অস্তিত্বের খোঁজে পর্বঃ২৯

0
2276

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ২৯



– পরী শুভ্রকে অনেক বার কল দেয় কিন্তু নাম্বার বন্ধ পায়। হয়ত “”আল্লাহ্”” ওর ভাগ্যেতে আরও অনেক কিছু লিখে রেখেছে । “””আল্লাহ্”””ভাল জানেন।

শুভ্রকে আর ফোন না দিয়ে আবার বন্ধ করে রেখে দেয়। আর কোন যোগাযোগ করে নি পরী।




– অনিতা শুভ্রের কাছে সব সময় থাকে। কারন পরীর জন্য শুভ্র এখনও দুশ্চিন্তায় থাকে সবসময়। মুখের হাঁসি টুকু ওর মধ্য দেখা যায় না।



– শীতের কুয়াশার চাদর পড়তে শুরু করে দিছে চারদিকে। অনিতা রাতেও শুভ্রর কাছে থাকে। শুভ্র সোফায় থাকে আর ওর মাকে বেডে রাখে। কারন অনিতা একমুহুত্ব শুভ্রকে কাছ ছাড়া করতে চায়না।



– এর কিছুদিন পর নিদ্রা কনসিভ্ করে। বাসার সবাই অত্যন্ত খুশি হয়। শুভ্রও খুব খুশি হয় কিন্তু পরীর কথা বার বার চিন্তা করে। এই সময় কি করছে না করছে এই সব নিয়ে।




– মা! আমি কি ছোট বাচ্চা যে তুমি আমাকে সব সময় পাহারা দাও?(শুভ্র)



– তুই আবার কবে বড় হলি শুভ্র! (অনিতা)


– কি বল! এত্ত বড় হয়ে গেলাম তাও তুমি ছোট বলছো?


– আমার কাছে তুই সবসময় ছোট।


– মা আমি সিরিয়াস! দেখ বাবা একা থাকে। বাবার তো সমস্যা হবে। এই বয়সে সঙ্গী ছাড়া থাকা অনেক কষ্টের মা। তাছাড়া শীত পড়ে গেছে কত কি দরকার পড়বে বাবার,,,,,,, আর তুমি আমাকে সবসময় পাহারা দিতে ব্যাস্ত ।


– তোর সমস্যা কি রে! আমি তোর কাছে থাকলে প্রবলেম টা তোর কি?


– আমার কোন প্রবলেম নেই। আমার বাবার জন্য চিন্তা হয় মা!
তাছাড়া বৌদির এই সময়ে তোমাকে খুব প্রয়োজন।


– পরীরও তোহ্ এই সময় আমাকে দরকার ছিল কিন্তু থাকতে পারছিনা। নিদ্রাকে দেখার অনেকে আছে কিন্তু পরী কোন অবস্থায় আছে আমরা কেউ জানিনা। তাই লেকচার দেওয়া বন্ধ কর।


– কথাটা শুভ্রর কলিজাতে আঘাত করল। কিন্তু কিছু না বলে শুধু বলল ওকে,,,,, বাবা কেও আমাদের সাথে রেখ। সাথে অর্পিতাকে ও নিয়ে আসো। পরিবার কমপ্লিট হবে তাহলে।


– অনিতারও খুব কষ্ট হয় এই অবস্থায় অনিলকে একা রাখতে। কিন্তু শুভ্রের কথা ভেবে কষ্টের সাথে কোন আপোস না করে অনিতা এখানেই আছে। যেটা শুভ্র বেশ বুঝতে পারে। শুভ্রের মায়ের কাছে থাকতে প্রচন্ড ভাল লাগে কিন্তু অবস্থার বেগতি দেখে কথা গুলো বলতে বাধ্য হয়।


– অনিতা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো এমন সময় শুভ্র এসে ঝট করে ওর মাকে কোলে নিয়ে ওর বাবার রুমের দিকে পা বাড়াল।


