অস্তিত্বের খোঁজে পর্বঃ৩৩

0
2423

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৩৩



– আমি চুপ করে ফ্লোরেই বসে রইলাম। শুভ্র যেটা বলে সেটাই করে দেখায়। আমার আর এগুনোর কোন মানেই হয়না। আমি কাউকেই হারাতে চাইনা।আমি ফ্লোরেই শুয়ে পড়লাম।



– মাঝ রাতে হালকা হাতের স্পর্শে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ মেলে দেখি শুভ্র আমার কোমরে জেল মাসেজ করে দিচ্ছে। আমি আর কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে ওর স্পর্শ উপভোগ করছিলাম। কারন এখন কিছু বললে ওর হাতের স্পর্শ টাও হারাতে হবে।



– শুভ্র কাজ কমপ্লিট করে আমার কপালে হালকা একটা কিস♥ করে উঠে গেল। মন চাইছিল ওকে জড়িয়ে ধরে কান্না করি। কেন এমন করছো শুভ্র! আমাকেও কষ্ট দাও নিজেও কষ্ট পাও।

জান্নাত ঘুম থেকে জেগে উঠে কান্না করতেই শুভ্র ওকে নিয়ে বেলকুনিতে চলে গেল আর থাইটা বন্ধ করে দিল যাতে জান্নাতের কান্নার শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে না যায়।



– অনেকক্ষন নিশব্দে কাঁদলাম। শুভ্র জান্নাতকে আদর করছে বুকে জড়িয়ে। এই এক মেয়ে হইছে আমার। ও আমার জিবনে আসার পর থেকে শুভ্রের সমস্ত ভালবাসা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে নিজেই উপভোগ করছে। ইশ্ জান্নাতের জায়গায় যদি আমি থাকতাম! নিজের মেয়ে হলে কি হবে ওর প্রতি শুভ্রের অগাধ ভালবাসা দেখে খুব হিংসে হয়। আমি কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম জানিনা।



– পরদিন সকালে আমার পোড়া জায়গায় প্রচুর যন্ত্রনা করতে লাগল তাই শাড়ী না পড়ে থ্রী পিস পড়ে রুম থেকে বের হইলাম।



– কি ব্যাপার পরী শাড়ী না পড়ে এটা পড়ছো। তোমাকে শাড়িতে খুব সুন্দর লাগে……… (মা)


– শখে আর,,,,,,,,, শাড়ী বাদ দিয়ে এটা পড়েছি মা! আপনার ছেলে কাল যা করেছে সেটা মুখে আনার মত নয় কথা গুলো মনে মনেই বললাম।

আসলে কি মা! এগুলো পড়তে মন চাইল তাই পড়লাম আরকি!



– এভাবে আরও অনেক দিন কেটে গেল। আমি শুভ্রের কাছ থেকে ১০ হাত দুরে থাকি। থাকনা শুভ্র ওর মত করে। আমাকে চায় না,,,,,,, না চাক ভাল আছিতো। কাছে কাছে থাকে তো। জানিনা তার কবে রাগ ভাঙ্গবে।


– শুভ্র অফিসে কাজ করা কমে দিয়ে বেশি ভাগ কাজ বাসায় থেকেই করে আর মেয়ে কে সময় দেয়। শুভ্র বাহির থেকে আসলে আর জান্নাতকে কোলে রাখা যায় না। তার বাবাকে চাই। শুভ্রকে চেঞ্জ অবদি করতে দেয় না। শুভ্রর কোলে ঝাপিয়ে পড়ে। এটাই শুভ্রের সব থেকে শান্তি লাগে। শুভ্রকে অদ্ভুত ভালবাসায় সিক্ত করে দেয়।

শুভ্র একদিন জান্নাতকে ওর বুকে রেখে আদর করছিল। এমন সময় প্রথম বাবা বলে ডেকে ওঠে জান্নাত শুভ্রকে। আর সেটা বার বার বলে। শুভ্র সেদিন প্রচুর কান্না করছিল নিশব্দে। মনে হয় ও পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষ।

শুভ্র জান্নাতের সাথে এত্ত কথা বলে যে জান্নাত আগে বাবা ডাকটাই শিখে। আমিতো অবাক। পেটে রাখলাম আমি, জন্ম দিলাম আমি আর আমাকে ছেড়ে বাবা ডাক আগে শিখে গেল?
জায়গা আমার, বড় করলাম আমি,পরিচর্যাকারী আমি আর যে গাছ রোপন করেছে তার পুরো গাছটাই হয়ে গেল! হায় কপাল কি অদ্ভুদ নিয়ম পৃথিবীর।



– রাতে আমি সব কাজ কমপ্লিট করে রুমে এসে দেখি শুভ্র বেডে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে আর জান্নাত শুভ্রর পিঠে উঠে ওর গলা ধরে বাবা বাবা করে ডাকছে।


– বা….বা,,,,,,,,,,, বা,,,বা

– জ্বী,,,,, মা!

