Friday, December 19, 2025
Home Blog Page 14

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা_মালিহা_খান❤️ #পর্ব-৩০(ভালবাসা দিবসের বিশেষ পর্ব)

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৩০(ভালবাসা দিবসের বিশেষ পর্ব)

ভার্সিটির পরীক্ষা শেষ হয়েছে গত পরশু।টানা পনেরদিনের পরীক্ষা শেষে বেশ ক্লান্ত মায়া।এই কয়দিন রোজ তাকে ভার্সিটি নিয়ে গিয়েছে আরিয়ান।সকালের অফিস বাদ দিয়ে তিনঘন্টা বসে থেকে তাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে বিকেলবেলা অফিসে গিয়েছে।ফিরতো রাতের বেলা।তবে শত ব্যস্ততার পরেও মায়াকে রোজ রাতে বুকে নিয়ে ঘুমাতে ভুলেনি।ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরে সর্ব প্রথম মায়ার কপালে উষ্ণ স্পর্শ দিতে একদিনও দেরি হয়নি।

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে বিছানায় একা অবস্থায় পেলো মায়া।প্রতিদিন আরিয়ানের বুকেই ঘুম ভাঙে তার।সে যতক্ষন না উঠে ততক্ষণ আরিয়ানের ঘুম ভেঙে গেলেও ও উঠে না।তবে আজকে কই গেলো?
গায়ের কম্বল সরিয়ে উঠে বসলো মায়া।রুম অন্ধকার করা।সে উঠে গিয়ে পর্দা সরিয়ে দিলো।অনেকটা বেলা হয়ে গিয়েছে।কাল রাতে খুব মাথা ব্যাথা করছিলো।আরিয়ান বেশ রাত পর্যন্ত মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছে।শেষে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে মনে নেই।
আড়মোড়া ভেঙে কাবার্ড খুললো সে।ভালো লাগছেনা।শাওয়ার নিলে হয়তো একটু ফ্রেশ লাগবে।জামাকাপড় নেয়ার উদ্দেশ্য কাবার্ড খুলতেই ভ্রু সংকুচিত হয়ে এলো তার।কাবার্ডের একটা কর্ণারে শাড়ি রাখা,সাথে কাঁচের চুরি,কানের দুল,গলার লকেট,সাজগোজের প্রসাধনীসহ সম্পূর্ণ তৈরি হতে মেয়েদের যা যা লাগে সেসব রাখা আছে।কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে শাড়িটা হাতে নিল মায়া।বেশ সুন্দর!লাল শাড়িতে লাল সুতা আর স্টোনের কাজ করা তবে কেমন যেন ঝিকমিক করছে শাড়িটা।আলোর রিফলেক্ট পরলে একেবারেই ছোট ছোট পাথর গুলা জলজল করছে।মুখে প্রশস্ত হাসি ফুটে উঠলো মায়ার।এতসব কিছু কিনলো কখন আরিয়ান আর এখানে রাখলোই বা কখন।শাড়ির ভাঁজ খুলতেই একটা একটা কাগজ নিচে পরে গেল।মায়া শাড়িটা একহাতে ধরে দ্রুত ঝুকে গিয়ে কাগজটা উঠালো।কাগজটা চোখের সামনে মেলতেই চোখ আটকে গেলো লেখা গুলোর মধ্যে,

আমার মায়াবতী,
তোমাকে প্রিয় বলে সম্মোধন করছিনা কারণ তুমি আমার প্রিয়র থেকেও অনেক বেশি কিছু।”প্রিয়” নামক ছোট্ট একটা শব্দে তোমাকে বিশ্লেষণ করার যৌক্তিকতা আমি খুঁজে পাইনি।তোমাকে”আমার”বলতেই শান্তি লাগে।তুমি শুধুই আমার।সম্পূর্ণই আমার।
সে যাই হোক,জিনিস গুলা খুব শখ করে কিনেছি আমি।এসব কখনোই কিনা হয়নি এই প্রথমবার কিনেছি,জানি তোমার পছন্দ নাও হতে পারে তবুও তোমাকে এগুলা পরতে হবে।এক ঘন্টার জন্য হলেও পরতে হবে।শুধু আমি একনজর মনভরে দেখবো তারপর না হয় খুলে ফেলো সব।
আর যদি একদমি পরতে ইচ্ছে না হয় তবে পরোনা।তোমার উপর রাগ করার স্বাধ্যি নেই আমার।তবে কষ্ট পাবো।সেই কষ্ট লাঘব করার জন্যও আবার সেই তোমাকেই লাগবে।তাই বলছি,পারলে আমার ইচ্ছেটা রেখো।আমার দেয়া রুপে নিজেকে সাজিও।

বি:দ্র:জিনিসগুলো তোমাকে সামনাসামনিই দিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু দেয়া হলোনা।অফিসে খুব জরুরি একটা কাজের জন্য বেরিয়ে পরতে হলো।ভেবেছিলাম তোমার ঘুম ভাঙিয়ে তারপর দিব।কিন্তু কি হলো জানো?পাক্কা পঁচিশমিনিট সময় নিয়েও তোমার ঘুমন্ত শরীরে একটা টোঁকা পর্যন্ত দিতে পারলাম না।যদি তুমি জেগে যাও অথচ আমি কিন্তু তোমাকে জাগানোর চেষ্টাই করছিলাম।কি অদ্ভুত তাইনা?

নিশ্চয় ভাবছো,আমি এতো কাব্যিক হলাম কবে?কাবার্ডের বামপাশের ড্রয়ারটা খুলে দেখ।উওর পেয়ে যাবে।

ইতি তোমার,
“আপনি”

এতক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো চিঠিটা পরলেও শেষে এসে হেসে ফেললো মায়া।আরিয়ান নিজেকে “আপনি”বলে সম্মোধন করেছে কারণ আজ পর্যন্ত আরিয়ানকে সে “আপনি”ব্যাতিত অন্যকোনো নামে ডাকেনি।নাম ধরেতো কখনোই না।মুখে প্রশস্ত হাসি টেনে চিঠিটা স্বযত্নে ভাঁজ করলো মায়া।পুনরায় কাবার্ডের রেখে দিল।শাড়িটা রেখে বাকি জিনিস গুলা দেখতেই সবচেয়ে বেশি অবাক হলো ব্লাউজ দেখে।শাড়ির সাথে ম্যাচ করা লাল ব্লাউজ তাও আবার একদম ওর মাপ মতো।
চিঠির লাস্টের কথাটা মনে পরতেই তড়িঘড়ি করে বামপাশের ড্রয়ারটা খুললো সে।সাথে সাথেই কতকগুলো মুড়ানো কাগজ তার পায়ের কাছে গড়িয়ে পরলো।হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলো মায়া।প্রায় বিশ পচিশটা মুড়ানো কাগজ দিয়ে ড্রয়ের ভরা।মানে আরিয়ান কতবার যে চিঠি লিখেছে আর কেটেছে সেটারই হিসাব।পুনরায় একচোট হেসে নিয়ে কাগজগুলো আবারো ড্রয়েরে ঢুকিয়ে রাখে মায়া।
অত:পর একটা থ্রিপিস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
গোসল শেষে চুল শুকাচ্ছে তখনই দরজায় নক করার শব্দ হলো।ইতির কন্ঠ শোনা যাচ্ছে,
—“ম্যাম,আপনি উঠেছেন?”
—“হ্যাঁ ইতি।আসো।
দরজা খুলে প্রবেশ করলো ইতি।তার হাতে খাবারের প্লেট।মায়া তোয়ালেটা কোনোরকম মাথায় পেঁচাতেই
ইতি বললো,
—“আমি চুল মুছে দেই ম্যাম।আপনি খান।স্যার আপনাকে সময়মতো খাইয়ে দিতে বলেছে।”

মায়া মৃদু হেসে বিছানায় বসলো।ইতি মায়ার হাতে প্লেট দিয়ে তার পিছে বসে আস্তে আস্তে মাথা মুছতে লাগলো।

—“আপনি কত লাকি ম্যাম!”

—“কেনো?”

—“এই যে আরিয়ান স্যার আপনাকে এত ভালোবাসেন।কারো ভালোবাসা পাওয়া অনেক সৌভাগ্যর ব্যাপার।”

মায়া লাজুক হেসে মুখে খাবার তুলে নিল।হঠাৎ কিছু একটা মনে পরতেই সে বললো,
—“তুমি শাড়ি পরাতে পারো ইতি?”
ইতি খানিকটা ঝুকে সন্ধিহান কন্ঠে বললো,
—“জি পারি।কিন্তু হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
—“না কিছুনা।চুল মুছো।”

________________
রাত ৯টা
মায়ার হাতে লাল কাঁচের চুরি,স্টোনের লাল কানের দুল,গলায় একটা ছোট্ট লকেট।চোখে শুধু কাজল দেয়া আর গাঢ় লাল লিপস্টিক।যদিও লিপস্টিকটা একটু কেমন যেন লাগছে মায়ার।কখনো এতো গাঢ় কালার লাগায়নি সে।সুন্দর তবে মনে হচ্ছে আরিয়ানের পছন্দ হবেনা।
এখন শুধু শাড়িটা সম্পূর্ণ পরা বাকি।পায়ের কাছে বসে কুচি ঠিক করছে ইতি।তার মুখে দুষ্টু হাসি।একটু পরপরই মায়াকে এটা ওটা বলে চেতাচ্ছে সে।
কুচি গুঁজে দিয়ে আঁচলটা জড়িয়ে দিতেই একদম তৈরি হয়ে গেলো মায়া।

ইতি তার চুলগুলো আঁচরে দিতে দিতে বললো,
—“আরিয়ান স্যারতো এমনিতেই আপনাকে চোখে হারায়।আজকে যে কি হবে?”বলেই ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো।

মায়া চোখগুলো ছোট ছোট করে বললো,
—“তুমি মনে হচ্ছে খুব এক্সপেরিয়েন্সড।”

ইতি জিভ কেটে বললো,
—“ধ্যাত্,কিসব বলছেন?”

—“আর তুমি যে আমাকে এতক্ষণ ধরে চেতাচ্ছ?”

ইতি বোকা হেসে আর কিছু বলেনা।মায়ার চুলগুলো আচড়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।মায়া একবার ঘড়িতে তাকায়।নয়টা বেজে বিশ মিনিট।সাড়ে নয়টা বা দশটার মধ্যই অফিস থেকে ফিরে আরিয়ান।
মায়া ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ায়।এখান থেকে বাড়ির মেইন গেট সম্পূর্ণ দেখা যায়।আরিয়ানের গাড়ি ঢুকলে এখান থেকেই দেখতে পারবে।

বেশ খানিকটা সময় পার হয়ে গেলেও আরিয়ানের দেখা নেই।মায়া অধৈর্যভাবে কিছুক্ষন পায়চারি করে।ঘড়ির কাঁটা দশটা ছুইছুই।ক্লান্ত একটা নি:শ্বাস ফেলে ব্যালকনির এককোণে রাখা দোলনায় বসে পরে সে।উদ্বেগ নিয়ে সদর দরজার দিকে চেয়ে থাকে।আরো অনেকক্ষন পার হয়ে যায়।আরিয়ান ফেরেনা।


পৌনে এগারোটার দিকে বাড়িতে ফিরে আরিয়ান।গাড়ি থেকেই দেখতে পায় নিজের রুমের লাইট অফ ব্যালকনিও অন্ধকার।একটা দীর্ঘ:শ্বাস ছাড়ে আরিয়ান।মায়া মনেহয় ঘুমিয়ে পরেছে।দ্রুত বেরিয়ে পরণের ব্লেজার খুলতে খুলতে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকে।রুমে ঢুকে বুঝতে পারে সেখানে কেউ নেই।লাইট বন্ধ।মায়া কি তাহলে ওয়াশরুমে?ব্লেজারটা বিছানায় রেখে লাইট জ্বালায় আরিয়ান।ওয়াশরুমের দরজায় টোঁকা দিয়ে বলে,”মায়া?তুমি ভেতরে?”
উওর আসেনা।দরজার লক ঘুরাতেই খুলে যায় সেটা।নাহ্ ভেতরে নেই মায়া।তবে?ব্যালকনির দরজাও আটকানো।রোজ তো রুমেই থাকে।তবে কি মায়া তার দেয়া জিনিসগুলো দেখে রাগ করলো?মুহুর্তেই নিজের উপর বিরক্তি ছেঁয়ে গেল আরিয়ানের।শুধু শুধু কেন যে ওসব করতে গেলো?তার বোঝা উচিত ছিল মেয়েটা এখনো খুব ছোট।”চাপা কষ্ট নিয়ে তার পাশের রুমের দিকে পা বাড়ালো।সেখানেও মায়াকে না পেয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট হয়ে উঠলো তার।দ্রুত নিজের রুমে এসে ব্যালকনির দিকে পা বাড়ালো।মায়া বাগানে থাকলে ওখান থেকে দেখা যাবে।
ব্যালকনির কাঁচের দরজা খুলতেই থমকে গেলো আরিয়ান।গোল দোলনায় পা ভাজ করে গুটিশুটি হয়ে ঘুমোচ্ছে মায়া।পরণের শাড়ির আচঁল কাঁধ থেকে পড়ে গেছে।দু হাত কোলের উপর রেখে ঘাড় কাত করে ঘুমিয়ে গিয়েছে সে।
আরিয়ান বেশ কিছুক্ষন সময় মায়ার দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকলো।মেয়েটাকি আজ তার জালে তাকেই জব্দ করবে?তাকে পাগল করার প্রতিজ্ঞা করে সাঁজতে বসেছিলো মনে হয়।ঠোঁট কামড়ে মায়ার কাছে এগিয়ে যায় সে।মায়াকে শাড়ি পরলে এতোটা সুন্দর লাগবে আগে জানলে জীবনেও শাড়ি কিনতোনা সে।

মায়ার দিকে ঝুকে গিয়ে তার আচঁলটা কাঁধে উঠিয়ে দেয় আরিয়ান।তার জন্য অপেক্ষাময়ী এক অতি আবেদনময়ী রমনী মায়া।আরিয়ান তার দু গালে হাত রেখে কপালে গভীরভাবে ঠোঁট ছোঁয়ায়।
গালে ঠান্ডা হাতের স্পর্শে আর কপালে চিরচেনা অধরের ছোঁয়ায় ঘুমাচ্ছন্ন তন্দ্রা কেটে যায় মায়ার।পিটপিট করে তাকাতেই বুঝে আরিয়ানের চিবুক তার চোখের সামনে।আরিয়ান তখনো তার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে রেখেছে।মায়া ঘুম ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,
—“আপনি সত্যিই এসেছেন?নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি?”

আরিয়ান চুম্বনরত অবস্থাতেই হেসে ফেলে।ঠোঁট সরিয়ে বলে,
—“সত্যিই এসেছি ঘুমন্ত পরি।”

মায়া নড়েচড়ে উঠে।হাত নাড়ানোয় কাঁচের চুড়ি তে শব্দ হয়।ঘাড় ঠি ক করে সোজা হয়ে বসে চোখ কলাতেই নিলেই আরিয়ান তার হাত ধরে ফেলে বলে,”কাজল ছড়িয়ে যাবে”।
মায়ার ততক্ষনে হুঁশ হয় সে যে সেজেগুজে বসে আছে।লজ্জা লাগলেও মুখে প্রকাশ করেনা।দৃষ্টি নিচে নামিয়ে বলে
—“এত দেরি করলেন কেন?”

আরিয়ান তার দোলনার দু পাশে হাত রেখে আছে।মায়ার কথায় একহাত দিয়ে আবারো মায়ার পরে যাওয়া আচঁল ঠি ক করে দিয়ে বলে,
—“তুমি কি জানো তোমাকে কতটা সুন্দর লাগছে?”

