সুখের_সন্ধানে পর্ব_২৮

0
388

#সুখের_সন্ধানে
#পর্ব_২৮
মিথিলার বুদ্ধি দারুণ কাজে দিয়েছে। পরের দিন সকাল বেলা মিথিলা আবার ফোন দিলো বিন্দুর নাম্বারে। কিন্তু বিন্দুর নাম্বার বন্ধ। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া গেল না। মিথিলা বুঝতে পারলো যে বুদ্ধিতে কাজ তবে হয়েছে। তারপরেও প্রিয়কে পুরোপুরি নিশ্চিত করতে সে প্রিয়কে বলল,

– চাইলে আমরা একবার ওর বাসায় যেতে পারি।

কিন্তু প্রিয় রাজি হলো না। মিথিলা ওকে বোঝালো যে স্থায়ীভাবে সমাধান পেতে হলে ওকে বেশ ভালো করেই ভয় দিতে হবে না হলে কাজ হবে না।

– তোমাদের কমন বন্ধুবান্ধব যারা আছে তাদের সবার কাছে ওর খোঁজ-খবর নাও। এমনভাবে খোঁজখবর নিতে হবে যাতে সবাই বুঝে যে তুমি সত্যিই ওর জন্য খুবই কন্সার্ন। কারণ তুমি যে ওকে এভাবে বাটি চালান দিয়ে খুঁজেছে এ কথা ওর কানে নিশ্চয়ই কেউ না কেউ পৌঁছাবে। তুমি নিশ্চিত থাকো ও গায়েব হয়ে গিয়েছে একদম। বিন্দু মোটেই প্রেগনেন্ট না। সে চেয়েছে প্রেগনেন্সির নাটক করে তোমাকে ফাঁদে ফেলার। আজ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো একথা শুনেই সে ভয় পেয়েছে। কারণ ডাক্তারের কাছে গেলেই তো সব গোমর ফাঁস হয়ে যাবে।

মিথিলার এত চমৎকার বুদ্ধিতে প্রিয় কুপোকাত। সে ভীষণ খুশি মিথিলার উপর। চোখমুখের সেই বিষন্নতার ছাপ মুহূর্তেই গায়েব। মিথিলার বুদ্ধি মতোই সে মিথিলাকেসহ বিন্দুর বাসাতে গেল। বিন্দুর বাসা ছয় তলাতে। মিথিলা গেটেই রইল। সে দারোয়ানের কাছে বিন্দুর ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। কোথায় গেছে, কখন গেছে, কখন ফিরবে এসব টাইপের কথাবার্তা। এমন ভাবে কথাগুলো জিজ্ঞেস করছে যেন সে বিন্দুকে ফিরে পাওয়ার জন্য খুব ব্যাকুল। সে আসামাত্র যেন দারোয়ান তাকে জানায় এ জন্য দারোয়ানকে সে নিজের নাম্বারটাও দিয়ে আসল।
আশানুরূপ ফলাফল নিয়েই ফিরল প্রিয়। বিন্দু গতকাল রাতে একটা হ্যান্ডব্যাগে হালকা কিছু কাপড়চোপড় নিয়ে কোথায় গেছে ওর রুমমেটরা কেউই জানে না। এখান থেকে যাওয়ার পর থেকেই তার সেলফোন বন্ধ। প্রিয় তাদের কাছে খুব কাকুতি-মিনতি করে বিন্দুর কোনো খোঁজখবর পেলেই তাকে যাতে সাথে সাথে জানায় সেই অনুরোধ করে আসলো।

খুব হাসি হাসি মুখ নিয়ে প্রিয় ড্রাইভ করছে আর পাশে মিথিলা বসা।

– তোর কি মনে হয় বিন্দু কি আর ফিরে আসবে?

– ফিরবে না কেন? ওমা! ফিরবে তো অবশ্যই।

– তাহলে আবার কষ্ট করে এত এত নাটক করলি কেন? তুই না বললি…!

– হা হা হা! ভয় পেয়ে গিয়েছিলে, ভাইয়া? সে ফিরবে কোথায়? সে তো ঢাকাতেই আছে। আছে হয়তো তার কোন বন্ধুবান্ধবের বাসায় দু-এক দিনের জন্য। গা ঢাকা দিয়েছে আমাদের ভয়ে। অথবা নতুন কোন মুরগির খোঁজে নেমেছে। একটা তো হাতছাড়া হয়েছে নতুন আরেকটা ম্যানেজ করতে হবে না।

– মুরগী বলছিস কেন? বল মোরগের খোঁজে নেমেছে। আমাকে কোন অ্যাঙ্গেলে তোর মুরগি মনে হয়?

