#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ১৫
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি
কালকের ঘটনায় হতাশায় নিমজ্জিত সবাই।কিন্তু শেষ পর্যন্ত আজরাহান প্রহরিনী কে এইসব থেকে বের তো করতে পেরেছে।
সকালের খাবারের সকল আয়োজন শেষ করে দুপুরের রান্নার সরঞ্জাম নিয়ে নাড়াচাড়া করছে নন্দিতা।পাশেই ফ্লোরে ওদের ছোট্ট গৃহকর্ত্রী পাটায় মসলা বেটে যাচ্ছে।
নুরাইসা এসেই তাকের উপর হাত রেখে বলে–
“কাল কি ধামাকা টা হলো বলো তো আপু!!!
নন্দিতা কোনো প্রতিক্রিয়া করে নি।
“তোমাদের প্রহর যে তলে তলে এতো দুর জল গড়িয়েছে তা তো ওকে দেখলে বোঝাই যায় না।”
নন্দিতা কিঞ্চিৎ বিরক্ত নিয়ে বলে–
“এইসব আজে বাজে কথা ছেড়ে ভালো কিছু থাকলে বল।”
“আমার কথা তো তোমার কাছে আজে বাজেই মনে হয়।আচ্ছা আপু,তোমার কি মনে হয় ওই ছেলে এমনি এমনি ওর জন্য এতোটা পাগল হয়ে গিয়েছে??
“কি বলতে চাস তুই??
“কোনো ছেলে কোনো মেয়ের চোখের প্রেমে পড়ে ব্যপারটা হাস্যকর না!!
গিয়ে দেখো ছেলেটার সাথে আর কি কি করেছে তার জন্য ছেলেটা ওকে ভুলতেই পারেনি।আর তাই খুজতে খুজতে এই পর্যন্ত চলে এসেছে।
জানোই তো,,কিশোরী নারীর শরীরের স্বাধ যে পুরুষ একবার আস্বাদন করে সে আর তাকে ভুলতে পারে না।”
নুরাইসার কথা শেষ হতেই ঠাস করে একটা চড় পড়ে ওর গালে।
“এই চড় টা যদি তোমাকে আমি আগেই মারতাম তাহলে তুমি আজ এই ধরনের বাজে কথা আমার নামে বলতে পারতে না।”
“প্রহর,,,,
“একদম চেচাবে না।যা নয় তা বলেছো তুমি আমাকে ছোট বেলা থেকে।কই আমি তো তোমাকে কিছু বলি নি।কিন্তু আজ,,এতো নিচু চিন্তাধারা তোমার নুরাইসা আপু।ছিঃ।”
একটু দম নিয়ে প্রহর আবার বলে–
“আমি জানি তুমি রাহান ভাইয়া কে ভালোবাসো।কিন্তু তার মানে এই নয় তুমি আমার চরিত্র সম্পর্কে এতো নোংরা কথা বলবে।
আমি আজ পর্যন্ত আমার সবকিছু দিয়ে একজন কেই ভালোবেসেছি।আর আমি জানি আমার ভালোবাসা পবিত্র।তাই ভাগ্যবিধাতা স্বয়ং আমাকে আমার রাহান ভাইয়া কে পাইয়ে দিয়েছে।আজকের পর আমার সম্পর্কে আর একটা বাজে কথা বললে সেটা তোমার জন্য ভালো হবে না।”
নুরাইসা রাগে পুরোই ফুটবল।কিছু বলতে গিয়েও পারেনি।আজ প্রথম প্রহর ওর গায়ে হাত তুলেছে।এর শোধ ও নিয়েই ছাড়বে।আর আজরাহান কে তো কোনোদিনও প্রহর এর হতে দিবে না।ওর কিশোরী জীবনে প্রথম ভালোবাসা আজরাহান।ও আজও সেই রাতের কথা ভুলতে পারেনি।যেদিন আজরাহান নুরাইসা কে প্রথম ভালোবাসার অনুভুতি সম্পর্কে অবগত করেছে।ভালোবাসা পবিত্র।
নিজের ঘরে গিয়ে অঝোরে কাদতে থাকে নুরাইসা।কাদতে কাদতে বলে–
“কিশোর প্রেম নারী কে সর্বগ্রাসী আর পুরুষ কে করে দায়িত্ববান।আমাদের কিশোর প্রেম তো আমাকে সর্বগ্রাসী করেছে কিন্তু তোমাকে কেনো দায়িত্ববান করলো না আজরাহান??
