অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part: 10

#অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part: 10
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤



আয়ানের কথায় অদিতি চরম অবাক।কি উল্টোপাল্টা বকছে আয়ান।অদিতি আর আয়ানের বউ ইম্পসিবল।। অদিতিকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আয়ান আবারো বলে উঠলো…

কি হলো অদিতি?সালাম দাও উনাকে….

জি আসসালামু আলাইকুম, (থতমত খেয়ে)

ওয়ালাইকুমুস সালাম।।বাবা তুমি বিয়ে করে ফেলছো?(অবাক হয়ে)

জি,,বিয়ে করা তো ফরজ।।তাই ভাবলাম ফরজ কাজ ফেলে রেখে কি লাভ।।করতে যেহেতু হবেই আগে বাগে করে ফেলাই বেটার তাই নয় কি?

তা ঠিক তা ঠিক(মুখ কালো করে)

জি ঠিক তো বটেই।।তবে দোয়া করবেন,,আল্লাহর রহমতে এবছরই বাবা হতে চলেছি।।(মুচকি হেসে)

আয়ানের কথায় অদিতির মাথায় যেনো মস্ত আকাশটা টুপ করে আকাশ ভেঙে পড়লো।।একটু আগে বিয়ে আর এখন বাচ্চা??অদিতি চোখ বড়বড় করে একবার আয়ান তো একবার মিষ্টার খানের দিকে তাকাচ্ছে।।মিষ্টার খান যে অদিতির থেকেও মর্মাহত তা বেচারার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।।তিনি চোখে মুখে দুঃখী দুঃখী ভাব ফুটিয়ে বলে উঠলেন…

আলহামদুলিল্লাহ,,, অতি খুশির খবর।

জি এইতো একমাস হলো ও কনসিভ করেছে।।দোয়া রাখবেন ওর জন্য।

আয়ান সাবলিল ভঙ্গিতে একেক পর এক মিথ্যে বলছে।।তাতে অদিতি নিজেও কনফিউজড সে একবার আয়ানের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার নিজের পেটে হাত দিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে ভেতরে আসলেই বাচ্চা টাচ্চা আছে কি না।।কি হচ্ছে এসব??অদিতির এসব ভাবনা চিন্তার মাঝখানেই একটা ছেলে এসে আয়ানকে ঝাপটে ধরলো।ছেলেটার ড্রেস আপেই বলে দিচ্ছে ছেলেটা ডক্টর।।অদিতি খুব কৌতূহল নিয়ে ছেলেটাকে দেখছে।আয়ানের সাজানো খেলা তার কাছে এই মুহূর্তে রীতিমতো ফিল্ম বলে মনে হচ্ছে।।

আয়ান,,দোস্ত কেমন আছিস। বল কি খাবি??

ভালো আছি,, খাওয়ার কথা পরে হবে,, তার আগে বল তোর ভাবির প্রেগন্যান্সি টেস্টের রিপোর্টটা রেডি হয়েছে তো??

প্রেগন্যান্সি রিপোর্ট?? (অবাক হয়ে)

হ্যা,,কাল না বললি আজ নিয়ে যেতে…

ছেলেটা কিছু বলতে গিয়েও আয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে থেমে গেলো।।আগা মাথা কিছু না বুঝেই মাথা ঝাঁকালো।এটা ওদের ফ্রেন্ড সার্কেলের রুলস।জানো বা না জানো থার্ড পার্সোনের সামনে ফ্রেন্ডের কথায় তাল মিলিয়ে চলো….

হ্যা,,হ্যা রেডি তো।।যাওয়ার সময় নিয়ে যাস।(বিয়া কবে করলি শালা)

দেখছো অদিতি তুমি শুধু শুধু টেনশন করছিলে।আসিফ সব রেডি করেই রাখছে।।আসিফ তোর ভাবি তো অস্থির হয়ে পড়েছে ওর নাকি শরীর খারাপ লাগছে।।

ভাবি??(আয়ানের দিকে তাকিয়ে)হ্যা হ্যা ভাবিই তো।।তোর বউ ভাবিই তো হবে।।ভাবি কোনো চাপ নিয়েন না।।সব রেডি।।ফার্স্ট টাইম প্রেগন্যান্সি একটু উইক তো ফিল হবেই,,, হেহেহেহে