– বাবা বাবা বলে জান্নাত শুভ্রর সাথে খেলাতে ব্যস্ত

– শুভ্রও কাজ করছে আর ওর ডাকের সাড়া দিচ্ছে হেঁসে হেঁসে।



– মা! আসো আমার কাছে। বাবাকে কাজ করতে দাও বলে হাত বাড়ালাম জান্নাতের দিকে।


– ওমা! এ তো বাবা কে ছাড়া আমার কাছে
কিছুতেই আসবেনা!


– শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে অন্য দিকে মুখ করে আছে।


– মেজাজ টা আমার খারাপ হয়ে গেল। বজ্জাত মেয়ে দুদু খাবিনা! তখন আসিস মজা বুঝাবো।
আমার কাছে না এসে তোর বাবার টা খাস বলেই রাগে সোফায় গিয়ে বসে পড়লাম।


– পরীর কথা শুনে শুভ্র হাঁসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারছেনা। এটা কি ধরনের কথা। একে আর শুভ্র কোন দিন মানুষ করতে পারবেনা। সেটা শুভ্র ভাল করেই বুৃঝে গেছে।

শুভ্র জান্নাত কে ফ্লোরে নেমে দিয়ে বলল,,,,,, মা! তোমার আম্মুর কাছে যাও। কারন তোমার আম্মু যেটা দিতে পারবে সেটা আমি হাজার তপস্যা করলেও দিতে পারবোনা। তাই আপাতত ওখানেই যাও।


– কি বাবা ভক্ত মেয়েরে। বাবা বলতে দেরি মেয়ে আসতে দেরি করে নি। আমার কাছে আসতেই ওকে কোলে তুলে নিয়ে বেলকুনিতে চলে গেলাম।


– ঐ তোর বাবাও আমাকে শান্তি দেয় না তুই ও ওর সাথে এক হইছিস! পাটি শুরু করেছিস? তোদের বাবা মেয়ের ভিমরতি ছুটিয়ে দিব।


– কে কার কথা শোনে ওর এখন খাবার চাই। বুকে মুখ ঘষছে তাই কথা না বাড়িয়ে ওকে ফিডিং করাতে শুরু করলাম। মা হওয়ার স্বাধ একটা অন্য রকম। পৃথিবী টা অনেক সুন্দর। “” আল্লাহ্”” মানুষের শান্তির জন্য কত রকম ব্যবস্হা করেছে। তার ভিতর মা হওয়ার একটা ব্যবস্থা।



– মেয়েটা আমার ঘুমিয়ে পড়েছে অনেকক্ষন আগে তাই ওকে নিয়ে রুমে এসে শুভ্রর পাশে সুয়ে দিয়ে নিজে ড্রেস চেঞ্জ করে সোফায় গিয়ে সুয়ে পড়লাম। তারপর ঘুমিয়ে গেলাম।



– একদিন বাসায় বিকাশের বিয়ের কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ করে গেল বিকাশের বাবা। সামনে সপ্তাহে নাকি বিকাশের বিয়ে।


– কৌশিকদা বাহিরের কি যেন কাজে কয়েক দিনের জন্য গেছে তাই নিদ্রা আপু আমার রুমে এসে গল্প করছে অনেক রাত অবদি। বেচারা শুভ্র রুমে আসতেও পারছেনা। একটু ঘুমানোর জন্য। আমি সেটা দেখে নিদ্রা আপুকে নিয়ে ওনার রুমে চলে গেলাম আর শুভ্র রুমে ঢুকে গেল।



– জানো পরী! আমার বিয়ের আগে একটা মুসলিম ছেলেকে খুব ভাল লাগত। ওর নাম আরাফাত ছিল। কিন্তু ও আমাকে একদম পাত্তা দিত না আমি হিন্দু বলে। অনেক ঘুর ঘুর করছি কিন্তু লাভ হয়নি। তারপর থেকে এই মুসলিম জাতি টাকে আমার একদম পছন্দ না। তাই তোমাকে পছন্দ করতাম না আগে।



– কেন আপু! কৌশিকদা কে পেয়ে খুশি নও তুমি!