– শুভ্র ছাড় বলছি আমাকে। সবাই দেখে কি ভাববে বল,,,,, এই বয়সে ছেলের কোলে উঠে বসে আছে।


– ছাড়ব তবে এখানে নয় বাবার রুমে নিয়ে গিয়ে বলেই শুভ্র চলতে লাগল।


– বাসার সবাই দেখে তো সেই হাঁসি। নিদ্রা একটু জোড়েই বলে উঠল শুভ্র তোমার মত যদি আমার একটা সন্তান হত তাহলে খুব খুশি হতাম। বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের কোলে চড়তে পারতাম।


– চিন্তা করনা বউদি,,,,,, দাদার এন্ট্রিতে তোমার কাছে আমার থেকেও উত্তম একজন আ,,,,সি,,,,তে,,,,,ছে বলেই শব্দ করে হেঁসে উঠল শুভ্র।


– শুভ্র কতদিন পর হাসল যেটা দেখে অনিতার চোখে জল এসে গেল।

-শুভ্র ওর বাবার রুমে গিয়ে অনিতাকে নেমে দিয়ে অনিল কে বলল,,,,, বাবা! মাকে যদি আমার রুমে দেখি তাহলে আগে তোমার খবর আছে। নিজে জিনিস নিজে সামলাতে পারোনা!

আমার ঘাড়ে কেন চাপাও বলে রুম থেকে বের হয়ে আসল শুভ্র।



– অনিল হেঁসে বলল শুভ্র ছেলে হয়ে বুঝল তোমাকে আমার কতটা প্রয়োজন আর তুমি বউ হয়ে বুঝলানা অনিতা!


– অনিল! শুভ্রকে নিয়ে আমার খুব ভয় হয়। ওর আক্রোশ পরীর উপর দিন দিন বেড়েই চলছে। মনে হচ্ছে পরীর সাথে যেন ওর দেখা না হলেই ভাল হবে। এই আক্রোশ টা ১০ বছর আগে দেখছিলাম। জানিনা ভবিষ্যতে কি হয়।


– অনিল অনিতার কথা শুনে একদম চুপ হয়ে গেল। কারন অনিতার কথা যদি ঠিক হয় তাহলে পরীর জন্য রিক্স হয়ে দাড়াবে শুভ্র।
কি সব হচ্ছে ভেবেই অনিলের গা শিউরে ওঠে।




– শুভ্র রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিল। আর দেরি না করে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ে। একের পর এক পরীর ছবি গুলো দেখতে লাগল। পরী চলে যাওয়ার আগের রাতের কথার সব ভিডিও করে রেখেছিল। শুভ্র কি জানত এটাই ওর সাথে শেষ কথা হবে! শুভ্রর প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে কথা গুলো ভেবে। অনেক ভিডিও করে রেখেছে শুভ্র, পরীর অজান্তে।
পরী! কেন বুঝতে পারলে না তোমাকে ছাড়া আমার দম বন্ধ হয়ে যায়। আমি তোমাকে কতটা চাই।

পরীর সাথে যেদিন প্রথম শারিরীক সম্পর্ক হয়েছিল সেটার ভিডিও টা বের করল শুভ্র।
এবার শুভ্রর চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। পরীকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছিল এই ভিডিও টা দেখিয়ে কিন্তু পরীই ওকে সারপ্রাইজ দিয়ে চলে গেল। শুভ্র ভিডিও গুলো দেখছিল আর একের পর এক সিগারেট টানতে লাগে। অনিতা থাকার জন্য কিছু করতে পারেনি কটা দিন। তাই মনে হয় আজ পাগল হয়ে যাচ্ছে। পুরো রুম সিগারেটের ধুয়াই সাদা হয়ে গেল কিছুক্ষনের মধ্য।

শুভ্র উঠে গিয়ে বেলকোনির থাইটা খুলে দিল যাতে সব ধোয়া বের হয়ে যায়। কারন ওর মা যদি এসে দেখে সিগারেটের ধোয়ার গন্ধ তাহলে খবর আছে। তাই রুমে ঝট ঝট করে সব কোনায় রুমস্প্রে করল। হুম এখন সব ঠিক বলে একটা নিস্বাস নিল প্রান ভরে। মায়ের জন্য ব্যাপক ভয় তার।



– পরী অন্ধকার রুমে একা একা সুয়ে আছে। রাত ১০ টা বেজে গেছে তবুও নুরজাহান আসছেনা। এমনতো কখনও হয়না। কোন বিপদ হলনাতো!



