Child Of Night part-8

0
1874

#Child_Of_Night
Writer : Tanjima Islam

[9]

হসপিটাল থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সির জন্য দাঁড়িয়ে আছে নীরা। গতকালকের ঘটনা তাকে সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে দেয়নি।
সকাল হতেই সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাতে এসেছিলো নীরা। ডক্টর তাকে এনালাইসিস করে বলেছে,

” এতে চিন্তার কিছু নেই। এক্সিডেন্ট এর কারণে এমনটা হয়েছে। কিছুদিন স্ট্রেস ফ্রি থাকার চেষ্টা করুন। ফ্যামিলির সাথে সময় কাটান। চাইলে শহর থেকে দূরে ঘুরতে যেতে পারেন। আশা করি খুব শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠবেন।

নীরারও এখন তাই মনে হচ্ছে। সেদিন রাত থেকেই অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটেছে তার সাথে।
তাকে দূরে কোথাও যেতে হবে। ভ্যাকেশনও শুরু হয়েছে। নীরার ভাবনায় ছেদ পড়ল ট্যাক্সি ড্রাইভারের ডাকে। ট্যাক্সিতে উঠে বসল সে।
বাসার সামনে এসে দাড়াতেই নীরা ভাড়া মিটিয়ে এগিয়ে আসতে লাগল।
এখন নাস্তা সেরে আবার মিলিয়ানকে নিয়ে সি সাইড এ যাবে। বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিংবেলটা বাজাবে এমন সময় সারলোট তাকে ডেকে বলল,

” নীরা আন্টি! আপনার সাথে কিছু কথা আছে।

বাসার সামনে বাগানে দাঁড়িয়ে আছে সারলোট। দু’হাত বারবার কচলাকচলি করছে। মনে হচ্ছে সে মনেমনে কিছু একটা ভাবছে।

” হ্যাঁ বলো। শুনছি।

” একটু এদিকে আসবেন!

নীরা এগিয়ে এলো বাগানের দিকে। সারলোট বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। মেয়েটা এমন অদ্ভুত আচরণ করছে কেন? নীরা বাগানে এসে বলল,

” কি হয়েছে সারলোট? তুমি ঠিক আছো?

” আন্টি, আসলে। কিভাবে বলবো বুঝতে পারছিনা।

” বলো আমি শুনছি।

” গতকাল সকালে আমি ড্যানি’র (সারলোটের কুকুর) সাথে বল নিয়ে লনে খেলছিলাম। খেলতে খেলতে আমার বলটা উড়ে আপনার রুমের পাশে চলে যায়। আমি বল আনতে গিয়ে দেখি বলটা আপনার ক্যাকটাস গাছের মধ্যে আঁটকে আছে।

” হুম, তারপর?

” আমি বল ছাড়াচ্ছিলাম। তখন দেখলাম ঐ যে লম্বা চওড়া যে লোকটা মিলিয়ানের মিউজিক টিচার, কি যেন নাম?

” ওরহান।

” হ্যাঁ ওরহান। উনি বাসার কলিংবেলটা বাজালো। এর পরপরই আপনি এসে দরজা খুলে দিলেন।

নীরা এবার বিরক্ত হয়ে বলল, ” হ্যাঁ খুলেছিলাম হয়তো। আমার সঠিক মনে নেই। আসলে আমার এক্সিডেন্ট

নীরার কথা না শুনেই সারলোট উত্তেজিত হয়ে বলল, ” কিন্তু আপনি তো তখন ঘুমিয়ে ছিলেন!

” মানে!?

” মানে, আমি আপনার রুমের পাশে দাড়িয়ে বল নিচ্ছিলাম। তখন জানালার দিকে দিকে তাকিয়ে দেখি আপনি আপনার বেড এ ঘুমিয়ে আছেন।

” এই যে বললে, আমি দরজা খুলেছিলাম!

” সেটাই তো বলছি। আপনি একই টাইমে দুই জায়গায় কিভাবে ছিলেন?

