অস্তিত্বের খোঁজে পর্বঃ১২

0
3014

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ১২



– নিদ্রা আপু আমাকে হাত ধরে টেনে কারে উঠাইলো। আমি বুঝতে ছিলাম না আসলে আমার সাথে কি ঘটছিল। এরা কই থেকে আসল। সব কি আগেই প্লান ছিল! আর্পিতা কি আমার সাথে ইচ্ছা করে এসব কাজ করল।




– আমায় বাসায় এসে দাড় করিয়ে বাসার সবাই কে জোড়ে জোড়ে ডাকতে লাগল নিদ্রা আপু।
– কি হয়েছে রে নিদ্রা ষাঁড়ের মত চিল্লাচিল্লি করছিস কেন?(বিমলা)


– দিদুন তুমিই ঠিক। এই মেয়ে যে কত্ত বড় খারাপ আজ যদি আমি ফলো না করতাম তাহলে কোনদিনই জানতে পারতাম না।
– কি হয়েছে বলবি তো? (বিমলা)



– ও অর্পিতাকে নিয়ে গিয়ে প্রেমলীলা করার সুযোগ করে দিছে একটি ছেলের সাথে। অর্পিতা না হয় কিন্তু এ! এতবড় মেয়ে হয়ে কিভাবে এ কাজ করল।(নিদ্রা)
– স্বাধে আর বলি ওরে বাসা থেকে বের করে দাও। তা না করে ওকে দেবী সাজিয়ে মন্দিরে রেখে পুজা দেয় তোর দাদু আর শুভ্র। আমার সংসার টাকে শেষ করে দিল।



– অনিতা পরীর সামনে এসে জোড়ে একটা চড় মেরে বলল তোকে বিশ্বাস করে নিজের মেয়েকে তোর হাতে তুলে দিছি…. নিজের মেয়ের মত দেখেছি আর তুই কি করলি আমার মেয়েটার সর্বনাশ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিস। শুভ্র কে তো শেষ করেছিস এবার মেয়েটার দিকে নজর দিয়েছিস! তোর কি ক্ষতি করেছি যে আমাদের নিয়ে এভাবে সর্বনাশা খেলায় মেতে উঠেছিস?




– আমি অর্পিতার দিকে একবার তাকাতেই ও মাথা নিচু করল। এটা অন্তত ওর কাছে আশা করিনি। সত্যটা বলতে পারত। আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ফ্লোরে পরে যাচ্ছে।



– নিতাই সেন সব শুনে গম্ভীর হয়ে বলল অনিতা আমি কখনও মানব না যে পরী এই কাজ করতে পারে। দেখ আমাদের অর্পিতার ঘাপলা আছে। আমি মানুষ চড়িয়ে খাই। তাই অন্তত আমাকে বুঝ দিতে এসো না। পরী যাও তোমার রুমে এখানে নাটক তোমাকে দেখতে হবেনা।




– অনিতা এবার প্রথম শশুরের কথার উপর কথা বলল। বাবা একটা পরের মেয়ের জন্য আপনি আমার মেয়েটাকে দোষ দিচ্ছেন! এতটা প্রিয় হয়ে গেল সে আপনার।



– অনিতা যা যানোনা তা নিয়ে তোমায় তর্ক করতে যেওনা। এর ভুল যেদিন বুঝবা সেদিন মাফ চাওয়ার মত সময় পাবানা। আগে নিজের মেয়েকে সামলাও তারপর পরের মেয়েকে নিয়ে টানা টানি কর। কি হল! পরী এখনও দাড়িয়ে আছো? যাও আর নাটক দেখতে হবে না বলে নিতাই সেন চলে গেল।




– আমি কান্না করতে করতে উপরে এসে দরজা বন্ধ করে খাটে বসে কাঁদতে লাগলাম। আমি এখানে থাকতে চাইনা কেন এরা বোঝেনা!



– জিবনে অনেক মেয়ে দেখেছি ওর মত বেয়াদপ মেয়ে কখনও দেখিনি। সবার মুখের উপর দরজা ওভাবে লাগিয়ে দিবে তাই বলে!
আর হ্যাঁ অর্পিতা তোমায় যদি দেখছি পরীর সাথে মিশতে তাহলে তোমার একদিন কি আমার একদিন বলেই নিদ্রা চলে গেল।



– আমি বার বার মৃদুলকে কল দিয়েই যাচ্ছি। কিন্তু ও রিসিভ করছেনা। প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে কল দিয়েই যাচ্ছি রিসিভ করছেনা। কতবার যে মাসেজ করলাম কোন রিপ্লাই নেই।



– মানুষের বিপদে কাউকে পাশে পাওয়া যায়না। আমি চাপা কাঁন্না করছি। শেষে রেগে গিয়ে ফোনটা একটা আছাড় মারলাম গায়ের জোরে। যার ফলাফল ফোনটা ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গেল।



– আমি সন্ধার পর দাদুর রুমে গিয়ে উকি দিলাম। উনি বসে আছেন। আমি ওনাকে ডাকতেই বিমলা দিদুন বলে উঠল এই মেয়ে তোমার লজ্জা নেই তুমি আবার এখানে এসেছো?



