Friday, December 19, 2025
Home Blog Page 11

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ১৭ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ১৭
#Arshi_Ayat

পাঁচ জনই মালনীছড়া বাগানটা ঘুরলো তারপর পাচভাই হোটেলে গেলো নাস্তা করতে।ইনান আর ইনশিরা একপাশে বসলো আয়াশের সাথে আদ্রি বসতে নিলেই জুই আগে এসে বসে পড়ে।তাই আদ্রি জুইয়ের পাশের চেয়ারে বসেছে।এই জুই মেয়েটাকে আদ্রির কিছুতেই সুবিধার মনে হচ্ছে না।কেনো যেনো মনে হচ্ছে মেয়েটা আয়াশকে লাইন মারার চেষ্টা করছে।

খাওয়া শেষ করে ওরা আবার বেরিয়ে পড়লো বাকি চা বাগান গুলো দেখতে।মালনীছড়ার পাশেই লাক্কাতুরা চা বাগান। শুধু রাস্তার এপাশ ওপাশ। এই বাগানটা সিলেট শহরের উত্তর প্রান্তে।২৯৩ হেক্টর বা প্রায় ৩২০০ একর জুড়ে এর অবস্থান।এখানে চা চাষের পাশাপাশি কমলা,কাঠাল, সুপারিবাগান,ট্যাং ফল,আগর,রাবার,চন্দনও চাষ করা হয়।

লাক্কাতুরায় হাটতে হাটতেই আদ্রি খেয়াল করলো জুই আয়াশের গা ঘেষে হাটছে।কি অসহ্যকর ব্যাপার!!পরক্ষনেই আদ্রি ভাবলো’আরে আমি কেনো জ্বলছি!!আয়াশকে তো আমি ভালোবাসি না তবে আমি জ্বলছি কেনো?এটার উত্তর পরে বের করবো আগে এই মেয়েকে শায়েস্তা করতে হবে।

ইনান আর ইনশিরা একসাথে হাটছিলো যদিও ইনশিরার মুখে কোনো কথা নেই।ইনান ই কথা বলছে ইনশিরা শুধু হাটছে।একটু দূরে আয়াশ আর জুই আর জুইয়ের পাশে আদ্রি।আদ্রি সেই তখন থেকে আঙুল কামড়াচ্ছে কি করবে এটা ভেবে।চট করে আয়াশকে ডেকে বলল

“আয়াশ শোন তোর সাথে কথা আছে।”

“হ্যাঁ বল।”

“একটু এই সাইডে আয়।”

আয়াশ বুঝতে পারলো না আদ্রি কেনো ওকে সাইডে ডাকলো তবুও গেলো।আয়াশের সাথে সাথে জুই কে ও আসতে দেখে আদ্রি চিবিয়ে চিবিয়ে বলল

“আপু আপনাকে আসতে বলি নি।শুধু আয়াশ আসবে।”

আদ্রির কথা শুনে মেয়েটা অপমান বোধ করলো তাই আর আসলো না একাই হাটতে লাগলো।আয়াশ সাইডে এসে জিগ্যেস করলো

“বল কি বলবি?”

“প্রপোজ কর।”

আয়াশ কথাটা শুনে যেনো আকাশ থেকে পড়লো।তারপর বিস্মিত চোখে আবার বলল

“কি বললি?”

“বয়রা হয়ে গেছিস কবে থেকে?”

“আদ্রি আবার বল না প্লিজ।”

“বললাম প্রপোজ করতে।”

এক মুহুর্তের জন্য আয়াশের হার্ট চলাচল বন্ধ হয়ে গেলো।দুই মিনিটপর আদ্রি হাত ধরে বলল

“কয়েস ইবনাতের মেয়ে মিস কাশফা ইবনাত আদ্রাহাকে আশরাফ আহমেদের ছেলে আয়াশ আহমেদ ভালোবাসে।”

আদ্রি ভ্রু কুচকে বলল

“আমি বিয়া পড়াইতে কই নাই।প্রপোজ করতে কইছি।”

“ওইটাই তো করালাম।”

“বাল করছো তুমি।এইটা কোন ধরনের প্রপোজ।ঠিক কইরা কর।”

আয়াশ হাসতে হাসতে বলল

“চেতিস না,শোন এখনতো গোলাপ নাই সাথে তাই গোলাপ দিয়া করতে পারমু না চা পাতা দিয়ে করলে হইবো।”

“আকাইম্যা বয়ফ্রেন্ড হইবা তুমি!!চা পাতা লাগবো না এমনেই কর।”

“আচ্ছা দাড়া করতেছি।”

“আমি তোকে কখনোই আই লাভ ইউ বলবো না।তুই বুঝে নিবি আমি কতোটা ভালোবাসি।আমি তোকে মিস করলে কখনোই মিস ইউ বলবো না তুই আমার চোখ দেখে বুঝে নিবি আমি তোকে কতোটা মিস করেছি।আমি তোকে সন্দেহ করবো আগেই বলে রাখলাম কারণ যে সম্পর্কে সন্দেহ নেই সেখানে ভালোবাসাও নেই।আর আমাকে যাদি ছেড়ে যাস চেষ্টা করিস কিচ্ছু বলবো না কারণ আমি জানি তুই আমাকে ছাড়া থাকতে পারবি না।আসতেই হবে তোকে আমার কাছে।তবে তুই যেহেতু প্রপোজ করতে বলেছিস যাহ একবার আই লাভ ইউ বলেই দিলাম।”

আদ্রি হাসতে হাসতে বলল

“আই লাভ ইউ টু।”

আয়াশও হাসছিলো তারপর আদ্রি হাত আরো শক্ত করে ধরে বলল

“আমি বুঝতেছি না তোরে জ্বীনে ধরলো নাকি হঠাৎ তুই আমার প্রেমে পাগলিনী হইলে কেমনে?”

“ভালোবাসলেও দোষ না বাসলেও দোষ।তুই যে আমার বয়ফ্রেন্ড এর জন্য এজন্য নিজেরে ভাগ্যবান মনে করে।”

“আর আমার ভাগ্য একটা আনরোমান্টিক গার্লফ্রেন্ড পাইছি।”

“দুইজনে মিষ্টি হইলে হয় না একজন কাচা মরিচও থাকতে হয়।”

“হ,,এটাতো জানিই মাইয়ারা জন্মগতই কাঁচা মরিচ।”

“বকবক করিস না এখন একটা দৌড় দে।ওরা অনেকদূর চলে গেছে।”

“হুম হাত ধর।”

আয়াশ আর আদ্রি কিছুক্ষণ দৌওড়িয়ে তারপর ওদের পাশাপাশি চলে এলো।আয়শাকে দেখে জুই বলল

“আপনার আসতে এতো সময় লাগলো কেনো?”

“এমনিই কথা বলছিলাম তো।”

“ওহ!!আচ্ছা।”

জুইয়ের সাথে কথা বলতে বলতে আয়াশের চোখ আদ্রি দিকে যাওয়া মাত্রই আয়াশ ভয় পেলো।আদ্রি ওর দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আয়াশ আদ্রি আর জুইয়ের মাঝে হাটছে।হুট করে আদ্রি আয়াশ আর জুইয়ের মাঝে ঢুকে গেলো।এতে জুঁই ভিষণ বিরক্ত।জুই এবার ওদের মাঝে ঢুকতে গেলেই আদ্রি চট করে আয়াশের হাত ধরে নিলো।তারপর জুই কে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল

“অন্যের জিনিসের উপর চোখ না দেওয়াটাই ভালো।”

জুই কথাটার অর্থ বুঝেও না বোঝার ভান করে আয়াশের আরেক পাশে চলে এলো।আদ্রি প্রচুর রেগে গেলো।আদ্রি রাগ দেখে আয়াশ কানে কানে বলল

“কুল, এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো?আমাকে তো আর নিয়ে যাচ্ছে না।”

“কিন্তু ও তোর পাশে হাটবে কেনো?”

“বাহ!!এতো জেলাস?”

কথাটা শুনে আদ্রি কিছু বলল না।সত্যিই তো আদ্রিতো আয়াশকে ভালোবাসে না তাহলে জেলাস কেনো!!সে তো শুধু জুই কে শায়েস্তা করার জন্যই এটা করলো।তবে আয়াশ আজ খুব খুশি এটা ওর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।আদ্রি ভাবছে বাসায় গিয়ে সব বলে দেবে কেনো সে আয়াশকে প্রপোজ করতে বলেছিলো।কিন্তু আয়াশের খুশী দেখে দ্বিধাদ্বন্ধে পড়ে গেলো।

মোটামুটি সবগুলো চা বাগান ঘোরা শেষ।ওরা সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে আবার বেরিয়ে পড়লো হযরত শাহজালাল ও শাহপরানের মাজার দেখতে।এটা সিলেট শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে।মাজার শরীফ দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে গেলো।সবাই ক্লান্তি নিয়ে হোটেলে ফিরলো।

রাত ৮.০০ টা…

আদ্রি আয়াশকে পুরো ঘটনাটা বলার জন্য খুজছিলো।কিন্তু রুমে পেলো না।ইনানকে জিগ্যেস করতেই ও বলল যে আয়াশ ছাদে গেছে।তাই আদ্রিও ছাদে উঠতে লাগলো।কাছাকাছি আসতেই আয়াশের গলার স্বর ছাড়াও আরে একটা স্বর শুনতে পেলো।আদ্রি আর দেরি না করে ওদের কথায় আড়ি পাতলো।আয়াশ বলছিলো

“জুই তুমি ভালো মেয়ে।আমার পিছনে ঘোরা বন্ধ করো প্লিজ।আমি আদ্রিকে ভালোবাসা আর ও আমাকে ভালোবাসে।আমি এই রিলেশনে অনেক হ্যাপি।সো প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো!”

“আয়াশ ওই মেয়েটাতো তোমায় ভালোবাসে না।”

“বাসে ও আমাকেই ভালোবাসে।তুমি এখান থেকে যাও প্লিজ।আমার ভাল্লাগছে না।ও দেখে ফেললে অন্যকিছু ভাববে।”

“আয়াশ দেখো এই মেয়েটার জন্য তুমি এক সময় অনেক কাদবে।এই মেয়েটা তোমাকে কাদাবে।মিলিয়ে নিও আমার কথা।”

আয়াশ কিছুই বলল না।জুই রাগে নিচে আসতে লাগলো।জুইকে আসতে দেখে আদ্রি দৌড়ে নেমে গেলো।তারপর রুমে গিয়ে একটা থ্রিপিছ নিয়ে বাথারুমে চলে গেলো শাওয়ার নিতে।আদ্রি ঝর্ণার নিচে দাড়িয়ে ভাবছে’নাহ!!আয়াশ এই সম্পর্কে অনেক খুশী আমি বন্ধু হয়ে ওকে কষ্ট দিতে পারবো না কিন্তু আমিতো এই সম্পর্কে খুশী না।আচ্ছা আয়াশকে কি কোনো ভাবে ভালোবাসা যায়?একবার চেষ্টা করে দেখতে পারি হয়তো ভালোবেসে ফেলেতেও পারি।কিন্তু জুই তখন কি বলল আমার জন্য আয়াশ কাঁদবে!!কিন্তু কেনো?

এদিকে বাইরে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে।আয়াশ দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে গেছে।আর বৃষ্টি দেখে ইনশিরা লাফাতে লাফাতে ছাদে চলে গেছে।ইনশিরা বৃষ্টি দেখলে পাগল হয়ে যায় ভেজার জন্য।ইনানও জানালা দিয়ে দেখলো বৃষ্টি হচ্ছে।তৎক্ষনাৎ ছাদে চলে গেলো কারণ ইনান জানে ইনশিরাকে ঘরে পাওয়া যাবে না।সত্যি সত্যি ইনান গিয়ে দেখলো ইনশিরা অন্ধকারে দুহাত মেলে দিয়ে ভিজছে।অন্ধকার তবুও ইনানের খুব ভালো লাগছে।ইনান ইনশিরার পিছনে গিয়ে দাড়িয়েছে।ইনশিরা ভিজতে ভিজতে পিছনে ফিরে তাকাতেই ইনানকে দেখলো।নিজের দুইহাতে ইনানের গলা ধরে লাফাতে লাগলো।ইনশিরা যখন খুব খুশী হয় তখন আর কিছুই মনে থাকে না খুশীর ঠেলায় এমন লাফায়।ইনশিরা লাফাতে লাফাতে ইনানের পায়ে পাড়া দিয়ে ফেললো।ইনান আ.. আ..আ..করে চিৎকার দিয়ে উঠলো।ইনানের চিৎকারে ইনশিরার হুশ আসলো।তারপর ভ্রু কুচকে বলল

“তুই এখানে কেনো?”

“এমনেই ভিজতে আসছি।”

“যা এখান থেকে।”

“যাবো তবে তোকে নিয়ে।আর বেশি ভিজলে ঠান্ডা জ্বর আসবে।”

“আসলে আসুক আমি ভিজবো।”

“ও তুই তো এমনে শুনবি না।তোর জন্য অন্য ব্যবস্থা করতে হবে।”

ইনশিরা চিবিয়ে চিবিয়ে বলল

“আসছি।”

তারপর দুজনেই নেমে গেলো ছাদ থেকে।একটুপর আদ্রি ইনানাদের রুমে এসে বলল

“দোস্ত ইনশু অজ্ঞান হয়ে গেছে।”

ইনান সবে মাত্র কাপড় পাল্টে বসেছে।এই কথা শুনে আর বসতে পারলো না।আয়াশ ইনান আদ্রি তিনজনই ইনশিরার কাছে চলে গেলো।

চলবে….🍂

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আর কালকের পর্বে আমি বিশ্বকাপ নিয়ে একটা কথা লিখেছিলাম অনেকেই বলেছেন তথ্যটা ভূল।আমি তথ্যটা উইকিপিডিয়া থেকে নিয়েছি সো ভুল হলে ক্ষমা করবেন।)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ১৬ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ১৬
#Arshi_Ayat

বাস ইতিমধ্যেই ছেড়ে দিয়েছে।ইনান বাসের সাথে সাথেই দৌড়াচ্ছে কিন্তু বাসটা ধরতে পারছে না।এদিকে ইনশিরা বাসে উঠে ক্লান্ত শরীরটা সিটে এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়লো।ইনানকে এভাবে দৌড়াতে দেখে একটা মহিলা বাস থামাতে বলল।বাস থামতেই ইনান এক লাফে বাসে উঠে গেলো।তারপর পিছনের দিকে চোখ দিতেই দেখলো তার পরাণ টা ঘুমিয়ে আছে।মুহুর্তেই রাগও উঠে গেলো কিন্তু ইনান রাগটা প্রকাশ না করেই ইনশিরাকে কোলে তুলে নিলো।ইনশিরা গভীর ঘুমে সে কিচ্ছু টের পাচ্ছে না।ইনান ইনশিরাকে কোলে নিতেই তিন চারটা লোক এসে বলল

“কি ভাই!!মেয়েটাকে এভাবে নিয়ে যাচ্ছেন কেনো?”

“আরে ভাই বউ রাগ করে চলে যাচ্ছে আমাকে না বলেই সেই জন্য নিতে আসছি।”

লোকগুলো সন্দিহান চোখে জিগ্যেস করলো

“সত্যি তো?”

