অদ্ভুত প্রেমোমোহ তুমি পর্বঃ১০

0
3007

#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ১০
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি

ম্রিয়মান সূর্য ।তপ্ত সূর্য তার তেজস্বি রশ্মিবিচছুরণ অনেকটা কমিয়েছে।পাখিরা নীড়ে ফেরায় ব্যস্ত হচ্ছে।সারাদিনের ক্লান্তি যে দূর করতে হবে।হালকা বাতাসে গাছের পাতা থেমে থেমে হালকা দুলছে।পার্কের চারপাশে অসংখ্য নাম না জানা ফুল গাছের সমাহার।মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে সেখান থেকে।

পার্কেরই একটা কোনে বেঞ্চে এ পাশাপাশি বসে আছে নির্ধা আর শিহরণ।আগামী সপ্তাহে এক্সাম শুরু এর মধ্যে আর বেচারি দেখা করতে পারবে না।

“এই যে ডাক্তারবাবু মুখে অমাবস্যা কেনো আপনার??

“কিছু না।কেমন আছো তুমি??

“দেখে কি অসুস্থ মনে হচ্ছে??

“নাহ।”

“কি হয়েছে আপনার??দেখে মনে হচ্ছে কিছু নিয়ে চিন্তিত আপনি।”

“তেমন কিছু নয়।”

“আপনার কলিজার কিছু হয়েছে??

নির্ধা জানে মারশিয়াদ কে শিহরণ কতোটা ভালোবাসে।
বন্ধুত্ব এমনই হওয়া উচিত যেনো মুখ দেখেই সব বোঝা যায়।

“তোমরা সেদিন এক্সিবিশনে যাওনি??

নির্ধা একটা শ্বাস ফেলে বলে–

“আর বলবেন না,,গিয়েছিলাম তো।কিন্তু ওই যে প্রহর এর ওই হনুপাঞ্জি ভাইটাও সেখানে গিয়ে উপস্থিত।সবে তো ভিতরে ঢুকেছি আর কোথা থেকে এসে ওকে টেনে নিয়ে গেলো।
সব ভাইয়াটার দোষ।ভাইয়াই আজরাহান ভাইয়া কে বলছে যে আমরা ওখানে গিয়েছি।তাই আমিও বাধ্য হয়ে চলে এসেছি।ওকে ছাড়া একা ভালো লাগে না।”

“ভালোই করেছো চলে এসেছো।”

“কেনো,,কি হয়েছে??

শিহরণ সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলে।নির্ধার চোখ চড়কগাছ।
কিন্তু ইনশিরাহ এর কথা চেপে যায়।কারন তা নাহলে নির্ধা ওকে নানা ধরনের প্রশ্ন করতে পারে।

“মারশিয়াদ কি পাগল নাকি??কি শুরু করেছেন উনি?

“জানি না।”

“আচ্ছা।ওই মেয়ে কি সত্যিই আছে??

“যদি থেকেও থাকে তাহলে ও যেনো কোনোদিনও মারশিয়াদ এর সামনে না আসে।”

“এ কথা কেনো বলছেন??

শিহরণ ঘাড় ঘুরিয়ে একবার দেখে নির্ধা কে।হাজারো প্রশ্ন তার দৃষ্টিতে।

“জানি না।”

“ইশশশ,যা শুনলাম তাতে তো মনে হচ্ছে আপনার কলিজা ওই মেয়েকে না পেলে চির কুমার থেকে যাবে।”

“তা অবশ্য ভুল বলোনি।ওর যে পাগলামো ওই মেয়ের জন্য আমি দেখেছি তাতে এইরকম হওয়াটা স্বাভাবিক।”

“আচ্ছা এমনও তো হতে পারে ওই মেয়ে বিবাহিত বা তার ডজনখানেক বাচ্চা আছে।”

শিহরণ ঠোঁট কামড়ে তাকায় ওর দিকে।

“আই উইশ যদি মেয়েটা সত্যি হয় তাহলে এমনটা যেনো কখনো না হয়।আজ পর্যন্ত মারশিয়াদ যা চেয়েছে হয় তা পেয়েছে না হয় কেড়ে নিয়েছে।ওই ক্ষমতা আর শক্তি দুটোই ওর আছে।আর অভিজ্ঞতাও।”

“মানে??

