অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part: 11

অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part: 11
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤



রাত ১১ টা। রেলস্টেশনের একটা বেঞ্চিতে পা ঝুলিয়ে বসে আছে একটা মেয়ে।হাতে বাদামের ঠোঙা।।লাল বেনারসিতে অসম্ভব রূপবতী কোনো রমনী মাঝরাতে এভাবে স্টেশনে বসে বাদাম খাচ্ছে ব্যাপারটা সত্যিই অদ্ভুত।।আর এই অদ্ভুত কাজটা করছে রিয়া।সাজিদকে বিয়ে করবেনা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে সে কিন্তু কোথায় যাবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।ভেবেছিলো যে ট্রেনটা আসবে তাতেই ওঠে যাবে কিন্তু তিন ঘন্টা হতে চললো কোনো ট্রেনের টিকিটুকুরও দেখা মিলছে না তার।।এতো রাতে কখনো একা বাসার বাইরে বের হয় নি রিয়া তাই ভয়গুলো যেনো ঝাপটে ধরছে তাকে….এই ভয়গুলোকে তাড়ানোর প্রচেষ্ঠা হিসেবেই বাদাম চিবোচ্ছে ক্রমাগত।হঠাৎই কেউ একজন রিয়ার ডান হাত টেনে এক ঝটকায় দাঁড় করিয়ে দিয়েই গালে জোড়ে সোড়ে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো।।রিয়া সামলে উঠতে না পেরে কিছুটা পিছিয়ে আবারো বেঞ্চিতে গিয়ে পড়লো।।রিয়া ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক।গালে হাত দিয়ে টলমলে চোখে উপরের দিকে তাকিয়েই দেখলো একজোড়া রাগে লাল হয়ে যাওয়া চোখ তার দিকেই তাকিয়ে আছে স্থিরভাবে।কয়েকসেকেন্ড তার দিকে তাকিয়ে থেকেই রিয়া কিছু না ভেবেই ঝাঁপিয়ে পড়লো তার বুকে।।

আআআপনি এসেছেন??জানেন আমি প্রচুর ভয় পাচ্ছিলাম।ওই কুকুরটা কিভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো যেনো এক্ষুনি কামড়ে দিবে(আদুরে গলায়)

ফাহিম নিজের থেকে রিয়াকে ছাড়িয়ে সামনে দাঁড় করিয়ে আবারো কষে চড় বসালো তার গালে।রিয়া নির্বাক শ্রোতার মতো অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফাহিমের মুখের দিকে….চোখ টলমল করছে যেনো এখনই শুরু হবে বর্ষন।

সমস্যা কি তোমার হ্যা??পাগল তুমি??জানো বাড়ির সবাই কতো টেনশনে পড়েছিলো??জান বেরিয়ে গিয়েছিলো আমাদের।।পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছি আর তুমি এখানে বসে বাদাম খাচ্ছো???(চিৎকার করে)

তো…কি করবো?আপনি তো আমার কথা শুনলেনই না।(বিরবির করে)

এই কি শুনবো হ্যা??কি শুনবো??(বাম হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে)বলো কি শুনবো??(চিৎকার করে)

ফাহিমের চিৎকারে কেঁপে কেঁপে উঠছে রিয়া।এই ফাহিমকে চিনে না সে।ক্লাসে ফাহিম সবসময় গম্ভীরতা বজায় রাখে আর বাড়িতে হাসিখুশি কিন্তু এমন রাগ, কখনো না।।ফাহিমের থেকে একটু দূরেই দাড়িয়ে ছিলো আয়ান।।সে এবার দৌড়ে এসে থামানোর চেষ্টা করলো তাকে…..

ফাহিম?এটা বকাবকির সময় নয়।।বাচ্চা মেয়ে ভুল করে ফেলেছে এবার বকাবকি বন্ধ কর তো।।এমনিও দুইদুইটা থাপ্পর দিয়ে দিয়েছিস।।।এবার ছাড়

এর জন্য দুটো চড় খুব কম হয়েছে।।ইচ্ছে তো করছে মেরে গাল ফাটিয়ে দিই।।অসভ্য মেয়ে…

চুপ কর তো।।(বিরক্তি নিয়ে)এই যে পিচ্চিমনি পালাচ্ছিলে কেনো বলো তো??পালাচ্ছিলে ভালো কথা আমায় সাথে নিতে।।একা একা পালাতে হয় নাকি মিষ্টু??(মাথায় হাত রেখে)

আমি কি করবো??সব দোষ তো উনার??উনার জন্যই তো পালাতে গিয়েছিলাম।(ফুপিয়ে উঠে)

