শঙ্খচিল পর্বঃ-৩৯

0
1492

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ৩৯ +ঈদ স্পেশাল এক্সট্রা পর্ব

ঘড়ির কাটায় রাত আটটা বেজে চাল্লিশ মিনিট।
ইলহাম হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে হারুনের ফোন কলের অপেক্ষা করছে৷ হঠাৎ সামনে তাকাতেই তানহার দিকে চোখ পড়লো, তানহা এবং তার দাদী বসে আছে, তানহা তার দাদীকে কিছু একটা বলে কোথাও চলে গেলো, ইলহাম তার ফোনে মনোযোগ দিলো ঠিক তখনি আবারো ইলহামের চোখ সামনের দিকে গেলো, তানহার পিছু পিছু তিনটা ছেলে যাচ্ছে। ব্যাপার টা ইলহামের ঠিক স্বাভাবিক মনে হলো না, ইলহাম কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে তাদের পিছু পিছু দ্রুত যাওয়া শুরু করলো
বাথরুমের সাইট টা কেট্রিংয়ের ঠিক বিপরীত পাশে তাই হয়তো খুব একটা ভীর নেই।
তানহা ওয়াশরুমের ভেতরে যেতেই ছেলে গুলো একে অপরের দিকে তাকিয়ে পৈশাচিক হাসি দিলো। ইলহাম এক কোনে দাঁড়িয়ে রইলো তাদের কর্ম কান্ড দেখার জন্য। মিনিট দুইয়েক পর ছেলেগুলো ওয়াশরুমের ভেতরে ঢুকে গেলো।
ইলহাম ও হাত দুটো আড়মোড়ে ভেতরের দিকে গেলো। ছেলে গুলো ওয়াশরুমের ভেতর ঢুকে টয়লেটের দরজা দুপ দুপ করে বাড়ি মারছে বার বার।
তানহা বিরক্ত হয়ে বললো,
” কোন ম্যানার নাই নাকি দেখছেন তো বাথরুমে ভেতর একজন আছে। ”

তিন জানের মধ্যে একজন বললো, ” তোমার প্রেমে বেয়াদব হয়ে গেছি সোনা৷ দরজাটা খোলো এবার।”

তানহা চমকে উঠলো। কারণ এটা লেডিস ওয়াশরুম। এখানে পুরুষ থাকার কথা নয়, আর যদি কোন পুরুষ ভেতরে এসে থাকে তার মানে ওয়াশরুমের ভেতর শুধু পুরুষ আছে আর কেউ নেই। তানহার ভেতর টা মোচড় দিয়ে উঠলো৷
একা এই টয়লেটে আটকে গিয়েছে সে। বাইরে বের হলে নিশ্চিত বিপদ। ফোনটাও আনেনি সে, তাড়াহুড়ো করে পার্সব্যাগ টাও দাদীর কাছে রেখে এসেছে।
তানহা মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো৷ এই সাংঘাতিক বিপদ থেকে কি ভাবে বাঁচাতে নিজেকে কি ভাবে নিজের সম্মান রক্ষা করবে৷ তানহা ভেজা চোখে প্রান পনে সৃষ্টি কর্তাকে ডাকা শুরু করলো…

” কেরে তুই? ”

ইলহাম ঘাড় বাঁকা করে বললো, ” ভালো নাম শুনবি নাকি খারাপ টা..

ইলহামের কথা কেড়ে নিয়ে বললো,
” নাম ধাম ছার৷ প্রথমে আমরা তিন জন তারপর তুই।”

ইলহাম হো হো করে হেসে বললো, ” কে আগে খাবি বল। ”

একটা ছেলে প্রফুল্ল স্বরে বললো, ” আমি আমি। ”

” ঠিক আছে। ” বলে ইলহাম ছেলে টার ঘাড় ধরে সজোরে আয়নায় বারি মারলো মূহুর্তে ছেলেটা রক্তাক্ত হয়ে ফ্লোরে পড়ে রইলো।
দ্বিতীয় ছেলেটা ইলহামের দিকে তেড়ে আসতেই ইলহাম হাত মুচরে ধরে রাখলো ছেলেটা ব্যাথায় গোঙ্গিয়ে উঠলো। তৃতীয় ছেলেটা যেই পালাতে যাবে ইলহাম সেইম ভাবে হাত মুচরিয়ে বারি মাড়লো। তিন জনই কোনমতে দৌড়ে পালিয়ে গেলো পেছনের রাস্তা দিয়ে।

ইলহাম কুচকিয়ে যাওয়া ব্লেজারে কলার ঠিক করছে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, তানহা বাথরুমের ছিটকিনি খুলে ইলহামে কে দেখা মাত্রই ইলহামের পিট জাপটে ধরে কান্না জুরিয়ে দিলো। কান্না করতে করতে বললো,
” আজকে আপনি না থাকলে আমার মান-সম্মান সব ওরা শেষ করে দিতো ইলহাম৷ ”

