#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ২৬
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি
জীবন ক্ষনস্থায়ী।এই ছোট্ট জীবনে মানুষ কত কিছু করে।কেউ নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য প্রিয় মানুষের বলি দেয় আর কেউ প্রিয় মানুষের ভালো থাকার জন্য নিজেকে বলি দেয়।
প্রিয় মানুষকে ছাড়া হাজার বছর বেঁচে থাকাও মৃত্যসম যন্ত্রণা আর প্রিয় মানুষকে নিয়ে এক মুহূর্তও মনে হয় স্বর্গসুখ।
সকালের নাস্তার জন্য ডাইনিং এ খাবার দিচ্ছে নন্দিতা।প্রহর ঘুম ঘুম চোখে উঠে এসেছে।
“কিরে সারারাত ঘুমাসনি,চোখের এই অবস্থা কেনো??
আজরাহান তো ঘুমিয়ে গিয়েছিলো কিন্তু প্রহর সারারাত তার অক্ষিপল্লব বুঝতে পারে নি।নির্ঘুম কাটিয়েছে রাত।ফোলা চোখ আর ফ্যাকাশে চেহারা দেখে নন্দিতা কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেন।আজরাহান কাউকে কিছু বলতে বাড়ন করেছে।কিন্তু পালা বদল করা প্রশ্নে প্রহর আজরাহান এর অসুস্থ হওয়ার ঘটনা বলে দেয়।
“এইসব কি বলছিস??
এখন কেমন আছে আজরাহান???
কুহেলিকা গর্জনে শিউরে উঠে প্রহর।
“এই মেয়ে আমার ছেলেটাকে খেয়েই দম নিবে।কত করে বললাম ছেড়ে দে এই মেয়েকে।না শুনলো না আমার কথা।”
কুহেলিকা আরো উত্তেজিত হয়ে আবার বলে—
“আমার ছেলের কিছু হলে তোকে আমি ছাড়বো না কালনাগিনী।”
প্রহর ঝড়ঝড় করে কাঁদতে শুরু করে।
“আম্মা,এইসব কি বলছেন??
এতে ওর কি দোষ।”
“তুমি চুপ করো।এই মেয়ে যখন থেকে এই বাড়িতে এসেছে তখন থেকে আমার ছেলেটার একটার পর একটা বিপদ হয়েই যাচ্ছে।”
কুহেলিকার চিৎকারে অসুস্থ শরীর নিয়ে উঠে আসে সানায়া।প্রেগন্যান্সির পঞ্চম মাস চলে।অনেকটা ভারী হয়ে এসেছে শরীর।
“কি হয়েছে মা??
কুহেলিকা আজরাহান এর কথা বলতেই সানায়াও ক্ষেপে উঠে।প্রহর এর হাত ঝাকিয়ে বলে —
“এই,কেনো ছাড়িস না তুই ওকে??
তুই কি চাস তোর জন্য আমার ভাইটা মরে যাক।”
প্রহরের নাকের জল আর চোখের জল এক হয়ে গেছে।যতবার কান্নার আওয়াজ বাড়ে ততবারই ওর বুক কেপে কেপে উঠে।
“আমার ছেলের যদি কিছু হয় তাহলে দেখিস তুই কখনো সুখি হবি না।এই আমি তোকে অভিশাপ দিলাম,”তুই তোর জীবনের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস হারাবি”।মনে রাখিস এই এক অভাগা মায়ের অভিসম্পাত।”
প্রহর ধুপ করে বসে কুহেলিকার পা জড়িয়ে ধরে।
“এইকথা বলো না ছোট মা।রাহান ভাইয়া ছাড়া আমার কেউ নেই।ছোট মা,তুমি তোমার অভিশাপ ফিরিয়ে নাও।ফিরিয়ে নেও তোমার অভিশাপ।”
কুহেলিকা ধাক্কা মারে প্রহর কে।সানোয়ার আহমেদ স্ত্রীর এহেন কথায় আতঙ্কিত হয়ে বলেন—
“কুহেলিকা,নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মারলে তুমি।তুমি ভালো করেই জানো ওই অনাথ মেয়েটার ওর রাহান ভাইয়া ছাড়া আর কেউ নেই।পরে হিতে বিপরীত না হয়।”
কুহলিকা রাগের মাথায় প্রহর কে তো অভিশাপ দিয়ে দিলেন কিন্তু পরক্ষনেই তার স্বামীর কথায় তার হুশ ফিরে।তাহলে মা হয়ে নিজেই নিজের সন্তানের মৃত্যু কামনা করলো???