“হ্যাঁ ভাই সত্যি।”

“তাইলে এই মেয়েরে ডাকেন সে যদি বলে তাহলে নিয়া যাবেন।”

“কি মুসিবত আরে মিয়ে ওরে ডাকলেতো ঘুম ভেঙে যাবে।”

“গেলে যাক কিন্তু ডাকতে হবে।”

ইনান মহা ঝামেলায় পড়লো।ইনশিরাকে এখন জাগালে তুলকালাম বাধিয়ে ফেলবে।তবুও ভয়ে ভয়ে ডাকলো

“বউ ও বউ ওঠো।”

“……”

“সোনা একটু বলে দাও তুমি আমার বউ তাহলেই হবে।”

ইনশিরার গভীর ঘুমে আছে।ঘুমের ঘোরেই বলে উঠলো

“শালা সর সামনে থেকে।যাইতে দে।”

ইনশিরার কথা শুনে ইনান বিস্মিত।তবে বিষ্ময়টা কাটিয়ে সামনের লোক গুলোকে বলল

“শুনেছেন এবার বিশ্বাস হলো তো।”

এই বলেই ইনান ইনশিরাকে বাস থেকে কোলে করে নেমে গেলো।ওদের এ অবস্থা দেখে রাস্তায় থাকা কম বেশি সব মানুষই ওদের দিকে তাকাচ্ছে।ইনান ইনশিরাকে নিয়ে হাটতে হাটতে গাড়ির সামনে এসে দেখল আয়াশ আর আদ্রি চিন্তিত মুখে দাড়িয়ে আছে।ওদের দেখে দুজনই দৌড়ে গেলো।তারপর আয়াশ উদ্বিগ্ন গলায় বলল

“কি হইছে ওর?কই পাইছিস?”

“গাড়িতে বস বলছি।”

আয়াশ আর ইনান বসেছে সামনে আর আরি ইনশিরা পিছনে।ইনান ড্রাইভ করতে করতে সব খুলে বলল ওদের।ইনান আতঙ্কিত হয়ে বলল

“দোস্ত আরেকটু লেট করলেই যাইতো।”

“কিন্তু ও টাকা পাইলো কই?(আদ্রি)

” জানি না ঘুম থেকে উঠলেই জানা যাবে।”

হোটেলে পৌঁছাতে ৮.০০ টা বাজলো ওদের।ইনশিরার ঘুম সাড়ে ৮.০০ টায় ভাঙলো।ঘুম ভাঙতেই দেখলো ও একটা ঘরে আছে কিন্তু এটা ওর ঘর নয় কোথাও যেনো ঘরটাও দেখেছে।ও হ্যাঁ এটাতো সিলেটের ওই হোটেলটা যেটাতে ওরা চারজন উঠে ছিলো কিন্তু ও এখানে কেনো?ও তো রওনা দিয়েছিলো ঢাকার উদ্দেশ্যে।সামনে তাকাতেই দেখলো ইনান মুখে রাগী ভাব নিয়ে বসে আছে ওর সামনে।

এদিকে হোটেলে ফেরার পর আদ্রি ছাদে চলে গেলো।পিছনে আয়াশও গেলো।প্রায় আধঘণ্টা হতে চলল কেউ মুখ দিয়ে কথা বের করছে না।শুধুই নিরবতা।অধৈর্য হয়ে আয়াশ ই প্রথমে বলল

“কি রে আদ্রি কথা বলবি না?”

“তুই ই তো বলছিস না।”

“আমি ভাবছি তুই বলবি তাই আমি বলি নাই।”

“আমিও এটাই ভাবছি।”

“আচ্ছা শোন একটা কথা বলি আমি জানি তখন ইনশুর বলা কথাগুলোর কারণে তুই অস্থির হয়ে আছিস।অবশ্য ওর কথাগুলো সত্যি তবে তুই না চাইলে আমি জীবনেও জোর করবো না।কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বটা সবসময় যেনো এমনই থাকে কোনো কিছুর জন্যই যেনো আঁচড় না আসে।”

আদ্রি একটা প্রশান্তির হাসি হেসে বলল

“বন্ধুত্ব অটুট থাকবে বুঝলি!আচ্ছা বাদ দে শোন কাল সকালে মালনীছড়া চা বাগানে যাবো তারপর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবো।”

“হুম ঠিক বলছিস।কিন্তু সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে তাহলে বেশী মানুষ থাকবে না মজা পাওয়া যাবে।”

আয়াশ আদ্রির সাথে ঠিকই হাসিমুখে কথা বলছে কিন্তু ভেতরটা জ্বলছে।

এদিকে ইনান ইনশিরা কড়া গলায় বলল

“পালিয়েছিলি কেনো?”

ইনশির কিছুটা ভয় পেলেও তা প্রকাশ না করেই বলল

“বুঝতেই পারছিস আমি তোর সাথে থাকবো না এখানে আমার সহ্য হচ্ছে না।”

ইনান বিদ্যৎবেগে উঠে এসে ইনশিরার ঠোঁট দখল করে নিলো।ইনশিরা ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুই বুঝলো না।যখন বুঝলো তখন ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু লাভ হচ্ছে না।ইনান ওর কাজটা করেই যাচ্ছে।টানা পাচমিনিট পর ছেড়ে কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলল

“আর একবার যদি পালানোর চেষ্টা করিস তাহলে ডাবল ডোজ পড়বে।আর কি বললি যেনো আমার সাথে থাকতে অস্বস্তি হচ্ছে?ওয়েট জানু সব সহ্য হবে।আমি কিন্তু এটা করতে চাই নি তুই ই বাদ্ধ করলি।”

ইনান এটা বলেই শক্ত করে ধরে থাকা হাত দুটো মুক্ত করে দিলো।ইনশিরা হাত ছাড়া পেয়েই ইনানের গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মারলো।ইনান গালে হাত দিয়ে ঢলতে ঢলতে বলল

“ইশ!!জামাইরে কি এমনে মারে বল?আচ্ছা সমস্যা নাই দুইটা মারছিসতো এটার শোধ সুদে আসলে তুলবো।”

“জামাই মাই ফুট!তোরে আমি জীবনেও জামাই মানবো না।”

“সেটা পনেরোদিন পরই দেখা যাবে।”

এটা বলেই ইনান রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আর ইনশিরার নিজের উপরেই রাগ লাগছে ইশশ!আরেকটু হলেইতো ইনান আর খোঁজ পেতো না।কিন্তু কি হলো এটা!!

আদ্রি আর আয়াশ ছাদে দাড়িয়ে কথা বলছিলো।হঠাৎ একটা মেয়ে এসে দাড়ালো ওদের সামনে।তারপর হেসে বলল

“হাই আমি জুই।সিলেট ঘুরতে এসেছি।আপনারও বোধহয় সিলেট ঘুরতে এসেছেন?”

“হ্যালো,হ্যাঁ আমরাও ঘুরতে এসেছি।আমি আয়াশ আর ও আমার বন্ধু আদ্রি।”(আয়াশ)

“ও কালকে বোধহয় আপনারা ঘুরতে বের হবেন।যদি কিছু মনে না করেন তবে আমাকেও একটু আপনাদের সঙ্গে নিবেন?”

“হ্যাঁ অবশ্যই, কাল সকালে বের হবো তবে আমরা দুজনে নই আমাদের আরো দুটো ফ্রেন্ড আছে।”

“ও আচ্ছা ওদের সাথে কালকেই পরিচিত হওয়া যাবে।তো চলুন নিচে যাওয়া যাক।”

“হ্যাঁ চলুন।” (আয়াশ)

তিনজনই নিচে নেমে এলো।তারপর যে যার যার রুমে ঢুকে গেলো।রাত নয়টার সময় চারজনই বের হলো শপিংয়ে কারণ কালকে সারাদিন ঘোরাঘুরিতে সময় শেষ হয়ে যাবে।তাই এখনই করতে হচ্ছে।মোটামুটি সবারই কেনাকাটা শেষ।ইনশিরা কিচ্ছু কিনছিলো না কিন্তু ইনানের চাপাচাপির ফলে কিনতে হলো। তারপর হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে যে যার যার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো।

সকাল ৬.০০ টা…

আদ্রি ঘুম থেকে উঠে ইনশিরাকেও ডেকে তুললো।তারপর দুজনেই ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো।আদ্রি অফ হোয়াইট কালারের টপস আর ব্য্লাক জিন্স পরলো আর ইনশিরা নেভি ব্লু কালারের টি শার্ট আর সেম কালারের জিন্স পরলো।দুজনেই পনিটেইল করে চুলগুলো বাধলো।মোটামুটি ওরা তৈরী।

এদিকে আয়াশ চিল্লিয়ে বলল

“শালার পুত আমার আন্ডারওয়্যার কই?”

“আমি মনে হয় আন্ডাওয়্যার বেচি।”

” বল না কই রাখছিস?”

“আমি খাইয়া ফালাইছি।” (ইনান)

“ফাইজলামি না সত্যি কইরা বল কই রাখছিস।”

“ধূর শালা তোর আন্ডারওয়্যার দিয়ে আমি কি করমু ওইটা আমার হয় না।লুজ হয়।”

আয়াশ রেগে বলল

“কি বললি আমি তোর চেয়ে মোটা?”

“আমি এইটা কবে বলছি?”

“তোর কথায় এটাই বোঝাচ্ছে।”,

দুজনে মিলে ঝগড়া করতে করতে রেডি হলো।আয়াশ অ্যাশ কালারের জিন্স আর সাথে হোয়াইট কালারের শার্ট পরলো আর ইনান ব্ল্যাক কালারের প্যান্ট আর স্কাই ব্লু কালালের শার্ট পরলো।দুজনেই রেডি হয়ে।ওদের রুমের সামনে আসতেই ওরা দুজনেই বেরিয়ে পড়লো।চারজন সামনে এগুতেই একটা মেয়ে এসে বলল

” আরে হাই আয়াশ আর আদ্রি আমাকে ফেলেই চলে যাচ্ছেন?”

আয়াশ হেসে বলল

“আপনার কথা ভুলেই গেছিলাম”

তারপর ইনান আর ইনশিরাকে দেখিয়ে দিয়ে বলল

“ওরা আমার আরো দুইটা ফ্রেন্ড।”

ইনান আর ইনশিরা দুজনই জুই এর সাথে কথা বলল এবং পাচজন মিলেই বের হলো।প্রথমে ওরা মালনীছড়া চা বাগানে যাবে।ওরা আম্বখানা পয়েন্ট থেকে সি এন জি নিলো।আজ আর গাড়ি নিলো না।যাইহোক সি এনজিতে চড়ে দশ মিনিটের মধ্যেই পৌছালো মালনীছড়া চা বাগানে।

উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় এবং সর্বপ্রথম চা বাগান মালনীছড়া।সিলেট শহর থেকে খুব কাছেই অনিন্দ্যসুন্দর।প্রায় আড়াই হাজার একর ভুমি স্বত্ব সীমানায় উচু নিচু টিলার পর টিলায় ঘেরা চা বাগানটি।যেনো একটা সবুজ গালিচা।সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই বাগানের পাশেই বিশ্বের অন্যতম সুন্দর স্টেডিয়াম অবস্থিত যেখানে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।

বাগানা প্রবেশ করতেই অদ্ভুত মুগ্ধতা পাঁচজনের গা বেয়ে উপচে পড়লে।চারদিকে সবুজ আর সবুজ।উপরে বড়বড় গাছ আর নিচে আধো আলো আধো ছায়ার সবুজ চাদর।ইনশিরা আর আদ্রি জুতো খুলে ফেললো।মেঠো পথ দিয়ে খালি পায়ে হাঁটতেই একটা ঠান্ডা অনুভুতি বয়ে গেলো শীড়দাড়া বেয়ে।হাটতে হাঁটতে ওরা পাচজনই পূর্বদিকে চলে গেলো।তারপর হাটতে হাটতে একটা গুহার কাছাকাছি চলে এলো।এই গুহাটার নাম হারুং হুরুং।অনেক আগেরগুহা এটা।

হাটতে হাটতেই আদ্রি বেশ কয়েকবার খেয়াল করেছে জুই মেয়েটাকে।মেয়েটা আয়াশের পাশাপাশি হাটছে।আয়াশ এড়াতে চাইলেও পারছে না।

চলবে….🍂

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আজ আরেকটা পর্ব দেবো ভাবছিলাম কিন্তু মাথা ব্যাথার কারণে লিখা হয় নি।)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ১৫ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ১৫
#Arshi_Ayat

ইনশিরা মোটামুটি লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে আদ্রির নীল রঙের একটা থ্রি পিছ পরেছে।তারপর আদ্রি শাওয়ার নিতে গেলো।এদিকে ইনান আর আয়াশ দুজনেরই গোসল শেষ।ইনান চুল ঠিক করতে করতে বলল

“দোস্ত এখন বাইরে গিয়ে খাবো তারপর হোটেলে এসে ঘুম দেবো কালকে রাত থেকে ঠিক করে ঘুম হয় নি।”

“হুম আমারও।এইজন্যই মাথা ব্যাথা করছে।”

“আদ্রির সাথে কথা হইছিলো?”

“না ওই কথা শোনার পর আর কথাই বলে নাই।”

“মামা মাইয়ারা এমনি।দেখিস তোরে না করে দিবে।”

“না করে দিলে কি করমু?”

“জোর করবি বিরক্ত করবি দেখবি কাজ হয়ে গেছে।”

“দোস্ত জোর করেতো ভালোবাসা হয় না।”

“ধূর শালা, কবি বলেছে বিরক্ত না করলে নাকি মেয়েরা প্রেমে পড়ে না।”

“তুই তো আদ্রিরে চিনিসই। এমন করলে উল্টো হাতে চারটা থাপ্পড় দিবে।”

“থাপ্পড় খাইতে পারবা না আবার আসছো প্রেম করতে শখ কতো।থাপ্পড়ের ভয় করলে আমি ইনশুরে নিয়ে পালাইতাম না।আজকে ওর বিয়ে দেখতাম দাড়াইয়া।আরে গাড়িতে থাকতেইতো একটা খাইছি।উফফ জ্বলে গেছে।”

আয়াশ হেসে বলল

“হ গুন্ডা টাইপ মাইয়া।”

ইনান ঠোঁট বাকা করে বলল

“তোমারটাও কম যায় না।”

এদিকে আদ্রি চুল মুছতে মুছতে বলল

“ইনশু চল খেতে হবে কালকে রাত থেকে কিচ্ছু খাস নাই।ইভেন আজকে সকালেও খাস নাই।এখন খেতে হবে।”

“আমার ভাল্লাগছে না।তোরা খেয়ে আয়।”

“এমন বললে হবে না প্লিজ আয় না।দেখ তুই তো ইনানের সাথে রাগ করে আছিস।খাবারের সাথে তো আর না।তো খেতে সমস্যা কোথায়?”

ইনশিরা চিল্লিয়ে বলল

“যা এখান থেকে।”

শত জোরাজুরির পরও আদ্রি ইনশিরাকে রাজি করাতে পারলো না।উদাস মুখে রুম থেকে বের হয়ে দেখে আয়াশ আর ইনান দুজনে একদিকেই আসছে।আয়াশকে দেখে কেমন জেনো অস্থির লাগছে আদ্রির।ইনান এসেই আদ্রিকে জিগ্যেস করল

“কিরে ইনশু কই?”

“ও নাকি খাবে না।”

“কিহ!!সকালেও তো খায় নাই।এই মেয়েটাকে যে কি করতে ইচ্ছা করে।উফফ!!”

