অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part:33

অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part:33
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤

.
.
🍁
.
টানা এক সপ্তাহ প্যাশেন্টদের নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে আয়ান।বাবার কথাগুলো ওর মনে ধরেছে। আর এতোদিনে এটাও বুঝে গেছে অদিতির সাথে থেকে যতটা ভালো থাকে সে অন্যকারো সাথে ততটা প্রশান্তি আসে না।।এবার তো অদিতির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বুক ফুলিয়ে বলেই উঠবে “ভালোবাসি” উফফ.. কি রিলিফ!!কতোদিন ধরে বুকে চেপে রেখেছে সে।।ইচ্ছে তো করছে এখনই ছুট লাগাতে…কিন্তু ইচ্ছে করলে কি আর উপায় হয়??আগামী মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত প্যাশেন্টদের এপ্যান্টমেন্ট আছে…এগুলো শেষ করে তবেই না পাড়ি জমাবে দেশে….তার অদিতির কাছে…ইশশ ভাবতেই কি শান্তি লাগছে তার।।কাজ গুলোকে খুব তাড়াতাড়িই শেষ করবে সে…মন যে আর চলে না।।ফাহিম আর রিয়ার সাথেও কথা বলতে হবে।ওরা নিশ্চয় খুব খুশি হবে?আচ্ছা?অদিতি ওকে কাছে টানবে তো?নিশ্চয় টানবে….নয়তো জোড় করে তুলে আনবে।।
.
🍁
.
অদি?এখনও রেডি হোস নি?শপিং এ যাবি না?কতো কাজ পড়ে আছে আর তুই রোবটের মতো শুয়ে আছিস?
.
মার কথায় টিভিটা বন্ধ করে উঠে বসলো সে….বিরক্তি নিয়েই বলে উঠলো-
.
মা?বিয়ের তো আরো ৩ মাস বাকি।এখনো এতো শপিং কেনো?
.
আরে তিনমাস বাকি হলেই কি?সামনের মাসেই তো এনগেজমেন্ট…. এনগেইজমেন্টের শপিং করতে হবে না??আমার ছোট মেয়ের বিয়ে বলে কথা।।কোনো কমতি থাকা চলবে না বুঝলি??ঝটপট রেডি হয়ে নে তো।
.
অদিতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো সে।।শাওয়ারটা ছেড়ে দিয়েই নিচে বসে পড়লো সে।কে জানে জীবন তাকে ঠিক কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে?এই ২৫ বছরের জীবনে কতো কিছুই না সইতে হলো তাকে।প্রথম যৌবনের প্রথম ভালোবাসা,,ভালোবাসা হারানোর প্রথম কষ্ট….আর আয়ান!! আয়ান নামটা ওর জীবনে বিনা কারনেই আটকে আছে….না ছিলো ওর সাথে কোনো সম্পর্ক,, না ছিলো কোনো কমিটমেন্ট তবুও দিন শেষে ওর কথাটায় কেন যেনো মনে পড়ে যায় তার।। শাওয়ার শেষ করে বাইরে বের হতেই মা বলে গেলো আদনান এসেছে।কথাটা শুনেই বিরক্তি ভর করলো অদিতির শরীরে।বিয়ের আগেই এতো ঘন ঘন শশুড়বাড়ি আসার মানে কি অদিতি বুঝে না।। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তৈরি হয়ে নিলো অদিতি।আজকের দিনটাতে আয়ানকে খুব মনে পড়ছে তার….কেনো মনে পড়ছে কে জানে??আয়নার ভেতর দিয়ে জানালার উপর বসা দুটো চড়ই পাখির উপর চোখ পড়তেই পুরাতন স্মৃতি চাড়া দিলো মনে।।ওই চাইল্ড হোমে দুটো চড়ই পাখি নিয়ে আয়ানের আজগুবি কত কথা!!
.

মিস ঝগড়ুটে? জানো ওই পাখিদুটো কি বলছে?(আঙ্গুলে ইশারা করে)
.
কি বলছে?(ভ্রু কুঁচকে)
.