নিচের শোরগোল এ নেমে আসে আজরাহান।ফ্লোরেই অগোছালো হয়ে পড়ে আছে প্রহর।
“কিরে তোর এই অবস্থা কেনো??
“রাহান ভাইয়া আপনি ঠিক আছেন??
“আমার আবার কি হলো??
কুহেলিকা,সানায়া ওর কাছে আসে।পুরো শরীরে হাত বুলাতে থাকে।
“কি হয়েছে তোমাদের??আর সকাল সকাল কি শুরু করলে তোমরা??
“কি হয়েছে তোর বাবা?মাথা ব্যথা বেড়েছে??বলিস নি কেনো,আয় আমি মালিশ করে দেই।”
“মালিশ করতে হবে না।এই তুই চল আমার সাথে ডক্টর এর কাছে।এখনই যাবি।”
“হাত ছাড়ো আপু।
আর এইসব কি হচ্ছে??আমার কিছুই হয়নি,আই এম ফাইন।”
“মা তুমি সরো তো।এই তুই এখানে বস।”
সানায়া একটা চেয়ার টেনে আজরাহান কে বসায়।
“তোর কি বেশি খারাপ লাগছে??
আগে কেনো বলিস নি ভাই।তুই এখনই আমার সাথে ডক্টর এর কাছে যাবি।”
“আমার কিছু হয়নি আপু আমি ঠিক আছি।”
অতিরিক্ত উত্তেজনায় কুহেলিকার প্রেশার লো হতে থাকে।নুরাইসা তাকে সোফায় বসিয়ে তার মাথায় হাত বুলাতে থাকে।
“অনেক শুনেছি তোর কথা।আর একটা কথাও বলবি না।”
“চিন্তা করো না এতো সহজে আমি মরছি না।”
“চুপ।আরেকটা কথা বলবি না তুই।”
সবার কান্নায় আজরাহান এর নিজেকে অসহায় মনে হয়।মানুষগুলো ওকে কতোটা ভালোবাসে।প্রিয় মানুষগুলো এমনই হয়।
“সকাল সকাল বাড়িটাকে শোক বাড়ি বানিয়ে ফেলেছো।একটু তো জল জমা রাখো,সত্যিই যদি আমি মরে যাই তখন তো তার প্রয়োজন হবে।”
“মা,তোমার ছেলে কে কিছু বলবে??
কুহেলিকা হালকা নিঃশ্বাস নিচ্ছে।স্মিতভাবে বুক উঠানামা করছে।বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলে বলেন—
“ওকে বল,ওই মেয়েকে এই বাড়ি থেকে বের করতে।নাহলে আমি ই ওকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো।”
আজরাহান উঠে গিয়ে ওর মায়ের পাশে বসে।
“কুইন,ওকে বের করে দিলে তোমাকে দাদি বানাবে কে??
“একদম ওই মেয়ের কাছে যাবি না।ওই টা একটা বিষকন্যা।ওর ছোয়ায় তুই শুধু ধ্বংস হবি।শান্তি পাবি না কখনো।”
আজরাহান নরম দৃষ্টিতে তাকায় প্রহর এর দিকে।মনে মনে বলে–“আমি তো অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে গেছি।এখন শুধু ওকে ভালোবেসেই জীবনের অন্তিম নিঃশ্বাস নিতে চাই।”
সানায়া আজরাহান এর কাছে এসে একটু ঝুকে বসে।
“আপু,কি করছো তুমি।লেগে যাবে তোমার।”
“তাহলে বল তুই যাবি ডক্টর এর কাছে??
কিরে বল??
“যাবো।তবে আমার একটা শর্ত আছে।রাখবে?
“কি বল।তোর সবকথা শুনবো আমি।তুই শুধু আমার একটা কথা রাখ।”
“তাহলে মাওইমা আর খালুজান কে ফিরিয়ে নিয়ে আসো।তোমার এখন তাদের প্রয়োজন।আর তাদেরও তোমার প্রয়োজন।
আমাদের মায়ের তো তিন ছেলেমেয়।তবুও দেখো আমার একটু শরীর খারাপ করেছে বলে পুরো বাড়ি মাথায় উঠিয়ে ফেলেছে।কিন্তু তারাফ ভাইয়া তো তাদের একমাত্র ছেলে।ভাবো তাদের কি অবস্থা।”
সানায়ার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরে।বিয়ের পর তাদের সাথে কতো খারাপ ব্যবহার করেছে।একমাত্র নাতির সাথেও দু দন্ড সময় কাটাতে দেয়নি।তারাফ কতোদিন ধরে মন খুলে হাসে না।এক বদ্ধ জীবনে আবদ্ধ সে।
“নিয়ে আসবো তাদের কথা দিলাম।তুই যাবি তো??
