Thursday, December 18, 2025
Home Blog Page 10

এই_ভালো_এই_খারাপ #পর্ব১ #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0

#এই_ভালো_এই_খারাপ
#পর্ব১
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

[ এই গল্পের চরিত্রগুলো অসংখ্য ভুলত্রুটি দিয়ে ভরা। এখানে কেউ পার্ফেক্ট নয় ]

“আমার স্বামী আমাকে সহ্য করতে পারেনা। কিছু হতে না হতেই ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। কথায় কথায় বলে, বেরিয়ে যাও। এবার তো সোজা বাড়ি থেকে বের করে দিল ঘাড়ধাক্কা দিয়ে। আজ দুই সপ্তাহ বাপের বাড়িতে পড়ে আছি। কোনো খোঁজখবর অব্দি নেয়নি। ”

বলতে না বলতেই কেঁদে ফেললো তিথি। বয়স উনিশ-বিশ হবে। এইটুকুনি একটা মেয়েকে এভাবে বাড়ি থেকে বের করে দেয়াটা ঠিক হলো? এই ধরণের পুরুষগুলো কি যে চায় তারা নিজেও জানে না।

তাসলিমা খাতুন বললেন,

” এমন কেন তোমার বর? ”

তিথি গালমুছে বলল, ” আমি গরিব ঘরের মেয়ে তাই সহ্য করতে পারে না। কেমন নাক সিটকায় সবকিছুতে। অহংকারী মানুষ। কোনোদিন আমার বাপের বাড়িতে পা রাখেনি আমরা গরিব বলে। আমার বাবাকে বলে ছোটলোক।”

তাসলিমা খাতুন বললেন,

” এসব মোটেও ভালো না। অহংকার পতনের মূল।”

তিথি বলল, ” আমি কাউকে কিচ্ছু বলিনা। আমার বাবাকেও কিছু বলিনা উনি গালাগালি করেন বলে। একবার উনি গোলামের পুত বলে ডেকেছিলেন সেই থেকে যোগাযোগও বন্ধ করে দিতে বলেছেন কিন্তু আমি যোগাযোগ বন্ধ করিনি তাই আমাকে আরেকদফা অপমান করলো।
আমি কাকে কি বলব বুঝে উঠতে পারছিনা। আমার শ্বাশুড়ি অতটা খারাপ না কিন্তু উনার ছেলের হয়ে কথা বলে প্রায়সময়। বলেন, তোমার শ্বশুর আমাকে রোজ মারতো। এত বদমেজাজি ছিল তারপরও আমি কি বাড়ি ছেড়ে চলে গেছি? সোয়ামির ঘর করতে গেলে মাটির দলার মতো নরম হয়ে থাকতে হয়। ”

তাসলিমা খাতুন বললেন, ” তোমার প্রতি তার কোনো টান নেই? তুমি বুঝতে পারো না? ”

” না। টান থাকলে আমি মারধর খেয়েও পড়ে থাকতাম ওই বাড়িতে। পড়ে থাকবোই বা কি করে আমাকে তো ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল। মুখের উপর গেইট বন্ধ করে চলে গেল। দারোয়ানকে বলল গেইট খুললে ওদের মুন্ডু কেটে নেবে। আমার গর্ভে বাচ্চা এসেছে তাই আমি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। আমার মামাতো বোন বললো বাচ্চা নষ্ট করে ফেলতে তাহলে ডিভোর্স হয়ে গেলেও সমস্যা নেই। আমি কি করব বলুন। যাই হয়ে যাক ওই লোকটার সাথে আর কোনোদিন বনিবনা হবে না আমার। যাদের সাথে সংসার করা যায় তাদের মতো না ওই লোকটা। এত অহংকার, দম্ভ যে মাটিতে পা পড়েনা। কথায় কথায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও, কিছু খেতে না চাইলে এত আহ্লাদ আসে কোথা থেকে, এত ছোটলোকের মতো চলাফেরা কেন, এসব কথায় জর্জরিত করে আমাকে। ”

তাসলিমা খাতুন বললেন,

” তুমি আমার কাছে এসে ভালো করেছ। কিন্তু তুমি আমার কথা শোনো। বাচ্চার কথাটা জানিয়ে দাও তোমার হাসবেন্ডকে। ”

তিথি বলল, ” জানে ভালো করে। ”

তাসলিমা খাতুন অবাক হয়ে বললেন,

” জানার পরেও বের করে দিল? তোমার হাসবেন্ডের সাথে কি অন্য কারো সাথে অ্যাফেয়ার আছে? ”

” থাকলে তো ভালোই হতো। কিন্তু সবাই তো আমার মতো গর্দভ নয়। আমাকে পেয়েছে কপাল করে। ওরকম দাম্ভিক অহংকারী দামড়া গন্ডারের সাথে জেনেশুনে কেউ নিজেকে জড়াবে না। আমার বাবা কি দেখে যে এত টাকাপয়সা ধারদেনা করে বিয়ে দিল আমি জানি না। এখন কিছু বললে ফোনের ওপাশে গোলামের পুত বলে চিল্লায়। কিন্তু মেয়ে জামাইয়ের সামনে গেলে সেই নেংটি ইঁদুরের মতো পালাই পালাই করে। ”

তাসলিমা খাতুনের হাসি পেল কথাটায় কিন্তু উনি নিজের ভাবগাম্ভীর্যতা ধরে রেখে বললেন,

” তোমার গায়ের রঙ শ্যামকালো। এটা বলে কি খোঁটা দেয় তোমাকে? ”

তিথি বলল, ” মাগোমা খোঁটা দেবে কেন? আমার চেহারায় কি মায়া। তাই তো এতদিন একটু হলেও আদর সোহাগ পেয়েছি।
আর সেও অত সুন্দর কোথায়? আমার চাইতে একটু উজ্জ্বল রঙ। তাছাড়া গায়ের রঙ ফর্সা হলেই কি সুন্দর বলে তাকে? মুখটাকে সারাক্ষণ হনুমানের মতো করে রাখে। আমাকে দেখলেই নাকটাকে এমনভাবে তুলে রাখে যেন আমি তরতাজা পায়খানা। আর পায়খানার তাজা গন্ধে তার চারপাশ ভরে গেছে। ”

তাসলিমা খাতুন নড়েচড়ে বসলেন। হাসলেনও। তিথি তা দেখে বলল,

” আমার কথায় হাসি পাচ্ছে আপনার? আমি কি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি তা আপনাকে বলতে পারছিনা। আমি পরামর্শ নিতে এসেছি। পরামর্শ দিন। আপনার ফি অনেক। বারবার আসতে পারব না। ”

তাসলিমা খাতুন বলল, ” তুমি কোনো সমাধান না পেলে ফিসটা নিয়ে যেও যেহেতু তোমার শ্বাশুড়ি আমার ছোটবেলার বন্ধু হয়। ”

তিথি বলল, ” ওসব কথা ছাড়ুন। আমি কি করব সেটা বলুন। ”

তাসলিমা খাতুন বললেন,

” আমার আরও প্রশ্ন আছে তিথি। দেখো স্বামী স্ত্রীর মধ্যেকার সম্পর্কটা খুব সহজ আবার খুবই কঠিন। তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তোমার হাসবেন্ড কোনো একটা কারণে তোমাকে সহ্য করতে পারে না। তুমি কখনো তার মন যুগিয়ে চলতে চেয়েছ? ”

তিথি বলল, ” অনেকবার। রাতে কি এমনি এমনি ভালোবাসতো? ”

বলেই নিজে লজ্জা পেয়ে গেল। তাসলিমা খাতুন হেসে বললেন, ” লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। বলো।”

তিথি বলল, ” শ্বাশুড়ি মা বলেছেন সেজেগুজে থাকতে। তাই রাতে সাজগোজ করতাম। কিন্তু সেই গন্ডার তো সাজগোছও পছন্দ করেনা। সেবার ভিমবার এনে দিল লিপস্টিক মোছার জন্য। ভাবতে পারেন? ”

তাসলিমা খাতুন বলল, ” কি বলো? এতো রীতিমতো অত্যাচার? ”

” শুধু কি তাই? আমি ছোটলোক বলে এক টেবিলে বসে কোনোদিন খায়নি। আমার ব্যবহ্ত সাবান কখনো ইউজ করে না। আমার কাপড়চোপড় কখনো তার আলমিরায় ঠাঁই পায়নি। ”

তিথির চোখে জল টলমল করে উঠে। তাসলিমা খাতুন তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,

” কাঁদবে না তিথি। বি স্ট্রং। ”

তিথি টিস্যু দিয়ে নাকের পানি মুছে বলল,

” কাঁদবো না আর। অনেক কেঁদেছি। ”

তাসলিমা খাতুন বললেন,

” গুড। তোমার স্বামীর সাথে পরিবারের বাকি সদস্যদের সম্পর্ক কেমন? ”

” ভালো। ”

” শুধু তোমার সাথে এমন করে? ”

” হ্যা। ”

” তোমার শ্বাশুড়ি ছেলেকে একটুও বকাঝকা করে না? বোঝায় না? ”

তিথি অবাককন্ঠে বলল,

” অতবড় কলিজা কার? এমন গন্ডার যে একটা চিৎকার দিলে মনে হয় ভূমিকম্প হচ্ছে। তাছাড়া বেয়াদব মানুষের কাছ থেকে যতই দূরে থাকা যায় ততই মঙ্গল। আমার শ্বাশুড়িটা মানুষ খারাপ না। উনার বাকি ছেলেমেয়ে গুলোও অতটা খারাপ না। কিন্তু এটা গুন্ডা হয়েছে। ”

তাসলিমা খাতুন বললেন,

” এ পর্যন্ত কতবার ঘর থেকে বের করে দিয়েছে? ”

” বিয়ের পর ঘর থেকে বের করে দিয়েছে চল্লিশ পয়তাল্লিশ বারের মতো। বাড়ি থেকে এই তৃতীয় বারের মতো। আর কত অপমান সইবো বলেন। দারোয়ান আর কাজের বুয়া সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিলো ঠোঁট টিপে। আমার গলায় দঁড়ি দিতে ইচ্ছে হয়েছিলো তখন। প্রত্যেকবার ঘর থেকে বের করে দিলে শ্বাশড়ি এসে চেঁচামেচি করলে ঘরে ঢুকাতো। মেঝেতে শুতে বলতো। অনেক রাত মেঝেতে ঘুমিয়েছি। শীতে কেঁপেছি একটুও মায়া হয়নি। আমাকে বের করে দিলে শ্বাশুড়ি বলতো, ওকে ঠেলে তুই ঘরে ঢুকে যাবি। বলবি এটা আমার ঘর। ”

” বলেছ? ”

” হ্যা বলেছি। বিনিময়ে মেঝেতে ঘুমাতে হয়েছে। আপনি না দেখলে বুঝবেন না। একটা আগাগোড়া বর্বর প্রকৃতির মানুষ সে। নেই মায়া-দয়া, টান-মহব্বত, ভালোবাসা। টনে টনে ইগো আর অহংকার, দম্ভ, রাগ আর ক্ষমতার বড়াই। আমাকে ইচ্ছে করলে কাছে টেনে নিয়েছে আবার ইচ্ছে করলে ঘর থেকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে। বলেছে এটা তোমার বাড়ি নয়। যেন আমি একটা হাতের পুতুল। আমি কোথায় যাব এখন? ”

তাসলিমা খাতুন বললো, ” হতাশ হইয়ো না তিথি। তোমার কোনো বদঅভ্যেস আছে যা তোমার বর অপছন্দ করে? ”

তিথি বলল, ” সে তো অনেকককক আছে। এত কথা বলতে চাইনা। আমি ডিভোর্স চাই ব্যস। ”

তাসলিমা খাতুন বললেন, ” তাহলে বাচ্চাটা এবোরশন করিয়ে ফেলো। ”

তিথি বলল, ” গন্ডারের বাচ্চা গন্ডারই তো হবে। রেখে লাভ কি? ”

তাসলিমা খাতুন ঠোঁটের কোণায় মৃদু হাসির রেখা টেনে বলল, ” কিন্তু এবোরশন করানোর সময় তোমার হাসবেন্ডকে লাগবে। তার অনুমতি ছাড়া হবে না। ”

তিথির কপালে হাত। ” আমি ওই লোকটার সামনে আর যাব না ভাবছি। ”

তাসলিমা খাতুন বললেন, ” বাচ্চাটা তো তোমার একার না। তাই তোমার একার সিদ্ধান্তে কিছু হবে না। আর এটা অনেক সেনসেটিভ একটা ইস্যু। ”

তিথি অনুরোধ করে বলল,

” আমার সিচুয়েশনটা বোঝার চেষ্টা করুন। আমি এখন শুধু আমার কথা ভাবছি। এই বাচ্চা তো ওরা নষ্ট করতে দেবে না। আমাকে জিম্মি করার একমাত্র হাতিয়ার বাচ্চাটা। ”

তাসলিমা খাতুন খসখস করে কি যেন লিখলেন কাগজে। তিথির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

” সন্ধ্যায় পারলে আমার বাসায় এসো। তোমাকে বেস্ট সল্যুশনটা দেব আমি। এটা এড্রেস। ”

তিথি বলল, ” আপনার বাড়িতে কেন? ”

তাসলিমা খাতুন বললেন,

” ডিভোর্স পেপারে রেডি করার জন্য তোমাদের বিষয়ে আমাকে আরও আরও স্টাডি করতে হবে আমাকে। জীবনের এতবড় একটা সিদ্ধান্ত হুট করে নিয়ে ফেলা যায় না তিথি। ”

তিথি বলল, ” ওরা আমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠাবে। আমি চাইছি আগেভাগে পাঠিয়ে দিতে। তাহলে এই একটা জায়গায় আমি জিতবো। ওই লোকটা ভেবেছে আমি তার হাতের পুতুল। ”

তাসলিমা খাতুন বললেন, ” না না তিথি তুমি কারো হাতের পুতুল নও। তোমার কি জেদ! তুমি অবশ্যই জয়ী হবে। আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলো তোমাকে সে কখনো চড় থাপ্পড় মেরেছে? না মানে তোমার গালের পাশে একটা দাগ দেখতে পেলাম যে। ”

তিথি লজ্জায় কুঁকড়ে গেল। বলল,

” দেখুন, সেদিন আমাকে শেভ করিয়ে দিতে বললো। আমি কি ওসব পারি নাকি? শেভ করিয়ে দিতে গিয়ে গাল কেটে দিলাম। তাই আমার গালও ছিঁড়ে দিল। ”

তাসলিমা খাতুন বলল,

” কিভাবে? ”

তিথি চোখ নামিয়ে রাখলো। উত্তর দিল না।

__________________

” আহা ঘরদোর সব আন্ধার হয়ে গেল। ফিরে আয় বউ। এত মেজাজ গরম হলে জামাইয়ের ঘর করতে পারে না মেয়েরা। ”

