদের মধ্যে একটা ফিলিংস তৈরি হতেই পারে। যেটা স্বাভাবিকভাবে ওদের হয়েছে। এজন্য আমি ওদেরকে দায়ী বলব না, দায়ী আমরা।

– এটা ঠিক বলেছিস। এই কথাটা আমি মালিহাকেও বলেছি। মালিহা আজকে এসে বেশ কড়া করে আমাকে কয়েকটা কথা শোনালো।

– অবশ্য মন্দ করেনি। যদিও মালিহার এ ব্যাপারে কথা বলার অধিকার নেই। কারণ আমার ছেলেকে আমি কোথায় বিয়ে দিব কোথায় না দিব এটা নিয়ে সে চর্চা করতে পারে না। সেইরকম চাচি হিসেবে সে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেনি। সে তো এক হিসাবে সজলকেও আমাদের পরিবার থেকে আলাদা করে ফেলেছে। তার পরেও আমি বলব আমি মালিহার প্রতি কৃতজ্ঞ। মালিহাই তো ওদেরকে রেস্টুরেন্টে একসাথে খেতে দেখেছে। আবার নিজ গরজে ওদেরকে ফলো করে দিয়াবাড়ি পর্যন্ত গিয়েছে। যদিও এটা সে মোটেই আমাদের ভালোর কথা চিন্তা করে করেনি। আমাদের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার জন্যই করেছে। তারপরেও খবরটা জানানোর জন্য তাকে ধন্যবাদ দিয়ে দিও আমার পক্ষ থেকে।

– মালিহাকে এত বছরে চিনতে তো আর ভুল করিনি। ব্যাপারটা আমিও বুঝেছি। ওর আসল মোটিভ হচ্ছে রুম্পাকে আমার চোখে ছোট করা। সে ইনিয়ে বিনিয়ে নানানভাবে যেটা বুঝিয়েছে তাতে বোঝা যায় মালিহা ওর দুই মেয়ে আর সজলকে নিয়ে আবার এই বাড়ীতে ফিরতে চায়। তুই যে ভুল করেছিলি মিডল ক্লাস ঘরের মেয়ে রুম্পাকে বিয়ে করে সেই একই ভুল যদি আবার তোর ছেলে করে তাহলে এ বাড়িতে আসার জন্য তার রাস্তা একটু ক্লিয়ার হয়ে গেল না! সে আসেই আমার কান ভরতে ।

– হতে পারে। আমি এসব মেয়েলি প্যাচপুচ বুঝি না। বুঝতে চাইও না। তুমি যত তাড়াতাড়ি পারো রুমপার সাথে কথা বলো। মিথিলার বিয়ে ঠিক করো।

– কিন্তু ততদিনে যদি দেরি হয়ে যায়? তুই কি একটু প্রিয়র সাথে কথা বলবি? নাকি প্রিয়র জন্যই মেয়ে খুঁজব?

– আমি কথা বলতে গেলে বেশি হয়ে যাবে আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না আমি চাই না ওর সাথে কোন ধরনের সিনক্রিয়েট হোক! আর ওই
মেয়ের ভয়ে তড়িঘড়ি করে আমার একমাত্র ছেলেকে বিয়ে দিতে চাই না।

– আচ্ছা। দেখি কী করা যায়! তুই আর ভাবিস না। ভয় পাস না একদম। আমি যেভাবেই হোক ব্যাপারটা দেখছি।

– ঠিক আছে, মা। যা করার করো। আমি কোন ধরনের দুঃসংবাদ শুনতে চাই না। যদি একান্তই কিছু করার মত রাস্তা না দেখো তাহলে মিথিলাকে ওর বাসায় পাঠিয়ে দাও। তবে আমার ডিসিশন ফাইনাল পনেরো দিন মানে পনেরো দিন। এর বেশি একদিনও যেন ওই মেয়েকে আমি এ বাসাতে না দেখি। উল্টাপাল্টা কিছু হলে এর দায় দায়িত্ব সব তোমার।