– দাদু রুম থেকে বের হয়ে আমাকে বাসা থেকে বের করে আনলেন। উনি একটা রিক্সা নিয়ে আমাকে উঠতে বলেই উনি উঠে গেলেন। আমি অবাক হয়ে ওনার সাথে উঠলাম রিক্সাই ।



– পরী আমরা আজ রিক্সা ভ্রমন করব চলো। ( নিতাই)
– আমি শুধু মাথা নাড়ালাম।
– পরী কি হয়েছিল সেখানে আমাকে খুলে বল বলে উনি গম্ভীর হয়ে গেল।
– আমি জগিং এর থেকে সব ঘটনা খুলে বললাম এবং আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিলাম।
– দাদু সব বুঝতে পেরে বলল কেঁদনা পরী। অর্পিতার এধরনের কাজ করা ঠিক হয়নি একদম।



– দাদু আমাকে নিয়ে একটা ফুসকার দোকানে নামল। পরী আজ আমার পক্ষ থেকে তোমাকে খাওয়ার টিপস্ দিচ্ছি। কি কি খাবা বল।
– আমি ওনার দিকে চেয়ে একটা হাসি দিয়ে বললাম হাফ প্লেট ফুসকা হাফ প্লেট চটপটি। তারপর বিরিয়ানি, আইসক্রিম আর ২ হাত ভরে চকলেট। কি পারবেন তো খাওয়াতে?



– কি বলো তুমি এই নিতাই সেন পারবেনা এটা কি হয় বলেই অর্ডার দিল খাবার।
– আমার সাথে উনিও খেলেন। যানো পরী আমিও রেনুর সাথে এভাবে শেষ রাস্তায় খেয়েছি। আর আজ বলে একটা মুচকি হেসে দিলেন।



-আমি খাবার শুরু করে দিছি। কষ্টময় দিন শেষে এরকম সারপ্রাইজ জাষ্ট অসাধারণ।
অনেক মজা করলাম। রেস্টুরেন্টে আবার নিয়ে গেল। বিরিয়ানির অর্ডার দিতেই একজন বলে উঠল স্যার মেয়েটি কে?
– উনি হেঁসে বললেন খুব স্পেশাল কেউ।
– আমি হাঁসতে লাগলাম ওনার কথায়।
– খেয়ে আমরা আবার রিক্সাই উঠে পড়লাম। পুরো শহর ঘুরে বেড়ালাম। প্রায় রাত ১১ টার দিকে বাসায় ফিরলাম। আসার সময় অনেকগুলো চকলেট অর্পিতার জন্য দাদু নিয়ে আসলাম।




– বাসায় এসে দেখলাম সবাই যার যার রুমে তাই সোজা আমার রুমে গেলাম। গিয়ে দেখলাম ফোনটা ফ্লোরে পড়ে ছিল ভাঙ্গা অবস্থায় কিন্তু এখন সেটা আমার বেডে পড়ে আছে। হয়ত পলা আন্টি গুছিয়ে তুলে রাখছে।



– আমি ফ্রেস হয়ে এসে শুয়ে পড়লাম। ঘুম আসছেনা। কেন যে ফোনের উপর রাগ ঝাড়লাম এখন মৃদুলের সাথে কেমনে কথা বলব। বেশ ছট পট করতে লাগলাম। এভাবেই প্রায় ৭/৮ দিন কেটে গেল। মৃদুলের সাথেও আর কথা হয়না।



-একদিন ভার্সিটি থেকে রুমে এসে দেখি আমার বেডে একটা গিফট্ পেপারে মোড়ানো একটা ছোট বক্স। আমি ওটা হাতে নিয়ে এদিক ওদিক তাকালাম। কাউকে না পেয়ে বক্সটি খুলে দেখি একটা অনেক দামী ফোন। নিচে একটা চিরকুঠ তাতে লেখা গিফট্। দাদু দিয়েছে? কিন্তু উনি জানলো কি করে আমার ফোন নেই। ধুর যা মনে তাই হোক বলে ফোনে আমার সিম উঠায়ে চার্জে দিলাম।