তিথি বলল, ” আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি আম্মা। তোমার ছেলের কাছে আর যাব না। আমি সস্তা হতে হতে একেবারে নীচে নেমে গিয়েছি। ”

আম্বিয়া বেগম রেগে গিয়ে বললেন,

” তোর মতো খানকির বেটি তো আর দেখিনি। তুই ভাবলি কি করে আমার ছেলে তোকে আনতে যাবে। থাক ওখানে। মর। ”

তিথি অবাককন্ঠে বলল, ” তোমাদের রূপ দেখা হয়ে গেছে আমার। আজলান শেখকে বলবে ওই শেখবাড়িকে আমি পা দেখিয়েছি। ”

টুপ করে ফোনটা কেটে দিল তিথি। আম্বিয়া বেগম রাগ সংবরণ করার জন্য পায়চারি করতে করতে বলল,

” দেখেছ ওই মেয়ের গলা কতবড় হয়েছে? দেখেছ তোমরা? এই বাড়িকে নাকি পা দেখিয়েছে? ”

উপস্থিত কেউ কোনো জবাব দেয়নি। আজলান এসে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে জুতো খুলতে খুলতে বলে উঠলো,

” কে কাকে পা দেখিয়েছে মা? ”

আম্বিয়া বেগম চমকে উঠলেন ছেলের গলা শুনে। বললেন,

” কেউ না। আমরা অন্য কথা বলছিলাম। বলছিলাম কি বউটারে আনতে যাবি না? বাচ্চা পেটে নিয়ে বাপের বাড়ি আর কতদিন থাকবে? ”

আজলান বলল,

” সে বাচ্চা এবোরশন করাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেখি কতদূর এগোয়। ”

আম্বিয়া বেগমসহ বাড়িসুদ্ধ সবাই চমকালো কথাটায়। আম্বিয়া বেগমের বড় মেয়ে বলল,

” ওর সাহস তো কম না। দেখেছ মা মেয়েটা কতবড় শয়তান? ”

আজলান বলল,

” ও শয়তান? ওর পুরো গোষ্ঠীটা শয়তান। ”

আম্বিয়া বেগমের বুকটা কাঁপছে। তার বংশধরটা এভাবে চলে যাবে? না না এ হতে পারে না। তিনি বললেন,

” বউটার কথা ছাড়। বাচ্চাটার কথা ভেবে বউটাকে নিয়ে আয় বাবা। ”

আজলান মায়ের দিকে ফিরে চাইলো। আম্বিয়া বেগম আর কিছু বলার সাহস পেলেন না। রান্নাঘরে গিয়ে তিথিকে ফোন দেয়ামাত্রই তিথি ফোন তুললো। বলল,

” আবার কি? ”

” তোর পায়ে পড়ি বাচ্চাটা নষ্ট করিস না। ”

তিথি বলল, ” তোমাকে কে বললো কথাটা? ”

” আজলান বলেছে। তুই ওর হাতে মরতে চাস? ”

তিথি বলল, ” তোমার ছেলেকে এখানে পাঠাও। কে মরবে সেটা তখন দেখা যাবে। ”

আজলানের গলা শোনা গেল।

” মা গরম পানিটা দাও। ”

তিথি তার গলা শুনে ফোন কেটে দিল। গলার আওয়াজটা শুনলেই ঘৃণায় তার গা রিরি করে উঠে।

চলমান….

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ২৬ এবং শেষ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ২৬ এবং শেষ
#Arshi_Ayat

মেয়েটার কথাটা শুনে আদ্রির বুক ফেটে কান্না আসতে লাগলো।আদ্রি সোজা আয়াশদের বাসার ছাদে চলে গেলো।আর রেলিং এর ওপর উঠে দাড়িয়েছে হঠাৎ কেউ এক ঝটকায় টেনে নিচে নামালো আর কিছু বুঝে উঠার আগেই গালে একটা চড় দিলো
চড় খেয়ে সামনে তাকাতেই দেখলে আয়াশ গরম চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে।আদ্রি কান্না করতে করতে আয়াশকে জড়িয়ে ধরলো।আয়াশ ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল

“কষ্ট হচ্ছে?”

“হুম অনেক।”

“যখন আমাকে দিতি তখন আমারও কষ্ট লাগতো তোর থেকেও বেশি লাগতো।”

“সরি আয়াশ আমি তোকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।”

“কিন্তু আমারতো বিয়ে হয়ে গেছে।”

এবার আদ্রি আয়াশের বুকের থেকে মাথা উঠিয়ে বলল

“আমি বিশ্বাস করি না।”

“আচ্ছা বিশ্বাস করাই দাড়া।”

এই বলেই মুন বলে জোরে ডাক দিলো।আর মুন এসে হাজির হলো।মুনকে দেখে আদ্রি আয়াশকে ছেড়ে ছাদের কিনারায় চলে গেলো।আর বলল

“আয়াশ তোর যেহেতু বিয়ে হয়েই গেছে তাহলে আমি আর বেঁচে থেকে কি করবো।”

এই বলে যেই লাফ দিতে নিবে তখনই আয়াশ বলল

“আমার বিয়ে হয় নি।”

আদ্রি পিছনে ফিরে বলল

“কিহ!!!”

“হুম।মুন আমার বড় আপু আজকে আপুর আর দুলাভাইর বিয়ে হয়েছে।তোকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আর বোঝানোর জন্য এমনটা করেছি।আপু আর দুলাভাই দুজনেই আমাকে সাহায্য করেছে।তাছাড়াও আব্বু আম্মুও ইনান,ইনশিরাও জানতো। ”

এবার আদ্রি দৌড়ে এসে আয়াশকে জড়িয়ে ধরলো আর হাত দিয়ে আয়াশের বুকে কিল বসিয়ে দিলো।পিছন থেকে হাত তালির আওয়াজ পেয়ে দুজনেই পিছনে তাকাতেই দেখলো আয়াশের বাবা,মা,মুন আর ওর স্বামী, ইনান,ইনশিরা দাড়িয়ে আছে।প্রথমে ইনশিরা ই বলল

“শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলি না চলে আসতেই হলো।”

ইনান বলল

“আদ্রি এমনি এমনি আমরা আয়াশকে তোর কাছে বিয়ে দিবো না।তোকে আগে আমাদের ট্রিট দিতে হবে।”

আয়াশ বলল

“শালা পেটুক চুপ কর তুই।দেখিস না কান্না করতে করতে চোখ লাল হয়ে গেছে।”

তারপর মুন ওদের থেকে বিদায় নিয়ে আর আদ্রিকে সরি বলে চলে গেলো।আয়াশের বাবা মাও চলে গেলো হাসতে হাসতে।আয়াশ ইনানকে বলল

“তোদেরকে কি আলাদা করে যেতে বলতে হবে?”

“আচ্ছা আমরা গেলে তোরা কি করবি এখানে?”

“তোকে বলবো কেন?তুই বলছিস তুই বাসর রাতে কি করছিস!!”

ইনান মাথায় হাত দিয়ে বলল

“বিশ্বাস কর দোস্ত কিচ্ছু করি না শুধু… ”

এটুকু বলতেই ইনশিরা ইনানের মুখে হাত দিয়ে ওকে টানতে টানতে নিয়ে গেলো।ওরা যেতেই আয়াশ আবার আদ্রিকে বুকে টেনে নিলো।এরপর আদ্রির বাবা মা কে জানানো হলো।আদ্রির বাবা মা ও রাজি হলো।ওদের অনার্স শেষ হলেই বিয়ে হবে।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,

ছয়মাস পর…….

আজ আয়াশ, আদ্রি আর ইনান, ইনশিরার বিয়ে।কয়েকদিন আগে ওদের অনার্স পরীক্ষা শেষ হলো।ইনান আর আয়াশ দুজনেই শেরওয়ানি পরলো।আয়াশ কালো কালার আর ইনান নীল কালারের।ওদের শেরওয়ানির সাথে মেচিং করে ইনশিরা আর আদ্রি লেহেঙ্গা পরলো। দুজনে মিলে সুন্দর করে সাজলো।চারজনই একসাথে বসলো।আগে আয়াশ আর আদ্রির বিয়ে পড়ানো হলো তারপর ইনান আর ইনশিরার।চারজনই আজ খুশী।

ইনশিরা আর আদ্রি দুজনকেই বাসর ঘরে বসানো হলো।ইনান, আয়াশ আর ওদের বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছে।

রাত ১২ টায় দুজনেই ঘরে ঢুকলো।ইনান ঢুকতেই ইনশিরা ওকে সালাম করতে নিলেই ইনান ওকে জড়িয়ে ধরে বলল

“যখনই সালাম করতে ইচ্ছে হবে তখনই আমাকে জড়িয়ে ধরবি।”

“ভালোবাসি।” (ইনশিরা)

“আমিও।(ইনান)

এদিকে আয়াশ ঘরে আসতেই আদ্রি ওকে সালম করতে গেলো কিন্তু আয়াশ ধরে ফেললো তারপর কপালে চুমু দিয়ে বলল

“ভালোবাসিস?”

“খুব বেশিই।”

বলেই আয়াশকে জড়িয়ে ধরলো আদ্রি।এভাবেই ওদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো এক নতুন সম্পর্কের ভিড়ে।

❤সমাপ্ত❤

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।গল্পটা শেষ করলাম আজ।আপনাদের অনুভূতি জানাবেন।আর আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ আমি অসুস্থ থাকা কালীন আমাকে এভাবে সাপোর্ট করার জন্য। সত্যি আপনাদের সাপোর্ট না পেলে আমি হয়তো গল্পটাই শেষ করতে পারতাম না।সকলকে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ।আর নতুন গল্প নিয়ে হাজির হচ্ছি।নেক্সট গল্পটা অনেকটা আলাদা হবে।তাই চমক হিসেবে নামটা বলে দিচ্ছি।নেক্সট গল্পের নাম হলো “যদি_মন_কাঁদে “। নেক্সট গল্পের জন্য অপেক্ষা করুন।আর সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।নিজে ভালো থাকুন অন্যকে ভালো রাখুন।ধন্যবাদ।)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ২৫ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ২৫
#Arshi_Ayat

হঠাৎ মনে হলো কারো ছায়া পড়েছে জানালায় কিন্তু আদ্রি উকি দিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না।আদ্রি মনের ভুল ভেবে শুয়ে পড়লো।কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলো।আদ্রি কাউকে না দেখতে পেলেও আয়াশ ঠিকই এসেছিলো আদ্রিকে এক পলক দেখার জন্য।

এদিকে ঘর অন্ধকার করে জানালা খুলে খাটের ওপরে ইনশিরা আর ইনান দুজনেই মুভি দেখতে বসেছে।মভি যতো ভয়ানক হচ্ছে ততো ইনশিরা ইনানের সাথে ঘেষে বসছে।হঠাৎ ভুতটা স্ক্রিনের সামনে আসায় ইনশিরা ভয়ে ইনানের কোলে উঠে গেলো।ইনানও পিছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরলো আর কানে কানে বলল

“ভয় পাচ্ছিস?”

“হুম।প্লিজ মুভিটা বন্ধ করে দে না।অনেক ভয় করছে।”

“আরেকটু দেখ না।”

“না বন্ধ কর।”

“আচ্ছা। ”

ইনান ল্যাপটপ বন্ধ করে দিলো।তারপর ইনশিরাকে জিগ্যেস করলো

“এখন কি করবি?”

“ছাদে চল।চাদ দেখবো।”

ইনান দুষ্টামি করে বলল

“আমার চোখের সামনেইতো একটা চাদ বসে আছে।”

ইনশিরা লজ্জা পেয়ে বলল

“ধূর,চলতো।”

“আচ্ছা চল।”

ইনান আর ইনশিরা ছাদে গেলো।ইনান দোলনায় বসে ইনশিরাকে এক ঝটকায় কোলের উপরে বসালো।তারপর ওর পিঠে একটা চুমু খেয়ে বলল

“আচ্ছা হানিমুনে কই যাবি?”

“তুই বল তুই কই যেতে চাস?”

“তুমি যেখানে আমি সেখানে
সেকি জানো না?
এক ই বাধনে বাধা দুজনে
ছেড়ে যাবো না।”

ইনশিরা হেসে বলল

“সমুদ্রবিলাসে যাবো।”

“ওকে তো কক্সবাজার চল।”

“হুম।ওকে পরীক্ষার পর।”

“আচ্ছা চল গিয়ে শুয়ে পড়ি।”

“আমার কিন্তু ঘুম আসছে না।”

“আসবে।তুই চল আগে।”

ইনান ইনশিরাকে নিয়ে নিচে চলে গেলো।তারপর দুজনেই শুয়ে পড়লো।মোটামুটি অর্ধেক রাত দুজনে বকবক করে কাটিয়েছে।তারপর শেষ রাতের দিকে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়েছে।

সকাল ৭.০০ টা

ইনান আর ইনশিরা দুজনেই ফজরের নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে গিয়েছিলো।ইনশিরার সকাল সাতটায় ঘুম ভাঙতেই দেখলো ইনান ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।এমনভাবে ধরেছে যে উঠার কোনো শক্তি নেই।ইনশিরা এবার ইনানের কপালের দিকে ঝুকে একটা চুমু দিলো।আর ইনান চট করে চোখ খুলে ফেললো।ইনানকে চোখ মেলতে দেখে ইনশিরা লজ্জায় ইনানের বুকে মুখ গুজলো।ইনান মুচকি হেসে বলল

“একি!! বউ দেখি লজ্জা পাচ্ছে।”

ইনশিরা এবার বলল

“সর।উঠতে দে গোসলে যাবো।”

এবার ইনান বলল

“আমিও তো যাবো।”

“আগে আমি তারপর তুই।”

“না না হবে না।আগে আমি।”

“বলছি তো আমি।”

“আচ্ছা যা।”

তারপর ইনান ইনশিরাকে ছেড়ে দিলো।ইনশিরা নীল রঙের একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে নিলেই ইনান ওকে টেনে নিয়ে ঢুকে পড়লো।ইনশিরা গরম চোখে ইনানের দিকে তাকিয়ে বলল

“কি হলো।বের হ তুই।”

“দুজন একসাথে গোসল করবো।”

“না না।একসাথে করবো না।আমি বের হয়ে যাচ্ছি।”

ইনশিরা বের হতে নিলেই ইনান ওকে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেয়।এবার ইনশিরা রেগে ইনানকে ভিজাতে নিলেই ইনানের সাথে পা পিছলে
দুজনে একসাথে বাথটাবে পড়ে গেলো।

এদিকে আদ্রি রেডি হচ্ছে।ওকে ওর আপুর সাথে হবু দুলাভাই অর্ণবের বাসায় যেতে হবে।অর্ণের মা বাবা কক্সবাজার থাকেন তাই আজ ওরা ওখানে যাবে।আসতে দুদিন দেরি হবে।আদ্রি রেডি হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।তারপর ইনশিরাকে কল দিলো কিন্তু ইনশিরা রিসিভ করলো না।ইনানও রিসিভ করে নি।তাই বাধ্য হয়ে আয়াশকে কল দিলো।আদ্রির ফোন পেয়ে আয়াশ রিসিভ করে কানে দিতেই আদ্রি বলল

“কেমন আছিস?”

