Friday, December 19, 2025
Home Blog Page 13

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা_মালিহা_খান❤️ #পর্ব-৪০

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৪০

সূর্য ডুবে যাচ্ছে।সারাদিনের ছন্নছাড়া পাখিগুলো নিজ নিজ বাসস্থান ফিরে যাচ্ছে তাদের ক্লান্ত ডানাগুলো ঝাঁপটে।
বিকেলের মিষ্টি রোদের কিছুটা এখনও চারদিকে আলো ছড়াচ্ছে।সেই ক্ষীণ আলোই তীর্যক আকারে মায়ার উপর আছড়ে পরেছে।।ঘন কালো চুলগুলোয় সোনালি আভা।ঠোঁটের চারপাশে ভরিয়ে চকলেটের দ্বিতীয় প্যাকেটটা শেষ করছে সে।আরিয়ান তাকে রুমে যেতে বললেও সে জেদ করেই যায়নি।এতদিন পর বাগানে এসেছে,এত তাড়াতাড়ি নাকি সে যাবেনা।জ্যাক আর জেনিও অলস ভঙ্গিতে মায়ার পাশে বসে রয়েছে।এতক্ষণ অবিশ্রামভাবে মায়ার সাথে খেলা করছিলো তারা।
একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে উঠে দাড়ালো আরিয়ান।ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে মায়ার সামনে একহাঁটু গেড়ে বসলো।মায়ার চকলেট খাওয়া শেষ।হাতে খালি প্যাকেট হাতে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে চেয়ে আছে সে।আরিয়ান মায়ার গায়ের ওড়না ঠি ক করে দিয়ে হাতের ইশারায় একজন বডিগার্ডকে ডাকলো।লোকটা মাথা নুইয়ে সামনে এসে দাড়াতেই সে মায়ার হাত থেকে চকলেটের প্যাকেটগুলো নিয়ে লোকটার হাতে দিয়ে বললো,

—“এগুলা ফেলে দাও।আর জ্যাক-জেনিকে ওদের ঘরে নিয়ে খাবার দাও।দেখে ক্ষুধার্ত মনে হচ্ছে”

লোকটা ওদের নিয়ে চলে যেতেই আরিয়ান পকেট থেকে রুমাল বের করলো।পাশের পানির বোতল থেকে রুমালটা ভিজিয়ে আলতো করে মায়ার ঠোঁটের চারিপাশ মুছিয়ে দিতে দিতে বললো,
—“অনেকক্ষন থেকেছো বাগানে।এখন রুমে যেয়ে চুপ করে ঘুমাবা।ঠিকাছে?”

মায়া দুষ্ট হাসলো।আরিয়ান ঠোঁট ক্লিন করে রুমালটা সরাতেই সে হাতে লাগা চকলেট গুলো আবারো চারপাশে লাগিয়ে দিল।
আরিয়ান রাগী দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করতেই সে মিষ্টি হেসে মুখ বাড়িয়ে বললো,
—“মুছিয়ে দিন।তারপর তাড়াতাড়ি রুমে চলেন।প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।”

আরিয়ান ছোট্ট একটা শ্বাস ফেললো।পুনরায় তার হাত,মুখ মুছে দিয়ে দুহাতে জড়িয়ে ধরে উঠালো মায়াকে।
ধীরে ধীরে রুমে নিয়ে বিছানায় বসাতে নিলেই “আহ্”বলে মাঝারি আকারে চিৎকার করে উঠলো মায়া।আরিয়ান তাকে বসিয়ে দিয়ে দ্রুত গলায় বললো,
—“কি হলো?পেইন উঠেছে?”

মায়া পেটে হাত দিয়ে পরপরই আবারো চিৎকার করে উঠলো।দাঁতেদাঁত চেপে বললো,
—“আপনার বাচ্চারা আমাকে লাথি দিচ্ছে।দুইজন একসাথে শুরু করেছে বোধহয়।”

ঠোঁটের কোঁণে স্বস্তির আভাস দেখা গেলো আরিয়ানের।এটা স্বাভাবিক সে জানে তাই ভয় পেলো না
।ফ্লোরে হাঁটু ভাঁজ করে বসে জামা উঠিয়ে মায়ার পেটে আলতো চুমু খেয়ে কান লাগিয়ে সে বললো,
—“আপনারা এত ব্যাথা কেন দেন মাকে?বুঝেননা আপনাদের মা যে আপনাদের মতোই বাচ্চা।এত ব্যাথা সে নিতে পারেনা।”

মায়া নিরলস ভঙ্গিতে তাকিয়ে বললো,
—“ওরা কি এসব শুনতে পারছে?”

—“অবশ্যই শুনতে পারছে।তুমি শুনতে পারছে মানে ওরাও শুনতে পারছে।”

মায়া মৃদু হাসে।বলে,
—“আপনার এই যুক্তিটা….আআহ্।”

মূহুর্তেই চোখমুখ চকচক করে উঠলো আরিয়ানের।স্পষ্ট পায়ের ছাঁপ দেখেছে সে মায়ার পেটে।একেবারে ছোট্ট একটা পায়ের স্পষ্ট ছাঁপ।উজ্জল হেসে সে বলে,

—“মায়াবতী,ওর পায়ের ছাপ দেখেছি আমি।একেবারে স্পষ্ট।ছোট্ট একটা পা।”

উওরে একটা চওড়া হাসি দিলো মায়া।এতক্ষনের ব্যাথাটা যেনো নিমিষেই মিলিয়ে গেলো।
মায়ার পেটে আবারো চুমু খেয়ে আরিয়ান বলে,
—“তাকিয়ে থাকো।আবার লাথি দিলে দেখতে পারবা।”

কিছুক্ষন অতিবাহিত হয়ে গেলেও কিছু দেখতে পাওয়া গেলো না।আরিয়ান মুখ এগিয়ে বললো,
—“লাথি দিচ্ছোনা কেন তোমরা?মা অপেক্ষা করছে তো।…আস্তে দিও নয়তো মা ব্যাথা পাবে”।

সাথেসাথেই লাথি দিলো একজন।মায়া মুখ দিয়ে আর্তনাদ করতে গিয়েও থেমে গেল।কারণ এবারে সেও পায়ের ছাপ দেখেছে।এবারের টা আরো স্পষ্ট।খুশিতে চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পরলো মায়ার।আরিয়ান মুচকি হেসে তার চোখের পানি মুছিয়ে দিলো।দুগালে হাত রেখে কপালে চুমু খেয়ে বললো,
—“এখনই কাঁদছো!আর কদিন পর যখন ওরা তোমার কোলে থাকবে,একসময় আধো আধো স্বরে মা বলে ডাকবে।তখন কি করবে?”

মায়া আবারো কেঁদে দেয়।আরিয়ানের বুকে মাথা গুঁজে বলে,
—“জানিনা।”

আরিয়ান স্বস্নেহে তার চুলের ভাঁজে হাত বুলিয়ে দেয়।এই স্বৃতিময় প্রহরগুলো খুব সুন্দর।খুব বেশিই সুন্দর।

_________________
ব্যাগ গুছিয়ে নেয়া হয়েছে।মায়ার কিছু জামাকাপড় আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।যদিও ডেলিভারির ডেট আরো তিনদিন পরে।তবুও যাতে কোনরকম সমস্যা না হয় তাই আগে আগেই মায়াকে হসপিটালে এডমিট করে দিতে বলেছে ড.মিতালী।

মায়াকে নিয়ে নিচে নেমে গাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে আরিয়ান।জ্যাক আর জেনি অনবরত চেটে দিচ্ছে মায়াকে।তারাও হয়তো বুঝতে পারছে মায়া কয়েকদিনের জন্য কোথাও যাচ্ছে।তাদের সাথে দেখা হবেনা।
মায়া হাত উঠতেই তারা আরিয়ানের শরীরে সামনের পা ঠেকিয়ে দুইপায়ে দাড়িয়ে গেলো।মায়ার যেনো তাদের ঝুঁকে আদর না করতে হয় সেজন্য।দুজনের মাথায়ই হাত বুলিয়ে দিলো মায়া।আরিয়ান বললো,
—“এবার যাই?ওদেরকে নিয়ে যাক?”
মায়ার একটু মন খারাপ হলেও সে মুচকি হেসে বললো,
—“আচ্ছা নিয়ে যান।”

তন্ময় বসলো ড্রাইভিং সিটে।ইতি বসেছে পিছনে মায়া আরিয়ানের সাথে।আরিয়ানের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রেখেছে মায়া।আধো ঘুম আধো জাগা সে।কয়েকবারই সে বলেছে তার হাল্কা পেট ব্যাথা করছে।হসপিটালেই যাচ্ছে তাই আর আরিয়ান ড.মিতালী কে ফোন দেয়নি।তন্ময় ধীরে ধীরে ড্রাইভ করছে।কোনরকম ঝাঁকুনিতে যেন মায়ার কোনো সমস্যা না হয়।গাড়ি চুপচাপ।মাঝেমধ্য টুকটাক কথা বলছে তারা।

হঠাৎই হুট করে মাথা উঠিয়ে আরিয়নের বাহু খামছে ধরলো মায়া।চোখগুলো বড় বড় করে আরিয়ানের তাকালো সে।আরিয়ান সোজা হয়ে মায়ার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,
—“মায়া?কি হলো?”

সাথে সাথে গগনবিদারী চিৎকার করে উঠলো মায়া।লেবার পেইন উঠেছে তার।ব্যাথায় চোখ মুখ লাল হয়ে এলো।চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে কোনরকমে সে বললো,
—“ব্যা..থা…হচ্ছে..খু..ব।”

ঘাবড়ে গেলো আরিয়ান।ডেলিভারির ডেট তো চারদিন পর তবে হঠাৎ করে পেইন উঠলে কেনো?তন্ময় এবার দ্রুত ড্রাইভ করছে।একটু পর পর জোরে চিৎকার করে উঠছে মায়া।পেইনটা ছড়িয়ে পরছে তার।কাঁপছে সে।আরিয়ানের শার্ট ভিজে যাচ্ছে চোখের পানিতে।মায়ার কষ্ট দেখে নিজেকে আটকে রাখতে পারছেনা আরিয়ান।এলোমেলো লাগছে তার।অনবরত মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে সে বলছে,
—“একটু সহ্য করো মায়া।একটু সহ্য করো।এইতো পৌছে গেছি।”

মায়া আবারো ডুকরে কেঁদে উঠলো।ঠোঁট কামড়ে বললো,
—“খুব….ক…কষ্ট হচ্ছে আমি…”

—“কথা বলোনা।জান আমার..এসে পরেছিতো।কিছু হবেনা তোমার।আমি আছিতো।”

গাড়ি থামলো।আরিয়ান নেমে গেলো।মায়া উঠতে পারছেনা।ইতি বেরিয়ে বললো,
—“আপু,উঠতে পারবেননা ভাইয়া।”

আরিয়ান আর কিছু ভাবলোনা গাড়ির ভেতর ঝুঁকে গিয়ে মায়াকে পাঁজাকোলা করে ধরে বলে,
—“মায়া,কষ্ট করে গলাটা ধরো।নয়তো ব্যালেন্স রাখতে পারবোনা।”

মায়া কাতরাতে কাতরাতে বলে,
—“আপনি আমাকে কোলে নিতে পারবেননা।আপনার কষ্ট হবে।”

আরিয়ান এবার জোরে ধমকে উঠে।বলে,
—“ধরো বলছি।”

মায়া সিক্ত নয়নে তাকিয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরলো।
মায়ার এতো ভারি শরীর নিয়েও তাকে কোলে তুলে নিলো আরিয়ান।কোনরকমে দৌড়ে ভিতরে নিয়ে যেতেই স্ট্রেচার নিয়ে এলো ওয়ার্ডবয়।ড.মিতালী দৌড়ে এলেন।উনি মায়ার কেবিন ঠি কঠাক করে তাদেরই অপেক্ষা করছিলো।
মায়াক দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে সে বললো,
—“উনারতো ওয়াটার ব্রেক করছে।ডেলিভারি হবে।দ্রুত ওটিতে শিফ্ট করো।ফাস্ট”

তারপর আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
—“চিন্তা করবেননা।আপনার স্ত্রীর কিছু হবেনা।”

মায়াকে দ্রুত ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে।আরিয়ান তার সাথেই আছে।একমূহুর্ত একা ছাড়েনি।মায়া শক্ত করে তার হাত ধরে রেখেছে।জোরে জোরে চিৎকার দিয়ে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে সে।হসপিটালের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠছে।
ড.মিতালী চলে এসেছেন।ওটিতে ঢুকানোর ঠি ক আগমূহুর্তে মায়া আধোআধে কন্ঠে বললো,
—“আপনাকে ছাড়া আমি ভেতরে যাবেনা।আমার ভয় লাগে।”

—“মায়া আমি…”।

আরিয়ানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মায়া বললো,
—“আমি কিছু জানিনা।আপনি আমার সাথেই থাকবেন।বললামতো আমার ভয় লাগছে।”

ড.মিতালী একমূহুর্ত তাকালেন।আরিয়ানের সাথে চোখাচোখি হতেই তিনি বললেন,
—“আসুন।আপনিও ভেতরে আসুন।উনি পারবেননা আপনাকে ছাড়া”

আরিয়ান মায়ার হাতের উল্টোপিঠে চুমু খেলো।এত ব্যাথা সহ্য করছে এই মেয়ে অথচ তার নাকি আরিয়ানকে ছাড়া ভয় করছে।ও
টিতে ঢুকানো হলো মায়াকে।নরমাল ডেলিভারিই হবে তার।ব্যাথা ক্রমশ বাড়ছে।আরিয়ান শক্ত করে তার হাত ধরে রেখেছে।তার চোখদুটো দিয়ে কখন যেন ভিজে গেছে নিজেও টের পায়নি সে।
মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বারবার সে বলছে,

—“আমি আছি মায়া।ভয় পেয়োনা।আমি আছি।”
হাঁড়ভাঙা তুমুল ব্যাথার মাঝেও এই একটা কন্ঠস্বর ক্রমাগত সাহস দিয়ে যাচ্ছে মায়াকে।এই মানুষটা না থাকলে হয়তো এই ব্যাথাতেই মারা যেত সে।জীবনে এরকম একটা মানুষের খুব দরকার।খুব!

~চলবে~

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা_মালিহা_খান❤️ #পর্ব-৩৯

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৩৯

নিশুতি রাতের কান্নাগুলো আটকে আছে।মাঝেরাতের নিস্তব্ধতা চিঁড়ে আরিয়ানের বুকের ভেতর চলছে বিধ্বংসী ঝড়।শ্বাস নেয়ার সাহসটুকো পাচ্ছেনা সে।বদ্ধ বদ্ধ লাগছে।নিজের সাথে নিজেকে সামলে নেয়ার নিরন্তর যুদ্ধ করছে।রাতের আঁধার কেটে ধীরে ধীরে দিনের আলো উঁকি দিচ্ছে গহীন আকাশে।

এই ভোরবেলাই ড.মিতালী কে ফোন করায় ছুটে এসেছেন তিনি।হসপিটালে এখন কোন ডাক্তার নেই বিধায় সেখানে নিয়ে যাওয়াটা বোকামি ছাড়া কিছুইনা।ইতি আর ডক্টর মিতালী প্রায় একঘন্টা যাবত রুমের ভেতর আছে।রুমের বাইরে রেলিংয়ে হেলান দিয়ে মাথা ঝুকিয়ে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে আরিয়ান।তার পাশেই তন্ময়।
বেশ অনেকক্ষনের নিরবতা ভেঙে তন্ময়ই বললো,
—“ভাবির ব্লিডিং তো থেমে গেছে ভাই।টেনশন নিয়েন না।ভাবি আর বাচ্চারা তিনজনই সুস্থ থাকবে, দেখেন।”

আরিয়ান অসচ্ছ চোখে একবার তাকিয়ে অন্যদিকে দৃষ্টি দিয়ে বলে,
—“মেয়েটা আমার পাশেই ঘুমিয়ে ছিল অথচ ওর ব্লিডিং হচ্ছে আমি খেয়ালই করলাম না তন্ময়।দোষটা তো আমারই।”

তন্ময় দীর্ঘ:শ্বাস ছাড়ে।আরিয়ানকে বোঝানো তার পক্ষে অসম্ভব।যদিও তার নিজেরও মাথা ঘুরছে।আরিয়ান ডাকার পর মায়ার রক্ত দেখে নিজেও প্রচন্ড ঘাবড়ে গিয়েছিলো।সম্পর্কে মায়া তার ভাবি হলেও বয়সে তার থেকে খুব ছোট।ভাবি হিসেবে যেমন সম্মান করে তেমনই ছোটবোনর মতোই তাকে খুব স্নেহ করে তন্ময়।

তার ভাবনার মাঝেই গেট খুলে বেরিয়ে আসে ড.মিতালী।তার ক্লান্ত চেহারাতে তৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে আরিয়ানকে বলে,
—“আপনার স্ত্রী সুস্থ আছেন।বাচ্চাদের হার্টবিট ও ঠিক আছে।মূলত যতটা দেখা গেছে ততটা রক্ত বের হয়নি।সুতি কাপড়ে রক্ত ভিজে ছড়িয়ে পরেছিলো তারউপর উনি সাদা জামা পরে ছিলেন তাই মনে হচ্ছিল অনেক ব্লাড।কিন্তু আসলে অতটা ব্লিডিং হয়নি।আর এটা স্বাভাবিক।আপনাকে বললাম না ব্লিডিং হওয়া মানেই মিসক্যারেজ না।আপনার স্ত্রীর বয়সটা একটু কম,ফার্স্ট টাইম প্রেগন্যান্সিতেই টুইন বেবি হবে আর এমনেই উনি একটু নাজুক,আদুরে প্রকৃতির।ইমিউনিটি সিস্টেম একটু লো।একটু ব্লিডিং হয়েছে যদিও আমার ধারণা এটা ব্যাথাহীন ব্লিডিং তবুও দেখেন উনি ঘুমের মধ্যই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন।”

আরিয়ান স্বস্তির হাসি হাসে।এতক্ষন বুকের উপর চেপে থাকা পাথরটা নেমে যায়।
—“রক্তটা কেন বের হলো ডক্টর?ওর কিছু হবোনাতো?”