এই,,,একটা চড় দিবো।।আমি বলছি তোমাকে পালাতে??বলছি আমি??(ধমক দিয়ে)

ইশশ ফাহিম, তোকে বললাম তো চুপ থাক।বেশি বকিস কেন??(রাগী চোখে) আচ্ছা উনার জন্য কেনো পালাচ্ছিলে? ভালোবাসো উনাকে??(মিষ্টি হেসে)

কথাটা শুনেই হালকা মাথা নাড়লো রিয়া যার অর্থ হ্যা ভালোবাসে।।আয়ান এবার মিষ্টি হেসে বলে উঠলো,,

তো একা পালাচ্ছো কেন??উনাকে নিয়ে পালানো উচিত ছিলো তো মিষ্টু।

উনি যাবেন না তো।।

কে বললো তোমায় উনি যাবেন না??

আমি জানি।।উনি আমাকে পছন্দ করে না।(মাথা নিচু করে)

কেনো যেনো রিয়ার কথাটা আয়ানের বুকে গিয়ে লাগলো।।কি কষ্ট নিয়েই না মেয়েটা কথাটা বললো।।ফাহিম যে কেন মেয়েটার কথা ভাবছে না তাই বুঝতে পারছে না আয়ান।।শুধুমাত্র বয়সের ডিফারেন্স?? ১০ বছর কোনো ডিফারেন্স হলো নাকি??এটা তো খুবই স্বাভাবিক ডিফারেন্স কিন্তু এটা ফাহিমকে কিভাবে বোঝাবে আয়ান??কিভাবে??হঠাৎই ট্রেন আসতে দেখে রিয়া ব্যস্ত হয়ে পড়লো।।ফাহিমের হাত ধরে টেনে বলে উঠলো….

ভাইরাস,,ট্রেন এসে গেছে।।চলুন না পালিয়ে যায় প্লিজ।।এখন বাড়ি গেলে মা আমায় খুন করে ফেলবে।।জোড় করে বিয়ে দিয়ে দিবে।।।আমি বিয়ে করবো না,,প্লিজজ বোঝার চেষ্টা করুন।।

চুপ,,ছাড়ো আমায়।।পাগল হয়ছো তুমি??

প্লিজ ফাহিম,,যতো বকা দেওয়ার দেন।।যতো মারার মারেন।।বাট আগে ট্রেনে উঠুন।।আপনার পায়ে পড়ছি।।বোঝার চেষ্টা করুন ,, এই বিয়েটা হলে আমি মরে যাবো।।প্লিজ ফাহিম প্লিজ(হাত জোড় করে)

শাট আপ।।এসব বাচ্চামো বন্ধ করো আর বাসায় চলো…

ফাহিম চলে যা মেয়েটার সাথে।।এটা তোর বেস্ট ডিসিশান হবে ট্রাস্ট মি।পরে পস্তাতে না হয় তোকে।

চুপ কর তুই, তোর আস্কারায় এই মেয়েটার সাহস এতো বেড়েছে।।এই মেয়ে চলো।।(রিয়াকে টেনে).

প্লিজ না।।চলুন না আমার সাথে।।আমি আপনার সব কথা শুনবো।শুধু আমার সাথে চলুন।।বড্ড ভালোবাসি আপনাকে।খুব বেশি।।পারবো না আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে।।প্লিজ আমাকে এভাবে মেরে ফেলবেন না।।একটু তো দয়া করুন।।প্লিজজ

চুপপ আর একটা কথা না।।।তোমার এসব ন্যাকামো বন্ধ করে চলো।তুমি ভাবলে কিভাবে তুমি পালিয়ে আসবে আর তোমায় আমি বিয়ে করে নিবো।এমন ঘর পালানো ফালতু মেয়েদের বিয়ে করার ইচ্ছে আমার নেই।।সাজিদ তো তবু তোমায় বিয়ে করতে চায় আমি হলে কখনো করতাম না।।কখনো না।।তোমাকে দেখলেই ঘৃণা লাগছে আমার,, বাধ্য হয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে তোমায়। নয়তো এখানেই ফেলে রেখে যেতাম।।রাতের এই মানুষ নামক পশুগুলো ছিঁড়ে খেতো তোমায় সেটাই তোমার জন্য বেস্ট ছিলো।

ফাহিমের কথাগুলো রিয়ার কানে বাজছে অনবরত।।ফাহিম এভাবে বলতে পারলো ওকে??ওর জন্যই তো এতো ভয়ানক একটা স্টেপ নিয়েছে রিয়া।।ভালোবাসার মূল্য এতটা সস্তা জানা ছিলো না তার।।যেখানে সে ফাহিমের জন্য জীবন দিতেও রাজি সেখানে রিয়ার বাঁচা মরা নিয়ে কোনো চিন্তায় নেই ফাহিমের।।এতোটা সস্তা রিয়ার ভালোবাসা..?এতোটাই??