– না পরী! কৌশিক কে পেয়ে আমি খুব খুশি। আমার অনেক ভাগ্য ভাল দেখে ওর মত বর কে পেয়েছি। শুধু একটাই আকাঙ্খা কবে ওকে একটা সন্তান দিতে পারব তোমার মত যেমন তুমি শুভ্রকে দিছো।


– টেনশন কর না আপু ইনশাল্লাহ্ খুব শিঘ্রই হবে দেখ।


– তোমার কথাই যেন ঠিক হয়। আচ্ছা পরী! শুভ্র কি তোমার সাথে এখনও স্বাভাবিক না?


– কি আর বলব আমি। মাথা নিচু করে চুপ করে আছি।


– নিদ্রা সব বুঝতে পেরে বলল আমি কিছু শিখে দিচ্ছি তোমায়। সেগুলো শুভ্রের উপর প্রয়োগ করে দেখ আশা করি কাজে দিবে।


– আমি মনযোগ দিয়ে সব শুনলাম আর হাঁসলাম। মুরব্বীদের কথা শুনতে হয় পরী। নিজেই নিজেকে কথা গুলো বললাম।
আজ থেকেই মাঠে নেমে যাব। দারাও শুভ্র এবার তোমার কি হালটাই না করি। আমাকে ইগ্নোর করা!



– আমি রুমে এসে দেখি শুভ্র এখনো ঘুমাইনি। ফেসবুক চালাচ্ছে মেবি।
আমি ঘুমানোর আগে ওর সামনেই ড্রেস চেঞ্জ করলাম।


– শুভ্র আড় চোখে পরীকে দেখছে। পেটের অপারেশনের দাগটা থাকার জন্য আরও আকৃষ্ট করছে শুভ্রকে। কিন্তু সব বুঝে ফেলে শুভ্র তাই পাশ ফিরে সুয়ে পড়ে।


– উমহ্,,,,,, প্লান ফল্প। মনে হচ্ছে নিজের চুল নিজে ছিড়ি বলে সব ড্রেস নিচে ছুড়ে মারলাম। থম থম করে বিছানায় গিয়ে সুয়ে পড়লাম।


– শুভ্র আবার পাশ ফিরে পরীকে দেখছে আর মুচকি মেরে হেঁসেই যাচ্ছে। শুভ্রকে বোকা বানানো! তোমার মত পরীর হাজার বার জন্ম নিতে হবে। তবুও শুভ্রকে ঠকানো তোমার পক্ষে সম্ভব না।



– পরের দিন শুভ্র ওর মার রুমে গিয়ে বলল,,,,,,মা! আমি বা পরী আমরা কেউ বিয়েতে যাচ্ছিনা। কারন ঐ বিকাশ কুলাঙ্গারের মুখও দেখতে ইচ্ছা করে না। সে দিন ওকে মেরেই ফেলতাম। অসভ্য ছেলে কোথাকার।


– অনিতা সব বুঝতে পেরে বলল,,,,,, তোরা যাবিনা কিন্তু লোকে অনেকে অনেক কথা বলবে যে!


– মা! প্লিজ এই অনুরোধ করো না অন্তত। এটা রাখতে পারবনা মা। তুমি সব জেনে কেন অনুরোধ করছো। কিছু একটা বলে দিও। আমি ব্যাস্ত আছি এমন কিছু একটা।



– অনিতা কিছুক্ষন ভেবে বলল আচ্ছা। কিন্তু তুই অফিসে থাকবি আর পরী বাসায় একা থাকবে!
বাসা ভর্তি কাজের মানুষ তাও আবার পুরুষ মানুষ।


– মা! টেনশন নিওনা। ওদের ব্যবস্থা আমি করবো নি। তোমরা যাচ্ছো কবে?


– আজতো যাওয়ার কথা। দেখি তোর বাবা আর কৌশিক কে বলি ওরা ফ্রী আছে নাকি।


– আচ্ছা মা! বলেই শুভ্র রুম থেকে বের হয়ে এল।


– শুভ্র অফিসে চলে গেছে। আর আমি রুম গোছাচ্ছিলাম। অর্পিতা জান্নাত কে নিয়ে রুমে ঢুকলো।


– বউদি! তোমরা নাকি বিয়েতে যাবা না?