“আমি অনেক জোরাজুরি করছি কিন্তু আসছে না।”

“আচ্ছা তোরা দাড়া আমি ওকে নিয়ে আসছি।”

এটা বলেই ইনান রুমে চলে গেলো।আয়াশ আর আদ্রি দাড়িয়ে আছে রুমের বাইরে।কারো মুখে কোনো কথা নাই।দুজনেই নার্ভাস ফিল করছে।এমন কখনো হয় নি আদ্রি আয়াশ চুপচাপ দাড়িয়ে থাকবে।ওরা একসাথে থাকলে সবসময় বকবক করবেই।কিন্তু আজ ব্যাতিক্রম।এদিকে ইনান ঘরে এসে দেখে ইনশিরা শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে।কিন্তু চোখের পাতা নড়ছে।তারমানে ইনান আসছে এটা টের পেয়েই চোখ বন্ধ করে আছে।ইনান মুচকি একটা হাসি দিয়ে ইনশিরার পাশে গিয়ে বসলো।তারপর ভেজা চুলে হাত ঢুকিয়ে বলল

“ইনশু আমি জানি তুই ঘুমাস নি।চল খেতে যেতে হবে।”

“……..”

“ঢং করে লাভ নাই জানু।উঠে পড়ো।”

ইনশিরা এবর চোখ খুলে বলল

“আমি যাবো না বলছি তো তারপরও কেনো জোর করছিস?”

“ও বুঝতে পারছি তুই পায়ে হেটে যেতে চাস না।কোলে করে নিতে হবে।আগে বললেই পারতিস।অবশ্য তুই ওতো মোটা না।কোলে নিয়ে হাটতে অসুবিধা নেই।আর বিয়ের আগে প্র্যাকটিস রাখা ভালো। তাই না!!”

এটা বলে ইনশিরা কে যেই কোলে নিতে যাবে তখনই ইনশিরা চিল্লিয়ে উঠে বলল

“আমি কখন বললাম কোলে নিতে?না একদম কোলে নিবি না আমাকে।”

“তাহলে খেতে আয় আমার সাথে নাহলে জানু বোঝাইতো কি হবে!!”

ইনশিরা রাগে হাত মুট করে ফেললো কিন্তু কিছু বলল না।বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে বের হয়ে গেলো।ইনানও হাসতে হাসতে বের হলো।তারপর চারজনে সিলেট জিন্দাবাজার পানশী হোটেলে খেতে গেলো।সবাই পছন্দমতো খাবার অর্ডার করলো কিন্তু ইনশিরা পাথরের মতো বসে আছে তাই ইনান ওর জন্য আর ইনশিরার জন্য বিরিয়ানী অর্ডার দিলো।সবাই খাওয়া শুরু করলেও ইনশিরা এখনো পাথরের মতো বসে আছে।ইনান ইনশিরার কানে কানে বলল

“আমি কি খাইয়ে দিবো?না মানে তুই যদি এভাবে মুর্তির মতো বসে থাকিস তাহলেতো আমার সেটাই করতে হবে।”

ইনশিরা কিচ্ছু বলল না।চুপচাপ খাওয়া শুরু করলো।ইনানও হালকা হেসে খাওয়া শুরু করলো।ওদের বিপরীত পাশে আয়াশ আর আদ্রি বসে বসে ইনান আর ইনশিরার কাহিনিটা দেখছিলো।আয়াশ দেখছিলো এটা বললে ভুল হবে কারণ আয়াশ বারবার আদ্রি দিকে তাকাচ্ছিলো।কলকে ইনশিরার বলা কথাগুলোর পর থেকে আদ্রি এক সেকেন্ডের জন্যেও আয়াশের সাথে কথা বলে নি যার সাথে সারাদিন ঝগড়া লেগে থাকতো আদ্রির।আয়াশের মনে হচ্ছে সম্পর্কে ফাটল ধরছে।মোটামুটি সবারই খাওয়া শেষ।তারপর সবাই আবার হোটেলে এসে যে যার যার রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লো।আয়াশ আর ইনান দুজনই গভীর ঘুমে।আদ্রিও ঘুমিয়ে গেছে।কিন্তু ইনশিরার ঘুম আসছে না।

বিকেলে ৫.০০ টা….

ইনশিরা শোয়া থেকে উঠে গেলো।এখনো ওরা কেউ ঘুম থেকে ওঠে নি।হঠাৎ করে ইনশিরার মাথায় পালানোর ভূত চড়ে বসলো।ভালোমন্দ কিছু না ভেবেই থ্রি পিছের ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।খুব তাড়াতাড়ি গেট দিয়ে বের হয়ে গেলো।কিন্তু এখন যাবে কোথায় হাতে টাকা পয়সা কিচ্ছু নেই।আবার এখানের রাস্তাঘাটও ভালোমতো কিছু চেনা নেই।হাতঘড়ি চেক করে দেখলো বিকেল সাড়ে পাঁচটা বাজে।সাথে আদ্রির ফোনটা এনেছে বলেই রক্ষা। হাটতে হাটতে ফোনটা অন করলো ইনশিরা কিন্তু ফোনে সিম নেই।সিম ছাড়াতো কাউকে ফোন দেওয়াও সম্ভব না।ইনশিরা পাশের একটা শপিংমলে ঢুকে গেলো।তারপর সেখানের ওয়াইফাই ব্যবহার করে সিলেট ছেড়ে ঢাকার বাস কখন ছাড়ে সেটা দেখলো।

এদিকে আদ্রি ঘুম থেকে উঠে ইনশিরাকে না পেয়ে দৌড়ে ইনানদের রুমে ধাক্কানো আরম্ভ করলো।ইনান চোখ কচলাতে কচলাতে বেরিয়ে এসে দেখে আদ্রি দাড়িয়ে আছে।চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ।আদ্রি আয়াশকে ধরে বলল

“দোস্ত শর্বনাশ হয়ে গেছে।ইনশু বোধহয় পালাইছে।ঘুম থেকে উঠে ওরে পাই নাই রুমে।”

ইনানের বুকটা ধক করে উঠলো।আতঙ্কিত গলায় বলল

“কি বলিস!!পুরো হোটেল ঠিক করে দেখছিস?ছাদে দেখছিস?”

“না আমিতো রুমে না পেয়ে তোর কাছে আসছি।”

ওদের দুজনের চিল্লানিতে আয়াশের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।আয়াশ উঠে এসে জিগ্যেস করলো কি হইছে।ইনান বলল

“ইনশুকে পাওয়া যাচ্ছে না।পুরো হোটেলটা খুজতে হবে।”

তিনজনই পুরো হোটেল ভালোভাবে খুজলো কিন্তু পেলো না।ওরা তিনজনই বুঝলো ইনশিরা পালিয়েছে।কিন্তু ইনানের ভয় লাগছে এইভেবে যে ইনশিরা সিলেটের কিচ্ছু চিনে না। কোথায় গেছে! কি করছে!বিপদ হয় নি তো এইভেবে।তিনজনই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।

এখন প্রায় সন্ধ্যা।

ইনশিরা নিজের গলার স্বর্ণের চেইনটা বিক্রি করে বাস কাউন্টার থেকে ঢাকা যাওয়ার একটা টিকিট কিনলো।বাস সাতটায় ছাড়বে।কিন্তু এখন সাড়ে ছয়টা বাজে।ইনশিরা কিছু টাকা দিয়ে একটা ব্যাগ কিনলো।বাকি টাকা গুলো ব্যাগে রেখে বাসের লাস্টের সিটের আগের সিটে গিয়ে বসে পড়লো।

এদিকে ইনান প্রচুর ঘামছে।আয়াশ গাড়ি ড্রাইভ করছে।সবাই চিন্তায় আছে।এখন পর্যন্ত ইনশিরাকে পাওয়া যাচ্ছে না।কিছু হলো না তো ওর!!হঠাৎ ইনান বলল

“দোস্ত বাস কাউন্টারের দিকে যা তো।আমার মনে হয় ও ওইদিকে গেছে।কারণ ও যদি পালায় তাহলে ও ঢাকা ব্যাক করার চেষ্টা করবে।”

আয়াশ বাস কাউন্টারের দিকে যাচ্ছে।এখন ঘড়িতে সাতটা বাজতে দশমিনিট।দশমিনিট পরই বাস ছাড়বে।আয়াশ দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করছে।এদিকে ইনশিরা মনে মনে ভাবছে’ঢাকায় গিয়ে আর ওদের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবে না।আর কিছু সময় পরই বাস ছাড়বে ওরা চেষ্টা করেও ইনশিরাকে খুজে পাবে না।এইভেবেই ইনশিরার মুখে চওড়া একটা হাসি ফুটে উঠলো।অবশেষে মুক্তি!!

৬.৫৫ বাজে…

বাস কাউন্টারে এসে ওরা তিনজনই নামলো।এদিক ওদিকে খোজা শুরু করে দিলো তিনজনই।এত্তগুলো বাসের মধ্যে এখন কোন বাসে ইনশিরা উঠেছে।এটা জানাই মুশকিল।পাঁচ মিনিটের মধ্যে সব বাস খোঁজাও সম্ভব না।ইনান কাউন্টারে এসে জিগ্যেস করলো ইনশিরা নামের কেউ ঢাকার বাসে যাচ্ছে কি না?তারপর জানতে পারলো শেষের বাসটায় যাচ্ছে।ইনান দেরি করলো দৌড় দিলো বাস ইতিমধ্যে ছেড়ে দিয়েছে।

চলবে…..🍂

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ১৪ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ১৪
#Arshi_Ayat

হঠাৎ করেই ইনশিরা ইনানের গলা চেপে ধরলো।তারপর আবার ছেড়ে দিয়ে কাঁদতে বসলো।ইনান সাহস জুটিয়ে বলল

“ইনশু কাদিস না প্লিজ।ক্ষমা করে দে।”

“তোকে আমি জীবনেও ক্ষমা করবো না।এই মুহুর্তে গাড়ি ঘুরা আর বাসায় দিয়ে আয় আমাকে।”

“সেটা সম্ভব না।আমরা পনেরোদিন পরই আবার ঢাকায় ফিরবো।”

“আমি তোর সাথে পনেরো দিন কেনো এক মুহুর্তও থাকতে পারবো না।”

“থাকতে হবে তোকে।গত চার বছরে তো তোকে ভালোবাসা বোঝাতে পারি নি তবে এই পনেরো দিনে বুঝিয়ে দেবো।”

“আমি তোকে কখনো ভালোবাসবো না।আর আয়াশ বন্ধু ভাবলে গাড়ি ঘোরা আমাকে বাসায় দিয়ে আয়।”

“না রে একবার যখন চলে এসেছি এতোদূর আর ফেরা সম্ভব নয়।” (আয়াশ)

“ইনশু তোকে একটা কথা বলি শোন সবদোষ তুই একা ইনানকে দিতে পারবি না। তোরও দোষ আছে।চারবছরে কি একবারও মনে হয় নি তোর ইনান তোকে ভালোবাসে?ছেলেটা তোর জন্য কতোকিছু করলো আর তুই কিছুই ভাবলি না একেবারে উড়িয়ে দিলি।তোর ইনানের সম্পর্কে ভাবা উচিত ছিলো।আর ও ছেলে হিসেবে খারাপ না তো!!তাহলে কেনো তুই ওকে ভালোবাসতে পারবি না?যা হয়েছে সেটা মেনে নে ইনশু।ইনানকে আর কষ্ট দিস না।”

“তাহলে তুই কেনো মানছিস না আয়াশকে?” (ইনশিরা)

এই কথায় যেনো ওদের তিনজনের উপরেই বাজ পড়লো।আয়াশের মুখ কালো হয়ে গেলো।আদ্রি বিস্ফোরিত চোখে ইনশিরার দিকে তাকিয়ে রইলো।যেনো কথাটা ঠিক হজম হচ্ছে না।আদ্রি ভ্রুকুচকেই বলল

“মানে বুঝলাম না।”

ইনশিরা তাচ্ছিল্যের সুরে বলল

“এখনতো বুঝবি ই না।কেনো আয়াশও তো তোকে ভালোবাসে তুই কেনো ওর ভালোবাসা বুঝতে পারছিস না বল?”

আদ্রি কিছু বলতে পারলো না।খুব বড় একটা শকের মধ্যে আছে ও।আর আয়াশ যেনো খুব বড় একটা অপরাধ করে ফেলেছে তাই আদ্রির দিকে তাকাচ্ছে না।আদ্রি কোনো উত্তর না পেয়ে ইনশিরা আবার বলল

“হ্যাঁ এখন তোর কাছে কোনো উত্তর নেই আমি জানি।তোর মতো আমিও বুঝতে পারি নি।এখন তোর মনে যা চলছে আমার মনে এর চেয়েও হাজার গুণ চলছে।”

ইনান ইনশিরার হাত ধরে বলল

“ইনশু ওদেরটা ওরা দেখবে। ওদের কথা এখানে এলো কেনো?আর তুই ঘুমিয়ে পড় তোর শরীর খারাপ করবে এমনিতেই ঘুম হয় নি তোর।”

“আমার সর্বনাশ করে এখন ঘুমাতে বলছিস?আমি এখানে ঘুমাবো আর আমার বাবা মা অপমানিত হবে?”

“এগুলো বলে লাভ নেই।এখন কিচ্ছু পাল্টাবে না।আর আমি তোকে কথা দিচ্ছি যদি এই পনেরোদিনে তুই আমাকে ভালো না বাসতে পারিস তাহলে আমি আর কখনো তোর সামনে দাড়াবো না।”

ইনশিরা কোনো জবাব দিলো না।গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো।চোখ দিয়ে অনবরত বৃষ্টি হচ্ছে।থাম বার নাম নেই।ইনান দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুজে রইলো।এদিকে আদ্রির মনে উথাল পাথাল ঝড় বইছে।একটু আগে কি শুনলো সে?এটা কি সম্ভব?আদ্রি আয়াশের দিকে তাকালো।আয়াশ কিন্তু একটু পরপর চোরা চোখে আদ্রিকে দেখছিলো।আদ্রির চোখে চোখ পড়তেই তাড়াতাড়ি সামনে তাকালো যেনো আদ্রির দিকে তাকানো কোনো অপরাধ।আদ্রি মনে মনে ভাবছে আচ্ছা আমি কেনো বুঝতে পারি নি?আমি কি আয়াশকে ভালোবাসি?না কি বাসি না!আয়াশ কি শুধুই বন্ধু আমার?নাকি তার চেয়েও বেশি কিছু!!আদ্রি মনে পড়ে গেলো ছয়মাস আগের কথা।

ওদের ডিপার্টমেন্টে রিয়া নামের একটা মেয়ে আছে ওই মেয়েটার সাথে আয়াশের তখন খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিলো কারণ আয়াশ ওর সব প্র্যাকটিক্যাল ওকে দিয়ে করাতো।প্র্যাকটিক্যাল করাতো সেটা বিষয় না।বিষয় হলো মেয়েটা আয়াশকে পছন্দ করতো তাই আয়াশের সাথে সব সময় আঠার মতো লেগে থাকতো ওর জ্বালায় আয়াশ ঠিক মতো আড্ডাও দিতে পারতো না।একদিন আয়াশ আর রিয়া হাটছিলো একসাথে আচমকা আদ্রি এসে রিয়াকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো।রিয়া পড়ে গেলো এবং রেগে বলল

“হাউ ডেয়ার ইউ?তুমি আমাকে ধাক্কা মারলে কেনো?”

“ছেলেদের গায়ে পড়ে কথা বলা কোন ধরনের স্বভাব?”