সেলিম রুম থেকে বেরিয়ে যাবার পরে তার মা খুব চিন্তায় পড়ে গেল। পনেরো দিনের মধ্যে বিয়ের অ্যারেঞ্জমেন্ট করা একটু কঠিনই হয়ে গেল। তাছাড়া এখন পর্যন্ত পাত্রের ঠিক নেই। তার উপর রুম্পা মিথিলাকে এই মুহূর্তে বিয়ে দিতে রাজি হবে কিনা এটাও একটা ব্যাপার। মিথিলাকে তার অপছন্দ নয়। খুবই লক্ষী মেয়ে। যে ঘরে যাবে আলো করে রাখবে কিন্তু মিথিলা তার ঘরের বউ হবার যোগ্য নয়। তার কোনো স্টাটাসের সাথেই তার নাতি প্রিয়র যায় না। তাই ছেলের মতো সেও চায় না মিথিলা এ বাড়ির বউ হোক।

সাজিদ আর মিথিলা একে অপরকে পছন্দ করে এই কথাটা কিছুতেই মাথা থেকে ঝাড়তে পারছে না, প্রিয়। কিন্তু কেন পারছে না এটাই সে বুঝতে পারছে না। এটা মেনে নিতে এত দ্বিধা কোথায় তার? সে নিজেই তো চেয়েছিল যে সাজিদ আর মিথিলার মধ্যে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠুক। সাজিদ তার খুব ভালো বন্ধু! তার বিশ্বাস মিথিলাকে সে ভালো রাখবে। অথচ এখন তার মধ্যে কেমন যেন একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে এদের সম্পর্কের কথা শুনে। সারাদিন অফিসে কোনো কাজেই মন বসাতে পারছে না। কল্পনায় শুধু মিথিলা আর সাজিদের চেহারাই ভাসছে। কিছুক্ষণ আগে সাজিদ ফোন দিয়ে মিথিলার ফোন নাম্বারটা চেয়েছিল। ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে সে তাকে নাম্বার দেয়নি।

কিন্তু কেন? তবে কি সে মিথিলাকে সে? না, না। তা কি করে হয়! সেতো বিন্দুকে ভালোবেসেই পথের ফকির! তার কাছে আর কোন ভালোবাসা অবশিষ্ট আছে কি? মিথিলাকে ওইভাবে সে কখনোই ভাবেনি। মিথিলাকে কখনোই নিজের লাইফের কোনো গুরুত্বপূর্ণ কেউ বলে ভাবেনি সে। কিছুই ভালো লাগছে না। কিছুই ভাবতে পারছে না প্রিয়। আজ আবার সন্ধ্যার পরে তাদের বন্ধুদের একটা হ্যাংআউট প্রোগ্রাম আছে।

এতটা মন খারাপ তার যে মন চাচ্ছে না সেখানে যেতে আর। পরে আবার নানান ধরনের সাত-পাঁচ ভেবে যেতে রাজি হলো। হয়ত বন্ধুদের আড্ডাতে মনটা কিছুটা হলেও ফ্রেশ হবে।

কোনো রকম করে তড়িঘড়ি করে হাতের কাজ শেষ করে রাত আটটার দিকে বের হল প্রিয়। ক্যাফেতে পৌঁছাতে আধা ঘন্টার মত সময় লাগল।

দশ বারোজন বন্ধু মিলে এই হ্যাংআউট প্রোগ্রাম। প্রিয় পৌঁছতে পৌঁছতে মোটামুটি সবাই পৌঁছে গিয়েছে ততক্ষণে।

অনেকদিন পর বন্ধুদের সাথে দেখা হওয়ার পরে যে ধরনের উচছ্বাস কাজ করার কথা প্রিয়র মধ্যে সেটা করছে না। কেমন যেন সবকিছুতেই নিরামিষ ভাব। কোথাও কোনো নতুনত্ব খুঁজে পাচ্ছে না সে। এ ধরনের আচরণের জন্য সে বারবার তার অবচেতন মনকে দায়ী করছে। মিথিলা আর সাজিদের যন্ত্রণা থেকে কিছুতেই মুক্তি পাচ্ছে না সে। ব্যাপারটা তার বন্ধু অনিকেতের চোখ এড়ালো না।