মায়া মুদ্রিত নয়নে আরিয়ানের দিকে তাকায়।মুখের চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিয়ে চুপ করে থাকে।আরিয়ান উঠে দাড়ায়।ঘরের লাইট নিভিয়ে দরজা লক করে আসে।ব্যালকনির হলুদ বাতিতে লাল শাড়ি পরিহিত মায়াকে দেখে আরো একবার হৃদপিন্ডটা লাফিয়ে উঠে তার।ততক্ষনে উঠে দাড়িয়েছে মায়া।
আরিয়ান মৃদু হেসে তার কাছে যেয়ে দাড়ায়।পকেট হাতরে একটা বক্স বের করে।বক্সটা খুলে কিছু একটা বের করে মায়ার সামনে একহাঁটু গেড়ে বসে যায়।নিজের হাত বাড়িয়ে মায়াকে ইশারা করে।মায়া জিজ্ঞাসু নয়নে
তাকিয়ে আরিয়ানের হাতের উপর হাত রাখে।আরিয়ান একটা সাদা পাথরের জলজল করা আংটি মায়ার অনামিকা আঙ্গুলে পরিয়ে দিতে দিতে বলে,
—“আমার মায়াবতীর জন্য ছোট্ট একটা ভালোবাসার প্রতীক।”বলে হাতের উল্টো পিঠে ঠোঁট ছোঁয়ায় আরিয়ান।

মায়া বিস্মিত নয়নে হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে।খুশিতে কান্না পাচ্ছে তার।আরিয়ান উঠে দাড়িয়ে মায়াকে বুকে জড়িয়ে নেয়।ধীর কন্ঠে বলে,
—“এটার জন্যই দেরি হচ্ছিল মায়াবতী।অর্ডার দিয়ে ছিলাম এক সাইজের ওরা বানিয়েছিলো এক সাইজ বেশি।এখন আংটি কাটিয়ে সাইজ মতো করে আনলাম।ভেবেছিলাম তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।কিন্তু এতরাতে আর বাইরে বের হতে ইচ্ছে করছেনা।তোমার উপর চাপ হয়ে যাবে।”

মায়া কিছু উওর দেয়না।আরিয়ানের বুক থেকে মাথা সরাতে ইচ্ছে করছেনা।দু হাত দিয়ে আলতো করে আরিয়ানের পিঠ আকড়ে ধরে।আরিয়ান তার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতেই হাল্কা ফুঁপিয়ে উঠে মায়া।

—“আরে কাঁদছো কেন?কাজল নষ্ট হয়ে যাবে মায়া।”

মায়া চুপ হয়ে যায়।আরিয়ান তাকে বাহু ধরে ছাড়ায়।মায়ার শাড়ি আবারো এলোমেলো হয়ে গেছে।এবার না পেরে আচঁল কাঁধে উঠিয়ে নেয় মায়া।শাড়ির ফাঁক দিয়ে মসৃন কোমড় দৃশ্যমান হয়ে উঠে।আরিয়ান ঠোঁট কামড়ে সেদিকে তাকিয়ে বলে,
—“আমাকে কি মারার প্ল্যান করেছো আজ?”

—“মানে?”

আরিয়ান মায়ার উন্মুক্ত কোমড়ে হাত গলিয়ে দেয়।শীতল স্পর্শে কেঁপে উঠে মায়া।আরিয়ান একহাত বাড়িয়ে ব্যালকনির লাইট নিভিয়ে দেয়।মায়াকে রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে কাঁধের আচঁল সরিয়ে সেখানে মুখ ডুবিয়ে দেয়।মায়া চোখ বন্ধ করে ফেলে।উষ্ণ আবেগে তাকে ভরিয়ে দিতে থাকে আরিয়ান।
নিজের তৃষ্ণা মিটিয়ে মুখ উঠিয়ে ফেলে।জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে মায়াকে ছেড়ে দাড়ায়।

চাঁদের ক্ষীণ আলো এসে পরেছে ব্যালকনিতে।মায়া তখনো চোখ বন্ধ করে রেখেছে।আরিয়ান শার্টের উপরের দুটো বোতাম খুলে দোলনায় বসে।মায়ার হাত টেনে তার কোলে বসায়।প্রচন্ড লজ্জায় নিয়েই আরিয়ান কাঁধে মাথা রাখে মায়া।আরিয়ান মোহনীয় কন্ঠে বলে,
—“আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখ মায়াবতী,এই এত বিশাল কালো আঁধারে ঢাকা আকাশে সবচেয়ে উজ্জল যে তারাটা দেখতে পাচ্ছো না?সেটা হচ্ছে সন্ধ্যাতারা।তেমনি আমার অন্ধকার জীবনের সেই একমাত্র সন্ধ্যাতারাটা হচ্ছে তুমি।”

—“আকাশের সন্ধ্যাতারাটা আমি হলে আপনি কি জানেন?আপনি হলেন ওইযে ওই চাঁদটা।যে কিনা প্রতিনিয়ত আমার জীবনে আলো ছড়াচ্ছেন।”

আরিয়ান ঠোঁটে প্রশস্ত হাসি টেনে বলে,
—“আংটি পছন্দ হয়েছে?”

—“খুব বেশি”।

আরিয়ান তার চুলে নাক ঘষে।চুল থেকে শ্যাম্পুর ঘ্রাণ আসছে।নেশা ধরে যাচ্ছে আরিয়ানের।চুলে নাক ডুবানো অবস্থাতেই মায়া জড়তা নিয়ে বলে,
—“আপনি আমাকে আদর করেননা কেন?”

—“আমি আদর করিনা?আমি চুমু খেলেইতো তুমি লজ্জায় শেষ হয়ে যাও।তারপরও রোজ নিয়ম করে কয়বার চুমু দেই বলতো?”

মায়া মাথা নুইয়েই বলে,
—“আমি এই আদরের কথা বলিনি।যেটার কথা বলছি সেটা আপনি বুঝতে পারছেন,আমি জানি।”

আরিয়ান তার চুল থেকে নাক সরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
—“তুমি এখনো ছোট মায়া।”

—“আমি ছোট না।আমার আদর লাগবে”

—“পাগলামি করোনা।”

মায়া হুট করেই আরিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে মুখ তার দিকে ঘুড়িয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়…

~চলবে~

[পর্বটা অনেক বড়।প্রায় ১৬০০+ শব্দে লিখেছি।সবাইকে ভালবাসা দিবসের শুভেচ্ছা❤️সবার ভালবাসাময় মন্তব্য চাই❤️]

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা_মালিহা_খান❤️ #পর্ব-২৯

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২৯

স্বভাবতই ব্রেক কষলো আরিয়ান।গাড়ি থেমে গেলো।আজকাল এই অভ্যাসটা হয়েছে তার।রাগ উঠলে আগে গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিত এখন আর তা করেনা।মায়া থাকে সাথে।যদি আ্যক্সিডেন্ট হয়ে যায়,এই ভয়ে গাড়ি থামিয়ে দেয়।
একটা শুকনো ফাঁকা ঢোক গিললো মায়া।কিন্তু আরিয়ানের বাহু থেকে মাথা উঠালো না।
আরিয়ান গম্ভীর কন্ঠে বললো,
—“আগে বলোনি কেন?”

—“আপনি বলেছিলেন আপনি রাগ করবেন না।”

আরিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থাকে।গলার স্বর নামিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে,
—“রাগ করিনি,বলো।কি করেছে ও?”

—“রাগ করেননি তো গাড়ি থামালেন কেন?স্টার্ট দেন।যেতে যেতে বলি।”

আরিয়ান ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে গাড়ি স্টার্ট দেয়।মায়া মুচকি হেসে বলে,
—“আস্তে চালিয়েন হ্যাঁ?জোরে চালালে আমার ভয় করে।”

আরিয়ান সামনের দিকে তাকিয়েই বলে,
—“জানি আমি।,,,বলো এখন।”

মায়া সবটাই খুলে বলে আরিয়ানকে।রাহাত যা যা বলেছিলো সবকিছু।আরিয়ানের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।ফর্সা চেহারা লাল হয়ে যায়।দাঁতে দাঁত চেপে ড্রাইভিং করতে থাকে।
মায়াও কিছু একটা বলতে যেয়েও বলেনা।চুপচাপ আরিয়ানের একহাত জড়িয়ে ধরে বাহুতে মুখ লুকিয়ে রাখে।
ভেবেছিলো আরিয়ানকে বলবেনা কথাগুলো।কিন্তু না বলেও থাকতে পারলোনা।কেন জানি কথাগুলো লুকাতে ইচ্ছা করছিলোনা।যাক!এখন বলেছে তবেই শান্তি লাগছে।

গাড়ি থামে অপরিচিত একটা জায়গায়।মায়া মাথা উঠিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়।অনেকটা পার্কের মতো জায়গা।গাছপালা আছে।তবে নির্জন,পার্কে তো মানুষ জন থাকে।ভ্রু কুচকে সে বলে,
—“এটা কোথায়?”

আরিয়ান জবাব না দিয়ে বেরিয়ে যায়।মায়ার পাশের দরজা খুলে হাত বাড়িয়ে বলে,
—“বের হও।”

আরিয়ানের হাত ধরে বেরিয়ে আসে মায়া।গাড়ির দরজা আটকে দিয়ে সামনে হাঁটা ধরে আরিয়ান।
মায়া চারিদিকে তাকিয়ে বলে,
––”কোথায় যাচ্ছি?”

আরিয়ান উওর না দিলেও সামনে তাকাতেই উওর পেয়ে যায় মায়া।সামনে রাহাত দাড়িয়ে আছে।তার পাশে আরো দুইজন ছেলে।সবার হাতেই সিগারেট।মায়া আরিয়ানের কাছে ঘেঁষে যায়।আরিয়ান কে দেখে বাকি দুইজন ছেলে হাত থেকে সিগারেট ফেলে দিলেও রাহাত ফেলেনা।আরিয়ান সামনে গিয়ে তাদের ইশারা করতেই প্রায় দৌড়ে পালিয়ে যায় ছেলে দুটো।রাহাত তখনো ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছে।
মায়া হাল্কা কেঁশে উঠতেই সিগারেটটা নিচে ফেলে পা দিয়ে পিঁশে ফেলে রাহাত।আচমকাই আরিয়ান তার গলা চেপে ধরে।গাছের সাথে হেলান দিয়ে ছিলো রাহাত।সেখানেই ঠেষে ধরায় ছুটতে পারে না সে।

—“মায়াকে ভালোবাসিস তাইনা?”

রাহাত উওর দিতে পারেনা।শ্বাস আটকে আসছে তার।চোখ বড় বড় করে ছাড়তে ইশারা করে সে।আরিয়ান গাছের থেকে আলগা করে আবারো পিছে ঠেকিয়ে সজোরে বাড়ি দিয়ে গলা ছাড়ে।কাঁশতে থাকে রাহাত।কাশির থেকে মনে হয় হাল্কা রক্তও বেরিয়ে আসে।আরিয়ান তার গালে ঘুষি মারে।শুকনো পাতার উপর পরে যায় রাহাত।মায়া খিঁচে চোখ বন্ধ করে।রাহাত জড়ানো কন্ঠে বলে,
—“হ্যাঁ,ভালোবাসি।অনেক ভালোবাসি।কি করবে তুমি?”

আরিয়ান পাশ থেকে একটা বড় পাথর হাতে তুলে।মায়ার হাত ছাড়িয়ে রাহাতের সামনে ঝুঁকে পাথরটা মুখ বরাবর ধরে বলে,
—“ওর দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস করেছিস তুই।তাই তোর এই মুখটাই রাখবোনা।পাথরের আঘাতে বিভৎস করে দিব।”বলে পাথরটা দিয়ে মুখে বাড়ি দিতে নিলেই মায়া তার বাহু ধরে ফেলে।অস্থির কন্ঠে বলে,

—“আপনি আমাকে প্রমিস করেছিলেন।”

থেমে যায় আরিয়ান।মনে পরে,মায়াকে সে প্রমিস করেছিলো আর কখনো হিংস্র হবেনা।আর পাথর দিয়ে কারো মুখ থেতলে দেয়া হিংস্রতার ই পরিচয়।উঠে দাড়ায় সে।পাথরটা ছুড়ে ফেলে রাহাতের বুকের উপর পা রেখে বলে,

—“শুধু ওর জন্য বেঁচে গেলি আজকে।নয়তো তোকে কথা বলার অবস্থায় রাখতামনা।মাইন্ড ইট্।”

মায়া তার বাহুর শার্ট টেনে বলে,
—“চলুন বাসায় যাই।”

আরিয়ান পা দিয়ে একটা বুকে বাড়ি মেরে মায়ার হাত ধরে উল্টোদিকে ঘুরতেই রাহাত বলে,
—“আমার অনুভূতিগুলো আপনার কাছে একেবারই মূল্যহীন মায়া?”

মায়া দাড়ায়।ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,
—“আপনার অনুভূতি গুলো আমার কাছে কখনোই মূল্যবান ছিলোনা তাই মূল্য অমূল্য হিসাবে না যাওয়ার শ্রেয়।,,,এসব অহেতুক অনুভূতি সামলানো শিখা উচিত আপনার।দয়া করে আর বিরক্ত করবেননা প্লিজ।”

বলেই মায়া ঘাড় ঘুড়িয়ে নেয়।রাহাত ম্লান হেসে বলে,
—“আপনি যখন বলেছেন তখন আর কখনোই কিছু করবোনা।কথা দিচ্ছি।”

মায়া কোনো অভিব্যক্তি প্রকাশ করেনা।আরিয়ানের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।
_________________
বাসায় ফিরেই শাওয়ার নিতে ঢুকেছে মায়া।আরিয়ান খালি গায়ে বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে আছে।একহাত কপালে ঠেকানো।
এর মধ্যই বাধলো বিপত্তি।মাত্র তোয়ালে পেচিয়ে গা ভিজিয়েছে মায়া তখনই আর গরম পানির বের হচ্ছেনা।কয়েকবার সুইচটা চালু-বন্ধ করলো।কিন্তু কোনো লাভ হলোনা।তার উপর সে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে পারেনা।শীত লাগে।কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায়।পানিতে হাত দিয়ে দেখে বরফ ঠান্ডা।এভাবে কতক্ষন ভেজা শরীরে দাড়িয়ে থাকা যায়।উপায় না পেয়ে।হাল্কা করে দরজা খুলে মায়া।মুখ বের করে আরিয়ানকে শুয়ে থাকতে দেখে গলা বাড়িয়ে ডাকে,
—“একটু এদিকে আসেননা।”

কপাল থেকে হাত সরায় আরিয়ান।মায়াকে এভাবে দেখে মুখ বের করতে দেখে উঠে বসে বলে,
—“কি হয়েছে?”
—“গরম পানি বের হচ্ছেনা।গিজারে সমস্যা মনে হয়।ঠিক করে দিয়ে যান।”

আরিয়ান ভ্রু কুচকে এগিয়ে যায়।দরজার সামনে দাড়িয়ে বলে,
—“দরজা না খুললে ঢুকবো কিভাবে?”

