অজানা_অনুভূতি #পর্বঃ ১৭

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ১৭
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

আদ্রিতা সোফায় বসে আছে। সামিরা গিয়ে দরজা খুলে দিলো।

আপনাদের বাসায় আদ্রিতা নামের কেউ আছে? আদ্রিতার নামে পার্সেল এসেছে। ( ডেলিভারি ম্যান)

জ্বি, আপনি আমাকে দিয়ে দিন আমি ওর বড় বোন।(সামিরা)

সামিরাকে পার্সেলটি দিয়ে লোকটি চলে গেলো।

আদুরি তোর পার্সেল এসেছে। অনলাইন থেকে কিছু কিনেছিছ নাকি? (সামিরা)

না দি আমি কিছু কিনি নাই মনে হয় আলো, তানহা বা আবির কিছু কিনেছে আর আমার বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে। (আদ্রিতা)

হ্যাঁ, তাই হবে। যা রুমে রেখে দে। (সামিরা)

দি আমি এখন পারবো না। সোফায় রেখে দে(আদ্রিতা)

শুধু এমনি বড় হযেছিছ, কোনো কাজ ঠিকমতো করতে পারিছ না। (সামিরা)

আদ্রিতা সামিরার কথা কানে তুলল না মন দিয়ে টিভি দেখতে থাকলো

সামিরা আদ্রিতার রুমে পার্সেলটি রেখে আসলো।

রাতের খাবার খেয়ে রুমে আসলাম ঠিক করলাম গ্রুপে জিজ্ঞেস করি এটা কার পার্সেল। নিশ্চয়ই আন্টিকে না জানিয়ে কিনেছে তাই আমার বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।
ফোন চেক করে দেখি ২য় নাম্বারটি থেকে মেসেজ সেখানে লেখা,

মায়াপরী লাল লেহেঙ্গা পরলে কিন্তু তোমাকে অনেক মানাবে। অনেক মায়াবী লাগবে। তোমার কলেজের অনুষ্ঠানে তোমাকে এই লেহেঙ্গাতে তোমাকে দেখতে চাই। আমার পাশে দাঁড়িয়ে যখন ছবি তুলবে। তখন তোমাকে একদম লাল টুকটুকে বউ লাগবে। আমার ভালোবাসা মিশ্রিত আছে এই ড্রেসটিতে। ড্রেসটি নিজে পরবে ত নাকি আমার হাতে পরিয়ে দিতে হবে? তুমি নিজে না পড়লে কিন্তু আমি ঠিকই তোমার বাসায় এসে পড়িয়ে তারপর তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যাবো। বাসার সবার সামনে নিশ্চয়ই অন্য ছেলের কোলে করে যেতে ভালো লাগবে না। তাই সুন্দর ভাবে সেজে যা যা দিয়েছি সেগুলো দিয়ে সাজবে। হিজাবটা অবশ্যই পরবে। আমি চাই না তোমার ঘন কালো চুল আমি বাদে কেউ দেখুখ। তোমার ঠোঁটের লাল রঙে আমার ঠোঁট রাঙাতে চাই।

মেসেজটি পড়ে বুকের হার্টবিট বেড়ে গেলো দ্রুত প্যাকেটটি খুললাম। প্যাকেটে সেই লেহেঙ্গাটি রয়েছে যেটা আমি তখন পছন্দ করেছিলাম সাথে একটি হিজাব আর ও অনেক কিছু। সব গুলো জিনিসই অনেক সুন্দর। আবার সেই চুরির সেটটি ও রয়েছে। কিন্তু এটি কে দিবে আমাকে? সাজ্জাদ? কিন্তু সাজ্জাদ ত জানে না আজকে আমি মার্কেটে গিয়েছিলাম বা এইটা ও জানে না আমি এই জিনিস গুলো পছন্দ করেছি। কিন্তু মেসেজের যেই ভাষা এটা ত সাজ্জাদ ছাড়া আর কারোর পক্ষে বলা সম্ভব না।কিন্তু সাজ্জাদ কিভাবে জানবে। তার মানে কি আরিয়ান স্যার? স্যারের হাতে একটি প্যাকেট দেখেছিলাম এই প্যাকেটটা ত ঔই প্যাকেটের মতো। তার মানে কি স্যার আমাকে পছন্দ করে? কিন্তু এটা কি করে সম্ভব? এইজন্যই কি সাজ্জাদের সাথে আসা যাওয়ার ব্যাপারে কথা বলেছে। আমি এখন এই লেহেঙ্গাটি কি করবো? আরিয়ান স্যার দিয়েছে নাকি এটি সম্পূর্ণ ভাবে সিউর না হয়ে আমি স্যারকে কিছু বলতে পারবো না। প্যাকেটটি আবার আগের মতো গুছিয়ে রেখে দিলাম।
বিষয়টি না জেনে কারোর উপর সন্দেহ করা যাবে না। হয় সাজ্জাদ না হয় আরিয়ান স্যার দু’জনের কেউ একজন মেসেজ গুলো করছে। এগুলো চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম খেয়াল নেই।