সারলোটের চোখেমুখে স্পষ্ট বিস্ময় দেখা যাচ্ছে। নীরা কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। তার তো মনেই নেই কখন সে ওরহানকে কল করল আর কখনই বা দরজা খুলে মিলিয়ানকে তার সাথে পাঠিয়ে দিল। আর এখন এই মেয়ে বলছে সে নাকি ঘুমিয়ে ছিলো। নীরা না চাইতেও হেসে বলল,

” হয়তো তোমার চোখের ভুল। এসব নিয়ে ভেবো না।

সারলোটকে আর কিছু বলতে না দিয়ে নীরা দ্রুত পায়ে বাগান থেকে বেরিয়ে এসে কলিংবেলটা বাজালো। সারলোট সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে না সে ব্যাপারটা এত হালকা ভাবে নেবে। যদি সে সত্যিই নীরাকে একই টাইমে দুই জায়গায় দেখে থাকে তাহলে?

_______________________
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
মাত্রই লাঞ্চ করে উঠল নীরা আর মিলিয়ান। নীরা এটো থালাবাসন নিয়ে কিচেনে রেখে এসে দেখল মিলিয়ান এখনও চুপচাপ বসে আছে। মনে হচ্ছে সে কিছু একটা বলতে চায়। নীরা স্মিত হেসে বলল,

” কি ব্যাপার মিলিয়ান? কিছু বলবে?

মিলিয়ান হাতের নখ খোটাচ্ছে। নীরা কিছুক্ষণ মিলিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। কিন্তু মিলিয়ান চুপ আছে দেখে বলল,

” আচ্ছা, আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।

নীরা একটা চেয়ার টেনে মিলিয়ানের দিকে ফিরে বসল। মিলিয়ান এখনও নখ খুটিয়েই যাচ্ছে। নীরার ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত লাগল। মিলিয়ান সাধারণত কখনো পা নাচায় না বা এরকম নখও খোচায় না। বলতে গেলে মিলিয়ানের কোনো ধরনের বদ অভ্যাস নেই। অথচ আজ যেন সে খুব নিখুঁতভাবে নখ খোটাচ্ছে। নীরা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বলল,

” আমরা পরশু বাংলাদেশ যাচ্ছি। ভাবছি এবারের ভ্যাকেশন আমরা ওখানে কাটাবো।

” আমরা মানে?

মিলিয়ান এতক্ষণে সরাসরি নীরার দিকে তাকিয়েছে। নীরা হেসে বলল, ” আমরা মানে আমরা। তুমি আর আমি।

” আমার ওখানে যাওয়াটা ঠিক হবে না।

মিলিয়ান সোজাসাপটা বলে দিল। নীরা খেয়াল করল মিলিয়ান সামনে তাকিয়েও নখ খুটিয়েই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সে আজ নখ সব তুলে ফেলবে। নীরা কিছুটা অবাক হয়ে বলল,

” কিন্তু কেন? তুমি কি তোমার নানা নানুর সঙ্গে দেখা করতে চাও না!?

” ওনারা আমাকে অপছন্দ করে।

নীরা এবার বেশ অবাক হয়ে গেলো। তার বাবা-মা যে মিলিয়ানকে পছন্দ করে না, সেটা মিলিয়ান জানলো কিভাবে? পরক্ষণেই মনে হল, হয়তো মীরার সাথে বাবা-মায়ের কথাবার্তা শুনেছে মিলিয়ান। শুনতেই পারে। হতে পারে মীরা নিজেই মিলিয়ানকে বলেছে। নীরা হাসার চেষ্টা করে বলল,

” কে বলেছে তারা তোমাকে অপছন্দ করে? ওনারা নিজেই আমাকে ফোন করে বলেছে যেন, তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাই।

” আচ্ছা, ভ্যাম্পায়াররা কি ভবিষ্যৎ জানে?

কথার মাঝখানে এমন অদ্ভুত কথা শুনে নীরার মেজাজ বিগড়ে গেলো। মিলিয়ান এখনও তার দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নীরা একটা বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

” ভবিষ্যৎ কেউ জানে না, একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া। আর এটা নিশ্চয়ই তোমার অজানা নয় মিলিয়ান।

নীরা শান্ত গলায় বললেও তার কথার ঝাঝ বেশ বুঝতে পেরেছে মিলিয়ান। সে একমুহূর্ত নীরার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

” তাহলে ওরা কিভাবে জানলো যে, তোমার বাবা-মা আমাকে অরফানেজ এ দিয়ে দিতে চায়!