কেনো ভুলে গেলো তুমি তোমার নুরাজান কে??তোমার দেওয়া সেই এক রাতের ভালোবাসার স্পর্শ যে আমি আজও ভুলতে পারি নি।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পারবোও না।আমার পাথরের হৃদয়ের প্রথম ফোটা ফুল তুমি।”
নুযাইসার কান্নার গতি তীব্র হয়।ভালোবাসা সত্যিই অদ্ভুত।কাউকে সারাজীবন কাছে পেয়েও তার মুল্য কেউ বুঝেনা আর কাউকে স্পর্শ না করেও তার প্রানপুরুষ হওয়া যায়।
,
,
,
সোফার কোনে নির্বাক ও নিরুত্তাপ মারশিয়াদ।শিহরণ তার পাশের সোফাতেই বসা।মারশিয়াদ কে আজ প্রথম ও এতো শান্ত দেখছে।কঠিন শান্ত।যেনো ভয়ংকর কিছু হওয়ার আগের ভয়ংকর নিরবতা।
“দেখ মারশিয়াদ যা হওয়ার হয়েছে শুধু শুধু সেসব ভেবে লাভ কি??
মারশিয়াদ নিরুত্তেজ।তার মাথায় কি চলছে একমাত্র সে জানে।
“হ্যালো গায়েজ,,হোয়াটস আপ??
শিহরণ এক হোচট খায়।এই মেয়ে আর আসার সময় পেলো না।এখন মারশিয়াদ ওকে মেরে গুম না করে দেয়!!
“তুমি এখানে??
“কেনো আসতে মানা??
“তা নয়।”
“কেমন আছো মারশিয়াদ??
মারশিয়াদ তার দৃষ্টি নিক্ষেপন করেছে সামনের দেয়ালের লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির সেই মোনালিসা পেইন্টিং যার কপি সে এনেছিলো।
ইনশিরাহ ধুম করে বসে মারশিয়াদ এর পাশে।একদম লেগে বসে।অন্যসময় হলে হয়তো মারশিয়াদ ওর গলা চেপে ধরতো।কিন্তু শিহরণ আছে বলে তা করলো না।তার উপর সোফার কোনায় বসাতে সরে বসবে তার কোনো উপায় নেই মারশিয়াদ এর।
ইনশিরাহ নিস্পলকভাবে তাকিয়ে আছে মারশিয়াদ এর দিকে।একদম কাছ থেকে।মারশিয়াদ এর হৃদস্পন্দন শুনতে পারছে।সেদিন তো এই লোকটা ওকে প্রায়ই মেরেই ফেলেছিলো।তারপরও কি এমন আছে ওর মধ্যে যা ওকে এতোটা টানে!!
ইনশিরাহ ড্রাগ নেওয়া অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে।মারশিয়াদ এর নেশা এখন তার সব নেশা কে ছাড়িয়ে যায়।প্রথমদিন থেকেই ওর ব্যক্তিত্ব,বাচনভঙ্গি,চলারভঙ্গি এমন কি ওর রক্তচক্ষুও ইনশিরাহ কে বিমোহিত মুগ্ধ করেছে।চন্দনের ঘ্রান ভেসে আসছে মারশিয়াদ শরীর থেকে।
“হট বয় আজ এতো চুপচাপ কেনো??
মারশিয়াদ পুরো মুখের ভিতর জিহ্বা একবার ঘুরিয়ে এনে আবার স্থির করে।কিন্তু কোনো কথা বলে না।
“হট বয় আবার কে??
“এই যে তোমার বন্ধু।সবসময় আগ্নেয়গিরি হয়ে থাকে।কখন যেনো তার গলিত লাভা উদগিরন করে সবকিছু মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়।”
শিহরণ শব্দ করে হেসে উঠে।মারশিয়াদ চোখ ঘুরিয়ে তাকাতেই ঠোঁটে আঙুল চেপে চুপ হয়ে যায়।
“অবশ্য ভুল কিছু বলো নি তুমি।
তা কি মনে আপনার আগমন??
ইনশিরাহ একটা কার্ড মারশিয়াদ এর কোলের মধ্যে দিয়ে বলে–
“আজ আমার বার্থ ডে।তুমি আর তোমার এই হট বন্ধু অবশ্যই আসবে।”
মারশিয়াদ দাঁতে দাঁত চেপে কার্ড টা নিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে।
“এই এইটা তুই কি করলি??