– তুমিতো মুরগিই। নইলে এই সামান্য একটা বিষয়ে তুমি যেসব কান্ড করেছ, মাই গড!

– তুই এটাকে সামান্য বলছিস? আমার জীবন মরণের প্রশ্ন! তুইতো বিন্দুকে সামনাসামনি দেখিস নি। ওর খপ্পরে পড়লে তুই বুঝতি কত ধানে কত চাল।

– আমি তো দেখতেই চেয়েছিলাম কত ধানে কত চাল। কিন্তু তার আগেই তো তোমার বিন্দু লেজ গুটিয়ে পালাল।

– এটা ঠিক বলেছিস। কীভাবে যে আমি ফেঁসে গেলাম ওর জালে? সেসব ভাবলে এখন নিজেই অবাক হই।
আসল কথা কি জানিস কাউকে সত্যি ভালোবাসলে মানুষ বোকা হয়ে যায়। আমিও হয়েছিলাম।
বিচার বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছিলাম। ভাগ্যিস ব্যাপারটা আব্বু আম্মুর কানে পৌঁছানোর আগেই সব সহী সামলাতে শেষ হয়েছে। সবই তোর কারিশমায়। তোর বুদ্ধির প্রশংসা যত করব ততই কম পড়বে। এবার বল, কী চাস আমার কাছে?

– হা হা হা! মজুরি দিবে?

– মজুরি বলছিস কেন? পুরস্কার দিতে চাচ্ছি!

– কিছুই লাগবে না। তুমি সুস্থ থাকো , ভালো থাকো এটুকুই চাই।

– সে তো আমি থাকবই। বেয়াদবটা আমার জীবন অতীষ্ঠ করে তুলেছিল এই ক’দিন। এবার ভালো কিছুই হবে আশা করছি।

– আচ্ছা, ঠিক আছে । এবার এক কাজ করো আমাকে একটু মেহরাবের স্কুলে নামিয়ে দাও। স্কুলে একটু কাজ আছে। ওর টিচারের সাথে কথা ছিল।

– ক’টার দিকে যেতে হবে?

– টাইম ফিক্সড নেই। ছুটির আগে যেকোনো সময় গেলেই হবে।

– বাসায় যাবি কি করে ড্রাইভারকে আসতে বলেছিস?

– হ্যা, উনি স্কুলেই আছে। মেহরাবকে নিয়ে এসে আর যায়নি।

– আচ্ছা, এক কাজ করি তবে! লাঞ্চের পরেই তবে স্কুলে যাই।

– তুমিও যাবে নাকি ? অবাক হয়ে বলল , মিথিলা।

– হ্যা! গেলে কি অসুবিধা?

– না , না! অসুবিধা হবে কেন? আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। তাই অবাক হলাম আর কি! কখনো যাওনি তো! তাছাড়া মেহরাবের সাথে তো তুমি তেমন কথাবার্তাও বলো না ।

– আসলে ও অনেক ছোটো তাই ওর সাথে কথাবার্তা হয় না। এছাড়া আর কিছুই না। চল, আজ ওকে চমকে দেই।

– ওর জন্য একটা গ্রেট সারপ্রাইজ হবে ,ভাইয়া। তুমি ওর সাথে একটু কথাবার্তা বললে ও খুব খুশি হবে। আচ্ছা, তুমি যে আমার সাথে যাবে তোমার অফিস নেই?

– নাহ, আপাতত যাচ্ছি না। চল ,আজ একসাথে কোথাও লাঞ্চ করি। তোর পছন্দমতো লাঞ্চ হবে আজ। লাঞ্চের পরেই স্কুলে যাব। পরে সেখান থেকে মেহরাবের ছুটির পর কোথাও মুক্ত বাতাসে ঘুরে আসব তিনজন মিলে।

– কী বলছ? এত সময় হবে তোমার?

– আজকের জন্য সব মাফ! সময় হয়ে যাবে। চল, দিয়াবাড়ি ঘুরে আসি। খানিককাল লেকে নৌকায় ভেসে বেড়াব একসাথে।

– তাই ! নৌকা আমার কী যে পছন্দ! থ্যাংক ইউ সো মাচ , ভাইয়া। মেহরাবও ভীষণ লাইক করে বোটিং!