অনিকেত নামকরা সাইকোলজিস্ট। বেশ কিছুদিন ধরে প্রিয়র সাথে তেমন যোগাযোগ না থাকলেও এখানে দেখা হওয়ার পরে দুজনের মধ্যে অনেক কথাবার্তা হলো। অনিকেত খেয়াল করে দেখল প্রিয়’র আচরণে কেমন একটা খাপছাড়া ভাব। কিছু একটা তো চলছে প্রিয়র মধ্যে যেটা আসলে প্রিয় চাচ্ছে না।

বন্ধুদের আড্ডার মধ্য থেকে হঠাৎ করে প্রিয়কে টেনে একটু আড়ালে নিয়ে এলো।

– কিরে বিজনেস ম্যাগনেট, সারাক্ষণ কি ভাবিস তুই? নাকি ব্যবসা করতে করতে মাথার তার সব আউলা ঝাউলা হয়ে গেছে?

– কি যে বলিস না! আমি আবার বিজনেস ম্যাগনেট হলাম কোথায়? বাপ দাদার ব্যবসাতে জুড়ে বসেছি। এই আর কি।

– ওই হল, ঘুরেফিরে একই কথা! আচ্ছা দোস্ত, এনিথিং রং উইথ ইউ?

– নো নাথিং! কিছুটা অবাক হয়ে বলল, প্রিয়। এমন মনে হলো কেন?

– আই থিঙ্ক, তুই ভুলে গেছিস আমি একজন সাইকোলজিস্ট।

– উহু। একদমই ভুলিনি। এটাই তোদের সমস্যা। যাকে দেখিস তাকেই পেশেন্ট মনে করতে শুরু করিস।

– হা হা হা। এটা অবশ্য মন্দ বলিস নি। এমন একটা মানুষ দেখাতে পারিস যার মনের মধ্যে কোনো প্রবলেম নেই। প্রত্যেকটা মানুষের কোনো না কোনো প্রবলেম থাকে, পেইন থাকে যে কারণে সবাইকেই আমাদের কাছে পেশেন্ট মনে হয়।

– তাই নাকি! এত যদি বুঝিস তাহলে বল দেখি আমার কি সমস্যা?

– বন্ধু আমরা মন নিয়ে নাড়াচাড়া করি। মনের ভাষা যদি বুঝতে না পারতাম তাহলে তোরা পয়সা দিয়ে আমাদের কাছে চিকিৎসা করতে আসতি না।
তোর মধ্যে সমস্যা যে চলছে সেটা আমি তোকে দেখা মাত্রই বুঝে ফেলেছি। এই বয়সেই এতটা নাম ধাম নিশ্চয়ই আমার এই চেহারা দেখে হয়নি।

– হুম। তা তো ঠিক বলেছিস। যোগ্যতা না থাকলে যোগ্য স্থানে যাওয়া যায় না।

– আচ্ছা, এসব কথা বাদ দিয়ে এখন বল এত কনফিউশনে ভুগছিস কেন? মনে হচ্ছে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিস না।

– মাই গড! তুই দেখছি সত্যি সত্যি ধরে ফেলেছিস। আমি তো এতদিন ভেবেছিলাম তুই কোন হাতুড়ে ডাক্তার হবি হয়ত। এখন দেখছি না সত্যি সত্যি কিছু জানিস,
হা হা হা।

– হাতুড়ে ডাক্তারই বলতে পারিস। এখন পর্যন্ত বড় ডাক্তার হলাম কোথায়? বন্ধুর সমস্যার সমাধান করতে পারছি না আর বড় ডাক্তার।

– কথা না বের করে তুই ছাড়বি না। আচ্ছা চল, ওদিকটায় বসি না হলেও ওরাও চলে আসবে এখানে।

– দ্যাটস লাইক অ্যা গুড বয়। চল।

অনেকক্ষণ সামনাসামনি বসে আছে দু’জন কিন্তু কিছুই বলছে না প্রিয়.! এটা কি আদৌ বলার মতো কোনো ঘটনা না কিনা সেটাই ভেবে পাচ্ছে না সে।

– কাউকে ভালোবাসিস?