ওই যে ডানপাশের পাখিটা ওটা হলো গৃহকর্তী আর ওই পাশের টা হলো গৃহকর্তা।মেয়েটা ছেলেটাকে অভিযোগের স্বরে বলছে…তুমি আমাকে আগের মতো ভালোই বাসো না।।দেখো দখো কিভাবে মুখ ফুলিয়েছে….(অবাক হয়ে)
.
আজব পাখিরাও আবার মুখ ফুলায় নাকি??(অবাক হয়ে)
.
ফুলায় তো…দেখছো মেয়েটা কি লুচু…ছেলে পাখিটার কাছে কিসি পাচ্ছে??হায় আল্লাহ!!পাখি জাতির মেয়েরাও তোমার মতো লুচু….
.
আমার মতো লুচু মানে কি??(রাগী গলায়)
.
অদিতি কথাটা বলতেই ডানপাশের পাখিটা অপর পাখিটার গায়ে ঠুকুর দিলো…অন্যপাখিটা উড়ে গিয়ে বসলো অন্য এক গ্রীলে।।এটা দেখেই আয়ান তুমুল উৎসাহ আর বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলো-
.
মাই গড”! মিস ঝগড়ুটে? দেখো দেখো মেয়েটা কি ডিস্পারেট….এতোটা এগ্রিসিভ…কিস না পেয়ে স্ট্রেট কামড়া কামড়ি তে নেমে গেছে।।(একটু দূরে সরে বসে)আমার কিন্তু এখন ভয় করছে।আমাকে একা পেয়ে তুমিও আবার কামড়া কামড়ি শুরু করবে না তো??আমি অতি নিরীহ ছেলে…. এমন করো না পাপ হবে(বাচ্চাদের মতো মুখ করে)

.
সেদিন কথাটা শুনে রেগে গেলেও আজ ঘটনাটা মনে পড়তেই হুহা করে হেসে উঠলো অদিতি।হাসি যেনো থামছেই না তার…কিছুতেই না!! তখনই পেছন থেকে ঐশি বলে উঠলো –
.
কি রে?পাগলের মতো একা একা হাসছিস কেন??কাহিনী কি?(ভ্রু নাচিয়ে)
.
আর বলিস না আপু ওই পাগলের ডাক্তার..
.
পাগলের ডাক্তারটা আবার কে??(ভ্রু কুচঁকে)
.
আব..না মানে…জোকস্.. একটা জোকস্ এর কথা মনে হলো।।পাগলদের নিয়ে জোকস্.. (জোড় পূর্বক হাসি দিয়ে)
.
🍁
.
এই মাসের পর আর কোনো এপয়েন্টমেন্ট নিচ্ছে না আয়ান।।আর মাত্র তো কটা দিন বাকি!! মাসটা শেষ হতেই তো অদিতির কাছে ছুট লাগাবে আয়ান…এই একটি মাস যে কিভাবে কাটিয়েছে আয়ান তা শুধু সেই জানে….যখন থেকে অদিতিকে পাওয়ার ইচ্ছে জেগেছে তখন থেকেই ইচ্ছেগুলো হয়ে উঠেছে বেপরোয়া।।মনের কোণে অন্য রকম আনন্দ লাগছে তার।অদিতির জন্য অনেক গিফ্ট কিনেছে সে….তার অদিতিকে সে সর্বোচ্চ সুখটায় দিতে চায় সে।।ফ্লাইটের টিকেটও কাটা শেষ…..এবার আয়ানের স্বপ্ন হয়তো বাস্তবতার রঙে রাঙিন রূপ ধারণ করবে।এই ২২ বছরের এতো কষ্ট এতো কান্না কি অদিতি একমুহূর্তে ধুয়ে মুছে দিবে না?অবশ্যই দিবে….
.
🍁
.