“হোয়াট?”

“বুঝিস না?তুই আয়াশের সাথে এতো ঘেষাঘেষি করে কথা বলিস কেনো?”

“কোথায় ঘেষাঘেষি করলাম?আর এটা তো আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার তোমার কি?”

“তোর ব্যাক্তিগত ব্যাপার নিয়া তুই থাক কিন্তু আয়াশের সাথে আর একদিনও যাতে না দেখি?”

“তুমি বলার কে?তুমি কি ওর গার্লফ্রেন্ড?”

রিয়ার কথা শুনে রাগের বসে আদ্রি বলেই ফেললো

“হ্যাঁ ও আমার বয়ফ্রেন্ড।আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে আর একদিন দেখলো মেরে হাড্ডি গুড়ো করে ফেলবো।”

আয়াশ সেখানে নিরব দর্শকের মতো দাড়িয়ে ছিলো তবে আদ্রি শেষের কথা শুনে চোখ বড়বড় করে ফেললো।আদ্রি আয়াশের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল

“আরে রিয়া মাইয়াটারে সহ্য হয় না।গায়েপড়া।আর তুই লাস্টের কথায় মাইন্ড করিস না।এটা তো আমি ওর থেকে বাচার জন্য বলছি।”

ইনানের ডাকে আদ্রির ধ্যান ভাঙ্গলো।

“কি রে।কই হারাইছিস?”

“না না এমনি কিছু বলবি?”

“কতক্ষণ ধরে ডাকছি কথাই বলছিস না।আচ্ছা তুই তোর সিম অফ করে দে।আয়াশেরটা ও অফ করছে।আমারটাও করছি।”

আদ্রি নিজের ফোন অফ করলো।তারপর আবারও চুপ করে বসে আছে।গাড়িতে এখন নিরব পরিবেশ।এমন কখনো হয় নি ওরা চারজন একসাথে কিন্তু কোনো কথা হবে না।সবসময় বকবক লেগেই থাকতো কিন্তু আজ উল্টো কেউ কোনো কথা বলছে না।বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়তো নতুনরুপ লাভ করবো নয়তো শেষ হয়ে যাবে।

সিলেট পৌঁছুতে দুপুর লেগে গেলো।সিলেটের একটা হোটেলে উঠলো সবাই।ইনান এই হোটেলে আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রেখেছিলো।দুইটা রুম ই ছিলো।একটাতে ইনান আর আয়াশ আরেকটাকে আদ্রি আর ইনশিরা থাকবে।রিসেপশন থেকে রুমের চাবি নিয়ে সবাই রুমে চলে গেলো।রুমে গিয়ে লাগেজ বেডের উপর রেখে আদ্রি বলল

“ইনশু শাওয়ার নিয়ে নে।তোর তো ড্রেস নেই।তুই আমার ড্রেস নিতে পারিস।”

ইনশিরা কিচ্ছু বলল না।দম মেরে বসে রইলো।আদ্রি গিয়ে ওর গা ঘেষে বসে বলল

“বইন প্লিজ মাফ করে দে।এভাবে চুপ করে থাকিস না।”

“……..”

“এখন কি তোর পা ধরতে হবে?”

“……..”

“বুঝলাম তোর পা ধরা ছাড়া উপায় নেই।”

এটা বলেই আদ্রি নিচে ঝুকতে নিলেই ইনশিরা ওকে তুলে বুকে জড়িয়ে নিলো।আর কাদতে শুরু করলো।আদ্রি মাথায় হাত বুলিয়ে বলল

“কাদিস না ইনশু।আল্লাহ ভালোর জন্যই সবকিছু করে হয়তো তোর এতে ভালো আছে।”

ইনশিরা কিছুই বলল না শুধু কেঁদেই যাচ্ছে।এদিকে আয়াশ ইনানের কাঁধে হাত রেখে বলল

“মন খারাপ করিস না দোস্ত।ও তোকে ভালোবাসবে দেখিস।”

“না বাসলে?”

“নেগেটিভ কথা বলিস না।অবশ্যই ভালোবাসবে।কিন্তু আমার চিন্তা হচ্ছে আদ্রি কে নিয়ে সেই তখন থেকে একটা কথাও বলল না।আমি ওকে মুখ দেখাবো কেমনে?”

“ধূর শালা তোর কি রেপ হইছে যে মুখ দেখাইতে পারবি না।ও কথাটা শুনে শক খাইছে তাই কথা বলে নাই।ওরে সময় দে।ও নিজেই কথা বলবে তোর সাথে।”

“হুম দেখি কি করে।এখন ফ্রেশ হ।তারপর খেতে যেতে হবে সাথে ওই দুইজনকে নিয়ে।যারা মুখে আলু দিয়ে রেখেছে।”

“সিরিয়াসলি দোস্ত মেয়েরা এমন কেনো কিছু হলেই মুখে আলু ঢুকিয়ে রাখে।”

“এটা জন্মগত স্বভাব।”

ইনান হাসতে হাসতে শাওয়ার নিতে চলে গেলো।আয়াশও হাসছে।

এদিকে ইনশিরার কান্না থামছে না।আদ্রি বলল

“ইনশু বইন প্লিজ আর কাদিস না।যা শাওয়ার নিয়ে আয়।তারপর খেতে যেতে হবে।”

“তুই যা আমার কিচ্ছু ভালে লাগছে না।”

“লাগবে যা তুই।”

একপ্রকার জোর করেই ইনশিরাকে শাওয়ার নিতে পাঠালো আদ্রি।জামা কাপড় ভাজ করতে করতে আদ্রি ভাবছে আয়াশকে নিয়ে।আদ্রি মনে হচ্ছে ও আয়াশকে ভালোবাসে না।ও কি এটা আয়াশকে বলে দিবে।আচ্ছা এটা বললে কি আয়াশ কষ্ট পাবে?নাকি ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট হবে?আর যদি আয়াশের খুশির জন্য আদ্রি সম্পর্কে যায় তাহলেতো সে শান্তি পাবে না।যে সম্পর্কে মন নেই সেটা আদৌ শান্তি কি দিতে পারে?আদ্রি কি করবে এখন?আয়াশকে না ই বা বলবে কিভাবে?কিচ্ছু বুঝতে পারছে না।এটা কি বন্ধুত্বে কাটা হয়ে দাড়াবে?

ঝর্ণার পানি ফোটায় ফোঁটায় শরীর বেয়ে পড়ছে ইনশিরার গা বেয়ে।সাথে চোখের পানিও।কি থেকে কি হলো।মরে যেতে ইচ্ছে করছে ইনশিরার।ইনান এটা কিভাবে করলো?ইনশিরা কিছুতেই মানতে পারছে না।আচ্ছা যার জন্য একবার ঘৃণা জন্মে যায় তার জন্য কি কখনো ভালোবাসা জন্মে? সারাজীবন কি ঘৃণাই থেকে যায় নাকি কখনো ভালোবাসার রঙ ও লাগে।আজ চারজনের মনের অবস্থা চার রকম।কেউ বুঝতে পারছে না কারো মনের অবস্থা।কি চলছে তাদের ভিতর!আদৌ কি এই পনেরোদিনে ইনশিরা ভালোবাসতে পারবে ইনান কে!!আদ্রি কি আয়াশকে মানা করে দিবে।নাকি এই পনেরোদিনে বন্ধুত্বের সম্পর্ক নতুন রুপ লাভ করবে।

চলবে…..🍂

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ১৩ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ১৩
#Arshi_Ayat

আদ্রির কথা শুনে ইনান হাসতে হাসতে বলল

“তুই ভাবলি কি করে ফারা আমার গার্লফ্রেন্ড হবে?”

“তার মানে ফারা না।তো কে সে?”(আয়াশ)

” যাকে ভালোবাসি সে।”

ইনানের কথা শুনে দুজনেরই চোখ কপালে উঠে গেলো।আদ্রি অবাক হয়ে বলল

“ইনশু!!! কেমনে কি?ওর তো বিয়ে।”

“হবে না বিয়েটা।ও আজকে রাতে আমাদের সাথে সিলেট যাচ্ছে।”

“ওকে কি কিডন্যাপ করবি?”

“হুম।”

“এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।”

“তুই ওকে একবার ও জানালি না।ওর মতামতও নিলি না।ও কিন্তু অনেক রাগ করবে।”

“রাগ করলে রাগ ভাঙাবো।আর তুই কি ভাবছিস যে ওরে বলে দিলে ও আমার সাথে যেতো?কখনও না।ওরে বললে ও আরো ফ্রেন্ডশিপটাই ভেঙে দিতো।আর আমার দূর থেকে দাড়িয়ে ওর বিয়ে দেখতে হতো।এতো ভালোবাসার পরও আমি পেতাম না ওকে।আমাকে ভুল বুঝতো।তারচেয়ে ভালো এই রিস্কটা নেই আর এই পনেরো দিনে ওকে আমি আমার ভালোবাসাটা বুঝিয়ে দেবো।আমার বিশ্বাস ও আমাকে ভালোবাসবে।আমি জীবিত থাকতে ওকে আমি অন্য কারো পাশে সহ্য করতে পারবো না।ও বউ সাজবে শুধু আমার জন্য। ওর সব কিছু আমাকে ঘিরে হবে।আমি চাইলেই রায়ানকে সরিয়ে দিতে পারি কিন্তু এটা করলে ইনশু আমাকে কখনো মাফ করবে না।ভালোবাসাতো দূরে থাক।তাছাড়াও রায়ান কোনো দোষ করে নি।ও তো এসব জানে না শুধু শুধু একটা ওকে মেরে আমার কি লাভ।তাই ওর কিছু করবো না ইনশুকে নিয়ে যাবো।”

“ভাই তোর হাতে ফিফটি চান্স আছে।এই পনেরোদিনে হয়তো ইনশু তোকে ভালোবাসবে নয়তো তোকে সারাজীবনের মতো ঘৃণা করবে।বুঝে শুনে কাজ করিস।”(আয়াশ)

” এই দুইদিন অনেক ভাবছি।আর এই সিদ্ধান্ত নিছি কারণ এটা না করলে ইনশুকে আমার সারাজীবনের মতো হারাতে হবে।আর আমি এটা পারবো না।”

তারপর আদ্রি বলল

“যাবি কখন?”

“এইতো বাগানের পিছনের সাইডটা ফাকা হলে তারপর পিছনের গেট দিয়ে বের হবো।রাত ২/৩ টার দিকে ফাকা হতে পারে।”

আদ্রি বিরক্ত স্বরে বলল

” এতক্ষণ জেগে থাকতে হবে।আমাদের আগে বলতি সারাদিন ঘুমিয়ে নিতাম।”

ইনান হেসে বলল

“ফ্রেন্ডের জন্য একটু কষ্টতো করতেই হবে তাই না বল!”

“হুম সেটাই।কিন্তু ওকে বের করবি কিভাবে?”

“সেটা যখন বের করবো তখন দেখিস।এখন এখান সোজা দুজনে বাসায় যাবি এবং ব্যাগপ্যাক করে নিবি আর গাড়িতে রেখে আসবি পিছনের গেটের সামনে গাড়ি পার্ক করা আছে।”

ইনানের কথামতো দুজনই বাসায় চলে গেলো।তারপর দুজনই ব্যাগপ্যাক করে এসে অনুষ্ঠানে যোগ দিলো।আর ইনানকে বুঝিয়ে দিলো সব কম্পলিট।এদিকে ইনশিরাকে কিছুতেই ওর বোনেরা ছাড়াছে না।ইনশিরা পুরোটা সন্ধ্যাসহ এখন পর্যন্ত হলুদ লাগানোর সময় ছাড়া একটাবারও ওদের তিনজনের সাথে কথা বলতে পারে নি কিন্তু ইনান যাই করুক না কেনো ওর চোখ সবসময় ইনশিরার দিকে।

রাত ৩.০০ টা…..

বাগানের পিছনের দিকটা পুরো ফাকা।তিনজন সেখানেই দাড়িয়ে আছে।আদ্রি বলল

“তুই কি এখন মুভির নায়কদের মতো দড়ি বেয়ে উঠে ইনশুকে নিয়ে আসবি?”

“এমন করলে গণধোলাই দিবে সবাই মিলে।” (আয়াশ)

“উফফ!! এতো বকবক না করে কোনো বুদ্ধি বের কর ওকে বের করার।” (ইনান)

আদ্রি হাই তুলে আয়াশের মাথায় গাট্টা মেরে বলল

“খালি পেট মেরা দিমাগ কি বাত্তি নেহি জ্বালতা হে পাতলু তুম হি কুচ সোচো।”

আয়াশ হেসে বলল

“অবশেষে তুই স্বীকার করলি তুই মটু।”(আয়াশ)

“তুই মটু তোর চৌদ্দগোষ্ঠী মটু।” (আদ্রি)

ওদের কথা বলার মাঝখানে হঠাৎ ইনান বলল

“আয়াশ তুই ইনশুকে ফোন করে বল বাগানের পিছনে আসতে ওর জন্য সারপ্রাইজ আছে।আমি নিশ্চিত ও আসবে।”

আয়াশ ফোন বের করে ইনশুকে ফোন দিলো।ফোন রিসিভ করতেই আয়াশ বলল

“দোস্ত বাগানের পিছনে আয়।তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে।”

“কি সারপ্রাইজ রে?”

“বলদের মতো কথা বলিস কেন?সারপ্রাইজ কি বলে নাকি কেউ?”

“আচ্ছা আচ্ছা আসছি।”

“ওকে আয়।”

আয়াশ ফোন রেখে ইনানকে বলল

“হুম আসছে।”

“ওকে।এখন তুই রুমালে বেহুঁশের ওষুধটা দে।”

“ওইটা এখন কই পাবো।”

ইনান ওর বাম পকেট থেকে বোতলটা আয়াশকে দিলো।আয়াশ ওষুধ মাখাতে মাখাতে বলল

“দোস্ত এটা তুই পকেটে নিয়ে ঘুরিস?”

ইনান বলল

“হুম কখন কারে বেহুশ করা লাগে তার ঠিক নাই তো।”

এর মধ্যেই ইনশিরা চলে এসেছে।ইনশিরাকে আসতে দেখে ওদের তিনজনের কথাই থেমে গেলো।ইনশিরা এসেই বলল

“কি সারপ্রাইজ গিফট দেখি?”

ইনান হেসে বলল

“আচ্ছা তাহলে চোখ বন্ধ কর।”

ইনশিরা ঠোঁট উল্টে বলল

“আচ্ছা বন্ধ করছি।”

ইনশিরা চোখ বন্ধ করার পর ইনান রুমালটা ওর নাকে মুখে চেপে ধরে।আর পাঁচ সেকেন্ড নড়েচড়ে ইনশিরা বেহুঁশ হয়ে গেলো।তারপর ইনান আয়াশকে বলল

“গিয়ে পিছনের গেট টা খোল আমি ওকে নিয়ে আসছি।”

ওরা যেতেই ইনান ইনশিরাকে কোলে নিয়ে নিলো।এই প্রথম ইনশিরাকে ও কোলে নিলো।কেমন যেনো একটা অনুভুতি হচ্ছে।এটা মনে হয় ভালোবাসার অনুভুতি!!!