“আলহামদুলিল্লাহ।তুই?”

“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো।শোন আমি দুদিনের জন্য কক্সবাজার যাচ্ছি আপুর শ্বশুরবাড়ি।”

“মানে কি!!আমার বিয়েতে থাকবি না?”

“থাকা হবে না রে।”

“আচ্ছা যা সাবধানে যাস।আল্লাহ হাফেজ।”

বলেই আয়াশ ফোন রেখে দিলো।আদ্রিও ফোন রেখে জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে রইলো।কেনো যেনো মনে হচ্ছে কিছু একটা হারিয়ে ফেলছে সে।কয়েকদিন ধরে আচমকা মন খারাপ হয়ে যায়। আদ্রি ভাবছে আগেই ভালো ছিলো যখন চারজন একসাথে আড্ডা দিতাম।এই ব্যাপার গুলো না থাকলেই ভালো হতো।

কক্সবাজার পৌঁছে আদ্রি সবার সাথে কথা বলে রুমে চলে গেলো।ওর আপু আর দুলাভাই এখনো কথা বলছে।রুমে এসে জানালার পাশে দাড়িয়ে রইলো।আয়াশের কথাগুলো বারবার মনে পড়ছে।হঠাৎ পিছন থেকে পিঠে কারো হাতের ছোয়া পেলো।পিছন ফিরতেই ওর আপু বলল

“কি রে কই হারাইছিস?অনেক্ষণধরে ডাকছিলাম তোরে।”

“ওহ!!না এমনই।কি জন্য ডাকছো বলো?”

“অর্ণব ডাকছে নিচে।আমরা একটুপর বের হবো।”

“ও আচ্ছা। আমি আসছি তুমি যাও।”

আরাধ্যা চলে গেলো।আদ্রি গিয়ে আয়নার সামনে দাড়ালো।তারপর রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।ওরা তিনজনই সমুদ্রের পাড়ে গেলো।অর্ণব হঠাৎ বলল

“সবাই চোখ বন্ধ করে সমুদ্রের গর্জন অনুভব করো।অনেক ভালো লাগে এই গর্জনের ধ্বনিটা।”

অর্ণবের কথা অনুযায়ী আরাধ্যা আর আদ্রি দুজনেই চোখ বন্ধ করলো।কিন্তু আদ্রি চোখ বন্ধ করতেই আয়াশের মুখটা ভেসে উঠলো।আর সমুদ্রের গর্জনের শোনার বদলে আয়াশের ওই কথাটা বারবার কানে বাজছে’এভাবে কষ্ট না দিলেও পারতি।’এই কথাটা সকাল বিকাল কষ্ট দিচ্ছে আদ্রিকে।আদ্রি আর চোখ বন্ধ রাখতে পারলো না চোখ খুলে ফেললো।চোখ খুলতেই অর্ণব জিগ্যেস করলো

“কেমন লাগলো?”

আদ্রি কৃত্রিম হেসে বলল

“অনেক ভালো।”

অর্ণবও হাসলো তারপর বলল

“আমি শুধু এই জন্যই এখানে আসি।”

তারপর আরাধ্যা বলল

“আসলেই ভাল্লাগছে আমার।এবার চলো হাটি।”

তারপর আরাধ্যা আর অর্ণব হাত ধরে হাটতে লাগলো।তাদের পিছনে পিছনে আদ্রিও হাটছে।ওরও ইচ্ছে করছে এভাবে কারো হাত ধরে হাটতে।এটা মনে হতেই আয়াশের কথা মনে হলো।সিলেটের চা বাগানে ও আয়াশের হাত ধরে হেটেছিলো।সেটাই এখন খুব মনে পড়ছে।

দুপুরে খাওয়া শেষ করে আদ্রি রুমে চলে গেলো।হঠাৎ করেই আদ্রির মাথা ব্যাথা হতে লাগলো।আরাধ্যার কাছ থেকে ওষুধ আনতে ওর ঘরের সামনে আসতেই দেখলো আরাধ্যাকে অর্ণব খাইয়ে দিচ্ছে।এটা দেখে আদ্রির জন্মদিনের কথা মনে পড়ে গেলো।আয়াশও সেদিন এভাবেই আদ্রিকে কেক খাইয়েছিলো।আদ্রি আর আরাধ্যার ঘরে গেলো না নিজের ঘরে চলে এলো।তারপর বিছানায় শুয়ে পড়লো।ঘুম আসছেই না।শুধু আয়াশের কথাই মনে পড়ছে।বহুকষ্টে ঘুম এলো।

এদিকে ভার্সিটি শেষ করে ইনান আর ইনশিরা বাসায় চলে এলো।তারপর দুজনে খাওয়া শেষ করে এসাইনমেন্ট করতে বসলো।কালকেই এসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার শেষ দিন।এতোদিন করবো করবো বলে দুজনের একজনও করে নি।তাই দুজনেই এসাইনমেন্ট করতে বসলো।

আয়াশ আর মুন গহনা নিয়ে বাসায় ফিরলো।মুন আয়াশের হাত ধরে বলল

“গহনা গুলো অনেক সুন্দর তাই না?”

“হুম।এগুলো শুধু তোমার জন্যই।”

“থ্যাংকিউ।”

বলেই মুন আয়াশকে জড়িয়ে ধরলো।আয়াশ মনে মনে বলল মুনের জয়াগায় তোর থাকার কথা ছিলো কিন্তু তুই অবহেলা করলি।

সন্ধ্যায় ঘুম ভাঙলো আদ্রির।ঘুম ভাঙতেই দেখলো আরাধ্য ওর পাশে বসে আছে।আরাধ্যাকে দেখে আদ্রি বলল

“কি হয়েছে আপু?”

“শুয়ে থাক তুই একদম উঠিস না।তোর শরীর ভালো না।জ্বর চলে এসেছে।”

এবার আদ্রি অনুভব করলো আসলেই ওর জ্বর এসেছে।আরাধ্য আবার বলল

“এক জায়গার থেকে অন্য জায়গায় এসেছিস তাই এমন অবস্থা।তুই শুয়ে থাক আমি খাবার নিয়ে আসছি।খাবার খেয়ে ওষুধ খেতে হবে।”

এই বলে আরাধ্যা চলে গেলো খাবার আনতে।তারপর আদ্রিকে খাবার খাইয়ে শুইয়ে দিয়ে চলে গেলো।আদ্রি নিজের ফোনটা নিয়ে গ্যালারিতে ঢুকলো।আয়াশের সাথে নিজের ছবিগুলো দেখছে।প্রত্যেকটা ছবিতেই আয়াশ আদ্রি দিকে চেয়েছিলো।তারপর আদ্রি ফেসবুকে গেলো ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস এ চোখ আটকে গেলো।আয়াশ এই স্ট্যাটাস টা দিয়েছে। মুন আর আয়াশ একসাথে ঘেষে দাড়িয়ে আছে।ক্যাপশনে লেখা ছিলো মাই লাভ।ক্যাপশনটা দেখেই বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো।হঠাৎ করে মাথাব্যথাটাও বাড়তে লাগলো।ফোনটা হাত থেকে রেখে আবার চোখ বন্ধ করে ফেললো।বারবার ওই ছবিটা আর ক্যাপশনের কথা মনে পড়ছে।

এভাবে একদিন কাটলো।আজ আয়াশ আর মুনের গায়ে হলুদ।এদিকে আদ্রি খেতে গেলে ঘুমাতে গেলে উঠতে বসতে খালি আয়াশের কথা মনে পড়ে।

আদ্রি আর থাকতে পারলো না।কাউকে না বলে বাসা থেকে বের হয়ে ঢাকার বাসে উঠলো।অনেক জ্যাম হওয়ায় বাসও আস্তে আস্তে চলছে।এদিকে রাতও শেষ হয়ে যাচ্ছে।কাল আয়াশের বিয়ে।না এই বিয়ে আটকাতে হবে।কিন্তু জ্যাম থাকলে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগবে।আস্তে আস্তে জ্যাম ছুটে গেলো।আর আদ্রি আয়াশের বাসায় পৌঁছুলো বিকেলে।দৌড়ে বাসায় ঢুকতেই দেখলো অনেক মানুষ।আদ্রি একটা মেয়েকে জিগ্যেস করলো

“আচ্ছা বিয়ে কি হয়ে গেছে?”

“হ্যাঁ, একটু আগেই বিয়েটা হয়ে গেছে।”

চলবে…..

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আরেকটা পর্ব বিকেলে পাবেন।আর আপনাদের অনুভূতি কেমন জানাবেন।”)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ২৪ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ২৪
#Arshi_Ayat

আদ্রি আয়াশের ঘরে ঢুকতেই দেখলো ওর খালাতো বোন মুন আয়াশের সাথে ঘেঁষে বসে আছে।এই দৃশ্যটা দেখেই মন চাইছে মুনের গালে কষে একটা থাপ্পড় দিতে।রাগ সংযত করে আদ্রি গিয়ে ইনশিরার পাশে বসলো।আদ্রিকে দেখে আয়াশ বলল

“আয় বস তোর ভাবীর সাথে পরিচিত হয়ে নে।”

আয়াশের এই খোচা মারা কথা আদ্রির একদম পছন্দ হচ্ছে না।তবুও আদ্রি মুনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল

“হাই মুন।”

“হাই।”

এবার আয়াশ আবার খোঁচা মেরে বলে উঠলো

“কি রে মুন বলছিস কেনো ভাবি বল।”

আদ্রি অনেক রাগ উঠছে আয়াশের ওপর বহু কষ্টে নিজেকে সামলে মুনকে বলল

“ভাবি কেমন আছেন?”

“এই তো ভালো।তুমি?”

“আমিও ভালো।”

ওদের কথার মাঝে ইনান বলল

“তোদের কি শপিং করা শেষ?”

“হুম আম্মুরা প্রায় শপিং করা শেষ করেছে।কাল আমি আর মুন যাবো গহনা আনতে।”

এবার মুন বলল

“আয়াশ বেবি চলো আমাদের আবার পার্টিতে যেতে হবে।আমার ফ্রেন্ডরা অপেক্ষা করছে।”

আয়াশ শয়তানি হেসে বলল

“ইয়া বেবি চলো।”

এই বলে ইনশিরা ইনান আর আদ্রির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।আয়াশ আর মুনকে একসাথে দেখে আদ্রি মন খারাপ হয়ে গেলো।আদ্রি কিছু না বলে চলে যেতে নিলেই ইনশিরা জিগ্যেস করলো

“কোথায় যাচ্ছিস আদ্রি?”

“বাসায় যাচ্ছি।আপু আমার জন্য মনে হয় অপেক্ষা করছে।আজকে আবার অর্ণব ভাইয়া আসবে তাই যেতে হবে।”

আদ্রিও চলে গেলো।আদ্রি যাবার পর ইনান বলল

“জানি না শেষ পর্যন্ত কি হবে!!আয়াশ যদি মুনকে বিয়ে করে তবে আদ্রি সারাজীবন আফসোস করবে।”(ইনান)

“হুম।ওর জন্য কষ্ট হচ্ছে আমার।”(ইনশু)

“আমাদের হাতে তো কিছুই নেই।এখন যদি একটা মিরাকল হয়ে যায় তাহলে ভালো হবে।”(ইনান)

“আচ্ছা চল বের হই।” (ইনশু)

“কোথায় যাবি?” (ইনান)

“বাসায় যাবো।”(ইনশু)

” আচ্ছা একটা কাজ করলে হয় না আজ আমরা আমাদের বাসায় যাই।”

“আমাদের বাসা মানে?”

” তোর আর আমার বাসা মানে তোর শ্বশুর বাড়ি।আব্বু আম্মু কেউ নেই বাসায়। চল আজ ওইখানে থাকবো আমরা।”

“আচ্ছা চল।”

ইনান আর ইনশিরা ওদের বাসায় গেলো।ইনানের ঘরে ঢুকেই ইনশিরা বলল

“আল্লাহ এইখানে কি মানুষ থাকে!!এই অবস্থা কেনো ঘরের?”

ইনান বত্রিশ দাত বের করে হেসে বলল

“এমনি থাকে আমার ঘর।তবে এখন থেকে তো এটা তোরও ঘর।নিজের ঘর নিজে ঠিক করে নে।”

ইনশিরা তেড়ে ইনানকে মারতে আসতেই ওর সাথে ধাক্কা লেগে দুজনেই খাটে পড়ে গেলো।ইনশিরা মাথা ইনানের বুকের সাথে লেগে আছে।আর ইনান ওকে জাপটে ধরে আছে।ইনশিরা এবার ইনানকে বলল

“হচ্ছে কি?ছাড় আমাকে।ঘরটা তো গোছাতে হবে।”

“আরে পরে দুজনে মিলে গোছাবো এখন তুই চুপ করে থাক তো একটুখানি।”

ইনশিরা নিজেকে ছাড়ানোর একটা বুদ্ধি পেলো।চট করে ইনানকে সুড়সুড়ি দিলো আর ইনান ইনশিরা কে ছেড়ে লাফিয়ে উঠলো।আর ইনশিরা উঠেই দৌড়।

ওকে ধরার জন্য ইনানও ওর পিছনে দৌড় লাগালো।দুজনেই ছুটাছুটি করছে।একপর্যায়ে ইনান ইনশিরাকে দেয়ালের সাথে আটকে ফেললো।তারপর বলল

“এবার পালাবি কোথায়?”

ইনশিরা মুচকি হেসে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে বলল

“এখানে।”

ইনান হেসে ওর মাথায় হাত বুলালো।তারপর দুজনে মিল রুম গোছানো শেষ করলো।এবার ইনশিরা বলল

“চল গিয়ে রান্না করি।”

ইনান শুনে লাফিয়ে উঠে বলল

“না না রান্না করার দরকার নেই।আমি অর্ডার করে দিচ্ছি।”

কে শোনে কার কথা ইনশিরা ইনানের কথা উপেক্ষা করে রান্না ঘরে গেলো।ইনান ও পিছু পিছু এলো।তারপর ওর পাশাপাশি দাড়িয়ে বলল

“আচ্ছা বল কি রান্না করবি?”(ইনান)

“আপাতত খিচুড়ি কেমন হয়?”(ইনশু)

“হুম ভালোই হবে।”(ইনান)

“আচ্ছা তুই ঘরে যা আমি রান্না করি।” (ইনশু)

“না আমি তোকে হেল্প করবো।বল কি করতে হবে।”

“বলছি না ঘরে যেতে।”

“প্লিজ।”

“আচ্ছা যা চাল,ডাল ধুয়ে দে।”

ইনান চাল, ডাল ধুয়ে ইনশিরার কাছে আনলো।তারপর বলল

“এবার কি করবো?”

