#আয়নামতী
#পর্ব_৯
#পুষ্পিতা_প্রিমা
বাড়ির মুঠোফোনটাই ফোন আসলো শেখ বাড়ি থেকে। আয়না আয়শা বেগমকে ফোনটা দিয়ে বলল
‘ আম্মা ভাবির ফোন এসেছে৷
আয়শা বেগম ফোন কেড়ে নিলেন। কানে দিতেই নামিরার গলার আওয়াজ ভেসে এল।
‘ আসসালামু আলাইকুম আম্মা। কেমন আছেন?
আয়শা বেগম চটপট সালাম নিলেন। কুশলাদি বিনিময় করে বললেন
‘ অনেকদিন তো হলো। কবে আসবা বউ?
নামিরা বলল
‘ আপনার ছেলেকে আসতে বলেন না। চলে যাব।
আয়শা বেগম বলল
‘ আচ্ছা আজ ও আসুক বাড়িতে। আমি বলব তোমাকে গিয়ে নিয়ে আসতে।
নামিরা বলল
‘ আচ্ছা।
আয়না ফোন কেড়ে নিল। নামিরাকে বলল
‘ ভাবি ভাইয়ার তো অনেক কাজ। রাতে ফিরবে। তোমাকে তো তোমার বাবা রাতে ছাড়বেন না। ভাইয়া বলেছে আমাকে যেতে।
নামিরা চুপ করে রইলো। ভাবলো, আয়ান এখানে আসলেই অপমানিত হয়, তার বদলে আয়না আসুক।
নামিরা বলে দিল
‘ আচ্ছা তুমি আসো। আসতে পারবে?
আয়না বলল
‘ হ্যা হ্যা পারব। আমি বেলা আড়াইটার দিকে যাব। ঠিক আছে?
নামিরা বলল
‘ আচ্ছা।
আজহার সাহেব বললেন
‘ ওই বাড়িতে তো খালি হাতে যেতে পারবি না মা।
আয়না বলল
‘ চিন্তা করো না। আমি ভাইয়ার কাছ থেকে টাকা নিয়ে কিছু কিনে নেব।
আজহার সাহেব বললেন
‘ আচ্ছা।
আয়না সরিষার তেল গরম করে আনলো। পাটি বিছিয়ে বসলো আজহার সাহেবের পায়ের কাছে। পা দুটো তার কোলে নিয়ে তেল মালিশ করে দিতে দিতে বলল
‘ আব্বা কবে দাঁড়াবা তুমি? মাঝেমাঝে আমার নিজেকে খুব অসহায় লাগে। আমাদের তো দুবেলা খাওয়ার জন্য কখনো চিন্তা করতে হয়নি। আম্মার পাতিল থেকে মাছ মাংস তুমি খালি হতে দাওনি। হ্যা আমাদের টাকা কম কিন্তু তাতে কি? ভালোই তো ছিলাম। কিন্তু একপলকে সব কেমন যেন শেষ হয়ে গেল। তুমি দাঁড়িয়ে যাও আব্বা। আমার ভালো লাগেনা।
আজহার সাহেব মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। বললেন
‘ এগুলো উপরওয়ালার পরীক্ষা। ধৈর্য হারাস না মা । সব ঠিক হয়ে যাবে। বাবু ব্যবসাটা দাঁড় করাক,তারপর দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। ঋণগুলো শোধ করে তোকে একটা ভালো পাত্রে বিয়ে দেব আমি৷ যে তোকে বুঝবে, ভালো রাখবে।
আয়না চোখ সরু করলো। তেজ গলায় বলল
‘ আবার বিয়ে?
আজহার সাহেব হেসে ফেললেন। বললেন
‘ একটা মানুষের সাফল্য বড় কিছু নয়, একটা মানুষের বড় সাফল্য সেখানে যার একটা বুঝার মানুষ আছে। একটা আপন মানুষ আছে। যে শতপ্রতিকূলতায় ও তোর হাত ছাড়বে না। তোকে ছাড়বে না।
আয়না দাঁড়িয়ে পড়লো। বলল
‘ আব্বা আমি এ কথায় বিশ্বাসী না। আপন মানুষ বলতে কিচ্ছু হয় না। আর হলেও আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।
বলেই চলে গেল আয়না। আজহার সাহেব মেয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন।
বিকেলে নামিরাদের বাসায় রিকশা নিয়ে গেল আয়না। আপেল আর কমলা কিনে নিয়েছে সে। নামিরা তাকে দেখে দৌড়ে এল। ঝাপটে জড়িয়ে ধরে বলল
‘ কেমন আছ?