“চিন্তা করো না রণ ভাইয়া।আমি জানতাম তোমার এই হটিসটি বন্ধু এটাই করবে।তাই আগেই একটা কার্ড আমি ইব্রাহিম চাচা কে দিয়ে এসেছি।”
“বাহ!!তুমি তো ভালো বুঝো মারশিয়াদ কে।
তো,,জন্মদিন আজ আর আজই আসলে ইনভাইট করতে??
“এখানেও আমার দোষ নেই।তোমার এই বন্ধু তার অসুরের মতো গার্ডদের বলেছে যেনো আমাকে ভিতরে আসতে না দেয়।দু দিন এসে ফিরে গেছি আমি।”
“তাহলে আজ কি করে এলে??
“ব্যাক ইয়ার্ডের দেয়াল টপকে।”
ওরা দুজনই বিস্ময়ভরা চোখে তাকায় ওর দিকে।
“এই যে হট বয় এভাবে কি দেখছেন??
এভাবে দেখো না প্লিজ,,তোমার ওই চোখের নেশা যে মরণব্যধি আমার,,উফফফ।”
মারশিয়াদ এর ইচ্ছে করছে এখনই শুট করে দেই।আস্ত পাগল একটা।
“তুমি কি পাগল!!!
যদি কিছু একটা হয়ে যেতো??
“চিন্তা করো না।হাই জাম্পে কলেজ থেকে দুবার মেডেল পেয়েছি।সো ডোন্ট ওয়ারি।”
“তাই বলো।”
“আর তোমার বন্ধুকে বলে দাও তার অসুররা যেনো আমাকে না আটকায়।না হলে কিন্তু আমি বুলড্রোজার নিয়ে আসবো।”
শিহরণ হাসতে গিয়েও থেমে যায়।
“আজ তোমার বন্ধুর কি হয়েছে বলো তো??
এই যে মি.মারশিয়াদ আরজান, আজ কি ব্রাশ করেন নি নাকি???
“গেট আউট।আই সে,গেট আউট।”
ইনশিরাহ একটা নির্মল শ্বাস ফেলে।
“যাক আমাকে বকা দেওয়ার জন্য হলেও তো তুমি কথা বলেছো।
কি হয়েছে তোমার??উল্কাপিন্ড হয়ে বসে আছো কেনো??
“তার উত্তর আমি তোমাকে দিবো না।”
“হুম,তা আমি জানি।
কিন্তু তুমি কি জানো,,যতবারই আমি তোমার ওই বা গালের ডিম্পল দেখি ততবারই নতুন করে তোমার প্রেমে পড়ি?
“সেদিন হয়তো বরফ কম পড়ে গিয়েছিলো,তাই মাথার তার গুলো ঠিকমতো জমে নি।”
“এই,তোমার মা কি তোমার মুখে মধু দেয় নি?
মিষ্টি করে কথা বলতে পারো না??
মারশিয়াদ উঠে জানালার সামনে গিয়ে দাড়ায়।জানালার পাশের জারুল গাছটায় একটা ছোট্ট পাখি বাসা বেধেছে।সাথে তার দুটো ছানা।পরম আদরে মা পাখিটি ছানা দুটোকে নিজের ডানায় আচ্ছাদিত করেছে।
শিহরণ ঠান্ডা কন্ঠে বলে–
“মারশিয়াদ এর বাবা মা কেউ নেই।তারা ছোটবেলাতেই মারা যান।ওর দাদুই ওকে বড় করে তুলেছে।”
“আই অ্যাম সরি রণ ভাইয়া।”
ইনশিরাহ উঠে মারশিয়াদ এর কাছে গিয়ে দাড়ায়।
“জানো আমারও মা নেই।এদিক থেকে তুমি আর আমি এক নৌকার মাঝি।”
মারশিয়াদ শ্রান্ত চোখে তাকায় ইনশিরাহ এর দিকে।
ইনশিরাহ ওর ডান হাতটা মারশিয়াদ এর হৃৎপিন্ডর উপর রাখে।ওর প্রত্যেকটি হৃদকম্পন অনুভব করে ইনশিরাহ।
” এতো কিসের কষ্ট তোমার??