“আর কিছু করা লাগবে না।এবার তুই ঘরে যা।”

“যাবো না।এখানেই দাড়িয়ে থাকবো।”

ইনশিরা ভেংচি দিয়ে সবজি কাটতে লাগলো।হঠাৎ কাটা বন্ধ করে আঙুল ধরে বসে রইলো।ইনান দৌড়ে এসে ওর সামনে বসে জিগ্যেস করলো

“কি হইছে তোর?”

ইনশিরা স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে বলল

“না না কিছু না।”

“দেখি তোর আঙ্গুল দেখা।”

“বললাম তো কিছু হয় নাই।”

“দেখাইতে বলছি তোরে।”

ইনশিরা ভয়ে ভয়ে দেখালো।ইনান দেখেই বলল

“শর্বনাশ, ঘরে চল এন্টিসেপটিক লাগাতে হবে।”

“আর কিছু হয় নাই তো।সামান্যই কাটছে।”

ইনান কিছুই বলল না সোজা কোলে নিয়ে ঘরে চলে এলো।ইনশিরা ইনানের কান্ডে অবাক।ইনশিরাকে খাটে বসিয়ে এন্টিসেপটিক লাগিয়ে দিলো।তারপর বলল

“তুই বসে থাক আমি খিচুড়িটা বসিয়ে দিয়ে আসছি।”

“আমি যাই প্লিজ।”

ইনান চোখ গরম করে তাকাতেই ইনশিরা চুপ হয়ে গেলো।তারপর ইনান চুলায় খিচুড়ি বসিয়ে এসে বাবা মায়ের সাথে কথা বলল।ইনশিরাও শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথে ভালোই কথা বলল।তারপর খিচুড়ি রান্না শেষে।দুজনেই খেয়ে নিলো।

এখন রাত ৯.০০ টা…..

ইনশিরার গলায় মুখ গুজে শুয়ে আছে ইনান।দুজনেই চুপ।হঠাৎ ইনান বলল

“চল আজকে হরর মুভি দেখি।”

ইনশিরা চোখ বড় বড় করে বলল

“না না।”

এবার ইনান হেসে বলল

“ও তুই ভয় পাস।ধূর ভেবেছিলাম বিয়ের পর বউ নিয়ে ভুতের মুভি দেখবো।”

“কিহ!!বিয়ের পর মানুষ রোমান্টিক মুভি দেখে আর তুই ভুতের মুভি দেখবি?

” হুম দেখবি কি না বল?”

এবার ইনশিরা বলল

“আচ্ছা দেখবো। কিন্তুু কখন?”

“রাত ১২ টায়।”

ইনশিরা চিল্লিয়ে বলল

“কিহ!!ঘুমাবো কখন?”

“এখন। ”

এই বলে ইনশিরাকে জাপটে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।যখন ওরা ঘুম থেকে উঠলো তখন রাত ১১ টা..

এদিকে আদ্রি আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিলো।হঠাৎ মনে হলো কারো ছায়া পড়ছে জানালায়।..

চলবে……

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আর প্রতিদিন না দিতে পারার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।তবে কালকে ২৫,২৬ পর্ব একসাথে দেওয়ার চেষ্টা করবো।ধন্যবাদ।)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ২৩ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ২৩
#Arshi_Ayat

ইনান ইনশিরার দিকে তাকিয়ে রাগে দাত কটমটিয়ে একটা মিষ্টি মুখে দিলো।আর ইনশিরা ইনানকে দেখে খুব মজা পাচ্ছে আর মনে মনে বলছে খা খা আরো খা।আর ইনান মনে মনে বলছে বাবু যতো পারো হাসো একবার রুমে চলো তারপর তোমাকে বোঝাচ্ছি।ইনান কোনোমতে দুইটা মিষ্টি খেয়ে শ্বাশুড়ি মা কে বলল

“আন্টি আর খেতে ইচ্ছে করছে না।”

“সে কি মাত্র তো দুটো খেলে আরো খেতে হবে।আর আমাকে আন্টি বলছো কেনো?মা বলো।”

“আচ্ছা মা পরে আবার খাবো এখন যাই প্লিজ।”

ইনশিরার বাবা ইনানের কথা শুনে বলল

“যাতো মা ওকে নিয়ে ঘরে যা।ছেলেটাকে টায়ার্ড দেখাচ্ছে।”

বাবার কথা শুনে ইনশিরা ভয়ে ঢোক গিলল তারপর ইনানের দিকে তাকাতেই দেখলো ও শয়তানি হাসি দিচ্ছে।ইনশিরা মনে মনে বলল আল্লাহ বাচাও প্লিজ!!এখন ঘরে গেলেই তো আমার খবর করবে তখন যে কেনো ওকে ফাসাতে গেলাম।ধূর!!কিছু একটা বুদ্ধি বের করতে হবে।চট করে ইনশিরার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো ও ওর মাকে হুট করে জড়িয়ে ধরে বলল

“মা আজকে তোমার সাথে ঘুমাবো।অনেকদিন ঘুমাই না তো।তাছাড়া আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে এরপর তো তোমার সাথে আর ঘুমানো হবে না।”

মেয়ের ইমোশনাল কথা শুনে ইনশিরার মা বলল

“আচ্ছা তুই তাহলে আজ আমার সাথেই ঘুমা।”

ইনশিরার মায়ের কথা শুনে ইনানের মুখটা কালো হয়ে গেলো।ইনশিরার বাবা বোধ হয় ইনানের কষ্টটা বুঝতে পেরেছে তাই ইনশিরার বাবা বলল

“ইনশু মা তুই আজ জামাইর সাথে ঘুমা আমার তোর মায়ের সাথে কথা আছে কিছু তোর বিয়ের অনুষ্ঠানের ব্যাপারে।”

ইনশিরা কপাল কুচকে বলতে নিলো

“কিন্তু বাবা….”

ওর বাবা আর কিছু বলতে দিলো না তার আগেই বলল

“যা ওকে নিয়ে যা।”

ইনশিরা মুখটা গোমড়া করে ইনানকে নিয়ে ওর ঘরে গেলো।ঘরে যেতেই ইনান ইনশিরাকে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেললো তারপর ওর কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল

“ওহো!!পালানোর কি শখ!!”

“ধূর!! ছাড় না।”

“নো বেবি নো ছাড়াছাড়ি।এখন বল আমি কোন মিষ্টি চাইছিলাম আর তুই আমাকে কোনটা দিলি।”

“আমি যেটা বুঝছি ওইটাই দিছি।”

“ওহ!!তাই নাকি?তাহলে তো তোকে বোঝাতে হয় আমি কোনটা চাইছি।”

ইনান চট করে ইনশিরার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।প্রায় পাঁচ মিনিট পর ওর ঠোট ছেড়ে দিলো।তারপর ইনান মিটমিটিয়ে হেসে বলল

“এবার বুঝলি?”

ইনশিরা মুখ ভেংচি দিয়ে বিছানায় বসে পড়লো ইনানও পাশে বসলো তারপর ওর হাত ধরে বলল

“জানিস এতো সহজে সব কিছু হয়ে যাবে আমি বুঝতে ও পারি নি।”

“হ্যাঁ আমি ভেবেছিলাম ওরা আমাদের বাড়িতেই ঢুকতে দেবে না।”

“বাবা মা এমনই সন্তানকে কখনোই দূরে ঠেলে দিতে পারে না।তা সে যতো বড়ো অন্যায়ই করুক না কেনো।”

“হুম।আচ্ছা শোন আদ্রি আয়াশ ওদেরকে তো জানানো উচিত।”

“হ্যাঁ ঠিক বলেছিস আগে আদ্রিকে বলি তারপর আয়াশকে বলবো।”

“ওকে কল দে।”

আদ্রিকে কল দিতেই আদ্রি রিসিভ করলো আর বলল

“কি রে কি অবস্থা। ওইদিকে ওরা কি মেনেছে?”

“আরে মেনে একবারে সানাই বাজিয়ে দিয়েছে।”

“মানে?”

ইনান আদ্রিকে সব বলল।সব শুনে আদ্রি হাসির দমকে পাঁচ মিনিট কথাই বলতে পারে নি।তারপর মন খারাপ করে বলল

“হ্যাঁ নিজেরা তো চুপচাপ বিয়ে করে নিলি।এখন তোদের বিয়ের দাওয়াত কিভাবে খাবো?

” আরে টেনশন করিস না।ফাইনাল এক্সামের পর অনুষ্ঠান হবে।”

“ও তাই বল।আমি তো ভেবেছিলাম আমাদের আর দাওয়াত খাওয়া হলো না।”

“আচ্ছা শোন আয়াশ কি তোর সাথে কথা বলেছে?”

“না রে।”

“ছেলেটাকে কষ্ট দিস না।ও তোকে খুব ভালোবাসে।”

“আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমা।রাখছি।”

এই বলে আদ্রি ফোন রেখে দিলো।তারপর ইনান আায়াশকেও জানালো।

পরেরদিন……

ইনান,ইনশিরা আর আদ্রি ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছে।একটু পর আায়াশও এলো।

আয়াশ এসেই বলল

“দোস্তরা শোন আমি বিয়ে করছি।”

তিনজনই চিল্লয়ে বলল

“মানে?”

“হ্যাঁ।আমার খালাতো বোন মুনকে। মা চায় আমি ওকে বিয়ে করি।আর ওর বাবারও ইচ্ছে।খালু অসুস্থ তাই বিয়েটা তাড়াতাড়ি হচ্ছে।কালকের পরেরদিনই বিয়ে।”

“তোর মা চায় সেই জন্য তুই ওকে বিয়ে করবি?তুই না আদ্রিকে ভালোবাসিস।”(ইনান)

“হুম কিন্তু ও তো বাসে না।তাই মায়ের কথা মেনে নেওয়াটাই ভালো।”

আদ্রি চুপ করে বসে আছে।কেনো যেনো আয়াশের বিয়ের কথা শুনে ওর প্রচন্ড খারাপ লাগছে।আায়শ যেতে যেতে বলল

“আজ বিকেলে তোরা আমার বাসায় আসিস ওর সাথে আলাপ করিয়ে দেবো।”

তারপর আয়াশ চলে গেলো।আয়াশ যেতেই ইনশিরা আদ্রির হাত ধরে বলল

“আদ্রি তুই ভুল করছিস।আমি জানি তুই ওকে ভালোবাসিস কিন্তুু বুঝতে পারছিস না।”

“যা করবি ভেবে করবি পরে যেনো এমন না হয় তোকে পস্তাতে হয়।”

ইনশিরা আর ইনান উঠে ক্লাসে গেলো।আদ্রির কিছুই ভাল্লাগছে না।

বিকেলে….

আদ্রির অনিচ্ছা স্বত্বেও ও আয়াশের বাসায় গেলো।ইনশিরা আর ইনান আগেই এসেছে।আদ্রি আয়াশের ঘরে ঢুকতেই দেখলো…….

চলবে…..

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আর বলেছিলাম বিকেলে দিবো কিন্তুু হাতে ব্যাথা বেড়ে গিয়েছিলো বলে আর লিখতে পারি নি।)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ২২ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ২২
#Arshi_Ayat

তারপর চোখ তুলে দেখলো ও আয়াশের কাধে মাথা দিয়ে এতক্ষণ ঘুমুচ্ছিলো।কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো সাথে আয়াশও নামলো।গাড়ির পিছন থেকে আদ্রির লাগেজটা নামিয়ে দিলো।লাগেজটা নিয়ে আদ্রি সোজা বাড়ির দিকে এগুতে লাগলো।এতক্ষণ ধরে দুজনের মধ্যে একটুও কথা হয় নি।আয়াশ মনে মনে অনেকবার চেয়েছিলো কথা বলতে কিন্তুু কষ্টটা বারবার মনে পড়ছিলো বলে আর কথা বলে নি কিন্তুু ভাবছিলো ও আগে কথা বললে কি হয়?তেমনটা এইদিকেও চলছে আদ্রি বাড়ির দিকে হাটছে আর ভাবছে এই বুঝি আয়াশ ‘এই মুটি শোন’ এটা বলে ডাক দিবে কিন্তুু ও ডাক দিচ্ছে না।সেই জন্য আদ্রিও আস্তে আস্তে হাটছে।দুমিনিটের রাস্তায় দশমিনিট লাগাচ্ছে। মনে হচ্ছে পিপড়াও ওর চেয়ে জোরে হাটে।কিন্তুু কি আর করার কারোই অভিমানের পাহাড় টলছে না।একপর্যায়ে আদ্রি বাড়ির ভেতরে চলে গেলো আর আয়াশও গাড়িতে উঠে নিজের বাড়ির দিকে গেলো।

এদিকে ইনশিরা আর ইনানকে একসাথে দেখে ইনশিরার বাবা-মা একটা শক খেলো।তারা হয়তো ভাবতে পারে নি তাদের মেয়ে আবার ফিরে আসবে।বিষ্ময়তা কাটিয়ে ইনশিরার বাবা ওর সামনে এসে ওকে কষে একটা থাপ্পড় দিলো তৎক্ষনাৎ জড়িয়েও ধরলো তারপর অশ্রুকন্ঠে বলল

“এভাবে কেনো ছেড়ে গিয়েছিলি।আমাদের কথা কি একবারও মনে হয় নি?তুই বলতেই পারতি তুই ইনানকে পছন্দ করিস।কেন বলিস নি?তুই কি মনে করেছিলি আমি তোদের সম্পর্কটা মানবো না?তোকে জোর করে বিয়ে দেবো?না রে আমি তোকে ভালোবাসি মা তোর খুশিতে আমার খুশি।”

ইনশিরা বাবার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল

“সরি বাবা।ভয়ে বলতে পারি নি।”

ইনশিরা বাবা মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল

“আচ্ছা আয় ভিতরে আয়।”

ওরা ভিতরে আসতে নিলেই ইনশিরার মা বলে উঠলো

“ওই মেয়ে এই বাড়িতে আসতে পারবে না।”

মায়ের কথা শুনে ইনশিরা ইনান দুজনেই দাড়িয়ে পড়লো।ইনশিরার বাবা ওর মাকে গিয়ে বলল

“প্লিজ ওদের মাফ করে দাও।অনেকদূর থেকে এসেছে ওরা ওদের রেস্ট প্রয়োজন।”

“না আমি মাফ করবো না।ইনশুর কি বিবেকে বাধে নি আমাদের মান সম্মান ভাঙতে।ওর জন্য কতো মানুষ আমাদের কতো কথা শোনালো।তুমি ভুললেও আমি ভুলি নি।”