আয়না বলল
‘ আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছ?
নামিরা বলল
‘ আমি ও আলহামদুলিল্লাহ। আমি রেডি হয়ে আছি। শুধু বোরকাটা পড়ে নেব। ভেতরে আসো।
আয়না বাড়িটাতে পা রাখলো। বারান্দার ঘরটা বিশাল বড়। সে সোফায় বসলো গিয়ে। নাজমা বেগম এসে বললেন
‘ ওমা তুমি এসেছ? আহা কি মায়ায় ভরা চেহারাটা।
আয়না সালাম দিল। নাজমা বেগম সালাম নিয়ে বললেন
‘ এই সাহসী মেয়েটাকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল আমার। যে মেয়ে বরপক্ষকে তাড়িয়ে দিতে পারে সে অনেক কিছু পারে। অনেক বড় হও।
আয়না হাসলো। বলল
‘ ধন্যবাদ আন্টি।
নাজমা বেগম বলল
‘ বসো। আমি নাশতা আনছি।
আয়না বলল
‘ নাহ কিছু খাব না। একটু সাদা পানি হলেই চলবে।
নাজমা বেগম নাশতা পানি আনলো তারপর ও। কিন্তু আয়না একটা ও মুখে নিল না। নামিরা তা দেখে নাজমা বেগমকে বলল
‘ আম্মা থাক না। ওরা ভাইবোন কোথাও গেলে কিছু খেতে চায় না।
আয়না চুপ করে রইলো। তারা বেরোনোর আগে নাওয়াজ শেখ আসলেন। আয়না লম্বা সালাম দিল। নাওয়াজ শেখ সালাম নিয়ে সোফায় বসলো। আয়নাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে বলল
‘ কেন এসেছ মেয়ে?
‘ কাজে।
নাওয়াজ শেখ পরে ভেবে বললেন,
‘ তোমার মা বাবা কি তোমার জন্য পাত্র মিলাতে পারছে না?
আয়না চোখ তুলে চাইলো। জবাব দিল না। নাওয়াজ শেখ আবার বললেন
‘ আমাকে বলতে পারতো। ওই বাজারের মোড়ে বড় দোকানের মালিক করিম মিয়া আছে না। বউ মারা গিয়েছে কয়েক মাস হলো। এখন বিয়ে করার জন্য একটা মেয়ে খুঁজছে। তোমার ভাইকে বলে দেখব নাকি?
আয়না মৃদু হাসলো। বলল
‘ পণের টাকা আর বিয়ের সমস্ত খরচ যদি দেন তাহলে বলেন।
খুকখুক করে কেশে উঠলো নাওয়াজ শেখ।
আয়না বলল
‘ আমার মা বাবার ও তো অত চিন্তা নেই আমাকে নিয়ে, আপনাদের চোখে কেন ঘুম নেই? আপনারা কি টাকাপয়সা খরচা করে আমাকে বিয়ে দেবেন নাকি?
নাওয়াজ শেখ আর কোনোকিছু বলার সুযোগ ও পেলেন না। আয়না দাঁড়িয়ে পড়লো। নামিরার ঘরে চলে গেল। নামিরা বলল
‘বাবার সাথে কথা বলছিলে?
আয়না বলল
‘ হ্যা। তাড়াতাড়ি করো। সন্ধ্যা হয়ে গেলে আম্মা বকবে।
বোরকা পড়ে নামিরাকে আসতে দেখে নাওয়াজ শেখ বলে উঠলেন
‘ কোথায় যাচ্ছ তুমি নামিরা?
