অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part: 14

অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part: 14
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤

,
🍁
,
ওই মিস ঝগড়ুটে? পালাচ্ছো কেন?
.
ক..কই পালাচ্ছি?আমি ত..তো রিকশা খুঁজচ্ছিলাম।।
.
ওহ হো রিয়েলি জান?(দুষ্টু হাসি দিয়ে)চলো আমি পৌঁছে দিচ্ছি।
.
নো থেংক্স।আই উইল ম্যানেজ।
.
আরে চলোই না।ট্রিট দিবো আজ তোমায়।
.
হঠাৎ ট্রিট কেন?(ভ্রু কুচকে)
.
ট্রিট কেনো মানে??আরে মিস ঝগড়ুটে আমার আন্ডারে কাজ করবে ব্যাপারটা খুশির না??আমার তো রীতিমতো পার্টি দিতে ইচ্ছে করছে।(বাঁকা হাসি দিয়ে)
.
ওহ হ্যালো?আমি মোটেও আপনার আন্ডারে কাজ করছি না।।
.
তাই নাকি??
.
অবিয়েসলি..
.
মিস.ঝগড়ুটে ভুলে যেও না বেবি,,আমি যদি এখন আমার ডিসিশনটা চেঞ্জ করি তো এক চুটকিতে তোমাদের পুরো প্রজেক্টের ইন্না-নিল্লাহ হয়ে যাবে।।আর যদি আমি এটা বলি যে আমি তোমার জন্য কাজটা করতে ইন্টারেস্টেট নই বা তুমি আমার সাথে মিসবিহেভ করেছো তো তোমার চাকরিরও ইন্না-নিল্লাহ হতে বেশি দেড়ি হবে বলে আমার মনে হয়ে না।ঠিক বললাম তো??(চোখ টিপে)
.
অদিতির এই মুহূর্তে আয়ানকে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।অবিয়েসলি উইথআউট লবন মরিচ।ফাজিল ছেলে। অদিতির এই অতিরিক্ত রাগের সাথে একটা বিষয় তাকে খুব ভাবাচ্ছে,,আর বিষয়টা হলো সে এক্চুয়েলি আয়ানের সাথে এমন বিহেভ কেনো করছে?
.
ওই মিস?এখন কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে আসো।তোমার সাথে প্রেমলিলায় মত্ত হওয়ার শখ আমার নেই।।।কালকে একসাথে যেতে হবে সো অনেক প্ল্যানিং বাকি।
.
অদিতিও আর কথা বাড়ালো না।চুপচাপ উঠে বসলো।
.
🍁
.
ডায়নিং রুমে চরম নীরবতা।এই নীরবতাময় পরিবেশে শুধু চামিচের টুনটান শব্দটাই ছন্দ তুলে যাচ্ছে অনবরত।।ফাহিমের বাবা এনামুল আহমেদ হার্ট স্পেশালিষ্ট,, খুব চুপচাপ এবং গম্ভীর একজন মানুষ।এতোটাই গম্ভীর যে ফাহিমের মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় উনি মাকে বিয়ের জন্য রাজী কিভাবে করিয়েছেন যেহেতু উনাদের লাভ ম্যারেজ।।এটলিস্ট প্রোপোজ তো করতে হয়েছে।। ব্যাপারটা খুবই ভাবনার একটা বিষয় বলেই ফাহিম ছোট থেকে জেনে আসছে যার উত্তর আজও মেলেনি তার।এই গম্ভীর পরিবেশটার পর্দা ছিঁড়ে ফাহিম হুট করেই বলে উঠলো…
.
বাবা?আমার রিয়াকে চাই।আই ওয়ান্ট হার এট এনি কষ্ট।(প্লেটের দিকে তাকিয়ে)
.
এনামুল সাহেব কথাটা শুনে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন।ছেলের কোনো ভাবান্তর না দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন…
.
ফাহিম?তোমার কি মনে হচ্ছে না তুমি বাচ্চাদের মতো বায়না করছো?একটা বাচ্চা যেমন তার বাবার কাছে চকলেট কিনে দেওয়ার বায়না করে, তুমিও এই মুহূর্তে ঠিক তাই করছো।তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে রিয়া একটা চকলেট টাইপ কিছু যাকে আমি দোকান থেকে কিনে তোমার হাতে ধরিয়ে দিবো।।এমন বাচ্চামো কি একজন ভার্সিটি টিচারের সাথে মানায়??