“কেঁদো না আপু।আমার এই ছোট্ট মামাইকে না দেখে তোমার এই পাজি ভাই কোথাও যাচ্ছে না।”
“তুই আবার শুরু করলি!!!
বাবা ওকে কিছু বলবে??
“বলাবলির কিছু নাই।আজ আমাকে তোমার হাতের রান্না খাওয়াবে??
সানায়া চোখ মুছে নেয়।আদুরে গলায় বলে—
“বল তুই কি খাবি,আমি নিজের হাতে রান্না করবো তোর জন্য।”
“তোমার হাতের চিংড়ির মালাইকারী,খিচুড়ি আর মায়ের হাতের ভুনা মাংস।
কুইন,পারবে তো??
কুহেলিকা সোজা হয়ে বসে।
“পারবো সব পারবো।তুই শুধু একটু নিজের খেয়াল রাখ।তোর কিছু হলে তোর মা বাঁচবে না।
“যতদিন আমার কুইন এর দোয়া আমার সাথে আছে পৃথিবীর কারো সাধ্যি নেই আমার কিছু করার।”
সবার যার যার কাজে যায়।আজরাহান সোফায় বসে আছে।সানায়া যতই বেখেয়ালি হোক কিন্তু আজ পর্যন্ত আজরাহান কে একটা আচড়ও দেয় নি।ছোটবেলায় একবার সানায়ার লিপস্টিক নিয়ে পুরো বাড়ির দেয়াল রঙিন করে ফেলে।দুদিন না খেয়ে শুধু কেঁদেছে সানায়া।কিন্তু আজরাহান কে মারার কথা ভুলেও ভাবে নি।সামান সবসময় আজরাহান এর বিপরীত।কিন্তু ভাইয়ের প্রতি তারও ভালোবাসার কমতি নেই।কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় তা আজ বিধ্বস্ত সম্পর্ক।
সামনে দাড়ানো দুই নারী কে দেখে আজরাহান।নুরাইসার সাথে যা হয়েছে তা অপত্যাশিত।ও ইচ্ছে করলে এইসব ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে পারে ওর সাথে ওর পরিবার আছে।বাকিরাও আজরাহান কে ভালোবাসে কিন্তু ওকে ছাড়াও তারা নিজের জীবনকে চালিয়ে নিতে পারবে।কিন্তু ওর প্রহরিনী।তার তো তার রাহান ভাইয়া ছাড়া কেউ নেই।যদি আমার কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার প্রহরিনীর কি হবে??কে দেখবে তাকে???
উপরওয়ালা আমার জন্য না হোক অন্তত আমার প্রহরিনীর জন্যও যেনো আমার নিঃশ্বাস আটকে না দেয়।
,
,
খাবার টেবিলে ইচ্ছেমতো ঠুসে খাওয়াচ্ছে আজরাহান কে।
“আপু কি শুরু করলে??
এমন ভাবে খাওয়াচ্ছো যেনো আমার জীবনের শেষ খাওয়া??
“আরেকবার বাজে কথা বললে একটা থাপ্পড় মারবো।”
“মারো।অন্তত মরার আগে তোমার হাতের একটা থাপ্পড় তো খেয়ে যেতে পারবো।”
“মা,;তুমি ওকে কিছু বলবে।
আমি কিন্তু তোর সাথে একদম কথা বলবো না।”
আজরাহান সানায়ার কোমড় জড়িয়ে বলে —
“ক্ষমা করে দিও আপু।তোমাকে কত কথা বলেছি।”
“বলেছিস বেশ করেছিস।আরো বলবি।এখন খা।”
সবাই যার যার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।”
,
,
,
মানুষের স্বস্তির একমাত্র উপায় আল্লাহর দরবার।
আল্লাহ বলেন—
“নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে আছে স্বস্তি।”
–সূরা ইনশিরাহ–০৬
সবে মোনাজাত শেষ করে জায়নামাজ উঠিয়ে রাখে প্রহর।এই একটাই সময় যখন ওর নিজেকে হালকা মনে হয়।আজরাহান খাওয়া শেষ করে এসেছে মাত্র।
“কি চাইলি উপরওয়ালার কাছে??