—“আশা করছি কিছু হবেনা।সাতমাসে যদিও ব্লিডিং হয়না।তবুও উনার হয়েছে।সমস্যা নেই।”এভরি প্রেগন্যান্সি ইজ্ ডিফারেন্ট”।উনি সুস্থ আছেন এটাই খুশির।আমি মেডিসিন লিখে দিয়েছি।কাল থেকে টাইমলি খাওয়াবেন।এখন স্যালাইন চলছে,দূর্বলতা কেটে যাবে।
আর আগামী তিনমাসে উনাকে বেশি লাফালাফি করতে দিবেন না।বেড রেস্টে থাকবে এটাই বেটার হবে।”

—“আচ্ছা ডক্টর।আমি খেয়াল রাখবো।আপনি আজকের রাতটা গেস্টরুমে থেকে যান।সকাল হলে বাসায় পৌছে দিবোনে।”

ড.মিতালী হাসেন।আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলেন,
—“সরি বাট আমি থাকতে পারবোনা।আমার মেয়েটা বাসায় একা।আমার ফিরতে হবে।আই হোপ ইউ ক্যান আন্ডারস্টেন্ড।

আরিয়ান আর জোর করে করেনা।ড.মিতালীর স্বামী নেই সে জানে।পাঁচ বছরের একটা মেয়ে আছে যার সাথে আরিয়ানের দু চারবার দেখা হয়েছে।বেশ মিষ্টি মেয়েটা।তার কারণে বাচ্চা মেয়েটাকে বাসায় মাঝরাতে একা রেখেই চলে এলো ড.মিতালী ভাবতেই মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো।
_______________
ধীরপায়ে রুমে প্রবেশ করলো আরিয়ান।খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে মায়া।কেউ আসার শব্দে চোখ মেলে তাকালো সে।আরিয়ানকে দেখে সে দূর্বল গলায় বললো,
—“আপনি এতক্ষন কোথায় ছিলেন?সবসময় আমার কাছে কাছে থাকবেন।আপনাকে ছাড়া আমার ভয় করে।”

আরিয়ান দরজা আটকিয়ে মায়ার কাছে এসে বসে।
মায়া ক্ষীণ হেসে ক্যানেলা লাগানো কাঁপা কাঁপা হাতটা আরিয়ানের হাতের উপর রাখে।
আরিয়ান হুট করে ঝুকে মায়াকে নিজের সাথে লেপ্টে নেয়।তার একহাত মায়ার কোমড় আরেকহাত মায়ার ঘাড়ের পিছে।কয়েক মূহূর্তের মাথায় মায়াকে অসংখ্য চুমু তে ভরিয়ে দিতে থাকে সে।
মায়ার গাল,কপাল,গলা ছেঁয়ে যায় আরিয়ানের তীব্র ভালবাসার স্পর্শে।ভালবাসার ঝড় থেমে যেতেই তার ঘাড়ে মুখ গুঁজে রাখে আরিয়ান।দ্বিতীয়বারের মতোন মায়া তার ঘাড়ে চোখের জলের অস্তিত্ব টের পায়।আলতো করে আরিয়ানের পিঠে হাত রেখে সে বলে,
—“কাঁদছেন কেনো?”

উওরে আরিয়ান আরো বার দুয়েক তার ঘাড়ে ঠোঁট ছুইয়ে ভেঁজা কন্ঠে বলে,
—“মায়াবতী তুমি…।”

—“আমি ঠি ক আছি।বাচ্চারাও সুস্থ আছে।আপনি শান্ত হন।”

আরিয়ান আরো বেশ কিছুক্ষন মায়াকে জড়িয়ে রেখে ছেড়ে দেয়।চোখ লাল হয়ে আছে তার।ঠোঁটগুলো রক্তিম।
স্যালাইন শেষ হলে মায়ার ক্যানেলাটা খুলে দিয়ে তাকে শুইয়ে দেয় আরিয়ান।ঘরের লাইট নিভিয়ে নিজেও তার পাশে শুয়ে মাথায় হাত রাখে।
মায়া তখনো সজাগ।ঘরের হাল্কা আলোয় আরিয়ানকে দেখা যাচ্ছে।মায়া তার মাথায় রাখা হাতটা নিজের দুহাতে চেঁপে ধরে বুকের মাঝখানটায় নিয়ে বলে,

—“জানেন,বাবাও না আমাকে খুব ভালোবাসতো।আপনার মতোই পাগলামি করতো।আমার কিছু হলে অস্থির হয়ে উঠতো।আমি শান্ত হতে বললেও শান্ত হতোনা।এতো কঠিন মানুষটাও কেঁদে দিত।ঠিক আপনার মতোই।কিন্তু দেখেন সে আমাকে ছেড়ে চলে গেলো।আচ্ছা আপনিও কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন?”

—“আজেবাজে কথা না বলে ঘুমাও মায়া।তুমি না ঘুমালেতো বাচ্চারাও ঘুমাতে পারেনা।”

বিষন্নতার মাঝেও ফিক করে হেসে দেয় মায়া।হাসিমাখা কন্ঠে বলে,
—“এটা কে বললো আপনাকে?”

—“আমার মনে হয়।”

—“ওদেরতো এখনও চোখও ফুটেনি।আপনি যে কিসব বলেন।”

—“ওইদিন ডক্টর বললোনা,তুমি যা খাও ওরাও তাই খায়।তাই ভাবলাম তুমি ঘুমালে ওরাও ঘুমায়,তুমি কাঁদলে ওরাও কাঁদে,তুমি ব্যাথা পেলে ওরাও ব্যাথা পায়,তুমি হাসলে ওরাও হাসে।”

—“হয়েছে চুপ করেন।এখন আপনি আর কথা বললে আমি অজ্ঞান হয়ে যাবো।”

আরিয়ান বোকা হাসে।দুটো বাচ্চার বাবা হবে তাই হয়তো দিন দিন এতো বোকা হয়ে যাচ্ছে সে।
______________
বাগানের নরম ঘাসের উপর হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে মায়া।মুখে নজরকাড়া হাসি নিয়ে খেলে চলেছে জ্যাক আর জেনির সাথে।
ঘাসের মাঝখানেই বসার জায়গা আছে আরিয়ান সেখানেই বসে আছে কিন্তু মায়া বসেনি।তার ওরকম পা ঝুলিয়ে বসতে তার কষ্ট হয়।অনেক বাঁকবিতন্ডতার পর আরিয়ান তাকে বাগানে এনেছে।নয়তো এই তিনমাস যাবত তাকে একদম ঘোরাফিরা করতে দেয়না আরিয়ান।দিলেও সবসময় নিজে সাথে থাকে।

আরিয়ান ফোন চালাচ্ছে।সেসময়ই তন্ময় আসে।মায়াকে বাগানে বসে খেলতে দেখে মুখে চওড়া হাসি ফুটে উঠে তার।দ্রুতপায়ে এগিয়ে যেয়ে পকেট হাতরিয়ে একটা বড় চকলেটের প্যাকেট মায়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
—“ভাবি নেন,চকলেট খান।”

মায়া মিষ্টি করে হেসে তন্ময়ের হাত থেকে চকলেটটা নিতেই আরিয়ান গম্ভীর গলায় বলে,
—“তুই ওকে এত চকলেট কেন দেস তন্ময়?সারাদিন খালি খাবারের বদলে চকলেট চকলেট করে।আর তুই ওকে এনেও দেস”।

আরিয়ানের কথায় চোখ রাঙিয়ে তাকায় মায়া।ততক্ষনে ঠোঁটের চারপাশে ভরিয়ে চকলেট খেতে শুরু করেছে সে।খেতে খেতেই সে বলে,
—“আপনার কি সমস্যা?”

মায়ার এমন বাচ্চা বাচ্চা চাহনী দেখে না চাইতেও হেসে দেয় আরিয়ান।বলে,
—“আচ্ছা খাও।”

তন্ময় পকেট থেকে আরেকটা চকলেট বের করে দিয়ে মায়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
—“ওটা শেষ হলে এটা খেয়েন,আপনারা তিনজন মানুষ একটা চকলেটে হয় নাকি!।”

আরিয়ান ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকায়।দুই বাচ্চার মা হবে এই মেয়ে তবুও তরা বাচ্চামো স্বভাব যায়না।বকা দিলে এখনো বাচ্চাদের মতো কেঁদে দেয়।
ডেলিভারির ডেটের আর এক সপ্তাহ বাকি আছে।তিনদিন পর মায়াকে হসপিটালে এডমিট করা হবে।এবার সব ভালোয় ভালোয় হলেই হয়।

~চলবে~

[খাপছাড়াভাবে লিখেছি।সময় নিয়ে না লেখলে গল্প সুন্দর হয়না।তবুও দিতে হবে তাই লিখতেই হলো।পরের পর্ব কালকে রাতে দিব]

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা-মালিহা_খান❤️ #পর্ব-৩৮

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৩৮

আকাশ থমথমে।বৃষ্টি হওয়ার আগাম আভাসের আনাগোনা আকাশজুড়ে।বারকয়েক গুড়ুম গুড়ুম শব্দও কানে এসেছে।ঠান্ডা হাওয়া বইছে।হসপিটালের করিডোর ধরে মায়াকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে আরিয়ান।ঠান্ডা বাতাসে গা শিরশির করছে।বাতাসে মায়ার ওড়নার আচঁল দিয়ে টানা ঘোমটা পরে গেছে।কপালের দিকে কিছু চুল বেরিয়ে পরেছে।ঠোঁটগুলো শুষ্ক।ঘন পাঁপড়িগুলো দিয়ে বারবার পলক ফেলছে সে।আরিয়ান একটু থেমে মায়ার ঘোমটা উঠিয়ে দেয়।তার আজকাল খুব ভয় লাগে।বাইরে আসলে মনে হয় সবার নজর লেগে যাবে মায়ার।যদিও এই বিষয়গুলো একেবারেই অযৌক্তিক,অহেতুক।আরিয়ান জানে,তারপরও অবচেতন মন মানতে চায়না।
ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে একবার আকাশের দিকে তাকায় আরিয়ান।মনে মনে ভাবে,যত দ্রুত সম্ভব বাসায় পৌছাতে হবে।বজ্রপাতের শব্দে বেশ ভয় পায় মেয়েটা।কয়েকদিন আগে বজ্রপাতের শব্দে সারারাত তাকে জাপটে ধরে বসেছিলো।একবিন্দু ঘুমোয়নি।এখন গাড়িতে থাকা অবস্থাতেই যদি বিদ্যুৎ চমকায় তবে মায়াকে সামলানো কঠিন হয়ে যাবে।ভাবনার মাঝেই হঠাৎই থমকে দাড়ায় মায়া।হাপাতে হাঁপাতে বলে,
—“একটু দাঁড়ান।অস্থির লাগছে।”

আরিয়ান থামে।একটু দূরে বসার সিট আছে।মায়ার মাথাটা বুকের সাথে লেপ্টে নিয়ে সে বলে,
—“বসবে?”

—“নাহ্,বসলে আবার উঠতে কষ্ট হবে।”

আরিয়ানে স্বস্নেহে তার পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়।মায়ার কষ্টটা সে নিতে পারেনা।একদমই পারেনা।
হসপিটালে কত মানুষ!যে যে যার যার ধ্যানে আছে।সবাই ব্যস্ত সবার আপনজন নিয়ে।হঠাৎই একটা কোলাহলে ছেঁয়ে যায় হসিপিটাল।একটু দূরেই গেট।তারা যেখানে দাড়িয়ে আছে সেখান থেকে সব দেখা যাচ্ছে।কয়েকজন ওয়ার্ডবয় মিলে দ্রুত স্ট্রেচার নিয়ে এগিয়ে আসছে পিছন থেকে।আরিয়ান মায়াকে নিয়ে একটু সরে দাড়ায়।
গেট দিয়ে একজন ভদ্রলোক ঢুকছেন।তার শার্টে হাল্কা রক্ত।কোলে সন্তানসম্ভবা বউ।মহিলা অচেতন।একটু খেয়াল করতেই আরিয়ান লক্ষ্য করলো মহিলার পেছন সাইডের জামা রক্তে ভিজে গেছে।সাথে সাথে মায়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো আরিয়ান।রক্ত দেখলে আবার প্যানিক হয়ে যাবে মেয়েটা!
ভদ্রলোক তার বউকে স্ট্রেচারে শুইয়ে দিলো।তাকে দ্রুত ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো।নার্সরা বারবার রক্ত ম্যানেজ করার কথা বলছে।ভদ্রলোকের চেহারা উদ্ভ্রানতের মতো অবস্থা।কোনদিকে কি করবে বুঝতে পারছেনা সে।মহিলাকে নিয়ে গেলে মায়াকে ছেড়ে দেয় আরিয়ান।তার বুক থেকে মুখ তুলে মায়া।
ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে সরল মনে আরিয়ানকে বলে,
—“আপনি রক্ত ম্যানেজ করে দিননা উনাকে।”

আরিয়ান একপলক মায়ার দিকে তাকায়।পরক্ষনেই ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বলে,
—“আচ্ছা,দেখছি।,,,,তোমার অস্থিরতা কমেছে?গাড়িতে নিয়ে বসাই।তারপর দেখি কি করা যায়।”

মায়া মুচকি হেসে বলে,
—“চলুন”।

খুব সাবধানে মায়াকে গাড়িতে বসায় আরিয়ান।দায়িত্ব এখন আরো বেশি।আগে ছিলো দুইজন এখন তা বেড়ে হয়েছে তিনজন।একদিকে একসাথে দুটো বাচ্চা হওয়ার অগাধ খুশি আরেকদিকে মায়ার জন্য দুশ্চিন্তা।সব মিলিয়ে এক মিশ্রঅনুভূতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে আরিয়ান।
গাড়ির গেট লাগিয়ে আবারো ভেতরে যায় আরিয়ান।আধাঘন্টার মধ্য লোকটার বউয়ের জন্য রক্ত ম্যানেজ করে দিয়ে তার হাতে বেশ কিছু টাকা দিয়ে ফিরে আসে।এর মধ্যে অবশ্য তিন-চারবার এসে মায়াকে দেখে গিয়েছে।

গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পরছে।আরিয়ান দ্রুত যেয়ে গাড়িতে বসে।মায়া চোখ-বন্ধ করে আছে।ঘুমিয়ে পরেছে হয়তো।মাথাটা জানালার সাথে ঠেকানো।
আরিয়ান ঠোঁট এলিয়ে হাসে।মেয়েটার সৌন্দর্য কি দিনদিন বেড়েই চলেছে?মায়া অতিরিক্ত রূপবতী।অন্তত তার চোখে দেখা সবচেয়ে সুন্দরী,আদুরে,মায়াবী রমনী!!
গাড়ি স্টার্ট দিতেই নড়েচড়ে উঠে মায়া।ঘুমের মাঝে মাথা এ কাত করতেই আরিয়ান তা ঠি ক করে নিজের বাহুতে রাখে।একহাতে ধরে রেখে আরেকহাতে গাড়ি ড্রাইভ করে।
এখন শান্তিতে ঘুমাচ্ছে আবার মাঝরাতে জেগে উঠে বলবে,”আমার ঘুম আসছেনা,চলেন গল্প করি।”
___________
বৃষ্টিতে ভিজে আছে বাগান।জ্যাক আর জেনিকে ভিতরে নিয়ে আসা হয়েছে।আরিয়ান মায়ার পিছু পিছু ওরাও ঢুকেছে রুমে।আরিয়ান বারণ করেনি।মায়ার খুব আদুরে এরা দুজনই।সে অফিসে গেলে ঘুমব্যাতিত প্রায়শই তাদের সাথে খেলা করে মায়া।
মায়া ফিরতেই ইতি এসে পরেছে।আরিয়ান গেছে শাওয়ার নিতে।মায়ার সাথে ইতিই আছে।অনেকক্ষনের
জন্য মায়াকে একা রুমে রেখে সাধারণত কোথাও যায়না আরিয়ান।
ফ্লোরে কার্পেটের উপর হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে জ্যাক আর জেনি।
ইতির মুখে চওড়া হাসি।টুইন্স বেবি হবে খবরটা শুনতেই খুশিতে মনটা লাফাচ্ছে তার।দুটো বাচ্চা একসাথে সারাবাড়িতেই দৌড়াবে।কি সুন্দরই না লাগবে দৃশ্যটা!
তিড়িংবিড়িং করা কন্ঠেই সে বলে,
—“আচ্ছা আপু,ওরা যদি দেখতে একদম একরকম হয় তবে ওদের আলাদা করবেন কি করে?”

মায়া শব্দ করে হাসে।খানিকটা চিন্তা করে বলে,
—“জানিনা ইতি।আগে আসুক তারপর ভেবে দেখবো।তন্ময় ভাইয়া কখন আসবেন?”