– কে বলল অর্পিতা?


– মা বলল,,,,,, দাদার নাকি অফিসে কাজ আছে তাই যেতে পারবেনা। তুমি গেলে কত্ত মজা হত।


– নিশ্টয় তোমার দাদার অফিসে কাজ আছে বলেই হয়ত যেতে পারছেনা অর্পিতা। আর তাছাড়া তোমার দাদার সাথে এ ব্যাপারে কথাও হয়নি আমার।

তবে আমি মনে মনে অনেক খুশি হলাম। শুভ্র ঠিক সিন্ধান্তই নিছে।


– অর্পিতার সাথে দিদুনের রুমে গেলাম। দিদুন বসে চা আর পাকোড়া খাচ্ছিল। আমি গিয়ে বসে দাদুর কোলে জান্নাত কে দিয়ে বললাম একা একা খেতে নেই বিমলা সুন্দরী,,,,,, আশে পাশেও একটু তাকাতে হয় বলেই চায়ের কাপে একটা চুমুক দিলাম।

দাদুতো আমার কান্ড দেখে হাঁসতে হাঁসতে বলল,,,,,,,,, জান্নাত তোমার মা কোনদিন বড় আর হবে না।


– সব এঁঠো করে দিলি তো? তুই এমন কেন রে……. সবসময় আমাকে জ্বালাবি!


– আমিতো এঁঠো করিনি বরং আমিই তোমার এঁঠো খেলাম। যাতে তোমার প্রতি আমার ভালবাসা আরও জন্মে। বিমলা সুন্দরীকে ভালবাসতে বড্ড মন চায় গো।


– বিমলা পরীর হাত থেকে ছো মেরে চায়ের কাপটা নিয়ে কাপে চুমুক দিয়ে বলল তোকেও আমার ভালবাসতে বড্ড মন চায়রে পরী।


– কথাটা শুনে আমার চোখে পানি এসে গেল। শুভ্রটা আমাকে জিবনে কত কি দিছে আর আমি শুধু আঘাতই দিয়ে গেছি ওকে।



– বিকেলের দিকে সবাই চলে গেল। বাবা জান্নাত কে বুকে নিয়ে অনেকক্ষন আদর করে আমাকে দিয়ে চলে যায়। দাদু যে এত্ত ভালবাসে কোন নাতনীকে আমার জিবনে দেখিনি।

সবাই চলে গেছে। বাসায় কেউ নেই। কোন কাজের লোকও রাখার নির্দেশ দেয়নি শুভ্র। শুধুু সকালে কয়েকজন এসে সব কাজ করে চলে যাবে। সেটা শুভ্র অফিস যাওয়ার আগ অবদি ।

আহ্ কি আমার সেফটিরে । দেখলেই গা জ্বলে। বউয়ের খোঁজ নেয়না কিন্তু সেফটির দিকে খুব মনযোগ।



– সন্ধার পর নামায পড়ে জান্নাত কে নিয়ে কিচেনে গিয়ে রান্না করতে লাগলাম। আমি ওকে রেখে সবজি কাটছিলাম আর ও খেলা করছিল ওর মত। সবজি কাটতে এতই মগ্ন ছিলাম যে মেয়ের কথা ভুলেই গেছি।

বাবুর শব্দ না পেয়ে আমি সব রেখে বাহিরে এসে দেখি,,,,,,আমার মেয়ে হাটছে।

“” আল্লাহ্”” আমার মেয়ে হাটতে শিখে গেছে। আমি দৌড়ে গিয়ে একটু দুরে অবস্থান করে ২ হাত বাড়িয়ে বললাম,,,,,,,,,,, মা! এদিকে আসতো?