– এমন সময় দরজায় নক পড়ল।
কে?


– কোন জবাব এল না।


– এবার আমি বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। খালাম্মা হলে তো কথা বলত কিন্তু এত্ত বার বলছি কে তাও কোন জবাব আসছেনা।


– খটখট শব্দ বেড়েই গেল আর আমার ভয় বেড়ে যেতে লাগল। আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম। আমার আর বুঝতে বাঁকি রইল না এটা কে ছিল। বজ্জাত লফির এটা।

কয়েক দিন আগে দোকানে ফ্লাক্সি দিতে গিয়েছিল শুভ্রর সাথে কথা বলার জন্য। তখন পরীকে দেখে ফেলেছিল লফির। পরে খালাম্মা কে অনেক কিছু জিঙ্গাসা করে পরীর ব্যাপারে কে মেয়েটা। এতদিন দেখে নাইতো। খালাম্মা বার বার সাবধান করে দিয়েছিল। আমার গা হাত পা কাঁপছে।



– এবার চাপা শব্দ ভেসে আসলো। ঐ মাইয়া দরজা খুলবি না দরজা ভাইঙ্গা ঘরে ঢুকমু বলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে লাগল।


– কি বিশ্রী ভাষাগুলো ছিল। এবার দরজায় লাথি পরে কয়েকটা। আল্লাহ্ আমাকে রক্ষা কর এই অবস্থা থেকে বলেই কান্না চলে আসল।



– ঐ মাইয়া আমি জানিনা ভাবছোস পর পুরুষের সাথে ফষ্টিনষ্টি করে পেট বাঁধাইছোস তাহলে আমার কাছে থাকতে তোর এত্ত শরম কেন বলেই আবার লাথি দিল দরজাতে।



– আমি কথা গুলো শুনে কেঁদে উঠলাম। কি সব বলছে লোকটা। আমি আজ শেষ।



– কে কার সাথে ফষ্টিনষ্টি করছে,,,,,,,, এমন একটা শব্দে লফির পিছন দিকে তাকায়। বাহিরে ৩ টা পুরুষ দাড়িয়ে আছে। ওদের দেখে এবার লফির বেশ ভয় পেয়ে যায়। লফির দৌড় দিতেই ২ টা ছেলে ধরেই চড় থাপ্পড় দিতে শুরু করল।



– বাহিরে ধাপধুপ শব্দে আর লফিরের আৎনাদে আমি একটু দরজা খুলে দেখলাম লফিরকে ৩ ছেলে ধরে মারছে আর বলছে মেয়ে দেখলেই লুচ্চামি করা!

আমি একটু সাহস পেয়ে রুম থেকে একটা বড় লাঠি বের করে বাহিরে বের হয়ে সটাসটা কয়েকটা বাড়ি মারলাম লফিরকে।



– ব্যাটা বুড়ইরা খাটাস্ বজ্জাত কোথাকার আমাকে বিশ্রী ভাষায় গালাগলি করা! বলেই আরো কয়েটা লাঠির বাড়ি পড়ল লফিরের পিঠে। বুইড়ার সাহস কত্ত আমাকে অকথ্য ভাষায় কথা বলে। হারামি বুইড়া আমি প্রেগন্যান্ট তাই ভয়ে চুপ করে ছিলাম না হলে তোর মত কত খারাপ ব্যাটাকে শায়েস্তা করেছি এই জিবনে বলেই কয়েকটা লাথি মারলাম।