.
না মানায় না।
.
তাহলে এমন অযৌক্তিক বায়না কেনো করছো ফাহিম?(শান্ত গলায়)
.
বাবা…আমি এই মুহূর্তে কোনো ভার্সিটি টিচার হিসেবে তোমার সাথে কথা বলছি না বরং আমি তোমার ছেলে হিসেবে কথা বলছি।।আর আমার কথাটা হলো আমার রিয়াকে চাই,ব্যস।
.
ফাহিম?আমি তোমার সব বায়না পূরন করি তারমানে এই নয় যে একটা জলজ্যান্ত মানুষকে এনে দেওয়ার মতো অদ্ভুত একটা বায়না পূরন করতে পারবো।।রিয়ার নিজস্ব মতামত,,নিজস্ব ইচ্ছা- অনিচ্ছা আছে।আমি তাকে জোড়পূর্বক তোমায় এনে দিতে পারি না।এটুকু বোঝার বুদ্ধি তোমার হয়েছে বলেই আমি মনে করি।
.
বাবা আমি কোনো যুক্তি তর্কে যেতে চাচ্ছি না।আমার রিয়াকে চাই মানে রিয়াকে চাই।।কিভাবে এনে দিবে,,এটা সম্ভব কি সম্ভব নয় তা আমি জানতে চাচ্ছি না।।আমি তোমাকে জানাচ্ছি যে আমার রিয়াকে লাগবে।।যেকোনো কিছুর পরিবর্তে ওকে আমার চাই-ই চাই…
.
কথাটা বলেই খাবার ছেড়ে ওঠে গেলো ফাহিম। পেছন থেকে কয়েকবার ডেকেও তাকে ফেরাতে পারে নি তার মা।
.
ফাতেমা?তোমার ছেলেটাকে বোঝাও কাউকে এভাবে আবদার করে বা জোড় করে পাওয়া যায় না।সবারই একটা নিজস্বতা থাকে।সেটা ওর থেকে ভালো কেউ জানে বলে আমার মনে হয় না।তবু এমন বাচ্চামো কেন?(গম্ভীর গলায়)
.
এনামুল আমি জানি ওর আবদারটা ভিত্তিহীন,, কিন্তু তোমাকে রিয়া এনে দিতেই হবে ওকে।তুমি তো জানো ওর সামান্য বায়নাগুলোর জন্যও ও কেমন তান্ডব শুরু করে দিতো আর এটা তো স্বয়ং ওর ভালোবাসা।(দীর্ঘশ্বাস
ফেলে)
.
ছেলের সাথে তুমিও পাগলামো শুরু করো না ফাতেমা।
.
🍁
.
চাইল্ড হোমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অদিতি-আয়ান।বেশ বড় এরিয়া নিয়েই চাইল্ড হোম টা তৈরি করা হয়েছে।।অদিতির কাছে মনে হচ্ছে বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য এর থেকে মনোরম পরিবেশ আর হতেই পারে না।যদিও বেশিরভাগ জিনিসগুলোই কৃত্রিম তবুও একটা স্নিগ্ধতা বিরাজ করছে চারদিকে।।আয়ানও চোখ ঘুরিয়ে চারপাশটা দেখে যাচ্ছে।।যেন প্রতিটি জিনিসকে স্ক্যান করে চলেছে সে।বেশ কিছুক্ষণ পর একজন বৃদ্ধলোক বেরিয়ে এলো।ওদের দেখে অবাক চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলেন…
.
আপনারা?
.
আমরা ঢাকা থেকে এসেছি একটা জরিপের জন্য।কোম্পানি থেকে জানানো হয়েছিলো আপনাদের।
.
ও ওও,,,আপনারাই তারা?
.
জি আমরাই তারা।তো আমরা কি এখন ভেতরে যেতে পারি?(অদিতি)
.
অবশ্যই পারেন।স্যার আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।আপনাদের থাকা- খাওয়ার ব্যবস্থা এখানেই করা হয়েছে।।মাফ করবেন আমি আপনাদের প্রথমে চিনতে পারি নি।(হাঁটতে হাঁটতে)
.
না না ঠিক আছে।আচ্ছা আপনি এখানে কতো বছর কাজ করছেন?(আয়ান)
.