আসিফ নামক ছেলেটা যে জোড়পূর্বক হাসছে তা অদিতি বেশ বুঝতে পারছে।তাই সে ও জোড়পূর্বক ঠোঁট দুটো প্রসারিত করলো।।ঠিক তখনই একটা মেয়ে প্রায় দৌড়ে এসে ওদের পাশে দাঁড়ালো।।আয়ানকে দেখে লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে মিষ্টার খানকে উদ্দেশ্য করে বললো “বাবা?আপুর ঞ্জান ফিরেছে।।চলো, বাবুকেও তো কোলে নাও নি এখনো নিবে চলো।।জি আপনিও আসুন(আয়ানকে উদ্দেশ্য করে লাজুক হাসি দিয়ে)

অদিতি ভ্রু কুচঁকে তাকিয়ে আছে।।ব্যাপারটা তার বোধগম্য হচ্ছে না।।এই মেয়ের অতিরিক্ত লজ্জা রীতিমতো সন্দেহের কারণ হয়ে দাড়াঁচ্ছে।।এই লজ্জাবতী লতিকার লজ্জার পেছনের ইতিহাস কি??আয়ানের কথায় ভাবনার প্রহর কাটিয়ে আয়ানের দিকে তাকাঁলো,,

হ্যা,,অবশ্যই আপনারা যান।।আমি আপনার ভাবির প্রেগন্যসন্সি রিপোর্ট গুলো আনছি।।ওর শরীরটা খারাপ লাগছে তো বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না।ফার্স্টটাইম প্রেগন্যান্সি তো।।(লজ্জামাখা হাসি দিয়ে)

আয়ানের কথায় আসিফ আর অদিতি একে অপরের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক একটা হাসি দিলো।।আয়ান তো ননস্টপ বকেই যাচ্ছে আর সামনে দাঁড়ানো মেয়েটার উপর যেনো ঠুসঠাস করে ঠাডা পড়ছে।।এবার অদিতি আর দাঁড়ালো না আয়ানকে টেনে এক কোনায় দাঁড়া করিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো,,,

এসব কি??পাগল হয়ছেন??(রাগী চোখে)

বোন,,পায়ে পড়ি আপাতত তাতে মেলাও।।নয়তো এই মেয়ের বাবা আজকে আমাকে উনার জামাই বানিয়েই ছাড়বে।।প্লিজ প্লিজ।।

মানে??(অবাক হয়ে)

মানে বুঝতেছো না??উনার মেয়েকে লিফ্ট দিয়েছি তাই ডেলিভারি ঠিক টাইমে হয়ে গেছে।এতোবড় উপকার এখনকার যুগে কে করে?তাই উনি আমার উপর চরম রকম ইমপ্রেসড।।তার ছোট মেয়ে তো বাপের চেয়েও ডাবল ইম্প্রেসড।।পারলে এখনি বিয়ে করে বাসর করে ফেলে(করুন চোখে তাকিয়ে)

তাই বলে আমাকে বউ বলবেন??

আরে,,,এখানে আমার পরিচিত অন্যকেউ ছিলো নাকি??তুমিই বিশ্বাসযোগ্য।। সো প্লিজজ

ঠিক আছে ঠিক আছে(ভাব নিয়ে)

অদিতির কথা শেষ না হতেই মেয়েটা তার বাপের হাত টেনে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে ন্যাকা গলায় বলে উঠলো….

বাবা??এই মেয়েকে বলো যেনো আয়ানকে ডিবোর্স দিয়ে দেয়।।আমি আয়ানকে বিয়ে করবো।।প্লিজ বাবা প্লিজ

মেয়েটার কথা শুনে অদিতির রাগ যেনো সপ্তম আকাশে উঠে গেলো।।তাই খান সাহেবকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আর আয়ানকে অবাক করে দিয়ে বলে উঠলো,,

এই মেয়ে এতো বড় সাহস??পায়ের জুতো দেখেছিস?জুতো খুলে মারবো।।ইউ ফুল।।আমার বরের দিকে নজর দিস।।খুন করে ফেলবো একদম।।(রাগী চোখে)

বাবা!!!দেখো আমাকে বকছে….

