অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part: 12

অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part: 12
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤



হসপিটালের করিডোরের এককোণে আকাশের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফাহিম।।চোখদুটো অসম্ভব লাল।।বুকের প্রতিটি স্পন্দনের সাথে পাল্লা দিয়ে আল্লাহকে ডাকছে সে।।শুধু একটাবার রিয়াকে সরি বলার সুযোগ চায় তার,,শুধু একটা বার।।ভেতরটা যে ভেঙে টুকরো টুকরো হচ্ছে প্রতিটি মুহূর্ত…ভালোবাসাটা যে সত্যিই খুব কষ্টের।।হঠাৎ বেজে ওঠা ফোনের রিংটোনের শব্দে কেঁপে উঠলো ফাহিম।কাঁপা হাতে ফোনটা কানের কাছে নিয়েই শুনতে পেলো…. আদরে মাখা একটা কন্ঠ…,

বাবু??কেমন আছিস?

মায়ের কন্ঠটা শুনে ফাহিমের গলাটা ধরে এলো,,কোনো রকম কাঁপা গলায় বললো….

আমি ভালো নেই মা।।একটুও ভালো নেই।

কি হয়েছে বাবু?(উদ্ধিগ্ন হয়ে)

মা?র..রিয়া সুইসাইড ক…করেছে মা।(কাঁপা গলায়)

কিহ??রিয়া?সাদিয়ার ননদ না?সাদিয়ার বিয়েতে দেখেছিলাম।।কি ফুটফুটে বাচ্চা একটা মেয়ে।।

হুম…

ও কেনো এমন করতে গেলো???এতটুকু পিচ্চির কি এমন কষ্ট থাকতে পারে??

আমার জন্য মা।।ওর এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী।প্রচন্ড রকম দায়ী মা,,প্রচন্ডরকম দায়ী।(ধরা গলায়)

কি বলছিস এসব বাবু?তুই কেনো দায়ী হতে যাবি??(অবাক হয়ে)

ফাহিম এবার সবটাই খুলে বললো ওর মাকে।।রিয়া যে ওকে ভালোবাসতো তার প্রতিটি কথায় তুলে ধরলো ফাহিম।।

এসব কি ফাহিম??তুই ওকে এভাবে নাও বলতে পারতি।।বুঝাতে পারতি।।তুই তো ওর মতো বাচ্চা নস।একজন সাইকোলজি টিচার হয়েও এমন ভুল কি করে করলি তুই??তোর বাবা শুনলে রাগ করবে অনেক।তুই ওভাবে না বললে হয়তো আজ ওর এমন অবস্থা হতো না।।

আমি বুঝতে পারি নি মা।।সবটা ওর বাচ্চামো আর আবেগ ভেবে..

বাবু তুমি বাচ্চা নও।।এতো কিছুর পরও তুমি এসব আবেগ ধরে নিলে??রিয়া ক্লাস টেনের কোনো বাচ্চা নয় অনার্স পড়ছে।।ওর আবেগের বয়স পাড় করে এসেছে সে।।আচ্ছা তুই রিয়া কে ভালোবাসিস??

জানি না মা।।।কিন্তু ওকে এই অবস্থায় আর দেখতে পারছি না।।খুব কষ্ট হচ্চে মা,,খুবব।।ওকে আমার চাই মা,,যেকোনো মূল্যে আমার চাই(কান্না করতে করতে)

শান্ত হো বাবু।।রিয়া ঠিক হয়ে গেলেই ওকে আমাদের বাড়ির প্রিন্সেস বানিয়ে আনবো।।এখন কান্না বন্ধ কর বাবা!!আমার ছেলেটাও যে কাঁদতে পারে জানা ছিলো না তো।।(মুচকি হেসে)

মা?ওর কিছু হবে না তো??ওর কিছু হলে আমি কি করে থাকবো মা??এই অপরাধবোধ যে আমাকে শেষ করে ফেলবে।।মরে যাবো মা আমি মরে যাবো।।(কান্নামাখা কন্ঠে)ওকে বাঁচতে হবে মা,,বাঁচতেই হবে।।

এই কান্নাটা এখানে নয়,, আল্লাহর দরজায় কান্না কর।।একমাত্র আল্লাহই চোখের পানির সর্বোচ্চ মূল্য দেন।।তার কাছে রিয়া কে চা।।আল্লাহ যে নিষ্ঠুর নন।।তোর চোখের পানির মূল্য তিনি দিবেন।।বিশ্বাস রাখ আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস।।

কিভাবে হবে মা??ডক্টর যে বলেছে রিয়ার বাঁচার সম্ভবনা খুব কম।

আরে বোকা। যেখানে সম্ভাবনাও না থাকে সেখানেও আল্লাহ থাকেন।।।নিজের উপর বিশ্বাস রেখে আল্লাহর দুয়ারে ভিক্ষা চা।।উনি না দিয়ে পারবেনই না।।উনি যে দয়াময়।।যা বাবা যা।

ফোনটা রেখে পিছনে ফিরে তাকাতেই আয়ান সামনে এসে দাঁড়ালো।।

কি??চোখে জল??এই জলটা রিয়াও ফেলেছিলো।।কতো বুঝিয়েছি তোকে।।ওকে বুঝার চেষ্টা কর।কাছে টেনে নে নয়তো পস্তাতে হবে কিন্তু নাহ শুনলি না।।এবার হলো তো??পারবি তো থাকতে ওকে ছাড়া??