*****পরেরদিন সকালে*****

আদ্রিতা তোর কলেজের অনুষ্ঠান শেষ হলে পরের সপ্তাহে সামিরার বিয়ের কেনাকাটা করতে তুই সামিরা আর বাকিরা যাবে। (আদ্রিতার বাবা)

বাবা আমি না হয় না গেলাম বাকিরা যাক (আদ্রিতা)

না যাওয়ার কারন?(আদ্রিতার বাবা)

(সামিরা ঠিকই বুঝতে পারছে আদ্রিতা কেনো যেতে চাচ্ছে না। কিন্তু কিছু না বলে চুপ থাকা ছাড়া সামিরার কাছে ার কিছু করার নেই।)

যাবি না কেনো? বোনের বিয়েতে কি তুই ড্রেস কিনবি না? আর যেহেতু সেদিন সব কেনাকাটা হবে তাই তোর ও যা যা প্রয়োজন কিনে ফেল। এমনি বিয়ের আর এক মাস ও বাকি নেই। (আদ্রিতার মা)

মা বিয়েতে ত আলো তানহা ওরা ও আসবে। আমি ওদের সাথে শপিং এ যাবো। (আদ্রিতা)

আমি চাই তুই যেনো ওদের সাথে যাস (আদ্রিতার বাবা)

আর কিছু না বলে চুপচাপ বললাম ওকে বাবা আমি যাবো। (আদ্রিতা)

আদুরি একটু আমার রুমে চল। (সামিরা)

দির সাথে রুমে গেলাম।

তুই এই বিয়েটা মানতে পারবি ত? (সামিরা)

দি আমি এই ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে চাই না। তোরা সুখি হ এইটা আমি চাই। আমি যাই কলেজ আছে। বাকিরা অপেক্ষা করছে (আদ্রিতা)

কথাটি বলে আদ্রিতা চলে গেলো। এদিক দিয়ে কালকে স্বাধীনের সাথে কথা বলার পর থেকে সামিরার মনটা অস্থির অস্থির করছে। এক অজানা অনুভূতি গ্রাস করছে সামিরাকে। এই অজানা অনুভূতির মানে জানা নেই সামিরার কাছে।

*****

মায়াপরী তোমাকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছেটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। তোমার সেই ভয়ার্ত চেহারা, হাসিমাখা মুখ সব কিছু যেনো আমাকে পাগল করে তুলছে। আর কয়েকটি দিন তারপর থেকে তুমি আমার। পিচ্চি পরীটা আমার।

******

স্বাধীন ভেবে পাচ্ছে না তার অসময়ী বৃষ্টি তাকে চাই নাকি না। আর স্বাধীনকে পাওয়ার পর অসময়ী বৃষ্টির মনের অবস্থা কি হবে জানা নেই স্বাধীনের কাছে।

অফিসে কাজের জন্য রাখা হয়েছে কারোর কথা ভাবার জন্য না। (সাজ্জাদ)

স্বাধীন কথাগুলো ভাবছিলো ঠিক তখনই রুমে সাজ্জাদের আগমন।

চিল ব্রো সব সময় কাজ ভালো লাগে না (স্বাধীন)

কাজের সময় বাড়তি কথা পছন্দ না। (সাজ্জাদ)

নিজে ত সারাক্ষণ একজনের কথা চিন্তা করতে থাকছ আর আমি চিন্তা করলেই দোষ? (স্বাধীন)