মায়া বোকা হেসে পিছে দাড়িয়েই খুলে দেয়।দরজা দিয়ে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে।লজ্জায় লাল হয়ে গেছে গালদুটো।আরিয়ান ভেতরে ঢুকে।সারা ওয়াশরুম জুড়ে মিষ্টি গন্ধ।তীব্রভাবে মায়ার শরীরের মোহনীয় ঘ্রানটা নাকে লাগছে।মায়ার দিকে তাকিয়ে একটা ফাঁকা ঢোক গিলে আরিয়ান।মায়ার চোখে মুখে পানি লাগা।ভেজা চুলগুলো লেপটে আছে।চুল দিয়ে গড়িয়ে পরছে পানি।দরজার পিছে দাড়ানো তবুও সে বুঝতে পারছে মায়ার শরীরে শুধু তোয়ালে পেঁচানো,ফর্সা কাঁধ বেরিয়ে আছে।আরিয়ান দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।গিজারে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ কিছু একটা করে।তারপর মেইন সুইচ বন্ধ করে আবার চালু করে।গিজারের লাইট জ্বলে উঠে।
মায়া ঠোঁট এলিয়ে বলে,
—“ঠিক হয়ে গেছে মনে হয়।”

আরিয়ান তার দিকে তাকায়।এগিয়ে গিয়ে দরজায় হাত রেখে দুষ্টু হেসে বলে,”ঠি ক তো হয়েছেই কিন্তু তুমিতো আমার মাথা নষ্ট করে দিলে মায়াবতী।”বলে মায়ার হাত ছাড়িয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় আরিয়ান।
লজ্জায় দুহাতে টাওয়াল আকড়ে ধরে মায়া।তার টাওয়ালটা হাঁটু অবধিও যায়নি।তার উপর ভেজা শরীর।
আরিয়ানের গায়ে জামা নেই।লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে মায়া।
আরিয়ান তার কোমড়ে হাত রাখতেই কেঁপে উঠে চাপা স্বরে বলে,
—“কি করছেন?বাইরে যান”

আরিয়ান তাকে কোমড় টেনে কাছে আনে।কাঁধ থেকে ভেজা চুল সরিয়ে দিয়ে চার আঙ্গুল দিয়ে গলার সাইডে স্লাইড করে।ঠোঁট কামড়ে ধরে মায়া।আরিয়ান তাকে কোণা থেকে সরিয়ে ঝর্ণার নিচে দাড়া করায়।একহাত দেয়ালে রেখে ঝর্ণা ছেড়ে দেয়।মুহূর্তেই ভিজে যেতে থাকে দুজনে।আরিয়ানের খালি বুকে হাত রাখে মায়া।একহাত কাঁধে আর একহাত বুকে।
চোখের উপর পানি পরায় ঠি কমতো তাকাতে পারছেনা।পিটপিট করে তাকিয়ে বলে,
—“আ..আপনি…

আরিয়ান তার ঠোঁটে হাত রাখে।আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে বলে,
—“তোমার শরীরের গন্ধটায় কেমন যেন একটা মাদকতা আছে মায়াবতী।নিজেকে একদমই আটকাতে পারছিনা।”
বলে মায়ার গালে চুমু খায় আরিয়ান।মুখ নামিয়ে কাঁধে ঠোঁট ডুবায়।মায়া কোনরকম বারণ করেনা।আরিয়ান কাছে আসায় তার ঠোঁট আরিয়ানের খালি বুক স্পর্শ করেছে কয়েকবার।অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যাচ্ছে শরীরে।গরম
পানি পরছে তবুও কেমন একটা কাঁপুনি দিচ্ছে শরীরে।খানিক পরে আরিয়ান মুখ উঠায়।গালে নাক ঘষে ঠোঁটের কোঁণায় ছোট্ট করে চুমু দিয়ে বলে,
—“জলদি শাওয়ার নিয়ে নাও।বেশিক্ষন ভেজা শরীরে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে।”

—“আপনিও তো ভিজে গেছেন।”

—“সমস্যা নেই।রুমে চেন্জ করে নিচ্ছি।”

বলে তাকে ছেড়ে দাড়ায় আরিয়ান।আপাদমস্তক একবার মায়ার সারা শরীরে চোখ বুলায়।মায়া টাওয়াল আকড়ে ধরে দেয়ালের সাথে লেপটে থাকে।আরিয়ানের এভাবে তাকানোয় আরো বেশি লজ্জা লাগে।
আরিয়ান ধরা গলায় বলে,
—“তুমি অনেক সুন্দর মায়াবতী।অনেক বেশি সুন্দর।”বলে এগিয়ে এসে তার গালে হাত রেখে কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে যায়।

মায়া সেভাবেই কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকে।আরিয়ান সুন্দর বলতে কেমন সুন্দর বুঝিয়েছে সেটা বুঝতে অসুবিধা হয়নি তার।
এগিয়ে গিয়ে দরজাটা আটকে দেয় সে।আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেই হেসে ফেলে।গালের লাল আভাটা মনে হয় আজ সারাদিনেও সরবেনা।

~চলবে~

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা_মালিহা_খান❤️ #পর্ব-২৮

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২৮

অনেকদিন পর ভার্সিটিতে যাচ্ছে মায়া।আজকে পরীক্ষা তাই ভার্সিটি না যেয়ে উপায় নাই।বেশ ফুরফুরে লাগছে মনটা।অবশ্য তার তেমন কোন বন্ধু-বান্ধবী নেই।তবুও সবার সাথে কথা হলে দেখা হলে ভালো লাগে।
আরিয়ান একহাতে ড্রাইভ করছে,আর আরেকহাতের মুঠোয় মায়ার হাত আবদ্ধ করে রেখেছে।
হঠাৎ আরিয়ানের ফোন বেজে উঠে।গাড়ির সামনে ফোন রাখা।আরিয়ান মায়ার হাত ছাড়ে না।বলে,
—“দেখোতো কে কল করেছে।”

মায়া ফোনটা হাতে নেয়।দেখে তন্ময় ফোন দিয়েছে।সে ফোনটা আরিয়ানের দিকে এগিয়ে দেয়,
—“তন্ময় ভাইয়া”।

আরিয়ান গাড়ি বাম দিকে টার্ন করতে করতে বলে,
—“রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দাও”।

মায়া তাই করে।বুঝতে পারছে আরিয়ান তার হাত ছাড়বেনা।সে ফোন লাউড স্পিকারে দিয়ে আরিয়ানের সামনে ধরে।ওপাশ থেকে তন্ময় ব্যস্ত গলায় বলে,
—“হ্যালো,ভাই?”
—“হ্যাঁ,বল।”
—“আপনি আসবেন কখন?”
—“বিকালে।”
—“কিহ্?আজকের মিটিংয়ের কথা ভুলে গেলেন?অনেক ইম্পপর্টেন্টতো।আপনি ছাড়া কিভাবে হবে?”
—“কাম ডাউন,তন্ময়।আমি ভুলিনি।ওদের সাথে কথা হয়েছে আমার।আজকে হবেনা মিটিং।ক্যান্সেল করে দিয়েছি।”
—“ওহ্।সেটা আগে বলবেনতো।আমি টেনশনে শেষ।আপনি কোথায় এখন?”
—“মায়ার ভার্সিটিতে।ওর এক্স্যাম আজকে থেকে।”
—“ওহ্,আচ্ছা।রাখি তাহলে?
—“রাখ।”বলতেই ফোন কেটে যায়।
মায়া ফোনটা আবারো আগের জায়গায় রেখে দেয়।গাড়ি থেমে গেছে তার ভার্সিটির সামনে।আরিয়ান তার সিটবেল্ট খুলে দেয়।গালে হাত রেখে বলে,
—“আমি বাইরেই অপেক্ষা করছি।তুমি যাও।ভয় পেয়োনা।ঠিকাছে?”
—“আপনি শুধু শুধু এই তিনঘন্টা এখানে অপেক্ষা করবেন কেন?পরীক্ষা শেষে নিতে আসলেই তো হয়”।
আরিয়ান মুচকি হেসে মায়ার পাশের দরজার লক খুলে দেয়।কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে বলে,
—“তোমাকে এখানে একা রেখে আমার অন্যকাজে মন বসবে না।…যাও”

মায়া ঠোঁটে লজ্জামিশ্রিত হাসি এলিয়ে বেরিয়ে যায়।হাত নেড়ে আরিয়ানকে বিদায় জানিয়ে ভেতরে চলে যায়।আরিয়ান স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে সিটে মাথা এলিয়ে দেয়।মায়াকে কোথাও একা ছাড়তেই তার ভয় করে।
যেমন এখনও ইচ্ছা করছে মায়ার পাশের সিটে বসে বসে তাকে পাহারা দিতে।যদিও সে বললে এটারো পারমিশন দিয়ে দেয়া হবে কিন্তু তবুও এমনটা করলে মায়া অসস্তিতে পরীক্ষাই দিতে পারবেনা।হাহ্,একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে আরিয়ানের।
____________

মাথা নিচু করে মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে মায়া।তার পাশে একটা মেয়ে বসেছে।হল এ গার্ড দিচ্ছে একটা
মহিলা টিচার।মায়া অনেকক্ষন ধরেই লক্ষ্য করছে ম্যাডামটা অনেকক্ষন যাবত তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।আবার মাঝে মাঝে নিজের ফোনের দিকে তাকাচ্ছে।অসস্তি হচ্ছে তার।সে তো কোনোরকম দেখাদেখি করছে না তবে এভাবে কি দেখছে ইনি?

কিছুক্ষন পরে ম্যাডামটা হাঁটতে হাঁটতে তার সিটের সামনে এসে দাড়ায়।মায়া চোখ তুলে তাকাতেই তিনি চোখ ছোট ছোট করে চাপা স্বরে বলে,
—“এই মেয়ে,তোমার চেহারাটা আরিয়ান খানের বউয়ের মতো লাগে।তাই না?”

মায়া হকচকিয়ে যায়।থেমে থেমে বলে,
—“জি…জি ম্যাম।”

—“জি মানে?তুমিই উনার বউ?”

মায়া মৃদুভাবে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।মহিলাটা যেন খুশিতে লাফিয়ে উঠে।কিন্তু বাহ্যিকভাবে প্রকাশ করেনা।উৎসুক কন্ঠে বলে,
—“তুমি একাই এসেছো?মি.আরিয়ান আসেননি?উনার সাথে দেখা করার অনেক ইচ্ছা আমার”

মায়া সরলমনে অকপটে বলে,
—“এসেছে ম্যাডাম,উনি বাইরে অপেক্ষা করছেন।”

—“ওহ্,গ্রেট।তোমার কোনো হেল্প লাগলে আমাকে বলো হ্যাঁ?আমি কিন্তু এই সাবজেক্ট এর ই প্রফেসর।”

মায়া চোখ বড় বড় করে তাকায়।কিসব বলছে এই মহিলা?পরীক্ষায় কেউ কাউকে এভাবে বলে দেয় নাকি?
তবুও উনার মুখের উপর তো কিছু বলা যায় না।তাই নিচু স্বরেই বলে,
—“না ম্যাম,হেল্প লাগবেনা।”

মহিলাটা চলে যেতেই মায়া হাফ ছেড়ে বাঁচে।পাশের মেয়েটাকে সে জিজ্ঞেস করে,
—“উনি মনে হয় নতুন প্রফেসর।তাইনা?”
—“হ্যাঁ,এই সপ্তাহেই জয়েন করেছে।”
মায়া আবারো লেখায় মনোযোগ দিয়ে বিরবির করে বলে,
—“এজন্যইতো এমন অদ্ভুত কথাবার্তা বলছিলো।আজব!।

বেল পরতেই খাতা দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পরে মায়া।চারতলার কর্ণারের রুমে সিট পরেছিলো তার।আরিয়ান অপেক্ষা করছে ভেবে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামতে থাকে সে।দ্বিতীয়তলা পুরোটা খালি।এখানে মনে হয় আজকে কোন পরীক্ষা হয়নি।খালি করিডোর ধরে দ্রুত হাঁটে মায়া।আচমকাই কেউ একজন টান দিয়ে তাকে খালি ক্লাস রুমে নিয়ে যায়।চিৎকার করে উঠে মায়া।এই ফ্লোরে কেউ নেই।বিধায় কারো কানে যায়না তার চিৎকার।জানালা দিয়ে আলো আসছে।আবছা আলোয় রাহাতকে দেখে চমকে উঠে মায়া।রাহাত এখানে কি করছে?তার হাত ছেড়ে দেয় রাহাত।একটু দুরত্ব নিয়ে দাড়ায়।
মায়া গায়ের ওড়না ঠি ক করে ক্ষীপ্ত কন্ঠে বলে,
—“আপনার সমস্যাটা কি?এখানে কি করছেন?দেখুন আপনার কোনো কথা আমি শুনতে চাচ্ছিনা।উনি যেরকমই হোক আমার কোন সমস্যা নেই।অযথা ঝামেলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করবেননা।”
এক নি:শ্বাসে কথাগুলো বলে রাহাতের দিকে তাকায় মায়া।
—“আপনি খুব ভালোবাসেন আরিয়ানকে তাইনা?”

মায়া এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,
—“আপনি কি এসব বলার জন্য এখানে এসেছেন?….আমার যেতে হবে,উনি অপেক্ষা করছেন।সরুন প্লিজ”

—“উওরটা দিন।”

মায়া এবার সরাসরি রাহাতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
—“জি।খুব বেশি ভালোবাসি।শুনেছেন?এবার প্লিজ নিজেও যান আর আমাকেও যেতে দিন।”

রাহাত এক কদম এগিয়ে এসে বলে,
—“আমিওতো আপনাকে ভালোবাসি মায়া।”

মায়া থমকে যায়।সে কখনো এরকম পরিস্থিতিতে পরেনি।কি বলবে বুঝতে পারেনা।রাহাত এগোতে থাকে।

—“দে..দেখুন একদম এগোবেন না।আপনার এসব অহেতুক কথাবার্তা আমার ভালো লাগছেনা।উনি না আপনাকে গুলি করলো ওইদিন,,আপনার হাতে এখনো ব্যান্ডেজ করা তবুও এসব বলার সাহস কেমনে হয়?”

রাহাত তার একপাশের দেয়ালে হাত রেখে বলে,
—“আপনি আমাকে ভয় পান কেন?”

—“কারণ আপনি ভয় পাওয়ার মতোই।”বলে আর একমূহুর্ত সেখানে দাড়ায়না মায়া।রাহাতকে ধাক্কা দিয়ে ছুটে বেরিয়ে আসে।পেছন থেকে শুনতে পায় রাহাত বলছে,
—“আরিয়ানকে বলবেননা আমি এখানে এসেছিলাম।ও রেগে যাবে।”
মায়ার কথাগুলো শুনলেও কানে নেয় না।একদৌড়ে নিচে নেমে যায়।

বাইরে বের হতেই আরিয়ানের গাড়ি দেখে এতক্ষনের ভয় কেটে যায়।গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতেই আরিয়ান দরজা খুলে দিয়ে বলে,
—“আসো ভিতরে আসো।এত দেরি করলে কেন?”

মায়া উওর না দিয়ে ভেতরে ঢুকে বসে।আরিয়ান পানির বোতল এগিয়ে দিতেই তৃপ্তি নিয়ে পানি খায়।

—“এত দেরি হলো কেন?কোন সমস্যা হয়েছিলো?”

মায়া উওর দেবার আগেই জানালায় টোঁকা পরে।আরিয়ান ভ্রু কুচকে গ্লাস নামায়।একজন মোটামোটি ইয়াং মহিলা দাড়িয়ে আছে।আরিয়ান সানগ্লাস নামিয়ে বলে,
—“কে আপনি?এনি প্রবলেম?”
মায়া চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে বলে,”ইনি পরীক্ষার গার্ডে ছিল।ভার্সিটির প্রফেসর।”
আরিয়ান মায়ার দিকে তাকায় আবার মহিলার দিকে তাকায়।

—“আপনি জানেন আমি আপনার কত বড় ফ্যান?ভাবতেই পারছিনা আপনাকে সামনাসামনি দেখছি।”

বলে মহিলাটা তার দিকে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়ায়।
আরিয়ান হাত মিলায়না অপ্রস্তুত ভাবে হেসে বলে,

—“নাইস টু মিট ইউ।”

মহিলাটা হয়তো একটু অপমানিত বোধ করেন।মুখের হাসিটা নিভে না গেলেও একটু কমে যায়।তবু আগের মতোই উৎকন্ঠিত ভাবে সে বলে,

—“আপনার ওয়াইফকে পরীক্ষায় হেল্প করেছি।বুঝলেন?”

আরিয়ান বিস্মিত নয়নে মায়ার দিকে তাকায়।মায়া মাথা দু দিকে নাড়িয়ে বলে,”উনি সাহায্য করতে চেয়েছিলো,আমি নেইনি।”

আরিয়ান চোখে আবারও সানগ্লাস টা পরে মহিলাটাকে বলে,
—-“এস এ প্রফেসর,আপনার অবশ্যই পরীক্ষায় হেল্প করা উচিত না।সেটা আমার ওয়াইফ হোক আর যেই হোক না কেন।আই হোপ আপনি বুঝতে পারছেন।”

মহিলাটা অপমানে দাঁত কেলিয়ে হাসে।সে হয়তো ভেবেছিলো এটা বললে আরিয়ান তার উপর খুশি হবে।কিন্তু হলো উল্টা।

—“আমাদের একটু তাঁড়া আছে।আল্লাহ হাফেজ।”বলে গাড়ির কাঁচ উঠিয়ে দেয় আরিয়ান।

মায়া ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলে,
—“একদম ঠিক করেছেন।কি অদ্ভুত মহিলা!!”