সে তো হবেই ২০ /২৫ বছর।এই চাইল্ড হোম তৈরি করা হয় ১৯৮০ সালে। স্যারের দাদা চাইল্ড হোম টা তৈরি করেন।আমি ১৯৯৫ থেকে কাজ করছি।।নিজের কেউ নেই তো তাই বাচ্চাদের সাথে থেকেই বয়স পার করছি।।ওরাই এখন সব।(লোকটি)
.

তাহলে তো বেশ পুরোনো এই চাইল্ড হোম।কিন্তু দেখে বোঝার উপায় নেই।বেশ নতুনত্ব আছে।(অদিতি)
.
আসলে স্যারের দাদা এই চাইল্ড হোম নিয়ে খুবই possessive ছিলো।তাই স্যারও খুব যত্নে আগলে রাখে।(লোকটি)
.
ওহ আচ্ছা।তবে চারপাশটা বেশ সুন্দর।(মুচকি হেসে)
.
লোকটিও হেসে মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো। এতোক্ষণে ভেতরে চলে এসেছে তারা।ভেতরটাও বেশ ছিমছাম।প্রতিষ্ঠাতার রুচি ছিলো বলতেই হয়।হঠাৎই একটা গাট্টাগোট্টা বৃদ্ধ লোককে দেখতে পেলো অদিতি।মাথায় টুপি,লম্বা সাদা পাঞ্জাবি,হাতে লাঠি।কেয়ারটেকার লোকটি বৃদ্ধ লোকটিকে স্যার স্যার বলে কথা বলছিলো।তারমানে লোকটিই পরিচালক।কিন্তু অদিতির কেনো যেনো মনে হচ্ছে লোকটিকে সে কোথাও দেখেছে।লোকটিও তাদের দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হয়েছে বলে মনে হলো।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই মুচকি হেসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন….
.
হ্যালো ইয়াংম্যান।হোয়াটস আপ??
.
ফাইন।আপনি কেমন আছেন?অনেকদিন পর দেখা।(মুচকি হেসে)
.
আমিও বেশ আছি।আমার নাতনি এখন নানা ডাকতে পারে।।যদিও ভেঙে ভেঙে বলে আর আমার যথেষ্টই সন্দেহ আছে যে সে “নানা” শব্দের অর্থ বুঝে ডাকে।তবুও আমি মেনে নিয়েছি।।ডাকলেই হলো কি বলো?(হাসি দিয়ে)
.
জি অবশ্যই।
.
তো..তোমার বাচ্চার খবর কি?এই যে মামনি?বেবি ঠিক আছে??ডেলিভারি কবে?(অদিতির দিকে তাকিয়ে)
.
লোকটির কথাটা শুনেই অদিতির মনে পড়ে গেলো লোকটিকে কোথায় দেখেছে।হ্যা,এটাই মিষ্টার খান যেখানে অদিতি- আয়ান ফেইক বর বউ সেজেছিলো।মাই গড্,কথায় আছে না?অভাগা যেদিকে তাকায় সাগর শুকিয়ে যায়।অদিতি বুকের উপর দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে ছিলো তাছাড়া শাড়ির আচল আর গায়ের চাদরের জন্য লোকটি বুঝতে পারে নি যে অদিতি প্রেগন্যান্ট নয়।তাছাড়া চারমাসে পেট আর কতোটাই বড় হয়??অদিতি শাড়ি দিয়ে নিজেকে ভালো করে ঢেকে পেটের উপর হাতটা একটু উঁচু করে রাখলো যেনো পেটটা খানিকটা ফুলা ফুলা লাগে।। আয়ান অদিতির অবস্থা দেখে মুখ চেপে হাসছে।নিজের হাসিকে কন্ট্রোল করে লোকটির উদ্দেশ্যে বলে উঠলো….
.
মিষ্টার খান,,বেবি আল্লাহর রহমতে ভালো আছে।আর মাত্র তো চারমাস চলে এখনো ডেলিভারির ডেড দেওয়া হয় নি।
.
ও আচ্ছা।।তোমরা দুজন একসাথে কাজ করো নাকি?
.
না না।ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করে আর আমি সাইক্রিয়াট্রিস্ট।এই প্রোজেক্টে আমাকে ওদের কোম্পানি হায়ার করেছে।
.
ওহ…তবে ব্যাপারটা ভালো হয়েছে।বউয়ের সেবা আর কাজ দুটোই একসাথে হবে।সাথে হানিমুনটাও হয়ে যাবে।।কি বলো?হা হা হা হা হা।
.