– পরীর কান্ড দেখে ৩ টা ছেলেই অবাক হয়ে যায়। এটা কি মেয়েরে। এত্ত রাতে রুম থেকে বের হয়ে মারছে। এই অবস্থায় ও তার তেজ দেখ।



– ঐ ব্যাটা তোর ঘরে বউ বাচ্চা নাই! মেয়ে মানুষ দেখেই লুচু গিরী করতে মন চায় বলেই আবার লফিরের পিঠে লাঠির বারি পড়ল। আজতো তুই শেষ। তোকে মেরেই ফেলব আজ আমার দরজায় লাথি মারা! বলে তেড়ে যেতেই একটা ছেলে এসে হাত ধরে টেনে আনল পরীকে।



– এই ছাড়ুন বলছি আমায়। আপনিও তো কম লুচু নন হাত ধরেন কিয়ের লায়।


– ছেলেটা কোন কথা না বলে পরীর মুখ বাঁধে জলদি করে। আর একটা ছেলে এসে হাত পা দুটাই বেঁধে ফেলে পরীর।


– আমি ভয়ে চুপসে যাই। এরা মেয়ে ধরা না তো! বলেই ছটফটাতে লাগলাম। ছেলেটা এবার শক্ত করে আমাকে ধরে বলল আপনার যা অবস্থা না নড়াচড়া করলে আপনারই ভাল বলে আমাকে কোলে তুলে নিল।

পরীরে আজ তুই শেষ। ছেলে ধরার কবলে পড়ে গেছিস কেন রুম থেকে বের হইতে গিয়েছিলি ব্যাটা লফির কে মারতে। এখন ঠেলা সামলা। আল্লাহ্ গো মাফ করে দাও জিবনে এভাবে রুম থেকে বের হব না। এবারেরর মত ছাড়ার ব্যবস্হা করে দাও। মুখ বাধা কথাও বলতে পারছিনা।



– ছেলেটা ২ টা ছেলেকে নির্দেশ দিল লফিরকে বেঁধে রাস্তার সামনে রেখে দাও। আর গলায় প্লাকার্ড দিয়ে লিখে দাও আমি লুচ্চামি কইরা ধরা খাইছি।

আর রিপন তুমি রুমে চাবি দাও। আমরা মেয়ে চুরি করি কিন্তু করো বাসা চুরি করিনা। কাজ সেরে তোমরা দুজনেই চলে যাও।


– ভাই মেয়েটাকে নিয়ে যেতে পারবেন তো?


– জিবনে কত্ত আমা,ডাব চুড়ি করলাম ধরা খাইনি।


– ভাই এটা ডাব না,,,,,,,, একটা বিছাতু মেয়ে। যা তেজ দেখেই ভয় লাগে।

– সেটা দেখা যাবে পরে,,,,,,,আমি যাচ্ছি বলেই পরীকে নিয়ে রাস্তায় নেমে গেল ছেলেটি।



– চারদিকে যা কুয়াশা । ২ হাত দুর অবদি দেখা যাচ্ছেনা। তার ভিতর আবার রাত হয়ে গেছে অনেক।
আল্লাহ্ গো এই রাতে গ্রামের সবাই ঘুমিয়ে পড়ছে। কেউ বেরও হবেনা। কি করব আমি।



– এই আপনি ছটপটাচ্ছেন কেন। আমার সমস্যা হচ্ছে। আমাকে শুকরিয়া জানান ঠিকমত না আসলে আপনার কি হাল হত সেটা ভাবতেই আমি ভয় পেয়ে যাচ্ছি। মেয়েদের এত্ত জেদ ভাল না। আর আপনার এত্ত সাহস কি করে হয় রাতে লাঠি নিয়ে বের হইছেন তাও একটা পুরুষ মানুষকে মারতে! আপনার কি মনে ভয় নাই?