বাবা??(ভেঙিয়ে) ন্যাকামোর আছাড়ি।। তোর এই ন্যাকামো অন্য জায়গায় দেখা এখানে নয়।।আর আপনি কেমন বাবা??মেয়েকে এসব শিখিয়েছেন??মাফ করবেন বাট আপনার মেয়েকে শিক্ষা দিতে পারেন নাই।।

অদিতির রাগ আর কথা শুনে আয়ান অবাক।।আয়ানের মনে হচ্ছে সে সত্যিই অদিতির স্বামী আর অদিতি সত্যি সত্যিই ওর জন্য কোমর বেঁধে ঝগড়া করছে।।বিষয়টা কেনো যেনো আয়ানের কাছে ব্যাপক ভালো লাগছে।।এবার অদিতি আয়ানের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে উঠলেন,,,

ওই হাবলাকান্তর মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন??বিয়ে করবা এই মেয়েকে??

এ্যা?না না ছি ছি কি বলছো এসব??(থতমত খেয়ে)

তাহলে দাঁড়িয়ে না থেকে আমাকে কোলে নিয়ে হাঁটা দাও।।খারাপ লাগছে আমার।।

কিহহ??কোলে নিবো??,না মানে আই মিন,,,সবার সামনে??(অবাক হয়ে)

তো??সমস্যাটা কি??

কোনো সসমস্যা ননেই।।সসসব ঠিক আছে(মেকি হাসি দিয়ে)

আয়ান অদিতির বিহেভিয়ারে চরম অবাক এই মেয়ে তো আয়ানের থেকেও দুই ডিগ্রি উপরে।।আয়ান অদিতিকে কোলে নিয়ে হাঁটছে।।তাদের পেছনে ঠোঁটে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে হেঁটে চলেছে আসিফ।।খান সাহেব আর তার মেয়ের আগের জায়গাটিতেই “থ” মেরে দাঁড়িয়ে আছে।।অদিতিকে হসপিটালের সামনে এসে নামিয়ে দিতেই সে গটগট করে গাড়িতে উঠে বসলো।।

দোস্ত??কাহিনী কি?(চাপা হাসি দিয়ে)

কিসের কাহিনী?(,অবাক হয়ে)

এই যে বউ বউ খেলা।(দাঁত কেলিয়ে)

আবে,,ওই মাইয়া পিছে লাগছিলো এইজন্য এই ড্রামা।।

কিন্তু চেহারা তো অন্য কথা বলে মাম্মা,,,(দাঁত কেলিয়ে)

তুই যা ভাবছিস তার কিছুই না শালা।।

বুঝি বুঝি।।খাইনা আমি সুজি

খুব বুঝিস,,বুঝতে থাক।।গেলাম আমি ফোনে কথা হবে।

আচ্ছা বাই।ফোন দিস আর ভাবিকে দেইখা রাখিস।( দাঁত কেলিয়ে)

শালা যাবি তুই??

হাহাহাহা,,আচ্ছা যা।


রিয়া চুপচাপ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।।ওর সব অনুভূতি গুলো যেনো শূন্যতায় ভাসছে।।আচ্ছা ফাহিম ওকে ভালোবাসলে কি পৃথিবীর মারাত্মক কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে??তা তো নয়।।তাহলে কি হয় একটু ভালোবাসলে??রিয়াকে একটুও বুঝে না ফাহিম?

এই বুচি??

রিয়াদের কথায় ফিরে তাকালো সে।।মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠলো…

ভাইয়া তুই??কিছু বলবি??

তোর সাথে গল্প করতে এলাম(একহাতে জড়িয়ে ধরে)

ওহ,,আমার গল্প করতে ইচ্ছে করছে না ভাইয়া।তুই যা এখন….

মন খারাপ??

হুমম,,খুব খারাপ।।আমাকে একা থাকতে দে প্লিজ।

এমা!!!আমি জি তিন কাপ কফি বানালাম তার কি হবে??

হঠাৎ পেছন থেকে কারো কন্ঠ ভেসে আসায় ফিরে তাকালো দুজন।।সাদিয়ে হাসি মুখে ট্রে হাতে দাঁড়িয়ে আছে।।

রিয়া বেবি।এতো মন খারাপ কেন শুনি??(কফি এগিয়ে দিতে দিতে)

এমনিতেই…(মুচকি হেসে)

পাত্র পছন্দ হয় নি নাকি ননদিনী?? আমার কিন্তু হেব্বি পছন্দ হয়েছে।।তোমার ভাইয়াকে বিয়ে না করলে আমিই বিয়ে করে নিতাম(দুষ্টু হাসি দিয়ে)

এহহহ এতো সহজ??