মায়ের কথা শুনে ইনশিরা দৌড়ে এসে মায়ের সামনে এসে দাড়ালো তারপর বলল

“মা মানুষের কথায় কি আসে যায়?তোমার মেয়ে অসুখী থাকলে কি মানুষ এসে দেখে যাবে?আচ্ছা ধরো আমি রায়ানকে বিয়ে করেই নিলাম আর আমি ওই সংসারে সুখী হলাম না এবং কয়দিন পর আমাদের ডিবোর্স হয়ে গেলো তখনও কিন্তুু তোমার মেয়েকে মানুষ কথা শোনাবে। বলবে অপয়া,অলক্ষুণে সেই জন্যই তালাক হয়ে গেছে।তখন সেগুলো কিভাবে হজম করতে বলো?আসলে মানুষ এমনই কার কি হলো না হলো এগুলো নিয়ে কয়েকদিন মাথা ঘামাবে তারপর যখন নতুন কিছু পাবে পুরোনো টপিক ভুলে যাবে।এখন তুমি কি মানুষের কথা ভেবে আমার সুখটা দেখবে না।যদি এমন করো তাহলে প্রমাণ হয়ে যাবে তুমি আমাকে ভালোবাসো না তুমি ভালোবাসো সমাজ কি বললো মানুষ কি বলল এগুলো কে।”

ইনশিরার মা এবার মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন

“আমাকে কথা দিয়ে ভোলাতে পারবি না।তুই এ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা।আমি তোর মুখ দেখতে চাই না।”

ইনশিরা কিছু বলল না।মায়ের সামনে থেকে কিছুটা পিছালো তারপর একটা ফুলদানি ফাটালো আর পেটের সামনে নিলো ওর কান্ড দেখে ইনান আর ওর বাবা এগিয়ে আসতে নিলেই ও জোরে বলে উঠলো

“না কেউ এদিকে আসবে না।আসলে পেটে ঢুকিয়ে দেবো।”

ওর কথা শুনে সবাই দাড়িয়ে পড়লো।ইনশিরার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ও ভেজা গলায় ই বলতে শুরু করলো

“এই জীবন রেখে আমি কি করবো যেখানে আমার মা ই আমার মুখ দেখতে চায় না।তাই এই জীবন আমি রাখতে চাই না।”

এই বলে যখনই পেটে ঢুকিয়ে দিতে তার আগেই ইনশিরার মা এসে ওর হাত থেকে তাড়াতাড়ি ওটা নিয়ে নিলো তারপর জড়িয়ে ধরলো তারপর বলল

“আমি জানতাম এমন একটা কান্ড তুই করবিই।পাগলি একটা!! তোদের আমি মেনে নিলাম।তুই চলে যাওয়াতে কষ্ট হয়েছিলো অনেক।ভাবিনি যে তোকে ফিরে পাবো।”

“ভালোবাসি তোমাকে আমি মা।”

এদিকে ইনান মনে মনে ভাবছে আহা এতো সহজে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে ভাবি নি। আমিতো অনেক প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলাম যাক ভালোই হলো।আর ইনশুতো একাই একশো।একাই মাকে পটিয়ে নিলো।এমন এক্টিং করতে পারে জানতাম না।যখন ভাঙা ফুলদানি টা হাতে নিলো আমিতো ভয়ই পেয়েছিলাম।যদি না ও চোখ মারতো তাহলেতো আমি গিয়ে ওকে ধরেই ফেলতাম।ওর চোখ মারা দেখে আমিও বুঝে নিলাম ওর মাথায় কি চলছে।মাইরি পারফেক্ট অভিনেত্রী!!

হঠাৎ পিছন থেকে কে যেনো বলল

“কার বিয়ে দিতে হবে?আমাকে আবার অন্য জায়গায় বিয়ে দিতে যেতে হবে।”

লোকটার কথা শুনে ইনান, ইনশিরা আর ওর মা যেনো আকাশ থেকে পড়লো কিন্তুু ওর বাবা ওই লোকটাকে নিয়ে এলেন তারপর ইনান আর ইনশিরাকে দেখিয়ে বললেন

“এই যে এই দুইজনের বিয়ে হবে।”

কাজি পান চিবুতে চিবুতে বলল

“বেশ বেশ তো শুরু করা যাক।”

বাবার আর এই লোকটার কথার আগা মাথা বুঝতে না পেরে ইনশিরা বাবাকে বলল

“বাবা কি হচ্ছে এসব?”

“আরে আজকে তোদের বিয়ে দেবো।”

“কিন্তুু আজই কেনো?” (ইনশিরা)

“আমার সেই কখন থেকে মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তুু তোর মা কে বললে বলে যে ডায়বেটিস বেড়ে যাবে তাই দেয় না।তাই ভাবছিলাম কিভাবে মিষ্টি খাওয়া যায়?যখন তোদের দেখলাম তখনই মাথায় বুদ্ধি এলো তোদের বিয়ে দিলেই তো মিষ্টি খাওয়া যাবে।তাই ইনশু যখন ওর মাকে বুঝাচ্ছিলো তখন আমি কাজি সাহেবকে ফোন দিয়ে ডেকে নেই।হা হা হা।”

ইনশিরার বাবার কথা শুনে সবাই হেসে দিলো।আর ওর মা ওর বাবাকে ভেংচি কেটে ইনশিরার পাশে বসে পড়লো।তারপর ইনান ওর বাবা মা কে লাইভে নিয়ে আসলো।ওর বাবা মা আগে থেকেই জানতো ছেলের মনের কথা তাই ওদের বেশি কিছু বলতে হয় নি।দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়েটা হয়ে গেলো।বিয়ে পড়ানো শেষে ইনশিরার বাবা ওর মাকে বলল

“দেখেছো তুমি আমার মিষ্টি খাওয়া আটকাতে পারো নি।বলেছিলাম না মিষ্টি আমি খাবোই।”

ওর মা মুখ বাকা করে বলল

“হুম একটার বেশী খেতে পারবা না।”

ইনশিরার বাবা হেঁসেই বলল

“ওতেই যথেষ্ট।”

কাজি চলে গেলো।ইনানকে নিয়ে ইনশিরা ওর রুমে গেলো।ইনান রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিলো তারপর ইনশিরাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল

“শ্বশুর মশাইতো মিষ্টি খেয়েছে কিন্তুু আমি এখনো খাই নি।আমিও খাবো।”

ইনশিরা ইনান কথার মানে বুঝতে পেরে বলল

“চল খেয়ে নেই তারপর মিষ্টি দিবো।”

ইনান খুশী হয়ে বলল

“ঠিকাছে চল।”

নিচে গিয়ে দুজনেই মা বাবা সাথে খাওয়া শেষ করলো। খাওয়া শেষ করতেই ইনশিরা ওর মাকে বলল

“মা তোমাদের জামাই নাকি এখনো মিষ্টি পায় নি ওকে মিষ্টি দাও।”

ইনশিরার কথা শুনে ইনান রাগী দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো আর ইনশিরা হেসে কুটিকুটি।ইনশিরার মা ওর সামনে এক প্লেট মিষ্টি দিয়ে বলল

“নাও বাবা খাও।তোমাদেরই তো এখন খাওয়ার বয়স।”

ইনশিরা মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে বলল

“হ্যাঁ খেয়ে নে।পরে আবার বলিস না মিষ্টি খাস নি।”

চলবে……..

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ।)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ২১ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ২১
#Arshi_Ayat

ইনশিরা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল

“তুই গেস কর।”

এবার ইনান ইনশিরার সয়তানি উদ্দেশ্যটা বুঝে ফেলল তারপর বলল

“থাক থাক আর বলা লাগবো না।”

“না না বলমু না কেন?বলা লাগবো তুই শোন।”

“না বলিস না।”

“আরে শোন তোর নাকে লাগাবো।দেখতে পুরা বান্দরের মতো লাগবে।”

এটা বলেই ইনশিরা দৌড়ে রুম থেকে বের হতে নিলো।ওর পিছনে ইনানও ছুটলো।শেষ পর্যন্ত ইনশিরা বের হওয়ার আগেই ইনান ওর হাত ধরে ফেললো।তারপর নিজের দিকে ঘুরিয়ে ইনশিরার সামনের দিকের ছোটো ছোটো চুল গুলোকে কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বলল

“আমার থেকে পালানো ওতো সহজ না।”

ইনশিরা ইনানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে জিগ্যেস করলো

“মরে গেলে আটকবি কিভাবে?”

ইনান ইনশিরার গালে হাত রেখে বলল

“তোকে তো আটকাতে পারবো না কিন্তু তোর ভালোবাসা মনের কোণে খুব যত্নে আটকে রাখবো।”

ইনশিরা ইনানের বুকে মাথা রেখে বলল

“ভালোবাসি।”

“আমিও।(ইনান)

রাত নয়টা। কিন্তু এখনো আয়াশ হোটেলে ফিরছে না।ইনান আয়াশকে খুজতে গেছে।আদ্রি চিন্তায় পায়চারি করছে আর ইনশিরা চিন্তিত মুখে বসে আছে।হঠাৎ জুই এসে বলল

” আয়াশের কি হয়েছে?”

হঠাৎ জুই এর উপস্থিতি আদ্রির মোটেও ভালো লাগলো না তার উপরে এসেই আয়াশের কথা জিগ্যেস করছে।আয়াশ ওর কি হয় যে ওকে আয়াশের কথা বলতে হবে।ইনশিরা কিছু বলার আগেই আদ্রি বলল

“আয়াশের কি হয়েছে তা তোমাকে বলতে হবে কেনো?”

“না আর কি আমি শুনলাম আয়াশ নাকি এখনো হোটেলে ফেরেনি।”(জুই)

“শুনেছই তো তাহলে আবার জিগ্যেস করছো কেনো?”

ইনশিরা আদ্রিকে থামানোর জন্য বলল

“ধূর কি শুরু করেছিস তুই!বাদ দে না।ও জিগ্যেস করেছে তো কি হয়েছে?”

“না ও জিগ্যেস করতে পারবে না।”

ইনশিরা এবার জুইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল

“সরি জুই আসলে আয়াশকে পাওয়া যাচ্ছে না তাই আমাদের মাথাটা গরম আছে।তুমি প্লিজ পরে আসো।”

জুই মলিন হেসে বলল

“আচ্ছা সমস্যা নেই।আমি চলে যাচ্ছি।আসলে আমি কালই নারায়ণগঞ্জ চলে যাচ্ছি।সেই জন্যই সবার সাথে দেখা করতে আসছিলাম।তোমাদের রুমের দিকে আসতেই শুনলাম আয়াশ এখনো ফেরে নি তাই জিগ্যেস করতে আসলাম।আচ্ছা আমি যাই তোমরা ভালো থেকো।”

তারপর জুই চলে গেলো।জুই যাওয়ার পর ইনশিরা বসা থেকে উঠে এসে আদ্রির কাঁধে হাত রেখে বলল

“জুই এর সাথে এই ব্যাবহারটা না করলেই পারতি।”

“বুঝতে পারি নি।আয়াশের চিন্তায় আরো মেজাজটা খারাপ ছিলো।”

“আচ্ছা পরে কথা বলে নিস।এখন একটু ইনানকে ফোন করে দেখি কি অবস্থা!”

ইনশিরা ফোন করতেই ইনান ফোন রিসিভ করে বলল

“হ্যাঁ ওরে পাইছি।আমাদের আসতে দশমিনিট লাগবে।”

“আচ্ছা আয়।”

১০/১৫ মিনিট পর আয়াশ ইনান দুজনেই ফিরলো।ফিরেই শাওয়ার নিতে চলে গেলো আদ্রির দিকে এক পলকও তাকালো না। ইনান ইনশিরা আর আদ্রিকে বলল

“শালা ৫০/৬০ টা পোলাপানের লগে খেলতাছিলো আর আমি ওরে খুজতে খুজতে শেষ। পরে একটা মাঠের মাঝখান থেকে নিয়া আসছি।”

ইনশিরা নিশ্চিন্তের সুরে বলল

“যাক পাইছিস।আমি ভাবছিলাম অঘটন ঘটাইতে গেছিলো।”

“নাহ ওই রকম কিছুই না।”

ইনশিরা আর ইনান আয়াশকে নিয়ে কথা বলছিলো।আর আদ্রি নিশ্চুপে ঘর থেকে বেরিয়ে ছাদে চলে গেলো।ইনশিরা হঠাৎ খেয়াল করে বলল

“কি রে আদ্রি কই রে?”

“আসলেই তো আদ্রি গেলো কই আবার।”

আয়াশ শাওয়ার শেষে বের হতেই ইনশিরা আর ইনানের কথা শুনে বলল

“ও ছাদে গেছে।”

“তুই কিভাবে জানলি?” (ইনশিরা)

“এতো রাতে ও কোথাও যাবে না আর ওর মন খারাপ তাই ছাদে গেছে।তোরা ওখানে গেলেই পেয়ে যাবি।”

“আচ্ছা তুইও চল না আমাদের সাথে।” (ইনান)

“না আমি যাবো না।” (আয়াশ)

“কেনো?(ইনশিরা)

” ভাল্লাগে না রে।”

“গেলে ভাল্লাগবে।”(ইনান)

এটা বলেই ওকে জোরাজুরি করে নিয়ে গেলো।আসলেই ছাদে গিয়ে আদ্রিকে পাওয়া গেলো।ও একা একা দাড়িয়ে আছে।পিছন থেকে ইনান আর ইনশিরা এসে ওর পাশে দাড়ালো আর আয়াশ ওদের থেকে একটু দূরে দাড়ালো।ইনশিরা আদ্রির কাঁধে হাত দিয়ে বলল

” এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেনো?খাবি না?”

“না।” (আদ্রি)

“কি হইছে রে তোদের?তুই ও খাবি না আয়াশও খাবে না।কেন?”(ইনান)

আদ্রি কিছুই বলল না।আয়াশও নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে।হঠাৎ করে জুই ও ছাদে চলে এলো।ওদের দেখে আবার নেমে যেতে নিলেই আদ্রি দ্রুত গিয়ে ওর হাত ধরে ফেললো তারপর বলল

” চলে যাচ্ছো কেনো?থাকো।আর আমি অনেক দুঃখিত তোমার সাথে ওইভাবে কথা বলার জন্য।প্লিজ আমাকে মাফ করে দিও।”

“আমি কিছু মনে করি নি।”

“আচ্ছা ঠিকাছে আসো আমাদের সাথে আড্ডা দিবে।”

জুই আর মানা করতে পারে নি।ইনশিরা,ইনান,আর আদ্রি একসাথে দাড়িয়েছে আয়াশ জুই এর সাথে দাড়িয়েছে।তারপর জুই সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল

“কে গান পারো এখানে?”

