Friday, December 19, 2025
Home Blog Page 12

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ০৭ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ০৭
#Arshi_Ayat

প্রথমে আয়াশ তারপর ইনান তারপর আদ্রি আর ইনশিরা ওদের থেকে একটু দূরে দৌড়াচ্ছে পাগল দুইটা।আয়াশ দৌড়াতে দৌড়াতে অনেক দূর চলে গেছে পিছনে তাকিয়ে দেখে ইনান ও ওর কাছাকাছি চলে এসেছে। দৌড়াতে কষ্ট হয় বলে ইনশিরা হিল খুলে হাতে নিয়ে দৌড়াচ্ছে।কিন্তু আদ্রি এখনো পিছনে পড়ে আছে।আয়াশ,ইনান,ইনশিরা একটা বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেটের সামনে দাড়িয়ে আদ্রিকে জোরে জোরে দৌড়াতে বলছে।আদ্রির একটু পিছনেই পাগল গুলো।বেচারির দৌড়াতে দৌড়াতে অবস্থা খারাপ।অনেক কষ্টে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো আদ্রি আসার সাথে সাথেই আয়াশ বাড়ির গেট বন্ধ করে দিলো।গেট আর পাঁচ সেকেন্ড খোলা রাখলেই পাগল দুইটাও ঢুকে যেতো।যাইহোক চারজনই ভিষণ হাঁপাচ্ছে। আয়াশ হাঁপাতে হাঁপাতে বলল

“চল বাড়ির ভেতরে যাই।”

“ভেতরে যাই মানে?তুই চিনিস নাকি বাড়ির কাউকে?”(ইনান)

“হুম আমার ফুপি হয়।আব্বুর চাচাতো বোনের বাসা।”

“আচ্ছা তাড়াতাড়ি চল।পানি খেতে হবে।” (ইনশিরা)

আদ্রিরতো হাপানোর চোটে কথাই বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে।চারজনই ভিতরে গেলো।আয়াশের ফুপু ওকে দেখেই বলল

“আয়াশ না?”

“হ্যা ফুপি।”

“কত বড় হয়ে গেছিস।কেমন আছিস বাবা?”

“এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তুমি?”

“আমিও ভালো।”

“ফুপি আগে একটু পানি দাও তারপর কথা বলি।”

আয়াশের ফুপি পানি আনতে গেলো।আদ্রি মোটামুটি একটু স্বাভাবিক হয়েই আয়াশকে মারতে লাগলো।আয়াশ বিরক্ত হয়ে বলল

“মারছিস কেনো?”

“বালের এডভেঞ্চার করাইছোছ শালা।দৌড়াইতে দৌড়াইতে জান বাইর হইয়া যাইতে নিছিলো।”

“কিন্তু আমারতে জোস লাগছে এডভেঞ্চারটা।”(ইনান)

” তোর তো লাগবোই শয়তানের গোষ্ঠী।”(ইনশিরা)

ওরা কথা বলতে বলতেই আয়াশের ফুপি ওদের জন্য নাস্তা পানি নিয়ে আসছে।তারপর আয়াশ খেতে খেতে বলল

“ফুপি ওরা আমার বন্ধু।এখানে বেড়াতে এসেছে।”

আয়াশের ফুপি ওদের দিকে সৌজন্য মূলক হেসে বলল

“কেমন আছো তোমরা?”

সবাই সমস্বরে বলল

“ভালো আছি আন্টি।আপনি?”

“এইতো আল্লাহ রাখছে ভালোই।”

মোটামুটি সবার নাস্তা কম্পলিট করা শেষ।আয়াশ উঠতে উঠতে বলল

“ফুপি আজকে আসি।”

“সে কি দুপুরে খেয়ে যা।”

“না না একটা ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে আজকেই করতে হবে।কাজটা না থাকলে অবশ্যই দুপুরে খেতাম।”

“আচ্ছা। আবার আসিস।”

“আচ্ছা ফুপি আল্লাহ হাফেজ।”

তারপর ওরা চারজন গেট থেকে বের হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো পাগল দুইটা নেই।সবাই হাফ ছেড়ে বাচল।তারপর হাটতে হাটতে ইনশিরা আয়াশ কে বলল

“দোস্ত তোর কি ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে রে?”(ইনান)

“না কোনো কাজ নেই।”

“তাহলে তখন ফুপিকে মিথ্যা বললি কেন?” (আদ্রি)

“আরে ওনার বাসায় যদি দুপুরের খাবার খেতাম নিশ্চিত হসপিটাল ভর্তি হওয়া লাগতো।এতো বাজে রান্না করে।আমার মনে হয় কেকা আপা ওনার রান্না দেখলে হার্ট এট্যাক করবে।” (আয়াশ)

ইনশিরা হাসতে হাসতে বলল

“সত্যি দোস্ত বাচাইলি।”

“এখন প্লেন কি?”(আদ্রি)

আয়াশ ইয়ার্কি করে বলল

“আবার পাগলের দৌড়ানি খাওয়ানো।”

ইনান না দিলেও ইনশিরা আর আদ্রি আয়াশের পিঠে দুম করে দুইটা ঘুষি মারলো।বেচারা ঘুষি খেয়ে বলল

“একটু আস্তেও তো মারতে পারিস।যেভাবে ঘুষি দুইটা মারছিস মনে হচ্ছে পিঠের হাড় ভেঙে গেছে।”

“ঢং না করে বল এখন কি করবি?”(আদ্রি)

” কি আর করবো হাটতে থাকি।তারপর নতুন কোনো আইডিয়া পেলে ওইটা করবো।”

তারপর ওরা আবার হাটতে লাগলো।
মোটামুটি পাচপুকুরিয়া আর বান্দুয়াইন পুরোটা হেটে আবার বাড়ির দিকে রওনা হচ্ছে চারজন। বাড়িতে পৌঁছে দেখলো ঘড়িতে ১২.০০ টা বাজে।আয়াশ বলল

“ইনশু আর আদ্রি গিয়ে কলে অথবা পকুরে গোসল করে নে।আমি আর আয়াশ বিলে গোসল করবো।”

আয়াশের কথা শুনে তিনজনই ছোট খাটো একটা হার্ট এট্যাক করেছে।ইনান আয়াশের মাথায় গাট্টা মেরে বলল

“আমি জীবনেও বিলে নামি নাই গোসল তো দূরের কথা।”

“দোস্ত কলে কেমনে গোসল করে?(আদ্রি)

” আমি পুকুরেও না কলেও না কোনো জায়গায় গোসল করতে পারমু না।নো ইম্পসিবল।”(ইনশিরা)

ওদের তিনজনের কথা শুনে আয়াশ এক ধমক দিয়ে বলল

“তোদের জন্য এখন কি এখন আমি পুকুরে বাথটাব বসাবো?এভাবেই করতে হবে গোসল।তোরা করলে কর না করলে নাই।আমি গোসল করে আসছি।”

তিনজনই মুখ কালো করে বলল আচ্ছা এভাবেই করবো।তারপর আয়াশ ইনানের হাতে একটা লুঙ্গি দিয়ে বলল

“চল বিলে যাই।”

“কিহ!!!এখন আবার লুঙ্গি পড়তে হবে?না দোস্ত রাতে কোনোভাবে ম্যানেজ করা গেছে কিন্তু দিনে পারবো না।”

“আমি কিছু জানি না নানা বলছে আমাদের লুঙ্গি পড়ে ওনার সাথে মসজিদে যেতে হবে।এখন বল তুই ওনার কথা ফেলবি?”

ইনান আবারও মুখ কালো করে বলল

“আচ্ছা পরবো চল।”

আদ্রি আর ইনশিরা স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।কিছুক্ষণ পর ইনশিরা আদ্রিকে ধাক্কা দিয়ে বলল

“দোস্ত তুই কি অধিক শোকে পাথর হয়ে গেলি?”

“হুম রে দোস্ত এমন জানলে আমি জীবনেও আসতাম না।আমারে কোটি টাকা দিলেও না।”

“থাক বইন কান্দিস না চল কলে গোসলটা সেরে ফেলি।”

“আমি পারমু না।চারপাশে বেড়া দেওয়া আর উপরে টিন।সামনে বেড়ার দরজা।কোনোমতে দরজাটা খুলে গেলেইতো মান সম্মান শেষ।”

“একটা বুদ্ধি পাইছি শোন আমি যখন গোসল করবো তখন তুই পাহারা দিবি আর তুই যখন গোসল করবি তখন আমি পাহারা দিমু।”

আদ্রি উদাস ভঙ্গিতে বলল

“হুম সেটাই করতে হবে।”

তারপর দুজন পালা করে পাহারা দিয়ে গোসল শেষ করলো এদিকে ইনান বিলে একবার নামতে নেয়তো দশবার পিছায়।আয়াশ বিরক্ত হয়ে ইনানকে টেনে নামায়।অনেক কষ্টে ইনান গোসল শেষ করে কিন্তু আয়াশের কষ্ট হচ্ছে না কারণ সে এগুলো আগেও করেছে।তারপর দুজনে লুঙ্গি আর পান্জাবী পড়ে মসজিদ গিয়ে নামাজ পড়ে বাসায় আসতেই দেখে আদ্রি আর ইনশিরা ছাদে বসে চুল শুকাচ্ছে।ওরাও উঠলো ছাদে।ওদের এই অবস্থায় দেখে আদ্রি আর ইনশিরা হাসতে হাসতে শেষ।আদ্রি কোনরকমে হাসি থামিয়ে বলল

“দোস্ত তোদের জোস লাগছে।”

ইনান রেগে বলে

“সব হইছে আয়াশ শালাটার জন্য ওর জন্য শেষ পর্যন্ত আমার লুঙ্গি পড়তে হইছে।শালা ছাগল নিজেও পড়ছে আমারেও পড়াইছে।”

আয়াশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল

“গ্রামে আসবি আর গ্রামের ট্রেন্ড ফলো করবি না তা কি হয়?আচ্ছা যাইহোক শোন তোদের একটা খুশীর খবর আছে।”

তিনজনই উৎসুক জনতার মতো তাকিয়ে বলল

“কি খুশীর খবর?”

“এখন খাওয়া শেষ করে চারজনে মিলে মুভি দেখবো।”

আয়াশের কথা শুনে তিনজনই অবাক হলো।ইনান সন্দেহর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

“এখানে নেটওয়ার্কই তো ঠিক মতো পাওয়া যায় না মুভি কেমনে দেখমু?”

আয়াশ ভাব নিয়ে বলল

“সেই চিন্তা তোদের করতে হবে না।আমার উপর ছেড়ে দে।আর এখন খেতে চল।”

চারজনই ছাদ থেকে নেমে খেতে গেলো।খাওয়া শেষ করে আয়াশ ওদের তিনজনকে বাড়ির কোণার ঘরটাতে নিয়ে গেলো।তারপর বিটিভি ছেড়ে দিলো সেখানে ডিপজলের মুভি হচ্ছে।ডিপজলের মুভি দেখে আদ্রি আয়াশের পিঠে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল

“তুই কি মুভি দেখাবি এটা আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো।”(আদ্রি)

“আমি মনে করছিলাম তুই মুভি ডাউনলোড দিয়ে আনছিস। এখন কি এটাই দেখতে হবে?” (ইনশিরা)

“ধূর তোরা দেখলে দেখ না দেখলে নাই আমি আর আয়াশ দেখমু।”(ইনান)

” তুই তো দেখবিই তোদের দুইটারে ডিপজলের মতো দেখা যায়।এইজন্যই দেখবি।”(আদ্রি)

আদ্রি কথা শুনে আয়াশ চিল্লিয়ে বলল

“জ্বি না,আমাকে একদম শাহিদ কাপুরের মতো দেখতো।”

“আর আমি তো আদিত্য কাপুরের জমজ ভাই।”(ইনান)

” হ, তোরা গরিবের আদিত্য কাপুর আর শাহিদ কাপুর।”(ইনশিরা)

এটা বলেই ইনশিরা, আদ্রি বাইরে চলে গেলো।ইনান আর আয়াশ বসে বসে ডিপজলের মুভি দেখতে লাগলো।মুভি দেখা শেষ করে ওরা বাইরে বের হতেই দেখে ইনশিরা আর আদ্রি কুতকুত খেলেছে বাচ্চাদের সাথে।হঠাৎ ইনশিরা পড়ে যেতে নিলেই…….

চলবে….🍂

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ।আর আপনারা যেটা ভাবছেন সেটা না ও হতে পারে।হয়তো পরবর্তী পর্বে নতুন কারো আগমন ঘটতে পারে আবার কেউ না ও আসতে পারে।😁)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ০৬ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ০৬
#Arshi_Ayat

আয়াশ আর ইনান আয়াশের রুমে লুঙ্গি পড়তে গেলো।ইনশিরা আর আদ্রি ওদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।রুমে এসেই ইনান বলল

“দোস্ত আমার ভয় করতাছে যদি হাটতে হাটতে খুইল্লা যায়?”

“আরে খুলবো না শক্ত করে বাধলেই হবে।”

“খুল্লে কিন্তু তোরে আমি জবাই দিমু।”

“আরে আমরা কি সেফটি ছাড়া যামু নাকি?নিচে থ্রি কোয়াটার পরে নে।”

“ও তাইলে থ্রি কোয়াটার পরলেইতো হয়।”

“হুম তাও ঠিক কিন্তু এই প্রথম কুমিল্লায় আসছিস একটু দেশী ট্রেন্ড ফলো কর।”

“শালা তোর দেশী ট্রেন্ডের চক্করে যদি মান সম্মানের ফালুদা হয় তাইলে তোরে কুত্তার দৌড়ানি খাওয়ামু।”

“আরে কিচ্ছু হইবো না।তুই আগে পরে নে।”

“আচ্ছা বাট তুই লুঙ্গি পাইলি কই?”

“নানাভাই এর লুঙ্গি এগুলা।”

“কিহ!!!”

আয়াশ বত্রিশ দাত বের করে হাসতে হাসতে বলল

“হুম।নানি দিয়ে গেছে।”

“হায়রে শেষ পর্যন্ত লুঙ্গি পড়তে হইলো।এই মুখ আমি কারে দেখামু।”

আয়াশ মুখ বাকা করে বলল

“যেমনে কইতাছোছ মনে হইতাছে তোর ইজ্জত লইয়া কেউ টানাটানি করতাছে।বেশী ভয় করলে সেফটিপিন লাগা।”

“সেফটিপিন পামু কই এখন?”

“ইনশু অথবা আদ্রির কাছে থাকতে পারে।ওদের থেকে নে।”

মোটামুটি লুঙ্গি পরা শেষ করে আয়াশ আর ইনান বাইরে এলো।ওদের দুইজনকে লুঙ্গি পরা অবস্থায় দেখে ইনশিরা আর আদ্রি দুইজন একে অপরের দিকে একবার চাওয়া চাওয়ি করে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার উপক্রম। ইনান রেগে আয়াশের দিকে তাকাতেই আয়াশের বিলাইর মতো মুখ করে তাকালো।আদ্রি হাসতে হাসতে বলল

“দোস্ত তোদের ফাটাফাটি লাগছে।এক্কেবারে ইয়ো ইয়ো হানি সিং।”

ইনশিরার খুব কষ্টে হাসি থামিয়ে বলল

“না আদ্রি এখনো হানি সিং এর মতো হয় নি।দুইটা কালা চশমা লাগায় দে চোখে এক্কেবারে ঝাক্কাস লাগবো।”

আদ্রি আয়াশ আর ইনানকে থ্রেট দিয়ে বলল

“এবার চান্দুরা আমার সাথে বেশি বকবক করবা তো লুঙ্গি ধইরা এমন টান দিমু বহনের টাইম পাইবা না।”

এতক্ষণ দুইজন চুপচাপ ওদের কথা শুনছিলো কিন্তু আদ্রির শেষের কথা শুনে আয়াশ আর ইনান দুজনেই হাসা শুরু করলো।আয়াশ হাসতে হাসতেই লুঙ্গি হাটুর উপর উঠিয়ে ভাব নিয়ে বলল

“আমরা সেফটি নিয়েই আসছি।কারণ তোদের মতো শাকচুন্নি থাকতে কোনো ভরসা নাই যেকোনো সময় অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারিস।”

ইনান চুটকি বাজিয়ে বলল

“আমরা কাচা মাছ খাই না বুঝছেন সো নো টেনশন।”

আয়াশ আদ্রি আর ইনশিরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

“তোদের কাছে সেফটিপিন আছে?”