– সন্ধার পর আমি নামাযে দাড়াবো এমন সময় অর্পিতা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল পরী দিদি স্যরি। আমি সেদিন খুব ভয় পেয়েছিলাম।



– আমি অর্পিতাকে এক ধাক্কায় দুরে সরে দেই। এই Don’t tach me and don’t talk me……
-একদম আমাকে ছুবেনা। দেখছো না আমি নামাযে দাড়িয়েছি। তোমার ঘাম আমার গায়ে লাগলে অযু নষ্ট হয়ে যাবে। আর তুমি এখানে কেন এসেছো। আমার ইচ্ছা নেই তোমার চেহারাও না দেখা বলেই নামাযে দাড়িয়ে যাই।



– অর্পিতা অপমান হয়ে কেঁদে ফেলে এবং চোখ মুছতে মুছতে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
– যাওয়ার সময় শুভ্রর সাথে ধাক্কা খেল অর্পিতা।
– এই কি হয়েছে তোর কাঁদছিস কেন!
– অর্পিতা A to Z সব বলল শুভ্রকে।
– অর্পিতার কথা শুনে শুভ্র ক্ষেপে গিয়ে পরীর রুমে গিয়ে দাড়িয়ে পড়ল। কারন পরী নামায পরছিল।



– নামায পড়া শেষ করে উঠে শুভ্রকে দেখে আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম। এই তুমি আবার আমার রুমে আসছো? সমস্যা কি তোমার!



– শুভ্র কোন কথার জবাব না দিয়ে নিজের শার্টের বোতাম খুলতে লাগল।
– আমি ভয় পেয়ে বললাম শার্ট কেন খুলছো?
– শুভ্র শার্ট খুলে কোন কথা না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে ফেলে অনেক জোড়ে।
– আমি ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করি বার বার কিন্তু উনি এবার আমার হাত মুচরিয়ে ধরে বলল বেশ অহংকার তোমার বেড়ে গেছে না! দেখি তুমি কেমনে অপবিত্র হয়ে যাও বলে শুভ্র ওর গাল আমার গালের সাথে ঘষিয়ে দিল আর ওর পুরো শরীর আমার সাথে।
– আমি চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম শুভ্র কি করছ। তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। ছাড়ো আমায় বলতেই ও আমাকে কষিয়ে ২ টা চড় মেরে আমায় খাটে ফেলে দিল ধাক্কা মেরে।
– শুভ্র শার্ট গায়ে জড়িয়ে বলল যদি অর্পিতার সাথে আবার এরকম ব্যবহার করেছো তাহলে এর থেকেও বেশি খারাপ অবস্হার রুপ নিবে।



– আমি খাট থেকে উঠে শুভ্রকে ধাক্কা দিয়ে বললাম তোমার সাহস কি করে হয় আমার গায়ে হাত তুলা?
– পরীর চিৎকারে নিদ্রা, অনিতা সহ পলা অর্পিতা চলে আসে।
– শুভ্র এবার আমার সামনে এসে আঙ্গুল তুলে বলল যা বলেছি তা মাইন্ডে রাখবা এতে তোমার ই মঙ্গল। তাছাড়া……….



– শুভ্র কি করছিস আর কি হয়েছে ওর সাথে এমন ব্যবহার করছিস কেন বলে অনিতা ছেলের কাছে আসল।
– গালে ২ টা থাপ্পড় লাগাও শুভ্র। বেয়াদপ মেয়ের গলার ঝাজ দেখছো?




– বৌদি বউটা আমার তাই অপরাধ করলে আমি ওকে শাসন করব এখানে তৃতীয় পক্ষের কথা বলা আমি একদম পছন্দ করিনা। আর এখানে কি সার্কাস দেখতে আসছো তোমরা! বলেই শুভ্র রুম থেকে বের হয়ে গেল।



– আমি অর্পিতার দিকে ঘৃনার চোখে একবার তাকালাম। অর্পিতা বুঝতে পেরে রুম থেকে বের হয়ে গেল।



– এই তুমি কি শুরু করে দিছো বলতো আমাদের কি শান্তিতে থাকতে দিবেনা। তোমাকে না পারছি গিলতে না পারছি ফেলে দিতে।