“আদ্রি ফট করে বলে উঠলো আয়াশ অনেক সুন্দর গান…. ”

এতুটুকু বলেই থেমে গেলো।আদ্রির এই অসম্পূর্ণ কথাতেও জুই বুঝে গেলো আয়াশ সুন্দর করে গান গাইতে পারে।এবার আয়াশেকে খোচানো শুরু করলো গান গাওয়ার জন্য কিন্তু আয়াশ রাজি হচ্ছে না।হঠাৎ জুই আয়াশেট হাত ধরে জোরে জোরে বলল

“আয়াশ আমি তোমাকে ভালোবাসি।জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না।কাল আমি চলে যাচ্ছি।আমার শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করো।হয়তো এটাই তোমার সাথে আমার শেষ দেখা।”

জুইয়ের কথা শুনে আয়াশ রাজি হলো।তারপর আয়াশ আদ্রির দিকে তাকিয়ে বলল গাইতে শুরু করলো।

“আমার ঘুম পাড়ানি বন্ধু তুমি কোন আসমানের তার,”
“কোন আসমানের জোস্না দিলা এই আসমানটা ছাড়া।”

ঘুণে ধরে কাচা বাঁশে,প্রেম অবুঝ মনে।
ষোলো আনাই দুঃখ দিলা চাইর আনার জীবনে।

মেঘের মতোওওওন
মেঘের মতোন উড়ে উড়ে,অন্তরটারে খালি করে করলা দিশাহারা…।

“আমার ঘুম পাড়ানি বন্ধু তুমি কোন আসমানের তারা”
“কোন আসমানের জোৎস্না দিলা এই আসমানটা ছাড়া।”

গান শেষে করতেই জুই হাত তালি দিয়ে বলল

“অনেক সুন্দর হইছে আয়াশ।”

আয়াশ মৃদু হেসে বলল

“ধন্যবাদ জুই।”

ইনশিরা আর ইনানও আয়াশের গানের প্রশংসা করলো কিন্তু আদ্রি চুপটি মেরে দাড়িয়ে রইলো।

পরেরদিন….

“আদ্রি দোস্ত ওঠ রেডি হতে হবে তো।”

“আরেকটু ঘুমাই না দোস্ত।”

“আচ্ছা ঘুমা আমি গেলাম।”

“আচ্ছা উঠছি।”

আদ্রি আর ইনশিরা রেডি হলো তারপর ওরা দুজনও আসলো এবং চারজন মিলে বেরিয়ে পড়লো।

দেখতে দেখতে দুদিন চলে গেলো।এই দুটোদিন যে কিভাবে গেলো চারজনের একজনও বুঝতে পারলো না।সারাদিন ঘোরাঘুরি আর বাসায় এসে ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়া।কিন্তু এতো কিছুর মাঝেও আয়াশ আর আদ্রি আগের মতো কথা বলে না।প্রয়োজনের বেশী কোনো কথাই ওদের মুখ দিয়ে বের হয় না।আর ইনশিরা ইনানের প্রেম ভালোই চলছে তবে ইনশিররা চিন্তা হচ্ছে ওর মা আর বাবাকে নিয়ে।ওরা যদি না মেনে নেয়!

সবাই ব্যাগপ্যাক করছে কারণ একটুপরই ওরা ঢাকায় ফিরবে।সবার ব্যাগপ্যাক করা হলে সবাই গাড়িতে গিয়ে বসলো।আয়াশ ড্রাইভিং সিটে পাশে আদ্রি আর পিছনে ইনান আর ইনশির।আয়াশ আদ্রির সাথে বসতে চায় নি প্রথমে কিন্তু ইনানের অনেক জোরাজুরির পর বসেছে।ইনান আর ইনশিরা বকবক করছে কিভাবে ইনশিরার বাবা মা কে মানানো যায় সেটা নিয়ে।আর এদিকে আয়াশ আদ্রি কারো মুখেই কথা নেই।একসময় আদ্রির ঘুম চলে এলো আর ও আয়াশের কাঁধে ঢলে পড়লো আয়াশ কিছুই বললো না।এক হাত দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।পিছন থেকে আয়াশের কাজ দেখে ইনান আর ইনশিরা দুজনেই মুখ টিপে টিপে হাসছে।

রাত ৮.০০ টা..

আয়াশ ইনশিরাদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো।ইনান আর ইনশিরা গাড়ি থেকে নামলো।আয়াশ ওদের দিজনকে গুড লাক দিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিলো আর আদ্রি এখনো ঘুমাচ্ছে।ইনশিরা লজ্জায় ভয়ে ভিতরেই যাচ্ছে না।ইনান ওর হাত ধরে বলল

“কিচ্ছু হবে না চল তো।”

“আমার অনেক ভয় করছে।”

“ভয় পাস না।আমি আছি তো।”

ইনান আর ইনশিরা ভিতরে ঢুকলো।

এদিকে আয়াশ আর গাড়ি ড্রাইভ করছে আর মাঝে মাঝে ওকে দেখছে।আদ্রির বাড়ির সামনে এসে ওর কপালে একটা চুমু খেলো তারপর ওকে ঘুম থেকে তোলার জন্য হর্ন বাজানো শুরু করলো।হর্নের শব্দে বিরক্ত নিয়ে চোখ খুলতেই অনুভব করলো ও কারো কাধে মাথা দিয়ে আছে।…..

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আমি এই একটা মাস অসুস্থ ছিলাম।আল্লাহর রহমতে আপনাদের দোয়ায় এখন ভালো আছি।আর এখন থেকে নিয়মিত গল্প পাবেন।)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ২০ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ২০
#Arshi_Ayat

ইনশিরা আর আদ্রি বসে বসে বকবক করছে।হঠাৎ ইনশিরা বলে উঠলো

“আদ্রি তুই কিন্তু কাজটা ঠিক করছিস না।”

“কোন কাজ?”

“এই যা তুই আয়াশকে ধোকা দিচ্ছিস।ওকে কেনো বলিস না তুই ওকে ভালোবাসিস না।”

“আমি চাই না ওর খুশীটা নষ্ট হোক।”

“কিন্তু যখন ও সত্যটা জানবে তখন আরো কষ্ট পাবে তার চেয়ে ভালো তুই এখনি সত্যিটা বলে দে।”

“হ্যাঁ মিথ্যে সম্পর্কতো আর টিকিয়ে রাখা যায় না।বলে দেওয়াই ভালো হবে।আমি দুই একদিনের মধ্যেই ওকে বলে দেব।”

“হুম সেটাই ভালো।”

হঠাৎ আয়াশ এসে বলল

“কি নিয়ে ফুসুরফাসুর হচ্ছে রে?”

“তোর বিয়া নিয়ে।” (ইনশিরা)

আয়াশ হাসতে হাসতে বলল

“আমার বিয়া নিয়ে আবার কি ফুসুরফাসুর?”

“এই যে তোর বিয়েতে তোকে ধরে ইচ্ছামতো হলুদ মাখাবো।”

“মাখবি তো সমস্যা কই?তবে আমার বউ যদি আপত্তি না করে।”

এটা বলে আদ্রির দিকে চেয়ে একটা চোখ মারলো তারপর আদ্রিকে উদ্দেশ্য করে বলল

“তাই না বউ।”

আদ্রি না পারতে একটা হাসি দিলো কারণ সে চাইলেও কিছু বলতে পারবে না এখন আয়াশকে।এভাবেই তিনজন বকবক করতে থাকলো আর ইনান ওইদিকে পড়েপড়ে ঘুমাচ্ছে।আজ আর কোথায় যাওয়া হলো না ইনশিরা আর ইনান দুজনেই অসুস্থ বলে।দুপুরে খেয়ে ইনশিরা শুয়ে একটু চোখ বন্ধ করলো সাথে সাথেই ইনানের মুখটা ভেসে উঠলো।সেই প্রথম দিনের ঘটনা একে একে সব মনে পড়তে লাগলো।ভার্সিটির প্রথম ইয়ারের দিকে ইনান খুবই চুপচাপ ছিলো তেমন কারো সাথে কথা বলতো না শুধু আয়াশ ছাড়া তারপর আস্তে আস্তে কিভাবে যেনো ওদের চারজনের একটা বন্ধুত্ব তৈরি হয়।ইনশিরা কখনো ইনানকে বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু ভাবে নি কিন্তু আজ কেনো যেনো অন্যরকম অনুভুতি হচ্ছে মনে।ওইতো সেদিনো তিয়াসের ভয়াল থাবা থেকে ইনান ই ওকে বাঁচিয়েছে আর সব শেষে সেদিন ইনানের সেই চুমুটাও মনে পড়ছে যেটা ও রেগে করেছিলো ইনশিরা পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিলো বলে।ইনশিরা চট করে চোখ খুলে ফেললো তারপর আদ্রিকে বলল

“দোস্ত আমি একটু ইনানের কাছে যাচ্ছি।”

বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বলল

“সত্যি?”

“হুম সত্যি।”

আদ্রি হেসে বলল

“ওয়াও দিল মে লাড্ডু ফুটা।”

ইনশিরা হাসলো শুধু।আদ্রি আবারো চোখ নাচিয়ে বলল

“তা ট্রিট কবে দিচ্ছিস?”

“ধূর সরতো যেতে দে।”

“না না তা তো হবে না।ট্রিট কবে দিচ্ছিস সেটা বললেই যেতে দেবো।”

এবার ইনশিরা ঢং করে বলল

“ভাবী সেটা আপনার ভাইকে জিগ্যেস করুন সেই জানে।”

আদ্রি কনুই দিয়ে ইনশিরার পেটে গুতা দিয়ে বলল

“তাই না!!আচ্ছা যা যেতে দিলাম।”

ইনশিরা হাসতে হাসতে চলে গেলো।ওদের রুমে নক করতেই আয়াশ দরজা খুলে দিলো।ইনশিরাকে দেখতেই আয়াশ বলে উঠলো

“কি রে তুই এখানে?”

“হুম ওর কাছে যাবো।”

আয়াশ চোখ মেরে বলল

“আয় হায় ভালোবাসা উথলিয়ে পড়ছে।আচ্ছা ঠিকাছে যা আমি একটু আমার জান্টুসের কাছে যাই।”

এই বলে আয়াশ চলে গেলো।ইনশিরা আস্তে আস্তে ঘরে এসে দেখে ইনান ঘুমাচ্ছে।ও ইনানের পাশে গিয়ে বসলো তারপর ওর চুলে হাত দিয়ে ওর দিকে চেয়ে রইলো।হঠাৎ ইনানের ঘুম ভাঙ্গায় ও চোখ খুললো।ইনানকে চোখ খুলতে দেখে ইনশিরা দ্রুত হাতটা সরিয়ে নিলো ওর চুলের ভিতর থেকে।ইনান উঠে বসে ইনশিরার কপালে হাত দিয়ে বলল

“এখনতো জ্বর নেই।ওষুধ খেয়েছিস তো?”

ইনশিরা ওর দিকে চেয়ে ভাবছে এই ছেলেটা তাকে এতো ভালোবাসে কেনো নিজের গায়ে জ্বর তবুও তার খবর নিচ্ছে।ইনশিরার কোনো উত্তর না পেয়ে ইনান ওর মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল

“কি রে কোথায় হারিয়ে গেলি।”

ইনানের কথায় ইনশিরা ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এলো তারপর বলল

“হ..হ্যাঁ তোর কি অবস্থা?”

“আমার আবার কি হবে?”

“আমি মনে হয় কিছু জানি না তাই না?”

“তোর ও তো জ্বর এসেছে।”

“ওইটা কিছু না।”

“নিজের খুব সুপারম্যান ভাবো?”

ইনান হাসতে হাসতে বলল

“আচ্ছা তোর কি হলো রে আজ?”

“কই কি হলো!!”

“এই যে আমাকে শাসাচ্ছিস।”

“ওহ!!কিচ্ছু করার নেই এবার থেকে তোকে প্রতিদিন শাসাবো।”

ইনান ভ্রু কুচকে বলল

“কেনো?”

“কেনো মানে তোর ওপর তো আমার অধিকার তো আমি শাসাবো না তো কে শাসাবে প্রয়োজনে মার খাবি।”

ইনান ইনশিরার কথায় শুনে বিষ্ময়ে বলল

“কিহ!!!ইনশু তুই আমাকে ভালোবাসিস?”

ইনশিরা হেসে বলল

” না না আমি তোকে ভালোবাসবো কেনো?আমিতো ইনান চৌধুরীকে ভালোবাসি যে আমাকে নিয়ে পালিয়েছিলো।”

ইনান ইনশিরাকে জড়িয়ে ধরে বলল

“তাই না!!”

“হুম তাই।আচ্ছা ইনান তুই আমাকে এতো ভালোবাসিস কেনো?”

“কেনো ভালোবাসি জানি না কিন্তু অনেক ভালোবাসি।”

“হুম তো আমরা ফিরছি কবে?”

“ভেবেছিলাম পনেরোদিন থাকবো কিন্তু এখন ভাবছি না পনেরোদিন না কালকে গিয়েই বিয়েটা করে ফেলবো।”

“যাহ!!সত্যি করে বল।”

“এই তো আর দুদিন থাকবো তারপর ফিরবো কালকে আর পরশু ইচ্ছামতো ঘুরবো এর পরেরদিন ফিরে যাবো।”

“ওহ আচ্ছা কিন্তু বাবা মাকে মানাবো কিভাবে?”

“সেটা আমি দেখবো তুই চিন্তা করিস না।”

ইনান ইনশিরা দুজনেই খুশী।অবশেষে ইনশিরা ইনানকে ভালোবেসেই ফেললো দুজনের মুখেই হাসি।

এদিকে আয়াশ এই রুমে এসে আদ্রির পাশাপাশি বসে বলল

“জানু।”

“হুম বল।”

“ইশ এভাবে কেউ বলে?রোমান্টিক করে বল হ্যাঁ গো বলো এভাবে।”

“আইছে তোরে আমি জীবনেও এমনে কমু না।”

“বল না দেখ তোর দশটা না পাচটা একটা মাত্র বয়ফ্রেন্ড আমি।এমন জুলুম করিস না।”

“আহারে শখ দেখলে মন চাই পুকুরে ঝাপ দেই।”

আয়াশ আহ্লাদ করে বলল

“হ্যাঁ হ্যাঁ দে।তুই তো সাতার পারিস না আমি কিন্তু পারি আমি ঝাপ দিয়ে তোকে বাচাবো।উফফ কি রোমান্টিক!!”

আদ্রি ওর মুখে ঝামটা মেরে বলল

“উড়া বন্ধ কর।আমি এখনো ঝাপ দেই নাই।”

“হুম সমস্যা নাই তুই দেওয়া লাগবো আমিই তোরে ফালায় দিমু।”

আদ্রি ভাবলো এটাই সঠিক সময় আয়াশকে সব বলে দেওয়ার। তাই আদ্রি আয়াশের কথায় কিছু না বলে বলল

“তোর সাথে একটু কথা আছে।”

“হুম বল।”

“আসলে আমি না..”