আদ্রি অবাক হয়ে বলল

“সেফটিপিন দিয়ে কি করবি?”

“লুঙ্গিতে লাগামু যাতে খুলে না যায়।”

আয়াশের কথা শুনে আদ্রি আর ইনশিরা আরেকদফা হাসলো তারপর বলল

“আগে শুনতাম শাড়িতে সেফটিপিন লাগায়।এই প্রথম তোরা লুঙ্গিতে সেফটিপিন লাগাবি।ভাবা যায় কি বিনোদন। ”

আদ্রি ওদের সেফটিপিন এনে দিলো।বেচারারা কোনোমতে লুঙ্গি সেট করে রওনা দিলো পিছনে আদ্রি আর ইনশিরাও আছে।খালের পাড়ে এসে আয়াশ বলল

“ইনান তুই ওই দিকে থেকে বাইতে থাক আমি এই দিকে থাকি। ইনশু আর আদ্রি তোরা নৌকার মাঝে বসে পড়।”

আদ্রি ভয়ে ভয়ে বলল

“যদি পড়ে যাই?আমিতো সাতার পারি না।”

“আরে পড়বি না। ভালোমতো বস।”

ওরা নৌকায় উঠে বসলো।নৌকা চালানো আরম্ভ করলো।ওই পাড়ে পৌঁছানোর পর সবাই নৌকা থেকে নামলো।তারপর একটু হেটে আম গাছটার সামনে আসলো।মোটামুটি ১০/১৫ টার মতো আম দেখা যাচ্ছে হারিকেনের আলোতে।আম গুলো একটা বস্তায় নিয়ে ওরা আবার খালের দিকে হাটা শুরু করলো।তারপর আবার নৌকা বেয়ে মাঝামাঝি আসার পর নৌকা কাপাকাপি আরম্ভ করে দিলো।আদ্রি ভয়ে ঢোক গিলে বলল

“এবার কি হবে?”

“কিছুই হবে না। আমের বস্তাটা ভালো করে ধরে বসে থাক তোরা।”

“আয়াশ তাড়াতাড়ি চালা নৌকা ডুবলে কিন্তু শেষ।(ইনশিরা)

” তোরা সাবধানে বসে থাক আমরা চালাচ্ছি।”

মোটামুটি অনেক কষ্টে এই পাড়ে এসে থামলো নৌকা।চারজনই নেমে পড়লো।তারপর বাড়িতে চলে গেলো।আদ্রি আর ইনশিরা ছাদে গেলো।ইনান আর আয়াশ লুঙ্গি চেঞ্জ করে একজন আমের বস্তা আরেকজন বটি নিয়ে এলো।তারপর আয়াশ ইনশিরা আর আদ্রিকে বলল

“আমরা এতো কষ্ট করে আম আনছি এখন তোরা কেটে খাওয়া আমাদের। ”

আদ্রি মুখ ভেংচি দিয়ে বলল

“আমরা মনে হয় যাই নাই।”

“গেছিস কিন্তু কোনো কাজ করেছিস।সবতো আমরাই করলাম।নৌকা বেয়ে তো আমরাই নিয়ে গেলাম।” (ইনান)

“এইতো খোটা দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। খেলাম না তোদের আম।” (ইনশিরা)

“না খেলেই ভালো।শান্তিমতো খাওয়া যাবে।” (আয়াশ)

আদ্রি রেগে বলল

“আচ্ছা দাড়া আমি কাটছি।”

এই বলেই কাটতে লাগলো।আদ্রি হঠাৎ আম্মু বলে চিল্লিয়ে উঠলো।আয়াশ দ্রুত ওর কাছে গিয়ে বলল

“কি হইছে রে?”

“হাত কেটে গেছে।”

আয়াশ আর কিছু না ভেবেই আদ্রির আঙ্গুল নিজের মুখে নিলো।তারপর আঙ্গুলটা মুখ থেকে বের করে বলল

“একটু দেখে শুনে কাটবি তো নাকি?নিচে চল এখনি এন্টিসেপটিক লাগাতে হবে।”

আদ্রি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল

“একটুইতো সমস্যা হবে না।”

“মাইর চিনোছ? তাড়াতাড়ি চল।”

আয়াশের জোরাজুরির কাছে হার মেনে অবশেষে ওরা নিচে গেলে।এতক্ষণ ধরে পুরো কাহিনীটা ইনান আর ইনশিরা মনোযোগ সহকারে দেখলো যেনো মনে হচ্ছে বাংলা সিনেমায় রোমান্টিক দৃশ্য দেখছে।ওরা নিচে নামার পর ইনশিরা ইনান কে চিমটি দিয়ে বলল

“দেখলি কি ভালোবাসা। আহা! আহা!আমার মনটাই ভরে গেলো।কিন্তু এই আদ্রির বাচ্চা আয়াশ টাকে বোঝেই না।আর আয়াশও কি কিচ্ছু বলে না আদ্রি কে।ভালোবাসি বললেই তো হয়।”

ইনশিরার কথা শুনে ইনান ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল

“হুম।”

কিন্তু মনে মনে বলল আদ্রির কথা কি আর বলবি তুই নিজেইতো আমাকে বুঝিস না।তোকে এতো ভালোবাসি কিন্তু তুই তো কিচ্ছু বুঝিস না।আদ্রি আর তুই দুইটাই মাথা মোটা।আমার আর আয়াশ দুইজনের কপালই পুড়লো। তোদের মতো দুইটা মাথামোটাকে ভালোবেসে।

এন্টিসেপটিক লাগিয়ে আদ্রি আর আয়াশ দুইজনই আবার উপরে এলো।তারপর আয়াশ,ইনশিরা আর ইনান মিলে আম কেটেছে।মোটামোটি সবার আম খাওয়া শেষ। আর কারেন্ট ও চলে এসেছে।এখন রাত তিনটা বাজে যে যার যার ঘরে চলে গেলো।এবং বিছানায় শুতে ই সবাই ঘুমিয়ে গেলো।

অনেক রাত অবধি জেগে থাকার কারণে কেউই সকাল সকাল উঠতে পারে নি।সবার উঠতেই অনেক দেরি হয়েছে।প্রথমে আয়াশ উঠে ওদের ডাক দিয়ে উঠাইছে।তারপর ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে চারজনই বের হয়েছে গ্রাম ঘুরবে বলে।বাড়ি থেকে বের হয়েই আয়াশ বলল

“এই গ্রামটার নাম হলো পাচপুকুরিয়া আর এটা লাকসামের অন্তর্ভুক্ত শুধু পাচপুকুরিয়া না আরো অনেকগুলো গ্রাম আছে।এখান থেকে একটু এগুলেই বান্দুয়াইন তারপর হাতিমুড়ি,গোয়ালিয়ারা,তাহেরপুর,আরো অনেকগুলো আছে কিন্তু আপাতত আমার মনে নাই।আমি এস এস সি কুমিল্লা থেকেই দিয়েছি তারপর ঢাকা শিফট হই।আর সব চেয়ে মজার বেপার হলো আমার নানু কিন্তু কুমিল্লার না তিনি নোয়াখালীর।”

“ও এই জন্যইতো বলি তুই এতো কিছু পারিস কেমনে।(আদ্রি)

” দোস্ত এই জায়গাটা অনেক সুন্দর। (ইনশিরা)

“আয়াশ তোর দাদু বাড়ি কই রে?”(ইনান)

“দশমিনিট হাটলেই দাদু বাড়ি।”

“কি বলিস!!এতো কাছে?”(ইনান)

“হুম কিন্তু ওইখানে কেউ থাকে না পুরা ভুতুড়ে টাইপ। দাদা,দাদি মারা যাওয়ার পর ওইখানে আর কেউ থাকে না চাচা চাচি রাও চলে গেছে।এখন বাড়িটা তালা দেওয়া।”

আয়াশের মুড ঠিক করতে আদ্রি বলল

“এমনে ক্যাবলার মতো হাটতে ভাল্লাগতাছে না।কিছু একটা করতে পারলে ভালো হইতো।”

আয়াশ এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল

“তোরা একটা এডভেঞ্চার করতে চাস?”

“কেমনে?”(ইনান)

” আগে বলল করবি কি না?”

সবাই সমস্বরে বলল

“ওকে।”

তারপর আয়াশ বলল

“তোরা সব সামনে ঘুরে তাকা আমি না বলা পর্যন্ত পিছনে তাকাবি না।”

সবাই সম্মতি দিলো।দুইমিনিট পর আয়াশ ওদের পাশে হাপাতে হাপাতে এসে বলল

“সবাই দৌড়া।”

এই বলে একমিনিট ও দাড়ালো আয়াশ দৌড়ানো শুরু করলো।কিন্তু ওরা তিনজন কিছুই বুঝতে পারছে না।তিনজনই পিছনে তাকিয়ে দেখলো দুইটা পাগল ওদের দিকে তেড়ে আসছে বাশ হাতে নিয়ে।বিপদ টের পেয়ে তিনজনই দৌড়।আয়াশ আগে আগে দৌড়াচ্ছে। ওরা তিনজন পিছনে। আজকে পাগল দুইটা ধরতে পারলে একবারে চিকেন ফ্রাই করে ফেলবে।সবাই দৌড়াচ্ছে। প্রথমে আয়াশ তারপর ইনান তারপর আদ্রি আর ইনশিরা ওদের থেকে একটু দূরে দৌড়াচ্ছে পাগল দুইটা….

চলবে….🍂

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।কুমিল্লার ভাষাটা সঠিকভাবে লিখতে পারি নি তাই সবার কাছে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আমি কুমিল্লার হলেও ওইখানের ভাষাটা পারি না।তাই সরি এগেইন।)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ০৫ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ০৫
#Arshi_Ayat

কি হবে এবার? রাফিদ কি সব বলে দেবে?

এমন প্রশ্নই ওদের তিনজনের মাথায় ঘুরছে।এদিকে রাফিদ বলল

“সরি ইনশিরা আমি তোমার সাথে দেখা করতে পারবো না।”

“কেনো?”

“বলতে পারবো না।রাখি।”

তারপর রাফিদ কল কেটে দিলো।ইনশিরা ফোন রাখতেই ইনান বলে উঠলো

“কি রে ইনশু কি বলল রাফিদ?”

“বলছে ও নাকি আমার সাথে দেখা করতে পারবে না।নিজেই বলল দেখা করবে এখন আবার নিজেই মানা করছে। কি জানি কি হইছে।”

ইনশিরার কথা শুনে ইনান যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো।তারপর বলল

“আচ্ছা যাক বাদ দে ওর কথা।কুমিল্লা যাচ্ছি আমিতো সেই এক্সাইটেড ”

ওর কথায় তাল মিলিয়ে আদ্রি বলল

“আমিও।এর আগে কখনো কুমিল্লা যাওয়া হয় নি।”

ইনশিরা আয়াশকে উদ্দেশ্য করে বলল

“কতক্ষণ লাগবে রে যেতে?”

আয়াশ গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বলল

“এইতো মোটামুটি ৩ ঘন্টাতো লাগবেই।”

আদ্রি আয়াশের মাথায় গাট্টা মেরে বলল

“এই তিন ঘন্টা কি করমু? ”

আয়াশ রেগে বলল

“আদ্রি তুই আমার মাথাটা রে কি পাইছিস?খালি গাট্টা মারিস।”

“সত্যি বলতে আমার তোর মাথাটারে ফুটবল মনে হয়।”

আয়াশ রেগে আদ্রির দিকে তাকিয়ে বলল

“গাড়ি ড্রাইভ করছি তাই বেচে গেছিস নাহলে তোকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতাম।”

ইনশিরা হেসে বলল

“আহারে আয়াশ তোর জন্য কষ্ট হচ্ছে। ”

আয়াশ ঠোঁট বাকা করে বলল

“হাসিস না বেশি দাত পড়ে যাবে।”

ইনান আদ্রিকে বলল

“আদ্রি একটা গান শুরু কর।”

“ধূর আমি গান টান পারি না।”

আয়াশ ভেংচি দিয়ে বলল

“তা পারবি কেনো?খালি ঝগড়া করতে আর খাইতে পারিস।”

ইনশিরা আদ্রিকে বলল

“দোস্ত ওর কথা কানে নিস না।তুই শুরু কর। ওদের দেখিয়ে দে তুই গান পারিস।”

আদ্রি ভাব নিয়ে বলল

“ওকে শুরু করছি।”

এই বলে আদ্রি গান গাওয়া শুরু করলো

“ও টুনির মা তোমার টুনি কথা শোনে না।
যার তার লগে টাংকি মারে আমায় চেনে না।”

এতটুকু গাওয়ার পর আয়াশ বলল

“থাক থাক মাফ করে দে তোর আর গাওয়া লাগবো না।তোর গান শুনে আমি হার্ট এটাক করমু।”

ইনান ভ্রু কুচকে বলল

“এটা কিন্তু ঠিক না আদ্রি তোকে আমি গান গাইতে বলছি আর তুই কি গাইলি?”

“কেনো গান ই তো গাইলাম।বিশ্বাস না হলে ইউটিউবে টুনির মা গান সার্চ দিয়ে দেখ গান টা আছে।”

ইনশিরা হাসতে হসতে আদ্রির মাথায় টোকা দিয়ে বলল

“জানু তুই ফাটাইয়া দিছোস।”

আদ্রি চুল ঠিক করতে করতে ভাব নিয়ে বলল

“দেখতে হবে না আমি কে!”

আয়াশ মুখ বাকা করে বলল

“দেখছিতো ঝগড়াটে শাকচুন্নি।”

আদ্রি আয়াশের চুল টেনে বলল

“তোর বউ শাকচুন্নি আর তুই শাকচুন্না। ”

ইনান আয়াশের কানে কানে বলল

“দোস্ত তোর বউতো ও ই।কিন্তু তুই শাকচুন্না।দোস্ত ফাটাফাটি জোড়ি শাকচুন্না+শাকচুন্নি।”

আয়াশ ইনানের দিকে চেয়ে চোখ রাঙালো।আর ইনান বত্রিশ দাত বের করে হাসছে।ওদের কানাকানি করতে দেখে ইনশিরা বলল

“কি রে তোরা কানে কানে কি বলিস?”

আয়াশ ভাব নিয়ে বলল

“এটা ছেলেদের পার্সোনাল ব্যাপার। মেয়েরা নট এলাও।”

আদ্রি হাসতে হাসতে বলল

“বুঝলি ইনশু কানে কানে কথা কয় কাইন্নার বউ।”

ইনান বলল

“হয় নাই আমরা কাইন্নার জামাই।”

ইনশিরা হাসতে হাসতে বলল

“লাস্ট পর্যন্ত তোরা কাইন্নার জামাই হলি।”

ইনশিরার কথা শুনে আয়াশ আর ইনান দুজনই জোরে জোরে হাসা শুরু করলো কিন্তু কিছু বলল না। আদ্রি আর ইনশিরা ওদের হাসার কারণটা বুঝতে পারছে না।”

এভাবে ওরা সবাই তিনঘন্টা ধরে আড্ডা দিতে দিতে কুমিল্লা চলে এলো।অর্ধেক পথ আয়াশ আর অর্ধেক পথ ইনান ড্রাইভ করেছে।যখন ওরা পৌছালো তখন রাত ১০.০০ টা বাজে।বাড়ির সামনে এসে আদ্রি বলল

“আয়াশ এটা কই আনছিস?অন্ধকার কেনো এতো?”