ইনান হাটতে হাটতে গাড়ির সামনে এসে ইনশিরাকে পিছনের সিটে বসিয়ে নিজেও পাশে বসে যায়।আয়াশ আর আদ্রি বসে সামনে।আয়াশ ড্রাইভ করবে।ইনান ইনশিরার মাথাটা নিজের বুকের সাথে শক্ত করে ধরে রাখলো।প্রশান্তি যেনো ওর চোখ মুখ বেয়ে পড়ছে।হারানোর ভয়টা এখন নেই কিন্তু ভয় হচ্ছে জ্ঞান ফেরার পর ইনশিরা কি করবে?হঠাৎ আদ্রি ইনানকে বলল

“দোস্ত আমিতো ভাবছি তুই অপরাধী গান গাবি।কিন্তু এখনতো দেখি ছাম্মাকছালো গাইছিস।”

আয়াশ হাসতে হাসতে বলল

“আমি এমন কিছুই আন্দাজ করেছিলাম।কারণ ইনান এতো সহজে হাল ছাড়বে না।কিন্তু দোস্ত তুই এই দুইদিন মদ খাইলি কেন?”

ইনান হাসতে হাসতে বলল

“দেবদাস হওয়ার চেষ্টা করতেছিলাম কিন্তু আফসোস হতে পারি নাই।”

আদ্রি চিন্তিত স্বরে বলল

“কিন্তু ইনশু জ্ঞান ফেরার পর কি করবে আল্লাহ জানে।”

“হুম আমারও টেনশন হচ্ছে।” (আয়াশ)

“দেখি কি করে।” (ইনান)

গাড়ি চলছে সিলেটের দিকে।দুইঘন্টা পার হয়ে গেছে এরমধ্যে ইনশিরা একবারও জেগে উঠে নি।কিন্তু তিনজনের মধ্য অনেক কথা হলো।

সাড়ে পাঁচটার সময় ইনশিরা চোখ কচলাতে কচলাতে ইনানের বুক থেকে উঠে বসলো।কিন্তু সে কোথায় আছে বা যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না।তবে এতটুকু নিশ্চিত যে সে তার বাড়িতে নেই অনেকদূর চলে এসেছে।ইনশিরাকে উঠতে দেখে ইনান ওর দিকে পানি এগিয়ে দিলো।ইনশিরা পানি না নিয়ে বলল

“আমি এখানে কেনো?আর কোথায় যাচ্ছি আমরা?”

“তুই সিলেট যাচ্ছিস।”

ইনশিরা চোখ কপালে তুলে বলল

“কেনো?আজতো আমার বিয়ে তাহলে কেনো?”

“তোর বিয়ে হচ্ছে না।”

“এটা কেমম কথা ইনান?বিয়ে হবে না কেনো?”

“আমি তোকে ভালোবাসি আর তোকে আমি কাল রাতে কিডন্যাপ করেছি।”

ইনানের কথাটা শোনার সাথে সাথেই
ইনশিরা জোরে একটা থাপ্পড় মারলো ইনানের গালে।তারপর দুইহাতে মুখ ঢেকে কাদতে লাগলো।আয়াশ, আদ্রি কিছুই বলছে না।ইনান নত মুখে বসে আছে।ইনশিরা কোনেমতে কান্না থামিয়ে ইনানের কলার টেনে বলল

“কেনো এমন করলি ইনান?কেনো?কেনো?আমি কি এমন ক্ষতি করেছি তোর?আমি তোকে সবসময় বেষ্ট ফ্রেন্ডের নজরে দেখেছি আর তুই!!ছিঃ ইনান ছিঃ।আসলে সবাই আমাকে ধোকা দেয় কেনে বলতো?প্রথমে তিয়াস এরপর তুই!!!যাকে সত্যিকারের বেষ্ট ফ্রেন্ড ভাবতাম সেই আমার শর্বনাশ করলো।তবে ইনান তুই শুনে রাখ তুই যেটা চাইছিস সেটা কখনো হবে না।আমি মরে গেলেও তোকে বিয়ে করবো না ভালোবাসাতো দূরের কথা।”

ইনান ইনশিরা দিকে অপরাধীর মতো তাকিয়ে বলল

“ইনশু বোঝার চেষ্টা কর প্লিজ।আমি তোকে ভালোবাসি আমি মরে গেলেও তোকে অন্যকারো সাথে সহ্য করতে পারবো না।”

“এতোই যখন ভালোবাসতি তাহলে ভালোবাসার মানুষের শর্বনাশ করলি কেনো?বিয়েটা হতে দিলি না কেনো?”

“কারণ আমি তেমন প্রেমিক না যে ভালোবাসার মানুষকে এভাবে দিয়ে দেবো।ভালো যেহেতু বেসেছি তোকেই বিয়ে করবো।আর তুইও আমাকে ভালোবাসবি।”

“সেটা হবে না মিস্টার ইনান চৌধুরী।আরে আমার কষ্টের কথা বাদই দিলাম। আমার বাবা মা ওদের কষ্টের কথা কি বলবো।আজ ওরা একঘর মানুষের সামনে অপমানিত হবে আমার জন্য।আমার নামে কলঙ্ক দিবে।বাবা মাকে সবাই চোখে আঙুল দিয়ে কথা বলবে।আমি আর কখনো নিজের বাড়িতে যেতে পারবো না।বাবা মা কখনোই আমাকে ক্ষমা করবে না।একটা মেয়ের জীবনে তার সম্মানটা সবচেয়ে দামি আজকের পর থেকে সবাই আমার সম্মানে আঙুল তুলে কথা বলবে।তোর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করাটাই আমার চরম ভুল।আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবতে পারি নি তুই এমন করবি।আর আয়াশ আদ্রি তোরা কিভাবে এতো নিষ্ঠুর হলি।কিভাবে তোরা ওর সাথে সায় দিলি?কিভাব?ওহ!!তোরা তো ওর বন্ধু আমার না তাই এমন করেছিস!!ভালো খুব ভালো।বন্ধুত্বের প্রতিদান এভাবে দিলি।আর আদ্রি তুইও তো মেয়ে তোর সাথে এমন হলে তুই মেনে নিতে পারতি?কখনও না তাহলে আমার বেলায় এমন করলি কেনো?আমার বাবা মার কি হবে?ওরা নিশ্চিই আমার বাবা মা কে অনেক অপমান করবে।আল্লাহ কিসের শাস্তি দিচ্ছে।”

এটা বলেই আবার মুখ ঢেকে কাদতে বসলো।তিনজনই নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে আছে।কেউ কিছু বলছে না।হঠাৎ করেই ইনশিরা…..

চলবে….🍂

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।গাইস!!এখন কেমন লাগছে?)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ১২ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ১২
#Arshi_Ayat

ইনান আর আয়াশ শপিং মলে গেলো ইনশিরার জন্য গিফট কিনতে।আয়াশেরটা আদ্রি কিনবে কারণ ওর এসব বিষয়ে কোনো আইডিয়া নেই।আর ইনান একটা লাল বেনারসী কিনলো।ইনানকে বেনারসী কিনতে দেখে আয়াশ বলল

“বেনারসী দিবি ভালো কথা কিন্তু লালটাই কেনো?”

“বউতো লাল বেনারসী ই পরে।”

“হুম কিন্তু ও তো তোরটা পরতে পারবে না।রায়ানের টা পরবে।”

“পরবে অবশ্যই পরবে।”

“হুম তবে বিয়ের দিন না।”

“বিয়ের দিনই পরবে।”

“কিভাবে?”

“সেটা নাহয় বিয়ের দিনই দেখিস।এখন চল ইনশুর বাসায় যাই।”

“হুম কিন্তু এখনতো বিকেল হলুদতো সন্ধ্যায়।ওর বাসায় যাওয়ার চেয়ে বরং চল আদ্রির বাসায় যাই।”

“আচ্ছা চল।”

আয়াশ ইনান দুজনই আদ্রির বাসায় এলো।আদ্রি দরজা খুলতেই দুজনকে একসাথে দেখে লাফিয়ে উঠলো তারপর বলল

“ওহ!!মাশাল্লাহ তোদের দুজনকে তো হেব্বি লাগছে।কারো নজর যাতে না পড়ে।”

আয়াশ হতাশার ভঙ্গি নিয়ে বলল

“কারো নজর না পড়লে তো সারাজীবন কুমার থাকতে হবে।দোয়া কর যাতে সুন্দরী কারো নজর পড়ে যায়।”

ইনান আয়াশের পিঠে চাপড় দিয়ে বলল

“সুন্দরী না বল তুই যাকে চাস তার নজর পড়ুক।”

আয়াশ হাসতে হাসতে বলল

“দিল কি বাত কে দিয়া ইয়ার।”

ওদের কথা শুনে আদ্রি ভ্রু উচিয়ে বলল

“কি রে আয়াশ তলে তলে টেম্পো চালাও আর আমরা করলেই হরতাল।”

আয়াশ হতাশার দৃষ্টিতে একবার ইনানের দিকে তাকিয়ে পরে আদ্রির দিকে তাকিয়ে বলল

“টেম্পো আর চালাইলাম কই?যারে নিয়ে চালামু সেই তো টেম্পোতে উঠে না।”

আদ্রি হাসতে হাসতে বলল

“যারে ভালোবাসিস সময় থাকতে বলে দে নাহলে ইনানের মতো অবস্থা হবে।”

ইনান একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল

“হ্যাঁ আয়াশ বলে দে।”

আয়াশ ইনানের দিকে চোখ রাঙিয়ে ইশারায় চুপ করতে বলল।তারপর আদ্রিকে বলল

“কি রে তুই কি শাড়ি পরবি নাকি লেহেঙ্গা?”

“ভাবছি হলুদ লেহেঙ্গা পরবো কারণ শাড়ী সামলাতে পারি না।অবশ্য ইনশু বলেছিলো শাড়ি পরতে ও শাড়ী পরবে।”

ইনশিরা শাড়ী পরবে এটা শুনে ইনান কিছু একটা ভাবলো তারপর বলল

“হুম লেহেঙ্গা পরতে পারিস।”

“হ্যাঁ লেহেঙ্গাই পর।” (আয়াশ)

আয়াশ লেহেঙ্গা পরতে বলছিলো কারণ শাড়ী পরার অভ্যাস আদ্রির নেই সামলাতে না পারলে সমস্যা হতে পারে তাই।আদ্রি ওদের দুজনে অরেঞ্জ জুস দিয়ে বলল

“তোরা বস আমি রেডি হয়ে আসছি।”

“তোর আপু কোথায়?” (ইনান)

আদ্রি নিজের রুমে যেতে যেতে বলল

“আপুতো হসপিটালে আছে ডিউটিতে।আজকে ইমার্জেন্সি আছে।”(আদ্রি)

তারপর আদ্রি নিজের ঘরে চলে যায়।এবাড়িতে আদ্রি আর ওর বোন ছাড়া কেউ থাকে না।ওর বোন পেশায় ডাক্তার।ইন্টার্ণ করছে।আর ওর বাবা মা লন্ডন থাকে।এবছর শেষের দিকে আসবে ওর বোন আরাধ্যার বিয়ে দিতে।ওর বাবা মা দুইবোনকে নিজেদের সাথে নিতে চেয়েছিলো কিন্তু এরাই ইচ্ছা করে যায় নি।আরাধ্যা যায় নি তার হবু বর অর্ণবের জন্য আর আদ্রি ওর ফ্রেন্ড সার্কেল ছেড়ে যায় নি।যাইহোক আদ্রি রেডি হয়ে নিচে নামতেই আয়াশ হা করে চেয়ে রইলো।ইনান পাশ থেকে গুতা মেরে বলল

” হা করে তাকাইস না মাছি ঢুকবে।”

আয়াশ স্বাভাবিক হয়ে আদ্রিকে বলল

“মোটামুটি কম খারাপ লাগছে না।”

“তোর থেকে কোনোদিনই ভাল্লাগে না এ আর নতুন কি!!”(আদ্রি)

ইনান ওদের কথা শুনে মিটমিটিয়ে হাসছে।আদ্রি ইনানের দিকে তাকিয়ে বলল

” তুই বল কেমন লাগছে?”

“মোটামুটি বেশি খারাপ না।”

ইনানের কথা শুনে আয়াশ হাসতে হাসতে শেষ। আদ্রি মুখ গোমড়া করে বলল

“থাক আমি যাবো না।”

ইনান দ্রুত হাসি থামিয়ে বলল

“না রে মজা করছিলাম আসলেই তোকে অনেক সুন্দর লাগছে।”

আদ্রিও হাসলো তারপর বলল

“চল যাওয়া যাক।”

সন্ধ্যার সময় আদ্রি,আয়াশ,ইনান ওরা ইনশিরার বাড়ি পৌছালো।বাড়িতে মানুষ গিজগিজ করছে।ওরা ইনশিরার বাবা মার সাথে কথা বলে ইনশিরার রুমে গেলো।রুমে গিয়েই আদ্রি ইনশিরাকে জড়িয়ে ধরলো ইনশিরাও ধরলো।তারপর ইনান বলল

“কি রে কেমন আছিস?”

“এইতো ভালো।তোরা?”

“হুম আমরা সবাই ভালো।তোর সাজগোজ হইছে নাকি আরো সময় লাগবে?না মেয়েরা সাজতে যা সময় নেয়।”

আদ্রি আয়াশের কান মলে বলল

“চুপ মেয়েদের সাজগোজ নিয়ে একটা কথাও বলবি না।নাহলে তোর কপালে পেত্নী জুটবে।”

ইনান খোচা মেরে বলল

“সেটা হওয়ার সম্ভবনা নেই।”

ইনানের কথা শুনে সবাই হাসা শুরু করলো কিন্তু আদ্রির মাথার উপর দিয়ে গেলো।তারপর ইনশিরা বলল

“এইতো হয়ে গেছে আর একটুপর বোধহয় স্টেজে নিবে।”

তারপর চারজন মিলে গল্প করা শুরু করলো।কিন্তু আয়াশ গল্পের ফাকেও অন্য কথা ভাবছে ইনান কিভাবে এতো স্বাভাবিক?ওর ভিতর কি চলছে কিচ্ছু বোঝা যাচ্ছে না।আদ্রিও একই জিনিস চিন্তা করছে।একটুপর ইনশিরাকে নিতে এলো স্টেজে বসানোর জন্য।ইনশিরা যেতে নিলেই কারো পায়ের সাথে বেধে পড়ে যেতে নেয় কিন্তু তৎক্ষনাৎ ইনান ওর কোমর জড়িয়ে ধরে ফেলে আর ইনানে হাতের হলুদ ইনশিরার কোমরে লেগে যায়। মূলত ইনান ইচ্ছা করে ইনশিরার পায়ে ওর পা বাধিয়েছে যাতে এমন একটা সুযোগ পেয়ে যায়।আর ইনান ইনশিরার রুমে আসার আগেই ডান হাতে হলুদ লাগিয়ে নেয়।যাতে হলুদের প্রথম ছোয়াটা ওই দিতে পারে।যাইহোক ইনশিরাকে উঠালো তারপর কিছু না জানার ভান করে বলল

“ইনশু ঠিক আছিস?”

ইনশিরা ইনানের কানে ফিসফিসিয়ে বলল

“হ্যাঁ আমি ঠিক আছি তবে কোমরে তোর হাত থেকে হলুদ লেগে গেছে।তুই হাতে হলুদ নিয়ে ঘুরছিস কেনো?”