– আমি থাকতে চাইনা এই বাসায় সেটা আপনার ছেলেকে জানিয়ে দিবেন। আমার ইচ্ছাও নেই এভাবে কথা শুনে থাকার। ভাগ্য বোঝেন! আমার ভাগ্য খারাপ না হলে আমি এত কথা শোনার পরও এভাবে পরি থাকি?
– আর নিজের মেয়ের কাছে সত্যিটা দয়া করে শুনে দেখবেন সেদিনের ঘটনাটি কি। আমি চুপ করে আছি বলে এই না যে আমি দোষী বলে অন্য দিকে মুখ করে দাড়ালাম।



– ওরা চলে গেল সবাই রুম থেকে। আমি দরজা বন্ধ করে দিয়ে বাথরুমে রাগে আর কান্নায় ফেটে পড়ি।



– রাত সাড়ে নয়টার দিকে পলা খাবার নিয়ে দরজায় নক করল কয়েকবার তার পরী দরজা খুলে দিল।
– শুভ্র কি তোমায় মেরেছে পরী!
– না আন্টি একটু বকা দিছে এ আর নতুন কি?
– জানো পরী আজ অনিতা বৌদি অর্পিতাকে খুব মেরেছে। আর বলছে এতবড় খেল কেমনে খেললি তুই। একটা পরের মেয়ের কাছে আমাকে ছোট করলি।



– এটা আরোও আগে করা উচিত ছিল আন্টি। আর আমি খাব না আমার ভাল লাগছেনা। আপনি এগুলো নিয়ে যান।
– পালা কিছু না বলে খাবার গুলা রেখে দিয়ে বলল শুভ্র বলেছে তুমি না খেতে চেলেও যেন রুমে রেখে যাই।
– ও পেয়েছেটা কি। ওর কথা মত আমায় চলতে হবে!
– পলা কিছু না বলে চলে গেল।




– রাত ১২ টার দিকে ফোন অন করতেই একের পর এক মেসেজ আসতেই লাগল। জলদি সাইলেন্ট করে ফেললাম। মৃদুলের সব মাসেজ। পড়ার আর সময় পেলাম না তার মধ্যই কল আসল।
– রিসিভ করতেই মৃদুল বলে উঠল পরী?
– উমমমম
– মৃদুল শুনেই কিস করতে লাগল পাগলের মত ফোনে। আমি কাঁদছি আর ওর কিস গুলো গুনছি।
– পুরো হাজার টা কিস করে বলল কই ছিলা তুমি। কতবার কল দিছি। নাম্বার বন্ধ তোমার।
– আমি কোন কথা না বলে শুধু বললাম তোমার কিস করা শেষ!
– বলতে দেরি কিস করতে ওর দেরি নেই। সাথে সাথে আবার পাগলের মত কিস করতে শুরু করল। এবার আর গুনি নাই।



– পরী আমি বিজি ছিলাম সোনা তাই রিসিভ করতে পারিনি বলে এত কষ্ট দেওয়ার অধিকার তোমায় দেই নি। কেন এতটা কষ্ট আমায় দিলা!
– মৃদুল যানতো আমি কি অবস্থায় থাকি বলে সব ঘটনা ওকে খুলে বললাম এবং কেঁদে উঠলাম।
– মৃদুল কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। পরী চলে আসো আমার কাছে। আসতে পারবা না!
– দাদুর জন্য কোথাও যেতে পারিনা মৃদুল।



– পরী কেঁদনা প্লিজ আমার কষ্ট হচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি তোমার কতটা কষ্ট হচ্ছে। তুমি যদি আগেই ওদের সত্যটা বলতে তাহলে আজ জল এত দুর গড়াতো না। ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হয়। জেদটাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করবা।



– মৃদুল আমার সাথে দেখা করবে?
– মৃদুল কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল তোমার পরীক্ষা না কিছুদিন পর। শেষ পরীক্ষায় তোমার সাথে দেখা করব।
– এবার খুশিতো ম্যাম!
– উমমমম খুব খুশি বলে একটা মুচকি হাঁসি দিলাম।
– পরী আর রাত জেগো না ঘুমিয়ে পড়। কিছু খেয়েছো!
– না…….
– জলদি খেয়ে নাও। খাবারের উপর রাগ করতে নেই। আমরা দেখা করছি তোমার শেষ পরীক্ষায় that’s final…..
-হুম….
– খেয়ে ঘুমিয়ে পড় আমা প্রিয়। I love you pari…♥
– I love you toooo Mredul….



– খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
– সকালে দরজায় জোড়ে জোড়ে ধাক্কায় আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। পলা জোড়ে জোগে চিৎকার করে পরীকে ডাকছে।
– আমি ধরপড়িয়ে উঠে দরজা খুলে পলা আন্টিকে দেখে চুপসে গেলাম।
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here