আমার বাঁচা মরা আপনাকে ভাবায় না??একটুও না?(অবাক হয়ে)

নাহ।।ভাবায় না।।

কথাটা বলেই ফাহিম ঘুরে হাঁটা দিলো গাড়ির দিকে।।ও নিজেও চায়নি রিয়াকে এতোগুলো কড়া কথা শুনাতে।কিন্তু বাধ্য হয়ে শুনিয়েছে যেনো রিয়া ওর থেকে দূরে সরে যায়।।সামলে নেয় নিজেকে।রিয়াকে তো বুঝতে হবে যে ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।।এসব আবেগের সময় নয় এখন।।তবু এসব বাচ্চামো কেন করছে ও??ফাহিমের বুকটা ও কেমন খালি খালি লাগছে।কিছু একটা ফেলে আসছে যেনো।।আয়ান নির্বাক দাঁড়িয়ে আছে,,ফাহিম বাচ্চা মেয়েটার সাথে এমন বিহেভ করবে বুঝতে পারে নি সে।।।ফাহিম তো এমন ছিলো না তাহলে আজ কেনো???এই বাচ্চা মেয়েটার বেলায়ই এতোটা কঠোর কেনো হতে হলো তাকে?রিয়া চুপচাপ শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে,,চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে অনবরত।। আয়ান কিছু বলতে গেলে তাকে থামিয়ে দিয়েই বলে উঠলো রিয়া,,,”চলুন ভাইয়া,দেরি হচ্ছে তো।” কথাটা বলেই হাঁটা দিয়েছে সে।।গাড়িতে একটা কথা বলে নি রিয়া।।আয়ান চিন্তিত মুখে বসে ছিলো শুধু।।কিছু একটা ভাবছিলো ক্রমাগত।আর ফাহিম লুকিং গ্লাসে রিয়াকেই দেখছিলো বারবার।।কি অপরূপ সুন্দরী একটা মেয়ে।।লাল বেনারসী,,গা ভরা গহনা,,চোখে ল্যাপ্টানো কাজল,,ঠোঁটে কড়া লাল লিপস্টিক,,ভীষন্ন মুখ সব মিলিয়ে যেন স্বর্গের কোনো দূত।।হাজারো মায়া ঢালা মুখটির মায়া কতোদিন পায়ে ঠেলে দিবে সে??ভালোবাসা তো সেও চায় কিন্তু কোথাও যেনো বাঁধা থেকে যায় তবুও।।বাড়িতে পৌঁছা মাত্রই মায়ের রাগের সম্মুখীন হতে হয়েছে রিয়াকে।।দুই গাল ভর্তি চড় আর হাজারো প্রশ্নের ছড়াছড়ি ছিলো তার মায়ের ঝুলিতে।কিন্তু তার প্রতিউত্তরে একটা “উহ” শব্দটি পর্যন্ত করে নি রিয়া।।কিন্তু ফাহিমের ব্যাপারটা মোটেও ভালো লাগে নি।।ও মেরেছে তা ঠিক আছে,,কিন্তু অন্যকেউ এভাবে রিয়াকে মারছে তাতে ওর কোথাও একটা তীব্র যন্ত্রনা হচ্ছে,,চোখ মুখ কুঁচকে আসছে ক্রমাগত।।রিয়াদ বোনকে দেখেই জড়িয়ে নিয়েছে নিজের সাথে।মলিন মুখটা একটু উঁচু করে জিজ্ঞেস করেছে,, “ভালো আছিস তুই?” কিন্তু তার কোনো উত্তর পায় নি সে।রিয়া শুধু একটা স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রহস্যময়ী হাসি দিয়ে রুমের দরজা দিয়েছে।।রিয়াদের মা ও ছাড়ার পাত্রী নয় উনি গম্ভীর কন্ঠে বলে দিয়েছেন কালকের মধ্যেই বিয়ে হবে রিয়ার।।এই সম্পর্কে কোনো কথা শুনতে চান না তিনি।।


ওই মিষ্টার??এতো রাতে আকাশে কোনো গার্লফ্রেন্ড খুঁজছেন বুঝি???