—“বললোতো ঘন্টাখানেক লাগবে।ওর তো কথাবার্তার ঠি ক নেই।দেখা যাবে তিনঘন্টা লেট করে বলবে,রাস্তায় জ্যাম ছিলো।তবে আজকে মনে হয়না দেরি হবে।টুইন্সদের কথা শুনেছেতো।দৌড়ে চলে আসবে”

মায়া আবারো খিলখিল করে হাসে।তন্ময়ও কম পাগলামি করেনা।মায়াকে এটা ওটা এনে দেয়।আরিয়ান আইসক্রিম,কোক এসব খেতে মানা করলেও মায়া খেতে চাইলে তন্ময় এনে দেয়।আরিয়ানের সাথে ঝগড়া করে হলেও এনে দেয়।
একবারতো মায়ার জেদে রাত দশটা বাজে মায়াকে নিয়ে আরিয়ানের অফিসে চলে গিয়েছিলো।আরিয়ান ফিরতে দেরি করছিলো বলে মায়া জেদ করছিলো তার অফিসে যাবে তখন তার সাথে না পেরে তখন ই মায়াকে নিয়ে বেরিয়েছিলো তন্ময়।

_______________

আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে মায়া।সাতমাসের ভরা পেট তার।একটু মোটা হয়ে গিয়েছে।মা মা একটা ভাব শরীরে।শরীরটা খুব ভারি ভারি লাগে ইদানীং।পেটে আলতো করে হাত বুলায় সে।হঠাৎই ভাবনা আসে তাকে কি খুব বাজে দেখায়?
একবার আরিয়ানের দিকে তাকায় সে।পাশের সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে আরিয়ান।আজকে অফিসে যেতে পারেনি।সকালবেলা তার শরীরটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।এত মাসেও খাওয়ার রুচিতে কোন সমস্যা হয়নি মায়ার।কোনরকম গন্ধও লাগেনা।সবই খেতে পারে।বরং তুলনায় অনেক বেশি খাবার খায়।
দুজন বাচ্চা পেটে।ক্ষুধা তো বেশি লাগবেই।সকালে নাস্তার পর তিনবার বমি হয়েছিলো তার।যা খাচ্ছিলো তাই বমি করে দিচ্ছিল।ডক্টরকে বলে আরিয়ান ওষুধ খাওয়ানোর পর কিছুটা ভালো লাগছে এখন।

আয়নার সামনে মায়ার এমন ঘুরাফেরা আর হতাশ চোখের চাহনী দেখেই আরিয়ান মায়ার মনের কথাটা বুঝতে পারে।ড.মিতালী বলেছিলো,এসময় মেয়েটা নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে।মায়াও হয়তো সেরকম কিছুই ভাবছে।
আরিয়ান ল্যাপটপ বন্ধ করে উঠে গিয়ে পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে।গালে গাল ঘষে বলে,
—“মায়াবতী,তোমার কি মনে হচ্ছেনা তোমার একটু কম সুন্দর হওয়ার দরকার ছিলো?”

—“ফালতু কথা বলবেন না,,আমি জানি আপনি আমাকে খুশি করার জন্য বলছেন।”

—“এমনটা কেন মনে হলো?”

মায়া এবার আয়নার দিকে তাকিয়ে হতাশ কন্ঠে বললো,
—“আমি খুব মোটা হয়ে গেছি তাইনা?”

আরিয়ান ছোট্ট করে তার গালে ছোট ছোঁয়ায়।বলে,
—“তুমি মোটা হওনি।গোলুমোলু হয়েছো।আমার গোলুমোলু মায়াবতী।আমি কি ভাবছি জানো?”
মায়া উৎসুক কন্ঠে বলে,
—“কি ভাবছেন?”

—“ভাবছি তোমাকে সবসময় প্রেগন্যান্ট বানিয়ে রাখব।যেন তুমি সবসময় এমন গোলুমোলু থাকো।কেমন আইডিয়াটা?”

মায়া ঝামটা মেরে তাকে সরায়।চোখমুখ কুঁচকে বলে,
—“ছিহ্,কিসব বলেন এগুলা!”
_______________
রাতের বেলা ঘুম ভেঙে যায় আরিয়ানের।পাশ থেকে ফোন নিয়ে দেখে রাত বাজে দুইটা পঁয়ত্রিশ।তার একহাত মায়ার পেটের উপর রাখা।সোজা হয়ে ঘুমোচ্ছে মায়া।রোজ মাঝরাতে এসময় মায়ার ঘুম ভাঙে।ক্ষুধা লাগে অথবা ঘুম আসেনা কোন একটা কারণে হলেও ঘুম থেকে উঠে সে।তাই আরিয়ানেরও অভ্যাস হয়ে গেছে এসময় ঘুম থেকে উঠার।কিন্তু আজকে মায়া উঠলোনা কেন?আরিয়ান হাই তুলে উঠে বসে।পাশের ল্যাম্পলাইট জ্বালাতেই ঘর অনেকটা আলোকিত হয়ে যায়।ঝুঁকে গিয়ে মায়ার কপালে চুমু খায় সে।মায়া খুব ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে।ভ্রু কুচকে আসে আরিয়ানের।বারদুয়েক গালে হাল্কা করে থাপ্পড় দেয়।মায়ার কোন হেলদোল নেই।বুকটা প্রচন্ডভাবে কেঁপে উঠে আরিয়ানের।কাঁপা গলায় সে দ্রুত ডাকে,
—“মায়া?মায়া উঠো?মায়াবতী?ক্ষুধা লাগেনি মায়া?শরীর খারাপ লাগছে?”

আর কথা বের হয়না গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়।মায়া অচেতন।ঘুমের মাঝে মেয়েটা অচেতন হলো কিকরে?আরিয়ান দ্রুত নিজের গায়ের কম্বল সরায়।জোরে সরানোতে মায়ার গা থেকেও কম্বল সরে যায়।বিছানার দিকে তাকাতেই আৎকে উঠে আরিয়ান।সাদা চাদরে লালরক্ত লেগে আছে।মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে যায়।মায়ার গা থেকে সম্পূর্ণ কম্বল সরিয়ে তাকে একটু কাত করতেই নজরে আসে মায়ার পিছন সাইড রক্তে ভিজে গেছে খানিকটা….

~চলবে~

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা_মালিহা_খান❤️ #পর্ব-৩৭

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৩৭

বাড়িতে খুশির আমেজ।আরিয়ান নিজে যেয়ে এত এত মিষ্টি নিয়ে এসেছে।খবর শুনেই মামা-মামি এসেছে।তন্ময় তার বাবা-মা কে আনতে গিয়েছে।তবুও মায়ার সাথে একটু আগে ফোনে কথা হয়েছে তার।খুশিতে কথাই বলতে পারছিলোনা সে বারবার বলছিলো”আমি আসছি ম্যাম,তাড়াতাড়িই আসছি”।মায়া বুঝিয়ে শুনিয়ে বলে দিয়েছে যেন ধীরেসুস্থেই বাড়ি ফিরে।তাড়াহুড়োর কিছু নেই।
মায়া বসে আছে নিজের রুমে।বিছানার সাথে হেলান দিয়ে।তার সামনে বসে আছে ইতি।আর একপাশে বসে আরিয়ানের মামী নানান কথা বলে যাচ্ছে।সব কিছুই প্রেগন্যান্সি বিষয়ক।মায়ার মুখে মুচকি হাসি।একবারের জন্যও বিরক্তবোধ আসেনি তার।বরং মনোযোগ দিয়ে মামীর কথাগুলো শুনছে সে।

—“বুঝলে মা,আরিয়ানের বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ছেলেটা একদম নির্জীব হয়ে গিয়েছিলো।ওইটুকু বাচ্চা খেলতোনা,হাসতোনা,প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতোনা।বড় হওয়ার সাথে সাথে আমাদের সাথে আরো দুরত্ব হয়ে যায়।তারপর তো এই বাসায়ই একা থাকতে শুরু করে।কম কষ্ট করেনি ও।টাকা পয়সা থাকলে কি হবে?জীবনে মানসিক শান্তিটা কখনোই ছিলোনা।কিন্তু তুমি আসার পর থেকে ওর আচরণের পরিবর্তন গুলা সত্যিই চোখে পরার মতো।আরিয়ানের মুখের হাসিটা যেন সবসময় আজকের মতোই থাকে।তুমি ওকে দেখে রেখো মা।”

ঠিক সেসময়ই আরিয়ান দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
—“ও আমাকে দেখে রাখবে মামি?তুমি একটা ধমক দাও।ভয়ে এখানেই অজ্ঞান হয়ে যাবে।”

আরিয়ানের কথায় শব্দ করে হেসে উঠে ওর মামি।মায়া ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকায়।সে একটু ভীতু দেখে আরিয়ান এমনে তার মজা নিলো।শুধু মামি সামনে আছে দেখে কিছু বললোনা।তবে নিজের কথাগুলো তুলে রাখলো।যখন একা পাবে তখন আচ্ছামতো বলবে।
আরিয়ান কাছে এসে দাড়ায়।তার হাতে টুকরা করে আপেল কাঁটা প্লেট।
সে যেয়ে মায়ার পাশে বসে।গায়ের কম্বল ঠি ক করে দিয়ে মায়ার মুখের সামনে আপেলের টুকরা ধরে।মায়া মুখ খুলেনা।আরিয়ান তার ঠোঁটে ঠেকিয়ে ধরতেই কোন কথা না বলে সেটা মুখে তুলে নেয় মায়া।
মামি নি:শব্দে হাসলো।আরিয়ান কখনো নিজেরও এতো খেয়াল রাখেনি।
মায়াকে খাওয়াতে খাওয়াতেই মামির সাথে কথা বলছে আরিয়ান।ইতিমধ্য মামাও এসে পরেছে তাদের রুমে।

বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলেছে।বাইরে গাড়ির হর্ণ শোনা যাচ্ছে।তন্ময়রা এসে পরেছে হয়তো।মামা-মামি চলে গিয়েছে একটু আগে।কাল দুপুরে ইতি-তন্ময়ের বিয়ে পরানো হবে।তখন আবার আসবেন তারা।
আরিয়ান মানা করা সত্তেও নিচে নেমেছে মায়া।তন্ময়ের বাবা-মার সাথে দেখা করার জন্য।

আরিয়ানের হাত ধরে নিচে নামে মায়া।তন্ময়ের বাবা-মা সোফায় বসে আছে।তাদের পাশে ইতি-তন্ময়।
সামনে যেয়ে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয় আরিয়ান।তন্ময়ের মা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে,
—“তোমার বউ তো বহুত সুন্দরী বাবা।শুনলাম পোয়াতি হইসে?

মায়া একটু বেসামালভাবে তাকায়।আরিয়ান হেসে বলে,
—“জি,আজকেই জেনেছি আমরা।”


পরের দিন বেশ ভালোভাবেই ইতি-তন্ময়ের বিয়ে হয়ে যায়।
পবিত্র একটা বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায় তারা।বিয়ে শেষে মায়া শুভেচ্ছা জানাতেই তন্ময় লাজুক হেসে বলে,
—“ধন্যবাদ ম্যাম।”

চট করে একটা বিষয় মাথায় খেলে যায় মায়ার।ভ্রু কুচকে সে বলে,
—“আপনি আমাকে এখনও ম্যাম বলেন কেন?”

মায়ার এমন হঠাৎ প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় তন্ময়।শূণ্য মস্তিস্কে বলে,
—“জি ম্যাম?বুঝলাম না।”

আরিয়ান দাড়িয়ে আছে মায়ার পাশেই।অন্যদিকে তাকিয়ে ফোনে কথা বলছে।তাদের কথোপকথনে কান থেকে ফোন নামিয়ে সে বলে,
—“ভাবি ডাকবি ওকে।এটাই বলতে চাচ্ছে।”

আরিয়ানের কথার সাথে তাল মিলিয়ে মায়া বলে,
—“জি জি ভাবি ডাকবেন।”

—“আচ্ছা ম্যাম,ভাবি ডাকবো।”

মায়া তীক্ষ্ণ চাহনী নি:ক্ষেপ করতেই তন্ময় বোকা হেসে বলে,
—“একটু তো সময় লাগবেই ম্যাম।সরি ভাবি।”

এবার মায়া উজ্জল হেসে বলে,
—“আর ইতি তুমিও।আপু বলবা আমাকে।ম্যাম ম্যাম আর চলবেনা।”

ইতি সম্মতিসূচক মাথা নাড়ায়।তার খুব খুশির দিন আজকে।এখানকার মানুষ গুলা কতো ভালো।সবাই যদি এমন হতো,তাহলে পৃথিবীটা কতোই না সুন্দর হতো।অথচ রাশেদ চৌধুরির মতো কিছু নিকৃষ্ট মানুষগুলোর জন্য তার বাবা-মাকে হারিয়ে ফেলেছে সে।নয়তো এমন একটা দিনে তারাও তার সাথে থাকতো।
_______________
কেটে গেছে আরো তিনমাস…
সাড়ে চারমাস চলছে মায়ার।পেট ফুলেছে বেশ অনেকটা।হাঁটতে চলতে একটু অসুবিধা হয়।এখন আর থ্রিপিস পরেনা মায়া। সবসময় ঢিলেঢালা ফ্রক পরে থাকে।আরিয়ান যতটা পারে তাকে সময় দেয়।তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরে।ছুটি ছাড়াও মাঝেমধ্য যায়না।

রাতবিরাতে উঠে পা ভাঁজ করে সোজা হয়ে বসে আছে মায়া।ঘুম আসছেনা তার।নির্ঘুম চোখদুটোয় কোন ক্লান্তি নেই।তার কোলের উপর একহাত রেখে উপুর হয়ে শুয়ে আছে আরিয়ান।ফর্সা সাদা পিঠ তার চোখের সামনে।মায়া হাত দিয়ে ঝাঁকায়।তপ্ত কন্ঠে বলে,
—“উঠেননা।আমার ঘুম আসছেনা।”

আরিয়ান নিভু নিভু চোখে তাকায়।তারপর আবারো চোখ বন্ধ করে জড়ানো কন্ঠে বলে,
—“মায়া,জান আমার।,,,শুয়ে চোখ বন্ধ করো।ঘুম চলে আসবে।”
তারপর বিরবির করে কি যেন বললো মায়া বুঝতে পারলোনা।ছোট্ট একটা শ্বাস ছাড়ে মায়া।এক সপ্তাহযাবত রাতে ঘুম আসেনা তার।রোজই তার সাথে সারারাত জেগে থাকে আরিয়ান।গল্প করে,ঘুম আনানোর চেষ্টা করে।
সারাদিন পরে পরে ঘুমালেও রাতের বেলা নিশাচর পাখির মতো জেগে থাকে সে।ডক্টরের কাছে নিয়ে গিয়েছিলো আরিয়ান।বলেছে এটা খুব স্বাভাবিক।এইসময় অনেকের এমন হয়।
এসব ভাবতে ভাবতেই পাশ থেকে উঠে বসে আরিয়ান।একহাতে চোখ কচলে আরেকহাতে মায়াকে বুকে টেনে নেয়।মায়ার ঠোঁটের কোঁণে মলিন হাসি।দুহাতে আরিয়ানের পিঠ জড়িয়ে ম্ল্রান কন্ঠে সে বলে,
—“আপনাকে খুব বিরক্ত করি তাইনা?”

উওরে আরিয়ান গম্ভীর কন্ঠে বলে,
—“ফালতু প্যাঁচাল পেরোনা,ঘুমানোর চেষ্টা করো।এত রাত জেগে থাকলেতো এমনিই শরীর খারাপ করবে।”

মায়া জবাব দেয়না।খানিকবাদে আরিয়ান আবার জিজ্ঞেস করে,
—“ক্ষুধা পেয়েছে??কিছু খাবা মায়া?”

মায়ার উওর না পেয়ে তার চোখে মুখে হাত বুলায় আরিয়ান।চোখের পাতা বন্ধ।ঘুমিয়ে গেছে মেয়েটা।খুব সাবধানে মায়াকে বালিশে শুইয়ে দিলো সে।আজকাল মেয়েটাকে ধরতেও কেমন একটা আদর আদর পায়।
সাস্থ্য হয়েছে একটু।গোলুমলু লাগে।আবার ভয়ও করে।সবসময় তাকে আলতো হাতের ছোঁয়ায় স্পর্শ করে আরিয়ান।মনে হয়,শক্ত করে ধরলেই ব্যাথা পেয়ে যাবে।

আরিয়ান ঝুঁকে যেয়ে পেটের মাঝখানে চুমু খায়।বিরবির করে বলে,
—“নিজেই একটা বাচ্চা,তারও নাকি বাচ্চা হবে।”
________________
এই সময় নাকি চুলের গ্রোথ হয় বেশি।আর সেক্ষেত্রে মায়ার মনেহয় একটু বেশিরও বেশি।আগে কোমড়ের অনেকটা উপর পর্যন্ত ছিল চুল।আর তিনমাসে এখন সেটা হয়েছে হাঁটুর কাছাকাছি।
সকাল সকাল আউলা ঝাউলা চুল নিয়ে বসে আছে মায়া।একটু আগে তাকে ধরে ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে হাতমুখ ধুইয়ে ফ্রেশ করিয়ে দিয়েছে আরিয়ান।অত:পর তাকে বিছানায় বসিয়ে নিজে গিয়েছে ফ্রেশ হতে।
সকালবেলা শরীরটা একটু খারাপই থাকে মায়ার।মাঝেমধ্যে খালিপেটেও বমি হয়।ঘুম থেকে উঠলে মাথা ঘোরায়।আরো কতশত সমস্যা।

আরিয়ান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মায়াকে এভাবে বসে থাকতে দেখে বলে,
—“কি হয়েছে?”

—“আপনাকে কতদিন বললাম চুলগুলো কেটে আসি।এতবড় চুল সামলানো যায়?”

আরিয়ান হাতে চিরুনি নেয়।মায়ার পিছে গিয়ে চুলের জট ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,
—“তোমাকে সামলাতে বলেছে কে?”

মায়া মুখ উপরে উচিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকায়।তার মাথার উপরিভাগ ঠেকে আছে আরিয়ানের পেটে।
বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে সে বলে,

—“কেটে ছোট করলে কি সমস্যা?”