– দ্যাটস গ্রেট। বহুদিন পর নিজেকে মুক্ত লাগছে। মনে হচ্ছে বিশাল বড় বোঝা নেমে গেছে মাথার উপর থেকে।

– হুম, এটা ঠিক বলেছ। খুব ভালো একটা সময় পার করব তিনজনে।

– হুম।।

ঢাকায় ফিরেছি তিন দিন হলো। ধীরেধীরে সিলেটের ওই ব্যাপারটা মাথা থেকে নেমে যাচ্ছে। নিজেকে কিছুটা ফ্রেশ লাগছে। যত তাড়াতাড়ি ঐ আসিফ চ্যাপ্টার ভুলে যাব তত তাড়াতাড়িই নিজেকে ভারমুক্ত মনে হবে। বাসায় ফিরে যা দেখে খুব ভালো লাগছে সেটা হলো প্রিয়র ব্যবহারে ব্যাপক চেঞ্জ। আগের মতো মিথিলা আর মেহরাবের সাথে মুখ গোমড়া করে থাকে না। বেশ ফ্রী ওদের সাথে। একসাথে বসে আড্ডা দেয় , গল্পগুজব করে।
ব্যাপারটা সেলিমের কাছে যে বেশি ভালো লাগছে না সেটাও আমি টের পাচ্ছি। কিন্তু এ নিয়ে আর কথা তুলতে ইচ্ছে হলো না। ওর যা ভাবার ভাবুক।

পরেরদিন সকালবেলা নিচে নামতেই দেখি সাজিদ বসে আছে ড্রয়িং রুমে। এত সকালে ওকে দেখে খানিকটা অবাক হলাম। সেলিম আজ বেশ ভোরে বেরিয়ে গেছে। ওর সাথে কাজ থাকলে সাজিদ অফিসে যেতে পারত। আমি সাজিদের কাছে যেয়ে কুশলাদি বিনিময়ের পরে জানলাম কী একটা জরুরী কাজে নাকি প্রিয়র কাছে এসেছে। আমি প্রিয়কে খবর পাঠিয়ে কিচেনের দিকে পা বাড়ালাম। কিচেনে যেয়ে দেখি মিথিলা গুণগুণ করে গান গাইছে আর চা বানাচ্ছে। কিছুটা অবাক হলাম। কুলসুমই এই কাজ করে। মিথিলা কেন করছে?

– কী রে কুলসুম কোথায়? তুই কিচেনে?

– না… মানে …রূম্পা মা! কুলসুম খালা অন্য কাজে ব্যস্ত তাই আমিই গেস্টের জন্য নাস্তা রেডি করছি।

– কুলসুমের তো এসময়ে কিচেনেই ব্যস্ত থাকার কথা । সে আবার কোথায় কী কাজে ব্যস্ত?

– আরে বাদ দাও না!

– বাদ দাও না মানে! বাসায় গেস্ট এসেছে আর সে উধাও! তোর না ক্লাস আছে?

– আছে তবে একটু দেরীতে। দেরী করে বেরুব। তাই সমস্যা হবে না। তোমার কিছু কী লাগবে?

এরমধ্যে কুলসুম এসে কিচেনে ঢুকল।

– কী রে! কই মরেছিস? বাসায় গেস্ট এসেছে চোখে পড়ছে না?

– আম্মা, আমি তো নাস্তা বানাইতেই চাইছি কিন্তু আফায়ই আমারে না করল। কইল সেই বানাইবে। আমি আর কী করতাম? এইহানে আমার কী দোষ কন?

মিথিলার চোখে চোখ পড়তেই আমি বুঝতে পারলাম ও মনে হচ্ছে কিছু লুকাচ্ছে। আমি ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলাম।

– ও বুঝেছি। আচ্ছা , যাহ! টেবিলে আমার নাস্তা দে। আম্মা খেয়েছে?

– হ, আম্মা । ম্যাডামে খাইছে। আফনে তো আজ দেরী কইরা উঠছেন।

– হুম, একটু দেরি হয়ে গেল। গতকাল কিছু ফাইলপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। তাই উঠতে দেরি হলো। আচ্ছা , আম্মা ওষুধ তো খেয়েছে তাই না!