কারন মাঝে মাঝে শুভ্র এই রকম করে। শুভ্র প্রচুর জান্নাতে সাথে কথা বলে আর এভাবে হাটা শিখাই তাই হয়ত এত্ত দ্রুত সব রপ্ত করে নিয়েছে মেয়েটা। যাহোক বাবার মত হয়ে বাঁচছি। আমার মত হলে কত যে পিঠে মাইর পড়ত জান্নাতের সেটা “”আল্লাহ”” ভাল জানত।



– জান্নাত হাঁসতে হাঁসতে আমার দিকে ওর ছোট ছোট পায়ে এগিয়ে আসতেই পড়ে গেল। তবুও আমি ওভাবেই হাত বাড়িয়ে থাকলাম। ও আবার আস্তে আস্তে উঠে অনেকক্ষন পর আমার কাছে এসে জড়িয়ে ধরল। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে কয়েকটা কিস♥ করে বললাম আজ কে বাবাকে সারপ্রাইজ দিবা কেমন।


– জান্নাত হাটছে আর খেলা করছে। আমি কাজ প্রায় সব কমপ্লিট করে ফেলছি। এমন সময় শুভ্র বাসায় আসল দেন ওর রুমে চলে গেল।


– পরী! বলেই কয়েকটা ডাক দিল শুভ্র। আমি তো ভাল করেই জানি কেন ডাকছে শুভ্র আমাকে।

বেশ তবুও অনেক দিন পর নিজের নাম শুনতে পেলাম শুভ্রের মুখ থেকে।


– আমি নিচ থেকেই বললাম,,,,,,, স্যার! কিছু বলবেন? আমার এত্ত সময় নেই যথেষ্ট কাজ আমার জন্য অপেক্ষায় আছে………


– শুভ্র রুম থেকে বের হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,আমার এত্ত সখ ওঠেনি তোমাকে বার বার ডাকা। আর এভাবে স্যার স্যার বলে কেন কথা বলছো!
তুমি কি আমার অফিসের কর্মচারী নাকি? যে স্যার স্যার বলছো।


– কিছু বলবেন? বলে বিরক্তি ভাবে শুভ্রর দিকে পরী ইশারা করল।


– জান্নাত কই?


– যেখান কার জিনিস সেখানে আছে খুজে দেখতে হয় বলেই চলে আসলাম।


– শুভ্র তো অবাক এধরনের আচরন দেখে। ওর সাহস হয় কি করে এভাবে কথা বলার। শুভ্রর প্রচন্ড খারাপ লাগল। বাসায় কেউ নেই দেখে সাহস দেখাচ্ছে।


– আমি জান্নাতকে কোলে নিয়ে আমাদের রুমের দরজার সামনে রেখে আসলাম। ও যে বাবা পাগল এমনি চলে যাবে শুভ্রর কাছে।


– শুভ্র কেবল শার্টটের বোতাম খুলে ফেলে এমন সময় জান্নাত বা…..বা বাবা করে ডেকে ওঠে। শুভ্র পিছন দিকে তাকিয়ে দেখে ওর মেয়েটা হাটছে।

শুভ্র ওখানেই ফ্লোরে বসে পড়ল আর হাত ২টা বাড়িয়ে দিল ওর মেয়ের দিকে। মেয়েটাও আধা দৌড়ে শুভ্রের কাছে এগিয়ে যেতেই শুভ্র ওকে ধরে ফেলে। অজান্তেই শুভ্রর চোখ দিয়ে সুখের জল গড়িয়ে পড়ল।

শুভ্র জান্নাতকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,, আমার বাবাটা তো দেখছি হাটতে শিখছে বলেই কয়েকটা কিস♥ করে। শুভ্র ভাল করেই বুঝতে পারল এটা পরীর সারপ্রাইজ ছিল বলে ওমন ব্যবহার করছিল। শুভ্রর মনটা নিমিষেই ভাল হয়ে গেল।

জান্নাত শুভ্রর জন্য পৃথিবীর সব থেকে বড় নেয়ামত। অনেকক্ষন বুকে নিয়ে শুভ্র আদর করল ওকে।

জান্নাতকে বেডে রেখে চেঞ্জ করে ওয়াসরুমে গেল। গোসল সেরে এসে দেখে ওর মেয়ে শুভ্রের ফোন নিয়ে খেলা করছে। জান্নাত এতই শান্ত একটা মেয়ে যে কান্নার আওয়াজ খুবই কম শোনা যায় ওর। পুরোই শুভ্রর ডুবলিকেট জান্নাত।



– আমি সব কাজ কমপ্লিট করে সব ডাইনিং টেবিলে গুছিয়ে রেখে রুমে এসে গোসল দিয়ে জান্নাত কে নিয়ে খাবার খাওয়ানোর জন্য নিচে আনতেই শুভ্র আমার কাছ থেকে ওকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে চলে গেল। আমার মেয়ে আর আমার থেকেই কেড়ে নেয়! বলে ওখানে না থেকে চলে আসলাম। যে যেমন থাকতে চায় তাকে তেমন থাকতে দেওয়া উচিত।