“ওইতো আয়াশকে জোর করে লাগাবো বলে।”

“ওহ!!আচ্ছা এখন আর কি করার চল যাই।”

তারপর ইনশিরাসহ সবাই স্টেজের দিকে গেলো।আর ইনান মুখে একটা শয়তানি হাসি ফুটিয়ে ডান হাতটা একবার গলায় তারপর গালে লাগালো।এতসব কেউ না দেখলেও আয়াশ ঠিকই দেখেছে।হলুদ ছোয়ানো শুরু হয়ে গেছে। একে একে সবাই হলুদ ছোয়ালো।এবার ইনানের পালা।ইনান হাসি মুখে হলুদ ছোয়াতে গেলো।ইনান অবশ্য ওর ফ্রেন্ডদের আগেই বলেছিলো ইনশিরা আগে ওকে হলুদ ছোয়াবে তারপর অন্যকেউ তাই সবার মুখে হলুদ লাগলেও ইনানের মুখে ইনশিরা লাগানোর পরেই সবাই লাগিয়েছে।ইনান দাড়িয়ে দাড়িয়ে মেয়েদের সাথে হাসাহাসি করে কথা বলছে এই প্রথম ও এমন করছে।একটুপর ফারা এসে বলল

“হাই ইনান।আজকেতো অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে তোমাকে।”

ইনান ভাব নিয়ে বলল

“সেটা প্রতিদিনই লাগে।”

ফারা হেসে বলল

“হ্যাঁ তা ঠিক।আমার প্রথম ক্রাশ তুমি।”

ইনান হাসলো।এপাশে সাইডে দাড়িয়ে আয়াশ আর আদ্রি সব দেখছে।আদ্রি আয়াশকে চিমটি দিয়ে বলল

“দোস্ত ইনান কি পাগল হয়ে গেলো নাকি?ও এতো কুল কিভাবে?”

আয়াশ চিন্তিত মুখে বলল

“আমিও কিছু বুঝাতেছি না।মনে হচ্ছে কিছু একটা হবে।”

“চলতো ইনানকে একটু জিগ্যেস করি।”

“হুম চল।”

আয়াশ আর আদ্রি ইনানকে সাইডে এনে জিগ্যেস করলো

“দোস্ত তুই এতো কুল কেমনে রে?”

“তো কি হট হয়ে বসে থাকবো?জাস্ট চিল ইয়ার!!বান্ধবীর হলুদ ইনজয় করছি।তোরাও কর।”

এটা বলে চলে গেলো আর আবার ফারার সাথে কথা বলা শুরু করলো।এদিকে আয়াশ আর আদ্রির মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না।

রাত ১০.০০ টা…

ইনান আয়াশ আর আদ্রিকে বাগানের সাইডে এনে জিগ্যেস করলো

“আমরা চারজন পনেরোদিনের জন্য সিলেট যাচ্ছি।”

আদ্রি ভ্রু কুচকে বলল

“চারজন মানে?”

“আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ড আর তোরা দুইজন।”

আয়াশ আর আদ্রি বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলো তারপর আয়াশ বলল

“কিহ!!!তুই গার্লফ্রেন্ডও জুটাইছিস?কেমনে কি?”কে ওই মেয়ে?”

“ফারা নয় তো?” (আদ্রি)

চলবে….🍂

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আমি কিচ্ছু কমু না😁)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ১১ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ১১
#Arshi_Ayat

এদিকে ইনশিরা রায়ানের সাথে ওদের দেখা করাবে বলে তিনজনকেই আসতে বলেছিলো।আয়াশ আর আদ্রি আসলেও ইনান আসে নি।তাই ইনশিরা ফোনের উপরে ফোন দিচ্ছে ইনানকে।অনেকবার ফোন দেওয়ায় ইনান অতিষ্ঠ হয়ে ফোন রিসিভ করলো।ফোন রিসিভ করার সাথে সাথেই ইনশিরা বলল

“কি রে কই তুই?এতোবার করে ফোন দিচ্ছি ধরছিস না কেনো?”

“বাসায় ই তো আর ফোন সাইলেন্ট ছিলো তাই ধরতে পারি নি।”

“ওহ!!তাড়াতাড়ি আয় রায়ান চলে আসছে।”

ইনশিরার মুখে অন্য ছেলের নাম শুনে ইনানের ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছে।খুব কষ্টে বলল

“আচ্ছা আসছি।”

বলেই ফোন রেখে দিলো আর বাম হাত দিয়ে চোখ মুছলো।কাল থেকে আজ পর্যন্তু কিচ্ছু খায় নি। আয়াশ,আদ্রি ওর বাবা, মা কেউ কিচ্ছু খাওয়াতে পারে নি শুধু কাল রাতে মদ খেয়েছে। খাওয়ার মধ্যে এতটুকুই।যাইহোক কোনোমতে একটা শার্ট গায়ে দিয়েই বেরিয়ে পড়লো।চুলটাও ঠিক করার নাম নেই।যে ছেলে ঘর থেকে বের হলে মেয়েরা একবার হলেও তাকাবে সে ছেলে আজ এভাবে বের হলো।যাওয়ার সময় গাড়িও নিলো না হেটে গেলো।সেখানে পৌছুতেই দেখলো ইনশিরার পাশে রায়ান বসে আছে আর অপর পাশে আয়াশ আর আদ্রি বসে আছে।ইনশিরার পাশে রায়ানকে দেখে ইনান রাগে হাত মুট করে ফেললো কিন্তু কিছু বলল না চুপচাপ ইনশিরার অপর পাশের চেয়ারে বসলো।ওকে দেখেই ইনশিরা বলল

“এতক্ষণে আসছেন নবাব।আর তোর এই অবস্থা কেন?চুল আওলা ঝাওলা হয়ে আছে কেন?”

“ওইতো ঘুম থেকে উঠে আসছিতো তাই।”

“হায় রে।আচ্ছা যাইহোক রায়ানের সাথে পরিচিত হ।”

ইনশিরা রায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল

“এ হচ্ছে আমার বেষ্ট ফ্রেন্ডদের মধ্যে আরেকজন।”

রায়ান ইনানের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল

“হাই,আমি রায়ান শেখ।”

ইনান বহু কষ্টে মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে বলল

“আমি ইনান চৌধুরী।”

“ওহ!!ইরফান চৌধুরীর একমাত্র ছেলে তাই না?”

“জ্বি।”

“আমি আপনার বাবাকে পার্সোনালি না চিনলেও টিভিতে দেখেছি উনি প্রতিবারই সেরা বিজনেসম্যান হন।”

ইনান কিছু বলল না শুধু হালকা হাসলো।আয়াশ ইনানের কানে কানে বলল

“এফ বি লগ ইন কর।”

“কেনো?” (ইনান)

“লগ ইন করে আমাকে নক দে।”(আয়াশ)

ইনান রায়ানের সাথে কথা বলতে বলতে এফ বি লগ ইন করে আয়াশকে নক দিলো

” কি হইছে? “(ইনান)

“রায়ানের সামনে কানে কানে কথা বললে কেমন একটা দেখা যায় তাই এফ বি তে কথ বলমু।”(আয়াশ)

“ধূর শালা কি বলবি তাড়াতাড়ি বল।বেশিক্ষণ থাকবো না।নোটিফিকেশন আসছে।”(ইনান)

“সকালে উঠে ব্রাশ করছিলি?তুই তো রাতে ওগুলা খাইছিস তাই বললাম।”(আয়াশ)

” না পাঁচটা চুইংগাম চাবাইতে চাবাইতে আসছি।আর আমি লগ আউট করলাম ভাল্লাগতাছে না।”(ইনান)

এতক্ষণ মোটামুটি অনেক কথাই হলো রায়ানের সাথে তিনজনের।তারপর ইনশিরা আর রায়ান চলে যাওয়ার জন্য উঠতে উঠতে বলল

“আপনারা কিন্তু কাল হলুদে আসবেন।” (রায়ান)

“জ্বি অবশ্যই। (আয়াশ)

“গাইস তোরা থাক আমি একটু রায়ানের সাথে শপিং এ যাবো।”

এই কথা শুনে ইনানের ইচ্ছা করছে এখানেই ওকে জ্যান্ত পুতে ফেলতে।আয়াশ অনেক কষ্টে ওর হাত ধরে রেখেছে।আদ্রি ইনশিরার কথা জবাবে বলল

“আচ্ছা যা।”

“হুম তোরা কিন্তু কাল সময় মতো চলে আসিস।” (ইনশিরা)

তারপর রায়ান আর ইনশিরা চলে গেলো।ওরা যেতেই ইনান টেবিলের উপর হাত দিয়ে জোরে একটা বাড়ি মারে।আয়াশ ওর পিঠে হাত রেখে বলল

“ভাই প্লিজ শান্ত হ।”

ইনান মুখের উপর দুইহাত রেখে বলল

“আমার সাথেই কেনো এমন হলো বলতো?আমিই কেনো?এই রায়ান কতো সুন্দর ইনশুকে না ভালোবেসেই পেয়ে যাচ্ছে আর আমি এতো ভালোবাসার পরও পাবো না।এমন কেনো বলতো?আমার ভাল্লাগছে না।”

আদ্রি ইনানের চুল হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বলল

“এটাই নিয়তি আমরা সবসময় যা চাই তা পাই না।কারণ ওটা আমাদের জন্য না।তুই শান্ত হ।”

ইনান কিছু না বলেই উঠে গেলো।পিছন থেকে আয়াশ বলল

“কই যাচ্ছিস?”

” চৌরাস্তার মোড়ে দেবদাস হইয়া ঘুরতে।যাবি তুই?” (ইনান)

“হুম আসতাছি কিন্তু আমি দেবদাস হইতে পারমু না।”(আয়াশ)

আদ্রি কল আসায় আদ্রি চলে গেলো।আর আয়াশ আর ইনান ইনানদের বাসায় চলে এলো।ইনান আয়াশকে বলল

” তুই কিছু খাবি?”

“আমি খাইছি কিন্তু তুই কাল থেকে কিচ্ছু খাস নাই।তুই কিছু খেয়ে নে।”

“না ইচ্ছা নাই।”

“ইনান তুই কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করতেছিস।এটা ঠিক না শরীরের ক্ষতি হবে তো।”

“হলে হবে কার কি?কেউ এটা দেখার জন্য নাই সবাইতো বিয়েতে ব্যাস্ত।”(ইনান)

“দোস্ত প্লিজ পাগলামি করিস না।”

“তুই যা তো জ্ঞান দিবি না।অসহ্য লাগে।”

“আচ্ছা তাহলে আজ ওইভাবে গেলি কেনো রায়ানের সাথে দেখা করতে?”

“কিভাবে?”

“দেবদাস স্টাইল মেরে।”

“তো কি রোমিও স্টাইলে যামু?রোমিও তো ওই রায়ান সাজবো।”

“তুই রাগিস না প্লিজ।”

“হুম বকবক না করে এখান থেকে যা।”

এটা বলেই আয়াশকে আবার রুম থেকে বের করে দিলো আয়াশ জানে এখন খুলতে বললেও খুলবে না তাই কি আর করার ও চলে গেলো।ইনান গায়ে থাকা শার্ট টা খুলে ছুড়ে মারলো।তারপর দরজা জানাল বন্ধ করে লাইট অফ করে শুয়ে রইলো।দুইদিন ধরে ভার্সিটিতে যাওয়ার নাম নাই।এখন ইনানের মনে হচ্ছে পৃথিবীতে ওর একমাত্র শত্রু হচ্ছে রায়ান।ওকে চাকু দিয়ে পিস পিস করতে পারলে মনের জ্বালা মিটতো ইনানের।শুয়ে শুয়ে রায়ানকে কিভাবে মারলে ওর রাগ কমবে সেটাই ভাবছে ইনান।এভাবেই একটা দিন কেটে গেলো।কারো মনে আনন্দ আবার কেউ হারানোর ব্যাথায় ছটফট করছে।সবই নিয়তি!!!

পরেরদিন….

“ইনান বাবা দরজা খোল।” (মা)

ইনান টলতে টলতে এসে দরজা খুলে বলল

“হ্যাঁ মা বলো।”

“আমরা একমাসের জন্য অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি তুই একা থাকতে পারবি তো?”

“হ্যাঁ মা পারবো।”

“না পারলে তোর খালার কাছে চলে যাস।দুইদিনেই তো মুখ শুকিয়ে গেছে।কি হয়েছে রে তোর?কিচ্ছু বলছিস না।”

“মা তেমন কিছু না। বাবা কোথায়?”

“ওইতো তোর জন্য নিচে অপেক্ষা করছে।”

“আচ্ছা যাও আমি আসছি।”

ইনান বাবা মায়ের সাথে কথা বলে।উনাদের বিদায় দিয়ে ইনান আবার চলে আসলো নিজের রুমে।সারাদিন শুয়ে বসে সময় কাটালো ইনান।আর এদিকে ইনশিরার বাসায় সুন্দর করে লাইটিং করা হয়েছে।

দুপুর ২.০০ টা

ইনান লম্বা একটা শাওয়ার নিলো।ব্ল্যাক কালারের প্যান্ট আর শার্ট পড়লো তারপর ব্য্লাক শু পরলো।চুলগুলো সেট করে মেচিং কালারের ঘড়ি পড়লো তারপর পারফিউম দিয়ে একবারে পারফেক্ট ভাবে রেডি হলো।যেনো আগের ইনান ফিরে এসেছে।এসময় কে যেনো আসলো ইনান দরজা খুলে দেখলো আয়াশ।আয়াশ ইনানকে দেখে বিষ্মিত হয়ে বলল

“কি রে এতো সুন্দর করে রেডি হলি যে।”

ইনান একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল

“তো কি বান্ধবীর হলুদে গাজাখোরের মতো যাবো।একটু সেজেগুজে গেলেতো কয়েকটা মেয়ে পটে যাবে।”

“আমার মনে হচ্ছে এখানে অন্যকিছু রয়েছে।”

“আরে এতো কমপ্লিকেটেড করছিস কেনো?সহজ ভাবে নে।আর চলতো ওর জন্য একটা গিফট কিনবো।”

“আচ্ছা চল।”

ইনান একবার আয়ানায় নিজেকে দেখে নিয়ে বলল

“পারফেক্ট লাগছে তো?”

“একদম পারফেক্ট।”

চলবে….🍂

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আর আপনারা কি কিছু বুঝতে পারছেন?😉)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ১০ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ১০
#Arshi_Ayat

ইনশিরার কথা শুনে তিনজনই বিষ্মিত।ইনান তো কথাই বলতে পারছে না।আয়াশও কি বলবে বুঝতে পারছে না।পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আদ্রি ইনশিরাকে বলল

“ওয়াও দোস্ত!!কংগ্রাচুলেশনস”

“থ্যাংকু। ”

ইনশিরা আয়াশ আর ইনানের দিকে তাকিয়ে বলল

“কি রে তোরা খুশী হস নি?”

আয়াশ স্বাভাবিক হয়ে বলল

“ওইতো হজম করছিলাম।তা তোর বর এর নাম কি?”