– হ। ওষুধ খাইতে কী আর ভুল হয়? মিথিলা আফায় আছে না।

– হুম, ও আছে বলেই নিশ্চিন্তমনে থাকি।

মিথিলা নাস্তার ট্রে হাতে সাজিদের কাছে গেল। সাজিদ এক পলকে তাকিয়ে আছে মিথিলার দিকে।

শ্যামবরণের মিথিলাকে চোখের নিচে পুরু কাজল আর হালকা গোলাপি লিপগ্লসে আজ অসাধারণ লাগছে। সাজিদ কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারছে না। মনে হচ্ছে কী এক মায়া যেন তাকে গ্রাস করে নিয়ে যাচ্ছে। কলেজ লাইফে তার সুদর্শন চেহারায় লাট্টু হয়ে কত মেয়ে ঘুরঘুর করেছে সেও অনেকের সাথে ফ্লার্ট করেছে কিন্তু কারো মায়ায় সে ডুব দিয়ে থাকতে পারেনি বেশিক্ষণ। আজকাল কী যেন হয়েছে তার? নিজেই বুঝতে পারছে না। এই নিয়ে তিন বার দেখল সে মিথিলা কে। অথচ তার কাছে মনে হয় যুগ যুগ ধরে সে মিথিলার কত কাছাকাছি, কত চেনাজানা! কাল রাতে প্রিয়র সাথে কোম্পানী অডিটিং এর ব্যাপারে নানান কথা বলতে বলতে প্রিয় যখন তাকে বলল, মিথিলা তাকে বাসায় এসে এক কাপ চা খাবার দাওয়াত দিয়েছে তখন সে আর ভালো মন্দ , উত্তর পশ্চিম কিছু না ভেবেই রাজী হয়ে গেল । একবার ভেবেছিল আসবে না। কিন্তু কী এক চৌম্বকীয় শক্তি তাকে এখানে টেনে নিয়ে এল।

মিথিলা চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো সাজিদের দিকে। কিন্তু সাজিদের কোনো হুশ নেই। সে অপলক তাকিয়েই আছে মিথিলার দিকে।

– মিথিলা খানিকটা অবাক হয়ে বলল, আরে! ভয় পাচ্ছেন নাকি? ভয় নেই আমি এবার আর কোনো লবন মেশাইনি। একদম সবকিছু ঠিকঠাক দিয়েছি। আপনার রিকোয়্যারমেন্টস মতোই দু’চামচ চিনি , দু’চামচ দুধ দিয়ে বানিয়েছি। সেদিন যে বলেছিলেন আমি মনে রেখেছি। এক ভুল কী আর দ্বিতীয়বার করি? এবার আর ভাইয়ার কাছে নালিশের করার কোনো চান্স রাখিনি।

– সাজিদ এবার সতর্ক হলো। সে করছে টা কী? এভাবে তাকিয়ে থাকলে তো সে ধরা পড়ে যাবে। ছিঃ ছিঃ ! কেমন একটা ব্যাপার হবে তখন?
সে মিথিলার হাত থেকে চায়ের কাপ নিলো।

চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, বাহ! আপনি তো সত্যিই অনেক ভালো চা বানান। প্রিয় তবে ঠিকই বলেছে। ধন্যবাদ এত চমৎকার চায়ের জন্য।

– আমি কেমন চা বানাই এটা ভাইয়ার তো জানার কথা না। এ বাড়িতে চা শুধু কুলসুম বুয়াই বানায়। ভাইয়া তো আমার বানানো চা কখনো টেস্টই করেনি। এখন তো মনে হচ্ছে আমাকে খুশি করার জন্য আপনি বাড়িয়ে বলছেন!

– আরে নাহ! বাড়িয়ে বলব কেন? প্রিয় সতিই বলেছে। তবে আমি কিন্তু নিজেকে লাকি মনে করছি। প্রিয় টেস্ট করতে না পারলেও আমি ঠিকই দু’ দু’বার আপনার হাতের চা টেস্ট করার সুযোগ পেলাম।

– হা হা। এটা ঠিক বলেছেন। তবে আপনার বন্ধু বেশ একটা মিথ্যে বলেছে। ভাইয়া দেখছি আজকাল বেশ বড়সড় মিথ্যে বলে!

– তাই নাকি! আজ যে আপনি আমাকে চায়ের দাওয়াত দিয়েছেন এটাও কি তবে মিথ্যে ?

মিথিলা খানিকটা ঘাবড়ে যেয়ে বলল, না …না! মিথ্যে হতে যাবে কেন? সেদিন যে নুন চা খেয়ে গেলেন তার ভরপাই করতে হবে না। আমিই ভাইয়াকে বলেছিলাম সেদিন। বিশ্বাস করুন সেদিন আমি বুঝতেই পারিনি ওটা লবণের পট ছিল। আমি াপনি যাবার পরে ভুল করে নিজের জন্যও বানিয়ে ফেলেছিলাম। পরে চা মুখে দিতেই বুঝলাম ওটা লবণ ছিল। আচ্ছা, আপনি কেমন মানুষ বলুন তো! আমি না হয় তড়িঘড়ি করে করে ভুল করে ফেলেছি তাই বলে আপনিও আমাকে বলবেন না?