মারশিয়াদ ইনশিরাহ এর হাত মুচড়ে ওকে ঘুরিয়ে ওর পিঠ ঠেকায় নিজের বুকে।
“আর কখনো আমার এখানটায় হাত দিবে না।এখানটায় শুধুই আমার কাজলচোখীর অধিকার।আর কারো স্থান নেই সেখানে।”
মারশিয়াদ চলে যায় নিজের ঘরে।ডুপ্লেক্স বাড়ির দোতলায় উঠতেই বড় করিডোর।মারশিয়াদ সেটাকে হল রুমের মতো সাজিয়েছে।বিভিন্ন দেশের এন্টিক পিস আর বিখ্যাত চিত্রকারদের চিত্রকর্ম দিয়ে।
“কি হয়েছে মারশিয়াদ এর??আজ এতো বিমর্ষ কেনো??
“তার সাধনা পূর্ন হয়েছে কিন্তু পরিনতি ঘটে নি।”
“মানে??
“তার কাজলচোখী আর কখনো তার হবার নয়।
দু মাস আগেই মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেছে।”
“কি!!!
“হুম।তাই ওর মন ভালো নেই।”
ইনশিরাহ স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।তাহলে তার রাস্তা ক্লিয়ার।এবার সে তার হট বয় কে নিজের করে নিবেই।
“চলো তোমাকে বাড়ির বাইরে যেতে সাহায্য করি।নাহলে কিন্তু তারা আবার তোমাকে বের হতে দিবে না।”
ইনশিরাহ মুচকি হাসে।যা তার চেহারার ঔজ্জ্বল্যতা দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়।
,
,
,
ঝিলের পাশেই একটা বেঞ্চে বসে আছে আজরাহান আর আশফিক।সোডিয়ামের বাতির আলোয় ঝিলের মাঝে ভেসে থাকা কচুরিপানা স্পষ্ট।ঝিলের পাড় ঘেসেই বিভিন্ন গাছ লাগানো।মৃদমন্দ বাতাস বইছে যা একটু পর পর গাছগুলো নাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
ঝিলের ওপাশে আবাসিক এলাকা।বড় বড় দালান।কারো কারো ছাদে তীব্র আলোকরশ্মি তাও আবার রঙ বেরঙের যা ঝিলের পানিগুলোর মধ্যে প্রতিচ্ছবি হয়ে দেখা দেয়।
“সরি ইয়ার।নির্ধার একটা ভুলের জন্য কাল এতোবড় একটা ঝামেলা হলো।”
“এতে ওর কোনো দোষ নেই।এখনো ছেলে মানুষ ওরা।”
“ক্ষমা করে দিস ওকে।”
“ছোট বোন কখনো অপরাধী হয় বড় ভাইয়ের কাছে!!!
আশফিক ছোট্ট করে হাসে।
“ছেলে টা প্রহর কে খুব ভালোবাসে।”
“ওতো একটা ম্যান্টাল।”
আজরাহান ফোস করে একটা দম ছাড়ে।
“না।হি ইজ অ্যা পার্ফেক্ট ম্যান।”
“কি বলছিস এইসব??
“ছেলেটাকে ভালো করে দেখেছিস???কতোটা ডেস্পারেট ছিলো।ওর চোখে প্রহর এর জন্য অগাধ ভালোবাসা দেখেছি আমি।”
“তো!!তাতে কি??
“তারপরও কিন্তু ও একবারও প্রহর কে স্পর্শ করেনি।”
“তুই কি পাগল??
এতো গুলো মানুষের সামনে ও প্রহর এর গায়ে হাত দিবে??
“যে ছেলে ছোট্ট একটা অজুহাতে পিস্তল হাতে নিতে পারে তার জন্য কি এইটা বড় কোনো ব্যপার??
“হয়তো।”
“হুম।কারণ ও জানে ভালোবাসা পবিত্র।তাকে শরীর দিয়ে নয় হৃদয় দিয়ে জয় করতে হয়।”
এমন সময় একটা সাত আট বছরের ছেলে একটা বড় ফ্ল্যাক্স হাতে সেখানে আসে।
“ছার,,চা খাইবেন??
আজরাহান বাচ্ছাটিকে দেখে।গায়ে পাতলা একটা সেন্টু গেঞ্জি।তাও কিছু জায়গায় ছেড়া।পড়নে একটা হাফ প্যান্ট।মনে হচ্ছে ধোয়া হয়নি অনেকদিন যাবৎ।
“কি নাম তোমার??
“রাসেল।”
“বেশ সুন্দর নাম তো।কোথায় থাকো??