– ছেলেটির কথা শুনে পরী আরও ছটফটাতে লাগল।


– এই নড়তে নিষেধ করলাম না! একদম এখান থেকে নিচে ফেলে দিব কিন্তু! তখন কি হাল হবে আপনার বুঝতে পারছেন? এমনি যে ভারি আপনি,,,,,,,নিয়ে যেতে দম বের হয়ে যাচ্ছে আর উনি নড়েই যাচ্ছেন। আমাকে রাগেবেন না কিন্তু তাহলে অবস্থা খারাপ করে ছাড়ব বলেই একটা হাইস এর সামনে দাড়াল ছেলেটি। দেন গাড়িতে তুলে ডাইভার কে যেতে বলল।




– প্রায় ৩০ মিনিট পর একটা বাসায় এসে পরীকে নামিয়ে সোফায় উপর রেখে মেইন দরজায় চাবি দিয়ে পরীর কাছে আসল। এবার ওর হাত পায়ে বাধন খুলে দিতেই পরী জোড়ে একটা ধাক্কা দিল ছেলেটাকে। নিশু ছিটকে গিয়ে ফ্লোরে পরে গেল।



– আমি জলদি মুখের বাধন খুলে আসেপাশে কিছু জিনিস খুঁজতে লাগলাম যাতে নিজেকে রক্ষা করতে পারি। না তেমন কিছু পেলাম না অবশেষে দরজার কাছে দৌড়ে গিয়ে দেখলাম দরজায় চাবি দেওয়া।



– নিশু ওভাবেই বসে পরীর কান্ড গুলো দেখছিল। যতটা সহজ মনে হচ্ছিল একদম সহজ না মেয়েটা। বাবা-মা কোন দিন গায়ে হাত তোলেনি আর এই মেয়েটা গায়ে ধাক্কা মাড়ল! মা খুব অসুস্থ বলে নুরজাহান আর বাবা সেখানে আছে। নুরজাহান অনুরোধ করেছিল যাতে মেয়েটাকে দেখে আসে তাই নিশু গিয়েছিল।
কিন্তু যা অবস্থা ওখানে পরীকে একা রাখা রিক্স তাই তুলে আনছে এভাবে। তার ফল এখন ভোগ তো করতেই হবে।



– নিশু উঠতেই তেড়ে এল পরী কারন কাছেই চাবি পড়ে ছিল। চাবিটা নিয়ে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতেই নিশু পিছন দিক থেকে ধড়ে ফেলে পরীকে।



– এই মেয়ে চোর,,,,,,,,,, ছাড় বলছি আমাকে ছাড়! (পরী)


কিন্তু নিশু শক্ত করে ধরে আবার তালা দিয়ে চাবি পকেটে রেখে দিল। এই আমি মেয়ে চোর তোমাকে কে বলল?


– ব্যাটা নিশ্চয় তুই পাচারকারী দলের সদস্য তা না হলে আমাকে ধরে আনিস?


– এখন তোমার যে অবস্থা কোন পাচার কারী কেন কেউ নিবেনা। নিশু এবার পরীকে ছেড়ে দিয়ে বলল চুপচাপ থাকো তাছাড়া আমি যদি একবার ক্ষেপে যাই তাহলে কিন্তু তোমার খবর আছে বলে চলে যাচ্ছিল।



– ছেলেটার কথা শুনে প্রচন্ড রাগ হল আমার টেবিলে একটা গ্লাস ছিল সেটা গায়ের শক্তি দিয়ে ছুড়ে মারলাম। গ্লাস টা একদম নিশুর পিঠ গিয়ে লেগে ফ্লোরে পরে যায় আর ভেঙ্গে যায়।



-নিশু প্রচন্ড রেগে যায়। একে কিছু বলতে চাচ্ছি না আর এ ততই বেড়ে যাচ্ছে। ঠাশঠাশ করে গালে ২ টা চড় পড়লে এমনি ঠিক হয়ে যাবে। এই রকম মেয়েদের কেমনে সোজা করতে হয় তা নিশুর খুব ভাল করেই জানা আছে বলে পিছনে ফিরল নিশু।