“কি তুই?”

“আমি তোকে ভালোবাসি না।”

আয়াশ হেসে বলল

“আমাকে গাধা বানাতে পারবি না।আমি জানি তুই মজা করছিস।”

“মজা না আয়াশ।”

আয়াশ এবার হাসা বন্ধ করে সিরিয়াস গলায় বলল

“কেনো?”

“আমি তোকে বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারবো না।”

“তাহলে সেদিন বললি কেনো ভালোবাসিস?”

“আসলে জুইকে শায়েস্তা করার জন্য বলেছিলাম কারণ ও তোর সাথে খালি ঘুরঘুর করছিলো তাই।”

আয়াশ আদ্রি গালে হাত দিয়ে বলল

“এভাবে কষ্ট না দিলও পারতি।”

এটা বলেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো।আর আদ্রি কেমন যেনো একটা অপরাধ বোধে আচ্ছন্ন হয়ে গেলো।

এদিকে ইনান ইনশিরাকে জব্দ করার জন্য বলল

“আচ্ছা শোন বিয়ের পর তুই যখন রাগ করে খাবি না তখন আমি তোকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে জোর করে খাওয়াবো কিন্তু আমি যখন রাগ করে খাবো না তখন তুই কিভাবে খাওয়াবি?”

ইনশিরাও একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল

“এটা আর কঠিন কি চলায় একটা চামুচ লাল করে গরম করবো তারপর তোর সামনে নিয়ে দাড়াবো।তুই না খেয়ে যাবি কই?না খেলেই চলে গরম চামুচ লাগায় দিমু।”

ইনান ভ্রু কুচকে বলল

“কই লাগাবি?”

চলবে….🍁

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আর দেরি করে দেওয়ার জন্য দুখিঃত কারণ আমি অনেক অসুস্থ তাই দেরি হলো।)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ১৯ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ১৯
#Arshi_Ayat

আদ্রির কথা শুনে ইনশিরা কিছুক্ষণ চুপ ছিলো তারপর কিছু একটা ভেবে বলল

“ওকে ডান।আমি আজ ওর কোনো খবর ই নিবো না।”

আদ্রি হেসে বলল

“দেখা যাক।”

এদিকে ইনান রুমে এসেই ধপ করে বিছানায় পড়ে গেলো।আয়াশ এগিয়ে এসে বলল

“কি হইছে তোর?”

“কিছু না হালকা একটু জ্বর আসছে।”

“কই দেখি।”

এটা বলে আয়াশ চিন্তিত মুখে ওর কপালে হাত দিয়ে বলল

“হলকা না অনেক বেশিই আসছে।তোর নাস্তা করে ওষুধ খাওয়াটা প্রয়োজন।”

“দোস্ত প্রচুর ঘুম আসতাছে।”

“রাতে খাইছিস?”

“না ভুলে গেছিলাম।”

“না খাইয়া ঘুমাইতে পারবি না।জাস্ট দশমিনিট ওয়েট কর আমি যাবো আর আসবো।”

“আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয়।আমার মাথাব্যথা করছে।”

“আসছি।”

আয়াশ চলে গেলো।ইনান শুয়ে মুখের উপর এক হাত দিয়ে রাখলো।ইনান একমনে ভাবছে সে কি আদৌ তার ভালোবাসা ইনশিরাকে বোঝাতে পারবে?নাকি কখনোই বুঝবে না।ইনান শরীরে জ্বর ক্রমশ বাড়ছে।আয়াশ নাস্তা নিয়ে খুব দ্রুতই ফিরলো।ইনশিরাদের রুমে গিয়ে ওদের নাস্তার প্যাকেট টা দিয়ে নিজেদের রুমে এসে দেখে ইনান মুখের উপর হাত দিয়ে শুয়ে আছে।আয়াশ ইনান পাশে বসে জিগ্যেস করলো

“কি রে ঘুমিয়ে গেছিস?”

ইনান হাতটা মুখের উপর থেকে হাতটা সরিয়ে ক্লান্ত চোখে আয়াশের দিকে চেয়ে বলল

“না ঘুমাই নি।”

“আচ্ছা তাহলে উঠে হাত ধুয়ে আয় তারপর নাস্তা করে ওষুধ খা।”

ইনান হাত ধুয়ে এলো তারপর কোনরকমে নাস্তা শেষ করে ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়লো।ঘুমে যেনো চোখ ভেঙে আসছে তলিয়ে গেলো ঘুমের দেশে।

এদিকে ইনশিরাও খাওয়া শেষ করে ওষুধ খেলো।আর আদ্রি খেয়ে আবার ঘুমিয়ে গেছে।আদ্রির পাশে বসে ইনশিরা ভাবছে খবর নিবো না তো বলেছি কিন্তু অস্থির লাগছে খুব।এখন ওই রুমে গেলেই তো আদ্রির বাচ্চা উল্টো পাল্টা বুঝবে।হঠাৎ ইনশিরার মনে হলো আদ্রিতো ঘুমাচ্ছে এই ফাকে একবার দেখে আসি।যেই ভাবা সেই কাজ বিছানা থেকে নেমে যেই দরজা দিয়ে বের হতে নিবে পিছন থেকে আদ্রি বলে উঠলো

“কি রে ইনানের কাছে যাচ্ছিস?”

ইনশিরা তৎক্ষণাৎ জিহ্বায় কামড় দিয়ে ফেললো আর মনে মনে বলল কিছুতেই স্বীকার করা যাবে না তাই কিছুই জানে না এমন ভাব করে পিছনে ঘুরে বলল

“নাহ,ওর কাছে যাবো কেনো?আমিতো এমনই হাটাহাটি করছি।”

“দেখিস হাটতে হাটতে আবার ইনানের কাছে চলে যাস না যেনো।”

“ফালতু বকিস না ঘুমা।”

আদ্রি মুখ টিপে হেসে আবার চোখ বন্ধ করে ফেললো।ইনশিরা দাত কিড়মিড়িয়ে আবার বিছানায় এসে বসে পড়লো।কিছুক্ষণ পর আয়াশ ওদের রুমে এসে ইনশিরাকে বলল

“কি রে ঘুমাচ্ছে কেনো এখন?ওর কি শরীর খারাপ?”

ইনশিরা একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল

“আরে নাহ ও তো রাতে ঘুমায় নাই এজন্য।”

“ঘুমায় নাই কেনো?”

“আরে কার সাথে যেনো কথা বলছিলো।”

“কার সাথে?”

“জানি না তো।”

“কিন্তু ওর তো ফোন বন্ধ।”

“হ্যাঁ কিন্তু কালকে বোধহয় সিম লাগাইছে ফোনে।”

“ও এই ব্যাপার।আমি বলছিলাম আমার সাথে একটু কথা বল নাহ সে বলবে না তার নাকি ঘুম পাচ্ছে।দাড়া এখুনি মজা দেখাচ্ছি।”

আয়াশ এক গ্লাস পানি এনে কয়েকটা ছিটা দিলো আদ্রি মুখে।এই মাত্র আদ্রির চোখে ঘুম লেগে কিন্তু মুখে পানির ছিটা পড়ায় আবার ফুরুৎ করে চলে গেলো।প্রচন্ড রাগে চোখ খুললো কে এই কাজটা করেছে এটা দেখার জন্য।চোখ খুলেই দেখলো আয়াশ বত্রিশ দাত বের করে হাসছে।আদ্রি রেগে শোয়া দেখে উঠে বসলো তারপর আয়াশের দিকে আগুন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল

“মুখে পানি দিলি কেন?”

“তুই এখন ঘুমাচ্ছিস কেন?”

“আমি ঘুমাইলি তোর বাপের কি?”

“আমার বাপের কিছুই না কিন্তু আমার অনেক কিছু।তুই নাকি কালকে রাতে কার লগে কথা কইছছ।”

আদ্রি আয়াশের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লো এমন একটা ভঙ্গি মুখ ফুটিয়ে তুলে বলল

“নাহ,আমি তো ঘুমাইছি।”

“আপনের আর কিছু বলা লাগবো না।আসেন ছাদে আসেন আপনারে শাস্তি দিবো।”

“কিয়ের শাস্তি?”

“এই যে বয়ফ্রেন্ড রাইখা তুই অন্যকার সাথে কথা বলছিস সেইজন্য।”

“সত্যি বিশ্বাস কর আমি কারো সাথে কথা বলি নাই।”

“তাইলে ঘুমাইতেছিস কেন এখন?

” এমনেই একটু চোখ লেগে গেছিলো।”

“থাক আর কইছ না এখন তুই চল।”

এই বলে আয়াশ আদ্রিকে টেনে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যায়।আর এতক্ষণ ধরে ওদের কাহিনী দেখে ইনশিরা হেব্বি মজা নিচ্ছিলো।আদ্রি যাওয়ার পর ইনশিরা ভাবলো এইতো সুযোগ গিয়ে দেখে আসি।ইনশিরা দ্রুত বিছানা থেকে নেমে ঘর থেকে বের হয়ে ইনানের রুমের দিকে যেতে নিলেই পিছন থেকে আয়াশ বলে উঠলো

“ইনশু একটু ছাদে আয় তো।”

অগত্যা ইনশিরাকে ইনানের সাথে ছাদে যেতে হলো।ছাঁদে আসতেই আদ্রি বলল

“কি মনে করছো আমি চলে আসলেই তুমি দেখা করতে যাবা!!এইটা হবে না।যেতে হলে আমাদের সামনে দিয়ে যাবা চুরি বাটপারি করতে পারবা না।”

ইনশিরার সেই রাগ উঠছে আদ্রি উপর।ইনশিরার মনে হলো এই মেয়েটাকে বাংলা সিনেমায় ভিলেনের বউয়ের ক্যারেক্টার দিলে জোস হবে।ইনশিরার কোন উত্তর না পেয়ে আয়াশ হাসতে হাসতে বলল

“আমি যদি এখন না যাইতাম তাহলে চলেই যেতো ও তারপর আমাদের সামনে সাধু সাজতো।”

“তুই যে আয়াশকে আমার নামে মিথ্যা বলেছিস যাতে ও আমাকে এখানে নিয়ে আসে আর তুই গিয়ে দেখে আসতে পারিস তাই না?আরে মাইয়া প্রেম করবি ভালো কথা চুরি কইরা কেন?”

এবার ইনশিরা মুখ খুললো।ওদের কথার উত্তরের বলল

“আরেহ একটা মানুষ সারা রাত জেগে আমার সেবা করলো তাকে আমি একটু দেখতে যাবো না?এতে ভালোবাসার কি আছে?আশ্চর্য!!এটাতো মানবিক ব্যাপার।”

“মোটেও না।তোর দেখতে যেতে হবে কেনো আমরাতো আছিই ওর খেয়াল আমরাই রাখতে পারবো।আসল কথা এটা না আসল কথা হলো তুই ওকে ভালোবাসিস কিন্তু বুঝতে পারছিস না।” (আয়াশ)

“তুই যদি ভালোই না বাসতি তাহলে এতো ছটফট করছিস কেনো ওকে দেখার জন্য।ভেবে দেখ একটা ছেলে একটা মেয়ের জন্য এমন কখন করে যখন সে মেয়েটাকে ভিষণ ভালোবাসে।তোর মনে আছে তুই আর আমি যেদিন ফার্স ইয়ারের প্রথম ক্লাসে যাচ্ছিলাম সেদিন কথা বলতে বলতে তুই অসাবধানতায় পড়ে যেতে নিয়েছিলি পরে আমার ব্যাগটা টেনে ধরেছিলি আর তোর সাথে সাথে আমিও পড়ে যাই।ইনান তখন সিড়ি দিয়ে নামছিলো ও তখন তোর দিকে আগে হাত বাড়াইছিলো আমার দিকে না।আমি সেই দিনিই ওর চোখে তোর জন্য মুগ্ধতা দেখছিলাম এরপরেও আরো অনেক সময় তোকে হেল্প করছিলো কিন্তু তুই কখনো এই বিষয়টা উপলব্ধি করিস নাই বন্ধুত্বের চোখে দেখছিলি কিন্তু সেটা আসলে বন্ধুত্বের থেকেও বেশি কিছু ছিলো।”

“হুম রে ওকে কষ্ট দিস না।আমি দেখেছি যেদিন ওকে তোর বিয়ের কথা বলেছিলি সেদিন ও যে কি করছিলো আমি জানি।পাগলের মতো করছিলো।তুই নিজের চোখে দেখলে বিশ্বাস করতি।যে ছেলে কখনো মদ ধরেও দেখে না সে মদ খাইছিলো।এবার বোঝ তুই ও তোকে কতো ভালোবাসে।”

ইনশিরা কিছুই বলছে না শুধু ওদের কথা শুনে যাচ্ছে।হঠাৎ সেখানে জুইয়ের আগমন ঘটলো যা ওদের মধ্যে কারোরই কাম্য ছিলো না।আদ্রি পারছে না কষে একটা থাপ্পড় দিতে।জুই এসেই হেসে হেসে বলল

“কেমন আছো তোমরা?”

আয়াশ হাসিমুখেই উত্তর দিলো

“হ্যাঁ আমরা সবাই ভালোই আছি।তুমি?”

“আমিও ভালো আছি।তোমাদের কি ডিস্টার্ব করলাম?”

“নাহ!!ডিস্টার্ব করো নি।”(আদ্রি)

কিন্তু মনে মনে বলল ফাইজলামি করার জায়গা পায় না একটা সিরিয়াস বিষয়ের মধ্যে বাম হাত ঢুকায় দিছে।তারপর জুই বলল

” তোমাদের আরেকজন ফ্রেন্ড কই?”

“ও তো অসুস্থ।”(আয়াশ)

“ও আচ্ছা চলো একটু দেখে আসি।”

“আচ্ছা চলো।(আদ্রি)

আদ্রি ইনশিরার দিকে তাকিয়ে বলল

” তুই কি যাবি?”

“নাহ!!তোরা যা আমি একটু এখানে দাড়াই। তোরা যা।”

আয়াশ, আদ্রি আর জুই চলে গেলো ইনানকে দেখতে আর ইনশিরা আগেট জায়গাটাতেই দাড়িয়ে রইলো।ইনশিরা মনে মনে ভাবছে আসলেই তো ইনান আমাকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু আমি?আমি কি বাসি?আচ্ছা ওকে দেখার জন্য আমার এমন লাগছে কেনো?কেমন যেনো অস্থির অস্থির লাগছে!!তাহলে কি আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি?আমি বুঝতে পারছি না!!