নাজমা বেগম বলল
‘ ওকে নিয়ে যেতে এসেছে ওর ননদ। জামাইয়ের নাকি কাজের চাপ বেশি।
নাওয়াজ শেখ বলল
‘ নামিরা যেতে পারবে না। ও যাবে না ওই পাড়ায়।
আয়না বলল
‘ যাবে। আমি নিয়ে যেতে এসেছি।
নাওয়াজ শেখ বলল
‘ নাহ যাবে না। যাবে না মানে, যাবে না। নামিরা ঘরে যাও তুমি। আর এই মেয়ে তুমি যাও আমার বাড়ি থেকে। আমার মেয়ে নামিরা, আর ওর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ও আমার।
আয়না ভুরু কুঁচকে চাইলো। বলল
‘ আপনি ভুল করছেন।
নাওয়াজ শেখ ধমকে বললেন
‘ চুপ। ছোটলোকের আবার বড় বড় কথা কিসের। গলা বড় করে কথা বলো কার সাথে? আমাদের কি ওই চৌধুরী পেয়েছ? যাও আমার বাড়ি থেকে।
নামিরা ঝরঝরে কেঁদে দিল। বলল
‘ বাবা আমি ,,
নাওয়াজ শেখ গর্জে বললেন
‘ এই মেয়ে তুমি যাবে কি যাবে না? নাকি ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব? খবরদার আর কখনো আসবে না এই বাড়িতে। তোমার ভাইকে ও আসতে বলবে না। যাও। বেরোও বলছি। এই দাড়োয়ান!
আয়না নিজ থেকেই বের হয়ে গেল। বের হওয়ার আগে বলে গেল,
‘ ভালো হবে না আপনার। আপনার অহংকার চূর্ণবিচূর্ণ হোক৷ ধ্বংস হোক আপনার নষ্ট মানসিকতা।
নামিরা পিছু দৌড়ে গেল। নাওয়াজ শেখ আটকে ফেলল। হাত শক্ত করে ধরে রেখে বলল
‘ যদি যেতেই হয় আমার বুকে ছুরি চালিয়েই যাও। তারপরও আমার আর অপমান করো না ওই পাড়ায় গিয়ে। তোমাকে ভালো থাকার সুযোগ দিয়েছিলাম কিন্তু তোমার কি হাল হয়েছে তা দেখো।
নামিরা মুখ ঢাকলো হাত দিয়ে। এলোমেলো সুরে কেঁদে দিয়ে বলল
‘ মা বাবাকে কিছু বলো না। বলো না মা। আয়না তো চলে যাচ্ছে।
নাজমা বেগম ভীত চোখে চেয়ে রইলেন স্বামী নামক মানুষটিকে। এ কেমন মানুষ? একেক সময় কেন একেক রূপ তার?
নাওয়াজ শেখ বললেন
‘ এই বাড়ির বাইরে পা দিলেই তোমার পা কেটে ফেলব আমি। বাইরে লোক রাখব আমি। খবরদার ওই ছেলেটার নাম ও মুখে আনবেন না। নিজেকে আয়নায় দেখো। কি হাল করেছ নিজের? আমার মেয়ে তুমি?
নামিরা দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেল। জানালা খুলে দেখলো আয়না চলে যাচ্ছে রিকশা করে। নামিরা মাথা ঠুকালো দেওয়ালে।
বাড়ি ফিরে আয়না নিজের ঘরে চলে গেল। আয়শা বেগম দৌড়ে আসলেন। বললেন
‘ ওমা বউ কই?
আয়না বলল
‘ আনিনি আম্মা৷ ভাবির বাবা আসতে দিচ্ছে না। ভাইয়াকে ও না যেতে বারণ করেছে। আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
আয়শা বেগম কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বললেন
‘ আল্লাহ আবার কোন নতুন সমস্যা দিলা?
আয়না উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়। আজহার সাহেব এসে বললেন
‘ কি হয়েছে? বউমা কোথায়?
আয়শা বেগম বললেন
‘ বউরে আসতে দিতেছে না ওর বাপ। এখন কি হবে? বউরে কি আবার বিয়া দিবার কথা ভাবতেছে নাকি? আল্লাহ!
আয়না উঠে বসে বলল
‘ কিসব উল্টাপাল্টা বলো আম্মা। এরকম হয় নাকি? তুমি জানো ভাবি কিভাবে কাঁদছিল?