সাজ্জাদ কথাটি শুনে আর কিছু বললো না।

আমি বুঝতে পারি না একটি হাস্যজ্বল মেয়ে তোর মতো একটি গম্ভীর মানুষের প্রেমে কিভাবে পড়লো? ভাবতে অবাক লাগে। (স্বাধীন)

যেইভাবে তুই একটি গম্ভীর মেয়ের প্রেমে পড়লি।(সাজ্জাদ)

আরে দোস্ত হঠাৎ কি হয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না। কেনো আমার সাথে মানাবে না? (স্বাধীন)

মানাবে। কিন্তু (সাজ্জাদ)

কিন্তু কি?(স্বাধীন)

মেয়ে কতটুকু মানতে পারবে ভাবনার বিষয়। সব মেয়েরই বিয়ে নিয়ে অনেক কল্পনা স্বপ্ন অনেক কিছু থাকে। S.R দের জন্য দুটি মেয়ের অনেক স্বপ্ন হয়তো পূর্ণ হবে না। বিয়ের পর এমন ভাবে রাখতে হবে যেনো কোনো আফসোস করতে না পারে। (সাজ্জাদ)

হ্যাঁ, তোর কথা বুঝতে পেরেছি। চিন্তা করিছ না বিয়ের পর কোনো ধরনের সমস্যা পড়তে দিবো না।(স্বাধীন)

সে আমাকে মানতে পারবে ত? (সাজ্জাদ)

ভালোবাসে তোকে অবশ্যই মানবে। (স্বাধীন)

সাজ্জাদ আর কিছু বললো না দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

সাজ্জাদ মনে মনে ভাবছে, না জানি আদ্রিতার মনের উপর কি ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

চল বের হয় আজকে একটু ঢাকার বাইরে যেতে হবে। তুই যাবি নাকি আমি একা যাবো?

আদ্রিতা কে একা রেখে কি যাওয়া ঠিক হবে? দুবছর ওর সাথে যোগাযোগ ছিলো না তখন একবারের জন্য ও ওর কোনো ক্ষতি হয় নি। আর এখন এই কয়েকদিনের ভিতর ওর উপর দু’বার হামলা হয়েছে। আমি ওকে একা রেখে কোথাও যেতে চাচ্ছি না। তুই একা চলে যা।(সাজ্জাদ)

ওকে তাহলে আমি এখনই বের হচ্ছি।(স্বাধীন)

****কলেজে*****

আমি আলো আর তানহা মাঠে বসে আছি। আলোকে এখনো ও ঔই লেহেঙ্গার ব্যাপারে বলি নি।

এই আদ্রিতা কি এতো ভাবছিছ। (তানহা)

মনে হয় ওর স্বপ্নের রাজকুমারের কথা ভাবছে।(আলো)

দুর সেরকম কিছু না এমনি তোরা কি যেনো বলছিলি বলতে থাক আমি শুনছি।

এমন সময় আবির ৪টি বার্গার কিনে আনলো।

দোস্ত আমার জন্য নিশ্চয়ই এনেছিছ, দে এমনি ও অনেক ক্ষিদা লেগেছে। (তানহা)

আমার কি আর কাজ নেই? যে তোর জন্য খাবার আনবো? (আবির)

হয়েছে হয়েছে আর ঝগড়া করতে হবে না। কি কিনে এনেছিছ দে এইবার (আলো)

তারপর আবির ওদের সবাইকে বার্গার দিলো।

তোরা বস আমি রুম থেকে পানি নিয়ে আসি।(আদ্রিতা)

হ্যাঁ, তাড়াতাড়ি যা (আবির)

দৌড়ে যেতে গিয়ে হঠাৎ নিচে পড়ে গেলাম

আদ্রিতাতাতা কথাটি বলে আলো তানহা আর আবির দৌড়ে আসলো।

ঠিক আছিছ তুই? (আলো)

পা মচকে গেছে দাঁড়াতে পারছি না। (আদ্রিতা)

কি করবি এখন? (তানহা)

অনেক ব্যথা করছে। (আদ্রিতা)

আদ্রিতা দাঁড়াতে চেয়ে ও দাঁড়াতে পারছে না।

#চলবে

[ সামিরার বিয়ের শপিং কোন শপিংমল থেকে করবো? 😁

আদ্রিতাকে কে সাহায্যে করলে আপনারা খুশি হবেন? ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here