আয়ান ছাদের এক কোনায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবছিলো।তখনই কানে একটা কন্ঠ ভেসে আসায় ফিরে তাকালো সে,,,,

খুঁজতেই পারি ক্ষতি কি তাতে মিস.ঝগড়ুটে?(মুচকি হেসে)

ক্ষতি নেই।তবে মুখের এই অবস্থা দেখলে আকাশ জমিন সব জায়গার গার্লফ্রেন্ডরাই দৌড়ে পালাবে।।হাহাহাহাহা

কি বোঝাতে চাচ্ছো??

এই যে,,,এই সাদা বাদরকে কেউ তার বিএফ বানাতে রাজি হবে না সো ওই চিন্তা বাদ দেন লাভ নেই।।(হাত উল্টে)

আমি বাদর??সেদিন তো প্রুব হলো,,মেয়েরা আমাকে দেখে কিভাবে ফিদা হয়? তারপরও আমি বাদর হলে তুমি তো পেত্নীর পদও পাও না।।

এহহহ,,খবরদার পেত্নী বলবেন না।।আমি পেত্নী হবো কেন??পেত্নী তো হবে আপনার বউ ….কারণ আপনি তো এক্ষান সাদা ভূত।।হুহ

তুমিই তো আমার বউ,,,ফলস বউ হলেও বউ তো,,উইথ বাচ্চা হাহাহাহা

বউ আর আপনার??মরে গেলেও না।।আর বাচ্চার কথা তো চিন্তারও বাইরে,,,

তাই বুঝি??

কথাটা বলেই অদিতির হাতটা টেনে সামনে দাঁড় করিয়ে কোমর চেপে ধরলো আয়ান।।।”এখনও মনে হচ্ছে চিন্তার বাইরে??বেবির আম্মু(চোখ টিপে) এব্রিথিং ইজ পসিবল বেবি” আয়ানের কথায় অদিতি দ্রুত সরে দাড়িয়েই বলে উঠলো “মানে??কি বলতে চান আপনি??” আয়ানকে ঠোঁটে শয়তানী হাসি ঝুলিয়ে তার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখেই,, মুখ ভেঙিয়ে বলে উঠলো” লুচু কোথাকার” আর সাথে সাথেই হুহা করে হেসে উঠলো আয়ান।।মেয়েটাকে এই মুহূর্তে বেশ করে আদর করে দিতে ইচ্ছে করছে তার।।

তো,,এখানে দাঁড়িয়ে কি এতো ভাবছিলেন??(কৌতুহলী চোখে)

তেমন কিছু না,,রিয়ার কথা ভাবছিলাম

সত্যিই হুট করে কি যে করে বসলো না মেয়েটা।।বাচ্চা মেয়ে!!(মুচকি হেসে)

ওটা ওর বাচ্চামো ছিলো না।।

মানে??(অবাক হয়ে)

কিছু না।।বাদ দাও….


সকাল দশটা,, রিয়ার দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে সাদিয়া।।আধাঘন্টা যাবৎ ডাকছে কিন্তু রিয়ার সাড়া নেই।।রাতে আয়ান রিয়ার সাথে ঘুমোতে বলেছিলো অদিতিকে।।অদিতি রাতেও ডেকেছে কিন্তু রিয়া সাফ মানা করে দিয়েছে,, অদিতিও আর ঘাটায় নি রিয়াকে।।এখন দরজাও খুলছে না।।সাদিয়ার ডাকাডাকিতে সবাই এসে জোড়ো হয়েছে রুমের সামনে। ফাহিমের কেন যেনো বিষয়টা অদ্ভুত লাগছে।।অন্যরকম একটা ভয় চাড়া দিয়ে উঠছে মনে।হঠাৎ কোথা থেকে আয়ান এসে গম্ভীর মুখে বলে উঠলো,,

দরজাটা ভেঙে ফেলো রিয়াদ

কেনো?(অবাক হয়ে)

জানি না,,,তবে ভেঙে ফেলো।।ভেতরে নিশ্চয় কোনো প্রবলেম হয়েছে।।।আমি যা ভাবছি তা না হলেই হলো।