– না… মানে ভালবাসি না। তবে একজনকে বাসতাম। সে এক ফ্রডের কাহিনী । পরে একসময় শুনিস।

– সো স্যাড! নতুন করে কি কাউকে ভালবেসেছিস?

– বুঝতে পারছি না!

– ইন্টারেস্টিং! কাউকে পছন্দ করেছিস কিনা সেটা বুঝতে পারছিস না? ওকে ফাইন! আমাকে ডিটেইলস বল। আমি তোকে হেল্প করার চেষ্টা করব।

– আমার কাজিন। আমাদের বাসাতেই থাকে। তবে ছোটো থেকেই থাকছে না। ওর মা মারা যাবার পর থেকে ও এবং ওর ভাই এখানে থাকছে।

– হুম।

– ওকে নিয়ে কখনো এ ধরনের ফিলিংস হবে আমি ভাবতেও পারিনি। এজন্যই এখন পর্যন্ত বুঝতে পারছি না যে আসলে আমার সাথে চলছে কী? ওদের দু’ভাইবোনকে আমি একদমই সহ্য করতে পারতাম না। আমার কাছে ওদের আশ্রিতা ছাড়া আর কিছুই মনে হতো না। কিন্তু মেয়েটা আমার প্রতি এত কেয়ারিং যে নিজের মনোভাবকে আগের অবস্থান থেকে সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হই।
মাত্র কিছুদিন আগে আমাকে বেশ বড়সড় একটা বিপদে হাত থেকেও ও বাঁচিয়েছে। সেই থেকে আমি ওর প্রতি এতটা কৃতজ্ঞ যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।

– তার মানে বোঝাচ্ছিস এরপর থেকে তোর ওকে নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। মানে তোর যে অসহ্য একটা ভাব ছিল সেটা কেটে গেছে, তাইতো। তাইলে আবার সমস্যা কই?

– হুম। কিন্তু সমস্যা হলো আমার কাজিন আমার অন্য একটা ফ্রেন্ডকে পছন্দ করে। আমি নিজেই বলতে গেলে ওদের মধ্যে রিলেশন বিল্ডআপ এ হেল্প করেছি। অথচ যখন থেকে জানলাম যে, দে আর লাভ ইচ আদার! আমি কেন যেন এটা মেনে নিতেই পারছি না। বুকের মাঝে কেমন একটা শূন্য শূন্য ভাব মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে কি যেন নেই, কি যেন নেই। কেন এমন হচ্ছে নিজেই জানি না।

– হু! জটিল কেইস। মানে হচ্ছে এখন কাজিন আর ফ্রেন্ডের রিলাশান নিয়ে ইনসিকিউরড তুই, তাই তো!

– হতে পারে আবার নাও পারে।

– মেয়েটা মানে তোর কাজিন কি খুব সুন্দরী?

– আহামরি তেমন কোনো সুন্দরী না। তবে প্রচণ্ড বুদ্ধিমতী আর মেধাবী।

– আহামরি না তবে কেমন যদি বুঝিয়ে বলতি!

– মোটামুটি লম্বা, পাতলা আর গায়ের রং শ্যামবর্ণ। নাক, চোখমুখ, চোখের ভাষা বেশ তীক্ষ্ণ। কথা বলার ধরণও চমৎকার। অল্পতেই মনের কথা বুঝতে পারে। ওর সাথে কথা বলতে থাকলে বিরক্ত হচ্ছিস এমন মনে হবে না। তাতে যতক্ষণই লাগুক।

– সাজাগোজ করে খুব?

– একদমই না। বিনা সাজেই সে অপূর্ব। কোনো আর্টিফিশিয়াল রঙ চোং মেখে সং সাজার প্রয়োজনই পড়েনি কখনো।

– না, ওই যে মাত্র বললি শ্যাম বর্ণ! শ্যাম বর্ণ ঢাকতে পুরু ফাউন্ডেশন নিশ্চয়ই মাখতে হয়?