– ছাদে এসে দাড়িয়ে আছি। ঝির ঝির ঠান্ডা বাতাস বইছে। বেশ ভাল লাগছে।ভেজা চুল গুলো ছেড়ে দিলাম। অনেকক্ষন দাড়িয়ে থেকে আকাশের চাঁদ দেখছি। হঠাৎ একটা ঠান্ডা বাতাস আমাকে ছুয়ে যায়। আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে যাই। চুল গুলো বেঁধে জলদি নেমে আসি ছাদ থেকে।

– রাত ১১ অবদি ছাদে ছিলাম! “”আল্লাহ্”” আমিতো বুঝতেই পারিনি এতক্ষন ছাঁদে ছিলাম!
রুমে এসে দেখি জান্নাত ঘুমিয়ে পড়ছে আর শুভ্র কাজ করছে।

নিচে এসে দেখি ওদের খাওয়া কমপ্লিট করেছে। ভালয় হয়েছে। আজ শুভ্রর অখাদ্য খাবার গুলো প্লেটে নিয়ে এক লোকমা মুখে দিতেই গা গুলিয়ে আসলো।

ওয়াক্,,,,,,,,,,, শুভ্র এগুলো খায় কেমনে! তবুও মুখে পুরে দিলাম খাবার। নাহ্ এটা খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না বলেই কাঁচা মরিচ চাবাতে লাগলাম প্রতিটা গ্রাসে।



-শুভ্র উপর থেকে পরীর খাওয়া দেখছে আর হাঁসছে।
এমন সময় পরী উঠে বেসিনে গিয়ে বমি করে দেয়। “”আল্লাহ্”” গো এই খাবার কোন মানুষ খায়!গরু- ছাগল খায় বলে পরী আর না খেয়ে সব গুছাতে লাগল।
শুভ্র রুমে এসে শুয়ে পড়ল।




– আমি সব ঘুছিয়ে রেখে কয়েকটা পিয়াজু আর পানি খেয়ে এসে সুয়ে পড়লাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম জানিনা।



– মনে হল ঠান্ডা কিছু আমাকে ছুয়ে দিচ্ছে। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল এবং চট করে উঠে পড়লাম।

শুভ্র! নাহ্ ওতো ঘুমাচ্ছে তাহলে এমন কেন হল। মনে হল কেউ আমার পাশে বসে ছিল। হয়ত স্বপ্ন দেখছিলাম ভেবে কথাটা বাদ দিয়ে শুভ্রর দিকে তাকালাম।

ড্রিম লাইটে ঘুমন্ত শুভ্রকে দেখতে অপূর্ব লাগছে।

আমি উঠে ওর কাছে গিয়ে বসলাম। এত্ত রাগ- অভিমান কেন তোমার শুভ্র? হঠাৎ নিদ্রা আপুর কথা মনে পরে গেল। হুম এটাই সুযোগ। শুভ্র দাড়াও না চান্দু তোমার হাল কি করি বলেই ওর গায়ে হাত দিলাম। কিছু প্রসেস করতেই শুভ্র ঝিকে উঠে চোখ খুলে পরীকে এক টানে ওর কাছ থেকে ছিটকে ফেলে দিয়ে উঠে পড়ল।



– পরী! কি করছো এসব?
তুমি জানোনা! এগুলো করা আমার একদম পছন্দ না। তবুও কাজটা কেন করলে বলে শুভ্র জোরে একটা ধমক দিল পরীকে।



– কি করছি বুঝতে পারছোনা! দাড়াও ভাল করে বুঝিয়ে দিচ্ছি বলে পরী শুভ্রের দিকে পা বাড়াল।



– তুমি আবার আমার কাছে ঘেষছো! আমি বলেছিনা আমাকে চটাবেনা। তোমার কপালে তাহলে দুঃখ আছে। আমার রাগ চরম সীমায় উঠাও না পরী! তোমাকে আঘাত করতে ২য় বার ভাববোনা কিন্তু আমি।

তুমি কাছে আসলে আমার কষ্টের ক্ষত গুলো নতুন করে জেগে ওঠে। তাই আমার কাছ থেকে দুরে থাকাই তোমার জন্য ভাল। অন্য কেউ হলে এতদিন তাকে পৃথিবীতে রাখতাম না। আমার বাচ্চার মা তুমি তাই তোমাকে কিছু বলিনা। তাই বলে ভেবনা সবসময় নিজেকে কন্টোল করে রাখতে পারব।