জি…আমিও তাই ভেবে এক্কেবারে গাট্টাগোট্টা বেঁধে রাজি হয়ে গেছি।(দাঁত কেলিয়ে)
.
অদিতির এই মুহূর্তে আয়ানকে ভয়ঙ্কর কিছু গালি দিতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু সমস্যা হলো তার এমন কোনো গালি জানা নেই,,যা বললে আয়ানের অবস্থা,”ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি” টাইপ হবে। নাহ, এবার ঢাকায় গিয়ে গালির জন্য টিউশনি নিতে হবেই তাকে।।এটলিস্ট এই ইংরেজের বাচ্চার জন্য তো গালি শিখতেই হবে।হুহ
.
তো বাবা…তোমরা রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।মামনির তো রেস্ট দরকার।শামছুল তোমাদের রুমটা দেখিয়ে দিবে।গো এন্ড রেস্ট।কাল কথা হচ্ছে,,আমি তোমাদের পাশের রুমেই আছি। ভাবলাম তোমাদের সাথে আমিও একটা সপ্তাহ এখানে থেকে যাই,,,(মুচকি হেসে)গো গো…
.
ইয়াহ…চলো অদিতি।।
.
হ্যা যাও…শামছুল ওদের রুমটা দেখিয়ে দাও।।ডানের রুমটা ওদের দাও।।পাশের রুমটা আর খোলার দরকার নেই ওরা তো স্বামী স্ত্রী এক রুমেই থাকবে।
.
জি আচ্ছা স্যার…..
.
মিষ্টার খানের কথায় আয়ান ব্যাপক খুশি।অদিতির সাথে একরুমে থেকে ওকে বেশ জ্বালানো যাবে।আর এইদিকে অদিতির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।আরে বলে কি?তাকে এই আবাল টার সাথে একরুমে থাকতে হবে??নো,, এটা হতে পারে না।এই ছেলে যে লুচু,,কে জানে তাকে একা পেয়ে কি না কি করে ফেলে….এই জবটা যে তার মানহানির কারন হবে তা জানলে সে কখনোই এই জবের জন্য এপ্লাই করতো না।ধেৎ ভালো লাগে না।এখন সে এমন একটা পজিশনে আছে যে হ্যা বললেও ফাসঁবে না বললেও ফাঁসবে।।এই মুহূর্তে সে আল্টিমেটলি ফাঁসাফাঁসির মধ্যে আছে।।
.
.
.
জানলার পাশে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছে ফাহিম।সে নিজেও বুঝতে পারছে না তার দৃষ্টি ঠিক কোথায়।এই দৃষ্টিকেই সম্ভবত ফাঁকা দৃষ্টি বলে যখন চোখে কোনো কিছুই বিশেষভাবে ধরা পড়ে না।মনেও কোনো বিশেষ চিন্তা ঘুরে বেড়ায় না,, কিন্তু মন আর চোখ দুটোই ব্যস্ত থাকে।।ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত পাশাপাশি ইন্টারেস্টিং ও বটে।তবে এই সময়ে ফাহিমের কাছে তা মোটেও ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে না।।তার কাছে এখন সবকিছুই রিয়াময়।রিয়ার সাথে যুক্ত সবই ইন্টারেস্টিং বাকিসব করলার জুস।ফাহিম যে রিয়ার ভয়ানক প্রেমে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে তা তার কাছে স্পষ্ট।এই একটা কারনে প্রেম নাম জিনিসটা থেকে দূরে পালাতো সে।।কিন্তু রিয়ার মায়ার জালে ফাঁসতেই হলো তাকে।।রিয়ার সহজ সরল প্রেমময় হাসিতে ফেঁসেছে ফাহিম।এই মুহূর্তে একটা গানই তার মাথায় আসছে বারবার,, ” বেঁদের মেয়ে জ্যোস্না আমায় কথা দিয়েছে,, আসি আসি বলে জ্যোস্না ফাঁকি দিয়েছে”।।রিয়া তাকে ভালোবাসি বলে ছিলো,,,এখন কথা না রেখে তার জীবনে আসি আসি করেও আসছে না।।ফাহিমের মনে হচ্ছে রিয়াকে এই মুহূর্তে সামনে পেলে ব্যাপারটা মন্দ হতো না।।গাল ধরে খানিকক্ষণ টানাটানি করা যেতো। আচ্ছা?গাল ধরে টানাটানি করলে সেটা কি দোষের কিছু হতো??ফাহিমের কাছে সেটা দোষের কিছু হতো বলে মনে হচ্ছে না ।দোষের কেনো হতে যাবে….দিন শেষে রিয়া তো তারই,,শুধু এবং শুধুই তার।
.