আরিয়ান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলে,
—“পরীক্ষা কেমন হলো?”

মায়া আরিয়ানের বাহুতে মাথা রাখে।চোখ বন্ধ করে বলে,
—“খুব ভালো”।

বেশ কিছুক্ষন গাড়ি চলে।মায়া হঠাৎ করে বলে উঠে,
—“একটা কথা বলি?রাগ করবেন নাতো?”
—“কখনো রাগ করেছি তোমার উপর?”
—“করেছেন।”
আরিয়ান হাসে।এপর্যন্ত দুইবার মায়ার সাথে চিল্লিয়ে কথা বলেছে সে।তাও পরিস্থিতির চাপে।এমনিতে না।

মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে সে বলে,
—“আচ্ছা বলো।রাগ করবোনা।”

—“আজকে রাহাত ভাইয়া এসেছিলো ভার্সিটিতে।”

~চলবে~

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা_মালিহা_খান❤️ #পর্ব-২৭

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২৭

মায়া চুপ করে থাকে।নিজেকে একটু গুটিয়ে নিয়ে জানালা ঘেঁষে বসে।প্রচন্ড রাগ উঠে আরিয়ানের।
মুখের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।হাতের মুঠি শক্ত করে সে সজোরে স্টেয়ারিংয়ে বাড়ি মারে।মায়া সচকিত দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকায়।ব্যস্ত কন্ঠে বলে,

—“এরকম করছেন কেনো?ব্যাথা পাবেন তো।”

আরিয়ান রক্তলাল চোখগুলো দিয়ে মায়ার দিকে তাকায়।ভয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে মায়া।
আরিয়ান তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
—“এই ভয়ার্ত চোখগুলো আমাকে কতটা ব্যাথা দিচ্ছে তুমি জানো মায়া?”

মায়া এবারো নিরব।ছুড়ি ঢুকিয়ে দেয়ার মুহুর্তটা মনে আসতেই গা শিড়শিড় করে উঠছে।লোকটার গাল থেকে কিভাবে রক্ত বেরোচ্ছিল।মায়া চোখ বন্ধ করে ফেলে।ভাবে,আরিয়ানের কি একটুও দয়া হলোনা লোকটার উপর?এতটা নির্দয় সে?
পরক্ষনেই চোখ খুলে মায়া।জিজ্ঞেস করে,

—“আপনার কি একটুও দয়া হয়নি লোকটার উপর?”

—“না হয়নি”বলেই গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে পরে আরিয়ান।মায়া হতভম্ব হয়ে যায়।কিছু বলার আগেই আরিয়ান তার পাশের দরজা খুলে তাকে হাত ধরে বের করে।বিকট শব্দ করে গাড়ির দরজা লাগাতেই মায়া আৎকে উঠে বলে,
—“কি করছেন?”

গাড়ি থেমেছে একটা ব্রিজ এর উপর।আরিয়ান মায়াকে টানতে টানতে ব্রিজের রেলিং ঘেঁষে দাড় করায়।তার দুইপাশে হাত রেখে দৃঢ় গলায় বলে,
—“কেন ভয় পাচ্ছো আমাকে?আর দয়া?আমার কারো উপর দয়া হয়না।আমি নির্দয়,হিংস্র।কিন্তু সেটা ক্ষেত্রবিশেষে।বাকিদের সাথে আমি একরকম।আর তোমার সাথে অন্যরকম।গট ইট?”

মায়া একটা ফাঁকা ঢোঁক গিলে বলে,
—“কেন?কয়টা রুপ আপনার?”

—“মায়া ডোন্ট ডু দিস।রাগাবেনা আমাকে।আমার রাগ সহ্য করার ক্ষমতা তোমার হবেনা।”

—“কি করবেন রেগে গেলে?মেরে ফেলবেন আমাকেও?”
এবার বাঁধ ভেঙে যায় আরিয়ানের।রেলিংয়ে ঘুষি মারতেই হাত ছিলে রক্ত বেরিয়ে আসে।মায়া দ্রুত পাশে তাকিয়ে হাতের রক্ত দেখে জোর করে তার হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে অস্থিরভাবে বলে,

—“পাগল নাকি আপনি?গাড়িতে ফাস্ট এইড বক্স আছেনা?চলুন।”

আরিয়ান ঝামটা মেরে তার হাতদুটো সরায়।দু হাতে শক্ত করে মায়ার কোমড় চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।হঠাৎ এমন হওয়ায় অপ্রস্তুত হয়ে পরে মায়া।কি হচ্ছে বোঝার পর বার দুয়েক আরিয়ানের বুকে ধাক্কা দেয়ার চেষ্টা করে।ফলস্বরুপ আরিয়ান তাকে আরো শক্ত করে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে।হাল ছেড়ে দেয় মায়া।হাতদুটো আরিয়ানের বুকের উপর রেখে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে।প্রায় দশ মিনিট পর আরিয়ান কিছুটা শিথিল হয়।হাতের বাঁধন ঢিলা করে দেয়।একহাত মায়া ঘাড়ে রেখে এতক্ষনের রুড ভাবটা ছেড়ে সফ্টলি কিস করতে থাকে।মায়ার গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পরে।আরিয়ান নিজের গালে পানির অস্তিত্ব পেতেই আলতো করে একটা চুমু খেয়ে মায়ার ঠোঁট ছেড়ে দেয়।মায়া ফুঁপিয়ে ওঠে।আরিয়ান একটা শ্বাস নিয়ে তার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,
—“খুব বেশি ভালোবাসি মায়াবতী।তুমি অন্তত আমাকে ভয় পেয়োনা।ঘৃনা করোনা।”

বলে সরে দাড়াতে নিলেই মায়া তার বুকের শার্ট দুহাতে খামছে ধরে।বুকে মাঝখানটায় কপাল ঠেকিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে,
—“আমি কি একবারও বলেছি আমি আপনাকে ভয় পাচ্ছি?বলেন?বলেছি একবারও?”

আরিয়ান তাকে স্বস্নেহে জড়িয়ে ধরে।পিঠে হাত রেখে বলে,
—“না বলোনি”।

—“তবে?কেন বারবার বলছেন আমি আপনাকে ভয় পাচ্ছি?”

এবার আরিয়ান উওর দেয়না।মায়া আবারো বলে,

—“আমিতো আপনাকে ভয় পাচ্ছিনা।আমি ভয় পাচ্ছি ভিডিওর সেই হিংস্র,পাষাণ লোকটাকে।আমি হিংস্রতা পছন্দ করিনা।আমি যে খুবই ভীতু সেটা আপনার থেকে ভালো কেও জানেনা।আমি নিতে পারিনা এইসব।কাঁটাছেড়া,রক্তারক্তি দেখলে আমার কলিজা কাঁপে।আমি এরকমই।…আপনি একবার অন্তত আমার কথাটা ভাবতেন।এরকমটা করলেন কেন যা দেখে আমি ভয় পাবো?আমি আপনাকে ভয় পেতে চাইনা।কখনো ভয় পেতে চাইনা।…আপনি না আমাকে ভালোবাসেন।তবে কেন করলেন এমনটা?কেন করলেন?”বলে আরিয়নের বুকে ধরে রাখা শার্ট সজোরে ঝাঁকায় মায়া।

আরিয়ান তার হাতের উপর হাত রাখে।নিজের বুক থেকে সরিয়ে দুই হাতের উল্টোপিঠে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে বলে,
—“আই প্রমিস,এমনটা আর কখনো হবেনা।তোমার আরিয়ান আর কখনো হিংস্র হবেনা।আই প্রমিস মায়াবতী”।

মায়া একদম শান্ত হয়ে যায়।চোখ নামিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে,
—“গাড়িতে চলুন।আপনার হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে।”

আরিয়ান হেসে মায়াকে নিয়ে গাড়িতে বসায়।গাড়ির পেছন থেকে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে নিজেও ঢুকে দরজা আটকে দেয়।মায়ার হাতে বক্সটা দিয়ে মায়ার কোলের উপর হাত রেখে বলে,
—“নাও,ব্যান্ডেজ করে দাও।”

মায়া অদ্ভুত দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে ব্যান্ডেজ করতে থাকে।কাজ শেষ হয়ে গেলে সবকিছু আবার সুন্দর করে বক্সের ভিতর ঢুকিয়ে গাড়ির সামনে রেখে দেয়।আরিয়ান গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছেনা দেখে বলে,
—“আর কতক্ষন বসে থাকবেন এখানে?বাসায় যাবেন না?”

আরিয়ান তার দিকে ঝুঁকে যায়।সেকেন্ডের মধ্য মায়ার ঠোঁটে চুমু খেয়ে আবারো নিজের সিটে বসে বলে,
—-“এই জায়গাটা চিনেছো মায়াবতী?সামনে তাকিয়ে দেখো,ওইযে রাস্তার মোড় দেখা যাচ্ছে,সেখানেই তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিলো।সেই যে রাতের বেলা তুমি আমাকে আচমকাই জড়িয়ে ধরেছিলে।মনে আছে?”

মাথা মৃদুভাবে মাথা নাড়ায়।সে রাস্তাঘাট এতো চিনেনা।এখন আরিয়ান বলায় বুঝতে পেরেছে এটা ওই জায়গাটাই।আরিয়ান আবার বলে,

—“আবার,এইখানেই প্রথম তোমার ঠোঁটে চুমু খেয়েছি।এই জায়গাটা খুব স্পেশাল আমাদের জন্য।তাইনা?”

মায়া স্বলজ্জায় আরিয়ানের দিকে তাকায়।পরমূহুর্তে ঠাট্টার ছলে বলে,
—“সারারাত কি এখানেই থাকবেন?”

—“আরে না না।বাসায় যাচ্ছিতো।”বলে গাড়ি স্টার্ট দেয় আরিয়ান।

______________

মায়ার মুখের উপর বই ধরা।আর এক সপ্তাহ বাদে পরীক্ষা তার।সেমিস্টার ড্রপ যাতে না দিতে হয় সেজন্যই বেশ পড়াশোনা করছে সে।
আরিয়ান বসে আছে সোফায়।আরিয়ানের কোলের উপর তার মাথা রাখা।সামনের টেবিলে ল্যাপটপ রেখে কানে হেডফোন দিয়ে ভিডিও কলে জরুরি মিটিং করছে আরিয়ান।তার একহাত রাখা মায়ার চুলের ভাজে।আরেকহাত ল্যাপটপের কী-বোর্ডে।মায়া সোজা হয়ে শুয়ে আছে পুরো সোফা নিয়ে।আরিয়ান এককোণায় চেপে বসেছে।তার উপর তার কোলে মাথা রেখে পড়ছে মায়া।
হঠাৎ মায়া আরিয়ানকে ইশারা করে সে কিছু একটা বলবে।আরিয়ান দ্রুত নিজের মাইক্রোফোন মিউট করে বলে,”হুম বলো’।

—“আপনি চুলে হাত বুলালে আমার ঘুম আসে।তাই বলছি,সেটা বন্ধ করেন।”

আরিয়ান ল্যাপটপের স্ক্রীন থেকে চোখ সরায়না।সেদিকে তাকিয়েই বলে,
—“এরকম খোলা চুলে কোলের উপর শুয়ে থাকলে আমি হাত বুলাবোই।সো,আই কান্ট হেল্প ইউ।”

—“মিটিং কখন শেষ হবে?”

—“অনেকক্ষন পরে শেষ হবে।শুরুই তো হলো এখন।তোমার পড়া শেষ?”

—“না,আমার পড়াও শেষ হবে অনেএএএকক্ষন পরে।”

আরিয়ান ভিডিও অফ করে মায়ার কপালে চুমু খায়।তারপর আবার ভিডিও অন করে মিটিংয়ে মনোযোগ দেয়।

মায়া আর বিরক্ত করেনা।যদিও সে শত চেষ্টা করেও কখনো বিরক্তবোধ করাতে পারেনা আরিয়ানকে।কারণ আরিয়ান কখনো তার উপর বিরক্ত হয়ই না।কেন হয়না?কারণটা সে জানে।খুব ভালো করেই জানে।
ভাবতেই মুচকি হাসি ফুটে উঠে মায়ার ঠোঁটের কোঁণ ঘেঁষে…

~চলবে~
[এবার প্রমিস ডে তে সবাই আমাকে প্রমিস করেন যে সবাই সব সময় সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করবেন😝😜]

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা_মালিহা_খান❤️ #পর্ব-২৬

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২৬

মায়া চিৎকার দেয়ার আগেই একটা শক্ত হাত তার মুখ চেপে ধরলো।মুখ দিয়ে কোনরকম আওয়াজ করতে পারলোনা সে।ছেলেটা তার পিছে দাড়িয়ে আছে তার উপর চারিদিকে অন্ধকার।হৃদপিন্ডটা তুমুল গতিতে লাফাচ্ছে তার।গলা শুকিয়ে আসছে।ছেলেটা তাকে ওই অবস্থায় ধরেই বাগানের আরো ভেতরে নিয়ে যায়।আরিয়ানের কন্ঠও আর শোনা যাচ্ছেনা।
ছেলেটা তার মুখটা কানের সামনে এনে অনেকটা শীতল কন্ঠে বলে,

—“দেখেন,আপনার মুখ চেপে রাখতে আমার একটুও ভালো লাগছেনা।তাই বলছি যে,আমি হাতটা সরাচ্ছি,কিন্তু আপনি একদম চিৎকার করবেন না।ওকে?”

মায়া উপর নিচে মাথা নাড়ায়।তার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে নোনাজল।কন্ঠটা শুনে সে বুঝতে পেরেছে এটা রাহাত।

মুখ থেকে হাত সরাতেই জোরে জোরে শ্বাস নেয় মায়া।রাহাত তার হাত ছেড়ে দিতেই সে দৌড় দিতে চায় কিন্তু পারেনা।রাহাত তাকে কাছে টেনে নিয়ে একহাতে কোমড় পেচিয়ে ধরে।অসহ্য লাগে মায়ার,রাহাতের স্পর্শ তার সহ্য হচ্ছেনা।সকালে তার সম্পর্কে ওসব শোনার পর এখনতো গা গুলিয়ে যাচ্ছে।

—“যেতে দেন বলছি।এখানে কেন এনেছেন?”

—“আমি জানি আরিয়ান হয়তো আপনাকে আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই বলেছে।এবং আপনি হয়তো একদমই সেফ ফিল করছেন না আমার সাথে।বাট আই প্রমিস,আমি খারাপ কিছু করবোনা আপনার সাথে।আরিয়ান হয়তো চলে আসবে একটু পরেই।আপনাকে শুধু একটা জিনিস দেখানোর জন্য এনেছি।বলেই নিজের ফোন বের করে রাহাত।কিছু একটা খুঁজে বের করে বলে,আপনি জাস্ট এটা একটু দেখুন।”

মায়া তার বাহুতে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করে।না পেরে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে,
—“আমি কিছু দেখবোনা।আপনি প্লিজ আপনার হাতটা সরান।যেতে দিন আমাকে।”

রাহাত হাত সরায়না।বরং আরেকটু নিজের সাথে লেপ্টে নিয়ে বলে,
—“কাঁদবেননা প্লিজ।একদম সময় নেই।এটা দেখুন।বলে একটা ভিডিও প্লে করে রাহাত।জার্নালিস্ট জীবনকে মারার ভিডিও।মায়া জলভরা দৃষ্টিতে সেদিকে তাকায়।এটা না দেখা ছাড়া উপায় নাই তার।
স্ক্রীনে আরিয়ানকে দেখে অবাক হয় মায়া।আরিয়ানের সামনে আরেকটা লোক।এরপর ভিডিও চলতে থাকে।
আরিয়ানের হাতে ছুড়ি নিয়েছে মাত্র তখনই ফোনটা পরে যায় রাহাতের হাত থেকে।মায়া চমকে পেছনে তাকায়।আরিয়ানকে দেখে কলিজায় পানি আসে তার।এতক্ষন ভিডিওতে দেখা সবকিছু মাথা থেকে ঝড়ে যায়।রাহাতকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় আরিয়ান।মায়াকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।পকেট থেকে বন্দুক বের করে রাহাতের দিকে তাক করে রেখে মায়াকে বলে,

—“এই অসভ্যটা কিছু করেছে তোমাকে?”