– ছেলেটার এই চেহারা দেখে ভয় পেয়ে গেলাম আমি। এক দৌড়ে একটা রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম। উফ্ বাঁচছি বাবা আর একটু হলে আমার খবর ছিল। আল্লাহ্ তোমাকে লাখ লাখ শুকরিয়া।



– এবার নিশু চিল্লায় বলল এই ভিতুর ডিম ভয় পেয়ে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলে কেন?আমাকে আঘাত করা! এই নিশুকে আঘাত করছো তার ফলতো তোমাকে ভোগ করতেই হবে পিচ্ছি মেয়ে কোথাকার। সাহস থাকলে বের হও একবার একটা থাপ্পড়ও মাটিতে পড়বেনা।



– কিহ্ আমাকে থাপ্পড় মারবি! ঐ লুচু ব্যাটা কোথাকার তোর সাহস থাকলে আমার গায়ে হাত দিয়ে দেখা!
তোর হাত ভেঙ্গে যদি না ঝুলিয়ে দিছি তাহলে আমার নামও পরী না হুম।

যাই হোক রুমে তো আর আসতে পারবে না তাই চিল্লায় কথা গুলো বললাম।



– এই বিয়াদপ মেয়ে! কি ভাষার শ্রী এক থাপ্পড়ে সব সোজা করে দিব। দরজা খুলে দেখাও তোমার কি হাল করি বলেই দরজায় ২ টা লাথি দিল নিশু।




– ব্যাটা বজ্জাত জলহস্তি কোথাকার দরজা ভেঙ্গে দেখা তার পর বুঝবো তোর কতটা শক্তি। তারপর পরীর গালে চড় দিতে আসিস। ব্যাটা কুলাঙ্গার কোথাকার।



– নিশুর ধর্য্যর বাঁধ ভেঙ্গে গেল এবার। ঐ আমি কুলাঙ্গার! তুমি এবং তোমার চৌদ্দ গোষ্টী কুলাঙ্গার । অ্যানাকোন্ডা, বান্দরনী, জংলী একটা মেয়ে। খালি দরজা একবার খুলে দেখাও কি হাল করি তোমার। একদম খুন করে ফেলব। তারপর যা হয় হোক বলেই দরজায় কয়েক টা আবার লাথি মারে নিশু। রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে নিশুর। এখন পরীকে পেলে অঘটন ঘটাতে এক মিনিট সময় ও লাগবেনা।




– আমিও দরজায় কয়েকটা লাথি মেরে বললাম আমি মেয়ে হতে পারি কিন্তু দুর্বল না। আমাকে একটা ছুড়ি ধার দে তোকে মেরে আবার ছুড়িটা তোকেই ফেরত দিব।



– আমার ছুড়ির দরকার নেই এমনিই তোমাকে খুন করতে পারব একবার শুধু বের হও।


– ব্যাটা তোকেও আমি খুন করব আয় শুধু একবার। তোরে খুন করে প্রয়োজন হলে এরশাদ শিকদারের মত ফাসিতে ঝুলব তাও তোরে ছাড়ছিনা বলে রুমে যত জিনিস ছিল একেকটা করে ভাঙ্গতে লাগলাম। একটা গিটার ছিল সেটা ফ্লোরে বাড়ি দিয়ে ভেঙ্গে চিল্লায় বলে উঠলাম কেবল তো তোর গিটার ভাঙ্গলাম তার পর দেখ আর কি কি ভাঙ্গি বলে ই ডেসিং
টেবিলের দিকে পা বাড়ালাম। আমার সাথে লাগা! রুমের একটা জিনিসও রাখবনা দাড়া না একটু সবুর কর বাছা কি করি আমি! সকালে চেয়ে চেয়ে দেখবি শুধু।