“কিছু না।”

একটা গিফ্ট বক্স এগিয়ে দেয় ওর দিকে।

“কি আছে এতে??

“বাসায় গিয়েই দেখো।”

“ওকে।

সন্ধ্যা হয়ে আসছে আমি তাহলে এখন যাই।”
শিহরণ ম্লান হেসে বলে–

“রিটার্ন গিফ্ট দেওয়ার অভ্যাসটা আমি তোমাকে আজও করাতে পারলাম না পিচ্চি।”

“ওইটা বিয়ের পর।বুঝলেন ডাক্তারবাবু।”

“চলো তোমাকে পৌছে দেই।”

“উহু।আমি একাই যেতে পারবো।”

“ওকে।সাবধানে যাবে।”

“হুম।বাই।”

নির্ধা যেতেই ফোস করে এক শ্বাস ছাড়ে শিহরণ।মনে মনে বলে,,,,মারশিয়াদ এর কাজলচোখী যদি ওকে ভালো না বাসে তাহলে কি করবে সে??
আবারও শুরু হবে পূর্বের রক্তাক্ত অতীত??
,
,
,
খাবার টেবিলে একে অন্যের দিক আড়চোখে তাকায় আজরাহান আর সামান।সেদিন অফিসে তাদেরই এক ইমপ্লয়ি অরিধার সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে নিজের বড় ভাই কে।মেয়েটা কে ইচ্ছে মতো ঝাড়ে।কিন্তু তা থেকে বুঝা যায় বেশিরভাগ দোষ তার ভাই এর।সামান তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে যায়।এই বিষয় নিয়ে ঝামেলা করতে চায় না আজরাহান এর সাথে।তাই তার মুখোমুখি হতে চায় না।আজরাহান ভাবে তার দেবী র মতো ভাবী কে কি করে ঠকালো তার ভাই।এই মেয়েটা তার জন্য কি না করেছে।আর সে কিনা!!

“কিরে না খেয়ে চুপচাপ কি ভাবছিস??

“কিছু না মা।”

“খেতে ভালো লাগছে না??একটা ডিম ভেজে দেই নাহলে টমেটো চটকে দেই??

“কিছু লাগবে না।”

নন্দিতা একটা বাটি থেকে মাছ উঠিয়ে বলে–

“কিছু লাগলে বলো আমি করে দিচ্ছি।”

“কিছু লাগবে না ভাবী।খেতে ইচ্ছে করছে না।
তুমি খেয়েছো??আর প্রহর,নুরাইসা ওরা কোথায়??

“প্রহর ঘরে।আর নুরাইসা আমার সাথেই খাবে।”

“তুই খেয়ে নে।ওদের কথা তোর চিন্তা করতে হবে না।”

“তা কেনো মা??
ওরা মেয়ে বলে??কই বাবা তো তোমাকে ছাড়া একদিনও খায় না।”

“তুই আবার শুরু করলি??
আজরাহান প্লেট থেকে হাত উঠিয়ে ওর মায়ের দিকে ঠেলে দেয়।

“আজ তোমার হাতেই খাবো।খাইয়ে দাও।”

কুহেলিকা পরম আদরে ছেলের মুখে খাবার তুলে দেয়।আজরাহান যতটা না তৃপ্তি সহকারে খায় তার চেয়ে বেশি তৃপ্তি হয় কুহেলিকার নিজের হাতে ছেলেকে খাইয়ে দিয়ে।
,
,
ফ্লোরের উপর বসে বিছানায় বই রেখে পড়ছে প্রহর।

“পড়া শেষ হয়নি তোর??