– ওর কথা শুনে প্রচন্ড মন খারাপ হয়ে গেল আমার। ওর বাচ্চার মা বলে আমাকে ওর কাছে রাখছে! আমার কোন মূল্য নাই ওর কাছে? নিজের প্রতি প্রচন্ড রাগ হতে লাগল।

আমি কার জন্য এখানে আছি আর তার এরকম কথা! যে আমাকে চায়না আমি তার কাছে কেন বার বার যাই বেহায়ার মত। লজ্জা হওয়া উচিত আমার। এবার জেদ আমাকে ঘিরে বসল।

আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম,,,,,,, হয় আমাকে ছেড়ে দাও না হয় নিজের সাথে মানিয়ে নাও। তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে সেটাও বল আমি তোমার বা তোমার সন্তানের উপর কোন দাবি করবনা।

এক কাপড়ে আমি এই বাসা আর তোমার জিবন থেকে নিশব্দে চলে যাব। কোন অভিযোগ করবনা। আমার আর ভাল লাগছেনা এসব। হয়ত বাঁচতে দাও না হয় ছেড়ে দাও। তবুও এভাবে রেখ না আমায়।



– ছেড়ে দেওয়ার কথা শুনে শুভ্র এতটাই রেগে যায় যে ওর এতদিনের পুরো আক্রোশ এক সাথে পরীর উপর গিয়ে পড়ল।

পরীকে খাটের উপর ফেলে দিয়ে রেগে চিৎকার করে বলল আমাকে,,,,,,! এই শুভ্রকে ছেড়ে যাওয়ার খুব শখ তাইনা তোর?

আগের বার কাছে ছিলাম না বলে সেই সুযোগ নিয়ে চলে গেছিস। এবার গিয়ে দেখাস। তোকে এভাবেই থাকতে হবে আমার মর্জিতে। যতটা কষ্ট দিছিস আমাকে সব কিছু ফেরত দেওয়া এখনও অনেক বাঁকি আছে পরী!

কষ্টের স্বাধ যে তোকে আরও পেতে হবে। কেবল তো শুরু। বার বার নিষেধ করা শর্তেও আমাকে আঘাত করে খুব মজা পাস তাই না। ছেড়ে যাবি তো! দেখা ছেড়ে গিয়ে বলে একটানে শাড়ী খুলে ফেলে শুভ।

আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলা তোর সখ আজ মিটাচ্ছি বলেই পরীর উপর attack করে নিকৃষ্ট ভাবে। পরী প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। কারন এই শুভ্রকে ও কখনও দেখেনি। মনে হচ্ছে অন্য কেউ।


– শুভ্র শুভ্র প্লিজ ছেড়ে দাও আমাকে। আমি কখনও এমন কাজ বা কথা বলবনা। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে বলেই কেঁদে উঠল পরী।



পরীর আর্তচিৎকারে জান্নাত অবদি জেগে উঠে কান্না করে উঠল,,,,, কিন্তু শুভ্রের কানে কারো আর্তনাদ জায়গা পেল না। জান্নাত দোলনায় সুয়ে কেঁদেই চলছে।

পরীকে আজ আর আস্ত রাখবেনা শুভ্র। ও পাইছেটা কি! আমাকে,,,,, এই শুভ্রকে ইনসাল্ট আর কথা শুনায় এভাবে। ওর এত্ত সাহস কি করে হয়। আজ ওর সব ভিমরতি ছুটিয়ে দিব। সব জায়গায় পাগলামি! সারা জিবন মনে রাখবে এই রাতের কথা।



– ক্লান্ত শরীর নিয়ে শুভ্র উঠে ওয়াসরুমে চলে গেল। আর পরী ওভাবেই পড়ে থেকে ফিকরে কান্না করে যাচ্ছে।

চলবে——

বিদ্রঃ গল্পটা যেমনই হোকনা কেন শুভ্রকে কেউ বাড কমেন্ট করবেন না। কারন কমেন্ট গুলো আমার উপর প্রভাব পরে। লিখতে সমস্যা হয়। তাই আমার মত আমাকে লিখতে দেন প্লিজ।
সব পাঠকদের লেখিকার আত্তার ভিতর থেকে ভালবাসা♥ আর শুভেচ্ছা♥ রইল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here