“ওই যে ওইহানের বস্তিতে।আমি,আমার আম্মায় আর আমার ছোড বইন।”
“বেশ মিষ্টি করে কথা বলোতো তুমি।”
বাচ্ছাটি হি হি করে হেসে দেয়।
“ছার,,চা দেই??
“দাও।”
বাচ্ছাটি ওদের দুজনকে দু কাপ রং চা দেয়।
“স্কুলে যাও তুমি??
“না।”
“কেনো??
“টাহা নাই।”
“তোমার বাবা কি করেন?
“আব্বায় তো আমগোরে একলা ফালাইয়া চইলা গেছে।আম্মায় মাইনষের বাসায় কাম করে আর আমি দিনে ভাঙারি টোকাই আর রাইতে চা বেচি।”
আজরাহান আশফিক কে বলে–
“এরাই জীবন যুদ্ধের বীর সৈনিক।
আচ্ছা বলতো যদি ফেলেই যখন রেখে যাবে তাহলে কেনো বিয়ে করে।কেনো নারী কে নিজের কাছে বন্দি করে যাতে করে তারা আর মাথা উচু করে দাড়াতে নি পারে??
আমরা পুরুষরা পুরুষ হয়ে তো জন্ম নিয়েছি কিন্তু সুপুরুষ হতে পারি নি।”
ছেলেটির হাতে চায়ের মূল্যসহ একশত টাকার একটি নোট দেয়।বাচ্চাটি নিতে না চাইলে জোর করে দেয় আর বলে–
“আমার যদি সাধ্য থাকতো তাহলে হয়তো তোমার লেখাপড়ার দায়িত্ব টা আমিই নিতাম। পড়ালেখার করার চেষ্টা করো সারাজীবন তো চা বিক্রি করে মা আর বোনকে খাওয়াতে পারবে না।তোমাকে বড় কিছু করতে হবে।”
বাচ্চাটি দুই ঠোঁট উন্মুক্ত করে হাসে।
“আইচ্ছা ভাইয়া।আমি এহন যাই।মেলা চা রইছে।”
“যাও।”
আজরাহান দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
“আমার অনেক ইচ্ছে যদি কখনো সামর্থ্য হয় তাহলে এইসব পথ শিশুদের জন্য একটা স্কুল দেওয়ার যেখান ওরা ওদের মৌলিক অধিকার গুলো বিনা পয়সায় পাবে।”
“তোর এই মহৎ চিন্তা একদিন সফল হবে দেখিস।”
“তাই যেনো হয়।
আজ আসি রে।অনেক লেট হয়েগেছে।”
আজরাহান উঠে দাড়ায়।আবার বলে–
“আরেকটা কথা আমার মনে হয় নির্ধা আর শিহরণ নামের ছেলেটার মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে।”
“হয়তো।”
“ওদের কি সমস্যা আমি বুঝি না।সরকার মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য এতোকিছু করে আর এরা সংসার করায় আগ্রহী।
সানায়া আপু কে দেখ কোনোমতে ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে তারাফ ভাইয়ের সাথে গাটছাড়া বাধলো।আর নির্ধাও।প্রহরও কম না।বিয়ের পর থেকে শুরু করেছে সংসার করবে।ক্রিকেট টিম বানাবে।কত চিন্তা তার।”
আশফিক আর কিছু না বলেই আজরাহান কে জড়িয়ে ধরে।
“আমি সত্যিই ভাগ্যবান যে তোর মতো বন্ধু পেয়েছি।”
“আরে ছাড়,;পরে তো মানুষ আমাদের গে ভাববে।”
আশফিক ওকে ছেড়ে চোখ মুছে নেয়।
“মেয়েদের মতো চোখে পানি আসে কেন তোর??
“জানি না।”
“শিহরণ ছেলটাকে ভদ্র মনে হলো।ভেবে দেখিস।যা বাসায় যা।আঙ্কেল আনটি চিন্তা করবে।”
“সাবধানে যাস।আর ওসব ভুলে যা।”
“হুম।প্রহর কে এতো সহজে আমি ছাড়ছি না।অনেক কষ্টে ওকে আমি পেয়েছি।”
দুই বন্ধু বাইক নিয়ে নিজেদের গন্তব্য শুরু করে।
,
,
,
ঘরে ঢুকেই শার্ট এর ইন ছেড়ে টাই এর নব হালকা ঢিলে করে বিছানায় হেলান দেয় আজরাহান।বিছানায় একটা গোলাপি বল নিয়ে খেলছে কিঞ্চি।ওর দিকে চোখ যেতেই পকেটে হাত দিয়ে একটা গোলাপী রঙের রাবার ব্যান্ড বের করে কিঞ্চির সামনের এক পায়ে পড়িয়ে দেয়।প্রহর দেখে পুরো জ্বলে উঠে।প্রহর উঠে চলে যেতে চাইলে আজরাহান ওর হাত চেপে ধরে।
“কোথায় যাস??