কথাটা শুনে রিয়াদকেও অজানা ভয় গ্রাস করতে লাগলো ক্রমাগত।।গার্ডদের দিয়ে দরজা ভাঙা হলো কিন্তু দরজার ওপারে যা ছিলো তা দেখে সবাই স্তব্ধ।।রিয়ার নিথর দেহটা পড়ে আছে ফ্লোরে,,,কাটা হাতের চারপাশের ফ্লোর রক্তে লাল।।পাশেই পরে আছে স্লিপিং পিলের ফাঁকা দুটো পাতা।বাঁচার কোনো সম্ভাবনা রেখে যায় নি রিয়া।।একটুকুও না।ফাহিম হাঁটু ভেঙে ধপ করে বসে পড়লো ফ্লোরে।।হাত-পা কাঁপছে তার। রিয়া?ওর পিচ্চিটা,,ফাহিমের সহ্য হচ্ছে না আর।।নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে তার।।এমন পরিনতি তো চায়নি সে৷।রিয়াকে হাসিখুশিই দেখতে চেয়েছে সবসময়,,,এভাবে রক্তাক্ত নিথর দেহ তো চায়নি ফাহিম ,,কখনো না।।রিয়াদ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,, ওর বোনটা এভাবে পড়ে আছে তা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না সে।।সব যেনো স্বপ্ন এক ভয়ানক দুঃস্বপ্ন।।কাঁপা কাঁপা হাতে বোনের গালে হাত রাখলো সে,,,বোনের চোখের কোন দিয়ে বেয়ে পড়া পানি গুলো মুছে দিলো খুব যত্নে।।।ওর আদরের বোনটা!!তার কান্না যে সহ্য হয় না রিয়াদের,,,পাশেই পড়ে আছে রক্তমাখা একটুকরো কাগজ,,তাতে লেখা….

“ভাই?রাগ করেছিস?রাগ করিস না প্লিজ।।তুই তো জানিস তুই রাগলে তোকে একদম হনুমানের মতো লাগে।।বিশ্বাস কর,,ভাই খুব করে চেয়েছিলাম বেঁচে থাকি।তোর কোলে ওঠে একগাদা আইসক্রিম হাতে নিস্তব্ধ রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা ঘুরে বেড়াই।।কিন্তু দেখ,,বাঁচতেই পারলাম না।।আমি কি খুব খারাপ ভাই??আমাকে কি ভালোবাসা যায় না??এই ভাই?তুই কাদঁছিস?বোকার মতো একদম কাঁদবি না।।আচ্ছা ভাই,,একটু জড়িয়ে ধরবি আমায়??খুব ইচ্ছে করছে তোকে জড়িয়ে ধরে কাঁদি।। আমাকে তো শুধু তুইই বুঝিস ভাই।দেখ না ভাই,,এত্তোগুলো কষ্ট হচ্ছে,,সহ্যই করতে পারছি না।।একটু জড়িয়ে ধরবি প্লিজ।।তুই জড়িয়ে ধরলেই মনে হয় বাবা আমায় খুব করে জড়িয়ে ধরে আছে আর বলছে মামনি?পেট ব্যাথা করছে?আমি এতো খারাপ কেন ভাই?? সবার লাইফ হেইল করে দিচ্ছি তাই না??শোন,,মাকে বলে দিস তার খারাপ মেয়েটাকে যেন ক্ষমা করে দেয়।।আর তোর প্রিন্সেসকে বলিস ওর ফুপ্পি ওকে খুব ভালোবাসে,,,খুব।।ভাই?আমাকে মনে রাখবি তো??”

কাগজটা ফেলে দিয়েই বোনটাকে খুব শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিলো রিয়াদ,,,,হাত কাঁপছে তার,,শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছে তবু বোনকে ছাড়বে না সে।।কিছুতেই না।। ওর বোনোর যে কষ্ট হচ্ছে..

এই বোন??ওঠ?একদম দুষ্টামি করিস না প্লিজ।।।একবার বল কি চাই তোর??সব এনে দেবো।।সব কিছু,, শুধু আমাকে একবার ভাই বলে ডাক।।এই দেখ তোকে ছোঁয়ে বলছি,,, তুই যা বলবি তাই হবে।।তবু ওঠ না বোন। প্লিজজ ওঠ,,এমন করিস না প্লিজজ করিস না এমন,,,কষ্ট হচ্ছে তো,,দেখ না আমি কাঁদছি,, ওঠ না?

আয়ান দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো,,,শরীরে শক্তি পাচ্ছে না সে,,চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে অনবরত।।মেয়েটার হাসি মুখটাই ভেসে উঠছে বারবার।।কারো জীবনের সমাপ্তী কি এতোই সহজ??বাড়িটা যেনো নিস্তব্ধপুরীতে পরিনত হয়েছে।।চারদিকে গা ছমছমে নীরবতা তার মাঝে শুধু রিয়াদের হাহাকার।।রিয়াদের মা তো সেই কখনই ঞ্জান হারিয়েছে।।আর বাকি সবাই নির্বাক।।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here