“বলবো না।”
“আমাকে ছাড়া অন্য কিছু চাইবি তো গিলে খেয়ে নিবো তোকে।”
আজরাহান প্রহর কে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে।ওর বুকে মাথা রেখে প্রহর বলে—
“আপনি কি রাক্ষস???
“নাহ,তুই আমার রসগোল্লা।”
প্রহর আর কিছু বলে না।মিশে থাকে ওর রাহান ভাইয়ার বুকে।
“প্রহর??
“হুম।”
“তুই আমার ছোট্ট আজরাহান এর মা হবি??
“হুম।”
আজরাহান ওকে বুক থেকে সরায়।দু হাতের আজলা তে নেয় প্রহর এর মুখমন্ডল।তাকিয়ে থাকে ওর গোলাপী অধরযুগলে যা কখনো আজরাহান ছুয়ে দেখে নি।
“ঠোঁটের চুমুতে কামুকতা থাকে।কিন্তু কপালের চুমুতে থাকে ভালোবাসা।পবিত্র ভালোবাসা।”
কিন্তু প্রহর তো ওর কামনা নয়, পবিত্র ভালোবাসা।কিন্তু কেনো যেনো আজ প্রহর এর অধরসুধায় নিজেকে রাঙাতে ইচ্ছে করছে আজরাহান এর।ও ধীরে ধীরে প্রহর এর অধরপানে নিজের ওষ্ঠযুগল এগিয়ে নেয়।কিঞ্চি তার টুপরির উপরিভাগে দু পা দিয়ে খামছে ধরে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
পিছনে শার্টে টান লাগতেই ফিরে তাকায় আজরাহান।
“চাচ্চু,,তুমি প্রহরিনী কে চুমু খাচ্ছো??
আজরাহান সূর্য্যি কে কোলে তুলে নেয়।ওর গলুমলু গালে একটা চুমু বসিয়ে দেয়।
“তা আর খেতে দিলে কই মামুনি তার আগেই সব ভন্ডগোল করে দিলে।”
“রাহান ভাইয়া,এইসব কি বলছেন!!!
মিষ্টি,তুমি এখানে এলে যে??
“দাদু তোমাদের ডাকছে।”
“কেনো??
“ওই যে বড় বড় দুটো আঙ্কেল এসেছে।”
আজরাহান কিছুটা আন্দাজ করতে পারে কে এসেছে।কিন্তু কেনো এসেছে তা জানে না।
ড্রয়িং রুমে বসে আছে সবাই তাদের সাথে যোগ হয়েছে মারশিয়াদ আর শিহরণ।নিরুত্তাপ মারশিয়াদ আজকাল জীবন্ত লাশ ছাড়া কিছুই নয়।আজরাহান কে দেখে উঠে আসে শিহরণ।
“এখন কেমন আছো??
“ভালো।”
“দ্যাটস গুড।”
“বস।”
আজরাহান ওর মায়ের পাশে গিয়ে বসে।সূর্য্যি আর সারাফ কে নিয়ে সানায়ার ঘরে যায় প্রহর।
“আমরা কাল প্রফেসর অ্যালবার্ট এর সাথে কথা বলেছি।উনি বলেছেন সব ঠিক হয়ে যাবে।আমাদের শুধু তোমার কয়েকটা টেস্ট করিয়ে তার রিপোর্ট তাকে ইমেইল করে দিতে হবে।”
আজরাহান কঠিন কন্ঠে বলে–
“তার কোনো প্রয়োজন নেই।আমি ঠিক আছি।”
“দেখো,আজরাহান ইটস আ গোল্ডেন ওপরচুনিটি।”
আজরাহান ক্ষেপে উঠে।
“বললাম তো কোনো দরকার নাই এইসবের।আমি ঠিক আছি।তোমরা এখন যেতে পারো।”
আজরাহান চলে যায়।
“দেখুন আঙ্কেল,আমরা ওর ভয়টা বুঝতে পারছি।এখন আপনাদেরই সব করতে হবে।ওর সাহস হতে হবে।একটা রিস্ক তো আমাদের নিতেই হবে।”
“আমার আদর্শ পুরুষ আজ বিধ্বস্ত।ভেঙে চুরে একাকার সে।”
মারশিয়াদ শুধু শুনছে।তার যা করার সে করছে।
প্রহর কে দেখে শিহরণ ওর কাছে এসে বলে—
“অনেক কষ্টে তাকে ম্যানেজ করেছি।কাল রাতেই কথা বলেছি।একটা রিস্ক আমাদের নিতে হবে প্রহর।যেহেতু অনেক আগেই এই ঘটনা ঘটেছে আমাদের আর দেরি করা যাবে না।নাহলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।তখন আমাদের কিছুই করার থাকবে না।
আজরাহান কে তোমাকেই রাজি করাতে হবে।ওকে বোঝাও।আমি তো ভাবতেই পারছি না,ওর মতো রেসপনসিবল ছেলে এতো ইরেসপনসিবল হয় কি করে??”