“আরে গ্রাম তো তাই সবাই ঘুমায় গেছে।”

“এখন যাবো কিভাবে?কিছুইতো দেখা যাচ্ছে না।” (ইনান)

“গাড়িতে দুইটা টর্চ আছে।একটা তুই নে আরেকটা আমাকে দে।আর ইনশিরা তুই ইনানের হাত ধর আর আদ্রি তুই আমার হাত ধর। কারণ পড়ে যেতে পারিস।রাস্তাটা অনেক চিকন আর রাস্তার দুপাশে পুকুর।এই রাতের বেলা পুকুরে পড়লে কিন্তু সর্বনাশ।”(আয়াশ)

“আচ্ছা বাট আঙ্কেল আন্টি কি এখনো আসে নাই?” (ইনশিরা)

“সেটা বাসায় গেলেই বোঝা যাবে।আমার মনে হয় এতক্ষণ চলে আসছে।উনারা তো আমাদের আগে রওনা দিছে।”(আয়াশ)

“হুম। এবার চল যাওয়া যাক।(আদ্রি)

তারপর আস্তে আস্তে ওরা রাস্তা পার করে বাড়ির সামনে আসলো।আসতেই আয়াশ চিল্লিয়ে বলে উঠলো

” নানু বাইরে আসো।দেখো আমি আসছি।”

পাঁচ মিনিট পর ওর বুড়ো একটা মহিলা হারিকেন নিয়ে এসে আয়াশকে জড়িয়ে ধরে বলল

“এতোদিন হরে নি তোর নানি রে মনে হইড়ছে।”

আয়াশ নানির গালে চুমু খেয়ে বলল

“না আমার ডার্লিং কে তো আমার সবসময় মনে পড়ে কিন্তু তোমার মেয়েই তো আসতে দেয় না।”

নানি কপট রাগ দেখিয়ে বলল

“আইজ্জা হিতির খবর আছে। হিতির একদিন কি আর একদিন।”

আয়াশ হাসতে হাসতে বলল

“আচ্ছা তোমার মেয়ের বিচার পরে কইরো আগে ওদের দেখো। ওরা আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড।তাই ওদের ও নিয়া আসছি।ইনান, আদ্রি আর ইনশিরাকে দেখিয়ে বলল।”

নানি ওদের তিনজনের দিকে তাকিয়ে বলল

“তোমগো নাম কিতা?”

প্রথমে ইনশিরা বলল

“আমার নাম ইনাহা সিকদার ইনশিরা।”

তারপর ইনান বলল

“আমি ইনান চৌধুরী।”

এরপর আদ্রি বলল

“আনি কাশফা ইবনাত আদ্রহা।”

নানি হাসি মুখে বলল

“আইয়ো ঘরে আইয়ো মামণিরা আর বাজান তুমিও আইয়ো।”

তারপর ওদের ভিতরে নিয়ে গেলো নানি।আদ্রি আয়াশকে চিমটি দিয়ে বলল

“কি রে এখানে কারেন্ট নাই?”

“আছে কিন্তু অনেক লোডশেডিং হয়।”

“আমার অনেক গরম লাগছে রে।”

“কিছু করার নাই।”

ওদের চারজনকে চারটা রুম দিলো।তারপর খেতে ডাকলো।কিন্তু ওরা মানা করে দিলো কারণ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে নেমে ওরা খেয়ে নিয়েছিলো।আয়াশের বাবা মা আগেই চলে আসছে।যে যার যার রুমে শুয়ে আছে।কারো চোখেই ঘুম আসছে না।গরমে সিদ্ধ হওয়ার অবস্থা। আদ্রি আয়াশকে মনে মনে গালি দেওয়া শুরু করছে।আয়াশের নানা বাড়ি প্রাইমারী স্কুলের মতো।অনেকগুলো রুম আর প্রত্যেক রুমের সামনে ইয়া লম্বা বারান্দা আছে।আদ্রি ঘুমাতে না পেরে দরজা খুলে বারান্দায় আসতেই দেখলো ইনান দাড়িয়ে আছে।আদ্রি এগিয়ে গিয়ে বলল

“দোস্ত ঘুম আসছে না।প্রচুর গরম লাগছে।”

“আমারও। এইজন্যই এখানে দাড়াইয়া আছি।”

“আয়াশরে মন চাচ্ছে ইচ্ছামতো কিলাইতে।ইনশু কি ঘুমায় গেছে?”

“মনে হয়।”

পিছন থেকে ইনশিরা এসে বলল

“এই নরকের মধ্যে কার ঘুম আসবো।”

আদ্রি বলল

“দাড়া আয়াশ রে ডাকি।”

আয়াশ কে এক ডাক দেওয়ার পরই আয়াশ দরজা খুললো।দরজা খুলতেই দেরি আদ্রি পরপর পিঠে দুইটা কিল বসায় দিয়ে বলল

“হারামি কই আনছিস?গরমে মরে যাচ্ছিতো।”

“আমার কি দোষ কারেন্ট লোডশেডিং দিলে।আমারও তো ঘুম আসছে না।”

“বাতাসও তো নাই বাইরে।এই বিল্ডিংএর ছাদে ওঠা যাইবো?”(ইনান)

“হুম একটা মই আছে কিন্তু ভাঙ্গা চোরা।ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা আছে।”

আদ্রি আতঙ্কে বলল

“কিহ!!না না তাইলে ছাদে ওঠার দরকার নাই।”

ইনশিরা বলল

“আরে কিছু হবে না।একবার চেষ্টা করা যায়।”

“আয়াশ তুই মই টা নিয়ে আয়।”(ইনান)

আয়াশ মই আনতে চলে গেলো।তারপর ওরা মই দিয়ে কষ্ট করে ছাদে উঠলো।সবচেয়ে কষ্ট হইছে আদ্রির উঠতে।ও মইয়ে চড়েই কাপাকাপি শুরু করে দিছে।অনেক কষ্টে ইনান ওরে টেনে তুলছে।তারপর চারজনই ছাঁদে বসে গল্প করছে।এক পর্যায়ে আদ্রি বলল

” আর কতক্ষণ বসে থাকবো।কিছু একটা করতে পারলে ভালো হতো।”

“আচ্ছা চল আম আনতে যাই।খালের ওই পাড়ে একটা আম গাছ আছে।অনেক আম ধরে।এখন গেলে অনেক পাওয়া যাবে।” (আয়াশ)

“আচ্ছা চল।” (ইনান)

“কিন্তু ইনান তোকে আর আমাকে লুঙ্গি পড়তে হবে।লুঙ্গি না পড়লে হবে না।নৌকা বাইতে পারবো না।”

ইনান চিল্লিয়ে বলল

“কিহ!!!আমি জীবনেও লুঙ্গি পরি নাই।”

ইনশিরা হাসতে হাসতে বলল

“সিরিয়াসলী তোরা লুঙ্গি পরবি?আমি ভাবতেই পারছি না।”

আয়াশ ভেংচি দিয়ে বলল

“হুম পরবো। দেখিস ভালোই লাগবে।”

আদ্রি শয়তানি হাসি দিয়ে বলল

“ওকে দেখি কেমন লাগে।”

ওরা চারজন আবার নিচে নামলো।আয়াশ আর ইনান আয়াশের রুমে লুঙ্গি পড়তে গেলো…..

চলবে…..🍂

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ০৪ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ০৪
#Arshi_Ayat

ওরা সবাই ক্যান্টিন থেকে উঠে ক্লাস রুমের দিকে যায়।সিড়ি দিয়ে ওঠার সময় ওদের ডিপার্টমেন্টের একটা ছেলে ইনশিরার সামনে এসে বলে

“ইনশিরা একটু সময় হবে?তোমার সাথে একটু কথা আছে।”

“হ্যা বলো।”

“এখানে না একটা কফি শপে বলি।যদি তুমি অনুমতি দাও।”

ইনশিরা কিছু বলার আগেই ইনান বলে উঠলো

“কেনো এখানে বললে কি সমস্যা?”

ছেলেটা ইনানের দিকে তাকিয়ে বলল

“তোমাদের সামনে বলা যাবে না এটাই সমস্যা।”

ইনান রেগে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই ইনশিরা ওকে থামিয়ে দেয় তারপর ছেলেটাকে বলে

“আচ্ছা রাফিদ কালকে দেখা করি আমরা।আজকে সময় দিতে পারবো না ক্লাসের পর আমার সময় নেই।”

“আচ্ছা কোথায় কখন দেখা করবে বলে দিও।”

“আচ্ছা।”

তারপর রাফিদ সেখান থেকে চলে যায়।আর ওরাও ক্লাসে চলে যায়।ক্লাসে গিয়ে ইনান বলে

“গাইস আমি একটু আসছি।লাইব্রেরিতে কাজ আছে।তোর থাক।”

সবাই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।আর ইনান চলে যায়।আদ্রি আর আয়াশ জানে ইনান কেনো লাইব্রেরিতে যাচ্ছে।কিন্তু ইনশিরা জানে না।ইনশিরা কালকে না আসায় আদ্রির থেকে নোট তুলতে ব্যাস্ত আর আয়াশ তো একটা ফাকিবাজ। জীবনেও নোট করবে না।পরীক্ষার সময় হলে আদ্রির নোট নিয়ে পড়বে।এটা নিয়ে আদ্রির সাথে সেই লেভেলের ঝগড়া হয়।ইনানেরও একই অবস্থা।যাইহোক ইনশিরা নোট তুলছে। আয়াশ আর আদ্রি বসে বসে কথা বলছে।এক পর্যায়ে আয়াশ বলল

“রাফিদের কপালে দুঃখ আছে।ইনানের সামনেই কেনো বলতে হলো এগুলো।”

“হুম বলদ হলে এমনই হয়।এখন মজা বুঝো।”

এদিকে লাইব্রেরিতে কেউ নেই শুধু ইনান আর রাফিদ।ইনান হকি স্টিক নিয়ে রাফিদের চারদিকে ঘুরছে আর বলছে

“বল ইনশিরাকে কি বলবি?”

“যাই বলি সেটা তোমাকে বলবো কেনো?”

“অবশ্যই আমাকে বলবি।তোর সাহস কি করে হয় ইনশিরাকে কফি শপে ডাকার?”

“এখানে সাহসের কি হলো?আমি ইনশিরাকে ভালোবাসি।”

ইনান রাফিদের কথায় রেগে স্টিক টা দিয়ে ইচ্ছামতো মারা আরম্ভ করে।হঠাৎ দরজায় মনে হলো কেউ নক করছে। ইনান খুলতেই আয়াশ ঢুকলো তারপর ইনানকে বলল

“পাগল হইছিস?এভাবে কেউ মারে?”

ইনান রাগে বলল

“ও নাকি ইনশু রে ভালোবাসে।ওর ভালোবাসা ছুটাচ্ছি।”

আয়াশ ওর হাত থেকে স্টিক টা নিয়ে টেবিলে রেখে রাফিদকে বলল

“ভাই অনেকতো মার খেলে। এখনো কি ইনশিরার সাথে দেখা করার শখ আছ?যদি থেকেও থাকে তাহলে ভুলে যাও।”

রাফিদ বেচারা কিছু বলতেও পারছে না মার খেয়ে।আয়াশ আর কিছু না বলে ইনানকে নিয়ে ক্লাসে চলে আসে।তারপর নিজেদের জায়গায় বসে পড়ে।আদ্রি আয়াশের কানে কানে বলল

“কি রে বেশি মারছে নাকি?”

“না বেশি মারতে পারে নাই।আমি গিয়ে ধরছি আর রাফিদকে বুঝাইছি।তারপর ইনানকে ধরে নিয়ে আসছি।”

“ভালো করছিস নাহলে ওর অবস্থা খারাপ করে ফেলতো।”

“হুম।সেদিনতো তিয়াসেরও অবস্থা খারাপ করে ফেলছিলো আমি ধরছি নাহলে খুব খারাপ হয়ে যেতো।তিয়াসরে আরো আগেই শায়েস্তা করতো কিন্তু ইনশিরা ভালোবাসে তাই আর করে নাই কিন্তু চোখে চোখে রাখতো।”

“হুম। এই ইনান টা এমন কেনো নিজেও বলবে না কাউকে বলতেও দিবে না।”

“ও ভার্সিটি ওঠার পর এই চার বছর ধরে ইনশিরাকে ভালোবাসে কিন্তু ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে কখনো বলে নি।কিন্তু সবসময় ওর খেয়াল রাখছে।”

আদ্রি কিছু বলার আগেই ক্লাসে মিরাজ স্যার আসলো।আজকে প্রথমে তার ক্লাস।স্যারকে ক্লাসে ঢুকতে দেখে চারজনই মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো। মুখে একটা শয়তানি হাসি ফুটিয়ে চারজনই বসে পড়লো।ক্লাস শেষ করার পর আয়াশের ইশারায় তিনজন বের হয়ে গেলো।তারপর ভার্সিটির পিছনে এসে আয়াশ পকেট থেকে চাবি বের করলো লেকের পাড়ের দরজার তালা খোলার জন্য।আদ্রি আয়াশের হাতে চাবি দেখে বলল

“কি রে তুই চাবি পেলি কই?”

আয়াশ একটু মুড নিয়ে বলল

“আয়াশ আহমেদের কাছে এটা কিছুই না।”

ইনান আয়াশের কান মলে বলল

“ভাব না দেখাইয়া বল কই পাইছিস?”

আয়াশ বত্রিশ দাত বের করে হাসতে হাসতে বলল

“দারোয়ান মামা রে এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট দিছি ব্যাস কাজ হয়ে গেছে।”

ইনশিরা ওর মাথা গাট্টা মেরে বলল

“ভালোই ঘুষ দিয়া চাবি আনছিস।এবার তাড়াতাড়ি খোল।গিয়ে দেখি স্পেশাল গিফট টা।”

আয়াশ গেট খুলে ঢুকে গেলো।পিছনে ওরাও আছে।ভার্সিটির এই সাইড টায় কেউ আসে না কারণ এখানে কোন একসময় নাকি কয়েকজন ছাত্র মারা গেছে তাই তখন থেকে এটাতে প্রাচীর তুলে তালা দেওয়া হয়েছে।তবে এটার ভিতরটা খুব সুন্দর। জায়গাটা অনেক বড়। সামনে একটা লেক আর চারপাশে অনেক গাছপালা আর ঘাসে ভরা সব সময়েই এখানে একটা মিষ্টি বাতাস বয়ে চলে।এখানে এলে মনটা অদ্ভুত ভাবে ভালো হয়ে যায়।আয়াশ মাঝে মাঝে এখানে আসে কিন্তু ওরা তিনজন আজকেই এলো।ইনশিরা ভিতরে ঢুকেই বলল

“এই ভার্সিটিতে যে এমন একটা জায়গা আছে এটাই জানতাম না।অনেক সুন্দর জায়গাটা।”

আদ্রি খুশীতে বলল

“আমার এখানে শুয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে।”

আয়াশ আদ্রি খোঁচা দিয়ে বলল

“তুই শুয়ে থাক আমরা গিয়ে দেখি মিরাজ স্যার কি করছে।”

আয়াশের কথা শুনে ইনান, ইনশিরা দুজনেই হাসলো আর আদ্রি গট গট করে সামনে হাটছে গাল ফুলিয়ে।ওরাও পিছনে আসছে।আয়াশ দৌড়ে গিয়ে আদ্রির হাত ধরে গাছের আড়ালে চলে গেলো।ওদের দেখাদেখি ইনান আর ইনশিরাও পাশের একটা গাছের পিছনে লুকালো।আয়াশ ইশারায় ওদের সবাইকে সামনে তাকাতে বলল।সবাই সামনে তাকালো।মিরাজ স্যার আর শিউলী ম্যাডাম বসে আছে লেকের পাড়ে।চারজনের মুখেই শয়তানি হাসি।আয়াশ ফোনের ক্যামেরা অন করে রাখছে।তারপর সবাই আস্তে আস্তে সামনে এগুচ্ছে অনেকটা কাছে আসতেই সবাই শুনতে পেলো মিরাজ স্যার শিউলি ম্যাডামকে গান শোনাচ্ছে।সুর করে গাইছে

“তুমি যে আমার কবিতা আমারও বাশীর রাগিণী।”

স্যার এর পর আর গাইতে পারলো না ইনান পিছন থেকে বলে উঠলো

“আমারও স্বপন আধো জাগরণ।”

বাকিটা আয়াশ গাইলো

“চিরদিনই তুমি যে আমার।”

মিরাজ স্যার আর শিউলি ম্যাডাম পিছনে তাকিয়ে বিষ্ফোরিত চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে আর ওরা চারজনতো হেসে কুটি কুটি। মিরাজ স্যার বাজখাই গলায় ধমক দিয়ে বললেন

“তোমারা এখানে কেনো?”