মায়া উওর দেয়না।সে আরিয়ানকে জাপটে ধরে কাঁদছে।
আরিয়ান তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।চুলের ভাঁজে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়।রাহাত মাটিতে পরে আছে।

—“কি করেছিস তুই ওর সাথে?এতো স্পর্ধা তোর?তোকে আমি সাবধান করেছিলাম রাহাত,ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট।কিন্তু তুই শুনলিনা।মায়াকে….

—“উনার সাথে কিছু করিনি আমি।শুধু তোমার আসল চেহারাটা উনাকে দেখাতে চেয়েছিলাম।এ্যান্ড আই এম অলমোস্ট সাকসেসফুল।যদিও পুরোটা দেখেননি।তবুও”

আরিয়ান তার বাহুতে শুট করে।কঁকিয়ে উঠে রাহাত।
—“জাস্ট শাট আপ!কার আসল চেহারা?..কি দেখাচ্ছিলি তুই ওকে?তোর ওসব মিথ্যা কথা অন্তত মায়া বিশ্বাস করবেনা।আসল কথা হলো,তোর নষ্ট নজর পরেছে মায়ার উপর”

রাহাত হাত চেপে ধরে উঠে দাড়ায়।গড়গড় করে রক্ত পরছে তার হাত থেকে।দাঁতে দাঁত চেপে সে বলে উঠে,

—“মায়া,আমি আপত্তিকর কিছু করেছি আপনার সাথে?বলুন!”

মায়া দু’পাশে মাথা নাড়ায়।রাহাত তাকে ধরেছিলো ঠি ক কিন্তু তার কথায়ই সে বুঝতে পেরেছে তার কোন খারাপ উদ্দেশ্য ছিলনা।।রাহাতের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে।মায়ার দৃষ্টি নিচের দিকে।রাহাতের হাত থেকে রক্ত গড়াচ্ছে।রক্তে ভয় লাগে তার।

চারপাশে লাইট জ্বলে উঠে।আরিয়ানের মামা-মামি দৌড়ে আসে।রাহাতের হাতের রক্ত দেখে মামি দ্রুত তাকে ধরে।কাঁদতে কাঁদতে আরিয়ানকে বলে,

—“ও কি করেছে বাবা?”

—“সেটা তোমার ছেলেকেই জিজ্ঞেস করো মামি।”

রাহাত হাসতে হাসতে মায়াকে দেখিয়ে বলে,
—“উনাকে তোমার ভাগ্নের সত্যিটা দেখাতে চেয়েছিলাম মা।উনি যাকে এতটা বিশ্বাস করে সে যে কতটা ভয়ংকর তাই দেখাচ্ছিলাম।কিন্তু পারলামনা।তবে একদিন দেখাবো অবশ্যই।”

আরিয়ান আবার তার দিকে বন্দুক তাঁক করে।আরিয়ানের মামা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে,
—“ওকে ছেড়ে দাও আরিয়ান।আর কখনো এমন কিছু হবেনা।আমি কথা দিচ্ছি তোমাকে।”

আরিয়ান বন্দুক নামায়।রাহাত ঠোঁটে তখনো হাসি।
আরিয়ান জোরে একটা শ্বাস নিয়ে রাগ সংবরণ করে।আর একমুহূর্তও সেখানে না থেকে মায়াকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
____________
গাড়ি চলছে নিজস্ব গতিতে।রাস্তা ফাঁকা।তবুও জোরে ড্রাইভ করছেনা আরিয়ান।গাড়ির জানালা খোলা।শীতল বাতাস ঢুকছে।মায়া বাইরে তাকিয়ে আছে।একটা কথাও বলেনি সে।বাইরের অন্ধকারেই সে কিছু একটা
খুঁজে বেরাচ্ছে সে।হঠাৎই সে নিরবতা ভেঙে বলে,

—“একটু শুনবেন?”
আরিয়ান একবার তার দিকে তাকায়।তারপর আবারো ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিয়ে বলে,
—“বলো”।
—“আপনি কি করেছিলেন ওই সাংবাদিকটার সাথে?”
আরিয়ান চমকায় না।সে জানে এমন কিছুই হতো।একটু আগেই রাহাত তাকে সেই ভিডিওটা পাঠিয়েছে।সাথে মেসেজে লেখা ছিল,ভিডিওটা কেমন হলো ভাইয়া?”তখনই সে বুঝতে পেরেছিলো রাহাত এটাই দেখিয়েছে মায়াকে।সে চলে আসায় হয়তো পুরোটা দেখাতে পারেনি।

আরিয়ান শান্ত কন্ঠে বলে,
—“তুমি পুরো ভিডিওটা দেখেছিলে?”

—“না”।

আরিয়ান গাড়ি থামায়।পকেট থেকে ফোন বের করে মায়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
—“নাও দেখো।”

মায়া কাঁপা হাতে ফোনটা ধরে।আরিয়ান যখনই ছেলেটার গালে ছুড়ি ঢুকায় তখনই চিৎকার করে উঠে মায়া।
হাত থেকে ফোনটা ফেলে দেয় সে।ভয়ে হাত পা কাঁপছে।মাথা ঘোরাচ্ছে।
আরিয়ান সিটে মাথা এলিয়ে বসে ছিলো।ফোন পরার শব্দে সে তাকায়।মায়া দুহাতে মুখ চেপে রেখেছে।
ক্রমাগত কাঁপছে।চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট।আরিয়ান কখনো মায়ার চোখে নিজের প্রতি কোন ভয় দেখেনি।আজ দেখছে।সে ধীরগতিতে ফোনটা উঠায়।পকেট রেখে বলে,

—“তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো মায়াবতী?”

~চলবে~

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা-মালিহা_খান❤️ #পর্ব-২৫

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২৫

প্রায় মিনিটদশেক পর ধীর গতিতে মায়ার গলা থেকে মুখ উঠালো আরিয়ান।চাঁদের স্নিগ্ধ শীতল আলো এসে পরেছে ব্যালকনিতে।আবছা আবেগি আলোর ছোঁয়ায় মায়ার লজ্জারাঙা চেহারার সৌন্দর্য্য যেন হুড়মুড় করে বেড়ে যাচ্ছে।আরিয়ান ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে।চোখ বন্ধ করে মাথা নুইয়ে রেখেছে মায়া।একহাতে আরিয়ানের পিঠে ক্রমাগত নখের আচঁর দিয়ে যাচ্ছিল সে।এখন কিছুটা শিথিল হয়েছে।অবাধ্য খোলা চুলগুলো আবারো ছড়িয়ে পরেছে তার সারামুখে।আরিয়ান কোমড় থেকে একহাত সরিয়ে চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দেয়।ধীরে ধীরে তাকায় মায়া।তবে চোখ তুলে না।পিটপিট করে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে।
ঘনঘন নি:শ্বাস নিচ্ছে সে।পরিবেশ উষ্ম হয়ে উঠছে।আরিয়ান তার ঠোঁটে হাল্কাভাবে আঙ্গুল স্লাইড করে।
মায়া কাঁপছে।আচ্ছা,লজ্জা পেলে কি সবাই কাঁপে?নাকি শুধু মায়াই কাঁপছে?
আরিয়ান ঠোঁট থেকে হাত সরিয়ে মায়ার থুতনি ধরে মুখ তুলে বলে,
—“তাকাবেনা আমার দিকে?রাগ করলে?…আমার ছোয়াঁ তোমার পছন্দ নয় মায়াবতী?”

মায়া চমকায়।আরিয়ান কি তাকে ভুল বুঝলো?সে তড়িঘড়ি করে আরিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
—“না না তেমনটা না।আমি আসলে…”

—“তুমি আসলে…?”

—“আমার লজ্জা লাগছে”।

আরিয়ান শব্দ করে হেসে উঠে।মায়ার এই সরলমনে বলা সোজা কথাগুলো তার বেশ লাগে!এই কথাগুলোর প্রতি প্রচন্ড ভালোলাগা কাজ করে তার!
হুট করেই মায়াকে কোলে তুলে নেয় আরিয়ান।ঘরে যেয়ে বিছানায় সুইয়ে দেয়।ঘরের লাইট নিভিয়ে গিয়েছিলো মায়া।আরিয়ান যেয়ে তা আবার জ্বেলে দেয়।গায়ের টি-শার্টটা একটানে খুলে ফেলে।মায়া অনুসন্ধানি কন্ঠে বলে,
—“কি করছেন?”

—“আমি কি করছি সেটা বাদ দাও।বরং তুমি কি করেছো তা দেখো।বলেই মায়ার দিকে পিঠ দিয়ে দাড়ালো আরিয়ান।

মায়ার চোখগুলো বড় বড় হয়ে যায়।ফর্সা পিঠ লাল হয়ে গেঁছে।খামছিতে একজায়গায় কেটে পর্যন্ত গেছে।আর বাকি জায়গায় আঁচরে লাল হয়ে আছে শুধু।মায়া কাঁচুমাচু করে তাকিয়ে বলে,
—“সরি”।

আরিয়ান হেসে বলে,
—“আরে অদ্ভুত!সরি বলছো কেন?প্রেয়সীর নখের আঁচরে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার সৌভাগ্য সবার থাকেনা।সেদিক দিয়ে বলতে গেলে তুমি আমার সেই সৌভাগ্য করে দিলে।বুঝলে?

মায়া উওর দেয়না।অগোছালো ভাবে একটু হাসে।
আরিয়ান কখনোই তাকে কোন কিছুর জন্য দোষারূপ করে না।মানে তার কোন ভুল আরিয়ানের চোখেই পরেনা কখনো।সে কাউকে মেরে ফেললেও মনেহয় আরিয়ান বলবে,”নিশ্চয় লোকটার দোষ ছিলো।একদম
ঠি ক করেছো মেরে”
____________
সকালবেলা রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে আরিয়ান।আজ অফিসে যাবেনা সে।মায়াকে নিয়ে এগারোটার দিকে হসপিটালে যেতে হবে।ব্যান্ডেজ খুলে দিবে তাই সে নিজেই যাবে সাথে।

মায়া বিছানায় হেলান দিয়ে বই পরছে।কদিন পর পরীক্ষা তার।এতদিন পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলো তাই এখন একটু চাপ নিয়েই পড়ছে।
হঠাৎ আরিয়ানের ফোন বেজে উঠে।মায়া একবার তাকিয়ে আবারো পড়ায় মনোযোগ দেয়।
আরিয়ান ফোন রিসিভ করে।মামা ফোন দিয়েছে।নিশ্চিত বাসায় যাওয়ার কথা বলবে।

—“হ্যালো,আরিয়ান?”
—“হ্যাঁ,বলো মামা।”
—“তোরা তো আসলিনা?জানি তোর এই বাসায় আসা পছন্দ না।তবুও মেয়েটাকে নিয়ে একটু আসা উচিত না?”
—“আসবো মামা।আজ বিকেলেই আসবো।”
—“তাহলে দুপুরে আয়।দুপুরে রাতে এখানে খেয়ে যাবি।

আরিয়ান কিছু একটা ভেবে বলে,
—“আচ্ছা,ঠিকাছে।”
—“সত্যি আসবি তো?”
—“আমি কখনো তোমাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছি?”
—“আচ্ছা ঠিকাছে।দেরি করিস না।”

আরিয়ান “হুম” বলে ফোন কেটে দেয়।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দশটা বাজে।চোখ নামিয়ে আবারো কাজে ধ্যান দেয় সে।মায়া কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠে,
—“আপনার মামার ছেলের সাথে কাল ওমন করলেন কেন?মামার সাথে তো ভালো করেই কথা বললেন”
—“ওর সাথে আমার একটু ঝামেলা আছে”
—“কি ঝামেলা?”
—“অনেক প্যাঁচানো বিষয়।তোমার মাথায় ঢুকবেনা।”
—“বলুননা প্লিজ।
আরিয়ান ল্যাপটপটা বন্ধ করে।মায়ার খাবারের প্লেট পাশের টেবিলে রেখে গিয়েছে ইতি।মায়া এখন খাবেনা তাই বলেছে যখন খাবে তাকে যেন ডাক দেয়।আরিয়ান উঠে প্লেটটা হাতে নিয়ে মায়ার পাশে বসে।
মুখের সামনে খাবার তুলে বলে,
—“শুনতে চাচ্ছো,তাই অল্প করে বলছি।

মায়া অকপটে মাথা নাড়ায়।মুখে খাবার নিয়ে বলে,”বলুন।”

আরিয়ান একটা ছোট্ট শ্বাস নিয়ে বলে,
—“He is such a characterless person.ওর এই স্বভাবের জন্য কখনোই ওর সাথে আমার মিলতো
না।কথা বার্তাও বেশি বলতামনা আমরা।আর ও শুধু শুধুই আমার সাথে ঝামেলা বাঁধাতো।কারণ ও একপ্রকার হিংসা করে আমার সাথে।কেন আমার কম্পানি এত সফল হলো?কেন ওর ক্যারিয়ার আমি সেট করে দেই না?আমার থেকে দুই বছরের ছোট।কিন্তু নিজের স্টাডি নিয়ে একেবারেই সিরিয়াস না।আসলে মামার টাকা আছে তো।তাই এসব বিষয়ে ওর অনেকটা গা ছাড়া ভাব।”

আরিয়ান থামে।মায়া মনোযোগ দিয়ে শুনছে।আরিয়ান আবারো মায়াকে খাইয়ে দিয়ে বলে,
—“এসব নিয়ে ঝামেলা চললেও আসল সমস্যা হয় একবছর আগে।প্রায়ই লেট নাইট পার্টি করতো ও।রাতে ফিরতোনা।তেমনই এক পার্টিতে একটা মেয়েকে ও হ্যারেস করে।মূলত ফিজিক্যালি এ্যাবিউস করে।খুব বাজে ভাবে।
তো মেয়েটা সেইদিন কোনরকম নিজেকে বাঁচিয়ে পুলিশে কেস করতে চাচ্ছিল।সিসি ক্যামেরায় প্রমান থাকা সত্তেও ইউ নো টাকার প্রভাবে আর মামা যেহেতু পুলিশ অফিসার তাই খুব সহজেই রাহাত কে ছাড়িয়ে নেয়।সেসময় আমি মেয়েটাকে সাহায্য করেছিলাম।মামা মামির অনুরোধ করা সত্তেও আমি কেস করি এ্যান্ড ফলস্বরুপ তিনমাস জেল খাটতে হয় রাহাতকে।
।আমার যেটা ঠি ক মনে হয়েছিলো আমি সেটাই করেছি।মামা মামি কষ্ট পেলেও এ নিয়ে আমাকে কড়া কিছু বলেনি।কিন্তু এরপর থেকে রাহাতের সাথে আমার সম্পর্কটা খুব বেশি খারাপ হয়ে যায়।

কথা শেষে জোরে একটা শ্বাস ছাড়ে আরিয়ান।মায়ার খাবারের প্লেট খালি হয়ে গিয়েছে ততক্ষনে।মায়াকে পানি খাইয়ে দিয়ে উঠে যায় সে।মায়া অন্যমনস্ক হয়ে বলে,
—“আপনি এতো ভালো কেন?”