আয়ান আমি…

ফাহিমের কথা শেষ না হতেই অদিতি বলে গেলো ডক্টর অটি থেকে বেরিয়েছে।।দুজনেই দৌড়ে গিয়ে দাঁড়ালো ওটির সামনে।।রিয়াদ ডক্টরের সাথে কথা বলছে…

ডক্টর?রিয়া?

সরি মিষ্টার রিয়াদ।আসলে পেশেন্ট নিজেকে বাচাঁনোর কোনো স্কোপ রাখেন নি।।প্রচুর পরিমান স্লিপিং পিল নিয়েছেন,,তাও আবার পেট খালি থাকা অবস্থায় যার জন্য ওয়াশ করাটা মুশকিল হচ্ছে,,আর হাতের অবস্থাও ভয়াবহ।। এতো বেশি ব্লাড গিয়েছে যে ব্লাড লাগবে প্রচুর।কিন্তু O নগেটিভ ব্লাড ওই পরিমান ব্লাড ব্যাংকে নেই।।চারদিক থেকে ডিফিকাল্টিস্।।এই অবস্থায় পেশেন্টের বাঁচার চান্স থাকে ওনলি ফাইভ পার্সেন্ট।এখন সবই উপরওয়ালার উপর নির্ভর করছে।।রিয়ার ভাগ্যের উপর নির্ভর করছে ওর বেঁচে থাকা।।তাছাড়া পেশেন্টের মধ্যে বাঁচার স্পৃহাও খুব অল্প।।সত্যি বলতে আমাদের হাত গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া কিছু করার নেই।।এখন একমাত্র মিরাকেলই পারে উনাকে বাঁচিয়ে তুলতে।।এমন টাইপ হানড্রেড পেশেন্টের মধ্যে অনলি ফাইভ পার্সেন্ট পেশেন্ট বেঁচে যান।।সো নাও এব্রিথিং ডিপেন্ডস অন লাক…আল্লাহকে ডাকুন।।তিনিই একমাত্র সম্বল।।

ডক্টরের কথায় স্তব্ধ হয়ে গেছে রিয়াদ সাথে ফাহিম সহ সবাই।।খুশির দিনগুলো ঘুরতে যে এক সেকেন্ডও লাগে না।।এটাই তার বড় প্রমান।এখানে অবস্থিত প্রতিটি মানুষ নিশ্বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে আল্লাহকে ডাকছে।কখনো নামায না পড়া আয়ানও আজ দাঁড়িয়ে গেছে জায়নামাজে। পিচ্চিটাকে ফিরে পেতে চায় সে ও।।ছোট্ট ফারিন কিছু না বুঝেও বাবার সাথে হাত তুলেছে আল্লাহর দরবারে।।শেষ রক্ষাটা যেনো হয়।।বাড়ির কাজের লোকগুলোও বাদ যায়নি।।রিয়া নামক বাচ্চামো ভরা মেয়েটাকে সবাই যে আবারো হাসতে দেখতে চাই।।কিন্তু তাদের ইচ্ছে পূরন হয়নি।।রিয়া বেঁচে গেছে ঠিক।।আল্লাহ সবার কথা রেখেছে কিন্তু হাসিটা ছিনিয়ে নিয়েছে তার বিনিময়ে।।রিয়া এখন আর কারো সাথে কথা বলে না।।তিনমাস হয়ে গেছে এখনো রিয়ার মুখে এক চিলতে হাসি দেখে নি কেউ।হ্যা, হাসে মাঝে মাঝে সেও হাসে,,যখন রিয়াদের সাথে থাকে সে।।ছাদে রিয়াদের কোলে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দুই-ভাই বোনের কতো গল্প।।কিন্তু সেগুলো শুধু তাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে,,বাইরে বেরুই না কখনো।।সবাই মিলেও রিয়াকে স্বাভাবিক করতে পারে নি এখনো।।ফাহিমের দিকে ফিরেও তাকাইনি রিয়া শুধু আয়ানকে দেখে দায়সারা হাসি দিয়েছিলো সে।।তিন তিনটা মাস হয়ে গেছে, যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।। এই শত ব্যস্ততার মাঝেও ফাহিম রিয়ার জন্য হাসফাঁস করে প্রতিটি মুহূর্তে ,,,ওর মুখের সেই মায়াবি হাসিটা দেখতে চায় সে,,,দুষ্টামী মাখা কথাগুলো আবারো শুনতে চায় সে।।রিয়া এখনো ঢাকা ফিরে নি,,ভার্সিটি তেও আসে না।।ফাহিম যে তাকে একটাবার দেখবে তারও সুযোগ নেই তার কাছে।।অদিতি আয়ানও যার যার কাজে ব্যস্ত।।এই তিনমাসে ওদের দেখা হয় নি আর।।তবে আয়ান মাঝে মাঝে অদিতিকে প্রচন্ড রকম মিস করে।।চার চারটা জীবন বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।।কে জানে কার জীবনটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।।কে কার হাত আকড়ে ধরবে।নিয়তির খেলায় সবাই ভেসে যাওয়া পাতা আজ…..

#চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here