“স্যার আপনার সুমধুর কন্ঠের গান আমার হৃদয় উথাল পাথাল করে দিচ্ছে তাই আর থাকতে পারি নি দৌড়ে চলে আসছি।”(আয়াশ)

আদ্রি হাসতে হাসতে বলল

“স্যার আরেকটু গেয়ে শোনান আয়াশের বুকে উথাল পাথাল হচ্ছে।”

ইনশিরা বলল

“আমার এখন ঢুমকা দিতে ইচ্ছা করছে।আহা! আহা!কি গান।”

আয়াশ ইনশিরাকে খোচা দিয়ে বলল

“তুই এই গানে ঢুমকা দিবি কেমনে।এটাতো রোমান্টিক গান।এইগানে তো…..থাক আর বললাম না লজ্জা লাগে।”

ইনান বলল

“আমিতো স্যারের জন্য আসি নি ম্যাডমের জন্য এসেছি।ওহ!!লজ্জা লাগছে বলতে।”

ইনানের কথায় আরেকদফা হাসির রোল পড়লো।শিউলী ম্যাডাম রেগে বলল

“তোমারা ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট না।দাড়াও তোমাদের আমার সাবজেক্টে পাস করাবো না।”

ম্যাডামের কথা শুনে আরো একদফা হাসলো চারজনে তারপর ইনশিরা বলল

“আচ্ছা ম্যাডাম পাস করানো লাগবে না।”

মিরাজ স্যার থমথমে মুখে বলল

“তোমাদের আমি দেখে নিচ্ছি।”

এটা বলেই শিউলী ম্যাডাম আর মিরাজ স্যার হাটা শুরু করলো কিন্তু বেশী দূর যেতে পারলো না বিষ্মিত চেহারায় পিছন ফিরে তাকালো।আর ওরা চারজন আবার হাসতে হাসতে শেষ কারণ আয়াশ ওই ভিডিওটা হাই ভলিউম দিয়ে চালু করেছিলো।এবার স্যার ম্যাডাম দুজনের মুখই শুকিয়ে গেছে। স্যার আয়াশকে বলল

“এই ভিডিওটা ডিলিট করে দাও তোমাদের সব পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দিবো।”

আয়াশ শয়তানি হাসি দিয়ে বলল

“ঠিকাছে স্যার ডিলিট করে দিবো কিন্তু আমরা গ্রেজুয়েশনে কম্পলিট করার পর।ততদিন এটা আমার কাছেই থাক।আমি মাঝে মাঝে শিউলি ম্যাডামকে গানটা শুনিয়ে দেবো।”

শিউলী ম্যাডাম রেগে বলল

“ভালো হবে না কিন্তু। ভালোই ভালোই ডিলিট করে দাও।”

ইনান এবার কলার খাড়া করে চুলগুলো হাত দিয়ে একটু নেড়ে ভাব নিয়ে বলল

“ভালো না হলে নাই।গাইস ফলো মি।”

এটা বলেই ও হাটা শুরু করলো গেটের দিকে আর ওর পিছনে পিছনে ওরা ও আসছে সবগুলো হাসতে হাসতে শেষ। ওইখান থেকে বের হবার পর আয়াশ বলল

“দোস্ত কি স্পেশাল গিফট দিছে এটাই তো দেখলাম না।”

আদ্রি ওর চুল টেনে বলল

“যা আবার গিয়ে জিগ্যেস করে আয় জুতার বাড়ি একটাও নিচে পড়বে না।”

আয়াশ বলল

“থাক এতো সুন্দর গাল জুতার বাড়ি খেয়ে নষ্ট করার দরকার নাই।যাইহোক শোন এখন তোরা বাসায় যাবি সবাই এবং ব্যাগপ্যাক করবি।আমরা সবাই সন্ধ্যায় কুমিল্লা রওনা হবো।আমার কাজিনের বিয়ে।এক সপ্তাহ ওইখানে থাকবো। চারদিনে তোদের আমাদের গ্রামটা ঘুরবো তারপর বাকি তিনদিন বিয়েতে মজা করবো।আগেই বলে রাখলাম তোরা কেউ না করতে পারবি না।”

ইনান বলল

“ডান। আমি গিয়েই ব্যাগপ্যাক করবো।”

আদ্রি খুশী হয়ে বলল

“আমারও সমস্যা নাই।”

ইনশিরা চিন্তিত মুখে বলল

“কিন্তু আমি বোধহয় যেতে পারবো না।”

ইনান ভ্রু কুচকে বলল

“কেনো?”

“আম্মু ভাবছে আমি অসুস্থ তাই।”

আয়াশ বলল

“আচ্ছা আমি আম্মুকে দিয়ে তোর আম্মুর সাথে কথা বলিয়ে দেবো তাহলেই হবে।”

ইনশিরা খুশী হয়ে বলল

“তাহলেও আর চিন্তা কি!!তাড়াতাড়ি বাসায় চল।”

সবাই বাসায় চলে গেলো।
সন্ধ্যার সময় ইনান,আদ্রি,ইনশিরা সবাই ওর বাসায় চলে আসছে।এখনি রওনা হবে।আয়াশের বাবা মা একটা গাড়ি করে যাবে আর ওরা চারজন একটায়।সবাই গাড়িতে উঠে বসলো।আয়াশ গাড়ি স্টার্ট দিলো হঠাৎ ইনশিরার ফোনে আন নোন নাম্বার থেকে কল এলো।ও রিসিভ করে হ্যালো বলতেই। ওই পাশ থেকে বলে উঠলো

“ইনশিরা আমি রাফিদ।”

“ওহ!!রাফিদ বলো।”

ইনশিরার মুখে রাফিদের কথা শুনে তিনজনই ভয়ার্ত চেহারায় ইনশিরার দিকে তাকিয়ে আছে সেই সাথে রাফিদের উপর প্রচুর রাগও হচ্ছে।

কি হবে এবার?রাফিদ কি সব বলে দেবে?

চলবে…..🍂

(মিশন সাকসেসফুল😁😜।ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ০৩ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ০৩
#Arshi_Ayat

ইনান ফোন রেখেই আদ্রি আর আয়াশ কে বলল

“দোস্ত ইনশু হসপিটালে।”

আদ্রি চিন্তিত মুখে বলল

“তাড়াতাড়ি চল।”

তারপর আয়াশ আর ইনান একসাথে বসে আর আদ্রি পিছনের সিটে বসে।ইনানের হাত পা কাপছে তাই আয়াশ গাড়ি ড্রাইভ করছে।ইনান উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল

“বারবার বলছিলাম উল্টা পাল্টা কিছু করতে না। অনেক বুঝাইছি তারপর এটা করলো।আজকে যাই কষে দুইটা থাপ্পড় দিবো।সাহস কতো বড়ো স্লিপিং পিল খায়।”

“কয়টা খাইছে রে?” (আয়াশ)

“এটা জানি না।আন্টিতো বলল অনেকগুলো ই।”(ইনান)

আদ্রি ইনানকে উদ্দেশ্য করে বলল

” থাক চিন্তা করিস না।কিচ্ছু হবে না ওর।”

ইনান মাথা নাড়িয়ে বলল

“আয়াশ ভাই তাড়াতাড়ি ড্রাইভ কর।”

ওরা একঘন্টার মধ্যে পৌঁছে গেলো।হসপিটালে ঢুকেই ইনান রিসেপশনের দিকে দৌড় দিলো পিছনে আয়াশ আর আদ্রি ও আছে।তারপর লিফটে তিনতলায় গেলো কারণ তিনতলায় ইনশিরা ভর্তি আছে।তারপর ওরা কেবিনের সামনে আসতেই ইনশিরার মা কান্না করতে করতে বলল

“দেখো না ও কি করছে।কেনো এমন করলো ও?ওর বাবা ও বাসায় নাই।মেয়েটা দিনদিন উগ্র হয়ে যাচ্ছে।ইনান তুমি ওকে বাসায় দিয়ে যাওয়ার পর আমার সাথে ছোট একটা বিষয় নিয়ে রাগারাগি করে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করছি খোলে নাই।তারপর দরজার ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে খোলার পর দেখি এই অবস্থা। এই মেয়ে নিয়ে আমি কই যাবো।সামান্য কারণে যদি এমন করে বড় কিছু হলে কি করবে!!

আলেয়া বেগমের কথা শুনে ওরা হাফ ছেড়ে বাচলো যে সে এখনো কিছু যানে না। তাই ইনান আলেয়া বেগমকে শান্তনা দিয়ে আসল কাহিনি চেপে গিয়ে বলল

” আচ্ছা আন্টি আপনি কান্না কইরেন না।ওরে আমরা বুঝাবো।এখন কেমন আছে ও?”

“ডাক্তার ওয়াশ করছে।আমি গিয়ে দেখে এসেছি ঘুমাচ্ছে। তোমার যাও দেখে আসো।আমি ডাক্তারের চেম্বারে যাচ্ছি। ”

“আচ্ছা আন্টি। ”

এটা বলেই ওরা ইনশিরার কাছে চলে গেলো।তারপর ইনান ইনশিরার কাছে বসতেই ও চোখ খুললো।আর ইনান রাগী ফেস নিয়ে বলল

“এইজন্যই বাড়িতে যেতে চাইছিলি তাই না?আমি প্রথমেই সন্দেহ করছিলাম।কেনো এমন করলি তুই।কতো করে তোকে বোঝাইছি যে উল্টাপাল্টা কিছু করিস না।আরে তুই তো বেচে গেছিস এমন অনেকেই আছে যারা এটার শিকার হয়েও নিজেকে সামলে নেয়।তাহলে তুই কেনো পারবি না যেখানে তোর সাথে খারাপ কিছু হওয়ার আগেই আল্লাহ তোকে বাচাইছে। একবারও ভাবলি না তোর বাবা মায়ের কথা?ভাবলি না আমাদের কথা?আমাদের চারজনের শক্ত ফ্রেন্ডশিপের কথা।চারজন মিলে কতো দুষ্টামি করছি।কতো মজা করছি সব ভুলে গেলি ওই নোংরা তিয়াসের জন্য?তোর কাছে ও ই বড়ো হয়ে গেলো?যে ওর জন্য তুই নিজের জীবন দিতে যাচ্ছিলি।তোর কাছে আমি এটা আশা করি নি রে।তুই যদি এখন অসুস্থ না হতি তাহলে তোকে কষে দুইটা থাপ্পড় দিতাম।কিন্তু এ অবস্থায় দেখে দিলাম না।”

তারপর আদ্রি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল

“আর কখনোই এমন করিস না।এটা করলে তুই জীবনের কাছে হেরে যাবি।আর যার জন্য করবি তার কিছুই আসবেও না যাবেও না তার চেয়ে ভালো যে মানুষগুলো তোকে ঘিরে আছে তাদের সাথে ভালোবাসা বিনিময় করে বেচে থাক। দেখবি জীবনে তুই অনেক সুখী হবি।তখন আর মরতে ইচ্ছে হবে না।”

আয়াশ উদাস ভঙ্গিতে বলল

“আমি এতো মোটিভেশনাল কথা কইতে পারি না তাই কিছু কইলাম না কিন্তু এরপর যদি এমন কিছু শুনছি তাইলে তুই মরা লাগবো না আমি তোরে ক্যাকটাস গাছের সাথে বেধে গায়ে লাল পিপড়া ছাইড়া দিমু।মনে রাখিস।”

ইনশিরা হাসিমুখে বলল

“না আর এমন করবো না।ভালো ভাবে বাচবো।আর তোরা তো আছিস ই আমাকে দেখে রাখার জন্য।”

ইনশিরার কথা শুনে তিনজনই তৃপ্তি নিয়ে হাসলো।আয়াশ মজা করে বলল

“তোর জন্য পাতলা খিচুড়ি নিয়ে আসি দাড়া।”

ইনশিরা জোরে জোরে মাথা নাড়িয়ে বলল

“না না না না প্লিজ আনিস না।”

“না আমি শুনছি অসুস্থ হলে নাকি পাতলা খাবার খেতে হয়।”

আদ্রি মুখে হাত দিয়ে বমি করার ভঙ্গি করে বলল

“আয়াশের বাচ্চা চুপ কর।চুপ না করলে তোরে ড্রেনে চুবামু।”

ইনান হেসে বলল

“ড্রেনে চুবাইতে হলে কিন্তু তোরেও ড্রেনে নামতে হইবো।সো বুঝে শুনে কাজ করিস।”

ইনশিরা বিরক্তির স্বরে বলল

“একজন অসুস্থ রোগীর সামনে কি ড্রেন ড্রেন শুরু করছিস।ভদ্রতা আছে তোদের? ”

আদ্রি বলল

“ঠিক কথা এই ইনান আর আয়াশের মধ্যে কোনো ভদ্রতা না।অভদ্র পোলাপান।”

আয়াশ ঠোঁট বাকা করে বলল

“আর আপনি মনে হয় ভদ্রের আম্মা।”

ওরা কথা বলছিলো একটুপর একটা নার্স এসে ইনশিরাকে বলল

“এখন কি অবস্থা? ”

“জ্বি ভালো।”

“আচ্ছা রেস্ট করেন বিকেলের মধ্যে ছাড়া পাবেন।”

“ঠিকাছে। ”

নার্স যাওয়ার পর আয়াশ বলল

“নার্সটা বহুত সুন্দর। ”

আদ্রি খোচা মেরে বলল

“লুচ্চমি শুরু।লুচ্চমি না করলে হয় না?মহিলাটা তোর মায়ের বয়সী।”

আয়াশ ভ্রু কুচকে বলল

“আমি কি বলছি আমি তার সাথে প্রেম করমু বলছি সে সুন্দর এতে লুচ্চমির কি আছে?”

ইনান হাসতে হাসতে বলল

“বুঝলি আয়াশ মাইয়ারা সব হিংসুটে। কারো সৌন্দর্যের প্রশংসা করলে জ্বলে পুড়ে মরে যায়।”

ইনান আর আয়াশ দুজনেই হাসতে লাগলো।আদ্রি আর ইনশিরা ঠোঁট বাকা করে রইলো।তখনি আলেয়া বেগম এসে বলল

“ইনশু এমনটা করা উচিত হয় নি তোমার। ”

“সরি মা।”

“আচ্ছা মাফ করলাম আর যাতে এমন না হয়।তোমারা থাকো ওর কাছে আমি একটু বাসায় যাচ্ছি।”

আদ্রি বলল

“আচ্ছা আন্টি।”

তারপর আলেয়া বেগম চলে গেলেন।আলেয়া বেগম যেতেই আয়াশ বলল

“দোস্ত কালকের মিশনটার কথা মনে আছে?”

সবাই জোরে বলে উঠলো

“ইয়েস মিরাজ স্যারের পর্দা ফাস”

তারপর সব গগন বিদারী হাসি দিয়ে উঠলো আর চোখে মুখে শয়তানি।

ওরা সবাই বসে বসে গল্প করছিলো একটু পর আদ্রিকে বসিয়ে রেখে ইনান আর আয়াশ বাইরে এলো নাস্তা করতে আর কারণ সকাল থেকেই কিছু খাওয়া হয় নি।বের হয়েই ইনান আয়াশকে বলল

“তিয়াস হারামিটাকে আমার খুন করতে ইচ্ছা করছিলো কিন্তু তোর জন্য পারি নাই।”

“খুন করলে তোর নিজেরই ক্ষতি তারচেয়ে ভালো ওকে জেলে পঁচতে দে।আমি মামাকে বলে দিছি ওর ইচ্ছা মতো মারতে।”

“হুম আর একদিন ও আমার সামনে পড়লে ওরে জ্যান্ত পুতে ফেলবো।”

“শান্ত হ ভাই।একটু আগে ইনশুকে ই তো কত ভালো করে বোঝালি এখন নিজেই হাইপার হচ্ছিস।”

“শান্ত কিভাবে হবো বল আরেকটু হলে তো….”

ইনান আর কিছু বলে নি রাগে কটকট করতে করতে নাস্তা খেতে গেলো।ওরা খেয়ে তারপর হসপিটালে গেলো।আদ্রি তখনও বসে বসে ইনশিরার সাথে কথা বলছিলো।চারজন আবার বসে বসে মজা করছিলো।একটুপর আলেয়া বেগম এসে সবাইকে জোর করে পাঠিয়ে দিলেন।তাই যে যার যার বাড়ি চলে গেলো।আলেয়া বেগম মেয়ের পাশে বসে মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে থাকেন। আর ইনশিরা তৃপ্তিতে চোখ বুঁজে। বিকেলে ইনশিরাকে হসপিটাল থেকে ছাড়া হলো।ও বাসায় চলে গেলো।

পরেরদিন…..