“রাহান ভাইয়া ঠিক হয়ে যাবে তো??
“একদম।কিন্তু,তার আগে ওকে রাজি করানো প্রয়োজন যার একমাত্র উপায় তুমি।হাতে একমাস সময় প্রহর।প্রফেসর অ্যালবার্ট নিউ ইয়র্ক গেছে একটা স্পেশাল কোর্স করতে।তাই যা করার এই একমাসেই করতে হবে।”
“আমি চেষ্টা করবো।”
“চেষ্টা না প্রহর।তোমাকে পারতেই হবে।
আরেকটা কথা,এগুলো আমার নয় মারশিয়াদ এর কথা।কাল সারারাত ও ঘুমাতে পারে নি আজরাহান এর জন্য।নিদ্রাহীন থেকে প্রফেসর অ্যালবার্ট কে রাজি করিয়েছে।
“প্রত্যেক পুরুষের কঠিন মূর্তির আড়ালে রয়েছে একজন সংবেদনশীল ও আবেগী মানুষ।”
পারলে ওকে ক্ষমা করে দিও।আসি।”
প্রহর এক পলক দেখে মারশিয়াদ কে। জীবন্ত হয়েও মৃতপ্রায় মানব সে।একবার এর জন্যও প্রহর কে সে দেখে নি।
মারশিয়াদ কে পিছু ডাকে প্রহর।মারশিয়াদ হালকা ঘুরে কিন্তু তার দৃষ্টি তার কাজলচোখীর অগোচর।আর কখনো সে তার কাজলচোখীর নীলনয়ন দেখবে না।
“রাহান ভাইয়ার জন্য এতোকিছু করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।”
“আমি তার জন্য কিছু করি নি।যা করেছি নিজের জন্য করেছি।সুখ ও স্বস্তি কখনো কাউকে বোঝানো যায় না।ভালো থাকবেন।”
“পুরুষ মানুষ মোমের মতো।নিজেকে জ্বালিয়ে অন্য কে আলোকিত করে।”
,
,
,
ছাদের দেয়াল ঘেষে বসে আছে আজরাহান।আজকাল আকাশ বড্ড টানে তাকে।মনে হয় ওই নীলিমায় হারিয়ে যেতে।
মৃদুছন্দে পায়ে পায়ে এসে ওর পাশে বসে নুরাইসা।
“কেনো এমন করছো আজরাহান??
“আমি তোমাদের ছাড়তে চাই না নুরাজান।”
“এভাবে চলতে থাকলে কি হবে তুমি ভালো করেই জানো।”
“আমার যে বড্ড ভয় করে।আমার কিছু হলে আমার প্রহরিনীর কি হবে!!
“শুধু প্রহর এর কথাই ভাবলে,আমরা বুঝি কেউ না??
“তোমাদের সবার তো কেউ না কেউ আছে।কিন্তু আমার প্রহর একদম একা।”
আজরাহান হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় নুরাইসার দিকে।ছলছল আখি তার।
“তোমার সাথে যা হয়েছে তা ইচ্ছে করলেই ভুলে যেতে পারো।কিন্তু কেনো তুমি ভুলতে চাও না আমি জানি না।
পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।নাহলে তো ওই উপরওয়ালাও আমাকে ক্ষমা করবে না।
“তোমারই অলক্ষে হারিয়ে যাবো
খুজবে তুমি আমায়
শহর জুড়ে ছড়িয়ে যাবো
নিঁখোজ বিজ্ঞপ্তির ছায়ায়।””
আজরাহান এর কথায় হাউমাউ করে কেঁদে উঠে নুরাইসা।দৌড়ে চলে যায় সে।প্রিয় মানুষ হারানো আর্তনাদ কাউকে শোনাতে নেয়।
আজরাহান আবার আকাশ দেখে।বিমর্ষ আকাশ।
“আমরা এমনিতে কখনো আকাশ দেখি না। আমরা আকাশের দিকে তাকাই মন খারাপ হলে। মন বিষণ্ন হলে আকাশও বিষণ্ন হয়।”
——হুমায়ূন আহমেদ (তোমাকে)
চলবে,,,