ওনার বাবা পাগল। পাগল তাই কিছু বুঝতে পারছেনা। টাকা ওদের পাগল বানিয়ে ফেলেছে।
আয়শা বেগম কপালে হাত দিয়ে বসে রইলেন। ছেলে এসে এসব শুনলে তার মনের অবস্থাটা কেমন হবে?
______________
ফুল দিয়ে সাজানো জমকালো সাজানো গাড়িটা এসে থামলো চৌধুরী বাড়ির সামনে। শেরওয়ানী পড়া অনুরাগ গাড়ি থেকে নেমে এল। গাড়ির ভেতর বসা লাল টকটকে শাড়ি পড়া বধূ। শায়লা বেগম অনুরাগকে ডেকে বললেন
‘ দাদুভাই সুবাসিনী যে চলে এল! আমারে কি ভুইলা যাবা নাকি?
হাসলো অনুরাগ৷ বলল
‘ নাহ।
শায়লা বেগম বলল
‘ ভালো থাকো। সুখী হও ভাই ।
কুহেলীকে গাড়ি থেকে নামালো অনিমা। আনহিতা বললেন
‘ থামো থামো। নতুন বউ হেঁটে আসবে কেন? সোহাগ কোথায়? সোহাগ?
অনুরাগ আসলো। বলল
‘ কি হয়েছে মা?
আনহিতা বলল
‘ বউকে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে যাও।
অনুরাগ বলল
‘ আমি? কোলে? মা কুহেলী হাঁটতে জানে।
আনহিতা বলল
‘ হাঁটতে জানে তো কি হয়েছে? ও নতুন বউ না? নাও কোলে নাও।
অনুরাগের খালাম্মা বলল, আরেহ নিয়ে যাহ। বউরে কোলে চড়াতে সমস্যা কোথায়? কোলে তো নিবিই, আজ সবার সামনে একবার নে।
অনুরাগ বাধ্য হয়ে কোলে তুলে নিল। অনিমা বলল
‘ ভাই আমার ঘরে নিয়ে যাহ এখন। তোর ঘরে কাজ চলছে।
সবাই মিটিমিটি হাসলো। অনুরাগ অনিমার ঘরে কুহেলীকে নিয়ে এসে খাটে বসিয়ে দিল। বলল
‘ কুহেলী তোমাকে এরকম দেখতে আমার ভালো লাগছেনা। তাড়াতাড়ি এসব শাড়ি টাড়ি পাল্টে নাও। এসব গয়নাগাটি অসহ্য লাগছে।
কুহেলী মাথা নাড়ালো।
অনুরাগ চলে গেল। অনিমা এল। কুহেলীকে বলল
‘ কোনোকিছু লাগলে বলো কেমন? কোনো সমস্যা হলে ও বলো।
কুহেলী আবার মাথা নাড়ালো।
রাশেদের কাছে একটা ক্যামেরা থাকায় সে ভীষণ ব্যস্ত ছবি তুলতে। ছবিগুলো পরিষ্কার করাতে হবে। ভাই রাগিনকে ডেকে বলল
‘ অনু কোথায় রে? একটু ডেকে তো।
রাগিন ক্যামরাটা টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল
‘ ডেকে দিচ্ছি। অনুরাগ বোধহয় বিয়ে করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।
অনুরাগকে দেখা গেল বাগানের কাছেই। রাগিন তাকে ডেকে বলল
‘ অনুরাগ তোকে বড়ভাই ডাকছে। ভাইরে ভাই বাসরের আগে ক্লান্ত হলে চলবে?
অনুরাগ নাকমুখ কুঁচকে বলল
‘ কোথায় রাশেদ ভাই?
রাগিন বলল
‘ বারান্দায় আছে। যেতে বলছে।
অনুরাগ পা বাড়ালো। বারান্দায় চলে গেল।
রাশেদ অনুরাগকে দেখে বলল
‘ তোর বিয়ের জন্য ক্যামেরাটা বহুকষ্টে যোগাড় করেছি। এই দেখ মেহেদী রাত থেকে এখন অব্ধি আমার শান্তি মিলেনি। তবে আর যাইহোক তোর বিয়েটা যে হলো এটাই শান্তি লাগছে।
অনুরাগ চুপ করে রইলো। রাশেদ হেসে বলল
‘ আমি তো ভয়ে ছিলাম। আগের কনের মতে এই কনে ও না বিয়ে ভেঙে দেয়। কিন্তু দেখলাম নাহ, ওই মেয়েটার মতো সাহসী, স্পষ্টবাদী মেয়ে খুবই কম।
অনুরাগ বলল
‘ কেন ডেকেছিলে?