“রায়ান শেখ।”

“ওহ!!কি করে সে?”(আদ্রি)

“ডাক্তারি।”

“ওহ!!তুই রাজি বিয়েতে?”(আয়াশ)

” হুম। রাজি না হওয়ার কি আছে ছেলে ভালো আর এবছরই তো আমাদের অনার্স শেষ সেই জন্য বিয়েটা করে নিচ্ছি বাকি পড়া বিয়ের পর পড়বো।”

“ওহ!!বিয়ে কবে?” (আদ্রি)

“পরশুদিন হলুদ তারপর বিয়ে এবং এরপরের দিন বউ ভাত।”

“এতো তাড়াতাড়ি?”(আয়াশ)

“হুম রায়ানের পরিবারে চাচ্ছে বিয়েটা তাড়াতাড়ি হোক রায়ানের পোস্টিং হবে কিছুদিনের মধ্যে তাই।”

“ও আচ্ছা, কংগ্রাচুলেশনস। ভালো থাকিস।আমাদের কিন্তু ভুলে যাস না।”

ইনশিরা হালকা হেসে বলল

“বিয়ে হচ্ছে বলে কি তোদের ভুলে যাবো?কখনও না। মরার আগে পর্যন্ত মনে রাখবো।তোরা তিনজন সত্যি অনেক ভালো।ভালোবাসি তোদের।”

ইনান কোনমতে ওদের কথা গুলো হজম করছে।বারবা চোখে পানি আসছে কিন্তু ইনান সমলে নিচ্ছে।আয়াশ আর আদ্রি বুঝতে পারছে ইনানের মনের অবস্থা।খুব কষ্টে মুখে হাসি রেখে ইনশিরার সাথে হাত মিলিয়ে বলল

“কংগ্রাচুলেশনস দোস্ত বিবাহিত জীবনে সুখী থাকিস।”

“ধন্যবাদ দোস্ত।”

“আমার একটু কাজ আছে আমি যাচ্ছি তোরা থাক।” (ইনান)

এটা বলেই ইনান উঠে গেলো।ইনান যাওয়ার পর ইনশিরা ওদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেলো আজ ও ক্লাস করবে না।ইনশিরা যাওয়ার সাথে সাথেই আয়াশ আর আদ্রি দ্রুত ইনানে বাসায় চলে গেলো।বাসায় যেতেই দেখলো ইনানের মা রান্নাঘর থেকে আসছে।ওর মা কে দেখে আদ্রি বলল

“আন্টি কেমন আছেন?”

“এইতো মা ভালো আছি।তোমরা?”

“আন্টি আমরাও ভালো আছি।ইনান কোথায়?(আয়াশ)

” ও তো সুইমিং পুলে পা ডুবিয়ে বসে আছে।কি হয়েছে আল্লাহ জানে আসার পর থেকে কোনো কথা বলছে না।তোমার কিছু জানো?

“না আন্টি।এইজন্যইতো দেখতে এলাম।” (আদ্রি)

“আচ্ছা যাও।”

আয়াশ আর আদ্রি৷ সুইমিং পুলের সামনে এসে দেখে ইনান আসলেই দুই পা হাটু পর্যন্ত ডুবিয়ে বসে আছে।আয়াশ আর আদ্রি দুজন দুইপাশে বসে পড়লো।তারপর আয়াশ বলল

“আমি তোকে আগেই বলেছিলাম ওকে বলে দে।”

“না তুই বললি না। নে এখন অপরাধী গান শোন।”

“আয়শা থাম তো।সব জায়গায় ইয়ার্কি।”(আদ্রি)

” আমি কই ইয়ার্কি করালাম।”

“চুপ,একদম চুপ।”

আয়াশ আদ্রির কথা শুনে হাতে আঙ্গুল দিয়ে বসে আছে।আদ্রি ইনানকে উদ্দেশ্য করে বলল

“দোস্ত এখন কি করবি?”

“কি আর করার আছে বল?দাড়িয়ে দেখা ছাড়া?”

“এখনো সময় আছে দোস্ত ইনশিরাকে বলে দে।”

“বললেও কিছু হবে না।এখন বললেও আমাদের ফ্রেন্ডশিপটা ভেঙে ফেলবে।”

“তো তুই কি করতে চাস?”(আয়াশ)

” কিছু না তোরা যা এখান থেকে।আমাকে একা থাকতে দে প্লিজ।”

আয়াশ বলল

“আমি থাকি তোর সাথে? ”

ইনান চিল্লিয়ে বলল

“না বলছি তো।”

তারপর আদ্রি আর আয়াশ উঠে গেলো।আদ্রি হাটতে হাটতে বলল

“দোস্ত ইনানের সাথে এটা ঠিক হলো না।”

“হুম রে খুব ভালোবাসে ওকে।”

“হুম কি আর করার নিয়তি মেনে নিতেই হবে।আচ্ছা আজকেতো আর ক্লাস হলো না আমি বরং বাসায় যাই।”

আদ্রি বাসায় চলে গেলো।আয়াশও বাসায় চলে এলো।আয়াশ বাসায় এসে ভাবছে ‘ধূর কি হলো এটা কই ভাবছিলাম আদ্রিকে আজকে বলে দেবো।কিচ্ছু হলো না,এই ইনশিরার বিয়েটা কেনো ঠিক হতে গেলো।ইশ!!এটা চক্করে আর বলাই হলো না।আর এই সময়ে বলাও যাবে না।”

রাত ১০.০০ টা…

আয়াশ ইনানের বাসায় গিয়ে দেখে ঘর অন্ধকার করে মদ খাচ্ছে। অলরেডী এক বতল শেষ।আয়াশ দৌড়ে এসে বলল

“দোস্ত এগুলা কি খাচ্ছিস?”

“ধূর সর তো।”

“প্লিজ ইয়ার এগুলো বাদ দে।”

আয়াশ সামনে তাকিয়ে দেখলো ল্যাপটপে দেবদাস মুভি চলছে।ও মাথায় হাত দিয়ে বলল

“হায় রে দেবদাস হওয়ার পুরো ট্রেনিং নিচ্ছিস দেখি।”

“তুই আমার কষ্ট বুঝবি না।তুই তো আর আদ্রিকে হারাস নাই।”

“কি আর করবি বল?এটা নিয়তি রে ভাই এখন কিচ্ছু করা যাবে না।তুই ইনশিরাকে ভুলে যা।”

ইনান আয়াশের দিকে তাকিয়ে বলল

“তুই ভুলতে পারবি আদ্রি কে?”

“কখনও না।”

“তাহলে আমাকে বলছিস কেনো?”

আয়াশ আর কোনো কথা বলতে পারলো না কিই বা বলবে।চার বছর ধরে ইনান ইনশিরাকে ভালোবাসে সব বিপদ থেকে রক্ষাও করেছে কিন্তু ইনশিরা বুঝলো না।ইনান হঠাৎ বলল

“গার্লস আর স্টুপিড।কিচ্ছু বোঝে না এরা।অসহ্য।”

আয়াশ ইনানকে ধরে শান্ত হতে বলল।ইনান একটু পর শান্ত হয়ে বলল

“থাক ও শুখে শান্তিতে থাক।আমি দূরে কোথাও চলে যাবো।এখানে থাকতে ভাল্লাগছে না।”

“কি বলছিস কোথায় যাবি?”

“যে দিকে দুচোখ যায়।”

আয়াশ বুঝতে পারলো যে ইনান নেশার ঘোরে উল্টা পাল্টা বকছে।আয়াশ মদের বোতল বাইরে ফেলে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল

“ভাই প্লিজ শান্ত হো।আমি জানি তোর কষ্ট হচ্ছে।তোর কষ্ট দেখে আমারও কষ্ট হচ্ছে।এমন করিস না।এমন করলে আন্টি আঙ্কেল সবাই কষ্ট পাবে।ধৈর্য ধর প্লিজ।”

ইনান কিচ্ছু বলল না।আয়াশ ওকে ধরে শুয়ে পড়লো।আজকে এখান থেকে যাওয়া যাবে না কারণ গেলেই কোন একটা অঘটন ঘটাতে পারে।তাই আজকে ইনানের সাথে ঘুমাবে বলে ঠিক করলো।ইনান ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু আয়াশ ঘুমাতে পারছে না ইনানের বিড়বিড় করার কারণে।ইনান বিড়বিড় করে বলছে

“ভালোবাসাই উচিত না খালি কষ্ট আর কষ্ট।”

এমন আরো অনেক কথা বলছে ঘুমের মধ্যে।”

পরেরদিন সকাল আয়াশ ঘুম থেকে উঠে দেখে ইনান এখনো ঘুমাচ্ছে।আয়াশ ইনানকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল

“ইনান উঠ, সকাল হইছে।”

ইনান চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বলল

“কি হইছে ষাড়ের মতো চিল্লাচ্ছিস কেনো?আর তুই আমার বিছানায় কেন?রাতে আবার কখন আসলি?”

আয়াশ বুঝতে পারলো ইনান রাতের কথা সব ভুলে গেছে।তারপর আয়াশ বলল

“এইতো তুই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আসছিলাম।”

“ওহ!!চল তোর বাসায় গিয়ে রেডি হয়ে ভার্সিটিতে আয় ইনশু…”

এতটুকু বলার পর ইনানের কালকের সব মনে পড়ে গেলো আর আস্তে আস্তে চেহারায় কালো মেঘ জমতে শুরু করলো।ইনান তৎক্ষনাৎ আয়াশকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে রুম থেকে বের করে দিলো আর দরজা বন্ধ করে দিলো।আয়াশ দরজা ধাক্কাচ্ছে আর বলছে

“দোস্ত পাগলামি করিস না প্লিজ দরজা খোল।”

ইনান রুম থেকে জোরে জোরে বলল

“তুই যা প্লিজ। আমার ভাল্লাগছে না।”

“ইনান প্লিজ ইয়ার।”

“যা এখান থেকে। ”

আয়াশ হতাশ হয়ে চলে গেলো।ইনান দরজা জানালা বন্ধ করে রুম অন্ধকার করে বসে আছে।ইনান ভাবতেই পারছে না কাল ইনশিরার গায়ে হলুদ।মন চাচ্ছে সব আছড়ে ভেঙে ফেলতে।শেষ পর্যন্ত কি ইনান ইনশিরাকে হারিয়ে ফেলবে!!!…..

চলবে….🍂

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আর ইনানের জন্য কি কারো খারাপ লাগছে?😶)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ০৯ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ০৯
#Arshi_Ayat

নীল ওদের ইনশিরা আর আদ্রির সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে নিচে নেমে গেলো।এই সুযোগে আয়াশ আর ইনান ছাদে উঠলো।ওদের দেখে আদ্রি বলল

“কি রে সকাল বেলা কই গেছিলি?”

“একটা কাজ ছিলো।(আয়াশ)

” শোন তোদের একটা জিনিস শোনাবো।”

ইনশিরা কৌতূহলী কন্ঠে বলল

“কি?”

আয়াশ আদ্রি আর ইনশিরার সামনে রেকর্ডিংটা অন করে দিলো।পুরো কনভার্সেশন শোনার পর আদ্রি রেগে বলল

“দাড়া হারামিকে এখনি গিয়ে শায়েস্তা করে আসি।”

“ওরে আজকে থাপ্পড় দিয়ে বয়রা বানমু শালা শয়তান।” (ইনশিরা)

আয়াশ ওদের দুইজনকে থামিয়ে বলল

“আরে এখন কিছু করিস না।একটু পর সবাই যখন চলে যাবে ফেনুয়া তখন ওকে টাইট দিবি।ইনশু এখন তুই ওকে ফোন দিয়ে বাড়িতে থাকতে বলবি।তারপর আদ্রি আর তুই মিলে যা করার করিস আমরা কিচ্ছু বলবো না।(আয়াশ)

” হুম এখনই ফোন দিয়ে বল ওকে বাসায় থাকতে।”

“ওকে।”

ইনশিরা নীলকে ফোন দিলো ওদের সামনে ফোন স্পিকারে দিয়ে।নীল রিসিভ করতেই ইনশিরা বলল

“হ্যালো,নীল।”

“হ্যা,ইনশিরা বলুন।”

“আপনি এখন কোথায়?”

“আমিতো হাটতে বের হয়েছি।কেনো কোন সমস্যা?”

“না সমস্যা না কিন্তু আপনাকে একটা কথা বলবো।খুব ইম্পর্টেন্ট।একটুপর সবাইতো ফেনুয়া চলে যাবে তখন বাসায় একটু থাকবেন প্লিজ।”

নীল যেনো এটাই চাইছিলো তাই ও তাড়াতাড়ি বলল

“আচ্ছা আমি থাকবো।”

তারপর ইনশিরা ফোন কেটে দিলো আর ওদের সাথে হাই ফাইভ করলো।আদ্রি আয়াশকে বলল

“দোস্ত দুইটা হকি স্টিক জোগাড় কর।”

“নো টেনশন হকি স্টিক জোগাড় করতে পারি নাই কিন্তু দুইটা ক্রিকেট ব্যাট আনছি তোদের জন্য।”(ইনান)

” ব্যাট দিয়ে চলবে তো?”(আয়াশ)

“চলবে মানে!!দৌড়াবে।” (ইনশিরা)

“ওকে এখন চল নীল যেনো কোনো ভাবেই এটা না জানতে পারে।”(আয়াশ)

সবাই নিচে নামলো।আধঘন্টা পর সবাই বেরিয়ে গেলো।আদ্রি, ইনান,আয়াশ ওরা তিনজন বাড়ির পিছনে লুকিয়ে রইলো।আর ইনশিরা বাড়ির সামনে নীলের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।একটুপর নীল এসেই বলল

” অনেক দেরি করে ফেলেছি তাই না?সরি। ”

“আরে না না সমস্যা নাই।”

“আচ্ছা বলো কি বলবে।”

“হুম বলছি।”

এটা বলেই ইনশিরা আদ্রি বলে একটা ডাক দিলো।নীল কিছু বুঝে উঠার আগেই আদ্রি নীলের পিছনে এসে হাজির।আর এদিকে আয়াশ আর ইনান ছাদে দুইটা চেয়ার পেতে বসেছে।আয়াশ ইনানের দিকে মুরি এগিয়ে দিয়ে বলল

“নে খা।”

ইনান ভ্রু কচকে বলল

“মুরি কেনো দিচ্ছিস?”

“আরে বেটা লাইভ শো দেখতে বসছিস সাথে পপকর্ন নিয়ে বসতে হবে তো নাকি?কিন্তু পপকর্ন না থাকায় মুরি দিয়ে কাজ চালাতে হবে আর কি।”

ইনান হাসতে হাসতে মুরি মুখে দিলো।আর এদিকে ইনশিরা নীলের হাটুতে একটা বাড়ি মেরে বলল

“আমাদের দুইজনকেই তোর চাই তাই না?” (ইনশিরা)

“এগুলা কি বলছো?” (নীল)

“আহারা ময়নাটা কিচ্ছু বোঝে না।দাড়া বুঝাচ্ছি।(আদ্রি)

এটা বলেই নীলের পায়ে ব্যাট দিয়ে জোরে দুইটা দিলো।তারপর ইনশিরা বলল

” কি গো ময়না এখন বুঝছো?নাকি আরেকটু বুঝানো লাগবে?”(ইনশিরা)

“আহারে,ময়নাটার সাথে এভাবে কথা বলছিস কেনো?তোর কি দয়া মায়া নাই?”(আদ্রি)

” না রে দোস্ত আমার না দয়ামায়া নাই।তুই একটু আদর করে বল না ওকে।”(ইনশিরা)

“আচ্ছা যা তুই একটু রেস্ট নে ময়নাকে আমি একটু আদর দিয়ে বোঝাই।”(আদ্রি)

এই বলে আদ্রি ইচ্ছা মতো মারা শুরু করলো নীলকে বেচারা আর দাড়িয়ে থাকতে পারলো না ধপাস করে পড়ে গেলো।তারপর ইনশিরা এসে ওর কলার টেনে বলল

” কি গো ময়না বুঝছো?নাকি আমি বুঝাবো।”

আর এদিকে ইনান আয়াশকে হাসতে হাসতে বলল

“দোস্ত এতো সুন্দর লাইভ শো আমি জীবনেও দেখি নাই।”

আয়াশও হাসতে হাসতে বলল

“তু মেরা মু কে বাত ছিনলি ইয়ার।”

দুজনেই সেই লেভেলের মজা পাচ্ছে ছাদে বসে।

তারপর ইনশিরা গুণেগুণে দুইটা থাপ্পড় মেরে বলল

“আর জীবনেও যদি মেয়েদের দিকে খারাপ নজরে তাকিয়েছিস তো এর থেকেও ডাবল ডোজ পড়বে।আর হ্যাঁ এগুলো যাতে কোনোভাবেই কারো কানে না পৌছায়।বুঝলা ময়না?”