আরিয়ান আঙ্গুল দিয়ে তার ঠোঁট ঠি ক করে।মাথা সোজা করে দিয়ে বলে,

—“অনেক সমস্যা।কোন চুল কাটাকাটি চলবে না।”

—“আপনারও তো কষ্ট হয়।”

ততক্ষনে চুলের জট ছাড়িয়ে নিয়েছে আরিয়ান।হাল্কা করে বেণি করে দিয়ে চিরুনিটা পাশের টেবিলে রাখে আরিয়ান।মায়া পাশ থেকে ওড়না নিয়ে গায়ে জড়াবে মাত্র তখনই হুট করে তার ঠোঁটে ঠোট মেলায় আরিয়ান।মায়া জমে যায়।আরিয়ান বেশ কিছুক্ষন ঠোঁটের স্বাদ নিয়ে তাকে ছাড়ে।লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখে মায়া।আরিয়ান তার গাল গলিয়ে গলার পাশে হাত রাখে।বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে লজ্জায় লাল হওয়া গালদুটোতে স্লাইড করতে করতে বলে,

—“গোটা তুমিটাকে যখন সামলাচ্ছি,তখন তোমার চুলগুলো সামলানো কঠিন কিছু না আমার জন্য।এই চুলগুলো আমার ভীষণ প্রিয় মায়াবতী।ভীষণ ভীষণ প্রিয়।”
________________
মায়ার পেট স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি বেড়েছে।সাড়ে চারমাসে সাধারণত এতটা বড় দেখায়না পেট।
মায়াকে দেখে মনে হয় সে ছয় সাত মাসের গর্ভবতী।আরিয়ান বেশ চিন্তিত।এই ব্যাপারে ভাবতে ভাবতে অফিসের কাজে মন দিতে পারছিলোনা।তাই বিকেলেই ফিরে এসে মায়াকে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছে সে।সিটে বসলে মায়ার পেট প্রায় সামনে ঠেকে যায়।চুলে সেই সকালের বেণিই করা।শুধু পরণের জামাটা আসার আগে চেন্জ করে দিয়েছে আরিয়ান।
মায়া জানালার সাথে মাথা ঠেকিয়ে রেখেছে।চোখেমুখে ঘুমঘুম ভাব।তবে ঘুমায়নি সে।সজাগ আছে।
আড়চোখে কয়েকমিনিট পরপর আরিয়ানকে দেখছে।আরিয়ানের কপালের সুক্ষ্ণ ভাঁজগুলো স্পষ্টই চোখে পরছে তার।
—“আপনি এতো চিন্তা করছেন কেন?আমি তো সুস্থই আছি।”

—“সেটাতো আমি জানি।তবুও তোমাদের জন্য চিন্তাটা মাথা থেকে সরাতে পারিনা মায়া।”

“তোমাদের জন্য” কথাটা বুঝতে একটু সময় লাগে মায়ার।যখন বুঝে আরিয়ান মায়ার আর বাচ্চার কথা বলছে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে সে।হাসতে হাসতেই বলে,
—“আপনার বাচ্চা মনে হয় আপনার মতোই পালোয়ান টাইপের।এজন্যই তাড়াতাড়ি বড় হচ্ছে।”

—“আমি পালোয়ান টাইপের?”

—“অবশ্যই।আমার পুঁচকে সাইজের তুলনায় আপনাকে পালোয়ানই মনে হয়।”

এত চিন্তার মাঝেও আরিয়ান হাসে।কি সব যে বলে মায়া!
________________
আলট্রাসোনোগ্রাফির রিপোর্ট হাতে মুখে হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে ড.মিতালী।সামনেই মায়াকে একহাতে জড়িয়ে ধরে রেখেছে আরিয়ান।এই চারমাসে তাদের মাঝে একটা দৃঢ় বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে।আরিয়ান সময় অসময়ে তাকে ফোন করে।মায়ার বিভিন্ন সমস্যার কথা জানায়।ড.মিতালী মুগ্ধ না হয়ে পারেনা।কেউ কাওকে এতোটা ভালো কি করে বাসে?

আলট্রাসোনোগ্রাফির রিপোর্টটা টেবিলের উপর রাখে ড.মিতালী।মৃদু হেসে বলে,
—“মর্নিং সিকনেস এর ব্যাপারটা শুনেই আমার সন্দেহ হয়েছিলো।তবু কনফার্ম না হওয়ায় আমি বলিনি।
কিন্তু রিপোর্টে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে,ইউ গাইস আর গোয়িং টু বি পেরেন্টস্ অফ টুইন্স।

~চলবে~
[আরেকপার্ট রাতে দিব।]

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা_মালিহা_খান❤️ #পর্ব-৩৬

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৩৬

নিস্তব্ধ রজনী।পুরো বাড়ি অন্ধকার।শুধু আরিয়ানের রুমে লাইট জ্বলছে।
মায়া বসে আছে বিছানার মাঝখানটায়।তার সামনে দুটো প্লেট রাখা।একটায় পাস্তা,আরেকটায় নুডলস্।
পাস্তার প্লেটটা ইতিমধ্যেই খালি।আর নুডুলস এর টায় একটু আছে।সেটাই খাচ্ছে মায়া।
আরিয়ান বসে আছে তার মুখোমুখি সোফায়।তার একহাতে ফোন।তবে তার দৃষ্টি সেদিকে নয় সে চেয়ে আছে মায়ার দিকে।মেয়েটার এতো ক্ষুধা পেয়েছে!রাতেও বলছিলো ক্ষুধা লেগেছে।হঠাৎ এতো ক্ষুধা লাগছে কেনো?আগে তো দু’চামচ খেয়েই বলতো “পেট ভরে গেছে”,”আর খাবোনা”আরো কতোরকম বাহানা।
নাহ,মেয়েটার খাওয়া দাওয়ার দিকে আরো যত্নশীল হতে হবে তাকে।নয়তো কি শুধু শুধুই মাঝরাতে এতো ক্ষুধা থাকে পেটে!

নুডুলসের শেষ চামচটা মুখে দেয়ার আগে মায়া বললো,
—“শেষ কিন্তু।খাবেন একবার?”এর মধ্যে আরো পাঁচ ছয়বার মায়া জিজ্ঞেস করে ফেলেছে তাকে খাওয়ার কথা।প্রতিবারই আরিয়ান মানা করেছে।এবারো মানা করার পর মায়া তেঁতে উঠলো।নুডুলসটা মুখে তুলে চিবাতে চিবাতে বললো,
—“তা খাবেন কেন?এটা খেলেতো আপনার পেট খারাপ হবে!!আপনি একমাস অসুস্থ থাকবেন!।

আরিয়ান চোখ কুচকায়।মায়ার আজকাল ঘন ঘন মুড সুইং হয়।শুধু শুধুই চিল্লিয়ে উঠে আবার পরক্ষনেই শান্ত হয়ে যায়।

চুপচাপ ফোনটা রেখে উঠে যায় সে।প্লেট দুটো একসাথে করে সেন্টার টেবিলের উপর রেখে দিয়ে মায়াকে পানির গ্লাস দেয়।পানি খাওয়া শেষে হাত দিয়ে ঠোঁট মুছিয়ে দিয়ে বলে,
—“শোও তুমি।আমি আসছি।”

আরিয়ানের পরণে শুধু ধুসর রংয়ের ট্রাওজার।উপরে টি-শার্ট পরেনি সে।গরম পরেছে বেশ।রুমে এসি ছাড়া বিধায় বোঝা যায় না।কিন্তু একটু বাইরে বের হলেই জীবন শেষ।রাতের বেলা হলরুমের এসি বন্ধ ছিলো।একজন সার্ভেন্ট কে মায়ার জন্য খাবার বানাতে বলে একটু বসেছিলো সেখানে।ব্যস!সেখানেই দরদর করে ঘাম ছুটে গেলো।ছোট থেকেই গরম সহ্য হয়না তার!।
ওয়াশরুমে যেয়ে চোখেমুখে পানির ছিঁটা দিতেই দরজায় জোরে জোরে বাড়ি দেয়ার শব্দ হলো।মায়া চাপা স্বরে ডাকছে,”দরজা খুলেন,জলদি।”
আরিয়ান দ্রুত দরজা খুলে দিতেই তাকে সরিয়ে বেসিনের উপর হরহর করে বমি করে দিলো মায়া।
মায়ার হঠাৎ এমন করায় বিচলিত হয়ে পরে আরিয়ান।মুখ উপর করে বমি করছে মায়া।আরিয়ান তার থুবড়ে পরা চুলগুলো একহাতে মুঠ করে ধরে।পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়।মেয়েটার এতো শরীর খারাপ সে বুঝতেই পারলোনা!।ততক্ষনে বমি থেমেছে মায়ার।দুহাতের আজলায় পানি নিয়ে কুলি করে মুখে পানি দিয়ে চোখ বন্ধ করে আরিয়ানের বুকে সাইড করে মাথা ঠেকায় সে।আরিয়ান পাশে ঝোলানো টাওয়ালটা হাতে নেয়।সারামুখ মুছিয়ে দিতে দিতে বলে,
—“বেশি খারাপ লাগছে মায়া?”

মায়া উওর দেয়না।আবারো গা গোলাচ্ছে তার।আরিয়ান টাওয়ালটা জায়গামতো ঝুলিয়ে রাখতেই আবারো বমি করে মায়া।এতক্ষন যা খেয়েছিলো কিছুই হজম হয়নি তার।আরিয়ান এবার নিজেই ট্যাপ ছেড়ে দেয়।চিন্তায় অস্থির লাগছে।মেয়েটা এতো অসুস্থ কখন হলো?ফুড পয়েজন হলো নাকি?নতুবা এতো বমি হচ্ছে কেন?এই ভোরবেলা ডাক্তারইবা পাবে কোথায়?
মায়া তার বুকে মাথা এলিয়ে রেখেছে।আরিয়ান নরম শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করে,
—“রুমে নিয়ে যাবো?নাকি আরো বমি হবে?”

মায়া অস্পষ্ট স্বরে বলে,
—“বমি হবে।কিন্তু আসছেনা।”

আরিয়ান ফাঁকা একটা ঢোক গিলে।বমি আসলেও বমি না করতে পারা যে কতটা কষ্টের তার জ্বর হলে বুঝতে পারে।মায়ার থেকে বেশি অস্থির লাগছে তার।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে সে বলে,
—“আচ্ছা,একটু ওয়েট্ করি।হয়ে যাবে।”

পাঁচমিনিট পার হয়ে গেলে দুবার জোরে জোরে কাশি দেয় মায়া।সাথে সাথে মুখভর্তি বমি হয় তার।তৃতীয়বারের মতো মুখ মুছিয়ে দিয়ে আরিয়ান নিরস কন্ঠে বলে,
—“আরো বমি করবে মায়াবতী?”

মায়া দু’পাশে মাথা নাড়ায়।আর বমি হবেনা তার।পেটে যা ছিলো সব বের করে দিয়েছে।তিনবার বমি করে প্রচন্ড দূর্বল লাগছে।আরিয়ান তাকে কোলে নিয়ে বিছানায় শোয়ায়।পরণের জামা গলার দিকে ভিজে গেছে।লাইট নিভিয়ে মায়ার জামা চেন্জ করে দেয়।ততক্ষনে ঘুমিয়ে পরেছে মায়া।আরিয়ান তার পাশে সুয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ক্রমাগত।সারারাতেও একবারও তার মাথা থেকে হাত সরায়না।

আজকাল নিজের কাজে নিজেই অবাক হয় আরিয়ান।আগে নিজে বমি করলেও ঘেন্না হতো।বমির দিকে তাকাতে পারতনা পর্যন্ত।রাস্তাঘাটে কাউকে বমি করতে দেখলেও গা গোলাতো।অথচ আজ মায়ার প্রতি ঘেন্না তো দূর একফোঁটা বিরক্তিও আসেনি তার।বরং মেয়েটার অসুস্থতায় অজানা একটা ভয় কাজ করছিলো।
__________
সকাল সকাল মায়াকে দ্রুত রেডি হতে বলেছে আরিয়ান।তাকে নিয়ে হসপিটালে যাবে।যদিও ঘুম থেকে উঠার পর দূর্বলতার ছিঁটে ফোঁটাও ছিলোনা তার মধ্য।আরামে নাস্তা খেয়ে বাগানে বসে জ্যাক আর জেনির সাথে খেলা করছিলো।তখনই আরিয়ানের কড়া আদেশ।”দ্রুত তৈরি হও,হসপিটালে যাবো”।মায়া মানা করলেও শুনেনি সে।অগত্যা রেডি হতে হচ্ছে।
ক্রিম কালারের থ্রিপিস পরে চুলগুলো হাল্কা করে ঝুটি করে নিলো মায়া।
আরিয়ান বসে বসে কফি খাচ্ছে আর মনোযোগ দিয়ে মোবাইল স্ক্রল করছে।মায়া ওড়নাটা দু’কাধে দিয়ে হাতে সেফটিপিন নিয়ে আরিয়ানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
—“আটকে দিন।”

আরিয়ান পিন হাতে নিয়ে মায়ার দিকে তাকায়।মায়াকে একদম স্বাভাবিক লাগছে এখন।বোঝাই যাচ্ছেনা কাল রাতে এত অসুস্থ ছিল মেয়েটা।
ওড়না আটকে দিতে দিতে সে স্বাভাবিকভাবেই বলে,
—“তোমার পিরিয়ড মিস হয়েছিলোনা লাস্ট মান্থে?”

মায়া চমকে তাকায়।লজ্জা লাগে তার।কোনরকম উপরনিচে মাথা দোলায় সে।আরিয়ান এককাঁধের পিন আটকে আরেক কাঁধেরটা আটকে দিতে দিতে তীযর্ক কন্ঠে বলে,
—“এই মাসে?”

মায়া দৃষ্টি নিচের দিকে নিয়ে মিহি স্বরে বলে,
—“ডেট আসেনি এখনো।”

আরিয়ান ওড়নাটা ঠিক করে দিয়ে উঠে দাড়ায়।সে যা ধারণা করছে তাই যদি ঠিক হয়?হাহ্!হসপিটালে গেলেই বোঝা যাবে।

আজকে আবার তন্ময়ের বাবা,মা আসবে।তারা গ্রামে থাকেন।তন্ময়রে বিয়ে এখানেই হবে তাই আসবেন।
যদিও একয়বছরে হাজারবার আরিয়ান তাদের এখানে থাকার কথা বলেছে।কিন্তু তারা থাকবেনা।গ্রাম ছাড়া নাকি তাদের ভালো লাগেনা।তন্ময় প্রতিমাসে যেয়ে দেখে আসে।তন্ময় শহরে এসেছিলো পড়াশোনার সুবাদে।তারপর এখানেই আরিয়ানের সাথে দেখা সাক্ষাত।কাজকর্মের ভীড়ে আর গ্রামে ফিরেনি সে।

_______________
মায়ার অসুস্থতার লক্ষন গুলা শুনেই ড.মিতালী সর্বপ্রথম মায়াকে যেই কথাটা বলেন তা হলো,
—“আপনি কি প্রেগন্যান্ট?টেস্ট করিয়েছেন?”

মায়া থতমত খেয়ে যায়।তার পাশে বসেছিলো আরিয়ান।সেই উওর দেয়,
—“নাহ্,টেস্ট করেনি।”

ড.মিতালী মুচকি হেসে তার ড্রয়ার থেকে একটা প্রেগন্যান্সি কিট বের করে দেয়।মায়ার দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে দিকে ইঙ্গিত করে বলে,
—“আপনি টেস্ট করে আসেন।আমার ধারণা ভুল নাহলে খুব সম্ভবত আপনি কনসিভ করেছেন।”

মায়া আমতা আমতা করে আরিয়ানের দিকে তাকায়।তার মেজাজের গতিবিধি লক্ষ্য করার চেষ্টা করে।ড.মিতালী বলার এক মাইক্রোসেকেন্ড আগেও তার মাথায় প্রেগন্যান্সির বিষয়টা আসেনি।সে আসলেই খুব বোকা।এজন্যইতো আরিয়ান সকালে ওসব বলছিলো।তখনো বিষয়টা মাথায় আসেনি তার।


স্পষ্ট দুটো লাল দাগ।মায়া কয়েকবার ঢোক গিলে।জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে।
খুশিতে চোখ টলমল করছে তার।ঠোঁট কাঁপছে।চোখের জলটা মুছে সে নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে বের হলো।

ড.মিতালীর দিকে সেটা এগিয়ে দিতেই উনি উজ্জল হেসে বললেন,
—“কংগ্রেচুলেশন!সি ইজ্ প্রেগন্যান্ট।”

আরিয়ানের মুখে ক্ষীণ হাসির রেখা দেখা যায়।জোড়ে একটা শ্বাস ছেড়ে সে বলে,
—“থ্যাংকস ডক্টর।কিন্তু ওর প্রেগন্যান্সিতে কি কোনো কমপ্লিকেশন আছে?আই মিন,ও তো ছোট এখনো।
রিস্কি হবেনা ব্যাপারটা?”

ড.মিতালী স্মিত হাসে।সাধারণত কাউকে এখবরটা দেয়ার পর প্রথমে সে নিজের সন্তানের কথা জিজ্ঞেস করে।বলে”আমার বেবি ঠি ক আছেতো?”তারপর আসে স্ত্রীর কথায়।তবে আরিয়ানের ভালবাসা দেখে সে সত্যিই মুগ্ধ।
আঙ্গুলের ভাঁজে আঙ্গুল রেখে হাত মুষ্ঠি বদ্ধ করে টেবিলের উপর রেখে সে বলে,
—“দেখুন মি.আরিয়ান।”মা হওয়া” এই বিষয়টাই খুব সেনসিটিভ।খুব সহজ ব্যাপার এটা নয়।আপনি রেগুলার চেকআপ করাবেন।স্ত্রীর যত্ন নিবেন।বাকিটা আল্লাহর হাতে।
আমি বুঝতে পারছি আপনার কনসার্নটা।আপনার স্ত্রীর ব্যাপারে আপনি খুবই সিরিয়াস।নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি,সাধারণত এমনটা দেখা যায়না।এদিক দিয়ে আপনার স্ত্রী খুব লাকি।”
যাইহোক,আপনার স্ত্রী মেইবি দেড়মাসের অন্ত:সত্তা।তবুও আপনারা টেস্ট করিয়ে নেন।শিওর হওয়ার জন্য।রিপোর্ট আমি দেখে দিবোনে।নো প্রবলেম।”
|
|
গাড়ি চলছে।আরিয়ান ধীরগতিতে ড্রাইভ করছে।কোনো তাড়াহুড়ো নেই।
মায়া চুপচাপ বসে আড়চোখে আরিয়ানকে পর্যবেক্ষন করছে।আরিয়ানের মেজাজটা ঠি ক বুঝে উঠতে পারছেনা সে।লোকটা কি রেগে আছে?নাকি খুশি হয়েছে?নাকি অন্যকিছু?কিছুই বুঝতে পারছেনা।
সামনের দিকে তাকিয়ে শান্ত,সাবলীল দৃষ্টিতে ড্রাইভ করছে সে।চোখে মুখে কোনো অনুভূতি নেই।
বেশ খানিকক্ষন পর গাড়ি জ্যামে আটকায়।গাড়ির জানালা আটকানো।ভিতরে এসি ছাড়া।তাই আজ আর গরম লাগছেনা দুজনের।
ধৈর্যহারা হয়ে মায়াই জিজ্ঞেস করে,
—“আপনি কি খুশি হননি?”