ইনান আর আয়াশ বসে বসে আদ্রি আর ইনশিরার জন্য অপেক্ষা করছে।একটুপর দুজনই আসলো।আদ্রি বসতে বসতে বলল

“কি রে মিরাজ স্যার আজকে আসছে?”

আয়াশ শয়তানি হাসি দিয়ে বলল

“শালার ব্যাটা আজকে আবার আসবে না?”

ইনান হাসতে হাসতে বলল

“ওর তো আজকে লেকের পাড়ে ডেটিং শিউলি ম্যাডামের সাথে।”

ইনশিরা আয়াশকে উদ্দেশ্য করে বলল

“তুই শিওর তো মিরাজ স্যার শিউলি ম্যাডামকে লেকের পাশে আসতে বলছে।”

“আবার জিগায়।আমি নিজের কানে শুনছি মিরাজ স্যার বলতেছিলো হ্যা শিউলি ম্যাডাম আপনি একটু লেকের পাড়ে আসবেন?আমি আপনাকে একটা গিফট দিবো।খুবই স্পেশাল।”

আয়াশের কথা শেষ হতেই চারজনের হাসির রোল পড়ে গেলো।ইনান হাসতে হাসতেই বলল

“স্পেশাল গিফট টা আমাদেরও দেখা উচিত।”

ওদেরকে থাকিয়ে ইনশিরা বলল

“কিন্তু লেকের পাড়ের গেইটে তো তালা দেওয়া থাকে আর চাবি থাকে ম্যাডাম স্যার দের কাছে।আমরা ঢুকবো কিভাবে?”

আয়াশ কলার উচু করে বলল

“এটা আমার উপর ছেড়ে দে।শুধু ক্লাসটা শেষ হলেই বেরিয়ে পড়বো।ওকে?”

সবাই একসাথে বলে উঠলো

“ডান।”

চলবে……🍂

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আর আপনারা সবাই মিশনটার জন্য সবাই রেডি তো?)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ০২ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ০২
#Arshi_Ayat

প্রায় ঠোঁট মিলিয়ে ফেলেছে কিন্তু পুরোটা মিলাতে পারে নি তার আগেই কেউ একজন ওকে ইনশিরার থেকে ছাড়িয়ে সজোরে নাকের মধ্যে একটা ঘুষি মারে।তারপর ইনশিরার দিকে না তাকিয়েই বলে

“ইনশু তুই শাড়িটা পড়ে নে আমি আদ্রিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর এই শালাকে আমি আর আয়াশ দেখে নিচ্ছি।

এটা বলেই ইনান তিয়াসের কলার ধরে মারতে মারতে বাইরে নিয়ে গেলো আর ইনশিরা কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়লো।ইনান বাইরে গিয়েই আদ্রিকে বলল

” দোস্ত তুই একটু ইনশুর কাছে যা ওকে সামলা।”

আদ্রি ইনশিরার কাছে যায় আর ইনান আর আয়াশ মিলে তিয়াসকে মেরে হসপিটাল পাঠিয়ে দিছে আর থানায় গিয়ে জিডি করে রাখছে।আর এদিকে আদ্রি ইনশিরার জামা কাপড় চেঞ্জ করে দেয় ইনশিরা বেচারি তো কাঁদতে কাদতে বেহুঁশ অবস্থা। আয়াশ আর ইনান ভার্সিটিতে এসে দেখে আদ্রি আর ইনশিরা বসে আছে।ইনশিরা অনবরত কান্না করছে। আদ্রি পাশে বসে থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ও থামছেই না।ইনান আর আয়াশ এসে দুটো চেয়ার টেনে ওদের পাশে বসেছে। ইনানকে দেখেই ইনশিরা ওকে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে বলল

“দোস্ত তুই না থাকলে আমার মনে হয় গলায় দড়ি দেওয়া লাগতো।”

“ধূর পাগলি তোর তো কিছু হয় নি।সো চিল এতো প্যারা নিস না।”

ওদের কথার মাঝখানে আদ্রি বলে উঠলো

“আমিই ভালো কোনো প্রেম টেম করি নি।”

আয়াশ ওর কথার মাঝে খোঁচা লাগিয়ে বলল

“করবি কেমনে তুইতো মুটকি তোরে তো কেউ পাত্তা দেয় না।”

আদ্রি রেগে বলল

“লাত্তি চিনোছ?”

আয়াশ বত্রিশ দাত বের করে বলে

“না রে চিনি না কিন্তু ইয়া জোরে একটা দিতে পারি।”

ওর কথা শুনে ইনশিরা আর ইনান হেসে দেয়।ইনশিরার হাসি দেখে সবারই ভাল্লাগলো।তারপর ইনান বলল

“গাইস চল কিছু খেয়ে আসি।”

আয়াশ সবার আগে লাফিয়ে উঠে বলল

“চল, চল এখনি চল।”

আদ্রি মুখ ভেংচি দিয়ে বলল

“খালি খাই আর খাই।”

“তোর টাকা দিয়াতো আর খাই না।”

“আমার টাকা দিয়া না খাস কি খাস তো।”

এবার ইনশিরা ইনানকে বলল

“দোস্ত আমাকে একটু বাসায় দিয়ে আয়।”

ইনান ভ্রুকুচকে বলল

“এখনি চলে যাবি?”

“হ্যা, ভালো লাগছে না।”

ইনান সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

“উল্টাপাল্টা কিছু করবি না তো?”

“না কিচ্ছু করবো না।”

“আচ্ছা চল।”

ইনান আয়াশ আর আদ্রিকে উদ্দেশ্য করে বলল

“তোরা এখানেই থাক আমি ওকে দিয়ে আসি।”

তারপর ওরা বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।আদ্রি আর আয়াশ ওদের ক্লাসে যায়।কিন্তু ক্লাসের দরজা খুলতেই যা দেখলো তাতে আদ্রি অনেক জোরে একটা চিৎকার দিতে নিলেও পারলো না কারণ আয়াশ এক হাত দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরেছে।তারপর মুখ চেপে কানে কানে বলল

“দোস্ত আস্তে আস্তে আয়।আমার পিছন পিছন একদম শব্দ করবি না।”

আদ্রিও মাথা নাড়ায়।তারপর ওরা পা টিপে টিপে ক্লাস রুমের শেষ মাথায় যাচ্ছে। মনে হচ্ছে দুজন চোর ধরতে যাচ্ছে। আয়াশ ইরা আর জয় ওদের একটু পিছনে দাড়িয়ে বলল

“কি করছিস রে তোরা?”

ওর কথায় দুজনই হকচকিয়ে যায়।কারণ ওরা কিস করছিলো। তারপর জয় বিরক্ত হয়ে বলল

“আসার আর টাইম পাস নাই শালা।”

আদ্রি বলল

“তোমরা এমন খুল্লাম খুল্লাম রোমান্স করবা আর আমরা কইলেই দোষ।”

“তোরা নক করে ঢুকবি তো।”

আয়াশ ওর মাথায় গাট্টা মেরে বলল

“এইটা কি তোমার বেডরুম পাইছো যে নক করমু।”

আদ্রি জয়কে খোচা মেরে বলল

“তো দোস্ত মধু কতটুক খালি?”

জয় রেগে রেরিয়ে যায় আর ইরা অন্য একটা বেঞ্চ বসে পড়ে।আয়াশ আদ্রির কথায় হাসতে হাসতে বলল

“মধু তো খাইতেই পারে নাই।এই জন্যইতো এমন শকুনের মতো মুখ করে চলে গেছে। ”

তারপর আয়াশ আর আদ্রি পিছনের বেঞ্চে বসে পড়ে।একটু পর ইনান এসে ওদের সামনের বেঞ্চে বসে।ওরা চারজন সবসময়ই পিছনের দুইটা বেঞ্চে বসে তাই কেউ ভুলেও ওই বেঞ্চ গুলোতে বসে না।ইনান বসতে বসতে বলল

“দোস্ত আজকে তো ক্লাস টেস্ট তোরা কিছু পারিস?”

আদ্রি মাছি তাড়ানোর ভঙ্গি করে বলল

“এটা কাশফা ইবনাত আদ্রাহার কাছে কোনো ব্যাপারই না।”

“এইজন্যইতো ফেল করো।” (আয়াশ)

আয়াশের কথা শুনে ইনান আর আয়াশ দুজনই হাসতে থাকে।আর আদ্রি মুখ লটকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে।দুইমিনিট পর আয়াশ একটু চিল্লিয়ে বলল

“ফারা আ আ..”

আদ্রি আর আতঙ্কে বলল

“দোস্ত ফারা কই শার্টে নাকি প্যান্টে তাড়াতাড়ি বল।কেউ দেখলে শর্বনাশ হয়ে যাইবো।আর ইজ্জত যাইবো গা।”

ইনান আদ্রির মাথায় গাট্টা মেরে বলল

“আরে ওই যে দেখ ফারা আসছে।দেখিস এসেই আমার পাশে বসে পড়বে।”

ইনানের কথা সত্যি করে দিয়ে আসলেই ফারা ইনানের পাশে এসে বসল আর হাসিমুখে বলল

“হাই ইনান।”

ইনান না পারতে বলল

“হাই।”

বেচারা ইনানের ফেস দেখে আদ্রি আর আয়াশ সেই মজা নিচ্ছে। ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। আদ্রি পিছন থেকে বারবার ফারার চুল টান দিচ্ছে। আর ফারা পিছন ঘুরতেই আদ্রি মনে হয় কিছু জানে না এমন ভাব ধরে আছে।এটা দেখে ইনান আর আয়াশ খুব কষ্টে হাসি কন্ট্রোল করছে।ফারা একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বলল

“ইনান চলোতো এখানে বসবো না।”

ইনান সোজাসাপ্টা উত্তরে বলল

“তোমার ইচ্ছা হলে তুমি যাও আমি যাবো না।”

ফারা রাগে ফুসতে ফুসতে চলে গেলো।”

আদ্রি হাসতে হাসতে ইনানের সাথে হাই ফাইভ করলো।

দ্বিতীয় ক্লাসে ওদের পরীক্ষা। ওরা তিনজনই পরীক্ষা শেষ করে বেরিয়ে পড়লো আজকে আর ক্লাস করবে না।বের হতেই আদ্রি ইনানকে জিগ্যেস করলো

“ইনশু ঠিক আছে তো?”

“হুম ঠিক আছে।বাসায় দিয়ে আসছি।আন্টি জিগ্যেস করছিলো কি হইছে আমি শরীর খারাপ বলে চালাইছি।

আয়াশ ইনানের কাধে হাত রেখে বলল

” ভালোই করছিস।”

ওরা তিনজন হাটছিলো হঠাৎ করেই ইনানের ফোনে একটা কল আসে।ইনান ফোন রিসিভ করে কথা বলতেই ওর চেহারার রং পাল্টায়।ও ফোন রেখেই আদ্রি আর আয়াশকে বলল

“দোস্ত ইনশু হসপিটালে।”

তারপর…….

চলবে….🍂

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা_মালিহা_খান❤️ #পর্ব-৪৪[অন্তিম পর্ব]

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৪৪[অন্তিম পর্ব]

বছর পেরিয়ে আবারো এসেছে বসন্ত।পাখির কলতানে মুখরিত চারিপাশ।আকাশ একেবারে স্বচ্ছ।
নীল সাদা মেঘেদের অবিশ্রাম আনাগোনা।বাগানের নরম সবুজ ঘাসের উপর দুহাঁটু গেড়ে করে বসে আছে মায়া।হিমেল হাওয়ায় চুল উড়ছে তার।দুহাত সামনের দিকে বাড়িয়ে রেখেছে সে।ঠোঁটের কোঁণে প্রসারিত হাসি টেনে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলছে,
—“আসো আম্মু তাড়াতাড়ি আসো”

সামনেই লাল ফ্রক পরিহিত এক বছর দুইমাসের ছোট্ট স্নিগ্ধা।এলোমেলো পা ফেলে মায়ের দিকে দৌড়ে আসছে সে।তার পাশে পাশেই আছে ইতি।স্নিগ্ধা হোঁচট খেলে যেন ধরতে পারে সেজন্য।
একেবারে ভালোকরে এখনো হাঁটতে শিখেনি স্নিগ্ধা।তবে আধো আধোভাবে পারে।

কাছাকাছি আসতেই তাকে দুহাতে জড়িয়ে কোলে তুলে নিল মায়া।মাথার ঝলমলে বাদামী রংয়ের চুলগুলো হাত দিয়ে আঁচড়ে দিয়ে গালে চুমু খেতেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো স্নিগ্ধা।ছোট্ট ছোট্ট নরম হাতগুলো দিয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে বুকে মুখ লুকালো।

একটু দূরেই জ্যাক আর জেনির মাঝখানে হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে আয়ান।দুহাতে জেনির বড় বড় কানদুটো ধরে রেখেছে সে।জেনিও স্বআনন্দে মাথা পেতে রেখেছে।তাকে মেরে ফেললেও বোধহয় আয়ানের কোনো ক্ষতি করবেনা সে।

খানিকবাদে ইতির দিকে তাকালো মায়া।ক্লান্ত কন্ঠে বললো,
—“আয়ান কে নিয়ে আসোতে ইতি।জেনিটা ব্যাথা পাচ্ছে কানে।”

ইতি যেয়ে আয়ান কে নিয়ে আসতেই সে একটা রাগি দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করলো।একদম বাবার মতো রাগি হয়েছে ছেলেটা।আরিয়ানের মতোই কাটাকাটা চেহারা।তার মতো নাক ঠোঁট।কিন্তু চোখগুলো মায়ার মতো।
ওরা টুইন হলেও দুজনের চেহারায় তেমন মিল নেই।স্নিগ্ধা মায়ের মতো দেখতে আর আয়ান বাবার মতো।

ছেলের নাম আরিয়ানের সাথে মিলিয়ে রাখলেও মেয়ের নাম আরিয়ান নিজেই রেখেছে।মেয়েকে দেখলেই নাকি স্নিগ্ধতায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় তার চারিপাশ।তাই “স্নিগ্ধা” নামটাই রেখেছে সে।
_____________

সারাদিনের অফিস শেষে বাড়িতে ফিরেছে আরিয়ান।রুমে ঢুকে দেখে রুম ফাঁকা।
মায়া তো নেই-ই সাথে বাচ্চারাও নেই।দুবার গলা ছেড়ে মায়াকে ডাকলো আরিয়ান।কোনোরূপ সাড়া না পাওয়ায় কপালে সুক্ষ্ণ চিন্তার ভাঁজ পরলো তার।
শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বেরিয়ে পরলো সে।উপর থেকে নিচে তাকাতেই দেখতে পেলো হলরুমের সোফায় আয়ানকে সাথে নিয়ে টিভি দেখছে ইতি।তখন দ্রুত উপরে আসায় খেয়াল করেনি সে।আরিয়ান সেখান থেকেই ডাকলো,
—“ইতি?”

আরিয়ানের ডাকে দ্রুত ফিরে তাকালো ইতি।টিভির সাউন্ড একটু কমিয়ে নরম গলায় বললো,
—“জি ভাইয়া বলেন।”

—“মায়া কোথায়?

—“আপু তো রুমেই।উনার নাকি ঘুম আসছিলো।”

একমূহুর্ত ভাবে আরিয়ান।ব্যালকনিটা চেক করে আসা উচিত ছিলো তার।আবারো ইতির দিকে তাকিয়ে তীর্যক কন্ঠে সে বলে,
—“আর স্নিগ্ধা?”