– নেভার! সে ওই শ্যাম বর্ণেই অপরূপা। ফাউন্ডেশনের আড়ালে নিজেকে কখনোই লুকাতে হয় না তার। চোখের নিচে পুরু কাজল আর ন্যুড লিপস্টিকেই সে অনন্যা।

– সো কিউট! আচ্ছা, দোস্ত! তুই না বললি দেখতে আহামরি সুন্দরী কেউ না। তবে তুই যেভাবে বর্ণনা দিলি তাতে আবার অন্য মিনিং দেখছি আমি।

– আমার কাছে ছবি আছে দেখবি তুই? বিশ্বাস করছিস না তাই তো!

– না, না। তা হবে কেন? বিশ্বাস করছি। ছবি দেখতে পারলে অবশ্য মন্দ হতো না।

প্রিয় পকেট থেকে মোবাইল বের করে ওর আর মিথিলার কাশবনে তোলা বেশকিছু ছবি বের করে দেখাতে শুরু করল।

অনিকেত বেশ সময় নিয়ে ছবিগুলো দেখল।

– আচ্ছা, এবার বলতো তোর এই কাজিন তোর কাছাকাছি যতক্ষণ থাকে তখন কেমন লাগে তারপর যখন চলে যায় তখন কি খারাপ লাগে? সত্যি বলবি একদম।

– প্রিয় খানিকক্ষণ ভেবে বলল, মিথ্যে বলব না। আগে কাছাকাছি দেখলে বিরক্ত লাগত। কিন্তু এখন না আসলে বরং খারাপ লাগে। ও আমাকে কেয়ার করুক, আমাকে নিয়ে ভাবুক এটা এখন আমি সবসময় চাই।

– বুঝেছি চান্দু। তুমি প্রেমে মজেছ।

– তুই শিওর?

– দেখো দেখি কাণ্ড! সে প্রেমে পড়েছে আর বলতে হবে আমাকে? তুই এখনো বুঝতে পারছিস না। তুই ওকে নিয়ে যখন কথা বলিছিলি তখন তোর চোখের মাঝে তোর কাজিনকে আমি দেখতে পাচ্ছিলাম। তুই বললি তোর কাজিন সুন্দরী না। অথচ অবচেতন মনে একটা মেয়েকে সুন্দরী হতে যেসব ক্রাইটেরিয়া পার করতে হয় সেসবের থেকে অনেক বেশিই বলে ফেলেছিস। প্রশংসা করতে করতে ডুবে গিয়েছিলি যেন অন্য জগতে। আর তারপরও যে ডাউট ছিল সেটা দূর করল এই ফটোগ্রাফস। প্রতিটি ছবিতে তুই ওকে যেভাবে দেখছিস, আর তুই যে কতটা প্রাণবন্ত লাগছিস ছবিতে সেটাও টের পাচ্ছি। আর আমার ভুল না হলে আমার মনে হয় তোর কাজিনও তোকে ভালোবাসে।

– আর ইউ শিওর?

– ডেফিনিটলি। দেখ, আমাদের মাঝে কাজিনকে নিয়ে এমন ফিলিংস আসবেই না। কারণ আমরা কাজিনদের সিবলিংসের মতোই মনে করি এর অতিরিক্ত একদমই না। কারণ আমাদের ধর্ম আর সামাজিকতা সেই অধিকার দেয়নি। কিন্তু তোদের মধ্যে এটাতে কোনো বাঁধা নেই। তাই সাব-কনশাস মাইন্ডে হোক আর যেভাবেই হোক তোদের মধ্যে ভালো লাগা তৈরি হতে পারে। যেটা অলরেডি তোদের মাঝে হয়েছে। তাই বলছি। আর দেরি না করে প্রকাশ করে দে তোর মনের কথা। না হলে বেশিই দেরি হয়ে যাবে।
আচ্ছা, এবার বলতো আমাদের সেই ফ্রেন্ডটা কে যাকে তোর কাজিন পছন্দ করে বলে মনে করছিস?