“উহু।আরেকটু আছে।”

“উপরে উঠে বস।ঠান্ডা লাগবে।”

প্রহর উপরে বসে।
“তোর ফিস জমা করে দিয়েছি।”

“টাকা কোথায় পেলেন আপনি??

“সেটা তোর না জানলেও চলবে।শুধু পাশটা করিস বোন আমার দয়া করে আমার মান সম্মান ডুবাস না।”

প্রহর মিটমিটিয়ে হাসে।

“হাসিস কেনো??

“আমি আপনার বোন??
হি হি।

“একদম চুপ।”

প্রহর ঠোঁটের উপর নিজের আঙ্গুল চেপে ধরে।
মাথার নিচে একটা বালিশ দিয়ে আধশোয়া হয় আজরাহান।ওর পায়ের কাছে প্রহর।মোবাইলে একটা মেসেজ চেক করে আজরাহান।ওর মুখের প্রজ্জ্বলিত শিখা বলছে ভালো কোনো খবর।

“কি হয়েছে রাহান ভাইয়া??

“বেলা শুনছো,,,চাকরি টা আমার হয়ে গেছে।”

“সত্যিই !!!

“ইয়েস প্রহরিনী।”

“দাড়ান আমি সবাইকে বলে আসি।”

“নাহ।এখন বলতে হবে না।কাল বলবো।তুই পড়া শেষ করে খেতে যা।”

“হুম।”

আজরাহান চোখ বন্ধ করে নেয়।ধন্যবাদ জানায় আশফিক কে।ওর জন্যই চাকরি টা হলো।প্রহর তাকিয়ে আছে আজরাহান এর ঠোঁটের দিকে।

“গিলছিস কেনো আমাকে??

“আপনি কি রসগোল্লা যে গিলবো??

“তাহলে এভাবে কেনো তাকিয়ে আছিস??

প্রহর মৃদু কন্ঠে বলে–

“একটা চুমু খাই আপনার ঠোঁটে??

আজরাহার ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত করে।

“নাহ।”

“কেনো??

“আমি সিগারেট খেয়ে এসেছি।”

“কেনো খান আপনি সিগারেট??আপনাকে না বললাম সিগারেটের গন্ধ আমার একদম ভালো লাগে না।”

“তাহলে আমার কাছ থেকে দূরে থাকবি।”

“এইজন্যই আপনি খান তাই না??

আজরাহান চোখ উল্টিয়ে একবার তাকায়।উপুর হয়ে বিছানায় শুয়ে বলে–

“আর পড়তে হবে না।যা খেতে যা।ভাবী বসে আছে তোর জন্য।”

আজরাহান এর শরীরের তীব্র গন্ধরাজ এর ঘ্রান পাগল করে দিচ্ছে প্রহর কে।বিড়বিড় করে বলে,,,কি হয় একটু চুমু খেতে দিলে!! হনুপাঞ্জি কোথাকার।প্রহর ওর পায়ের কাছ থেকে একটু এগিয়ে সামনে এসে আজরাহান এর মাথার নিচে ঘাড়ের কাছে ছোট্ট একটা কামড় দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।আজরাহান ওভাবেই শুয়ে থাকে।ওর প্রহরিনী কি চায় তা সে জানে।কিন্তু তা যে সম্ভব নয়।
,
,
“তোমার ওই হনুপাঞ্জি দেবর কে দিয়ে কিচ্চু হবে না।”

“কেনো??

“কেনো আবার!!ঘুম ছাড়া আর কিছু আছে তার জীবনে??

“এতো কথা কি করে বলিস তুই,,ঠিক করে বল কি হয়েছে??