ইলহাম থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো, তানহার কান্নাকাটির জন্য কিছু বলতেও পারছেনা, পিঠ জরিয়ে ধরায় সরিয়েও দিতে পারছে না। অবশ্য তানহাকে সরিয়ে দিতেও ইচ্ছে করছে না। ইদানীং তার হয়েছেটা কি তানহা তার আশে পাশে থাকলে এতো অদ্ভুত লাগে কেনো তার?
তানহা কান্না করতে করতে বললো,
” আপনাকে ধন্যবাদ বললে, ছোট করা হবে৷ আপনার এই ঋণ আমি কোন দিনও ভুলবো না ইলহাম। ”

ইলহাম হাতা টা ঠিক করে বললো, ” ভুলতে হবে না। যখন তখন জরিয়ে ধরবেন না তো। মেয়ে মানুষ লজ্জা শরমের বালাই নেই যখন তখন জরিয়ে ধরেন কেনো?”

তানহা লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলো, আমতা আমতা করে বললো, ” আসলে এতো বড় বিপদ থেকে বেঁচে ফেরে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না। ”

” কন্ট্রোল করুন, ভবিষ্যতে আরো শক খেতে পারেন। তাছাড়া আপনার যায়গায় অন্য কোন মেয়ে থাকলে এটাই করতাম আমি। আর.. ”

ইলহাম আর কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি ইলহামের ব্লুটুথ বেজে উঠলো, ইলহাম, ” হ্যাঁ হারুন বলো। ” বলেই দ্রুত চলে গেলো।
তানহা আগের মতোই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। ইলহামের বলা শেষ কথাটা তাকে খুব ভাবাচ্ছে, তার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এটাই করতো, সত্যি তো করতো, সে কি এমন স্পেশাল যে বার বার তাকেই উদ্ধার করতে হবে। তানহা চোখের পানি মুছে, নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।

————————————————-

” হারুন তুমি কি শিওর ব্লাক কোবরা সন্ধান এখানেই পাবো?”

” হ্যাঁ সার। কারোয়ান বাজার সিগাল টাওয়ার তো এটাই। ”

” ঠিক আছে, ওই ছেলেটার কথা ওপর ভিত্তি করেই এতদূর বিয়ের রিসিপশনের হল ঠিক করেছি সিগাল টাওয়ার৷ ”

” কিশের ছেলেটার কথা মতে, নন্দু ভাইয়ের আড্ডা খানা থার্ড ফ্লোরে বসে, ছোট একটা বারে। নিচতলায় রিসেপশনে, লোকজনের ভীরে ও টের পাবে না আমরা আড়ি পেতে আছি। ”

” হুম। তুমি খেয়াল রাখো এনি টাইম নন্দু বিল্ডিংয়ে আসতে পারে। ”

” ওকে স্যার। স্যার..”

” হ্যাঁ বলো, এই মাত্র পাঁচটা লোক লিফটে উটলো, থার্ড ফ্লোরে উঠবে উঠবে এরা। ”

” তুমি ফলো করো, হারি আপ আমি আসছি এক্ষুনি। ” বলেই ওয়াহাব কনভার্শন হলে থেকে কোন মতে দৌড়ে বের হতে শুরু করলো, সবাই অবাক হয়ে ইলহামের যাবার দিকে তাকিয়ে রইলো।
তানহা ওয়াশরুমে থেকে বের হলো, নিজেকে যথা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো, দাদীর পাশে এসে তানহা বসলো। শেহতাজ বেগম তানহার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,
” এতোক্ষণ কোথায় ছিলি তুই৷ আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম৷ আর একটু দেরি হলে তোর বাবাকে ডাক দিতাম৷ ”

” ওয়াশরুমে যাওয়ার পর….” মানহা তার দাদীকে সব কিছু খুলে বলতেই, শেহতাজ বেগম চোখ বুজে বললেন,
” ইলহামের উছিলায় আল্লাহ তোকে রক্ষা করেছে রে তানহা। ”

” হ্যাঁ দাদি। ”

” কিছুক্ষণ আগেই জানিস ইলহাম কোথায় যেনো ছুটে চলে গেলো৷ ”

তানহা অবাক হয়ে বললো, ” কোথায় দাদী?”

” তাতো জানি না। ”

তানহা চুপ করে ভাবার চেষ্টা করলো ইলহাম কেনো কোথাও ছুটে গেলো, ঠিক তখনি তানহার মনে পরলো ইলহামের বলা কথাটা, শুধু সে-ই নয় তার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে ইলহাম তাকেও হ্যাল্প করতো, এখন ও হয়তো ইলহাম কাউকে হ্যাল্প করতে গিয়েছে নিশ্চয়ই, ভাবতে ভাবতেই তানহা শ্বাস ফেললো।

————————————————–

” উফফ কি করছো কি শাহেদ। সরে বসো। ”

শাহেদ বিড় বিড় করে বললো, ” হাজবেন্ড এন্ড ওয়াইফ ছবি তুললে, ফাঁকা হয়ে বসলে কি ভালো দেখা যায়?”