বাবু?এখনো জেগে আছিস? (বিছানায় বসতে বসতে)
.
হুম।ঘুম আসছিলো না।তুৃমি এখনো ঘুমোও নি কেন মা?
.
হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেলো।পানি খেতে এসে দেখি তোর ঘরে আলো জ্বলছে তাই চলে এলাম তোর সাথে গল্প করতে…
.
খুব ভালো করেছো মা।(কোলে মাথা রাখতে রাখতে)
.
কি রে রিয়াকে মিস করছিলি বুঝি??(মুচকি হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে)
.
হুম…তুমি কি করে বুঝলে মা?
.
তোকে আমি বুঝবো না?তাছাড়া প্রেম একসময় আমিও করেছি বোকা।ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যা পাথরেও ফুল ফুটাতে পারে।।ভালোবাসার জালে জড়িয়ে তোর বাবার মতো ছেলে যে কি না বই থেকে মুখ তুলে তাকাতো না।।সেও মাঝরাতে আমার হোস্টেলের সামনে এসে দাঁড়াতো।।সেগুলো এখন শুধুই স্মৃতি।
.
কি বলছো মা?বাবার দ্বারাও এসব সম্ভব ছিলো??তারপর কি হতো?ঘুরতে যেতে হিমু রূপার মতো??(এক্সাইটেড হয়ে)
.
আরে নাহ।তখন ওসব ছিলো নাকি?তখন চোখে চোখ রাখায় ছিলো প্রেম।।এক ব্রেঞ্চের দুই কোনায় দুজন বসে লাজুক হাসিই ছিলো হাজারো অনুভূতি,, তখন তোদের মতো ডেট টেট ছিলো না,,তবে একরাশ লাজুক ভালোবাসা ছিলো আর ছিলো প্রতীক্ষা।
.
তাহলে বাবা মাঝ রাতে ওখানে দাঁড়িয়ে কি করতো?(অবাক হয়ে)
.
সে যেতো আমাকে দেখতে।মাঝরাতে আমাকে কোথায় পাবে বল?তবু সে রাস্তা থেকে আমার জানালায় পর পর তিন তিনটা ডিল ছুড়ঁতো আর আমি বুঝে যেতাম এনামুল এসেছে,,,তখন আমি জানালা খুলে দাঁড়াতাম।।আবার দেখা যেতে হোস্টেলের দেয়ালের সাথে লেগে থাকা কদম গাছ বেয়ে দেয়াল টপকাতো।।একবার তো ডাল ভেঙে পড়ে গিয়ে কি বিশ্রী অবস্থা।
.
হা হা হা হা কিহহ বাবা ডাল ভেঙে পড়েছিলো।।তারপর কি হয়েছিলো মা?
.
কি হয় নি তাই বল?ওদিকে দারোয়ান চাচা চোর ভেবে চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিয়েছে এদিকে জনাব পা মচকে বসে আছে।হিহিহিহি…তোর বাবা নামক গম্ভীর লোকটাও অনেক পাগলামো করেছে শুধু আমি যেনো জানলায় এসে দাঁড়াই আর সে একনজর আমাকে দেখতে পাক এই আশায়।।আর তুই তো তারই ছেলে….
.
মা?
.
হুম বল।
.
আমি এখন রিয়ার হোস্টেলের বাইরে গিয়ে দাঁড়ালে কেমন হয়??ওকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।।ওরে গালে হাত রাখতে ইচ্ছে করছে…
.
খুবই বাজে হয়।।তবে প্রেমিকের দিক থেকে চিন্তা করলে এর চেয়ে ভালো কিছু হতেই পারে না,, ইয়াং ম্যান।
.
কথাটা শুনেই মা – ছেলে দরজার দিকে ফিরে তাকালো।এনামুল সাহেব হাসি হাসি মুখে দরজায় দাড়িয়ে আছেন।ফাহিম ব্যাপারটাই বেশ অবাক হলো,,বাবা কখনো এভাবে হুট করে তার রুমে ঢুকে না।।আর এতো রাতে তো কখনোই না।
.
বাবা?
.