“কি আর হবে,,একটা চুমুই তো খেতে চেয়েছি,তাতেও বাড়ন।হু।ডং।”

“এভাবে কেউ বলে।পাগল মেয়ে কোথাকার!!
নে শুরু কর।”

“শুরুই তো করতে চাই।কিন্তু তোমার ওই হাদারাম দেবরটা শুরু করতে দিলে তো।”

নন্দিতা হেসে কুটি কুটি হয়।

“মনে হয় আমার শরীরে যেনো কারেন্ট।আমাকে স্পর্শ করলেই সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হবে।তাই এমন করে।”

“আরে তা কেনো হবে।ওকে একটু সময় দে।”

“ইশশ,আমি মেয়ে হয়ে পারি।আর তার সময়ের প্রয়োজন।এই সময় সময় করতে করতে একদিন আমি বুড়িই হয়ে যাবো।তখন সংসার করবো কার সাথে তোমার ওই হাদারাম বুড়ো দেবরের সাথে।”

“এতো কথা না বলে খা।বড্ড কথা বলতে শিখেছিস তুই।”

“ইশশ,কত আশা ছিলো বিয়ে করে দু তিন হালি বাচ্চা পয়দা করে একটা ফুটবল টিম বানাবো।কিন্তু এই আনরোমান্টিক রাহান ভাইয়া আমার সে আশায় গুড়ে বালি ঢেলে দিলো।মনে রেখো তোমার এই দেবরের কখনো ভালো হবে না।দেখে নিও তুমি।”

“সে দেখা যাবে।”

“আর তাকে বলে দিয়ো এই যে আমার সাথে এমন করছে যখন আমি কোনো হ্যান্ডসাম ছেলের সাথে সংসার করতে চলে যাবো তখন বুঝবে।”

“সংসার করার বড় শখ জেগেছে আপনার??
আজরাহান এর কন্ঠ শুনতেই ওর বুকের প্রানপাখি উড়াল দিলো বলে।
আজরাহান ওর পাশের চেয়ারে বসে।

“কি সমস্যা তোর,,বড্ড জ্বালা তোর শরীরে??

“আজরাহান এইসব কি ধরনের কথা!!

“কেনো এতোক্ষন সে এইসব ই বলছিলো।
কি রে ফুটবল টিম বানানোর খুব শখ তাই না??তাহলে চল তোকে ওই শিম্পাঞ্জি র কাছে দিয়ে আসি।একদিনেই তোর সব জ্বালা মিটিয়ে দিবে।”

প্রহর এর কান টেনে ধর আজরাহান।

“আহ,,ছাড়ুন লাগছে।”

“এইটুকুই সহ্য করতে পারে না আর সে ফুটবল টিম বানাবে।”

নন্দিতা ওদের দেখে মৃদু হাসে।দুটোর স্বভাব একটুও বদলায় নি।এখনো বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করে।

ওদের এই খুনসুটি তে আরও একজন বেশ খুশি হয়।সে বুঝতে পারে তার আশার প্রদীপ এখনো নিভে যায় নি।
,
,
,
দুই দিন ধরে নিজেকে ঘর বন্ধি করে রেখেছে মারশিয়াদ।কিছু একটার স্কেচ তৈরি করছে সে।চোখ,মুখ ঠোঁট আস্তে আস্তে সম্পূর্ন মুখমন্ডল।একপলক দেখেছে সে তাকে।

মারশিয়াদ এর কাছে এটা নতুন কিছু নয়।এক নজর কাউকে দেখেই সে তার স্কেচ বানাতে পারে।স্কেচ টা দুদিন ধরে তৈরি করছে সে।একদম পার্ফেক্ট হওয়া চাই।

শেষ তার স্কেচ।ঠোঁটে তার তীব্র অনাকাঙ্খিত বস্তু হাতে পেলে যেমন উজ্জ্বলতা দেখা দেয় তেমন হাসি।
স্কেচ টাকে বাতাসে উড়িয়ে বলে–

“আমি পেয়ে গেছি আমার কাজলচোখী কে।পেয়ে গেছি।”

দেয়ালের সেই পেইন্টিং এর সামনে দাড়িয়ে বলে—

“আর মাত্র কয়েকটা দিন।আপনার জান আপনার সামনে আসবে কাজলচোখী।”

“” তুমি ছুয়ে দিলে আঁধার লুকিয়ে যায়,আলোর ভিড়েতে
আমার আমি কে দেখি সদা,তোমার ওই কাজল আঁখিতে।””

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here