– না মানে! আমার কাছে ততটা খারাপ লাগেনি। ভালোই তো ছিল। নতুন টেস্টের সাথে পরিচিত হলাম। আপনি এত যত্ন করে বানিয়েছেন সেটাকে রেখে যাই কী করে বলুন! সবসময় স্বাদের দিকে খেয়াল করলে হয় বলুন! আপনি আমার জন্য কষ্ট করে বানিয়েছেন ! আমি যদি রেখে যেতাম তাতে আপনাকে অপমান করা হয় না, বলুন!

– মিথিলা এবার আর না হেসে পারল না। বেশ শব্দ করেই হাসল। হাসছে আর ভাবছে প্রিয় আবারও মিথ্যে কেন বলল? সে তো সাজিদিকে আজ আসার জন্য বলেনি। এমনকি সাজিদ প্রসঙ্গে কোনো কথাও হয়নি সেদিনের পর আর। কথা প্রসঙ্গে বাসায় আবার আসতে বলেছিল চায়ের দাওয়াতে তবে সেটা বেশ আগে। কিন্তু ব্যাপারটা প্রিয় যে সিরিয়াসভাবে নিয়েছে সেটা বুঝতে পারেনি।

আমি ডাইনিং টেবিলে বসে আড়চোখে সবই খেয়াল করছিলাম। কিছু একটা আভাস ঠিকই টের পাচ্ছিলাম। সাজিদের চোখে আমি স্পষ্ট মিথিলার জন্য টান , অনুভূতি, ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি। মিথিলাও দেখলাম ওর প্রতি বেশ সাবলীল। সাজিদকে ছেলেবেলা থাকে চিনি। খুবই ভালো ছেলে। ওর পরিবার সম্পর্কে খুব বেশি কিছু না জানলেও এটুকু বুঝি যে মোটামুটি এলিগ্যাণ্টই হবে। ওর মাকে দেখেছিলাম বেশ আগে। প্রিয়র থেকে আরেকটু খোঁজখবর নেয়ার তাগাদা অনুভব করলাম। আমি যেমনটা ভাবছি তেমনটা হলে মন্দ হবে না। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম আগামীকালই যে কোনো অজুহাতে সাজিদদের বাড়িতে যাব। ওর আদ্যোপান্ত সব জেনে আসব।

দু’জনকে পাশাপাশি বেশ মানিয়েছে। মিথিলার গায়ের রঙ শ্যামলা আর সাজিদের দুধ সাদা। দারুণ কম্বিনেশান। পাশাপাশি যা লাগছে না! মাথার মধ্যে শুধু একটাই কথা ঘুরছে মেয়েটা তবে এবার পর হয়েই যাচ্ছে। তবে আমিও খুব সিলেক্টিভ এ ব্যাপারে। শুধু সাজিদিকে দেখেই আমি কোনো সিদ্ধান্তে যাব না! আমি পারিপার্শ্বিক সব দিক ভেবেচিন্তে তারপর এতিম মেয়েটাকে অন্য ঘরে পাঠাব। আমি চাই না আমার আর ওর মায়ের মত সারাজীবন সাফার করুক। সবদিক দেখেশুনে ওকে বিয়ে দিব।

মিনিট বিশেক পরে প্রিয় নিচে নামল। প্রিয় আসার পরে মিথিলা ওর রুমে চলে যায়। মিথিলার চলে যাওয়াটা খুব যে ভালো লাগেনি সাজিদের সে আমি দূর থেকেই ওর চেহারা দেখে বুঝতে পারলাম। কিছু যে চলছে সে আমি নিশ্চিত ।

রাতে প্রিয়র রুমে নক করলাম। প্রিয় সজাগই ছিল। আমি নানান কথার ছলে বারবার সাজিদকে তুলছি। আমি সরাসরি প্রিয়কে জিজ্ঞেস করতে চাইছিলাম না। আমি চাইনি প্রিয় কিছু টের পাক। আগে আমি ইনভেস্টিগেশান করব তারপর সবাইকে জানাব। কিন্তু প্রিয় ঠিকই না বললেও আমার চালাকি ধরে ফেলল।

– কি ব্যাপার, আম্মু! তুমি কি সাজিদকে নিয়ে অন্য কিছু ভাবছ?