—“আপুর কাছেই।”

“ওহ আচ্ছা”বলে রুমে ঢুকে আরিয়ান।সোজা যেয়ে ব্যালকনির দরজা খুলতেই ঠোঁটে কোঁণ ঘেঁষে গাঢ় হাসির রেখা ফুটে উঠে।দোলনায় দু পা ভাঁজ করে তুলে ঘুমিয়ে আছে তার মায়াবতী।তার কোলেই স্নিগ্ধা।পরণের সাদা ওড়না পড়ে গিয়ে স্নিগ্ধার মাথার উপর লেপ্টে রয়েছে।তার ছোট্ট পুতুলটা ঘুমোয়নি।পিটপিট করে চেয়ে আছে।তবে মায়ের ঘুমে যাতে সমস্যা না হয় সেজন্য কোনোরকম শব্দও করছেনা সে।চুপটি করে পুতুলের মতো বসে আছে।আরিয়ান কাছে যায়।স্নিগ্ধার মাথার উপর থেকে ওড়নাটা সরাতেই আস্তে করে তার দিকে দু হাত বাড়িয়ে দেয় স্নিগ্ধা।যার অর্থ”কোলে নাও আমাকে”।আরিয়ান একহাতে মেয়েকে কোলে নেয়।তার বুকে মুখ গুঁজে রাখে স্নিগ্ধা।
আরিয়ান একটু ঝুঁকে।মেয়ের অগোচরে সেকেন্ডের মাথায় মায়ার কপালে চুমু খেয়ে ক্ষীণ স্বরে ডাকে,
—“মায়াবতী?উঠো।”

তার একডাকেই চোখ খুলে মায়া।জড়ানো কন্ঠে বলে,
—“আপনি…আপনি কখন আসলেন?”

—“এখনই আসলাম।তুমি উঠে রুমে যেয়ে ঘুমাও।এখানে গরম।অসুস্থ হয়ে যাবা।”

দুহাতে চোখ কচলে উঠে দাড়ায় মায়া।রুমে যেয়ে দ্রুত আরিয়ানের জামাকাপড় বের করে দিয়ে বলে,
—“আপনি যান।শাওয়ার নিয়ে আসেন।আমি খাবার রেডি করছি”।

স্নিগ্ধাকে কোল থেকে নামালো আরিয়ান।বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো,
—“কিছু করা লাগবেনা তোমার।আপাতত একটু ঘুমাও।তারপর রাতের খাবারটা খেয়ে ভালোমতো ঘুমিও।”

—“আপনি যানতো।গোসলে যান।বাচ্চারাও খায়নি।ক্ষুধা লেগেছেনা ওদের।খাওয়াতে হবে তো।”

আরিয়ান হাসে।তার মায়াবতীটা এক বছরেই কতটা বড় হয়ে গেছে।বাচ্চাদের খেয়াল রাখায় কোনরকম ক্রুটি হয়না তার।সবদিকে খেয়াল থাকে।একেবারে সবদিকে!শুধু নিজের খেয়াল রাখতে ভুলে যায়।আর সেই খেয়ালটাই রাখার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আরিয়ানের।

——————
খাওয়া দাওয়া শেষ।রুমে চলে এসেছে তারা।
স্নিগ্ধাকে একপায়ের উরুর উপর বসিয়ে রেখেছে আরিয়ান।সবে ছোট্ট ছোট্ট দাঁত উঠা শুরু হয়েছে তার।তা দিয়েই আরিয়ানের ডানহাতের বুড়ো আঙ্গুলের নিচের অংশ ক্রমাগত কাঁমড়ে চলেছে সে।আরিয়ান মুচকি হেসে মেয়ের কামড়াকামড়ি দেখছে।
আয়ান বসে আছে বিছানার মাঝখানটায়।নিজের বুড়ো আঙ্গুলট চুষছে সে।লোল দিয়ে ঠোঁট মাখামাখি।

আরিয়ানের হাতে পানির গ্লাস দিয়ে আয়ানের কাছে যায় মায়া।আঙ্গুলটা মুখ থেকে বের করে ওড়না দিয়ে হাত মুখ মুছিয়ে দেয়।আয়ান বড় বড় চোখের পলক ফেলে মায়ার দিকে তাকায়।মায়া হেসে ফেলে।বলে,
—“দেখেন,আপনার ছেলে কিভাবে তাকাচ্ছে!”

ঘাড় বাকিয়ে তাকায় আরিয়ান।বলে,
—“ওকে দাওতো আমার কাছে।ও তো আমার কোলেই আসেনা।”

মায়া আয়ানকে নিয়ে আরিয়ানের আরেকপায়ের উরুর উপর বসিয়ে দিতে দিতে বললো,
—“শুধু আপনার না।ও কারো কোলেই যেতে চায়না।একা একাই খেলতে পছন্দ করে।”

আরিয়ান ঝুঁকে গিয়ে আয়ানের কপালে চুমু খায়।বলে,
—“তাই নাকি বাবা?মা কি সত্যি বলছে?।”

উওরে উল্টাপাল্টা শব্দে আওয়াজ করলে আয়ান।আরিয়ান কিছু না বুঝলেও ঠোঁট এলিয়ে হাসলো।

চুলগুলো হাতখোপা করতে করতে আরিয়ানের ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা জামাকাপড় গুলো লন্ড্রিবিনে রাখলো মায়া।ড্রেসিংটেবিল থেকে একটা চুলের কাঁটা নিয়ে চুল গুলো আটকে নিল।
আরিয়ান তার দিকে ইশারা করে বাচ্চাদের বলছে,”এটা কে বলতো?এটা “মা”,বলতো “মা” বলো বলো “মা” বলো।স্নিগ্ধা হাতটা কাঁমড়ে ধরেই ফ্যালফ্যাল করে আরিয়ানের দিকে চেয়ে রয়েছে।আয়ানের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।সে আপনমনে আরিয়ানের বুকের গেন্জি ধরে মুচরামুচরি করছে।

কয়েকদিন যাবতই বাচ্চাদের “মা”,”বাবা” বলানোর জন্য উঠে পরে লেগেছে আরিয়ান।সে শুনেছে যেই জিনিস বাচ্চারা বেশি শুনে সেটাই তারা বলতে চেষ্টা করে।তাই রাতের বেলা বাচ্চাদের কাছে পেলেই তাদের কানের কাছে “মা”,”বাবা” বলে বলে মুখ ব্যাথা বানিয়ে ফেলে আরিয়ান।আজও তার ব্যাতিক্রম নয়।

মায়া কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসে।বলে,
—“ওদের যখন বলার তখন এমনেই বলবে।বুঝলেন?”

আরিয়ান তার কথা তোয়াক্কা করেনা।স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে আগ্রহ নিয়ে বলে,
—“বলোতো আম্মু,মা বলো।মা…”।

মায়া ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে উঠে যেতে নিলেই স্নিগ্ধা আধো আধো স্বরে “মা” বলে ডেকে উঠে।পরমুহূর্তেই হাসির ঝলকানি দিয়ে উঠে আরিয়ানের মুখে।মায়া ধপ করে ফ্লোরে বসে।বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে স্নিগ্ধার দু গালে হাত রেখে বলে,
—“কি বললো ও?”

আরিয়ানের বলার আগে স্নিগ্ধা আবারো বলে উঠে”মাআ…মা”।
এবার আর নিজেকে আটকাতে পারলোনা মায়া।সশব্দে কেঁদে উঠলে সে।মায়ার কান্না দেখে ভয় পেয়ে গেলো স্নিগ্ধা।তার চেহারাও কাঁদো কাঁদো হয়ে এলো।আরিয়ান স্নিগ্ধাকে জড়িয়ে ধরা হাতটা দিয়েই মায়ার মাথায় হাত রাখলো।নরম কন্ঠে বললো,
—“মায়াবতী,কাঁদেনা।বাচ্চারা ভয় পেয়ে যাবেতো।”

মায়ার কান্না থামেনা।প্রথমবার “মা” ডাক শোনার অনুভূতিতে কি এতোটাই প্রশান্তির?নিজেকে কেমন পূর্ণ পূর্ণ লাগছে।মনে হচ্ছে জীবনে আর কিছু চাওয়ায় নেই তার।সব পেয়ে গেছে সে!সব!

মায়ার কান্না থামছে না দেখে আরিয়ান এবার প্রগাঢ় কন্ঠে বললো,
—“মায়া আর কাঁদলে কিন্তু আমি রাগ করবো।”

হেঁচকি তুলে কান্না থামায় মায়া।মেয়ের গালে চুমু খেয়ে বলে,
—“থ্যাংকিউ আম্মু।”

আরিয়ান নি:শব্দে হাসে।তার জীবনটা সত্যিই কানায় কানায় পরিপূর্ণ।কোনোকিছুর কমতি নেই।
_______________
বসন্তের সকালবেলার মিষ্টি রোদে ব্যালকনিতে বসে ভেজা চুল শুকাচ্ছে মায়া।ছুটির দিন আজকে।তন্ময় আরিয়ান কেউই অফিসে যায়নি।এখান থেকেই দেখতে পাচ্ছে তন্ময়ের ঘাড়ের উপর বসে সারা বাগান চড়ে বেরাচ্ছে আয়ান।পাশেই ছায়ার নিচে স্নিগ্ধাকে নিয়ে বসে আছে ইতি।
আরিয়ান ঘুমিয়ে আছে রুমে।গভীর ঘুমে আছে দেখে সে আর ডাকেনি।
চুল মুছতে মুছতে হঠাৎই চোখ যায় ব্যালকনিতে সোনালি ফ্রেমে বাঁধানো একটা ছবিতে।সেই তার জন্মদিনে তন্ময়ের হঠাৎ তোলা ছবিটা।অতিরিক্ত পছন্দ হওয়ায় ছবিটাকে প্রিন্ট করে ফ্রেমে বাধিয়ে রেখেছে আরিয়ান।
ব্যালকনির জায়গাটা খুব বেশি পছন্দের মায়ার।তাই এখানেই ছবিটা টাঙিয়ে রাখা আছে।একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে মায়া।কতশত সুন্দর প্রেমময় প্রহর সে পার করেছে এসেছে আরিয়ানের সাথে।

টাওয়ালটা ব্যালকনিতে রেখেই রুমে যায় মায়া।আরিয়ান খালিগায়ে উপুর হয়ে মাথা কাত করে ঘুমিয়ে আছে।
ফর্সা পিঠে অসংখ্য লাল লাল আঁচরের দাগ।এগুলা যে তারই কারুকার্য ভাবতেই হাসি পায় মায়ার।
কাছে যেয়ে আরিয়ানের কপালে আসা চুলগুলো সরিয়ে মাথা নামিয়ে আলতো করে চুমু খায় সে।
উঠে যেতে নিলেই তার একহাত শক্ত করে ধরে ফেলে আরিয়ান।চমকে উঠে মায়া।তারমানে আরিয়ান জেগে আছে?
তার আরো কিছু ভাববার আগেই সোজা ঘুরে একটানে মায়াকে বুকে উপর ফেলে আরিয়ান।দুহাতে কোমড় আঁকড়ে ধরে বলে,
—“আমি কাছে আসলেতো লজ্জায় শেষ হয়ে যান।আর ঘুমিয়ে থাকলে এসব?”

মায়া স্বলজ্জায় অন্যদিকে তাকায়।কি পরিমাণ লজ্জা যে লাগছে তার!আরিয়ান জেগে আছে বুঝলেতো কখনোই চুমু খেতোনা সে।কখনোই না!

—“এদিকে তাকান।”

—“দেখুন,আমি জানতাম না যে আপনি জেগে আছেন।জানলে….”

মায়ার মুখের কথা কেড়ে নেয় আরিয়ান।দুষ্টু কন্ঠে বলে,
—“এখন তো জানেন আমি জেগে আছি।তো,এই জাগ্রত অবস্থায় একটা চুমু খানতো।নয়তো কিন্তু আমি ছাড়বোনা।ঠি ক এভাবেই ধরে রাখবো।”

চোখমুখ কুঁচকে ফেলে মায়া।বলে,
—“আপনিতো প্রচন্ড খারাপ লোক।”

—“খারাপ হলে খারাপ।এখন চুমু দাও নয়তো আমি ছাড়ছিনা।”

কাঁচুমাচু করে তাকায় মায়া।আরিয়ান যখন বলেছে ছাড়বোনা মানে সত্যিই ছাড়বেনা।যতো যাই হোক!
চোখ বন্ধ করে ধীরগতিতে আরিয়ানের কপালে চুমু খায় সে।সাথে সাথেই হাতের বাঁধন আলগা করে দেয় আরিয়ান।মায়া সরে গেলে সেও উঠে বসে।মাথা নুঁইয়ে দাড়িয়ে আছে মায়া।আরিয়ানের মৃদু হেসে বলে,
—“বাচ্চারা কোথায়?”

—“বাগানে”।

—“আচ্ছা যাও তুমি।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে যায় মায়া।মূলত এতক্ষন আরিয়ানের উঠার জন্যই অপেক্ষা করছিলো সে।আরিয়ান বুঝতে পেরেই তাকে যেতে বলেছে।
_______________
যেহেতু ছুটির দিন তাই ঘুরতে বেরিয়েছে তারা।ইতি আর তন্ময় আলাদাভাবে ঘুরতে বেরিয়েছে।তাদেরও তো একটা একান্তে সময় কাটানোর ব্যাপার আছে।তাই তাদের আলাদাই পাঠিয়েছে আরিয়ান।

আরিয়ান আর মায়া বাচ্চাদের নিয়ে বেরিয়েছে।এতক্ষন পার্কে ঘোরাফেরা করছিলো তারা।এখন সন্ধ্যা হয়ে আসছে প্রায়।
মায়ার পরণে গাঢ় নীল শাড়ি,নীল কাঁচের চুড়ি।হাল্কা গোলাপি লিপ্সটিক।চুলগুলো ছাড়া।স্নিগ্ধার সাইজের শাড়ি পায়নি নয়তো তাকেও শাড়ি পরিয়ে দিতো মায়া।তবে শাড়ি না পাওয়ায় নীল রংয়ের ফ্রক পরে আছে স্নিগ্ধা।মাথায় নীল রংয়ের ব্যান্ড।বাদামী চুলগুলোয় ফুটে রয়েছে ব্যান্ডটা।
আরিয়ানের পরণে সাদা পান্জাবি।তার সাথে মিলিয়ে আয়ানের পরণেও সাদা পান্জাবি।সচরাচর পান্জাবি পরেনা আরিয়ান।আজকে মায়ার জোড়াজোড়িতে পরেছে।পান্জাবিতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে আরিয়ানকে।
মায়া নজরই সরাতে পারছেনা।
মায়ার কোলে আয়ান।আর আরিয়ানের পায়ের উপর বসে আছে স্নিগ্ধা।একহাতেই ড্রাইভ করছে আরিয়ান।আর আরেকহাতে মেয়ের মাথায় ক্রমাগত হাত বুলাচ্ছে সে।
আরিয়ান নিচের ঠোঁট কামড়ে মনোযোগ দিয়ে গাড়ি টার্ন নিচ্ছে।হঠাৎই আয়ান চিল্লিয়ে উঠে,
—“বাব…বাব্বা…বাবা।”

হুট করে গাড়ি থামায় আরিয়ান।চমকিত দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
—“ও কি বাবা ডাকলো?”

মায়া খুশিতে বাঁধভাঙা কন্ঠে বলে,
—“জি,বাবা ডাকলো।”

আরিয়ানের ঠোঁটে উজ্জল হাসি।আয়ান আরো কয়েকবার “বাবা,বাবা” ডাকলো।”বাবা” ডাকটাতেই কেমন যেন দায়িত্ব দায়িত্ব ভাব।আরিয়ান শব্দ করে হেসে দেয়।ছেলেকে চুমু দিয়ে বলে,
—“আব্বুটা আমাকে বাবা ডাকছে।শুনছো মায়া।”

মায়া মাথা নাড়িয়ে চোখের কোণের পানিটা মুছে নেয়।দুমিয়ার সকল সুখ যেন তাদের জীবনেই ভর করেছে।


গাড়ি চলছে ধীর গতিতে।রাতের আঁধার নেমে এসেছে শহরজুড়ে।একটা নির্জন রাস্তায় গাড়ি থামায় আরিয়ান।মায়া আশেপাশে চেয়ে বলে,
—“গাড়ি থামালেন যে?”

মায়ার সিটবেল্ট খুলে দিয়ে নিজের সিটবেল্টও খুলে আরিয়ান।বলে,
—“জায়গাটা চিনতে পারছো মায়াবতী?”

আরিয়ানের কথায় ভালোমতো চারিপাশে চোখ বুলায় মায়া।খানিক বাদে জায়গাটা চিনে ফেলতেই সে বলে,
—“এটা তো..”

