বেখেয়ালি মনে পর্ব-১৮

0
530

#বেখেয়ালি_মনে
#লেখনীতে- Ifra Chowdhury
পর্ব-১৮
.
.
ঢাকায় ফিরে ত্রয়ী ব্যস্ত হয়ে যায় তার স্কুল, কোচিং, প্রাইভেট নিয়ে। আর একমাস পরেই তার মডেল টেস্ট শুরু হবে। এদিকে ইনান ব্যস্ত তার কাজ নিয়ে। অনেক দিন ছুটিতে থাকার জন্য অনেক কাজ জমে আছে। দু’জনার ব্যস্ততার জন্য তাদের দেখা হয় সপ্তাহের একটা দিনে। শুক্রবার বিকেলে দু’জনে ছাদালাপ করে।

সপ্তাহের ছয়টা দিন ত্রয়ী যেসব কথা জমা রাখে মনের অন্তরালে, সেগুলোর প্রকাশ ঘটে শুক্রবার বিকেলে।
এমনি এক স্নিগ্ধতায় ঘেরা বিকেলে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে ত্রয়ী। দৃষ্টি তার নীল দিগন্তে। মন তার ইনানের দিকে।

প্রায় আধঘন্টা পর ইনান ছাদে আসে। ত্রয়ীকে দেখে বলে,
– বোকাপাখি, কখন এলে?
ত্রয়ী দৃষ্টি আগের জায়গায় স্থির রেখে শীতল গলায় বলে,
– আধঘন্টা হলো। আপনার এতো দেরি হলো যে?
ইনান ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলল,
– আজকেও অফিসে যেতে হয়েছে। তাই দেরি।

ত্রয়ী কিছু বলতে যাবে এমন সময় হিমা এসে উপস্থিত হয় ওদের মাঝে। হিমা হঠাৎ করে আজ শাড়ি পড়েছে। চোখে কাজল, কপালে টিপ, ঠোঁটে লিপস্টিক। এসব দেখে ত্রয়ী ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।

হিমা দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী। তার উপর ব্ল্যাক শাড়িতে আরো বেশি সুন্দর লাগছে।
সে এসে ত্রয়ীর পাশে দাঁড়ায়। ইনানের সাথে ইদানিং অনেক কথাই হয় হিমার।

হিমা কে দেখে ইনান বলল,
– আজ কোনো বিশেষ দিন নাকি?
হিমা হেসে বলল,
– না, বিশেষ দিন না।

হিমাকে ত্রয়ীর খুব হিংসে হচ্ছে। ইচ্ছে করছে ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দিতে। ইনান যে হিমার সাথে কথা বলছে এটাও ত্রয়ীর সহ্য হচ্ছে না।

সে হালকা কেশে বলল,
– হিমাপ্পা, হঠাৎ করে শাড়ি পড়লে যে?
ত্রয়ীর কথার জবাব না দিয়ে হিমা হুট করে ইনানের হাত ধরে ফেলে।

হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া ঘটনায় ইনান, ত্রয়ী দু’জনেই অবাক হয়ে যায়। ইনান ভ্রু কুঁচকে হিমার দিকে তাকায়।
হিমা লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়। আবেগি গলায় বলল,
– তোমার হাত টা ধরতে খুব ইচ্ছে করছিলো।
ইনান দ্রুত হিমার হাত থেকে ওর হাত ছাড়িয়ে নেয়।
– হিমা, ভালো মেয়েরা কখনো পরপুরুষের হাত ধরেনা, জানো না?
হিমা অপরাধী কন্ঠে বলে,
– সরি। আর হবেনা এমন।

দু’জনের এমন রঙ তামাশা ত্রয়ীর ভালো লাগছে না। ওর ভেতরটায় অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে। তাই দ্রুত সে ছাদ থেকে নেমে যায়।

ইনান ত্রয়ীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তবে তাকে আটকায় না। আবেগ গুলোকে প্রশ্রয় দিতে চায় না। আবেগ যে বিষাদময় হয়। খুব বেশিই হৃদয় পোড়ায়। ইনান এই আবেগের সাথে পরিচিত। খুব করে পরিচিত!

__________________________________________________________
তনয়া তিশানের বিয়ের কথা ভাবছেন। ছেলেটা চাকরি পেয়েছে মাস কয়েক হয়েছে। তনয়া তিশানের দরজায় গিয়ে কয়েক বার নক করার পরও সাড়া না পেয়ে চলে আসলেন। তিশান তখন ফোনালাপে ব্যস্ত তাই মায়ের ডাক শুনতে পায়নি। রাতে তনয়া আবার যায় তিশানের রুমে। দরজায় লক ছিলো না বিধায় সহজেই যেতে পেরেছেন। না হলে এই ছেলেকে হাজার ডাকলেও পাওয়া যায় না।

তনয়া রুমে ঢুকেই অগ্নিমূর্তির ন্যায় তিশানের সামনে দাঁড়ায়। ও তখন আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপ দেখছিলো। মাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে মায়ের দিকে তাকায়। গোপনে ঢোক গিলে। আজ নিশ্চিত কান মলা খাবে সে।