রাশেদ বলল
‘ এমনি। তোকে তো আজ সারাদিন পাইনি একটু কথা বলার জন্য। তাই।
অনুরাগ বলল
‘ ওহ। আচ্ছা আমি একটু আসি। কাজ আছে।
রাশেদ বলল
‘ কোথাও যাস না আবার। আজ বিয়ের রাত।
অনুরাগ বলল
‘ মনে আছে আমার।
______________
আয়ান রাতেই ফিরলো। ভেবেছে নামিরা ফিরেছে। তাই ঘরে ঢুকেই ডাকল
‘ মিরা?
কেউ টুঁশব্দ ও করলো না। আয়না গুটিগুটি পায়ে হেঁটে এল। ভাইয়ের সামনে এসে দাঁড়ালো মলিন মুখে। আয়ান বলল
‘ তোদের আসতে কোনো সমস্যা হয় নি তো?
আয়না বলল
‘ ভাবি আসেনি। আসতে দেয়নি।
আয়ান বলল
‘ মানে? কে দেয়নি?
‘ ভাবির বাবা। তোমাকে ও না যেতে বারণ করেছে।
আয়ান থেমে থেমে বলল
‘ ওহ। আচ্ছা সমস্যা নেই। খেয়েছিস?
আয়না বলল
‘ সমস্যা নেই মানে? কি বলছো ভাইয়া?
আয়ান বলল
‘ ওসব নিয়ে ভাবিস না তো। সব ঠিক হয়ে যাবে। যা খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়। আম্মা কোথায়?
‘ ঘরে শুয়ে আছে।
আয়ান বলল
‘ আচ্ছা, আমি দেখছি।
আয়না বলল
‘ মুখ হাত ধুয়ে এসো। খাবার দিই। খাও। পরে যেও আম্মার ঘরে।
আয়ান বলল
‘ আচ্ছা।
__________
গাঁদা ফুলের পাপড়িতে হলুদ হয়ে আছে বিছানার চাদরটা। কুহেলী পুরো ঘরটাতে চোখ বুলালো। আজ থেকে এই ঘরটা তার। একদম পুরোটা।
স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ঘরে ঢুকে এল অনুরাগ৷ পড়নে লাল পাঞ্জাবি। সাদা পায়জামা। হাতের কব্জিতে পড়া কালো ঘড়িটা খুলতে খুলতে বলল
‘ আরেহ ওভাবে বসে থাকার কি আছে কুহেলী? চটপট ঘুমিয়ে পড়ো। কালকে খালাম্মার বাসায় যেতে হবে। দেরী করে ঘুম থেকে উঠলে সমস্যা। আজ প্রথম দিন তাই একটু অস্বস্তি লাগছে, কাল থেকে সব ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা নেই, ঘুমিয়ে পড়ো।
কুহেলী শুকনো ঢোক গিলল। মাথা আরও নিচে নেমে গেল তার।
অনুরাগ এসে বসলো তার পাশে।
তার মাথা নিচে নিচে নামতে থুতনি ঠেকল গলার কাছে।
______________
বাগানবাড়িতে চারাগাছের আগাছাগুলো পরিষ্কার করছিল আয়না। রেণুকে সকাল থেকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। নিজেই নিজেই একা একা কাজে লেগে পড়লো সে। ঘন্টা পার হতে না হতেই রেণু কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এল। আয়নার কাছে এসে থেমে গেল। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল
‘ রজনী আপা ছোডসাহেবের বউ দেইখা এলাম। অন্নেক সুন্দর।
আয়না দাঁড়ালো। দুহাত থেকে মাটি ঝাড়তে ঝাড়তে বলল
‘ তাই নাকি? তোর কথা শুনে আমার ও তো দেখতে ইচ্ছে করতেছে বেকুবসাহেবের বউকে।
রেণু হেসে দিল। আয়না ও হাসিতে ফেটে পড়লো।
রেণু বলল
‘ ছোডসাহেবের সাথে তোমার অনেক ভাব। তোমারে বিয়েতে দাওয়াত দেইনায় ক্যান?