আরিয়ান শান্ত দৃষ্টিতে তাকায়।ঠোঁটের কোঁণে হাসি ফুটিয়ে একেবারে মায়ার দিকে ঝুকে যায়।বলিষ্ঠ হাতজোড়া মায়ার দু’গালে রেখে কপালে গভীর থেকে গভীরতম উষ্ম ঠোঁটের স্পর্শ দেয়।কয়েকমিনিট কেটে গেলেও ঠোঁট সরায়না সে।মায়া চোখ বন্ধ করে রেখেছে।কপালে চুমু দিলে এতো শান্তি লাগে কেনো?স্নিগ্ধ পবিত্র স্পর্শ।
মায়া অস্পষ্ট স্বরে কিছু একটা বলতে নিলেই আরিয়ান ঠোঁট সরায়।তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,

—“মায়াবতী,আমার এই গোটা জীবনে হাতে গোনা দু’বার শুধু আমি বাস্তবিকভাবে খুশি হওয়ার সুযোগ পেয়েছি।এক যেদিন আমি আমার মা বাবার খুনিকে শাস্তি দিতে পেরেছি।আর দ্বিতীয়ত যেদিন তোমাকে আমি সম্পূর্ণ রুপে নিজের করে পেয়েছি।তাছাড়া খুশি শব্দটা আমার উপভোগ করার সুযোগ হয়নি।আজ তৃতীয়বারের মতো আমি খুশি।একেবারে বাঁধভাঙা খুশি।আমার থেকে খুশি এই পৃথিবীতে কেউ আছে নাকি সন্দেহ আছে।
তবে অতিরিক্ত খুশিতে আমি অনুভূতিশূন্য হয়ে গেছি।নিজেকে প্রকাশ করতে পারছিনা।
কেমন যেন লাগছে!আমি বাবা হবো ভাবতেও শ্বাস আটকে আসছে।
এটুকু বলতেই থামে আরিয়ান।কাঁধে একফোঁটা পানির অস্তিত্ব অনুভব করে মায়া।থমকে গেছে সে।
বেশি খুশি হলে কি মানুষ কাঁদে?অনুভূতি গুলো কি জলরূপে বেরিয়ে যায়?হয়তো যায়।
আরিয়ান নিজেকে সামলায়।একহাতে মায়ার গলা জড়িয়ে গালে চুমু খেয়ে বলে,

—“আপনার সকল সুখ,ভালবাসা,আবেগ,অনুভূতি শুধু এবং শুধু তোমাকে ঘিরেই হোক মায়াবতী।”

~চলবে~

বি:দ্র-রি-চেক হয়নি।বানান ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।”

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা_মালিহা_খান❤️ #পর্ব-৩৫

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৩৫

গাড়ি একটা জায়গায় থেমে গেছে ব্যাপারটা বুঝতেই চোখ খুলে মায়া।জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে বাসায় এসে পৌঁছেছে তারা।আরিয়ান নেমে গিয়ে তার পাশের দরজা খুলে হাত বাড়িয়ে দেয়।
মায়া এক পা বাড়িয়ে মুচকি হেসে তার হাত ধরার আগেই তাল সামলাতে না পেরে হোঁচট খায়।
আরিয়ান দ্রুতহাতে তার কোমড় পেচিয়ে ধরে বলে,
—“হোয়াট হেপেন্ড?খারাপ লাগছে?”

মায়া দুবার পিটপিট করে পলক ফেলে।নিজেকে সামলে নিয়ে মিহি স্বরে বলে,

—“নাহ্,ঠিক আছি।মিসব্যালেন্সড্ হয়ে গিয়েছিলাম।”

আরিয়ানের কুঁচকানো কপালটা স্বাভাবিক হয়।ভ্রু জোড়া স্হির করে সে মায়াকে সোজা করে দাড় করায়।গাড়ির দরজা আটকে দিয়ে একবার নিজের ফোনে চোখ বুলিয়ে মায়াকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে।ডাইনিং টেবিলে রাতের খাবার সাজাচ্ছে কয়েকজন।
মায়া সেদিকে একবার তাকায়।অত:পর দ্রুত সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে।যত তারাতারি সম্ভব শাওয়ার নিয়ে নিচে নামবে সে।যদিও সন্ধ্যার দিকেও অফিসে খাবার আনিয়ে দিয়েছিলো আরিয়ান।তবুও প্রচন্ড খুদা পেয়েছে।একদম সহ্য হচ্ছে না।
।।
পাশের রুমের ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে আসে আরিয়ান।মায়াও শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে তখন।তার পরণে হাঁটু অবধি সাদা রংয়ের ফ্রক,সাদা পায়জামা,সাদা ওড়না।পরিপূর্ণ সাদা শুভ্রময়ী রুপ।আধভেজা চুলগুলো থেকে ঝড়ঝড় করে পানি পরছে।
চুলে তোয়ালে পেচিয়ে সে আরিয়ানকে দ্রুত বলে,
—“চলুন,খেতে চলুন।”

আরিয়ান শপিং ব্যাগগুলো কাবার্ডে রাখতে রাখতে একবার তাকিয়ে বলে,
—“চুলটা মুছে নাও।তারপর যাই।”

—“চুল মোছা লাগবেনা।আমার ক্ষুদা লেগেছে।আপনি আসেনতো।”বলে দরজার দিকে যেতে উদ্যত হয় সে।

আরিয়ান ভ্রু কুচকে তাকায়।মেয়েটার হঠাৎ এতো ক্ষুধা কেন লাগলো।এভাবে ভেজা চুলে থাকলে নির্ঘাত ঠান্ডা জ্বর হয়ে অসুস্থ হবে।
আরিয়ান ঘুরে গিয়ে তার হাত টেনে বিছানায় বসায়।পেঁচানো তোয়ালেটা খুলে নিয়ে চুলগুলো মুছতে মুছতে বলে,
—“আরে বাবা,ঠান্ডা লেগে যাবেতো।পাঁচটা মিনিট দাও,মুছে দেই।তারপর যাচ্ছি”

মায়া বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।পাঁচমিনিট শেষ হলেই আরিয়ান তোয়ালে পাশে রেখে দেয়।চুলগুলো হাত দিয়ে সারা পিঠে সুন্দরমতো ছড়িয়ে দিয়ে বলে,
—“চলো,বাকিটা এমনিই শুকিয়ে যাবে।’

খাবার টেবিলে বসে আছে ইতি,তন্ময়।আরিয়ান,মায়া নিচে নেমে তাদের সাথে বসলে খেতে শুরু করলো তারা।মায়া মাঝেমধ্য এটা ওটা বলছে।তন্ময়কে কোথায় গিয়েছিলো কি করেছে এসব জিজ্ঞেস করছে।তন্ময়ও বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়িয়ে সুন্দরভাবে সবকিছুর উওর দিচ্ছে।


খাওয়া দাওয়া শেষ।তন্ময়,ইতি যার যার রুমে চলে গিয়েছে।মায়া আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল আচরাচ্ছে।ঘড়িতে বারোটা বেজে যাচ্ছে।ঘুমানোর জন্য আগেই বিছানা গুছিয়ে রেখেছে সে।কানে ফোন নিয়ে একটু আগে ব্যালকনিতে গিয়েছে আরিয়ান।হয়তো জরুরি কোনো ফোন!

হঠাৎই রুমে এসে মায়াকে পাঁজাকোলা করে কোলে তুলে নেয় আরিয়ান।হাতের চিরুনিটা ফ্লোরে পরে যায়।
মায়া তার গলা জড়িয়ে ধরে আৎকে উঠে বলে,
—“কি করছেন?”

আরিয়ান উওরে স্মিত হাসে।মায়াকে কোলে নিয়েই দরজা খুলে বেরিয়ে যায়।সিড়িঘর অনেকটাই অন্ধকার।মায়াকে কোলে করে ছাদের দিকে উঠতে নিলেই মায়া বিস্মিত কন্ঠে বলে,
—“এতরাতে ছাদে কি করবেন?অন্ধকারে পড়ে যাবোতো।”

আরিয়ান উঠতে উঠতেই বলে,
—“আমার কোল থেকে পড়ে যাবে তুমি?আর আমি তোমাকে পড়ে যেতে দিব?”

বলতে বলতেই ছাদে এসে দাড়ায় তারা।ছাদ অন্ধকার।সুনসান নিরবতা।
মায়াকে কোল থেকে নামাতেই চারিদিকে সোনালী রংয়ের লাইট জ্বলে উঠে।মায়ার উপর আছড়ে পরে কতগুলো গোলাপের পাপড়ি।বিস্ময়ে থমকে যায় মায়া।দুহাতে মুখ চেপে জ্বলজ্বল দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে।পুরো ছাদ লালগোলাপ দিয়ে সাজানো।একটা কর্নার বেলুন দিয়ে ঘেরা।
আরিযান তাকে বাহু ধরে কাছে টেনে চুলের ভাঁজে ঠোঁট ছুইয়ে ধীর কন্ঠে বলে,
—“হ্যাপি বার্থডে মায়াবতী”।

মায়া ছলছল দৃষ্টিতে তাকায়।ইতি,তন্ময় বেরিয়ে আসছে।দুজনের মুখেই তৃপ্তির হাসি।তারা দুজনই হাসিমুখে বলে,
—“হ্যাপি বার্থডে ম্যাম।”

মায়া মিষ্টি করে হাসে।তার মনেই ছিলোনা তার জন্মদিনের কথা।মূলত নিজের জন্মদিনটা তার কাছে খুব বেশি অপ্রিয়।কোনোকালেই জন্মদিন পালন করেনি সে।তাই এই দিনটা বিশেষভাবে কখনোই মনে থাকেনা তার।
কারণ এতদিন সে জানতো তার জন্মদিনের দিনই তার মা মারা গিয়েছে।তার বাবাতো তাকে এটাই বলেছিলো যে তাকে জন্ম দিতে গিয়ে তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে।তাই এ দিনটা তার মায়ের মৃত্যুদিনও বটে।সেজন্যই এ দিনটার উপর বিতৃষ্ণা ছিল তার।বরং জন্মদিনটা অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের চেয়ে একটু মন খারাপেই কাটতো তার।
তবে এখন সে জানে তার মা কে তার বাবা মেরেছে।সে তার জন্মদিনের দিন মারা যায়নি।তার মায়ের মৃত্যুর জন্য সে দায়ী না।
এসব ভাবতে ভাবতেই চোখে জল এসে পরে মায়ার।আরিয়ান খুব সন্তর্পনে তার চোখের জলটা মুছিয়ে দিতে বলে,
—“আমি জানি তুমি কখনো এ দিনটা কখনো সেলিব্রেট করোনি।আর তার পিছে ছিলো একটা মিথ্যে কারণ।
যেটা তুমি জানো।তাই,এখন আর মন খারাপ করোনা।বারোটা বেঁজে গেছে।চলো কেক কাটি।”

মায়া নিজেই চোখদুটো ভালো করে মুছে নেয়।হেসে বলে,
—“আপনি এমন কেন?সবসময় মন ভালো করে দেন।”

বেলুন ঘেরা জায়গাটায় কেক কাটার টেবিল রাখা।টেবিলের চারপাশে বেলুন দেয়া।পিছে ফোলা ফোলা বেলুনে ইংলিশ অক্ষরে “Happy Birthday Maya” লেখা।কেকের উপরেও একই লেখা।আরিয়ান তাকে কারো সামনে”মায়াবতী”ডাকেনা।যখন তারা একান্তে থাকে তখনই মায়াবতী ডাকে।তাই হয়তো এখানে “মায়াবতী” লেখেনি।তার কন্ঠ থেকে “মায়াবতী” ডাকটা একমাত্র মায়াই শুনেছে।

মায়া কেক কাটে।সর্বপ্রথম আরিয়ানকে খাইয়ে দেয়।আরিয়ান তখন একহাতে মায়ার এলো চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিচ্ছিলো।মায়ার মুখে উজ্জল হাসি।সে অবস্থাতেই ছবি তুলে তন্ময়।ক্যামেরায় বন্দি হয়ে যায় একটা স্বৃতি।আশেপাশে সবকিছু লাল রং দিয়ে সাজানো।তার মাঝে সাদা জামা পরিহিত মায়াকে যেন একটা শুভ্রপরী লাগছে।
ইতিকে খাইয়ে তন্ময়কে ডাকে মায়া,
—“তন্ময় ভাইয়া,আসেন।ইতি যাওতো তুমি ছবি তুলে দাও।”

তন্ময় ইতস্তত কন্ঠে বলে,
—” না না ম্যাম।আমাকে খাইয়ে দেয়া লাগবেনা।”

আরিয়ান ধমকে উঠে বলে,
—“কেন?তুই কি পর কেও?আয় জলদি।”

তন্ময় ইতির দিকে ক্যামেরা এগিয়ে দেয়।মায়া মুচকি হেসে এক টুকরো কেক তুলে দেয় তার মুখে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার,জ্যাক আর জেনিও বসে আছে মায়ার পায়ের কাছে।আফটার অল,তারাও পরিবারের একটা অংশ।কিন্তু তাদের কেক খাওয়ানো যাবেনা।কেকের ক্রিমে পেট খারাপ করবে।নয়তো তাদেরও কেক দিতো মায়া।আরিয়ান বারণ করায় আর দেয়নি।

______________
রাত প্রায় ১টা বাজে নিচে নেমেছে তারা।মায়ার চোখেমুখে খুশি ঝিলিক দিচ্ছে।হাত ধুয়ে মাত্র বিছানায় বসেছে।তখনই আরিয়ান কাবার্ড থেকে কিছু বের করে নিয়ে আসে।তার সামনে একহাঁটু গেড়ে বসে মায়ার পায়েল পরানো পা টা টেনে নিজের পায়ের উপর রাখতেই মায়া ভ্রু কুচকে বলে,
—“কি হয়েছে?পায়ে তো কিছু হয়নি।”

আরিয়ান হাতের মুঠো থেকে সেই লাল রুবি পাথরের পায়েলটা বের করে বলে,
—“তোমার জন্মদিনের উপহার।আমি জানি এটা তোমার খুব পছন্দ হয়েছিল।”

মায়া মূহূর্তেই চুপ হয়ে যায়।এতক্ষনের উজ্জল চেহারাটা নিমিষেই কালো মেঘে ছেঁয়ে যায়।দৃষ্টি নিচের দিকে নামিয়ে কাতরকন্ঠে সে বলে,
-–-“আমার পায়েলটা খুলবেননা প্লিজ।ওটা বাবা দিয়েছিলো।”

আরিয়ান ঠোঁট এলিয়ে হাসে।মায়ার পায়জামাটা একটু তুলে পায়েলটার দিকে তাকায়।সাথে পাথরের সুন্দর একটা পায়েল।যেদিন এটা মায়াকে পরিয়ে দিয়েছিলো তখন থেকে আজ অবধি মায়াকে একবারের জন্যও এটা খুলতে দেখেনি সে।এমনকি শাওয়ার শেষে মেয়েটা কাপড় দিয়ে রোজ পায়েলটা মুছে।যেন সেটা ভিজে না থাকে।পায়েলটা যে মায়ার জন্য খুব স্পেশাল সেটাও আরিয়ান জানে।রাশেদ চৌধুরি দিয়েছিলো বলেই হয়তো এটাকে এতো ভালোবাসে মায়া।

দীর্ঘ:শ্বাস ছাড়ে আরিয়ান।মায়ার কাতর চেহারার দিকে তাকিয়ে বলে,
—“এটা আমি কখনোই খুলবোনা মায়াবতী।তোমার বাবার স্বৃতি তোমার থেকে নিয়ে নেয়ার অধিকার আমার নেই।আর থাকলেও আমি সেই অধিকার ফলাবো না।আমি জানি তোমার বাবাকে তুমি কতটা ভালোবাসো।শত হলেও তোমার বাবা।তোমার বাবার প্রতি তোমার ভালোবাসা নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই।তাই এই পায়েলটা খোলার কোনো প্রশ্নই আসেনা।আমি শুধু এই ভালোবাসাটার সাথেই তোমাকে আমার ভালবাসাটাও পরিয়ে দিতে চাই।মে আই?”

মায়া ছলছল নয়নে তাকায়।মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিতেই আরিয়ান ওই পায়েলটার সাথেই লাল পায়েলটা পরিয়ে দেয়।সাদা পাথর আর লাল পাথরটা মিলে অদ্ভুত সুন্দর লাগে পা টা।
আরিয়ান তার পা টা নামিয়ে উঠে গিয়ে মায়ার কপালে চুমু খেয়ে বলে,
—“তুমি কি ভেবেছিলে?তোমার বাবার কথা শুনলে আমি রাগ করবো?”

মায়া উপর নিচে মাথা নাড়ায়।আরিয়ান বলে,
—“তোমাকে কখনো শত্রুতার মাঝে টেনে এনেছি আমি?”
মায়া ছোট্ট করে জবাব দেয়,
—“না”।

আরিয়ান হেসে বলে,
—“আমাদের সম্পর্টার মাঝে যাতে কখনো তোমার বাবা আর আমার সম্পর্কটা না আসে।তোমার সাথে আমার ব্যাপারটা একেবারেই ভিন্ন।সবকিছু থেকে আলাদা।বুঝেছো?”