ফাইভ স্টার হোটেলে বসে আছে অদিতি।চোখ ঘুরিয়ে চারপাশে তাকাচ্ছে সে।সামনে বসে থাকা আদনান ফোনে ব্যস্ত।অদিতির কোম্পানির “ম্যান্টাল হেল্থ” প্রজেক্টটা আজ ৮ মাস পর সাকসেসফুলি লঞ্জ করেছে।সেই সুবাদে অদিতির প্রমোশনও হয়েছে।কিন্তু অদিতির মনে বিন্দুমাত্র আনন্দ নেই।।এই কাজটা সে আর আয়ান মনের আবেগ দিয়ে করেছিলো।।বাচ্চাদের ভালোবেসে করেছিলো এর সেলিব্রেশনও কি ভালোবাসার সংমিশ্রণে হওয়া উচিত নয়??আদনান জানার পর অদিতিকে একরকম জোর করেই ট্রিট দিতে নিয়ে এসেছে এতো নামি দামি একটা হোটেলে।।কিন্তু অদিতি তো এমন কিছু চায় নি…সে চেয়েছিলো অন্যকিছু… একদমই অন্যকিছু।।আচ্ছা?আদনানের জায়গায় আয়ান থাকলে কি অদিতির ওই অন্যকিছু চাওয়াটা বুঝতে পারতো??হয়তো পারতো… হয়তো পারতো না!!একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদনানের দিকে তাকালো অদিতি।।অদিতি তাকাতেই হাসিমুখে বলে উঠলো আদনান-
.
অদিতি কি খাবে বলো?আজ সব তোমার ইচ্ছেতে হবে।।চলো ভারি খাবার খাওয়া যাক…এমনিতেও ডিনার টাইম হয়েই গেছে।এখানের বেশ কিছু স্পেশাল আইটেম আছে,, খাবে তুমি?
.
অদিতি হাসলো।এই ছেলেটি অদিতির মন ভালো করার কতো চেষ্টায় না করে।সবসময় অস্থির অস্থির ভাব…কিন্তু আফসোস অদিতির মনের সিস্টেমটাই যে খারাপ হয়ে গেছে তা আদনানের জানায় হলো না।।অদিতির এখন আর মন খারাপ থাকে না আবার মনটা তার ভালোও থাকে না…কি এক টানাপোড়েনের চিত্র তার এই মন!!আদনানের কথায় ঘোর কাটলো অদিতির।একটু নড়েচড়ে বসে আবারও মনোযোগী হলো সে।আদনান নিজের মতো কথা বলে চলেছে-
.
অদিতি??একসপ্তাহ পর তো আমাদের এনগেজমেন্ট তারপর ২মাস পর বিয়ে।।আমরা কোথায় হানিমুনে যাবো তাই তো ঠিক করা হলো না।আচ্ছা সুইজারল্যান্ড যাবে??বরফের দেশ পছন্দ তোমার??
.
অদিতি হাসিমুখে তাকিয়ে আছে আদনানের চোখে মুখে।এটা কি আসলেই হাসি???
.
🍁
.
ব্যাগ প্যাক করে নিজেকে আর আটকাতে পারলো না আয়ান।ফাহিমকেও তো জানাতে হবে… আয়ান ইজ কামিং।।বেডে বসে ফোনটা হাতে নিয়ে ফোন লাগালো সে।২ বার রিং হয়ে কেটে যাবার পর ফাহিমই কল ব্যাক করলো..ফাহিমের কল দেখে ঝটপট রিসিভ করলো আয়ান-
.
হ্যালো ফাহিম?
.
শালা!এতোদিনে মনে পড়লো??
.
এখন ঢং শুরু করিস না তো।।একটা দারুণ খবর দিবো তোকে তার আগে বল রিয়া কোথায়??দুজনকে একসাথেই বলবো।
.
কি এমন খবর যে দুজনকে একসাথে বলতে হবে?? রিয়া তো এখন কাছে নেই…ও তো অদিতির কাছে….ওকে সাজাচ্ছে!!
.
সাজাচ্ছে? কেন?
.
কেন আবার? আজ তো অদিতির এনগেজমেন্ট…
.
কথাটা শুনেই পৃথিবীটা যেনো থমকে গেলো আয়ানের!!
.
#চলবে..🍁
.
(বোনে ফোন হাতে নেওয়ার আগেই চিল্লায়,,ওর ফোন দিয়ে গল্প দেওয়া পসিবল না।।সো সরি!!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here