আরিয়ান হাসে।ঝুঁকে গিয়ে মায়ার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বলে,
—“উঠে পরো।হসপিটালে যেতে হবে।সেখান থেকে আবার মামার বাসায়।”

_____________
হাতের ব্যান্ডেজ খুলে দেয়া হয়েছে মায়ার।হাত নাড়াতেও কোন সমস্যা হচ্ছেনা।তবে কপালের কাঁটাটা এখনো
ঠি ক হয়নি তাই সেখানে নতুন করে ব্যান্ডেজ করে দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে গাড়িতে বসে আছে তারা।গাড়ি থামে সুন্দর একটা বাসার সামনে।আরিয়ানের মামার বাসা এটা।
গাড়ি থেকে বের হতেই একজন মধ্যবয়স্ক ধাঁচের লোক এগিয়ে আসে।আরিয়ান হাসিমুখে বলে,
—“কেমন আছো মামা?”

প্রতিউওরে লোকটা আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে।পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলে,
—“ভালো আছি বাবা।”

এটাই আরিয়ানের মামা বুঝতে পেরে মায়া দ্রুত সালাম দেয় উনাকে।সজীব খান সালামের উওর দিয়ে মায়ার মাথায় হাত রেখে বলে,
—“আসো মা ভেতরে আসো।”

মায়া খুবই মুগ্ধ হয় তার ব্যবহারে।ভেতরে যেতেই একজন মহিলা উপর থেকে নিচে নামে।মায়া বুঝে এটা আরিয়ানের মামি।মায়া সালাম দিতেই সে এসে মায়াকে জড়িয়ে ধরে সজীব খান কে উদ্দেশ্য করে বলে,
—“দেখেছো,মেয়েটা কতো সুন্দরী।কি মায়াবী চেহারা।বলেছিলাম না আরিয়ানের পছন্দ আছে।”

মায়া একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে।রুপের প্রশংসা শুনতে তার কেমন যেন অদ্ভুত লাগে।যেটার উপর মানুষের কোন হাতই নেই সেটা নিয়ে এতো প্রশংসা কিসের?
______________
দিনটা ভালোই কাটে মায়ার।আরিয়ানের মামা-মামি খুবই আন্তরিক।তবে একটা জিনিস খুবই অবাক লাগে ।সারাদিনে একবারও রাহাতের ছায়া পর্যন্ত দেখেনি সে।এমনকি খাওয়ার সময়ও সে ছিলোনা।সে তো নিশ্চয় এই বাসায়ই থাকে।মামা-মামি একবার তার কথা বললোনা পর্যন্ত।
তবুও মুখে কিছু বলেনা সে।পাছে আরিয়ান রেগে যায়।

সন্ধ্যাবেলা বাসার বাইরেটা তাকে ঘুরে দেখাচ্ছিলো আরিয়ান।হঠাৎ তার ফোন আসায় সে মায়াকে দাড়া করিয়ে একটু দূরে সরে যায়।মায়া চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে।ওপাশের দিকটা অন্ধকার।লাইট জ্বালানো নেই।
হঠাৎ একটা হাত তাকে হেঁচকা টানে ওপাশে নিয়ে যায়….

~চলবে~

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা-মালিহা_খান❤️ #পর্ব-২৪

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২৪

আধমরা অবস্থায় অন্ধকার রুমে পরে আছে একটা ছেলে।মুখ বাঁধা নেই।হাত পাও বাঁধা নেই।তবুও দু-দিন না খেয়ে থাকায় উঠার অবস্থা নেই তার।হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ হয়।ছেলেটা একবার তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে।শরীরে কোন শক্তি নেই।একটু পানি পেলে বেশ হতো।

দরজা খুলে প্রবেশ করে আরিয়ান।পেছনে পেছনে তন্ময় ঢুকে হাল্কা বাতির সবুজ লাইটটা জালিয়ে দেয়।
ঘরটা কেমন একটা ভয়াবহ রুপ ধারণ ধারণ করে।ছেলেটা বহুকষ্টে উঠে বসে।আরিয়ান শান্ত কন্ঠে বলে,

—“কেমন আছো জার্নালিস্ট জীবন মাহমুদ?”

জীবন আধো আধো চোখে একবার তাকালো।মৃদু গলায় বললো,
—“এক..একটু…পা…পানি..

আরিয়ান একটু হেসে বললো,
—“তন্ময় ওকে পানি দে।ঠান্ডা পানি খাবে নাকি গরম পানি?

জীবন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো।চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট।আরিয়ান এখন ও তার দিকে উওরের আশায় চেয়ে আছে।জীবন কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।আরিয়ান তার সামনে এক হাঁটু ভাঁজ করে বসলো।তন্ময় কোথা থেকে যেন একটা ঠান্ডা পানির বোতল এগিয়ে দিলো।আরিয়ান সেটা হাতে নিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে বললো,

—“এখন চুপ যে?ওইদিন তো খুব কথা বলছিলে।আমাকে ছাপিয়ে মায়াকেও প্রশ্ন করছিলে।জঘন্য সব প্রশ্ন।
ভুলে গেলে নাকি জার্নালিস্ট জীবন?”

—“স্যা..স্যার,মাফ করে দেন স্যার।আমার…ভুল হয়ে গেছে।”

আরিয়ান চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে,
—“কিন্তু আমি যে এতোটা উদার না।এতটা দয়ালু ও না।কি করা যায় বলোতো?আচ্ছা সেসব পরে,আগে তুমি পানি খাও।নাও,এ্যান্ড ডোন্ট ওয়ারি,এটায় কিছু মিশানো নেই”

বলে ছেলেটার হাতে পানি ধরিয়ে দিল আরিয়ান।জীবন হুড়মুড় করে পুরো পানির বোতল খালি করে ফেললো।অনেক বেশি পিপাসু ছিলো সে।এখন একটু অভয় লাগছে তার।
—“ধন্যবাদ স্যার।আমি আসলে সেদিন না বুঝেই…”

—“এই পৃথিবীতে সবাই বুঝেই সবকিছু করে জীবন।নিজের সার্থের জন্য,সবাই স্বার্থপর।সবাই।

আরিয়ান শব্দ করে হেসে,পরমূহুর্তেই চোখমুখ শক্ত করে ফেলে।জীবন আবারো ভয় পেয়ে যায়।আরিয়ানের গতিবিধি বুঝতে পারছেনা সে।
আরিয়ানের ইশারা করার আগেই তন্ময় দরজাটা ভিড়িয়ে বেরিয়ে যায়।সে জানে এখন কি হবে।
নিশব্দে হেটে সে গাড়ির পাশে এসে দাড়ায়।চাঁদ উঠেছে।চারদিকের অন্ধকার সেই আলোর কাছে ফিঁকে হয়ে গেছে।চাঁদের আলোয় গাড়ির কাঁচের ভিতর দিয়ে মায়াকে দেখা যাচ্ছে।মুখের উপর চুলের কারণে চেহারা দেখা যাচ্ছেনা মেয়েটার।তন্ময় মৃদু হেসে চোখ সরিয়ে নেয়।আরিয়ান মেয়েটাকে অতিরিক্ত ভালোবাসে।অতিরিক্ত বলতে ভয়ানকভাবে অতিরিক্ত।আরিয়ানের এই হিংস্র রুপটা মায়া যদি দেখতো তখন সে কি করতো?তার মতোই ভয় পেতো নিশ্চয়ই।আরিয়ান যখন হিংস্র হয়ে উঠে তখন সে নিজেই ভয় পেয়ে যায় আর সেখানে মায়া তো ভয়ে অজ্ঞানই হয়ে যেতো।মেয়েটা যে ভীতু!!দীর্ঘ:শ্বাস ছাড়ে তন্ময়।সে কখনো ভাবেওনি আরিয়ান কাউকে এতোটা ভালোবাসবে।হাহ্।

জীবন ভয়ে কাঁপছে।আরিয়ানের হাতে একটা ধারালো ছুরি চকচক করছে।একদম নতুন বোঝাই যাচ্ছে।
আরিয়ান ছুড়িটায় নিজের আঙ্গুল স্লাইড করতেই আঙ্গুলের ডগা কেটে রক্ত বেরিয়ে এলো।আরিয়ান রক্তের দিকে তাকিয়ে বললো,
—“তোকে আমি কিছুই করতাম না বুঝলি?কিন্তু ওইয়ে তুই মায়াকে প্রশ্ন করেছিলি।আমি ওকে জোড় করিনা কিনা,একসাথে থাকি কিনা সেসব জিজ্ঞেস করছিলি।তুই জানিস মায়া কতটা কেঁদেছিলো?ডু ইউ হেভ্ এনি আইডিয়া?”

জীবন বুঝতে পারছে তার আর বাঁচার কোন চান্স নেই।তাই সে মুখ দিয়ে টু শব্দ টাও করলোনা।আরিয়ান বাঁকা হেসে গালের ভিতর দিকে সজোরে ছুড়ি ঢুকিয়ে দিলো।চোখ বড় বড় হয়ে গেলো জীবনের।ছুড়িটা একটানে বের করে অপরপাশের গাল দিয়ে ঢুকিয়ে দিলো আরিয়ান।যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে চোখ বুজে এলো জীবনের।আরিয়ান আরেকটা ছুড়ি তার বুক বরাবর ঢুকিয়ে দিয়ে সরে এলো।তারপর সময় নষ্ট না করে ঘরের লাইট নিভিয়ে বেরিয়ে এলো।

——————
বাসায় এসে মায়াকে কোলে করেই রুমে নিয়ে আসলো আরিয়ান।বিছানায় সুইয়ে দেয়ার আগেই চোখ খুললো মায়া।কিছু বলার আগেই আরিয়ান তাকে বসিয়ে দিয়ে বললো,
—“গাড়িতে ঘুমিয়ে পরেছিলে মায়াবতী।তাই আর ডাকিনি।এখন যখন উঠেই গিয়েছো আমি ইতিকে ডেকে দিচ্ছি।চেন্জ করে ফ্রেশ হয়ে নাও।ঠিকাছে?”

মায়া উপরনিচে মাথা নাড়ায়।আরিয়ান তার কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে যায়।
॥॥
মায়ার পরণে ঢিলেঢালা সাদা রংয়ের লং ফ্রক।ধবধবে ফর্সা গায়ে সাদা রংটা যেন একটু বেশিই মানিয়েছে।ইতি একটু আগেই তাকে রাতের খাবার খাইয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেছে।যেহেতু তার ডানহাতে ব্যান্ডেজ তাই নিজে খেতে পারেনা।দুদিন যাবত ইতিই খাইয়ে দিচ্ছে।
এখন আর ঘুম আসছেনা।বিছানা ছেড়ে উঠে যায় মায়া।আরিয়ানের ঘরের কোঁণে একটা কাঁচের শোকেসের মতো আছে।সেটার মাঝের তাঁকে একটা ফ্রেমে বাঁধানো ছবি।একটা মেয়ে পাশে একটা লোক দাড়ানো।মেয়েটার কোলে একটা বাচ্চা।অদ্ভুত সুন্দর হাসি মেয়েটার।মায়া কাঁচ খুলে ছবিটা বের করে।
এরা নিশ্চয় আরিয়ানের মা-বাবা।আর কোলে আরিয়ান।মায়ার চোখ ভরে উঠে।এই সুন্দর পরিবারটাকে তার বাবা শেষ করে দিয়েছে।
সেসময়ই আরিয়ান পিছন থেকে বলে উঠে,
—“ওখানে কি করছো মায়া?”

মায়া চোখের জলটা মুছে নিয়ে পেছনে না ফিরেই বলে,
—“উনারা আপনার মা-বাবা তাইনা?যাদের সাথে আমার বাবা…”

আরিয়ান দ্রুত এগিয়ে যায়।মায়ার চোখে পানি না থাকলেও সে বুঝে মায়া কাঁদছিলো।ছবিটা নিয়ে সে একবার হাত বুলায়।তারপর সাবধানে ছবিটাকে জায়গামতো রেখে দিয়ে বলে,
—“আমার কাছে আব্বু-আম্মুর এই একটা ছবিই আছে,যেটা আমি সবসময়ই নিজের সাথে নিয়ে যেতাম।সেবার মামার বাড়িতেও সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম।এজন্যই এটা এখনো আমার কাছে আছে।বুঝলে?”

—“হুম”।মায়া কথা বাড়ায়না।কথা বললেই কেঁদে দিবে।আর আরিয়ানের সামনে কেঁদে তাকে রাগাতে চাচ্ছেনা সে।

______________
ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে আরিয়ান।একটা জরুরি বিষয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।মায়া রুমে।রাত হয়েছে কিন্তু মেয়েটার চোখে ঘুম নেই।ঘরের লাইট জ্বালানো।মায়া বসে আছে বিছানায়।

অনেকক্ষণ যাবত ফোনে কথা বলছে আরিয়ান।বিছানায় বসে সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে মায়া।আরিয়ানের কথা বলার স্টাইলটা খুব সুন্দর।মায়া নিজে নিজেই হাসে।কিসব ভাবছে সে!
একসময় ধৈর্যহারা হয়ে ব্যালকনির দিকে এগিয়ে যায় সে।আরিয়ানের কাছাকাছি গিয়ে দাড়লে আরিয়ান কথা বলতে বলতেই তাকে একহাতে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।মিনিটখানেক পরে ফোনটা কেটে দিয়ে বলে,
—“কি হলো?আজ ঘুমকাতুরে মায়াবতীর চোখে ঘুম নেই কেন?”

—“আপনি আমাকে ঘুমকাতুরে বলছেন কেন?।”

—“ঘুমকাতুরেই তো।এ পর্যন্ত কয়বার যে তোমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় কোলে নিয়েছে হিসাব নেই।অজান্তেই যে তুমি কতবার আমার বুকে ঘুমিয়েছো তা আর নাই বললাম।সেগুলো শুধু আমিই জানি”

বলেই হাসে আরিয়ান।মায়ার মুখের সামনে চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিয়ে হাত সরানোর সময় মায়া আৎকে উঠে তার হাত চেপে ধরে বলে,
—“আপনার হাত কাটলো কি করে?”

আরিয়ান কিছুক্ষন চুপ করে থাকে।মায়ার থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে মৃদু হেসে বলে,
—“সে কেটেছে একভাবে।তোমার জেনে লাভ নেই।”

—“কিন্তু…”

আরিয়ান তার কথা এড়িয়ে বলে,
—“সামনে তাকিয়ে দেখো।”

মায়া সামনে তাকায়।বাগানে জেনি আর জ্যাক পাশাপাশি বসে আছে।জেনি নিজের শরীর চাটছে বসে বসে।নিজেদের ঘরের ভিতর নেই তারা,ছাড়া অবস্থায় আছে।জ্যাক বারবার চেটে দিচ্ছে জেনিকে।মায়া হেসে ফেলে।
আরিয়ান মায়ার হাসি দেখে বলে,
—“ওরা কিন্তু ভাই-বোন না।হাজবেন্ড-ওয়াইফ।দেখেছো জ্যাক কতো কেয়ার করে জেনির।”

—“কেয়ার করে না ছাঁই।বারবার বিরক্ত করছে জেনিটাকে।”

—“এটা তোমার বিরক্ত করা মনে হলো?”

—“তা নয়তো কি?”

আরিয়ান হুট করে দুহাতে মায়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে।পাশের দেয়ালের সাথে মায়াকে ঠেকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
—“আমারো তোমাকে খুব “বিরক্ত” করতে ইচ্ছে করছে মায়াবতী।”

মায়া আরিয়ানের বাহু খামছে ধরে।লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে মাথা নিচু করে রাখে।আরিয়ান ঘোরলাগা দৃষ্টিতে একবার দেখে মায়ার গলায় ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।ভালবাসার পবিত্র স্পর্শে ভরিয়ে দিতে থাকে তার মায়াবতীকে…

~চলবে~

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা-মালিহা_খান❤️ #পর্ব-২৩

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২৩

আরিয়ান ভ্রু কুচকায়।পরণের কালো রংয়ের শার্টের হাতা কুনুই পর্যন্ত উঠাতে উঠাতে বলে,
—“তুমি অফিসে যেয়ে কি করবে?”

মায়া এতক্ষন উৎসুক দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে ছিলো।মনের মতো উওরের জায়গায় পাল্টা প্রশ্নে কিছুটা হতাশ হলো সে।চোখে মুখে যথাসম্ভব অসহায়ত্ব ফুটিয়ে কাতর কন্ঠে বললো,
—“আমার ভালোলাগেনা বাসায়।একা একা লাগে।”

—“একা একা কোথায়?ইতি আছেতো।”

আরিয়ানের উওরটা বিশেষ পছন্দ হয়নি মায়ার।সে তড়িৎ গতিতে বলে,
—“আপনি নিয়ে যাবেন নাকি না?”