তারপর আদ্রি আর ইনশিরা ছাদে চলে এলো।ওরা আসতেই আয়াশ বলল

“বাহ!!কি মাইর দিলি।আমি ফিদা।”

“হুম দারুণ।এবার চল বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসি।(ইনান)

আদ্রি আর ইনশিরা সম্মতি জানালো তারপর একটু পানি খেয়ে বাড়ির সামনে আসলো।এসেই দেখলো আয়াশ নীল কে বলছে

” শোন ওরা মারছে তাই এই অবস্থা।আর যদি আমরা মারতাম তাহলে কোনো অবস্থাতেই থাকতি সো সময় থাকতে এখান থেকে চলে যা। আর একবারে বিয়ের দিন আসবি এর আগে যাতে তোকে এখানে না দেখি।(আয়াশ)

আদ্রি পিছন থেকে এসে আয়াশের মাথা টোকা দিয়ে বলল

“ডায়লগ মারা হইলে চল যাই।”

ইনান দাত কেলিয়ে বলল

“হুম আমাদের শহিদ কাপুরের ডায়লগ দেওয়া হইছে।”

“আচ্ছা চলেন এবার।(ইনশিরা)

ওরা চারজন বেরিয়ে পড়লো।কিছুদূর হাটার পর দুইটা হিজড়া ওদের সামনে এসে বলল

“আমাগো একশ টাকা দে।”

“কুমিল্লায় মনে হয় তোরা নতুন তাই না?”

“হ,,বসের লগে দেখা করতে আইছি।”

“হুম তো আমাদের কাছে টাকা চাইছিস কেনো?” (ইনান)

“ওই বেশি কথা কবি না তোরা। একশো টাকা দে নাইলে জামা খুলমু।”

আয়াশ হাসতে হাসতে বলল

“আচ্ছা খোল।”

ইনান আয়াশের হাতে চিমটি দিয়ে বলল

“জামা খুলতে বলছিস কেনো?একশো টাকা দিয়ে দে।”

আয়াশ অভয় দিয়ে বলল

“আরে ভয় পাচ্ছিস কেনো?ওদের কিছু আছে নাকি?যে জামা খুললে লজ্জা পাবো।ওরা ভয় দেখানোর জন্য এটা বলছে।”

হিজড়া দুইটা আবার বলল

“দে বলতাছি,নাইলে…”

“নাইলে কি?” (আয়াশ)

আয়াশ কথা বলতে বলতে খেয়াল করলো মসজিদের ইমাম আসছে।এই সুযোগ ওদের ভাগানোর।আয়াশ তাড়াতাড়ি ইমামটার কাছে গিয়ে বলল

“হুজুর দেখেন এই হিজড়া গুলো আমাদের যেতে দিচ্ছে না।”

ব্যাস হয়ে গেলো আয়াশের আর কিছুই বলা লাগলো না ইমাম এসে হিজড়া দুইটাকে বয়ান দেওয়া শুরু করলো।এই ফাকে ওরা চারজন কেটে পড়লো।একটু দূর এগুতেই ইনশিরা বলল

“দোস্ত তোএবার চল বাসায় গিয়ে দেখি নীল গেছে কি না!”

“হুম চল যাওয়া যাক।” (আয়াশ)

ওরা চারজনই বাসায় চলে গেলো।গিয়ে দেখলো আয়াশের নানুরা চলে এসেছে কিন্তু নীলকে খুজেই পাওয়া যাচ্ছে না তারমানে চলে গেছে নীল।চারজনই হাফ ছেড়ে বাচলো।

এভাবেই একসপ্তাহ পার হয়ে গেলো।অনেক মজা হাসি আনন্দ দিয়ে।গত দুদিন আগে ওরা আবার ঢাকা ফিরেছে। দুদিন কেউ ভার্সিটিতে যায় নি।সবাই নাক ডেকে ঘুমিয়েছে।

আজ সোমবার…

সবাই ভার্সিটিতে আসবে।আগেরদিন রাতে এমন কথাই হয়েছিলো ওদের চারজনের মাঝে।

ক্যান্টিনে বসে আয়াশ আর ইনান তাদের প্রিয়তমার জন্য অপেক্ষা করছে।দুজনেই খুব খুশি কারণ আজই বলে দিবে ওদের মনের কথা।একটুপর আদ্রি এসে বসতে বসতে বলল

“কি রে আজ দেখি আমাদের শহিদ কাপুর আর আদিত্য কাপুরকে খুব খুশি খুশি লাগছে।কাহিনি কি?”

“পরে বলবো।এখন চুপ থাক।(ইনান)

” তুই চুপ থাক।আচ্ছা ইনশু আসে নি?”(আদ্রি)

“আসলেতো দেখতে পেতি।”

আদ্রি আয়াশকে ভেংচি দিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো।কিছুক্ষণ পর ইনশিরাও আসলো।এসেই বলল

“গাইস তোদের জন্য একটা গুড নিউজ আছে।”

তিনজনই উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ইনশিরা দিকে।এর মাঝেই ইনান বলল

“কি খুশির খবর?”

“আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। ফাইনালি তোরা আমার বিয়ে খেতে পারবি।”

চলবে…..🍂

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আপনাদের এক্সাইটমেন্টের জন্য আজকে আরেকটা পার্ট দিলাম সো এখন বলেন লাইভ শো কেমন লাগলো?আর আপনারা চিন্তা করুন এরপর কি হবে!!”😉)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ০৮ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ০৮
#Arshi_Ayat

হঠাৎ ইনশিরা পড়ে যেতে নিলেই কেউ একজন এসে ওর হাতটা ধরে ফেলে।তারপর হাত ধরে উঠিয়ে বলে

“এই যে মিস একটু দেখে শুনে খেলবেন তো।এখনি না ধরলে তো কোমরের দুই টুকরা হয়ে যেতো।”

ইনানও এসেছিলো ইনশিরাকে ধরতে কিন্তু ছেলেটির জন্য পারে নি।ইনান রাগে হাত মুট করে ফেলে।পিছন থেকে আয়াশ ইনানের কাধে হাত রেখে কানে কানে বলল

“কুল ইয়ার।ও আমার আমার খালাতো ভাই মানে যার বিয়ে তার ফুপাতো ভাই।শালা এক নাম্বারের লুচ্চা।”

ইনান রাগে বলল

“ও যদি আমার ইনশুর দিকে চোখ দেয় তাইলে ওর খবর আছে।”

“দেখি কি করে।আয় ওদের কাছে যাই শুনি কি বলে।”

তারপর ওরা ওদের দিকে আসতে লাগলো।এদিকে ছেলেটা ইনশিরার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল

“হাই আমি নীলাস হাসান।আকাশের ফুপাতো ভাই।”

ইনশিরা সৌজন্যমূলক হেসে হাত মিলিয়ে বলল

“জ্বি,আমি ইনশিরা।কিন্তু আকাশ কে?”

নিলাস একটু হেসে বলল

“যার বিয়েতে এসেছেন সে।”

“ওহ।”

ওরা কথা বলতে বলতে আদ্রি আর ইনান,আয়াশ ও চলে এসেছে সেখানে।আয়াশ এসেই নীলের সাথে হাত মিলিয়ে বলল

“কেমন আছো?”

“এইতো ভালো, তুমি?”

“আমিও ভালো।আর ওরা তিনজন আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড।”

“ওহ।”

নীল প্রথমে আদ্রির দিকে হাত বাড়িয়ে বলল

“হাই।কেমম আছেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি?”

“ভালো আছি।”

তারপর ইনানের সাথে হ্যান্ডসেক করে ভিতরে চলে গেলো।ইনান আয়াশের কানে কানে বলল

“দোস্ত শালা মনে হয় আমাদের দুজনের টার দিকেই চোখ দিছে।”

“দেওয়াইতাছি চোখ দাড়া।এমন প্লেন করমু বাপের জন্মেও চোখ দেওয়ার সাহস পাইবো না।”

“কি করবি রে?”

“আগে দেখমু ও কি করে।তারপর প্লেন।”

“ওকে দেখি কি প্লেন কিন্তু তুই যদি কিছু করতে না পারিস তাইলে ওরে আমার হাত থেকে কেউ বাচাতে পারবো না।”

আয়াশ ইনানের মাথায় টোকা দিয়ে বলল

“এটাতো মুভির ডায়লগ ।”

“আরে একটু আগে মুভি দেখছি না এইজন্য এই ডায়লগ মাথায় আসছে।”

আয়াশ ওর কথায় জোরে জোরে হেসে দিলো।তারপর ঘরে গিয়ে দেখে ইনশিরা আর আদ্রি হেসে হেসে নীলের সাথে কথা বলছিলো।এটা দেখে ইনান আয়াশ দুজনের শরীরেই আগুন ধরে গেছে যাইহোক কোনমতে দুজনেই সেই আগুনে পানি ঢেলে ওদের সাথে গল্প করতে বসলো।

সন্ধ্যার সময় ইনশিরা একা ছাঁদে দাড়িয়ে আছে কারণ আয়াশ আর ইনান বাজারে গেছে লেবু আনতে আয়াশের নানি পাঠিয়েছে আর আদ্রি ঘরে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে কিন্তু ইনশিরার ঘুম আসছে না তাই সে এখানে দাড়িয়ে আছে।হঠাৎ কে যেনো পিছন থেকে বলে উঠলো

“মন খারাপ নাকি?”

ইনশিরা পিছনে তাকিয়ে নীলকে দেখতে পেলো তাই ও সৌজন্যমূলক হেসে বলল

“না তেমন কিছু না।আসলে ওরা কেউ নেই তো তাই এখানে দাড়িয়ে আছি।”

“ওহ!!কিছু মনে না করলে আমি আপনার সাথে কথা বলতে পারি।”

“আরে মনে করার কি আছে।বলতে পারেন।”

ওরা দুজনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলছে।এদিকে আয়াশ আর ইনান নিচ থেকেই দেখছে দুজনে কথা বলছে।ইনানের প্রচুর রাগ উঠছে আয়াশ ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল

“দোস্ত এভাবে না দাড়া ওর শায়েস্তা করছি।চল ছাদে চল।”

দুজনই ছাদে উঠলো তারপর ওদের সাথে কিছু কথা বলল।তারপর সবাই নিচে নেমে গেলো।সন্ধ্যা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত নীলকে ইনান আর আয়াশ চোখে চোখে রেখেছে।নীল কখনো আদ্রির সাথে তো কখনো ইনশিরার সাথে লাইন মারার চেষ্টায় আছে।এগুলো দেখে আয়াশ আর ইনান দুজনেরই রক্ত মাথায় উঠে গেছে।

এখন রাত ১১.০০ টা..

নীল বাইরে গেছে।আয়াশ আর ইনানও ওকে খুজতে বাইরে গেছে কারণ নীলকে বলে দিবে ইনশিরা আর আদ্রির সাথে কথা বলতে না।কিন্তু ইনান আর আয়াশ বাড়ির সামনে জাম গাছটার সামনে এসে একটা কথা শুনে থমকে গেছে।নীল কাউকে যেনো ফোনে বলছিলো

“দোস্ত মাল দুইটা হেব্বি।”

“……..”

“একটার নাম ইনশিরা আরেকটার নাম আদ্রি।”

“…….”

“না মামা আমার দুইটাই লাগবো।”

“…..”

“ওকে,মামা বাই।”

নীলের কথা শেষ হতেই ইনান গিয়ে নীলকে মারতে চাইলো কিন্তু আয়াশ আটকালো।ইনান রেগে বলল

“কি রে আটকালি কেনো?”

“দোস্ত প্লিজ শান্ত হ।”

“কেমনে?দেখলি ও আমার ইনশুরে মাল কইছে।ওরে তো আমি….”

“কুল ইয়ার আদ্রিরে ও তো কইছে।শোন ওরে যদি আমরা মারি তাইলে এখন একটা হাঙ্গামা শুরু হইবো।আর সব দোষ পড়বো আমাদের ঘাড়ে।আর আমরা মারলে ওর লজ্জা হইবো না তার চেয়ে ভালো আমার কাছে একটা প্লেন আছে।”

“কি প্লেন?”

আয়াশ ইনানকে নিয়ে বাড়িতে চলে এলো এবং ছাদে উঠে গেলো।তারপর ওর ফোন বের করে রেকর্ডার অন করলো।ইনান শুনে বলল

“দোস্ত তুই নীলের কথাগুলো রেকর্ড করছিস কখন?”

“আমি যখন ওর প্রথম লাইনটা শুনেছিলাম তখনই রেকর্ডার অন করছিলাম।”

“ওয়াও দোস্ত। এখন কি করবি?”

“এখন এই রেকর্ডারে ওর কথার পাশাপাশি যে কথা বলছে তার কথাতো আমরা শুনি নাই সো ওই কথা গুলো আমরা কাউরে দিয়ে সেট করমু।তারপর ইনশু আর আদ্রিরে শুনামু।তারপর যা করার ওরাই করবে।আর আমরা লাইভ শো দেখমু।আমার আদ্রিরে তো চিনিস ই ধরতে পারলে তক্তা বানায় ফেলবে।আর ইনশিরাতো মাশাল্লাহ যেই থাপ্পড় গিলি মারে এই পাশের দাত ওই পাশে আর ওই পাশের দাত এই পাশে চলে আসে।

এটা বলেই আয়াশ হাসতে লাগলো সাথে ইনান ও।তারপর ইনান বলল

” এভাবে আর কয়দিন ওদের না বলে থাকবো।বলে দেওয়া উচিত নাহলে নীলের মতো আরো অনেকে আসবে।”

“হুম ঠিক বলছিস।কিন্তু এখন না ঢাকা ফিরি তারপর দুজনই বলে দিবো।”

“হুম সেটাই ভালো হবে।”

সকালে উঠে ইনশিরা আর আদ্রি ব্রাশ করতে করতে ছাদে গেলো।এইফাকে নীলও এলো ওদের সাথে গল্প করতে নীচ থেকে আয়াশ বলল

” হুম বলো বলো আরো বলো আজকে যখন ওদের হাতে জুতার বাড়ি খাবা তখন বুঝবা।”

ইনান আয়াশের কথা শুনে হাসতে হাসতে বলল

“রেকর্ডিং পারফেক্ট তো?”

“হুম এখনই শুনাবো।একটু পর নানি আর মামিরাসহ সবাই ফেনুয়া যাবে তখন প্লেন অনুযায়ী ইনশু ওরে ফোন দিয়ে বাড়িতে থাকতে বলবে আর আমি শিওর ও থাকবে।তারপর ইনশু আর আদ্রি মিলে যা করার করবে।”

“আর আমরা লাইভ শো ইনজয় করবো।ইয়াহু”

চলবে…..🍂

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আর আগামি পর্বে লাইভ শো দেখতে আইসেন কিন্তু😁😜)