দেখছো তোমার ভাইয়া হিংসা করছে।।

করবো না??একটা মাত্র বউ আমার।।। আমার বাচ্চার একনাত্র মা।।

রিয়া মুচকি হাসলো মাত্র।।সাদিয়া এবার রিয়ার হাতে হালকা চাপ দিয়ে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,,

কাউকে ভালোবাসো রিয়া??

সাদিয়ার কথায় রিয়া যেনো চমকে উঠলো,,কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে মাথা নাড়লো।।যার অর্থ না।।

রিয়া।।ভালো যদি বাসো আমায় বলো।।আর বিয়ে নিয়ে এতো টেনশনের কি আছে??দরকার হলে পালিয়ে যাবে,,আমি আর তোমার ভাইয়াও তোমার সাথে পালাবো। কি বলো রাজি??

এবার রিয়া হেসে উঠলো।।ওর হাসিতেও যেনো হাজারো চাপা কষ্ট।।হতাশা আর অজস্র ভয়।।


আয়ান বেডে বসে আপেল খাচ্ছে।।আর ফাহিম সোফায় বসে হাস ফাঁস করছে…

ওই তোর সমস্যাটা কি??মিরকি রোগ উঠছে??

ফাইজলামি করবি না বলে দিলাম।

আচ্ছা কি হয়ছে সেটা তো বল।

তোর কথায় ঠিক ছিলো,,(মাথা নিচু করে)

আয়ান চৌধুরীর কথা অলওয়েজ ঠিক হয়।।তবে তুই কোন কথার কথা বলছিস,বুঝতে পারছি না।

রিয়ার ব্যাপারটা।

ওহ,,কেমনে বুঝলি?(ভ্রু নাচিয়ে)

শী প্রোপোজড মি..

হোয়াটটটটটট?

এতো এক্সাইটেড হচ্ছিস কেন??ভাবছি আমি কাল সকালেই চলে যাবো।

তুই কেন যাবি??(অবাক হয়ে)

আমি গেলেই মেয়েটার মাথার এসব আবেগও পালাবে।

তুই আসমানে গেলেও লাভ নাই।।তার চেয়ে রিয়াকে নিয়ে ভাগ বা ওর মা কে বল।।

পাগল হইছিস??

কেন সমস্যাটা কি??মেয়েটা তোকে ভালোবাসে।।মেনে নে,,, শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছিস কেন??

ও একটা বাচ্চা।।

তাহলে একটা ফিডার গিফ্ট করে দে…যত্তসব

কথাটা বলেই আয়ান রাগ করে উঠে গেলো।।ফাহিম একদৃষ্টিতে আয়ানের যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে।।আচ্ছা ওর কি রিয়াকে বিয়ে করা উচিত??নো কখনো না।।বাচ্চা একটা মেয়ে আবেগের বসে এমন করছে।।দুদিন পর ঠিক হয়ে যাবে।।এসব নিয়ে ওকে মাথা ঘামালে চলবে না।।জাস্ট লেট ইট বি।।


বাড়ির সবাই মুখ কালো করে বসে আছে।।।রিয়াদের মা তো রীতিমতো অগ্নীরূপ ধারন করে বসে আছে।।এতোগুলো মেহমানের সামনে উনার মানসম্মানের ফালুদা তিনি কিছুতেই মানতে পারছেন না।।প্রায় দু’ঘন্টা হতে চললো রিয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।।রাত দশটা বাজতে চলেছে কিন্তু মেয়েটার কোনো খবর নেই।।ফাহিম, আয়ান, রিয়াদ, ফারহান সবাই খুঁজতে বেরিয়েছে কিন্তু এখনো কোনো খবর নেই।।রিয়াদ তো টেনশনে পাগল প্রায় রিয়া,যে সত্যি এমন কিছু করবে তাও রিয়াদকে না জানিয়ে তা রিয়াদ ভাবতেই পারে নি।।কে জানে ওর অবুঝ বোনটা কি অবস্থায় আছে এখন,,কেমন আছে?

#চলবে….

(মন ভালো নেই আজ।।তাই পর্বটাতে ভুলের সমাহার অনেক।।সাজানোও হয় নি ঠিক ভাবে।।সরি ফর দেট)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here