আরিয়ান উওর না দিয়ে ফোনটা পকেটে ঢুকায়।ধীরে সুস্থে হাতের ঘড়িটা পরে নেয়।চুলগুলো ব্রাশ করে।তাকে দেখে মনেই হচ্ছেনা মায়ার প্রশ্নটা আদৌ তার কানে গেছে।মায়া উশখুশ করে।কিছুক্ষন পর অধৈর্য হয়ে বলে,
—“আপনি কি আমার কথা শুনতে…”

তার কথা শেষ হওয়ার আগেই আরিয়ান ঘুরে গিয়ে তার বাহু ধরে উঠায়।নিজের পিঠ বরাবর দাড় করিয়ে পেছন থেকে দু”হাতে পেট জড়িয়ে ধরে।
মায়া বেকুব বনে যায়।হঠাৎ এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলোনা সে।মুহুর্তেই লজ্জা নেমে আসে সারা মুখে।

আরিয়ান তার কাঁধে নাক ঘঁষতে ঘঁষতে ফিসফিসিয়ে বলে,
—“বাসায় ভালো লাগেনা নাকি আমাকে ছাড়া ভালো লাগেনা?”

মায়া কেঁপে উঠে।আধো আধো লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বলে,
—“সেরকম কিছু না।..ছাড়ুনতো।”

—“কেন ছাড়বো?”হুম?বলে মায়ার কানের একটু নিচে গভীরভাবে চুমু এঁকে দেয় আরিয়ান।”

মায়া লাফিয়ে উঠে।খিলখিলিয়ে হেসে দিয়ে বলে,
—“উফ্।সুড়সুড়ি লাগছে।মুখ সরান প্লিজ।

আরিয়ান মুখ উঠিয়ে ফেলে।মায়ার কাঁধের সরে যাওয়া ওড়না ঠি ক করে দিয়ে তাকে ছেড়ে দাড়ায়।
মায়া হাফ ছেড়ে বাঁচে।এখনো মনে হচ্ছে,ওখানে কেউ সুড়সুড়ি দিচ্ছে।ছোটবেলা থেকেই তার প্রচন্ড সুড়সুড়ি লাগে।আর স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে তো সবচেয়ে বেশি।

—“আসো,দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
বলে মায়ার হাত ধরে তাকে নিয়ে বেরিয়ে যায় আরিয়ান।মায়ার মুখে হাসি ফুটে উঠে।তারমানে তাকে সাথে নিয়ে যাবে আরিয়ান।
———––——
আরিয়ানের কেবিনে আরিয়ানের পাশে আরেকটা চেয়ার রাখা হয়েছে।সেটাতেই দুই পা ভাঁজ করে আরাম করে বসে রয়েছে মায়া।তার মাথাটা আরিয়ানের হাতের বাহুতে হেলান দাওয়া।চোখ ল্যাপটপের স্ক্রীনে নিবন্ধ।আরিয়ান সেদিকে মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা দেখছে।অন্য কোনোদিকে যেন খেয়ালই নেই তার।মায়াও কিছু বলছেনা।মূলত আরিয়ানকে বিরক্ত করতে চাচ্ছেনা সে।

খানিক পরে পাশ থেকে ধোঁয়া উঠা কফির মগে হাতে নিলো আরিয়ান।তারপর মায়ার দিকে না তাকিয়েই মগটা একটু সামনে ধরে বললো,

—“খাবে?”

মায়া আপত্তি করে বললো,
—“নাহ্,আপনি খান।এঁটো হয়ে যাবে।”

আরিয়ান নির্বিকার ভঙ্গিতে মায়ার ঠোঁটে মগটা ঠেকিয়ে ধরল।মায়া মুখ খুলছেনা দেখে হাল্কা একটু চেপে ধরলো।এবার হা করলো মায়া।এক চুমুক খেয়ে বললো,
—“আপনি খাবেন না?”
আরিয়ান আবারো তাকে আরো এক চুমুক খাইয়ে দিয়ে বললো,
—“আবার আনিয়ে নিবো নে।তুমি খাও।”

চুপচাপ আরিয়ানের হাত থেকে কফি খেতে লাগলো মায়া।অর্ধেক খেয়ে বললো,
—“আর খাবো না”।

আরিয়ান মগ সরিয়ে নিলো।ল্যাপটপে কিছু একটা টাইপ করতে করতে মগের বাকি অর্ধেক কফিতে চুমুক দিতেই মায়া আৎকে বললো,
—“আরে এটা আমার এঁটোতো..”

—“তো?”

মায়া কিছু বলার জন্য মুখ খুলেও চুপ হয়ে গেল।আরিয়ানের এটা একটা অদ্ভুত ক্ষমতা।কথা দিয়েই মানুষকে চুপ করিয়ে দিতে পারে।অন্তত তাকে তো অবশ্যই।
মায়া কোন উওর দিচ্ছেনা দেখে আরিয়ান এক চুমুকে অবশিষ্ট কফিটা শেষ করে ধীর কন্ঠে বলে,
—“এই কফির স্বাদ আমার জন্য কি তা তোমার বুঝে আসবে না মায়াবতী।”
॥॥
হুট করে নক না করেই কেউ একজন কেবিনে প্রবেশ করে।মায়া চমকে তাকায়।সামনে একটা ছেলেকে দেখতে পেয়ে দ্রুত পা নামিয়ে ঠিক করে বসে সে।ছেলেটার পরণে ক্যাজুয়াল গেট-আপ। ব্লু কালার টি-শার্টের সাথে ব্ল্যাক জিন্স।উজ্জ্বল শ্যামলা গড়নের সুদর্শন একটা ছেলে।কিন্তু ছেলেটা এমন নক না করেই ঢুকলো কেনো?দেখেতো ইম্পলোয়ি মনে হচ্ছেনা।
আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে চোখ-মুখ শক্ত করে রেখেছে।রাগে হাতগুলো মুঠো করা।চোখ লাল হয়ে আছে।আরিয়ান কিছু বলার আগেই ছেলেটা মায়ার দিকে হাত বাড়িয়ে সহাস্যমুখে বললো,
—“ভাবি,নিশ্চয়ই?কেমন আছেন?”

মায়া টেবিলে রাখা হাত গুটিয়ে নিল।আরিয়ানের দিকে একবার তাকিয়ে আমতাআমতা করে বললো,
—“ভা..ভালো।”

ছেলেটা বাড়িয়ে রাখা হাতটা সরিয়ে নেয়।আরিয়ান শীতল কন্ঠে বলে উঠে,
—“কোন সাহসে এখানে এসেছিস রাহাত?”

—“আহা,এতো রেগে যাচ্ছো কেন ভাইয়া?আমি তো আমার এই চিনির মতো মিষ্টি ভাবিটাকে দেখতে এলাম।মানতে হবে ভাইয়া,ভাবি ইস্ সো হ…

আরিয়ান সজোরে চেয়ার ছেড়ে উঠে রাহাতের কলার চেপে ধরে।
—“ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট রাহাত।মামা-মামির দিকে তাকিয়ে তোকে কিছু বলিনা বলে এটা ভাবিসনা তোর সব কিছু সহ্য করবো।মায়ার ব্যাপারে একটা কথাও যদি তোর মুখ দিয়ে বের হয়…I swear,মামা-মামির ব্যাপারে ভুলে যাবো আমি।”

রাহাতও গর্জে উঠে বলে,
—“তুমি তাদের মনেই রেখেছিলা কবে?তাদের কথা ভাবলে তুমি অন্তত আমার সাথে ওই…।

ততক্ষনে তন্ময় চলে এসেছে।মায়া হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে।তন্ময় একবার মায়ার দিকে তাকিয়ে দ্রুত রাহাত কে আরিয়ানের থেকে ছাড়িয়ে নেয়।
—“ওকে নিয়ে যা তন্ময়।আমি কিন্তু কিছু একটা করে ফেলবো।

তন্ময় মাথা নাড়ায়।রাহাত নিজেই ঝামটা মেরে তন্ময়কে ঠেলে দিয়ে।নিজের কলার ঠিক করে বলে,
—“আমিই যাচ্ছি।তারপর একটু হেসে হাত নাড়িয়ে বলে,”গুড বাই ভাবি।সি ইউ সুন।”

মায়া থতমত খেয়ে দাড়িয়ে থাকে।প্রতিত্তরে কিছু বলেনা।রাহাত-তন্ময় বেরিয়ে যেতেই আরিয়ান জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নেয়।ঢকঢক করে এক-গ্লাস পানি খেয়ে ফেলে।
কিছুটা শান্ত হতেই মায়া তাকে জিজ্ঞেস করে,
—“উনি কে ছিলেন?”

—“আমার মামার ছেলে।”

—“ওহ্,আপনার মামাতো ভাই?”

—“নো,আমার ভাই না ও।ওর মতো একটা ছেলে কখনোই আমার ভাই হতে পারেনা।কখনো ওকে আমার ভাই বলবেনা।”

আরিয়ানের এমন রাগের কারণ বুঝলোনা মায়া।আর কিছু বলার সাহসও হলোনা তার।চুপচাপ বসে রইলো সে।
————––
গাড়ির পিছের সিটে আরিয়ানের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে মায়া।আরিয়ান সযত্নে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।বাইরে গাঢ় সন্ধ্যা নেমে এসেছে।তন্ময় গাড়ি ড্রাইভ করছে।

গাড়ি থামে নির্জন জায়গায়।ঘুটঘুটে অন্ধকার চারপাশে।কোলাহল নেই কোনো।তন্ময় নি:শব্দে গাড়ি থামিয়ে বেরিয়ে যায়।আরিয়ান মায়াকে সিটে শুইয়ে দেয়।মেয়েটা গভীর ঘুমে আছে।
গাড়ির সব জানালা দরজা লক করে দিয়ে সেও নি:শব্দে বেরিয়ে যায়….

~চলবে~

[আপনারা কমেন্ট করেন না কেন?🙂💔]

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধাতারা❤️ #লেখিকা-মালিহা_খান❤️ #পর্ব-২২

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২২

সকালে মেসেজের টুংটাং শব্দে ঘুম ভাঙে আরিয়ানের।শান্তিময় নিদ্রায় হঠাৎ ব্যাঘাতে মেজাজ খারাপ হয়ে আসে।চোখ খুলতেই নজরে আসে মায়ার ঘুমন্ত মায়াবী মুখশ্রী।তার দিকে মাথা খানিকটা কাত্
করে রেখেছে মায়া।ফলস্বরূপ মায়ার ঠোঁটগুলো তার ঠোঁটের সাথে একেবারেই ছুঁই ছুঁই অবস্থায় আছে।পরমূহুর্তেই মুখের বিরক্তিকর আভাস বদলে ঠোঁটের কোঁণে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো আরিয়ানের।তার একটা হাত মায়ার গলার নিচ দিয়ে দেয়া।আরেকহাত মায়ার পেটের উপর রাখা যেটা মায়া শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে।
হাত বাকিয়ে আলতো করে মায়ার মুখের উপর আসা এলোমেলো চুলগুলো আঙ্গুলের ছোঁয়ায় সরিয়ে দেয় সে।অত:পর খুব সন্তর্পণে গলার নিচ থেকে হাতটা বের করে নিয়ে আসে।ঘুমের ঘোরে হাল্কা একটু নড়েচড়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আবার ঘুমিয়ে পরে মায়া।আরিয়ান একটা ফাঁকা ঢোক গিলে।মায়ার ঠোঁটের দিকে নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাকায়।
হঠাৎ ফোনের রিংটন বেজে উঠে।চোখেমুখে আবারো বিরক্তি খেলা করে।ফোনটা মায়ার পাশে রাখা।আরিয়ান দ্রুত মায়ার উপর দিয়ে ঝুকে গিয়ে ফোনটা হাতে নেয়।ফোনের আওয়াজে পিটপিট করে তাকায় মায়া।আরিয়ানকে তার উপর দিয়ে ঝুকে থাকতে দেখে ঘুমঘুম কন্ঠে বলে,
—“কি করছেন?”

মায়ার কন্ঠে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে ফোনটা সাইলেন্ট করে আরিয়ান।সে চাচ্ছিল মায়া যেন না উঠে।
সেই ঘুম ভেঙেই গেল তার।উপর থেকে সরে গিয়ে উঠে বসে সে।সেকেন্ডে ফোনের মেসেজগুলোয় একবার চোখ সে বুলিয়ে নেয়।মায়ার ধরে রাখা হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে পরপরই আবার ঝুঁকে গিয়ে মায়ার একগালে হাত রেখে অপর গালে ঠোঁটের ছোয়াঁ দিয়ে বলে,
—“ঘুমাও তুমি।ব্রেকফাস্টের সময় হলে আমি ডেকে দিবোনে”।
বলে গায়ের কম্বল সরিয়ে উঠে পরে আরিয়ান।

—“এই সকালে কোথায় যাচ্ছেন?”

—“একটু কাজ আছে।”

ফোনটা টাউজারের পকেটে ঢুকিয়ে কাবার্ড থেকে কিছু কাগজ বের করে দরজা আটকে বেরিয়ে যায় আরিয়ান।
আরিয়ানের বেরিয়ে যাওয়ার পর অলস ভঙ্গিতে মাথার ব্যান্ডেজটায় হাত বুলায় মায়া।এখন আবার ব্যাথা করছে জায়গাটা।এরপর হাতটা নিজের অজান্তেই গালে চলে যায়।যেখানটায় একটু আগে চুমু খেয়েছে আরিয়ান।মায়া মুচকি হাসে।প্রথমবার তার গালে চুমু দিয়েছে উনি।এর আগে শুধু কপালেই ঠোঁট ছোয়াঁতো।হাহ্।এত তাড়াহুড়ো করে কোথায় গেলো কে জানে?কোন ঝাঁমেলা হয়নি তো?
———–——–
নিচে নামতেই তন্ময় দ্রুত এগিয়ে এসে তার হাতে খবরের কাগজ দিয়ে বললো,
—“ভাই,দেখেন।”

আরিয়ান পেপারটা হাতে নিয়ে দেখল ফ্রন্ট পেইজেই তার আর মায়ার ছবি।একপাশে সে মায়াকে কোলে নিয়ে রেখেছে আর আরেকপাশে রাস্তায় যখন মায়াকে সে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো তখনের ছবি।
হেডলাইনে বড় বড় করে লেখা,”আরিয়ান খানের গোপন বিয়ে ফাঁস।”তার একটু নিচে তুলনামূলক ছোট্ট অক্ষরে লেখা-“কে এই মেয়ে?যাকে নিজের স্ত্রী বলছে আরিয়ান খান।প্রমান চাওয়ায় সাংবাদিককে প্রকাশ্য হুমকি আরিয়ান খানের”
তারপর বিশাল বিস্তৃতি নিয়ে প্রায় আধা-পেইজ জুড়ে লেখা হয়েছে।তেল-মশলা মিশিয়ে গতরাতের মূল ঘটনার সাথে আরো একটু রঙচঙ মেরে নিউজ ছাপানো হয়েছে।

আরিয়ানের সেগুলো পড়ার রুচি হয়না।তন্ময়ের দিকে পেপারটা এগিয়ে দিয়ে শীতল কন্ঠে বলে,
—“বাইরে কারা এসেছে?”

—“দু’জন জার্নালিস্ট,মনে হচ্ছে নিউজ চ্যানেলের।”

আরিয়ান তাদের কাবিননামাটা তন্ময়কে দিয়ে বলে,
—“এটার ছবি চ্যানেলগুলোতে প্রকাশ করে দে”।আর বাইরে যারা এসেছে তাদের কেও দিয়ে দিস।”

তন্ময় মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে যায়।আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উপরে উঠতে থাকে।ফোন বেজে উঠে আবারো।
না দেখেই বুঝতে পারছে কে ফোন করেছে।মনে মনে কথাগুলো সাজিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো।ওপাশ থেকে ভারি গলায় একজনের কন্ঠ শোনা গেলো,
—“এসব কি শুনছি আরিয়ান?তুমি বিয়ে করলে?আমাদেরকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলে না?আমি,তোমার মামী কতটা কষ্ট পেয়েছি জানো?”