—“হু”।

মায়া আর কিছু বলেনা।আরিয়ান তার বাবার মৃত্যুর কারণ এটা সে কখনোই ভাবেনা।সে মানে তার বাবা তার কৃতকর্মের শাস্তি পেয়েছে এবং সেটা আরিয়ানের দ্বারা।কিন্তু এসবকিছুর উর্ধে তার ভালবাসা।তার জীবনে সে দুজন মানুষকেই প্রচন্ড ভালোবাসে তারা হলো তার বাবা আর আরিয়ান।কোন কারণে কখনোই এদের ঘৃণা করেনি সে।আর না কখনো করবে।

_______________
গভীর রাত…
ঘুম ভেঙে যায় মায়ার।আরিয়ান তাকে বুকে জাপটে নিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।মায়া জড়ানো কন্ঠেই তাকে ডাকে,
—“একটু উঠবেন?”

মায়ার প্রথম ডাকেই ঘুম ভেঙে যায় আরিয়ানের।মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে ভ্রু কুচকে সে বলে,
—“কি হয়েছে?খারাপ সপ্ন দেখেছো?”

—“উহু”।

—“তবে?ঘুম ভেঙেছে কেন?”

মায়া এবার আরিয়ানের হাত সরিয়ে উঠে বসে।ঘাড় ঘুড়িয়ে আরিয়ানের দিকে চেয়ে বলে,
—“আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে।”

~চলবে~

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা_মালিহা_খান❤️ #পর্ব-৩৪

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৩৪

ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে কেটে গেছে কয়েকটি মাস।চৈত্রমাসের মাঝামাঝি সময় তখন।গরম পরেছে বেশ।
প্রখর সূর্যতাপের মধ্যেও গাড়ির জানালা খুলে রেখেছে মায়া।মুখের উপর আছড়ে পরছে তপ্ত রৌদ্ররশ্নিগুলো।তাপের চোটে লাল হয়ে আছে চেহারা।চোখগুলো খানিকটা কুঁচকানো তার।রাস্তার জ্যামে গাড়ি থেমে আছে ঘন্টাখানেক যাবত।গাড়ির স্টেয়ারিংয়ে হাত রেখে সিটে মাথা এলিয়ে রেখেছে আরিয়ান।রৌদ্রের মতো মায়ার মেজাজেও আজকে খুব তেজিভাব।সকাল থেকেই কেমন যেন খিটখিট করছে সে।আরিয়ানের ধারণা মায়ার মুড সুইং হলেও হতে পারে।তাই সেও বেশি কিছু বলেনি।মায়াকে নিয়ে বেরিয়েছে দুপুর একটার দিকে।এখন ঘড়ির কাঁটা গড়িয়ে দুইটা চল্লিশ।এতক্ষনেও শপিংমলে পৌছাতে পারেনি তারা।আগামী শুক্রবার ইতি-তন্ময়ের বিয়ে।সপ্তাহখানেক আগে ইতিকে বিয়ে করার প্রস্তাবটা পেশ করে তন্ময়।মানা করার কোনো কারণ নেই বিধায় সবার সম্মতিতেই বিয়েটা পাকা হয়ে গেছে ওদের।তাদের বিয়েটা হুট করে হলেও সবার বিয়েতো আর হুট করে হয়না।আয়োজন করেই হয়।সেজন্যই কিছু কেনাকাটা করতে বেরিয়েছে।
বেরোনোর খানিকপর থেকেই রোদের মধ্য জানলো খুলে রেখেছে মায়া।ওর নাকি রৌদ্রবিলাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে।
লাইক সিরিয়াসলি?রৌদ্রবিলাসও কারো করতে মনে চায়?আরিয়ান ভেবে পায়না!মায়ার চিবুকের কাছে ঘাম হচ্ছে।আরিয়ানের নিজেরও শার্ট ভিজে গেছে।মায়া স্থির দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।গরম সইতে পেরে আরিয়ান ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলে,
—“মায়া জানলাটা লাগিয়ে দাও।এসি ছাড়ি।গরম লাগছেতো!

মায়া জলন্ত দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করে ক্ষীপ্ত কন্ঠে ঠোঁট চেপে বলে,
—“হ্যাঁ,আপনারতো গরম লাগবেই।আপনিতো অনেক হট!মেয়েরাতো আপনাকে হট হট বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে।আপনার গরম লাগবেনা তো কি আমার গরম লাগবে?!!

এবার বিষয়টা ধরতে পারে আরিয়ান।এতক্ষন যাবত রোদে পুড়ে ছাই হওয়ার পরও মায়ার জানালা খুলে রাখার কারণটা চট করে ধরে ফেলে সে।
॥॥।।।।
কিছু সময় আগের কথা…
অনেকক্ষন যাবত জ্যামে আটকে ছিলো গাড়ি।প্রথম প্রথম জানালা খোলা থাকায় বাতাস ঢুকলেও তখন আর বাতাসের ছিঁটে ফোঁটাও ছিলনা।একটু স্বস্তির শ্বাস নেয়ার জন্য আরিয়ান যেওনা মুখের মাস্ক খুলেছে
ঠি ক তখনই কোথা থেকে যেনো দুজন মেয়ে দৌড়ে তার জানলার সামনে এসে দাড়ায়।তাদে মধ্য একজন অতি খুশিতে উত্তেজিত হয়ে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে,
—“মিস্টার আরিয়ান,আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছেনা আপনাকে সামনাসামনি দেখছি।ক্যান আই টেক এ সেলফি উইথ ইউ?”

আরিয়ান একটু ডিস্টার্ব বোধ করলেও মুখে সেটা প্রকাশ করেনা।ঠোঁটে সৌজন্যমূলক হাসি ফুটিয়ে বলে,
—“ইয়াহ্ শিওর”।

মেয়েটা দ্রুত ফোন বের করে।চট করে একটা সেলফি তুলে বলে,
—“উফ!ইউ আর টু’মাচ হট।আই হ্যাভ আ বিগ ক্রাশ অন ইউ।”

আরিয়ান এবারো কোন অভিব্যক্তি দেখায়না।আড়চোখে একবার মায়ার দিকে তাকিয়ে দেখে সে বিস্মিত নয়নে এদিকে তাকিয়ে রয়েছে।ততক্ষনে মেয়েটা আরো কিছু বকবক করে যাচ্ছিলো সে শুনতে পায়নি।জ্যাম তখন একটু ছেড়েছে।আরিয়ান গাড়ি স্টার্ট দিতে উদ্যত হয়।মুখ ঘুড়িয়ে যখন মেয়েটার দিকে তাকায় তখনও সে বকবক করছে।আরিয়ান হেসে বলে,
—“নাইস টু মিট ইউ মিস!ক্যান আই গো নাও?”

—“জি জি অবশ্যই।অনেক ধন্যবাদ।”

আরিয়ান আর কিছু বলেনা।গ্লাস উঠিয়ে একটু আগাতেই আবারো জ্যামে আটকে যায় গাড়ি।


বর্তমান…

—“আর ইউ জেলাস?”

মায়া চট করে তাকায়।জানলা লাগিয়ে দেয়।নিজেই এসিটা ছেড়ে দিয়ে ঝাঁঝালো ভাবে বলে,
—“অবশ্যই আমি জেলাস।একেবারে জ্বলে পুঁড়ে জেলাস।আমি আপনার বউ,আমি জেলাস হবোনাতো কে জেলাস হবে।জেলাস হওয়ার সম্পুর্ণ অধিকার আছে আমার।আপনার কোন সমস্যা?”

আরিয়ান শব্দ করে হাসে।হাসতে হাসতেই মায়ার গাল টেনে বলে,
—“ইউ আর টু কিউট মায়া।”

মায়া একহাতে গাল ঘষে বলে,
—“ধ্যাত্,ব্যাথা পাইতো।”

______________
শপিংমলের সামনে গাড়ি থামে।আরিয়ান নিজের মাস্ক পরে,চোখে সানগ্লাস পরে মায়ার সিটবেল্ট খুলে দেয়।
নিজে নেমে মায়াকে হাত ধরে নামায়।মায়ার মাথায় ওড়নার আচঁল দিয়ে ঘোমটা টানা।মুখে মাস্ক পরার দরুন তাদের চেনার উপায় নেই।তারা দুজন বের হলে আরিয়ান সাথে কোন বডিগার্ড আনেনা।কখনোই না।

জুয়েলার্সের দোকানে ঢুকেছে তারা।দোকানের বাইরে যথেষ্ট সিকিউরিটি আর দোকানও ফাঁকা।তাই ভেতরে এসেই মাস্ক খুলে ফেলেছে তারা।একপাশে গহনা আবার আরেকপাশে ঘড়ির সেকশনও আছে।
আরিয়ান নিজের জন্য ঘড়ি দেখছে।মায়া দাড়িয়ে আছে পাশেই গহনা পছন্দ করে ইতিমধ্যে রিসিপসনে দিতেও বলে দিয়েছে সে।আরিয়ান একটার পর একটা ঘড়ির ট্রায়াল দিচ্ছে।হাতে পরছে আবার খুলে ফেলছে।নিজের গেট-আপের ব্যাপারে খুব সচেতন আরিয়ান।এই জন্যই তার প্রতি মেয়েরা আকৃষ্ট হয় বেশি।যেমন আজকে ব্ল্যাক প্যান্টের সাথে ওয়াইট শার্ট।হাতে মোটা ডায়েলের ঘড়ি পরা ছিলো।যেটা এখন মায়ার হাতে আছে।
হুট করেই একটা ঘড়ি আটকে যায় হাতে।কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করেও খুলতে পারেনা আরিয়ান।এতক্ষন একজন মেয়ে স্টাফ ঘড়ি বের করে দিচ্ছিলো তাকে।তিনিই মুচকি হেসে বলে,
—“মে আই হেল্প ইউ স্যার?”

আরিয়ান হাতটা এগিয়ে দিয়ে বলে,
—“কাইন্ডলি ডু ইট ফাস্ট।”

মেয়েটার হাতের ছোয়াঁ আরিয়ানের হাতে লাগতেই আপন শক্তিতে জ্বলে উঠে মায়া।নিজের হাতের ঘড়িটা শব্দ করে কাঁচের উপর রাখে।আরিয়ানের হাতটা ঝাপটা মেরে নিজের হাতের মুঠেয় নিয়ে ঘড়ি খোলার চেষ্টা করতে করতে শক্ত কন্ঠে বলে,
—“আপনাদের এখানে ছেলে স্টাফ রাখা উচিত।”

সামনের মেয়েটা একটু থমকায়।আমতাআমতা করে বলে,
—“আসলে ম্যাম,একজন ছেলে স্টাফ আছে।ও আজকে ছুটিতে।তাই আমি ওর হয়ে কাজ করছি।”

মায়া উওর দেয়না।বিরবির করে বলে,
—“আজকেই যেতে হলো ছুটিতে।”

মেয়েটার কানে কথাটা না গেলেও আরিয়ানের কানে ঠি কই যায়।
মেয়েটা আরো কিছু বলতে চেলে সে চোখের ইশারায় মেয়েটাকে চুপ থাকতে বলে।
আরিয়ানের ঘড়ি খুলে দিয়ে মায়া মেয়েটাকে বলে,
—“নিন এটা প্যাক করে দেন।এটাই নিব”।

মেয়েটা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকাতেই আরিয়ান চোখ নামিয়ে সম্মতি দেয়।মেয়েটা মুচকি হেসে ঘড়িটা প্যাক করে।ভদ্রতার হাসি দিয়ে মায়ার সামনে একটা বক্স খুলে বলে,
—“ম্যাম এখানে ইউনিক ডিজাইনের পায়েল আছে।আপনি চাইলে দেখতে পারেন।”

মায়ার মুখটা চুপসে যায়।গলার স্বর নামিয়ে সে বলে,
—“নো থ্যাংকস।”

এরমধ্যই আরিয়ান একটা পায়েল হাতে তুলে নিয়েছে।লাল রুবি পাথরের অদ্ভুত সুন্দর একটা পায়েল।
দেখলেই চোখ আটকে যায় এরকম!আরিয়ান বলে,
—“এটা সুন্দর।তাইনা মায়া?নিবে?”

মায়ার নিজেরও এটা পছন্দ হয়েছে খুব।তবে তার পায়ের পড়ানো পায়েলটা সে খুলতে পারবেনা।তাই অপ্রস্তুত হেসে বলে,
—“খুব সুন্দর।কিন্তু আমার পায়েল আছে।এটা লাগবেনা।”

আরিয়ান তাকে জোড় করেনা।পায়েলটা রেখে দিয়ে মায়ার হাত ধরে বলে,
—“অনেক শপিং বাকি।চলো।”

ঘড়ি আর গহনার ব্যাগগুলো নিতে গেলেই বাঁধে আরেক বিপত্তি।ব্যাগগুলো আরিয়ানের হাতে দেয়ার সময় রিসিপসনের মেয়েটার হাত ছুটে যায়।ব্যাগগুলো যাতে না পরে সেজন্য শক্ত করে আরিয়ান ধরে ফেলে।ভুলবশত মেয়েটার হাতটাও তার মুঠোয় চলে আসে।সেকেন্ডের মাথায় সেটা ছাড়িয়ে নেয় আরিয়ান।মেয়েটা কাঁচুমাচু করে বলে,
—“এক্সট্রিমলি সরি স্যার।”

আরিয়ান”ইটস্ ওকে বলার পরপরই মায়া বলে,
—“আপনারা দুজন ছেলে স্টাফ রাখবেন।বুঝলেন?একজন না আসলেও যাতে অন্যজন তার কাজ করতে পারে।তাহলেই আর অহেতুক এই ঝামেলা গুলা হয়না।”

আরো কিছু বলার আগেই আরিয়ান তার হাত টেনে বেরিয়ে আসে।সব শপিং শেষে গাড়িতে উঠে তারা।
আরিয়ান গাড়ি স্টার্ট দেয়ার আগমূহুর্তে বলে,
—“মায়াবতী,আ’ম অনলি ইওর’।তুমি ছাড়া কেউই আমাকে আকৃষ্ট করতে পারেনা আর না কখনো পারবে।মনে রেখো।”

____________
আরিয়ান তার অফিসের দিকে গাড়ি ঘুরায়।মায়া জিজ্ঞাসু কন্ঠে বলে,
—“এখন বাসায় যাবেননা?”

—“না,আমার অফিসে একটু কাজ আছে।শেষ করেই ফিরবো।”

—“আর আমি?”

—“তুমিও যাবে আমার সাথে।এনি প্রবলেম?”

—“নাহ্ চলুন।একটু থেমে আবার বলে সে,তন্ময় ভাইয়া,ইতি ওরা ফিরেছে বাসায়?ওদের না কোথায় যাওয়ার কথা ছিলো?”

আরিয়ান বিরবির করে বলে,”ওরাতো কোথাও যায়ই নি।ফিরবে আবার কি?”
তবে মুখে বলে,
—“ফোন করেনি।হয়তো ফিরেনি এখনো।”

বেশ কিছুক্ষণ পরে অফিসে পৌছায় তারা।আরিয়ান এটা ওটা বলে অনেকক্ষন আটকে রাখে মায়াকে।মায়ার একটু খটকা লাগে।আরিয়ান তো কখনো সে সাথে থাকলে এতো বিজি থাকেনা।বরং জলদি কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে।নয়তো মায়াকে বাসায় দিয়েই অফিসে আসে।আজকে সেই সকালে বের হলো আর এখন রাত হয়ে যাচ্ছে তবুও ফিরছেনা।ঘড়ির কাঁটা যখন দশটা ছুঁইছুঁই তখন তাকে নিয়ে বের হয় আরিয়ান।মায়া তখন ক্লান্ত।ক্লান্ত ভঙ্গিতে সিটে মাথা এলিয়ে দেয় সে।আরিয়ান আরো একটু হেলাফেলা করে।উল্টা রাস্তা দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে অবশেষে এগারোটা বাজে বাড়ির সামনে গাড়ি থামায়।

~চলবে~

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা_মালিহা_খান❤️ #পর্ব-৩৩

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৩৩

মায়া ঠোঁট এলিয়ে ভাবলেশহীনভাবে হাসে।আমতা আমতা করে বলে,
—“আসলে..একটুখানি কেটেছে।বেশিনা”

আরিয়ান তার দিকে রাগী দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করে হাত থেকে বাটিটা নিয়ে পাশে রাখে।আলতো স্পর্শে মায়ার হাত ধরতেই “আহ্”বলে আর্তনাদ করে উঠে মায়া।আরিয়ান শীতল কন্ঠে বলে,
—“একটুখানি কেটেছে তাইনা?”
মায়া মুখ লটকালো।যার রাগ ভাঙানোর জন্য এত কষ্ট করে রান্না করলো সে ই নাকি আবারো তার উপর রাগ করছে।

মায়ার কোমড় পেচিয়ে ধরে একপায়ের উরুর উপর বসিয়ে রেখেছে আরিয়ান।তাই স্বাভাবিকভাবেই আরিয়ানের থেকে একটু উঁচু হয়ে আছে সে।
মায়া একটু কাত করে আরিয়ানের কাঁধের উপর মাথা রাখে।কন্ঠে সিক্ততা নিয়ে বলে,

—“আপনি আমার উপর রাগ করছেন কেন?আপনি রাগ করলে আমার মন খারাপ লাগে”।

মায়ার সিক্ত কন্ঠে কিছুটা শিথিল হয় আরিয়ান।তবুও স্বরে গাম্ভীর্য টেনে বলে,
—“রাগ করার মতো কাজ করো কেনো?”
—“ভুলবশত কেটে গেছে।আমিতো ইচ্ছা করে করিনি।তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে হঠাৎই কেটে গেলো”।
—“তাড়াহুড়ো করেছো কেন?”
—“কারণ আপনি বলে গিয়েছিলেন তাড়াতাড়ি ফিরবেন।…আমিতো আপনার রাগ ভাঙানোর জন্য রাঁধতে গিয়েছিলাম কিন্তু দেখেন উল্টা আপনি আরো রাগ করে বসলেন।”

আরিয়ান দীর্ঘ:শ্বাস ছাড়ে।এই মেয়ের উপর রাগ ধরে থাকা তার সাধ্যের বাইরে।মায়ার অতিসাধারণ কথাগুলোই তার কাছে শুকনো আবেগে এক পশলা বৃষ্টির মতো প্রিয়।মেয়েটার মধ্য কিছুতো একটা আছে।
সেই প্রথম দিন থেকে যে সে মায়ামীয় ঘোরে ফেঁসেছে আজ পর্যন্ত তার ঘোর কাটলোনা।বরং বেরে চলেছে দিনকে দিন।মায়া নিজের অতিসরল মন দিয়ে তাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ফেলছে তার মায়াময়ী এক অজানা ঘোরে।

আরিয়ান মায়াকে একটু নিচু করে বসায়।মায়ার মাথাটা বুকে নিয়ে কাঁটা হাতটা নিজ হাতের মুঠোয় রেখে ধীরস্থির কন্ঠে বলে,
—“মায়াবতী,তুমি কি জানো তোমার গায়ে একটু আঘাতের ছোয়াঁই আমার গোটা পৃথিবীটাকে নিকষ কালো বিষাদে ডুবিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।তবে কেন আমাকে এই বিষাদময় যন্ত্রনাটা দাও?”