তানিয়া চোখ বড় বড় করে বললো, ” এতো আদিখ্যেতা এই পাঁচ – ছয় বছর কোথায় ছিলো, শুনি। ”

” প্লিজ সবার সামনে এমন করো না। ছবিই তো। ”

” এতো আদিখ্যেতা করতে পারবো না আমি। ”

বলেই তানিয়া উঠে গেলো, স্টেজ থেকে নামতে যাবে ঠিক তখনি, শিহাব তার মায়ের হাত ধরে বললো,

” আম্মু চলো না বাবাইয়ের সাথে ছবি উঠাই। তোমাদের কি সুন্দর লাগছে দেখতে। ”

বলেই শিহাব তানিয়ার হাত ধরে শাহেদের পাশে বসালো অতঃপর বাবা মায়ের ছবি তুললো। শিহাব ছবি তুলতে তুলতে বললো,
” বাবাই আরেকটু আম্মুর পাশে আসো না, আম্মু একটু হাসি দাও। ”

শাহেদ মুচকি হেসে ছেলের কথা মতো তানিয়ার কাছে ঘেষে বসলো। তানিয়া ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারলো না শাহেদ মুচকি হেসে মনে মনে বললো, ‘ মাই সান ইউ আর গ্রেইট৷ আফটার অল ইউ আর মাই বয়। ‘

” আম্মু একটু হাসি। ” তানিয়া ছেলের কথা মতো হালকা হাসলো।

_______✨✨ঈদ স্পেশাল এক্সট্রা পর্ব✨✨______

” আম্মু একটু হাসি। ” তানিয়া ছেলের কথা মতো হালকা হাসলো।
শিহাব মনের মতো বাবা মায়ের ছবি তুললে বললো,
” বাহ পার্ফেক্ট৷ দেখো আম্মু তার হাসিটা কি কিউট লাগছে। ”

তানিয়া ছবিটার দিকে তাকালো, নিজের হাস্য উজ্জ্বল চেহারার দিকে তঅবাক হয়ে তাকালো। পাশেই শাহেদ বসে আছে৷ শেষ কবে সে শাহেদের সাথে ছবি তুলেছিলো তা ঠিক মনে পড়ছে না তার৷

” তোমার বাবাই কে কেমন লাগছে, বলবে না শিহাব? ”

শিহাব একটু ভেবে বললো, ” ভালো কিন্তু মাম্মাম অলওয়েজ বেস্ট৷ ”
তানিয়া ছেলের কথায় হেসে দিলো।

” শিহা বাবুটা সবসময়ই অনেস্ট এই জন্যই এতো ভালোলাগে৷ স্টুডেন্ট হিসেবেও ও বেস্ট। ”

ওয়াহাব মুচকি হেসে বললো, ” আপনি এখন কিসে পড়েন?”

মানহা অবাক হয়ে বললো, ” মেডিকেল থার্ড ইয়ারে। কেনো?”

” প্রফেসর রেহমান স্যার এখনো দেশের বাইরে। সেহেতু আমি কিন্তু আপনার প্রফেসর… ”

মানহা চমকিয়ে তাকালো, অতঃপর বাঁকা হেসে বললো, ” এই প্রফেসর সাহেব, রিমেম্বার দ্যাট। আপনার রুম এখন আমার দখলে, আপনি কি ভুলে যাচ্ছেন। ”

ওয়াহাব হা করে তাকালো। মানহা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হেসেই চলেছে। রাতে এক ঝাক মশার কামড় খেতে হবে ভাবতেই ওয়াহাব মন খারাপ করে বসে আছে।


সিগাল টাওয়ারের প্রথম ফ্লোরে ওয়াহাব- মানহার রিসিপশন পার্টি চলছে। এবং থার্ড ফ্লোরে বসেছে, জুয়া এবং মদের আসর। পাশে চার-পাঁচ টা মেয়ে ছোট পোশাক পড়ে নানা ভংগিমায় নাচানাচি করছে। জুয়ার আসরে নন্দু ভাই বসে আছে অপেক্ষা করছে, ব্লাক কোবড়ার। হঠাৎ থার্ড ফ্লোর অন্ধকার হয়ে গেলো, নন্দু ভাইয়ের কয়েকজন চেলা বিদ্যুত সংযোগের জন্য তাড়া হুড়ো শুরু করলো ঠিক তখনি বিদ্যুৎ চলে এলো, নন্দু ভাই সামনে তাকিয়ে চমকে উঠলো…
.
.
চলবে
হাতে সময় কম তবুও কয়েকজন পাঠকের অনুরোধে ঈদ স্পেশাল এক্সট্রা পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করলাম, কেমন হয়েছে মতামত জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here