– অন্য আবার কী ভাবব? তোমার যা কথা!

– হা হা হা! তুমি না বললেও তোমাকে কিছুটা তো বুঝি। আফটার অল আমি তোমার ছেলে। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে জিজ্ঞেস না করে সোজা করে জিজ্ঞেস করো সাজিদকে জামাই করতে চাচ্ছ।

– কী যে বলছ! আচ্ছা, বুঝতেই যখন পেরেছ তবে বলি। হুম, ছেলেটাকে আমার পছন্দ হয়েছে। এখন তু্মি তোমার মতামত দাও! কেমন হবে ব্যাপারটা?

– সাজিদ যে কেমন তা তো আমার মতো তুমিও জানো। নতুন করে কী বলব? হলে মনে হয় মন্দ হবে না।

– না মানে ওর ফ্যামিলি সম্পর্কে কিছু কি জানো?

– ওর বাবা সচিব ছিলেন। মারা গেছেন দুই বছর আগে। একটা ছয়তলা বাড়ি আর নগদ পয়সাকড়ি ্মেই বি কিছু আছে। সাজিদরা দু ভাই এক বোন। ওই বড়। এরপরে বোন । বিবিএ ফাইনাল ইয়ারে। আর একদম ছোটোটা এবার এইচ এস সি দিবে। এই তো ! আর ওর মা বেশ ধার্মিক মহিলা। আর কিছু জানতে চাও। অবশ্য চাইলেও লাভ নেই। আমার আর কিছু জানা নেই। এখন বলো হঠাৎ সাজিদকেই কেন টার্গেট করলে?

– আমার মনে হয় সাজিদ আর মিথিলা দু’জন দু’জনকে পছন্দ করে।

– তুমি শিওর?

– হুম! নাইনটি পার্সেন্ট। আমি চাই না আমার মতো একই ভুল আবার মিথিলাও করুক। তাই ভালো করে জেনেবুঝে আগাতে হবে।

– ঠিক বলেছ। দেখো , কি করবে!

– আচ্ছা। দেখি কী করা যায়। তুমি তবে ঘুমাও। গুড নাইট।

– গুড নাইট।

প্রিয় হঠাৎ যেন বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। সাজিদ যে মিথিলাকে পছন্দ করে এ কথা সে সেদিনই বুঝেছে। কিন্তু মিথিলার ব্যাপারটা ক্লিয়ার ছিল না। কাল যখন কথা প্রসঙ্গে সাজিদ মিথিলার কথা তুলেছিল তখন প্রিয় সাজিদকে মিথ্যে করে বলেছিল মিথিলা তাকে চায়ের দাওয়াত দিয়েছে। সাজিদ যে এত তাড়াতাড়ি সেটা বিশ্বাস করে চলে আসবে সে ভাবেনি। কিন্তু সকালবেলা অফিসে যাওয়া বাদ দিয়ে তাদের বাসায় হাজির। সাজিদ এসেছে দেখে সে শতভাগ নিশ্চিত হয়েছে যে সাজিদ আসলেই মিথিলার প্রতি দুর্বল। মনে মনে খানিকটা হেসেছে সকালবেলা সাজিদ আসার খবর শুনেই।

সারাজীবন হাজার মেয়েদেরকে তার পেছনে ঘুরিয়ে এখন শেষমেষ এসে মিথিলার ঘাড়ে জুড়ল। কিন্তু মিথিলাও যে সাজিদকে পছন্দ করে এ কথা তার জানা ছিল না। তার মায়ের কাছে এ কথা শোনার পর থেকে সে খানিকটা অবাক হলো। তার আম্মুর সন্দেহ কখনো ভুল হয়েছে বলে তার মনে পড়ে না। এবারও নিশ্চয়ই মিথ্যে প্রেডিকশান করেনি।

মিথিলা সাজিদকে পছন্দ করে এ কথা যতবারই সে ভাবছে ততবারই কেন যেন তার বুকের ভেতর চিনচিন করে ব্যাথা করে উঠছে। কিন্তু কেন? এ কথা সে নিজেই জানে না। সারারাত আর ঘুম আসছে না তার। বিছানায় এ পাশ ওপাশ করছে। কেন এমন আজব অনুভূতি হচ্ছে সে বুঝতে পারছে না।

চলবে…

পর্ব- ২৭
https://www.facebook.com/111576077291737/posts/366054491843893/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here