– হায় হায় আমার গিটার! বলে নিশু মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। ওর সখের গিটার টা ভেঙ্গে ফেলেছে আর অনেক কিছু আছে রুমে সেগুলোও ভাঙ্গার হুমকি দিছে,,,,,, নিশু শেষ।
নিশু এবার হাত জোড় করে বলে উঠল মা! আমার ভুল হয়ে গেছে। দয়া করিয়া আর কিছু ভাঙ্গিওনা। আর কিছু বলবনা দয়া করে আপনি ক্ষান্ত হন। আপনার রাগের অগ্নিতে আমার পুরো রুম আজ ভষ্মের পথে।



– কেন রে একটা ভাঙ্গতেই আমাকে মা ডাকতে শুরু করে দিছিস। দেখনা আরও কি করি। আমাকে তুলে নিয়ে আসা! বজ্জাত পঁচা পান্তা কোথাকার। আমি কি জিনিস এবার হারে হারে টের পাবি।



– আমি বললাম তো আমার ভুল হয়ে গেছে এই যে কান ধরছি। আর করবনা। শুধু সকালটা হোক আপনি যেখানকার জিনিস সেখানে রেখে আসব। তাও আমার সখের জিনিস ভাঙ্গেন না।



– আমি লুকিং গ্লাস দিয়ে তাকিয়ে দেখি ও সত্যি কান ধরে দাড়িয়ে আছে। খুশিতে বলে উঠলাম yes! আমি পেরেছি। ডিলবর ডিলবর ডান্স দিতে মন চাচ্ছে।

আমি শান্ত হয়ে বললাম ওকে আপনি কান ধরে কয়েকটা উঠবস করেন তাহলে আর ভাঙ্গবনা। আর হ্যাঁ আমাকে কিন্তু সকালে বাসায় পৌছে দিতে হবে ওয়াদা করেন।



– সব শর্তে রাজি আছি তাও তুমি আর কিছু ভেঙ্গনা। বলে কান ধরে উঠবস করতে যাবে এমন সময় বললাম না ঠিক আছে ওটা করতে হবেনা। কাল দরজা খুলব। অনেক রাত হইছে আমার ঘুম পাচ্ছে বলেই সুয়ে পড়লাম। ফোনটা ছেড়ে আসছি শয়তার টার জন্য…….. এখন কি করি শুভ্রকে না দেখলে আমার ঘুম আসে না যে। খুব খারাপ লাগছে।



– নিশুর চোখে পানি চলে আসছে। এত্ত ছোট মেয়ের কাছে যে নাস্তহাল হতে হবে জিবনেও কল্পনা করেনি। সখের গিটারটা ভেঙ্গে ফেলে দিছে। নিশু ওর গার্ল ফ্রেন্ড ইশিতা কে কল দিল।


– হ্যালো জান এত্ত রাতে কল দিছো যে!

– ইশিতা এখন আমার বাসায় আসবা! তোমাকে নিতে যাই?

– ইশিতা চট করে উঠে বসল। কি হয়েছে জান এরকম করছো কেন কি হইছে তোমার বল!

– চিড়িয়াখানা খানা থেকে একটা প্রেগন্যান্ট বান্দরনী সখ করে বাসায় আনছি। এখন আমায় শেষ করে দিচ্ছে। আমার কিছু রাখেনি।

– জান প্রেগন্যান্ট অবস্থায় সবায় অতিরিক্ত রাগী হয়। সেটা মানুষ কি পশু যেটাই হোক না কেন। বিপদের সম্মুখীন হলে সোজা আক্রমন করে বসে।

আর কোন সুখে তুমি প্রেগন্যান্ট বান্দর আনতে গেছ! ওর কাছে যেওনা কিন্তু কামড় দিবে। খুব রিক্স বলে বান্দরের ইতিহাস খুলতে শুরু করল ইশিতা।


– নিশু কল কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখল। এই মেয়ে জাতটাই বাচ্যাল। কোথায় আমি কষ্টে মরি আর ও বান্দরের ইতিহাস বলা শুরু করে দিছে। আরে যেনাতেনা বান্দরনী নয় চাক্ষস মহিলা বান্দরনী।
ধ্যাত কাল সকাল না হওয়া অবদি এভাবেই বসে থাকতে হবে।

চলবে——————–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here