এবার যেন আকাশ ভেঙে পড়ল নীরার মাথায়। সে ভেবেছিলো তার কঠিন কথা শুনে মিলিয়ান চুপসে যাবে বা মন খারাপ করবে।
কিন্তু না, সে পালটা উত্তর দিচ্ছে। আর সবচেয়ে বড় কথা সে কিভাবে জানলো যে, বাবা-মা তাকে অরফানেজ এ দিতে বলেছে!
নীরার যেন বিস্ময়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। সে খেয়াল করল মিলিয়ান চুপ থাকলেও তার শান্ত চোখমুখ দিয়ে অমিত তেজের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। কেমন যেন একটা তেজস্বী চাহনি।
মিলিয়ান চেয়ার ছেড়ে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো। নীরা হতবাক হয়ে বসে আছে।
এ কাকে দেখল নীরা! এটাই কি তার শান্তশিষ্ট মিলিয়ান? মাথার ভেতরটা কেমন যেন ফাকা ফাকা লাগছে।
______________________
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শীত চলে এসেছে, শুভ্র সাদা বরফের চাদরে ঢেকে গেছে রেগেন্সবুর্গের রাস্তাঘাট।
অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা পিচ ট্রি গুলোতে বরফ জমে ক্রিসমাস ট্রি’র মতো দেখাচ্ছে। দানিয়ুব সি সাইড এর একটা নিরিবিলি রেস্টুরেন্টের কর্নারে বসে আছে নীরা। ওরহানের সাথে বিকেল সাড়ে চারটায় এখানেই মিট করার কথা ছিল তার, বেশিক্ষণ ওয়েট করতে হয়নি।

নীরা এসে কফি অর্ডার করতে না করতেই ওরহান এসে গেছে। সে নীরার অপজিটের চেয়ারে বসে পড়ল। নীরা একটা সৌজন্যতা মূলক হাসি দিয়ে বলল,

” কেমন আছেন মি. ওরহান?

” আলহামদুলিল্লাহ! ভালো আছি। আপনি?

” ভালো আছি।

কিছুক্ষণ নিরব থাকল দুজনেই, নীরা বুঝে উঠতে পারছেনা কোথা থেকে শুরু করবে।
আসার আগে সব কথা মনেমনে গুছিয়ে রেখেছিল, কিন্ত কেন জানি সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। নীরাকে অন্যমনস্ক দেখে ওরহান নিরবতা কাটিয়ে বলল,

” মিস নীরা! আর ইউ ওকে?

” জ্বি! মানে

” মনে হচ্ছে আপনি কোনো কিছু নিয়ে টেনশনে আছেন। কিছু কি হয়েছে?

নীরা ইতস্তত দৃষ্টিতে ওরহান এর দিকে তাকালো। ওরহান নির্লিপ্তভাবে বসে আছে।
নীরার হটাৎ মনে হল ওরহানকে যেন আগের থেকেও বেশ জোয়ান লাগছে দেখতে।
তার চোখের উজ্জ্বলতা যেন ঠিকরে বের হচ্ছে। নীরার ধ্যান ভাংলো ট্রে রাখার শব্দে।
ওয়েটার দুই মগ কফি দিয়ে গেছে। ওরহান এখনও তাকিয়ে আছে নীরার দিকে। নীরা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

” আসলে, আপনি ঠিকই ধরেছেন। আমি খুবই টেনশনে আছি।

নীরা একটু থেমে আবার বলল, ” মিলিয়ান, খুব শান্তশিষ্ট একটা ছেলে। ওর মধ্যে আমি এই পর্যন্ত কোনো খারাপ দিক দেখিনি। বাচ্চা হিসেবে ও দুষ্টুমি করেনা বললেই চলে। কিন্তু

” কিন্তু কি?

নীরা জোরেজোরে নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করতে চাচ্ছে। ভীষণ অস্থির বোধ করছে সে। সামনে রাখা পানির বোতলটা নিয়ে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে বলল,

” মিলিয়ান খুব অদ্ভুত কথাবার্তা বলে।

” যেমন?