আয়না কপাল কুঁচকে কিছু একটা ভাবলো। পরে বলল
‘ ভয়ে দেয়নি। আমি গিয়ে যদি বিয়েটা ভেঙে দিতাম?
বলতে না বলতেই আবার ও হাসিতে ফেটে পড়লো আয়না৷ তারপর রেণুর মাথা চাপড়ে বলল
‘ শোন ছাপাখানায় যেতে হবে। তুই আগাছাগুলো একটু পরিষ্কার করে দিস৷ কেমন?
রেণু মাথা নাড়িয়ে বলল
‘ আইচ্ছা।
আয়না ছাপাখানার উদ্দেশ্য রওনা দিল। সেখানে পৌঁছে দেখলো অনেক ভীড়। সে ফাঁকফোকর দিয়ে ঢুকে পড়লো কোনোমতে। আয়ান তাকে তার কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বলল
‘ মিরার ফোন এসেছে?
আয়না মাথা নামিয়ে ফেলল। আয়ান বলল
‘ আচ্ছা, কাজ শুরু কর।
আয়না কাগজগুলি নিল ফটোকপি করানোর জন্য। কাজগুলো শেষ করে বোতল থেকে পানি খেতেই দোকানে ঢুকা ভদ্রলোক তাকে দেখে থমকে গেল। আয়না বলল
‘ কি কাজ?
ভদ্রলোকের হুশ ফিরলো। আয়নার দিকে মেমোরি কার্ড বাড়িয়ে দিয়ে বলল
‘ ছবি গুলো তুলবো।
আয়না বলল
‘ আমার ভাইয়াকে দিন।
আয়ান ওদিকের কাজ সেড়ে আয়নার কাছে আসতেই রাশেদকে দেখে থেমে গেল। আমতাআমতা করে বলল
‘ আপনি?
রাশেদ হাসলো। বলল
‘ হ্যা। কেমন আছেন? নতুন দোকান বুঝি?
আয়ান বলল
‘ হ্যা।
আয়না বলল
‘ উনাকে কিভাবে চেনো ভাইয়া?
আয়ান তোতলালো। রাশেদ নিজেই বলল
‘ আমি অনুরাগের খালাতো ভাই৷ বিয়েতে পরিচিত হয়েছিলাম।
আয়না ঠোঁট গোল করে বলল
‘ ওহহ। বসুন চেয়ার নিয়ে।
রাশেদ বলল
‘ সমস্যা নেই আছি। ছবিগুলো একটু তাড়াতাড়ি দিলে ভালো হয়৷
আয়ান বলল
‘ হ্যা বসুন।
আয়না বাকি কাজগুলো করায় মনোযোগী হলো। রাশেদ আড়চোখে দেখে ভাবলো
‘ এই মেয়েটাকেই পার্ফেক্ট লেগেছিল আমার কিন্তু আফসোস অনুরাগ পার্ফেক্ট নয় এই মেয়ের জন্য।
আয়ান ছবিগুলো পরিষ্কার করতে গিয়ে আয়নার দিকে তাকালো। আয়না ভাইকে ওভাবে তাকাতে দেখে কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকালো৷ হেসে বলল
‘ আরেহ এইটা তো চৌধুরী সাহেবের বিয়ের ছবি । বাহ ঝাক্কাস বউ পেয়েছে।
রাশেদ বলল
‘ হ্যা, তবে আগের কনেটার মতো সাহসী নয়।
আয়না আবারও হাসলো। বলল
‘ সাহসী হলে তো চৌধুরী সাহেবকে আজীবন চিরকুমার থাকতে হবে। সবাই সাহসী হলে উনার বিয়ে কিভাবে হবে?
বলেই আরেক দফা হাসলো আয়না। রাশেদ ভাবলো
‘ এই মেয়ে কত কঠিন কঠিন কথা ও সহজে বলে ফেলে।
চলবে