হুম…তবে দারোয়ানের মার বা দৌড়ানো খাওয়ার জন্য মেন্টালি প্রিপেয়ার হতে হবে।আর এখন তো এক্সট্রা ঝামেলা হিসেবে টহলরত পুলিশ আছেই।।জেলে যাওয়ার সুযোগ টাও পেয়ে যেতে পারো।(বিছানায় বসতে বসতে)
.
বাবা..তুমি কি আমাকে ইনডায়রেক্টলি যেতে মানা করছো??
.
একদম না মাই সান।আমি তোমাকে ডিরেক্টলি যেতে বলছি বাট এসব বিষয়গুলো সম্পর্কে সাবধান করে দিচ্ছি।তুমি যে প্রেমে পড়েছো তাতে কিন্তু আমি খুবই গর্বিত।তোমাকে এরেঞ্জ ম্যারেজ করাতে হলে ব্যাপারটা আমার জন্য বেশ অপমানজনক হতো।
.
এনামুল সাহেবের কথায় তিনজনেই সমান তালে হেসে উঠলো।।মাঝরাতে ফাহিম আর তার মা প্রায়ই এভাবে হেসে ওঠে আজ যুক্ত হয়েছে নতুন এক অতিথি তাতে আড্ডায় বিন্দুনাত্র ভাটা আসে নি বরং হাসির জোয়ার এসেছে বলতে হয়।
.
.
🍁
.
.
ওয়াশরুম নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ করে।বিছানা নিয়ে চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করছে আয়ান – অদিতি।তাদের দুজনেরই বিছানা চায়। কিন্তু কেউ কারো সাথে বিছানায় থাকতে নারাজ….
.
এইযে মিষ্টার পাগলের ডাক্তার?আমি যখন বলেছি আমি বিছানায় ঘুমাবো।।তারমানে বিছানায় ঘুমাবো।আপনি মুলা ক্ষেতে যান।
.
এহহহ…..মামার বাড়ির আবদার।।বিছানায় আমি ঘুমাবো এন্ড দেটস ফাইনাল।
.
জি নট।এসব ব্লান্ডার শুধু আপনার জন্য হয়েছে সো দোস আপনার তাই বিছানা আমার।।গট ইট??
.
নো
.
ইয়েস
.
আই সেইড নো….
.
আই সেইড ইয়েস….
.
ওকে ফাইন চলো একসাথে ঘুমাই।।তুমি তো এমনিও আমার বউই।।তাছাড়া আমার বাচ্চার মা ও হয়ে যাবে কিছুদিন পর।।তো ঢেকে রাখার তো কিছু নেই আমার সামনে তাই না বেবি??(চোখ টিপে)
.
ছিহ…ইউ চিপপপপপ।।কথা বলবেন না আমার সাথে।।আমি বিছানায় ঘুমাবো না।।ঘুমান আপনি।। অসভ্য, বান্দর, বেহায়া।
.
হঠাৎ করেই দুজনের নজর গেলো কম্বলের দিকে।ঠান্ডা অনেক আর ঘরে কম্বল একটা মানুষ দুজন।।দুজন বিছানার দুপাশে দাঁড়িয়ে ছিলো।দুজনেই দৌড়ে এসে কম্বলের দুপ্রান্ত ধরলো।।তারপর শুরু হলো টানাটনি।।ওদের ভাবসাবে মনে হচ্ছে কম্বলের সাথে ওদের বাঁচা মরা সম্পর্ক বিদ্যমান।টানাটানির এক পর্যায়ে অদিতি টায়ার্ড হয়ে খানিকটা ডিল দিতেই আয়ান দিলো এক টান।।তারপর যা হওয়ার তাই হলো।কম্বলের সাথে তাল সামলাতে না পেরে অদিতিও পড়লো আয়ানের উপর,, আর আয়ান তাল সামলাতে না পেরে একদম ফ্লোরে।।এটা ওদের সেকেন্ড টাইম ইন্সিডেন্ট এর আগে রিয়াদদের বাসায়ও সেইম কাহিনী হয়েছিলো তাদের সাথে কিন্তু সেদিন কম্বলের জায়গায় ছিলো রিমোট।আয়ানের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি অদিতির চোখে মুখে।।অদিতি বেশ অস্বস্তি ফিল করছে কিন্তু তার এই অস্বস্তিটাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে আয়ানের ঠোট।।ছেলেদের ঠোঁটও এতো সুন্দর হয় নাকি??
.
.
.
#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here