ওরহানের এমন স্বাভাবিক আচরণ দেখে নীরার অস্বস্তি আরও বেড়ে গেলো। সে থেমে থেমে ঢোক গিলছে। ওরহান বাকা হেসে বলল,

” কফিটা খেয়ে নিন, ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

নীরা কিছু না বলেই কফিতে চুমুক দিল। সাথেসাথেই চোখমুখ কুচকে এলো তার। যেন তেতো করলার জ্যুস খেয়েছে সে। ওরহান ওয়েটার ডেকে বলল,

” কফিটা ভালো হয়নি নিয়ে যান।

” আ’ম সো স্যরি স্যার। আপনাদের আরেক মগ কফি এনে দিই?

” না প্রয়োজন নেই।

” স্যার, টাকা লাগবেনা। ফ্রিতেই দেবো। কিন্তু ম্যানেজারকে বলবেন না প্লিজ।

” আরে ভেবো না, আমি কাউকে কিছু বলছিনা৷ এখন যাও।

ওয়েটারটা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে সেখান থেকে কেটে পড়ল। নীরা চুপচাপ বসে আছে। ওরহান আবার তার দিকে তাকিয়ে বলল,

” তো, কি বলে মিলিয়ান?

” আপনার হয়তো শুনে হাসি লাগবে৷ কিন্তু আমার ইদানীং খুব অস্বস্তি লাগছে। ও বলে যে, কাচা রক্ত কি খাওয়া যায়? তুমি কখনো রক্ত খেয়েছো? ভ্যাম্পায়ার কি? বাস্তবে কি আদৌ এদের কোনো অস্তিত্ব আছে? শুনেছি ওরা নাকি রক্ত খায়। কিন্ত রক্ত তো তরল পদার্থ। শত শত বছর ধরে শুধু তরল পদার্থ খেয়ে কিভাবে বাচে তারা? আচ্ছা ভ্যাম্পায়াররা কি ভবিষ্যৎ জানে? এমন আরও অনেক কিছু!

ওরহান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “এরমধ্যে অদ্ভুত কি আছে? আপনি কি ভ্যাম্পায়ার এ বিশ্বাস করেন না?

নীরা আরেক দফা চমকে উঠল। সে ভেবেছিলো ওরহান তার কথা শুনে হাসবে।
কিন্তু ওরহানের কথা শুনে মনে হচ্ছে নীরা নিজেই কোনো অদ্ভুত কথা বলেছে৷ ওরহানের কৌতুহলী দৃষ্টি দেখে নীরা অবাক হয়ে বলে উঠল,

” মানে!? কিসে বিশ্বাস করবো?

” ভ্যাম্পায়ার এ।

” আমি আপনাকে সিরিয়াস কথা বলছি আর আপনি আমার মজা নিচ্ছেন?

বেশ রেগেমেগে কথাটা বলল নীরা। ওরহান আগের মতই স্বাভাবিক ভঙ্গীতে বলল, ” আমিও তো সিরিয়াসলি জিজ্ঞেস করলাম।

ওরহানের কথা শুনে নীরা নিজের ঘটনাই আউলিয়ে ফেলেছে। ওরহান এবার নীরার দিকে আরেকটু ঝুকে এসে বলল,” আচ্ছা যদি বলি যে, এইমুহূর্তে আপনার সামনে একটা ভ্যাম্পায়ার বসে আছে!
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
[চলবে]

বিঃদ্রঃ অনেকদিন পর গল্প দিলাম। এতদিন কেন লেট হইছে কমবেশি সবাই জানেন। তো নতুন করে বলার কিছু নেই। এক্সামের প্যারায় আমার কি অবস্থা তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব🥴
তো পড়ালেখার পাশাপাশি যখনই সময় পেয়েছি লিখেছি। এখন থেকে এক্সাম শেষ হওয়ার আগে গল্প পোস্ট করতে লেট হবে। তবে বেশি না মাত্র দুইদিন। দুইদিন পরপর গল্প দিবো। হতে পারে সময় পেলে একদিন পরপরও দেবো। তবে হ্যাঁ, দুইদিনের বেশি সময় নিবোনা🙂
আর গল্পে ভাষা ট্রান্সলেট করিনি। আশা করি সবাই রিল্যাক্সে পড়তে পারবেন। আপনারা খুশি মনে পড়লেই আমি খুশি। শুধু আমার জন্য একটু দোয়া করবেন। যেন ভালো রেজাল্ট করতে পারি। জানিনা কি হবে।
এনিওয়ে, হ্যাপি রিডিং মাই ডিয়ার’স❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here