—“আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো।সেই ব্রিজটা।”

বলেই স্নিগ্ধাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে যায় আরিয়ান।মায়ার পাশের দরজা খুলে তাকেও হাত ধরে বের করে।শাড়ি সামলে একহাতে কুঁচি ধরে দাড়ায় মায়া।আরিয়ান তার এলোমেলো আচঁল ঠি ক করে দেয়।

ব্রিজের রেলিং ঘেঁষে দাড়ায় তারা।ঠান্ডা হাওয়া বইছে।মায়ার চুলগুলো উড়ে যেয়ে আরিয়ানের মুখে উপর আছরে পরছে।দুজনের কোলে দুই বাচ্চা।আজ পূর্ণিমা।চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে চারিপাশ।
মায়া কিছু বলছে না।কখনো কখনো সময়গুলোকে,মূহুর্তগুলোকে নিরব ভাবেই উপভোগ করতে হয়ে।

বেশ কিছুক্ষনের নিরবতা ভেঙে আরিয়ান মোহনীয় কন্ঠে ডাকে,
—“মায়াবতী?”

—“বলেন”।

আরিয়ান মুখে কিছু বলেনা।একবাহু জড়িয়ে ধরে মায়াকে কাছে টেনে নেয়।মায়া মৃদু হেসে তার বুকে মাথা রাখে।দুজনের দু’কাধে মাথা এলিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে বাচ্চারা।
আকাশের দিকে তাকিয়ে আরিয়ান উপলদ্ধি করতে পারে তার আঁধারে ঢাকা জীবনটা আর অন্ধকার নেই।”মায়া”নামের উজ্জল সন্ধ্যাতারাটা তার জীবনটা আলোকিত করে দিয়েছে।
প্রিয় মানুষ পাশে থাকলে জীবন সুন্দর!খুব বেশিই সুন্দর।

________সমাপ্ত________
[আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছেন সবাই?অবশেষে শেষ হয়ে গেলো গল্পটা।গল্প চলাকালীন সময়ে অনেক অনেক ভালবাসা পেয়েছি আপনাদের থেকে।যা একেবারেই আমার ভাবনার বাইরে ছিলো।
আজকে যেহেতু শেষ পর্ব।তাই প্রত্যাশা করছি ভালবাসার মাত্রাটা আজ দ্বিগুন হবে।❤️]

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা_মালিহা_খান❤️ #পর্ব-৪৩

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৪৩

ভীত ভীত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মায়া।মুখে হাসি নেই তার।বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে সে।আরিয়ান ফিরছে না কেনো এখনো!মামা-মামি নিচে ডাইনিং টেবিলে খাওয়া-দাওয়া করছে।বাচ্চাদের নিয়ে সে আর নামেনি।তন্ময় ইতিও নিচে।উপর তলায় শুধু সে আর বাচ্চারা একা।কস্মিককালেও সে ভাবেনি রাহাত তাদের বাসায় আসবে।কিন্তু সে এসেছে।শুধু আসেইনি বর্তমানে সে মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে আছে ঠি ক মায়ার মুখোমুখি।যদিও এখন পর্যন্ত সে উল্টা পাল্টা কিছু বলেনি।তবুও মায়ার ভয় লাগছে।রাহাতকে সে বিশ্বাস করতে পারেনা।সেই ঘটনার বছর পেরিয়ে গেলেও ভয়টা কাটেনি তার।প্রেগন্যান্ট থাকাকালীন একবার মামার বাসায় গিয়েছিলো তখন লাস্ট দেখা হয়েছিলো রাহাতের সাথে।তাও শুধুমাত্র কয়েক মুহুর্তের জন্য।তাদের দেখেই নিজের রুমে চলে গিয়েছিলো রাহাত।পরে আর বের হয়নি।

মায়ার দিকে তাকায়নি রাহাত।কোলে থাকা মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে খেলছে।মায়া থম ধরে সেদিকে চেয়ে আছে।হঠাৎই নিচু কন্ঠে বলে উঠে রাহাত,
—“আমি কিন্তু আপনাকে এখনো ভালবাসি মায়া।”

চট করে মাথা নামিয়ে ফেলে মায়া।অসস্তি শুরু হয়ে যায় তার।উশখুশ করে।রাহাত কেন আবারো এসব বলছে সে জানেনা।
মায়ার নত মুখের দিকে তাকায় রাহাত।ঠোঁটের কোঁণ প্রসারিত করে ডাকে,
—“মায়া?”

একবার তাকিয়ে আবারো মাথা নামিয়ে ফেলে মায়া।মিনমিন কন্ঠে বলে,
—“দেখুন,আপনি দয়া করে এসব আর বলেননা প্লিজ।”

রাহাত কিছুক্ষন চুপ করে থাকে।মেয়েটা তার কোলেই ঘুমিয়ে গেছে।রাহাত হাসে।মায়াকে সে প্রচন্ডভাবে নিজের করে চায়।হয়তো এই চাওয়াটা অনর্থক,নিষিদ্ধ।তবুও নিজেকে বোঝাতে পারেনা সে।হতে পারে এইটা ভালোবাসা না।তার ক্ষনিকের মোহ,মায়ার অতিরিক্ত রুপের কারণে সে তার প্রতি আকৃষ্ট।যাই হোক না কেন,মায়াকে প্রথম দেখেই তার ভালো লেগেছিলো।সেই ভালোলাগাটা এখনো বিদ্যমান।

—“আপনাকে অসস্তিতে ফেলে দিলাম।সরি।নিন মেয়েকে কোলে নিন।ঘুমিয়ে পরেছে।”

মায়া চুপচাপ মেয়েকে কোলে নেয়।রাহাত মুচকি হেসে বলে,
—“আপনার মেয়েটা আপনার মতোই অতিরিক্ত সুন্দরী হবে,দেখেন”।

মায়া কিছু বললোনা।রাহাত আবারো বলে,
—“আমার খুব করে আপনাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে।”
এটুকু বলতেই ভয়ে সিটিয়ে যায় মায়া।চোখ বড় বড় করে রাহাতের দিকে তাকায়।
রাহাত তাড়াহুড়ো করে বলে,
—“আরে না না,আমি সেরকম কিছু করবোনা।আমি জানি আপনি আমার নন।আপনাকে জড়িয়ে ধরার অধিকার নেই আমার।তাছাড়া আপনি কষ্ট পাবেন সেরকম কিছু আমি কখনোই করবোনা।”

একটু শিথিল হয় মায়া।শান্ত কন্ঠে অনুরোধের স্বরে বলে,
—“আপনি প্লিজ এখান থেকে যান।উনি আপনাকে এখানে দেখলে রাগ করবেন।”

রাহাত একটা ফাঁকা ঢোক গিলে।একহাতে মাথা চুলকে বলে,
—“আপনি আমাকে ঘৃণা করেন তাইনা?”

—“নাহ্ ঘৃণা করিনা,তবে ভয় লাগে।”

মায়ার এমন সহজ স্বীকারক্তিতে আরো একবার মুগ্ধ হয় রাহাত।উঠে দাড়ায় সে।মায়া চোখ তুলে তাকাতেই দেখে রাহাত তার চোখের দিকেই তাকিয়ে আছে।ঝট করে অন্যদিকে তাকাতেই রাহাত বলে,

—“আমার অনুভূতিগুলোকে আমি সামলে নিব মায়া।আপনি সুখী হন।আমি নাহয় আমার নিষিদ্ধ প্রণয়টুকু আঁকড়ে ধরে ব্যর্থ প্রেমিক হয়েই থেকে যাব”।

বলে আর একমূহুর্ত অপেক্ষা করেনা রাহাত।হনহন করে বেরিয়ে যায়।মায়া হতভম্ব হয়ে চেয়ে রয়।রাহাতের কথাগুলো মনে মনে আওড়ায়।মাথা চাড়া দিয়ে উঠে।
কষ্ট হলেও কিছু করার নেই তার।আরিয়ানকে ছাড়া আর কাউকে সে কখনোই ভাবতে পারেনা।তার সম্পূর্ণ অস্তিত্বে শুধু সেই ব্যক্তিটিই আছে।

সিঁড়ির কাছে আসতেই রাহাত লক্ষ করে আরিয়ান দ্রুতপায়ে উপরে উঠছে।নামতে গিয়েও থমকে দাড়ায় সে।আরিয়ান তার দিকে ঝলসানো দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করে।

রাহাত ম্লান হেসে বলে,
—“কিছু করিনি ভাইয়া।তোমার বাচ্চাদের দেখতে এসেছিলাম।মাশআল্লাহ খুব সুন্দর ওরা”
বলে চট করে নেমে যায় রাহাত।

আরিয়ান ভ্রু কুচকায়।রাহাতকে কখনো এমন স্বরে কথা বলতে দেখেনি সে।সবসময় একটা রূঢ় কন্ঠে কথা বলে সে।তবে আজকে এমন ভাঙাচোরা কেন তার স্বর?
____________
সারাদিনে রাহাতের ব্যাপারে আর কিছু বলেনি আরিয়ান।মামা-মামি গিয়েছে সন্ধ্যাবেলা।এসে আর শাওয়ার নিতে পারেনি সে।
মাত্র শাওয়ার থেকে বেরিয়ে দেখে মায়া চুল আচরাচ্ছে।বাচ্চারা ঘুমিয়ে আছে খাটের মাঝখানে।
পেছন থেকেই মায়ার পেট জড়িয়ে ধরে আরিয়ান।ঘাড়ে মুখ গুঁজে গভীর অঁধরের স্পর্শ দেয়।ঘাড় কাঁত করে ফেলে মায়া।বলে,
—“আপনার গা ভেজা।আমি ভিজে যাচ্ছিতো।”

—“ভিজুক”।

—“গা মুছে আসেন”।

—“আসেন আমি মুছে দেই”এটাও তো বলতে পারো।”

মায়া দু ঠোঁট চেপে মুখ লটকায়।আরিয়ানের হাত থেকে টাওয়াল নিয়ে আয়না দিয়ে তাকিয়ে আরিয়ানের মতো করেই বলে,”আসেন আমি মুছিয়ে দেই”।

মাথা ঝুকিয়ে হেসে তাকে ছেড়ে দেয় আরিয়ান।টাওয়ালটা নিজের হাতে নিয়ে বলে,
—“হয়েছে লাগবেনা।…কাবার্ড থেকে একটা টি-শার্ট বের করে দাওতো।”

মায়া মুচকি হেসে টি-শার্ট বের করে হাতে দেয়।আরিয়ান তা পরতে পরতে বলে,

—“রাহাত কি বলেছে তোমাকে?”

মায়া কোন দ্বিধা ছাড়াই সবটা বলে আরিয়ানকে।আরিয়ানের কাছে কোনো জড়তা নেই তার।
আরিয়ান মনোযোগ দিয়ে সবটা শুনে।রাগ ওঠলেও প্রকাশ করেনা সে।সবটা বলে মায়া বিষন্ন কন্ঠে বলে,
—“মানুষ কেন ভুল মানুষকে ভালোবাসে বলেনতো?খুব খারাপ লেগেছে উনার কথাগুলো শুনে”

আরিয়ান স্নিগ্ধ ভাবে হাসে।মেয়েটা সত্যিই খুব নরম।খুব বেশিই নরম।তাকে হাত ধরে কাছে টেনে নেয় আরিয়ান।মাথায় হাত রেখে বলে,
—“মন খারাপ করেনা,ও হয়তো ঠি ক কাউকে পেয়ে যাবে সঠিক সময় হলে”।

মায়া ঠোঁট উল্টে তার দিকে তাকায়।মৃদু হেসে বলে,
—“আপনি সত্যিই খুব ভালো।ভেবেছিলাম আমাকে বকবেন।কিন্তু বকেননি।”

আরিয়ান কিছু বলার আগেই চিৎকার করে কান্না জুড়ে দেয় ছোট্ট পরীটা।মায়া হতাশ কন্ঠে বলে,
—“যান আপনার বাবাপাগলী মেয়ের কান্না থামান।আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।”

আরিয়ান হেসে এগিয়ে যেয়ে তাকে কোলে তুলে নেয়।ছেলেটা চুপচাপ ঘুমিয়ে আছে।
মেয়েকে নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ায় আরিয়ান।মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
—“কাঁদেনা আম্মুটা,বাবা এসে পরেছিতো।কান্না থামাও।”

বলতে বলতেই কান্না থেমে যায় মেয়েটার।আরো কিছুক্ষন হাটাহাটি করে তাকে ঘুম পারায় আরিয়ান।কপালে চুমু খেয়ে তাকে নিয়ে রুমে যায় সে।অত:পর বুকে নিয়েই শুয়ে পরে।

~চলবে~

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা_মালিহা_খান❤️ #পর্ব-৪২

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৪২

“আঁধার” শব্দটার মাঝেই লুকিয়ে আছে কিছু সুপ্ত নিকষ কালো রংহীন অনুভূতি।গোটা জীবনটাই যখন একআকাশ আঁধারে ডুবে যায় তখন একটা ক্ষীণ আলোও সেখানে অনেকটা উজ্জল দেখায়।।রাতের অন্ধকার আকাশের বুকে সেই উজ্জল করা ক্ষীণ আলোটা হলো সন্ধ্যাতারা।

_____________
ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখশ্রী।চাঁদের আবছায়া আলোয় এক নিদ্রাচ্ছন্ন মায়াপরী।যার সর্বাঙ্গে বিরাজ করছে সৌন্দর্যের এক অদ্ভুত খেলা।
পাতলা ঠোঁটজোড়ার মাঝখানটায় মৃদু ফাঁক হয়ে আছে।সোজা হয়ে শুয়ে একহাত একপাশে ভাঁজ করে রেখেছে আর আরেকহাত মেলে বাচ্চাদুটোকে বাহুর উপর ঘুম পারিয়ে রেখেছে মায়া।চুপটি করে ঘুমিয়েও আছে দুজনে।

আরিয়ান ঠোঁট এলিয়ে হাসে।জীবন কতটাই না সুন্দর!তার এই ঘুমন্ত পরীটা জীবনে না আসলেও কি সবকিছু এত স্নিগ্ধ লাগতো?একমূহুর্ত অপেক্ষা না করে সজাগ মস্তিষ্ক উওর দিলো,”নাহ্”,কখনোই নাহ্।”

দীর্ঘদিনের অভ্যাসবশত আরিয়ান সর্বপ্রথম ঠোঁট ছোঁয়ায় মায়ার কপালে।মায়ার গাল থেকে হাত না সরিয়েই বাচ্চাদের কপালে চুমু খায়।তার চুমু খেয়ে ছোট্ট আদুরে মেয়েটা একটু নড়েচড়ে উঠে।বারদুয়েক দাঁতহীন মাড়ি দিয়ে ঠোঁট কামড়ে আবারো ঘুমিয়ে পরে।

গালে হিমশীতল হাতের স্পর্শটা অনেকক্ষন যাবতই প্রায় জাগিয়ে তুলছিলো মায়াকে।তবে ঘুমের মাত্রাটা বেশি হওয়ায় চোখ খুলেনি সে।এখন শীতল স্পর্শের সঙ্গে তপ্ত নি:শ্বাসও মুখের উপর আছড়ে পরায় চোখ খুললো সে।তার উপর ঝুঁকে থেকে আধা ইন্চি দুরত্বে অবস্থান করছে আরিয়ান।

হঠাৎই চোখের পলক আটকে যায় মায়ার।আরিয়ানের চোখে ঘোর লাগানো চাহনী।নিমিষেই তাকে লজ্জায় ডুবিয়ে দেয়ার ক্ষমতা আছে সেই দৃষ্টিতে।চোখ নামিয়ে ফেলে মায়া।অষ্পষ্ট কন্ঠে বলে,
—“আপনি…”

বাকি শব্দগুলো বের হবার আগেই তার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয় আরিয়ান।চোখ বন্ধ করে ফেলে মায়া।
এখনও আরিয়ান এভাবে স্পর্শ করলে তুমুল লজ্জা লাগে তার।পাশের হাতটার আঙ্গুলের ভাঁজে আঙ্গুল ঢুকিয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরে রেখেছে আরিয়ান।আর এপাশের হাতে বাচ্চারা শুয়ে আছে আর উপরে আরিয়ান।তথাপি নড়াচড়া করার কোনো সুযোগ নেই।লজ্জা নিবারণের জন্য নখের আচড়ে আরিয়ানের পিঠ ক্ষতবিক্ষত করার উপায়ও নেই।
ধীরগতিতে চুমু খাচ্ছে আরিয়ান।কোন হিংস্রতা নেই সে স্পর্শে আর না আছে কোন তাড়াহুড়ো।
মায়া চোখ বন্ধ করেই রেখেছে।আরিয়ান আস্তে আস্তে তার ঠোঁট ছাড়ে।মোহময় কন্ঠে বলে,
—“মায়াবতী,চোখ খুলো।”

নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে মায়া।চোখ মেলে দৃষ্টি নামিয়ে অন্যদিকে চেয়ে থাকে।আরিয়ান তার চেপে ধরে রাখা হাতটা ছাড়ে।ঠোঁটের কাছে এনে একআঙ্গুল দিয়ে হাল্কা স্পর্শে তার কামড়ে ধরা ঠোঁটটা ছাড়ায়।
তবে চোখ মেলায়না মায়া ।আরিয়ান আরো কিছুক্ষন বিনা শব্দ ব্যায়ে তার মুখের পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে।
ইতিমধ্যেই মায়ার গালদুটো লালবর্ণ ধারণ করেছে।আরিয়ান তার গলায় হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে স্লাইড করে শীতল গলায় বলে,
—“আমার দিকে তাকাও”।

আরিয়ানের শীতল কন্ঠে কেঁপে উঠে মায়া।চট করে তার চোখের দিকে তাকাতেই চারচোখ এক হয়ে যায়।চোখেচোখেই অনুভূতিদের মিলনমেলা হচ্ছে।দৃষ্টির সাথে দৃষ্টি থমকে গেছে।থেমে গেছে সময়।আটকে আছে মূহুর্ত।
বেশ কিছুক্ষন কেটে গেলেও আরিয়ান কিছু বলেনা।একদৃষ্টিতে সে মায়ার চোখের দিকে চেয়ে আছে।
মায়াই চোখ নামিয়ে ফেলে।আমতাআমতা করে নিচু গলায় সে বলে,
—“সরুননা।”

—“কেন?”