“আপনাকে শান্তি দিতে।”
আজরাহান ওকে একটানে বিছানার উপর শুইয়ে দেয়।ওর উপর উবু হয়ে বলে—
“আমার শান্তি তো তুই।তুই গেলে শান্তি কি করে পাবো??
প্রহর ওকে বুকে ধাক্কা দিয়ে উঠায়।
“আপনি আপনার কিঞ্চিরানীর সাথেই শান্তিবিলাস করুন।”
“এতো রেগে আছিস কেনো তুই??
প্রহর দরজার কাছে যেতেই আজরাহান বলে–
“তোর জন্য একটা জিনিস এনেছি।”
“লাগবে না আপনার জিনিস আমার।আপনার কিঞ্চি কেই দিন।”
আজরাহান ল্যাপটপের ব্যাগ থেকে ওকে একটা প্যাকেট দেয়।
“কি এতে??
“খুলে দেখ।”
প্রহর প্যাকেট খুলে দেখে একটা গোল্ডেন রঙের ঘড়ি।
“এইটা আমার জন্য??
“নাহ।শ্যাওড়া গাছের শাখচুন্নির জন্য।”
“তাহলে পড়িয়ে দিন।”
আজরাহান ওকে ঘড়িটা পড়িয়ে দেয়।
“পছন্দ হয়েছে তোর??
“হুম।”
“এখন ভালো করে পরীক্ষা দিবি।”
প্রহর হাত ঘুড়িয়ে বার বার ঘড়িটাকে দেখছে।আজরাহান ভাবে,,কত অল্পতেই মেয়েটা খুশি হয়ে যায়।আজরাহান প্রহর এর একদম কাছে দাড়িয়ে।প্রহর এর কনুই বার বার আজরাহান পেটে গিয়ে লাগছে।আজরাহান একটু নিচু হয়ে প্রহর এক কানে ছোট্ট করে কামড় বসায়।
“কামড় দিলেন কেনো??
“আমার কিঞ্চির দিকে খেয়াল রাখবি।কত শুকিয়ে গেছে আমার কিঞ্চিরানী।”
“সরুন এখান থেকে আপনি।”
আজরাহান প্রহর কে হালকা করে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।প্রহর এর কপালে ভালবাসার পরশ একে দেয়।
একে অপরের উষ্ণ নিঃশ্বাস ছুয়ে যাচ্ছে তাদের অধরযুগল।প্রহর এর চোখ আটকে গেছে আজরাহান নেশার্ত চোখে।আর আজরাহান তার নয়ন নিবদ্ধ করে প্রহর এর গোলাপী অধরে।উভয়ের নিস্তব্ধতার মাঝে একে অপরের হৃদযন্তের আওয়াজ শুনতে পায়।প্রহর চোখ বন্ধ করে নেয়।
আজরাহান ওর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে—
“মারশিয়াদ ছেলেটাকে তোর কেমন লাগে??
ছেলেটা কিন্তু ড্যাশিং।”
প্রহর চোখ ছোট করে ঠোঁট গোল করে আজরাহান কে একটা জোরে ধাক্কা মারে।
“অসভ্য হনুপাঞ্জি।”
রুম থেকে চলে যায় প্রহর।আজরাহান হাসতে হাসতে বলে—
” আমি জানি আমার নিঃশ্বাস যতদিন চলবে আমার প্রহরিনীর মনে অন্য কারো জায়গা হবে না।”
হঠাৎ আজরাহান তার অধর সংকীর্ন করে।আর বলে–
“যদি কখনো আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়,তাহলে কি আমার প্রহরিনী আমাকে ভুলে যাবে?????
চলবে,,,
(বিঃদ্রঃ অনেক বড় করে দিয়েছি তাই একটু বড় করেই কমেন্টস করবেন😊😊।আর যারা স্টিকার,নাইস,নেক্সট লিখেন তারা দু চার শব্দ লিখলে খুশি হবো।
আর ইনশিরাহ বার্থ ডে পার্টি কিন্তু ইমপর্টেন্ট😒😒😒)