মায়া একেবারে চুপ করে যায়।কথার পিঠে এতক্ষন জবাব দিলেও এখন কিছু বলেনা।
আরিয়ানের বুকের হৃদস্পন্দনের আওয়াজটা তার খুব ভালোলাগে।রোজ রাতে যখন আরিয়ান তাকে বুকে নিয়ে ঘুমায় তখন এই আওয়াজটাই তার উপর ম্যাজিকের মতো কাজ করে।সেজন্যই খুব অল্প সময়ের মধ্য ঘুমিয়ে পরে সে।

মায়ার কোন উওর না পেয়ে আরিয়ান চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।মায়ার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
—“মায়াবতী?ঘুমিয়ে পরলে নাকি?”

মায়া বুকের মধ্যই মৃদুভাবে মাথা নাড়ায়।আচ্ছন্ন কন্ঠে বলে,
—“উহু!এখনো জেগে আছি।তবে ঘুম পাচ্ছে।”

আরিয়ান নি:শব্দে হাসে।বিছানায় একটু পিছিয়ে আয়েশ করে মায়াকে একহাত দিয়ে ধরে বসে বলে,
—“আচ্ছা ঘুমাও।আমি নাহয় তোমার ঘুম ভাঙলেই ফ্রেশ হবোনে”।

চকিতে মাথা উঠায় মায়া।আরিয়ানের পরণের জামাকাপড়ে একবার চোখ বুলিয়ে বলে,
—“আপনি ফ্রেশ হননি?…ওহ্,হ্যাঁ তাইতো ফ্রেশ হবেন কিকরে?যান জামাকাপড় বদলে আসেন।”

বলে উঠে যেতে নিলেই তাকে চেপে ধরে আরিয়ান।বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,
—“ওটার থেকে তোমার ঘুম বেশি জরুরি।ঘুমাও।”

—“পাগলামো করেননাতো।ছাড়ুন!!আরিয়ান ছাড়েনা দেখে মায়া মাথা খাটিয়ে বলে,”দেখুন আপনার গা থেকে ঘামের গন্ধ আসছে।জলদি কাপড় বদলে আসেন”।

আরিয়ান বাঁকা হেসে মায়াকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়ায়।জামাকাপড় হাতে নিয়ে মায়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
—“আপনার যে আমার গায়ের পারফিউমের গন্ধটা অনেক বেশি প্রিয় সেটা আমি জানি ম্যাডাম।আমি অফিসে গেলে আপনি যে সেটা সারা রুমে স্প্রে করে রাখেন সেটাও আমার জানা আছে।তাই অযথা ঘামের গন্ধের দোহাই দিয়েন না।”

মায়ার চোখে মুখে নিমিষেই লজ্জা ছেঁয়ে যায়।আরিয়ান জানলো কিকরে?লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে কিছু বলার আগেই আরিয়ান বলে,

—“উহু!ঘরে সিসি ক্যামেরা লাগানো নেই।পারফিউমের বোতল প্রতি সপ্তাহেই খালি হয়ে যায়।একই ব্র্যান্ডের পারফিউম কিনতে কিনতে আমি ক্লান্ত মায়াবতী।”

বলেই ওয়াশরুমে ঢুকে যায় আরিয়ান।মায়া লজ্জামাখা নয়নে চেয়ে থাকে।ইশ্!আরিয়ান না জানি কি ভাবছে।
উফ!!এত লজ্জা সে কই রাখবে?পারফিউমের মতো ছিটিয়ে দিবে নাকি সারাঘরে?
______________
______________

হালুয়ার বাটি সম্পূর্ণ খেয়ে শেষ করেছে আরিয়ান।লজ্জায় বুঁদ হয়ে তার পাশেই বসে আছে মায়া।খালি বাটিটা মায়ার হাতে ধরিয়ে দিতেই মায়া সেটা পাশের টেবিলে রেখে দিলো।আরিয়ান মায়ার নত মুখের দিকে চেয়ে ঠাট্টার ছলে বললো,
—“আর লজ্জা পেয়োনা।প্রতিসপ্তাহে পারফিউম কিনার মতো যথেষ্ট টাকা আমার আছে।কোন সমস্যা নেই!তোমার যত ইচ্ছা ততো স্প্রে করো।”

অতিরিক্ত লজ্জায় মায়া এবার মুখ খুললো।লজ্জামাখা অদ্ভুত এক অভিযোগের স্বরে বললো,
—“হ্যাঁ তো?আপনার গায়ের গন্ধ আমার ভালো লাগে মানে লাগে।আমি সেটা ঘরে দিয়ে রাখি মানে রাখি।আপনি সেটা জানেন তো কি হয়েছে?তাই বলে এভাবে আমাকে লজ্জা দিবেন?,এখন থেকে আরো বেশি করে দিয়ে রাখবো,একদিনেই পুরো বোতল শেষ করে ফেলবো।”

—“আচ্ছা করো শেষ”।

—“করো শেষ মানে?আমি অযথা পারফিউম শেষ করবো আর আপনি বলছেন করো শেষ?”

আরিয়ান তখন পাশ থেকে ল্যাপটপ হাতে নিয়েছে।মায়ার কথার উওরে সে ছোট্ট করে জবাব দেয়,
—“হুম”।

—“এই কি হলো আপনার?”

আরিয়ান ভ্রু কুচকিয়ে মায়ার মাথার তালুতে হাত রাখে।তালু যথেষ্ট গরম হয়ে আছে।আরিয়ান ল্যাপটপ নামিয়ে মায়াকে কাছে টেনে বুকে নিয়ে বলে,
—“শান্ত হও।আমার কিছু হয়নি।বরং তোমারই মাথা গরম হয়ে গেছে।তখন ঘুমাতে পারোনি বলে বোধহয়।
মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি,জলদি ঘুমিয়ে পরো।”

কিছু সময় অতিবাহিত হতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় মায়া।আরিয়ান আবারো ল্যাপটপ হাতে নেয়।মায়ার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে,
—“তোমার লজ্জামাখা চেহারার মুগ্ধতায় আমি বারবার আটকে যাই মায়াবতী।সেজন্যইতো সময়,অসময়ে তোমাকে লজ্জায় ফেলি।কিরকম স্বার্থপর আমি দেখেছো?নিজে মুগ্ধ হওয়ার জন্য তোমাকে লজ্জা দেই।”

এমনিভাবেই স্রোতের ন্যায় গড়িয়ে যেতে থাকে সময়।আরিয়ান মায়ার খুনসুটিতে কেটে যেতে থাকে দিনের পর দিন।সময় গড়ালেও তারা দুজন আটকে থাকে তাদের মধ্যেকার ভালবাসায়।আরিয়ান আবিষ্ট থাকে তার মায়াময় দুনিয়ায়।আর মায়া আরিয়ানের ভালবাসার দুনিয়ায় তার মায়াবতী হয়ে।

~চলবে~

[আজকে পর্ব দেয়ার ইচ্ছা ছিলনা।প্রচন্ড মন খারাপ আমার।তবুও আপনাদের কথা ভেবে ছোট করে দিলাম।
কমেন্টে জানিয়েন কেমন হয়েছে💛]

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা_মালিহা_খান❤️ #পর্ব-৩২

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৩২

শাওয়ার থেকে বেরিয়ে এসেছে আরিয়ান।মায়া উপুর হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।মাথাটা কাত করে বালিশে রাখা।আরিয়ান কাছে যেয়ে তার মুখের উপরের চুলগুলো সরিয়ে দেয়।মায়া অলস ভঙ্গিতে একটু তাকিয়ে আবারো চোখ বন্ধ করে।
মায়ার এমন দূর্বলতা দেখে আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে সন্ধিহান কন্ঠে বলে,
—“তুমি রাতে ডিনার করেছিলে?”

—“নাহ্”।

আরিয়ান সঙ্গে সঙ্গে তেড়ে উঠে।এজন্যইতো এই মেয়ের এত দূর্বল লাগছে।রাতে খায়নি।তাকে একবার বলেওনি পর্যন্ত।সে মৃদু ধমকের স্বরে বলে,
—“এই উঠোতো তুমি।রাতে খাওনি আর এখন বলছো?জলদি উঠো।”

বলে মায়াকে দুহাতে জড়িয়ে উঠিয়ে বসালো আরিয়ান।খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিতেই মায়া পিটপিট করে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,
—“বকছেন কেন?”

আরিয়ান উওর দেয়না।চোখমুখ শক্ত করে মায়ার কপালে গালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর আসছে কিনা।
তাপমাত্রা স্বাভাবিক দেখে উঠে দাড়ায় আরিয়ান।হনহন করে বাইরে বেরিয়ে যায়।মায়া চোখ মুখ কুঁচকে
চেয়ে থাকে।কালরাতে তো আরিয়ানের জন্য অপেক্ষা করতে করতেই সে ঘুমিয়ে পরেছিলো।তারপর আর খাওয়ার কথা মনে ছিলনা।

হাতে দুই-প্লেট খাবার নিয়ে ভেতরে ঢুকে আরিয়ান।একহাতে ব্রেকফাস্টে আরেক প্লেট ভর্তি ফল।তার পিছে পিছে ঢুকে ইতি।তার হাতে ফলের জুস।পাশের টেবিলে সবকিছু রেখে ইতি বলে,
—“আমি খাইয়ে দিব স্যার?”

আরিয়ান মায়ার পাশে বসে।প্লেটটা নিজের হাতে নিয়ে নরম কন্ঠে বলে,
—“না তুমি যাও ইতি।আমি খাইয়ে দিচ্ছি।সমস্যা নেই”।

ইতি মায়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।অত:পর মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে যায়।আরিয়ান আবারো চোখ-মুখ শক্ত করে ফেলে।মায়ার মুখের সামনে খাবার ধরতেই মায়া সেটা মুখে তুলে বলে,
—“আপনি রাগ করছেন কেন?আমিতো আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।তারপর কখন যেন ঘুমিয়ে গেছি।”

আরিয়ান মায়ার দিকে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।মুখে কিছু বলেনা।একটু পরপর শুধু খাবার তুলে দেয় মুখে।মায়া বিনাবাক্য খেয়ে নেয় সব।আরিয়ান প্লেট রেখে জুসের গ্লাস হাতে নেয়।এক চুমুক খেতেই মুখ বিকৃতি করে ফেলে মায়া।
—“এটা কি?চিনি দেয়নি নাকি?এতো তেঁতো কেনো?”

আরিয়ান কোন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেনা।আবারো মুখে সামনে গ্লাস ধরতেই মায়া আপত্তি করে বলে,
—“আমি খাবোনা।…আপনি খেয়ে দেখেন,এটা সত্যিই খুব টক।”

আরিয়ান চুপচাপ এক চুমুক মুখে নেয়।স্বাভাবিকভাবেই গিলে ফেলে শান্ত কন্ঠে বলে,
—“টক হলেও এটায় পুষ্টি বেশি।খেতে হবেই।মুখ খুলো”।

মায়া ঠোঁট উল্টিয়ে একবার তাকিয়ে হা করে।এক নি:শ্বাসে তাকে পুরোটা খাইয়ে দেয় আরিয়ান।
খাওয়া শেষে সার্ভেন্ট এসে সব কিছু নিয়ে যায়।
অফিস থেকে ফোন আসায় দ্রুত তৈরি হয় আরিয়ান।এমনিতেই অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে।
পকেটে ফোন ঢুকিয়ে ড্রয়ার থেকে ওয়ালেট বের করছে তখনই মায়া বিষন্ন কন্ঠে বলে,
—“আপনি আমার উপর রাগ করেছেন?”

আরিয়ান আয়না দিয়ে মায়ার দিকে তাকায়।ওয়ালেটটা পকেটে ঢুকিয়ে বিছানার কাছে এসে দাড়িয়ে ঝুঁকে যেয়ে মায়ার কপালে উষ্ণতার ছোয়াঁ দিয়ে কাঠকাঠ কন্ঠে বলে,
—“অফিস থেকে এসেও যাতে তোমাকে এখানেই দেখি।ঠিক এখানেই।সারা বাড়িতে টইটই করে ঘুরবা না।শরীর এমনেই অসুস্থ তাই রুমেই থাকবা।আমি ইতিকে বলে যাচ্ছি।ও তোমার সাথে থাকবে এখানে।আজ তারাতারিই ফিরবো আমি”

মায়া মনে মনে হাসে।লোকটা তাকে বকাও দিচ্ছে আবার চিল্লাচ্ছেওনা।কি অদ্ভুত শাসনপদ্ধতি!!
হাহ্!এমন শাসন শুনলেও শান্তি পাওয়া যায়।
___________
বিকেলবেলা…
রান্নাঘরে কিচেন এপ্রোন পরে দাড়িয়ে আছে মায়া।তার পাশে চিন্তিত মুখে দাড়িয়ে আছে ইতি।শত মানা সত্তেও তার কথা শুনেনি মায়া।সে নাকি এখন গাজরের হালুয়া বানাবে।এমন না যে সে রান্না পারেনা।সে রান্না পারে।কিন্তু রাশেদ চৌধুরি তাকে রান্নাঘরে যেতে দিতোনা।রাশেদ চৌধুরি যখন বাসায় থাকতোনা তখন মাঝে মাঝে রান্না করতো সে।
ইতির চিন্তা সেখানে নয়।ইতি ভাবছে আরিয়ান যদি শুনে মায়া রান্না ঘরে এসেছিলো তবে কি হবে?
মায়া চুপ করে দাড়িয়ে চুলায় দুধ জাল দিয়ে নাড়ছে।অন্য সার্ভেন্টরা সবাই বাইরে।তা অবশ্য মায়ার নির্দেশেই ।মায়া ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,
—“গাজর বের করো ইতি।ধুয়ে দাও।তারপর আমি গ্রেট করে নিচ্ছি।”

—“ম্যাম,স্যার কিন্তু রাগ করবে।আপনাকে তো বকবেনা।বকবে আমাকে।”

—“করবেনা রাগ।তুমি বের করতো জলদি।”

অগত্যা কোন উপায় পায়না ইতি।মায়ার সাথে চুপচাপ কাজ করতে থাকে।কিন্তু বিপত্তি বাঁধে গাজর গ্রেট করতে যেয়ে।আরিয়ান জলদি ফিরবে ভেবে তাড়াহুড়ো করতে যেয়ে হাত কেটে ফেলে মায়া।বেরিয়ে আসে রক্ত।
“আহ্”বলে আর্তনাদ করতেই তার হাত চেপে ধরে ইতি।কলের নিচে দেয়ায় রক্ত অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়।
চুলার আঁচ কমিয়ে দিয়ে মায়ার হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয় ইতি।মায়ার ব্লাডফোবিয়া এতো বেশি যে অতটুকু রক্ত দেখেই ঘাম ছুটে গেছে।

—“আপনার আর কিছু করা লাগবেনা।আপনি ঘরে যান।আমি বানিয়ে আনছি।”

—“এই একদম না।আমিই করছি।বেশিক্ষন লাগবেনা।”

মায়ার জেদের কাছে হেরে যায় ইতি।হালুয়া বানিয়ে বাটিতে ঢালতেই আরিয়ানের জুতার শব্দ শোনা যায়।আজকে একটু বেশিই তারাতারি এসেছে আরিয়ান।মায়া বাটিতে চামচ নিতেই আরিয়ানের গলার শব্দ শোনা যায়।মায়াকে ডাকছে সে।

বাটি হাতে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে যায় মায়া।দ্রুত উপরে উঠতেই আরিয়ানের মুখোমুখি হয় সে।আরিয়ান হন্তদন্ত কন্ঠে বলে,
—“কই ছিলা?তোমাকে না রুমে থাকতে বলেছিলাম।”

মায়া আরিয়ানের হাত ধরে রুমে আসে।আরিয়ানকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে এক চামচ হালুয়া মুখে সামনে ধরে উৎসুক কন্ঠে বলে,
—“এটা খেয়ে বলেন কেমন হয়েছে।”

আরিয়ান মায়ার হাতের বাটিটা খেয়াল করেছে আগেই।ভেবেছিলো,মায়া হয়তো খাচ্ছে ওটা।তাই কিছু বলেনি।

—“কি এটা?তুমি খাচ্ছিলে খাও।আমি খাবোনা।,,,,তার আগে বলো তুমি রুমের বাইরে কেনো গিয়েছিলে?”

মায়া আরিয়ানের প্রশ্ন এড়িয়ে যায়।বলে,
—“এটা গাজরের হালুয়া।আমি বানিয়েছি আপনার জন্য।”

“আপনার জন্য”কথাটা শুনতেই সমস্ত রাগ নেমে যায় আরিয়ানের।প্রচন্ড ভালোলাগে।এই ছোট্ট দু’টা শব্দ যে কাওকে এতটা প্রশান্তি দিতে পারে মায়া না থাকলে বুঝতোনা আরিয়ান।মায়া তার মুখের সামনে এখনো খাবার ধরে রেখেছে।আরিয়ান খাবারটা মুখে নেয়।তার পরপরই মায়াকে টেনে কোলের উপর বসায়।
মায়া মুচকি হেসে বলে,
—“ভালো হয়েছে?”