—“আপনি জানেননা?”

আরিয়ান ভ্রু উচায়।গালে গাল ঘষে বলে,
—“লজ্জা পাচ্ছো?”

—“সরুন।বাচ্চারা উঠে যাবে।”

আরিয়ান শব্দহীনভাবে হাসে।মায়ার উপর থেকে সরে গিয়ে বাচ্চাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মেয়েকে নিজের কোলে তুলে নেয়।গুটিশুটি হয়ে বাবার সাথে লেপ্টে থাকে সে।
মায়া অকারণেই হাসে।মেয়েটা বাবার খুব আদুরে।ঘুমন্ত অবস্থায় কোলে নিলেও কাঁদেনা।আবার যতই কান্না করুক না কেন বাবার কোলে গেলে চুপ হয়ে যায় সে।মায়া মিষ্টি হেসে ছেলেকে বুকে টেনে নেয়।ছেলেটা আবার তার কাছে থাকতে বেশি পছন্দ করে।
__________________

বাবার বুকের উপর মেয়ে শুয়ে আছে।মেয়ের পিঠে একহাত ঠেকিয়ে আরেকহাতে ফোন চালাচ্ছে আরিয়ান।ছেলেটা তন্ময়ের কোলে।তন্ময়ের কোলে ছেলেকে দিয়ে মায়া গেছে ওয়াশরুমে।সকাল বেলা উঠে ব্রেকফাস্ট টাও করেনি সে।

মেয়েটা খুব চুপচাপ।তবে ছেলেটা খুব ছটফট করে।সারাক্ষণ হাত-পা নাড়ায়।দেখলেই বোঝা যায় খুব দুষ্ট হবে।
চেহারায়ও একটা চন্চলভাব।আর অপরদিকে মেয়েটাকে সেই যে রাতের বেলা আরিয়ান বুকে নিয়ে ঘুমিয়েছে এখন অবধি উঠেনি।

—“ওদের নাম কি রাখবেন ভাই?একসপ্তাহ তো হয়ে গেলো।”।

তন্ময়ের প্রশ্নে ফোন থেকে চোখ সরায় আরিয়ান।বুকের ছোট্ট পরীটার মুখ দিয়ে লোল গড়িয়ে পরছে।হাত দিয়ে তা মুছিয়ে দেয় আরিয়ান।মৃদু হেসে বলে,
—“কি নাম রাখবো তন্ময়?তুই বল কিছু।”

তন্ময় হাসে।আরিয়ান সবচেয়ে বেশি কনফিউজস থাকে বাচ্চাদের ব্যাপারে।এমনে কত শত মিটিং ডিল করে একদিনে।একভাবায় ডিসিশন নিয়ে নেয়।আর বাচ্চাদের বিষয়ে কোন ডিসিশন নিতে গেলে, কিছু করার আগে একশবার ভাবে।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে মায়া।তার চোখেমুখে পানি।টাওয়াল দিয়ে তা মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসছে সে।
মোছা শেষে তন্ময়ের দিকে এগিয়ে যায়।দুহাত বারিয়ে বলে,
—“দিন ভাইয়া।আপনার দেরি হয়ে যাচ্ছে।”।

—“আরে না ভাবি।সমস্যা নেই।আপনি যান নাস্তা খেয়ে নেন।ও থাকুক আমার কোলে।”

—“আপনারা অফিসে যাবেননা?”

আরিয়ান বিছানায় হেলান দিয়েই একটু সোজা হয়ে বসে।মেয়েকে সুন্দরমতো জড়িয়ে নিয়ে বলে,
—“তুমি ব্রেকফাস্ট করে নাও।অফিসের দেরি আছে এখনো।যাও”।

মায়া মাথা নাড়িয়ে বের হতে নিলেই হাতে নাস্তা নিয়ে প্রবেশ করে ইতি।টেবিলে রেখে বলে,
—“আপনার খাবারটা আপু।কষ্ট করে নিচে নামতে হবেনা।”

মায়া মুচকি হেসে বসে পরে।সে খাচ্ছে তখনই তন্ময় বলে,
—“বাচ্চাদের নাম ঠিক করেছেন ভাবি?”

মুখে খাবার নিয়েই তাকায় মায়া।বলে,
—“নাতো ভাইয়া।”তারপর আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,”উনি যা বলবেন তাই রাখবো।”

তন্ময় আবারো হাসে।বলে,
—“ভাই তো নিজেই জানেননা”।

মায়া বোকা হাসে।বাস্তবিকই এ বিষয়ে কিছু ভাবেনি সে।অনেকক্ষন গল্পগুজব করলেও নাম ঠি ক করতে পারলোনা তারা।অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো এ নিয়ে পরে কথা হবে।আপাতত থাক!
________________
বিপত্তি বাঁধে মেয়েকে নিয়ে।আরিয়ান কোল থেকে নামাতেই কান্না জুড়ে দিয়েছে সে।চিৎকার করে কান্না করছে।মায়া হাজার চেষ্টা করেও কান্না থামাতে পারছেনা।উপায় না পেয়ে তাকে তাকে আবারো বুকে জড়িয়ে নিল আরিয়ান।কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করতেই কান্না থেমে গেল।শান্ত হয়ে গেলো একদম।
তাকে কোলে নিয়েই মায়ার সাহায্য শার্ট পরলো আরিয়ান।আরিয়ান হাত বাড়িয়ে দিলে তাকে ঘড়ি পরিয়ে দিল মায়া।মেয়ের দিকে তাকিয়ে ক্লান্ত কন্ঠে আস্তে করে বললো,
—“ঘুমিয়েছে?”

আরিয়ান চোখে ইশারায় “হ্যাঁ” বোঝালো।অত:পর যত্ন করে তাকে বিছানায় শুইয়ে দিল।মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো আরিয়ান।পাশেই শুয়ে আছে বড় ছেলে।যদিও মাত্র তিন মিনিটের ছোট বড় তবুও ছোট বলেই হয়তো মেয়েটা একটু বেশি আদুরে।

__________________
বিকেলবেলা মামা-মামি এসেছেন বাসায়।তাদের আসার খবর শুনেই দ্রুত বাড়িতে ফিরছে আরিয়ান।কারণ ইতির কাছ থেকে সে শুনেছে তাদের সাথে এসেছে রাহাতও…

~চলবে~

আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ #লেখিকা_মালিহা_খান❤️ #পর্ব-৪১

0

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৪১

প্রায় একঘন্টার চেষ্টায় স্বাভাবিকভাবেই ডেলিভারি হলো মায়ার।বাচ্চাদের কান্না শুনতেই একরাশ প্রাণভরা তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো ঠোঁটে।এতোক্ষনের অশ্রুভেজা চোখগুলোতে খেলা করছে এক অনন্যময়ী মাতৃত্বের সুখ।তবে জ্ঞান হারায়নি সে।
ক্লান্ত ভঙ্গিতে বেডে মাথা এলিয়ে দিতেই আরিয়ান তার দিকে ঝুঁকে গেলো।এই একটা ঘন্টা যে সে কিভাবে পার করেছে!একাধারে বাচ্চা আর স্ত্রীর চিন্তা তার মাথায়।

কপালে অধরের স্পর্শ দিতেই মলিনভাবে হাসলো মায়া।কপাল বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পরতেই মায়া আরিয়ানের বাহুতে হাত রেখে বললো,
—“আপনি কাঁদছেন কেনো?”

আরিয়ান মাথা উঠায়না।আজ পর্যন্ত তার কান্না নিজ চোখে দেখেনি মায়া।শুধু দেখেছে তার লাল লাল চোখগুলো।

সে অবস্থাতেই মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আরিয়ান।ধীর কন্ঠে বলে,

—“তোমার খুব কষ্ট হয়েছে মায়াবতী?”

মায়া উওর দেয়ার আগেই দরজা খুলে প্রবেশ করলো ড.মিতালী আর একজন নার্স।আরিয়ান দ্রুত মাথা উঠিয়ে তাকালো।তাদের কোলে সাদা টাওয়ালে পেঁচানো বাচ্চারা।ড.মিতালী এসে আরিয়ানের কোলে একজনকে দিতে গেলেই সে আৎকে উঠে বললো,
—“না,না আমি নিবোনা।ওরা ব্যাথা পাবে।আমার হাত শক্ত।”

আরিয়ানের কথা শুনে হেসে দিল ড.মিতালী।তার পিছে এসে দাড়িয়েছে ইতি আর তন্ময়।আরিয়ান তন্ময়কে
উদ্দেশ্য করে বললো,
—“তুই কোলে নে।”

মায়া এতক্ষন চুপচাপ আরিয়ানের কান্ড দেখছিলো।এ পর্যায়ে এসে হেসে ফেললো সে।বললো,
—‘আমাকে উঠিয়ে বসান।আমি কোলে নিবো ওদের।”

আরিয়ান মায়াকে উঠিয়ে বসাতেই ড.মিতালী একজনকে কোলে দিলেন।আরেকজন তখন তন্ময়ের কোলে।ড.মিতালীর ভাষ্যমতে মায়ার কোলেরজন অপরজনের থেকে তিনমিনিটের বড়।বড়জন ছেলে আর ছোটজন হলো মেয়ে।

অদ্ভুত ভাবে বাচ্চাটার দিকে চেয়ে আছে মায়া।তার কোলে তাদের বাচ্চা ভাবতেই অবাক লাগছে।হাত পা নাড়াচ্ছে বাচ্চাটা।মায়া তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো।কপালে চুঁমু খেলো।
আরিয়ান মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখছে।হঠাৎই তন্ময়ের কোলেরজন কেঁদে উঠে।তন্ময় তার চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে,
—“বাবা কোলে নিচ্ছেনা দেখে কাঁদছো প্রিন্সেস?”

উওরে হয়তো আরো জোরে কান্না করে দিলে বাচ্চাটা।তন্ময় এগিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
—“ভাই,কোলে নেন।আপনি বাবা।আপনিই কোলে নিচ্ছেননা।আপনার মেয়েটাও কাঁদছে।”

আরিয়ান একবার তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে কোলে নিলো তাকে।আশ্চর্যজনকভাবে হলেও বাচ্চাটার কান্না তখনই থেমে গেলো।বাবার বুক ঘেঁষে রইলো সে।আরিয়ান ঠোঁট এলিয়ে হাসলো।একহাতে বুড়ো আঙ্গুল চুষছে বাচ্চাটা আর বড় বড় চোখগুলো ঘুড়িয়ে ঘুরিয়ে আরিয়ানকে দেখছে।
মায়ার ঠোঁটে উজ্জল হাসি।বাবা-মা হওয়ার সুখটা নিজের চোখে দেখছে সে।নিজের বাচ্চা,নিজের একটা অংশকে কোলে নেয়া যে কতটা তৃপ্তিময়!এতো আনন্দ!
_______________

গতকালকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে মায়াকে।শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ মায়া।আর কোন সমস্যা নেই।
বিছানায় বসে একজনকে ফিডিং করাচ্ছে।আরেকজন পাশেই ঘুমিয়ে আছে।ইতি গেছে তার খাওয়ার প্লেটটা নিচে রাখতে।এতক্ষন সেই খাইয়ে দিচ্ছিলো মায়াকে।
জরুরি ফোন আসায় আরিয়ান কানে ফোন নিয়ে ব্যালকনিতে গেছে একটু আগে।অফিস থেকে ফিরেছে সে সন্ধ্যার দিকে।
মায়া অলস ভঙ্গিতে দুই পা ভাঁজ করে বসে আছে।ঘুম আসছে তার।চোখে প্রচন্ড ঘুম।তবুও বাচ্চাটা কাঁদছিলো দেখে ফিডিং করাচ্ছে।নয়তো কথনই ঘুমিয়ে পরতো।ব্যালকনি থেকেই মায়াকে ঘুমে ঢুলে পরতে দেখে দ্রুত ফোন কেটে পকেটে ঢুকিয়ে রুমে আসলো আরিয়ান।বললো,
—“ঘুম আসছে মায়া?তাহলে ঘুমিয়ে পরো।ওকে আমার কোলে দাও।”

মায়া আবছা চোখে তাকালো।জড়ানো কন্ঠে বললো,
—“ক্ষুধা পেয়েছে ওর।কাঁদছিলো তাই খাওয়াচ্ছি।শেষ হলে ঘুমাবো।”

আরিয়ান ছোট্ট একটা শ্বাস ফেললো।মায়ার পিছে বসে তার মাথা নিজের বুকে নিয়ে বললো,
—“ঘুমাও তুমি।ওর খাওয়া শেষ হলে আমি শুইয়ে দিবোনে।”।

মায়া মুচকি হেসে চোখটা বন্ধ করলে সাথে সাথে কেঁদে উঠে পাশে রাখা বাচ্চাটা।দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেদিকে তাকায় মায়া।ততক্ষনে খাওয়া শেষ করে মায়ার দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হাসছে তার মেয়েটা।
আরিয়ান মায়ার কোল থেকে তাকে নিয়ে নিজের কোলে নেয়।মায়ার জামা ঠি ক করে দিয়ে বলে,
—“তুমি একটু শোও মায়া।”

—“ওর ডাইপার চেন্জ করে দিতে হবে।।ডাইপারের প্যাকেটটা একটু এদিকে দেননা।”
আরিয়ান জোর করে মায়াকে শুইয়ে দেয়।নিজেই ডাইপারের প্যাকেটটা নিয়ে বলে,
—“আমি করে দিচ্ছি।”

—“আপনি পারবেননা।”

আরিয়ান একেবারে মায়ার চোখের দিকে তাকায়।মুচকি হেসে বলে,
—“এতবড় বাচ্চাটাকে সামলাচ্ছি আর এই পুঁচকে গুলোকে পারবোনা?নিশ্চিন্তে ঘুমাও মায়াবতী।”

মায়া আর কথা বাড়ালোনা।চুপ করে শুয়ে পরলো।মাথাটা ব্যাথা করছে তার।খানিকবাদেই সে অনুভব করলো একটা শক্তপক্ত হাত তার মাথা টিপে দিচ্ছে।ঘুমের মধ্য চোখ না খুললেও সে বুঝতে পেরেছে এটা আরিয়ান ছাড়া আর কেও নয়।

~চলবে~

[অনেক ছোট হয়েছে আজকে।মন খারাপ করেননা কেউ।খুব ব্যস্ত ছিলাম।একঘন্টায় কোনরকম লিখেছি।এখন মাথাব্যাথা করছে তাই আর লিখতে পারছিনা।কালকে বড় পর্ব দিব ইনশাআল্লাহ❤️।