– তুই চিনবি না। আছে!

ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেল প্রিয়। কারণ সে জানে নাম বলার সাথেই অনিকেত চিনে ফেলবে সাজিদকে। একসাথেই পড়েছে তারা। যদিও সাজিদের সাথে এই গ্রুপের খুব বেশি আন্তরিকতা নেই। তবুও।

– থ্যাংক ইউ, দোস্ত! অনেক বড় একটা জট খুলে দিলি। তবে তোর কথা যদি সত্যি হয় মানে মিথিলাও যদি সত্যি আমাকে ভালোবাসে তবে আমাদের বিয়ের প্রথম কার্ডটি তুই পাবি। প্রমিস!

– হা হা হা। অপেক্ষায় থাকলাম। আমার বিশ্বাস প্রথম কার্ডটি তবে আমিই পাচ্ছি। বেস্ট অফ লাক, ডিয়ার!

 

সাজিদদের ড্রয়িং রুমে বসে আছি আমি আর মিথিলা। সাজিদের মা আমাদের খাতিরযত্ন করতে খুব ব্যস্ত। সে একবার অনেক আগে আমাদের বাসাতে আসলেও আমি প্রথম তাদের বাসাতে। আমাদেরকে তাদের বাসাতে পেয়ে যেন ধন্য সাজিদের মা।

সাজিদের মা কথা বলার এক ফাঁকে সাজিদকে ডেকে বলল, কি রে! অমন মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? মিথিলাকে পুরো বাসা ঘুরিয়ে দেখা। ছাদে যে তোর বাগান আছে সেটাও দেখিয়ে আন।
যাও মা। তুমি ঘুরে এসো। দেখে এসো আমার পাগল ছেলের পাগলামি। ছাদ ভরা গাছ আর গাছ। আর কবুতরও আছে কিন্তু। নিজে তো সময় পায় না। সব করতে হয় আমার। অবশ্য পুচকে একটা ছেলে আছে দেখাশোনার জন্য। কবুতর এখন দেখতে না পেলেও বাগানের সৌন্দর্য দেখে আসতে পারবে।

আমিও চোখের ইশারায় সাজিদের সাথে যাবার অনুমতি দিয়ে দিলাম তাকে। মিথিলা ইচ্ছে না থাকা স্বত্তেও উঠে গেল।

আমি ইচ্ছে করেই ভাইয়ার বাসা থেকে ফেরার পথে মিরপুর দশ নাম্বার গোল চত্বরে এসে সাজিদকে অডিট রিপোর্টের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে ফোন করলাম । সাজিদ যখন কথাপ্রসঙ্গে জানল আমি আর মিথিলা দশ নাম্বারে সে অমনি পাগলের মতো হন্য হয়ে ছুটে এল আমাদের নিতে। আমিও এটাই আশা করছিলাম। একটা উদ্দেশ্য ছাড়া আসলে যাই কী করে কারো বাসায় ?

সাজিদ আজ অফিস থেকে ফিরেছে সন্ধ্যার আগেই এটা খবর পেয়েছিলাম আগেই। আর ওর বাসা গোল চত্বর থেকে বেশ কাছেই। এখানে আমরা এসেছি জানলে সে যে চুপ থাকবে না সে আমি জানি। আর মিথিলা আছে জানলে তো আরো না। আমি ইচ্ছে করেই মিথিলার নামটা তাই জুড়ে দেই। যাতে সে আরো আগ্রহ বোধ করে।।
ভাইয়ার বাসায় আসাটাও নিছক একটা বাহানা মাত্র।
যাক উদ্দেশ্য তবে সফল। এবার যা দেখতে এসেছি সেসব ভালোয় ভালোয় হলেই হয়। আমার মূল উদ্দেশ্য হলো সাজিদের মা এবং পারিপার্শ্বিক সব দিক অবজারভ করা।

চলবে….

পর্ব-২৮

https://www.facebook.com/111576077291737/posts/368084698307539/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here