আরিয়ান মৃদু হেসে তার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,
—“তুমি এমন কেন মায়াবতী?তোমার উপর রাগ করে থাকা যায়না কেন?কারণটা বলতো?কি আছে তোমার মধ্য?”

মায়া মুদিত নয়নে চেয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে।আরিয়ানের হঠাৎ মায়ার হাতের দিকে নজর পরতেই চোখ বড় বড় করে সে অস্থিরভাবে বলে,

—“মায়া,তোমার হাত কেটেছে?”

~চলবে~

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা_মালিহা_খান❤️ #পর্ব-৩১[মাঝখানে নতুন করে একটু অংশ যুক্ত করা হয়েছে।যাদের আগের পর্ব নিয়ে সমস্যা ছিলো আশাকরি সেটা আর থাকবেনা]

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৩১[মাঝখানে নতুন করে একটু অংশ যুক্ত করা হয়েছে।যাদের আগের পর্ব নিয়ে সমস্যা ছিলো আশাকরি সেটা আর থাকবেনা]

মায়ার এহেন আচরণে চমকে উঠে আরিয়ান।মনটা “ধক” করে উঠে।মায়া এমন করলে সে কিভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করবে?
মায়া তার উপর সম্পুর্ণ ভর দিয়ে হেলে পরেছে।আরিয়ান মনে মনে হাসে।মেয়েটা ঠোঁটে চুমু খাচ্ছে নাকি শুধু ঠোঁট ঠেকিয়ে রেখেছে বুঝতে পারছেনা।এই প্রথম নিজে থেকে তার এতটা কাছে এসেছে মায়া,সে ফিরিয়ে দিবে কিকরে?
আরিয়ান মায়ার একহাত তার ঘাড় থেকে সরিয়ে মাথার পিছের দিকের চুলে রাখে।সাথে সাথে শক্ত করে তার চুলগুলো আকড়ে ধরে মায়া।মায়ার কোমড় টেনে নিজের সাথে ঘনিষ্টভাবে লেপ্টে নেয় আরিয়ান।
দোলনায় মাথা ঠেকে যায়।সে অবস্থাতেই গভীর চুম্বনে লিপ্ত হয় সে।
মিনিট পাঁচেক পরই হাপিয়ে উঠে মায়া।সে সরে যেতে গেলেও আরিয়ান তাকে ছাড়েনা।জাপটে ধরে রাখে।আরো কিছুক্ষন অতিবাহিত হতেই প্রচন্ড অস্থির হয়ে উঠে মায়া।মুখ দিয়ে”উম্”জাতীয় শব্দ করতেই তার ঠোঁট ছেড়ে দেয় আরিয়ান।আরিয়ানের কাঁধে কপাল ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয় মায়া।আরিয়ান তার চুলের ভাঁজে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
—“পানি খাবে?বেশি খারাপ লাগছে?”

মায়া উওর দেয়না।ক্লান্ত ভঙ্গিতে আরিয়ানের কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে রাখে।আরিয়ান দুষ্টু কন্ঠে বলে,
—“এটুকুতেই ক্লান্ত হয়ে গেলে।আবার বলছো তোমার আরো আদর চাই।”কিছুটা থামে আরিয়ান।
তারপর সিরিয়াস হয়ে আবার বলতে শুরু করে,”মায়া,তোমার বয়স কম,এট এনি চান্স তুমি যদি কনসিভ করে ফেলো তুমি জানো সেটা কতটা রিস্কি হবে তোমার জন্য?তোমার বয়স বিশ গড়িয়ে একুশে পরবে মাত্র।আই নো,এই বয়সেও মেয়েরা কনসিভ করে।
বাট তুমি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখো,আমি হানড্রেড পার্সেন্ট শিওর যে তোমার ওজন আন্ডারওয়েট।
আমি ডক্টর না তবুও এতটুকু জানি যে,তোমার প্রেগন্যান্সিতে অনেক কমপ্লিকেশন থাকবে।এখন কতশত মেয়েরা মারা যাচ্ছে অল্পবয়সে বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে।সো আই কান্ট টেক দ্যাট রিস্ক।আমি তোমাকে হারাতে পারবোনা মায়াবতী।”

মায়া মনোযোগ দিয়ে আরিয়ানের কথাগুলো শুনছিলো।সবটা শোনার পর মনটা যারপরনাই খারাপ হয়ে এলো তার।আরিয়ানের প্রত্যেকটা কথা যুক্তিপূর্ণ।তবে আরিয়ান যে এতদূর পর্যন্ত ভেবে ফেলেছে এটা ভেবে ভালোও লাগলো।
তবুও মন খারাপের আভাস তার কন্ঠেও ছেঁয়ে যায়।আরিয়ানের গলায় মুখ লুকিয়ে বিষন্ন কন্ঠে সে বলে,

—“আমার কিছু হবেনা।আপনি আছেন তো।”
—“তুমি বুঝতে পারছোনা মায়া।”
—“আমি বুঝতে চাচ্ছিনা।…আচ্ছা,আপনার কি আমাকে আদর করতে ইচ্ছে হয়না?”

মায়া এবার ছলছল নয়নে কাঁদোকাঁদো চেহারা নিয়ে তার দিকে তাকায়।আরিয়ান দীর্ঘ:শ্বাস ছাড়ে।কাকে এতক্ষন ধরে বুঝালো সে।মেয়েটা মনে হয় নিজের মধ্য নেই আজ।এমনিই মায়াকে এই রুপে দেখে ক্ষণে ক্ষনে শ্বাস আটকে আসছে।বহুকষ্টে নিজেকে ধরে রেখেছে তার উপর মায়ার এই আবদার।
কিছুক্ষণ ভাবে আরিয়ান।মায়া এখনও তার দিকে উওরের আশায় চেয়ে আছে।
আরিয়ান গম্ভীর কন্ঠে বলে,
—“আমাদের ইসলামিক নীতিতে বিয়ে হয়নি মায়া।কাবিননামায় সাইন করে রেজিস্ট্রি হয়েছে।,,,তুমিই বলো এটা কি উচিত হবে?”

মায়া দুবার পিটপিট করে চোখের পলক ফেলে।ব্যাপারটা বুঝে আসতেই ঠোঁটের কোঁণে মৃদু হাসির রেখা টেনে সে চট করে বলে,
—“তাহলে চলেন,এখন বিয়ে করে ফেলি।”

আরিয়ান নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকায়।পকেট থেকে ফোন বের করে সময় দেখে বলে,
—“রাত বাজে বারোটা দশ।এখন বিয়ে করবে তুমি?”

—“হ্যাঁ,তো?”

আরিয়ান ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে মায়াকে কোল থেকে সরিয়ে উঠে দাড়ায়।এই মেয়েকে আর বুঝিয়ে লাভ নেই।মায়ার উপর সে রাগ ও দেখাতে পারেনা।তাই আর কোন উপায় নেই একে সামাল দেয়ার।
কিন্তু এই রাতের বেলা কাজি পাওয়াটাই ঝামেলা।
মাথায় একরাশ চিন্তা নিয়েই আরিয়ান মায়ার হাত ধরে রুমে এনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলে,
—“একটু বসো।আমি আসছি।”

মায়া মাথা দুলিয়ে সাঁয় দিতেই আরিয়ান বেরিয়ে যায়।প্রায় আধাঘন্টা বাদে ফিরে আসে।সাথে তন্ময়,ইতি,কাজি,আর আরেকটা লোক সে হয়তো কাজির সাথে এসেছে।কাজির চোখ ঘুমে ঢুলুঢুলু অবস্থা।
বোঝাই যাচ্ছে গভীর ঘুম থেকে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে তাকে।মায়া ঠোঁট চেপে হাসে।
আরিয়ান ক্লান্ত ভঙ্গিতে তাকায় মায়ার হাসি দেখে।তাকে এত হয়রানি করিয়ে মেয়েটা এখন হাসছে।

তিনবার কবুল বলে বিয়ে হয়ে যায় আরিয়ান-মায়ার।বিয়ের সাক্ষী থাকে ইতি,তন্ময় আর কাজির সাথে আসা লোকটা।বিয়ের সব নিয়ম শেষ।কাজিকে এতরাতে ডেকে এনেছে সেজন্য তার পাওনার চেয়ে একটু বেশি টাকা দিয়ে দেয় আরিয়ান।উনি হাসিমুখে বিদায় নেয়।আরিয়ান ফিরে আসতেই তন্ময় ইতি মুচকি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
আরিয়ান অগোছালো ভাবে হেসে দরজা আটকে দেয়।কাবার্ড থেকে বিয়ের জন্য ধার্য করা মোহরানার টাকা বের করে মায়ার হাতে দিয়ে বলে,
—“নাও।শান্তি হয়েছে?এখন তুমি সম্পূর্ণরুপে আমার।”

মায়া টাকাগুলো পাশে রাখে।আরিয়ানকে বলে,
—“এখনতো আর কোন বাঁধা নেই।”

আরিয়ান হাসে।মায়ার দু গালে হাত রেখে বলে,
—“আর ইউ শিওর?”

উওরে লাজুক হেসে আরিয়ানের বাহুতে মুখ লুকায় মায়া।মায়ার সম্মতি বুঝতে পেরে হাসে আরিয়ান।এমনটা নয় যে সে মায়াকে কাছে পেতে চাইছিলো না।বরং এতক্ষন নিজের সাথে প্রবল যুদ্ধ করে মায়ার কথা ভেবে নিজেকে সামলে রেখেছিলো।কিন্তু এখন আর সম্ভব নয়।মায়া যখন তার অধিকার চাইছে তখন তার আর মানা করার স্বাধ্যি নেই।

মায়াকে পাঁজাকোলা করে কোলে তুলে নিল আরিয়ান।মায়া তার গলা জড়িয়ে ধরতেই কাঁচের চুড়িতে রিনঝিন আওয়াজ করে উঠলো।সেই আওয়াজটাও যেন তাদের ভালবাসার পূর্ণতা পাওয়ার আগাম শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।
আরিয়ান তাকে বিছানার মাঝখানে এনে বসিয়ে দেয়।চুড়ি কানেরদুল গুলো খুব সন্তর্পণে খুলে রাখে।
আরিয়ান নিজের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে আসে।
ব্যালকনির পর্দা খোলা।ঘরের আসা ক্ষীন চাঁদের আলোয় ভীষণ মোহনীয় লাগছে মায়াকে।
আরিয়ান ধীরপায়ে এগিয়ে যায়।মায়াকে শুইয়ে দিয়ে শাড়ির আচঁল ফেলে দেয়।ব্লাউজের হুক খুলতেই আরিয়ানকে দু’হাতে খামছে ধরে মায়া।অত:পর দুজন হারিয়ে যায় ভালবাসার এক অন্য জগতে।এতদিনের
বহু আকাঙ্ক্ষিত মুহুর্তে ডুব দেয় দুজনে।মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় তাদের সত্তা,অস্তিত্ব।

________________
সকালে মুখের উপর আলো পরতেই চোখমুখ কুঁচকে এলো আরিয়ানের।চোখ খুলে সর্বপ্রথম মুখের উপর ছড়িয়ে পরা মায়ার চুলগুলো সরায় সে।তার গলার সাইডে মাথা গুঁজে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন মায়া।আরিয়ানের একহাত মায়ার উন্মুক্ত পিঠে।কম্বল সরে গেছে উপর থেকে।আরিয়ান একটু উঠে গলা অবধি কম্বল টেনে নেয়।ফ্লোরে পরে আছে মায়ার শাড়ি।
কালরাতের কথা মনে পরতেই তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে আরিয়ানের ঠোঁটে।কি সুন্দর স্নিগ্ধ ছিল প্রতিটি সেকেন্ড।
মায়ার কথাগুলো মনে পরতেই আরো হাসি পায় তার।মেয়েটা যে কি করলো কাল।আরিয়ান কখনোই ভাবেনি মায়া নিজ থেকে তাকে এসব বলবে।মায়ার লজ্জামিশ্রিত কন্ঠের আধো আধো আবদারগুলো কানে বাঁজছে এখনো।
আজ সে ও তার অনুভূতিগুলো পরিপূর্ণ রুপে পুরিপূর্ণতা পেলো।

খানিক বাদেই নড়েচড়ে উঠলো মায়া।যখন বুঝলো সে আরিয়ানের উপরে ভর দিয়ে আছে তৎক্ষনাত ছিঁটকে সরে যেতে নিলেই আরিয়ান তাকে আঁকড়ে ধরে ফেলল।শ্বাস আটকে আরিয়ানের দিকে চাইলে মায়া।
পরপরই প্রচন্ড লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেললো।আরিয়ানের ঠোঁটের কোঁণে দুষ্টু হাসি।
হঠাৎ উল্টে গিয়ে মায়াকে নিচে নিয়ে তার উপরে ঝুঁকে পরলো সে।মায়া সিটিয়ে গেলো।বুক পর্যন্ত কম্বল টেনে শক্ত হাতে ধরে রাখলো।আরিয়ান তার অপরপাশে একহাত রাখলো।মূলত মায়া যাতে উঠে যেতে না পারে সে ব্যবস্থাই করলো।একআঙ্গুল দিয়ে মায়ার কপাল থেকে গালে স্লাইড করতে করতে বললো,
—“কি হয়েছিলো আপনার কালরাতে?এতটা ডেস্পারেট্ হয়ে গিয়েছিলেন কেন?হুম?”

মায়া বেশ বুঝতে পারছে আরিয়ান ইচ্ছা করে তাকে লজ্জায় ফেলছে।ঠোঁট কামড়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে সে।কালরাতের নিজের বলা কথা গুলো মনে করলে তার নিজেরই লজ্জা লাগছে আরিয়ানকে আর কি বলবে?

আরিয়ান আবার বলে,
—“নিজের ভয়ংকর সুন্দর রুপ দিয়ে তো ভালোই ঘায়েল করলেন আমাকে।এখন লজ্জা মাখা চাহনী দিয়ে কি পুরোপুরি শেষ করে দিবেন?”

—“ধ্যাত্,সরেনতো।”

—“কেন?কেন?এখন লজ্জা লাগছে তাইনা?কালতো খুব আদর আদর করছিলেন।”

মায়া আরিয়ানের বুকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলে,
—“সরেননা।শুধু শুধু লজ্জা দিচ্ছেন কেন?”

আরিয়ান মুখ নামিয়ে তার গালে চুমু খায়।উপর থেকে সরে গিয়ে বলে,
—“যাও শাওয়ার নিয়ে আসো।”

মায়া দ্রুত ফ্লোর থেকে শাড়ি উঠিয়ে গায়ে পেচিয়ে নিলো।আরিয়ান পাশে থেকে ফোন হাতে নিয়ে কিছু একটা করছে।ততক্ষনে মায়া নিজের জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গিয়েছে।

বেশ কিছুক্ষন পর বেরিয়ে এলো মায়া।তার পরণে হাল্কা গোলাপী রংয়ের থ্রিপিস।গোসলের পর স্নিগ্ধতা যেন আরো বেরে গেছে।আরিয়ান তখন শরীরে টাওয়াল পেচিয়ে বিছানার চাদর চেন্জ করছে।তার মাঝেই ধপ করে বিছানায় বসে পরলো মায়া।আরিয়ানকে কাজ তখন শেষ।পুরাতন চাদরটা লন্ড্রি বিনে রেখে দিয়ে সে এগিয়ে গিয়ে মায়ার কাঁধে হাত রেখে বললো,
—“শরীর খারাপ লাগছে?”

মায়া দু চোখ বন্ধ করে রেখেছে।মাথা ব্যাথা করছে,দূর্বল দূর্বল লাগছে তার।আরিয়ানকে বলতেই সে একটু পানি খাইয়ে দিয়ে বালিশে সুইয়ে দিলো মায়াকে।চুল আগে থেকেই মুছে বেরিয়েছে তাই চুল মোছার ঝামেলা নেই।আরিয়ান তার শরীরে কম্বল টেনে দিয়ে বললো,
—“চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকো,আমি শাওয়ার নিয়ে এসে কিছু খাইয়ে দিচ্ছি তোমাকে।বলেছিলাম জেদ করোনা।আমার কথাতো শুনলেনা।এখন শরীর খারাপ করলোনা?।”

মায়া গোমরা মুখে আরিয়ানের দিকে তাকাতেই সে বলে,
—“চুপ করে শুয়ে থাকো।আমি এলে,তারপর উঠবে”।

আরিয়ান শাওয়ার নিতে চলে যায়।বিছানায় চুপটি করে শুয়ে থাকে মায়া।বাস্তবিকই তার প্রচন্ড দূর্বল লাগছে।
তবে অন্যরকম একটা ভালোও লাগছে।কেমন যেন লজ্জা লজ্জা একটা মিশ্র অনুভুতি….

~চলবে~
[আসসালামু আলাইকুম।গতকাল এত এত কমেন্টের মাঝে হাতে গোনা দুই একজন ওদের বিয়ের বিষয়টা নিয়ে আপত্তি করেছিলো।তবুও সেটা যৌক্তিক হওয়ায় আগের পর্বটা আমি ডিলিট করে দিয়েছি।
আসলে আমি অতটা খেয়াল করিনি এই ব্যাপারটা।যখন ওদের বিয়ে হয়েছিলো তখনই আমার ক্লিয়ার করে লেখা উচিত ছিলো।আমি লেখিনি এটা আমার ভুল।যাই হোক,এখন একদম পরিষ্কার করে সব লেখে দিয়েছি।কারো আর কোন প্রব্লেম থাকার কথা না।
আর যেহেতু গল্পটা ইসলামিক থিম নিয়ে লেখা না।তাই ইসলামিক বিষয়গুলো তেমনভাবে নেই এখানে।
আগের পার্টে সবাই অনেক ভালো ভালো কমেন্ট করেছিলেন।আশা করছি এই পর্বেও করবেন❤️]