ইনশিরা চলে কিছুক্ষণ থেকে নিজের রুমে চলে গেলো।একটুপর আদ্রি চলে এলো এই রুমে তারপর ইনশিরার সাথে গল্প করা শুরু করলো ইনশিরা ওর সাথে কথা বলছে ঠিকই কিন্তু মনটা এখানে নেই।

চলবে….🍂

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

আমি_শুধুই_তোমার🌺 #পর্বঃ১৮ #Arshi_Ayat

0

#আমি_শুধুই_তোমার🌺
#পর্বঃ১৮
#Arshi_Ayat

ওরা রুমে এসে দেখলো ইনশিরা মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে আছে।ইনান দ্রুত ইনশিরাকে কোলে নিয়ে খাটে তুললো তারপর মাথায় হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে বলল

“শর্বনাশ, যেটা সন্দেহ করেছিলাম সেটাই হলো।প্রচুর জ্বর ওরে কে বলছিলো বৃষ্টিতে ভিজতে।আর আমারেও পাগলে পাইছিলো সাথে সাথেই যদি নিয়ে আসতাম তাইলে এমন হইতো না।”

“এখন কি করবি?” (আয়াশ)

“কি আর করমু বউয়ের সেবা করমু।আয়াশ তুই কাছের কোনো ফার্মেসীতে গিয়ে ডাক্তার ডাক।আর আদ্রি তুই একটু জলপট্টির ব্যাবস্থা কর।”

আয়াশ চলে গেলো ডাক্তার ডাকতে আর আদ্রি একমগ পানি আর রুমাল নিয়ে এলো।ইনান আদ্রির হাত থেকে মগ আর রুমাল নিয়ে ওর মাথায় জলপট্টি দেওয়া শুরু করলো।কিছুক্ষণ পর আয়াশ ডাক্তার নিয়ে এলো।ডাক্তার চেক আপ করে বলল

“সমস্যা নেই।বৃষ্টিতে ভেজার কারণে জ্বর এসেছে।জ্বরের ওষুধ খেলেই ইনশাল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে।”

“ধন্যবাদ ডাক্তার আঙ্কেল।”

ডাক্তার চলে গেলো।ইনশিরা কিছুক্ষণ পর চোখ খুললো।কিন্তু জ্বর বেশী হওয়ার কারণে দুর্বল লাগছিলো তাই উঠতে পারলো না।কিন্তু খুব আস্তে বলল

“পানি খাবো।”

ইনান পাশে থাকা গ্লাসটা এগিয়ে দিলো ইনশিরাকে।ইনশিরা আস্তে আস্তে উঠে পানি খেলো তারপর আবার শুয়ে পড়তে নিলেই ইনান বলল

“ইনশু একটুপর ঘুমা প্লিজ। তোর শরীর ভালো নেই।তাই খাবার খেয়ে ওষুধ খেতে হবে।”

“আমি খাবো না।”

“জেদ করিস না।তুই না খেতে চাইলে আমি জোর করবো এটা তুই জানিস তবুও জেদ কেনো ধরছিস?”

ইনশিরা কিছু বলল না।উল্টোদিকে ঘুরে বসে রইলো।ইনান আয়াশকে বলে আগেই খাবার এনে রেখেছিলো।ইনান হাত ধুয়ে এসে খাওয়াতে নিলেই দেখলো আয়াশ আর আদ্রি মুখ টিপে হাসছে।ইনান ওদের চিবিয়ে চিবিয়ে বলল

“দয়া করে আপনারা এখান থেকে প্রসস্থান করুন।”

“কেন মামা?” (আয়াশ)

“রোমান্স করমু।এখন তোরা কি দাড়ায় দাড়ায় দেখবি?”

“হ,,,দেখমু।”(আদ্রি)

“ছিঃ ছিঃ দুনিয়া শেষ হয়ে গেলো।লজ্জা শরমের বালাইও নাই।”

আয়াশ হাসতে হাসতে আদ্রিকে চোখ মেরে বলল

“আচ্ছা জানু আসো তারা রোমান্স করুক।আমরা ডিস্টার্ব না করি।”

ইনান ভ্রু কুচকে বলল

“ও তোর জানু হইলো কবে?”

আয়াশ লজ্জা পাওয়া গলায় বলল

“আজকেই।”

ইনান খোচা মেরে বলল

“ওরে আমার সুন্দরী লজ্জা পাইয়ো না।তুমি লজ্জা পাইলে তো তোমার বউ লজ্জায় মরেই যাবে।পরে আর বাপ হইতে পারবা না।”

ইনানের কথা শুনে আদ্রি এসে ইনানের পিঠে দুম করে একটা কিল বসিয়ে চলে গেলো।আয়াশ ও ওর পিছু নিলো।ওরা যাওয়ার পর ইনান ইনশিরাকে খাওয়াতে নিলেই ইনশিরা বাধা দিয়ে বলে

“আমার হাত আছে তো।”

“হুম তো কি হইছে?”

“আমাকে দে আমি খেতে পারবো।”

“পাকনামি না করে চুপচাপ বস।বেশী বকবক করলে কিন্তু উল্টো ঝুলিয়ে রাখবো।”

“হুম পারেন তো এটাই।”

“না জানু আরো অনেক কিছুই পারি কিন্তু এখন দেখানো মানা।বিয়ের পর বুঝাবো কি কি পারি।সেই পর্যন্ত ওয়েট করতে হবে।তবে তুই যদি বলিস তাহলে ওয়েট করতে হবে না।আমার কালকেই বিয়ে করে ফেলতে পারি।”

“আহা!শখ কতো।”

“ধূর এটাতো কিছুই না আরো কত শখ আছে।ওগুলো পরে বলবো এখন হা কর।”

ইনশিরা হা করতেই ইনান ধমক দিয়ে বলল

“এতো ছোট হা করিস কেনো?বোয়াল মাছের মতো হা কর।”

“আমি বোয়াল নাকি!”

“বেশী বুঝিস আমি তোরে বোয়াল বলছি নাকি?বলছি বোয়াল মাছের মতো জোরে হা করতে।”

“আচ্ছা তাইলে তিমির মতো হা করি।”

“হুম কর তাইলে পুরো প্লেট টাই ঢেলে দেওয়া যাবে।”

“ফালতু।”

তারপর ইনান ওকে খাওয়াতে লাগলো।অর্ধেক খাওয়ার পর ইনশিরা বলল

“আর না প্লিজ।”

“এতটুক তো তোর পেটের কোণায়ও যায় নাই।”

“তুই বেশী জানিস?”

“হ,,,বেশী জানি।শেষ করতে হবে না শেষ করলে এমনেই বসে থাকবি।”

“প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর আমার তিতা লাগছে খুব কষ্ট করে এতটুক খাইছি।”

ইনান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল

“হুম একটা উপায় আছে।”

“কি?”

ইনান বাকা হেসে ওর ঠোঁট দেখিয়ে চোখ মারলো।ইনশিরা ইনানের ইশারা বুঝে গেলো।তাই মুখ শক্ত করে বলল

“হুম আমি সবটাই শেষ করবো।”

“যেটা আপনার ইচ্ছা।”

তারপর ইনশিরা সবটুকু খেয়ে ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়লো।ইনান জলপট্টি দিতে আরম্ভ করলো।

এদিকে আয়াশ দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসছে আদ্রির কথা শুনে।আদ্রি জুই কে নিয়ে ভিষণ ভাবে রেগে আছে।আয়াশ হাসতে হাসতেই বলল

“আহ!!রাগ করছিস কেনো?আমরা তো চলেই যাবো।আর পিছন পিছন ঘুরলেই তো আমাকে নিয়ে যাচ্ছে না।

” হ,,,তুমি গাছের ও খাবা তলারও কুড়াবা।”

“ওহ!!শুধু শুধুই রাগ করছিস।আমি যে এতো হ্যান্ডসাম এটা কি আমার দোষ বল?”

“আইছে হ্যান্ডসাম।কচুর হ্যান্ডসাম তুই।”

“দুনিয়া আসলেই শেষ হয়ে গেছে হ্যান্ডসামদের কদর ই করতে জানে না কেউ সব গান্জাখোর গো কদর করে।ওই যে গান আছে না একটা”

“কোন গান?”

“ওই যে আমার মা বলেছিলো খোকা তুই প্রেম করিস না ভালো ছেলেদের কপালে ভালো মেয়ে জোটে না।গানটার কথা কিন্তু একবারে সত্যি।”

“আচ্ছা যদি সত্যিই হয় তাইলে ভালো মেয়ে গুলি যায় কই?তারমানে ভালো মেয়ে গুলি খারাপ ছেলেদের কপালে জোটে।তাইলে তো এটাও সত্যি ভালো মেয়েদের কপালে ভালো ছেলে জোটে না।”

“কই জোটে না এই যে আমি এত্তো ভালো একটা ছেলে তোর কপালে জুটে গেছি।”

“তোর কথা ভালোরা শুনলে হার্ট এট্যাক কইরা মইরা যাইবো।”

“তাই না!!”

আদ্রি বকবক করছে আর আয়াশ চুপ করে ওর মুখের দিকে চেয়ে আছে।হঠাৎ আদ্রির চোখ আয়াশের দিকে পড়তেই আয়াশ চোখ সরিয়ে ফেললো।আদ্রি ভ্রু কুচকে বলল

“কি দেখছিলি ওমন করে?”

“কিছু না।”

“বল কি দেখছিলি?”

“কইলাম তো কিছু না।”

আদ্রি ছুটে এসে আয়াশের কান ধরে বলল

“বল, না বললে ছাড়বো না।”

আয়াশ কিছু না বলে আদ্রির হাতটা ধরে ঘুরিয়ে এনে ওর কোলের উপর বসিয়ে ডান হাত দিয়ে ওর ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে বলল

“তোর ঠোঁট টা…”

আদ্রি দ্রুত ওর কোল থেকে উঠে ঠোঁটে হাত দিয়ে বলল

“অসভ্য।”

“অসভ্যের কি করলাম?”

“কত্তো বড় অসভ্য।এখন বলে কিছুই করে নাই।”

আয়াশ আদ্রির কাছে আসতে আসতে বলল

“শুধু শুধুই অসভ্য নাম দিলি।কিন্তু আমি তো মিথ্যা অপবাদ নিতে রাজি না।তাই অসভ্যের মতো কিছু একটা করি তারপর অসভ্য বলিস।”

আদ্রি আর ওখানে থাকলো ছুটে বেরিয়ে ওদের রুমে চলে এলো।আয়াশ একটুর জন্য আদ্রিকে ধরতে পারে নি।তাই আফসোস করতে করতে সেও ওই রুমে গেলো।ইনান এখনো জলপট্টি দিচ্ছে।আয়াশ ইনানের কাঁধে হাত দিয়ে বলল

“চল খেয়ে আসি।”

“তোরা খেয়ে আয়।ওকে একা রেখে যেতে পারবো না।”

“তোর জন্য কি নিয়ে আসবো?”(আদ্রি)

“না লাগবে না খেতে ইচ্ছা করছে না।”

“কেনো খাবি না কেনো?”

“ভালো লাগছে না।তোরা খেয়ে আয়।”

শত পিড়াপীড়ি করেও ইনান কে রাজী করাতে পারলো না।অগত্যা ওরা গিয়ে খেয়ে আসলো আর ওর জন্য নিয়ে আসলো।

আয়াশ আর আদ্রি রুমে এসে দেখে ওইভাবেই ইনান বসে বসে পকে জলপট্টি দিচ্ছে।আয়াশ পাশে বসে বলল

“দোস্ত তোর জন্য নিয়ে আসছি।খেয়ে নিস।আর তুই কি সারা রাত এভাবেই জলপট্টি দিবি?”(আয়াশ)

“জ্বর তো কমছে না।কি করবো!!জলপট্টি দিতে হবে।”

“ও তো আমিও থাকি।”(আয়াশ)

“না তোরা জাগবি কেনো?তুই রুমে গিয়ে শুয়ে পড়।আর আদ্রি তুই ইনশুর পাশে শুয়ে পড়।”

তারপর ইনানের জোরাজুরিতে ওরা দুজনেই ঘুমাতে গেলো।সারারাত এভাবে জলপট্টি দেওয়ার পর ভোরে যখন আদ্রি ঘুম থেকে সজাগ হলো তখন ইনান বলল

“দেখতো কপালে হাত দিয়ে ওর জ্বর কমেছে কি না?”

“তুই ই তো দেখতে পারিস।”

“না তুই একটু দেখ না।”

আদ্রি হাত দিয়ে দেখলো তারপর বলল

“হুম এখন জ্বর নেই।”

“ও আচ্ছা।ও উঠলে ওকে নাস্তা করিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিস।”

“আচ্ছা কিন্তু তোর কি হলো?চোখ ওমন লাল দেখাচ্ছে কেনো?”

“ওই তো ঘুমাই নি তাই।”

আদ্রি সন্দেহের চোখে ওর কপালে হাত দিয়ে আৎকে উঠে বলল

“তোরও তো অনেক জ্বর।”

“হুম মাঝরাতেই আসছিলো।”

“তো এখনো বসে আছিস কেনো গিয়ে কিছু খেয়ে ওষুধ খা।”

“হুম যাচ্ছি কিন্তু ইনশুকে এগুলো বলিস না।”

“আচ্ছা বলবো না।”

ইনান টলতে টলতে চলে গেলো।কিছুক্ষণ পর ইনশিরা ঘুম থেকে উঠে আদ্রিকে বলল

“ওই ইনান কখন গেছিলো রে?”

“একটু আগে।”

“মানে?”

“মানে সারা রাত তোর সেবা করছে।”

“হায় রে পাগল একটা।তো এখন কই?”

“ওই রুমে গেছে।ওর ও জ্বর আসছে।”

“কি বলিস!!কখন?”

“মাঝরাতে।”

“তো সকাল পর্যন্ত বসে থাকতে কে বলছিলো।হায় রে এই ছেলেটা যে কি করে!!”

পাশে খাবারের প্যাকেট দেখে চিল্লিয়ে বলল

“ওহ নো!! রাতেও তো খায় নাই।”

“হুম।”

“চল তো গিয়ে দেখি।”

আদ্রি ইনশিরাকে বাধা দিয়ে বলল

“তোর এতো টেনশন হচ্ছে কেনো?তুই তো ওকে ভালোই বাসিস না।”

“হ্যাঁ সত্যিই তো বাসি না।”

“আচ্ছা তাহলে প্রমাণ কর।”

“কিভাবে?”

“তুই আজ সারাদিন ইনানের কোনো খবর নিবি না।ওর কথা আমাদেরও জিজ্ঞেস করবি না।ওই রুমেও যাবি না।দেখি তুই পারিস কি না?যদি পারিস তাগলে বুঝবো আসলেই ভালোবাসিস না।আর যদি না পারিস তাহলে মামা আমারে বিয়ার দাওয়াত দিয়া দিও।”

চলবে….🍂

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)