শান্ত গলায় বলে,
– কি হয়েছে আম্মু?
তনয়া বেডে বসে বলল,
– বয়স তো কম হয়নি। বিয়ে করবি কবে?
তনয়ার কথা শুনে তিশানের হেঁচকি উঠে। সেন্টার টেবিল থেকে পানি নিয়ে খেয়ে বলে,
– বিয়ে এতো তাড়াতাড়ি?
তনয়া ভেংচি কেটে বলে,
– আর কতো বছর প্রেম করবি। রিসার কি বিয়ের বয়স হয়নি?
তিশান বিস্মিত কন্ঠে বলে,
– তুমি কীভাবে রিসার কথা জানো?
– তুই কী ভাবছিস আমি আমার ছেলে মেয়ের খেয়াল রাখিনা? তাদের মনের ভিতর কী চলে তা বুঝতে পারিনা?
সব বুঝতে পারি আব্বাজান সব বুঝতে পারি। আমি তো মা। আর মায়েরা ছেলেমেয়ের সব খুটিনাটি বিষয়-ই জানে। সব দিকেই মায়েদের খেয়াল থাকে।
তিশান মায়ের কথা গুলো শুনে মিটমিটিয়ে হাসছে।

তনয়া আবার বলল,
– রিসাকে বলিস আমাদের পক্ষ থেকে তোদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছি। আর এই সম্পর্ক টাকে নতুন আরেক সম্পর্কে পরিনত করবো খুব শীঘ্রই।
তনয়ার মুখে এসব কথা শুনে তিশান মাকে জড়িয়ে ধরে। বলে,
– থ্যাঙ্ক ইউ আম্মু, থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।

ছেলের খুশি দেখে তনয়ার মুখে হাসি ফুঁটে উঠে। মায়েরা সত্যিই অতুলনীয় এক নারী। সবসময় সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টায় থাকে।

__________________________________________________________
সেদিনের ঘটনার পর থেকে বেশ কিছুদিন ত্রয়ী, ইনানের মুখোমুখি হয়নি। কিশোরী মনের অভিমান গুলো জমা আছে মনের বাঁকে। বড্ড অভিমানী হয়ে আছে ত্রয়ী। সে অপেক্ষায় আছে কখন ইনান নিজ থেকে এসে ওর অভিমান ভাঙাবে।

রাবেয়া হক ত্রয়ীর পরিবারকে নিমন্ত্রণ করে গেছেন। আজ যেনো লাঞ্চটা তারা ইনানদের বাসায় করে। ত্রয়ীর যেতে ইচ্ছে করছে না। তবুও ইফতিহার জোরাজুরিতে তাকে যেতে হচ্ছে।

কলিংবেল বাজাতেই ইনান দরজা খুলে দেয়। একবার চোখাচোখি হয় দু’জনের। পরক্ষণেই ত্রয়ী চোখ নামিয়ে নেয়। দ্রুত পায়ে হেঁটে ইফতিহার রুমে চলে যায়।

ইনান বুঝতে পারে ত্রয়ী এখনও অভিমান করে আছে ওর উপর। তাই তো গত দুই সপ্তাহে একবারো সে ইনানের মুখোমুখি হয়নি।

ত্রয়ী দাঁড়িয়ে আছে ব্যালকনিতে। ইনান তার পিছুনে গিয়ে দাঁড়ায়। মনে মনে ভাবে,
– মেয়েটা বড্ড বেখেয়ালি। এতোক্ষণ যাবৎ ওর পিছনে দাঁড়িয়ে আছি বিন্দুমাত্র টের পায়নি।

ইনান আনমনে হাসছে। কিছুক্ষন পর ত্রয়ী পিছু ঘুরে ইনানকে দেখে। তাকে এড়িয়ে যাইতে চাইলে ইনান বলে,
– বোকাপাখি?

ত্রয়ী থমকে দাঁড়ায়। এই ডাকটায় একটা মায়া আছে। না না, শুধু ডাকটায় না, কন্ঠেও আছে মায়ার যাদুমন্ত্র। যা ত্রয়ী চাইলেও এড়িয়ে যেতে পারে না।

ইনান আবার বলে,
– জানো বোকাপাখি, আবেগ হচ্ছে শুভ্র এক টুকরো মেঘের মতো পবিত্র। যাতে নেই কোনো বিষাদ বা অন্ধকার।
কিন্তু এই শুভ্র পবিত্র আবেগ টাই একদিন বাস্তবতার চাপে পড়ে খুব ভয়ংকর বিষাদময় অন্ধকার আবেগে পরিনত হয়।

ইনানের কথা শুনে ত্রয়ী দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। খুব ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে,
– আমি মানি না সেই বাস্তবতা, যে বাস্তবতায় কোনো আবেগ থাকবেনা।
আমি থাকতে চাই না সেই বাস্তবতায়, যে বাস্তবতা মায়া বুঝেনা।

কথা গুলো বলেই ত্রয়ী সেখান থেকে হনহনিয়ে চলে যায়।
ইনান পিছন থেকে ডাকলেও ত্রয়ী তাতে পাত্তা দেয় না।
ইনান আপন মনে আওড়ায়,
– তুমি এখন যে কথা গুলো বললে এতেও আবেগ মিশে আছে। আবেগ দিয়ে বাস্তবতা চলে না বোকাপাখি। একদম চলে না!
.
.

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here