আরিয়ান ঠোঁট কামড়ে বললো,
—“মামা শান্ত হও।আমি বলছি তোমাকে”।

—“কে?ওই মেয়েটা কে?আমাদের বললে কি আমরা অমত করতাম?শত বলেও তো তোমাকে বিয়ে করাতে পারিনি।আর এখন তুমি আমাদের না জানিয়েই,,,,”

আরিয়ান হতাশভাবে বলে,
—“মামা,আমাকে বলার সুযোগটা তো দিবে।”

—“কতদিন হয়েছে বিয়ের?এতদিনেও বলার সুযোগ হয়নি তোমার।আর এখন সবাই জানার পর আমাকে বলার জন্য সুযোগ খুঁজছো তুমি।”

—“বিয়ের একদিনও হয়নি মামা।মাত্র একরাত হয়েছে।”

—“মানে?”

অত:পর সবকিছু খুলে বলে আরিয়ান।নিজের মামার কাছে কোনকিছুই গোপন করার নেই তার।একদম প্রথম থেকে সবটা শোনার পর মাথায় আকাশ ভেঙে পরে সজীব খানের।সব ছেড়ে রাশেদ চৌধুরির মেয়েকেই বিয়ে করতে হলো আরিয়ানের।গম্ভীর গলায় বলে,
—“তাই বলে তুমি রাশেদের মেয়েকে বিয়ে করলে?”

—“মায়া রাশেদ চৌধুরির মেয়ে এই পরিচয়টার থেকে সে আমার স্ত্রী এটাই কি যথেষ্ট নয়?”

—“আরিয়ান তুমি ভুলে যাচ্ছো,রাশেদ চৌধুরি তোমার মা-বাবার সাথে কি করেছিলো।

—“আমি কিছুই ভুলিনি মামা।তবে সেটার সাথে তো মায়ার কোন যোগসূত্র নেই।মায়া তো কিছু করেনি মামা।
বাবার কুকর্মের শাস্তিতো আমি মেয়েটাকে দিতে পারিনা।তাইনা?”

—“আমি কিছু জানিনা আরিয়ান।তুমি আজই মেয়েটাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসবে।তারপর এ বিষয়ে কথা হবে।”

আরিয়ান শক্ত কন্ঠে বলে,
—“এ বিষয়ে বলার মতো কিছু নেই মামা।আর মায়ার সামনে এ বিষয়ে কোন কথা হবেনা।ও খুবই সহজ সরল একটা মেয়ে।আমি চাইনা ও এসব নিয়ে আপসেট হোক।তোমরা যদি আমার স্ত্রী হিসেবে ওর সাথে দেখা করতে চাও,তবে অবশ্যই আমরা আসবো।”

সজীব খান একটু শিথিল হয়।গলার স্বর নরম করে বলে,
—“তুমি কি বলতে চাচ্ছো আমি বুঝতে পারছি আরিয়ান।তোমার যদি ওকে পছন্দ হয় তবে আমাদের কোন সমস্যা নেই।তোমার পছন্দ নিশ্চয় খারাপ হবেনা।তুমি যা করেছো ভেবে চিন্তেই করেছো আমি জানি।”

আরিয়ান কোন উওর দেয়না।সজীব খান আবার বলে,
—“আজকে কি আসবে এই বাসায়?”

—“মায়াতো একটু অসুস্থ মামা।কাল সিঁড়ি থেকে পরে গিয়েছিলো।তবুও আমি আসার চেষ্টা করবো।”

—“আচ্ছা ঠিকাছে।রাখছি তাহলে?

—“আল্লাহ হাফেজ।”

ফোন রেখে ঘড়ির দিকে তাকায় আরিয়ান।দশটা বেজে গেছে।
রুমে যেতেই দেখে মায়া চোখ খুলেই শুয়ে আছে।আরিয়ান এগিয়ে গিয়ে ফোনটা বিছানায় রাখলো।
মায়া একহাতে ভর দিয়ে উঠে বসলো।
—“ইতিকে একটু ডেকে দিবেন?আমি চেন্জ করবো।একা তো পারবোনা।”

—“চেন্জ করবে?ব্যান্ডেজ তো খুলতে হবে তাহলে।ব্যাথা করছে হাতে এখনো?নয়তো ব্যাগটা খুলে দেই”

—“অতো ব্যাথা নেই।সমস্যা হবেনা।”

আরিয়ান পাশে বসে খুব যত্ন করে হাতের বাঁধা ব্যাগটা খুলে রাখে।যেটা দিয়ে গলার সাথে এটাচ্ করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিলো হাতটা।একটা বালিশ এনে কোলে রেখে তার উপর মায়ার ব্যান্ডেজ করা হাতটা রাখে।
।।
ইতির সাহায্য বহুকষ্টে জামা বদলে নেয় মায়া।

ব্রেক-ফাস্ট শেষে আবারো রুমেই এসে বসেছে মায়া।আরিয়ান অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে।মুখ লটকিয়ে বসে আছে সে।
মায়ার এমন চেহারা দেখে আরিয়ান বলে,
—“কি হয়েছে?শরীর খারাপ লাগছে?”

মায়া কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে,
—“আমাকে আপনার সাথে অফিসে নিয়ে যাবেন?”

~চলবে~

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা-মালিহা_খান❤️ #পর্ব-২১

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২১

আরিয়ানের গম্ভীর কন্ঠের ভারি ধমকে মূহুর্তেই কোলাহল থেমে গেল।সাংবাদিকদের সাথে মায়াও খানিকটা চুপসে গেলো।আরিয়ানের ধমকে সে যারপরনাই ভয় পেয়েছে।পিনপতন নিরবতা ভেঙে একজন বলে উঠলো,

—“কিন্তু স্যার,আপনিতো আনম্যারিড।ইনি যে আপনার স্ত্রী প্রমান কি?এমন তো নয় আপনি কোন নারী কেলেঙ্কারি তে জড়াতে চাচ্ছেননা।এজন্য উনাকে স্ত্রী বলছেন।ম্যাম কিছু বলুন।আপনি কি উনার সাথেই থাকেন?আপনাকে কি উনি জোর করে…

মায়া লজ্জায় কুঁকরে যায়।এদের কথাবার্তার ইঙ্গিত বুঝতে পারছে সে।ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকে মাথা নুইয়ে আরিয়ানের গা ঘেঁষে দাড়িয়ে থাকে।

সাংবাদিকটা আরো কিছু বলার আগেই আরিয়ান চোখ গরম করে আবারো ধমকে উঠে,
—“হাউ ডেয়ার ইউ!আপনার সাহস কি করে হয় ওকে কোন প্রশ্ন করার?আর এতোটা বাজে চিন্তাধারা কিভাবে আসে আপনাদের মাথায়।আরিয়ান খানের ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট নিশ্চয় আপনাদের মুখ থেকে শুনতে হবেনা।আমি যখন বলেছি ও আমার স্ত্রী।তখন এই ম্যাটারটা এখানেই ক্লোজ হওয়া উচিত না?এটা নিয়ে আর একটা ওয়ার্ডও শুনতে চাচ্ছিনা আমি।রাস্তা ছাড়ুন।

আরিয়ানের উপর আর কিছু বলার সাহস পেলোনা কেউ।সাইড দিতেই দ্রুত হেটে মায়াকে গাড়িতে বসিয়ে দিল আরিয়ান।দরজা আটকে নিজে গাড়িতে ঢোকার আগে যেই ছেলেটা মায়াকে প্রশ্ন করছিলো তার চেহারাটা একবার দেখে নেয়।অত:পর গাড়িতে বসে জানালার কাঁচ উঠিয়ে দেয় সে।
মায়ার সিটবেল্ট বেঁধে দিয়ে সজোরে গাড়ি টান দেয়।মাথায় আগুন জ্বলছে তার।রাগ নিয়ন্ত্রন সে কোনোকালেই করতে পারে না।
হঠাৎ ডুকড়ে কেঁদে উঠে মায়া।আরিয়ান সেদিকে তাকায় না।সে জানে মায়া কেন কাঁদছে।মায়ার কান্নার শব্দে রাগ আরো বেড়ে যাচ্ছে তার।গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিয়ে সে রাগী কন্ঠে বলে,
—“মায়া,কাঁদবেনা।রাগ উঠে যাচ্ছে।স্টপ ক্রাইং”

আরিয়ানের ধমকে আরো জোরে কেঁদে দেয় মায়া।ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে,

—“উনারা তো ঠি কই বলছিলো…আমরাতো…”

হুট করে ব্রেক কষে আরিয়ান।মাথা ঠি ক নাই তার।রাগে শরীর কাঁপছে।উঠে গিয়ে মায়ার দিকে ঝুকে সিটের দু’পাশে সজোরে বাড়ি মেরে বলে,
—“আমরাতো কি?হুম?কি আমরাতো?ওরা ঠি ক বলছিলো?কখনো জোর করেছি আমি তোমাকে?একসাথে থাকার পরও ফিজিক্যালি ইনভলভ্ হয়েছি কখনো?এখন চুপ করে আছো কেন?স্পিক আপ,ড্যাম ইট্।

—“আ..আমি সেটা ব..বলিনি…”

—“তো কি বলছো?বলো?কি বোঝাতে চাচ্ছো?”

মায়া একবার আরিয়ানের চোখের দিকে তাকায়।রাগে যেন চোখ দিয়েই ঝলসে দিবে সে।ভয়ে মাথা নিচু করে সশব্দে ফুঁপিয়ে উঠে সে।

আরিয়ান ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।মাথা কাত করে জোড়ে জোড়ে কয়েকটা শ্বাস নেয়।নিজের সিটে বসে স্টেয়ারিং এ হাত রেখে চোখ বন্ধ করে রাখে।মিনিট দুয়েক পর চোখ খুলে সে।এখনো মায়ার ফোঁপানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে।শীতল গলায় বলে,

—“আমাদের বিয়ে হয়নি এটাইতো বলতে চাচ্ছো?”

মায়া উওর দেয়না।কেবল মৃদুভাবে উপর নিচে মাথা নাড়ায় ।মুখে কিছু বলতে ভয় লাগছে তার।আরিয়ান যদি আবার ধমকে উঠে।

আরিয়ান ফোনে কাওকে কিছু একটা মেসেজ করে ফোনটা গাড়ির সামনে রেখে বলে,
—“বেশ,আজকেই বিয়ে করবো আমরা”।

মায়া চমকে তাকায়।চোখে মুখে বিস্ময়।এখন বিয়ে করবে মানে?রাত হয়ে গেছে এখন হুট করে কিভাবে?
আরিয়ান তার চোখে চোখ রাখে।মায়ার কান্না তার সহ্য হয়না তবুও মেয়েটা তার সামনেই বারংবার কাঁদে।
সামনের দিকে দৃষ্টি স্হির করে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সে বলে,

—“চোখ মুছো মায়া।অযথা কাঁদবে না।তোমার চোখের পানির প্রতিটা ফোঁটা আমার কাছে খুবই মূল্যবান।সেগুলো ঝরলেও শুধু আমার জন্য ঝরবে।অন্য কোন কারণে নয়।”
————–——
মাত্র প্লাস্টার করা হাত দিয়েই কোনরকম রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে দেয় মায়া।মায়ার সাইন করার পর আরিয়ানও সাইন করে দেয়।রুমে শুধু পাঁচজন মানুষ।একজন উকিল,তন্ময়,ইতি,মায়া,আরিয়ান।
তন্ময় হাপাচ্ছে।কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে তার।এতক্ষন বেশ দৌড়-ঝাপের মধ্য ছিলো সে।আরিয়ান-মায়া সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সেও ইতিকে নিয়ে অন্য গাড়িতে করে বাসায় ফিরছিল।পথিমধ্য হঠাৎই আরিয়ানের মেসেজ পায়,এখনই রেজিস্ট্রি পেপারের ব্যবস্থা করতে।সে এখনি মায়াকে বিয়ে করবে।
ব্যাস,আরিয়ানতো বলেই ক্ষান্ত।আর এই রাতের বেলা এসব মেনেজ করতে করতে সে ক্লান্ত।

রেজিস্ট্রি অফিস থেকে বেরিয়ে মায়াকে নিয়ে গাড়িতে বসালো আরিয়ান।মায়া একেবারেই চুপচাপ।সে কি রিয়েক্ট করবে তার জানা নেই!তার কি আদৌ রিয়েক্ট করা উচিত?বিয়েটা তার সম্মতিতে হলো নাকি অসম্মতিতে সেটাই তো বুঝতে পারছেনা।তবে এতটুকু জানে,আরিয়ান যা করছে তার ভালোর জন্যই করছে।
______________
বাসায় ফিরে আগেই তাকে এতগুলো খাবার খাইয়েছে আরিয়ান।সে নাকি খুব দূর্বল।এখন নাকি বেশি বেশি খেতে হবে।এত খেয়ে এখন ক্লান্ত লাগছে মায়ার।ঘুম আসছে।বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে সে।আরিয়ান গেছে ওয়াশরুমে।শাওয়ার নিতে।সবকিছুই স্বাভাবিক।রোজকার মতো।শুধু এখন তারা বিবাহিত।আরিয়ানের বিয়ে করা বউ সে।এসব ভাবতে ভাবতেই দরজা খুলে বেরোয় আরিয়ান।শুধু টাওয়াল পরা সে।মায়া একবার তাকিয়ে চোখ নিচে নামিয়ে নেয়।লজ্জা লাগছে তার।লাল হয়ে যাচ্ছে ফর্সা গালদুটো।
আরিয়ানের যে এতো রাগ আজ না দেখলে বুঝতোই

কাবার্ড থেকে জামা নিয়ে আবার ওয়াশরুমে ঢুকে আরিয়ান।টাউজার আর টি-শার্ট পরে বেরিয়ে আসে।
ঘরের লাইট নিভিয়ে মায়াকে সোজা করে শুইয়ে দেয়।কারণ কাত হলে মায়া হাতে ব্যাথা পাবে।তবে কথা বলেনা কোন।মায়াও নিশ্চুপ।
অত:পর মায়ার পাশে তার পেট জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরে।কিছুক্ষন অতিবাহিত হতেই মায়া ধীর কন্ঠে অভিমানের স্বরে বলে,

—“আপনি আজ আমাকে ধমক দিয়েছেন।”
—“বেশ করেছি”।

আরিয়ানের এমন গা ছাড়া ভাবে অভিমানের পাল্লাটা আরো ভারি হলো মায়ার।মুখে কুলুপ এঁটে শুয়ে থাকলো সে।কিছুক্ষন পরই আরিয়ান তার গালে নাক ঘষে বললো,
—“তখন মাথা ঠিক ছিলনা মায়াবতী।রাগ হচ্ছিল খুব।তার উপর তুমি কাঁদছিলে।যেটা আমার সবচেয়ে অপছন্দের।তাই রাগের মাথায়…”

—“রাগের মাথায় আমার উপর চিল্লিয়ে দিলেন”।

আরিয়ান হেসে ফেলে।এই বাচ্চা মেয়েটার মায়াজালে সে কিভাবে যে ফেঁসে গেছে?

—“বাদ দাও সেসব।ঘুমিয়ে পরো।আর ঘুমের মধ্য নড়াচড়া করবেনা।হাতে বা মাথায় ব্যাথা পাবে কিন্তু।…
শরীর খারাপ লাগলে আমাকে ডাকবে।ঠিকাছে?”

—“হু”।

মায়া পরম শান্তিতে আরিয়ানের বাহুডোরে ঘুমিয়ে পরে।সে জানে এই জায়গাটা তার জন্য নিরাপদ।একেবারেই নিরাপদ।কোন খারাপ কিছু তাকে স্পর্শ করতে পারবেনা এখানে।কখনো পারবেনা।

~চলবে~