এক গুচ্ছো কদম পর্বঃ১০

0
1303

#এক_গুচ্ছো_কদম
#পর্বঃ১০
লিখাঃসামিয়া খান

মৃদুলের জ্বর এখন কিছুটা কমেছে। প্রায় দুই ঘন্টা হিমাদ্রি মৃদুলের মাথায় পানি ঢেলে দিয়েছে। অবশেষে শরীরের তাপদাহ কিছুটা হলে কমেছে।এখন পর্যন্ত রোদসী বাড়ি ফিরেনি।মৃদুলের প্রতি রোদসীর এই অবহেলাটা বড্ড পুড়াচ্ছে হিমাদ্রিকে।

মৃদুলের চুলের গভীরে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে হিমাদ্রি। আর মৃদুল পরম শান্তিতে ঘুমে মগ্ন হয়ে রয়েছে। বরাবরের মতো মৃদুলের চুলগুলো হিমাদ্রির অনেক প্রিয়।তার জন্যই তো ছোটবেলা থেকে সবসময় মৃদুলের চুলের যত্ন নিয়েছে সে।

“রোদসী এখনও আসেনি হিম?মাদিহা তো এখন অনেক কান্না করছে।”

চুলে হাত বুলাতে বুলাতেই মেহেলতার কথার জবাব দিলো হিম।

“না ভাবী এখনো আসেনি।”

“এমন কেনো মেয়েটা?এতো ছোট বাচ্চা এতোক্ষণ ধরে মা ছাড়া থাকতে পারে নাকী?”

“সমস্যা নেই ভাবী আমার কাছে দেও। আমি ওকে সামলে নিচ্ছি।”

“না থাক।আমি পারবো।তুই মৃদুলের সাথে থাক।আর মৃদুলের যে জ্বর এসেছে তা রোদসীকে কল করে বলতো।”

“প্রায় দুই ঘন্টা আগে কল করে বলেছি।কিন্তু আসলো না তো এখনো।”

“কী মেয়েরে বাবা এটা।স্বামি, সন্তানের মর্ম বুঝেনা।”

“বাদ দেও ভাবী।তুমি মাদিহাকে আমার কোলে দেও। ”

“না আমি ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি।মৃদুল উঠলে ওকে কিছু খাইয়ে দিস।একেই বলে কপাল।কেও স্বামি সন্তান পায় না।আর কেও পেয়ে তার মর্ম বুঝেনা।”

মেহেলতার যাওয়ার পানে কিছুসময় হিমাদ্রি তাকিয়ে রইলো।এই মানুষটাকে ও চিনতে পারেনা।আগের করা হিমাদ্রির সাথে ব্যাবহার এবং বর্তমানের করা ব্যাবহারে কতোটা আকাশ পাতাল পার্থক্য।
,
,
,
আহাদের সাথে বসে বসে মুভি দেখছে রোদসী।বড় টিভির স্ক্রিনে বেশ রোমান্টিক একটা চায়না মুভি অন করা।মূলত এটাইপের রোমান্টিক মুভি একজন মেয়ের স্বামীর সাথে দেখা সমিচীন। সেখানে আহাদের সাথে এক সোফায় এতোটা নিকটে এসে মুভি দেখাটা বড্ড বেমানান হয়ে গিয়েছে।টিভির স্ক্রিনে চোখ রেখেই রোদসী আহাদকে একটা প্রশ্ন করলো,,

“শুনলাম হিমাদ্রিকে নাকী তুমি স্কলারশিপ এক্সাম দিতে বলেছো?”

“তুমি কীভাবে জানলে?”

“জানবো না?আমার গুণধর স্বামীর জন্য জানতে পেরেছি।হিমাদ্রি এক্সাম দিবে তাতে তার বেশ চুলকানী।সে দিতে দিবেনা আর হিমাদ্রি এক্সাম দিবেই।এ বিষয়ে বেশ কয়দিন ঝগড়া হয়েছে তাদের।”

“আচ্ছা আমি বুঝিনা।মৃদু এতো হিম হিম করে কেনো?”

“সে কথা তো আমারোও নিজের বউ এর খবর নেই।সারাদিন শুধু হিম হিম করে।”

“তাই তোমার কোন খোঁজ রাখেনা?”

“না কখনো রাখেনা।”

“কেনো আমি তো আছি তোমার খোঁজ নেওয়ার জন্য।”

রোদসীর হাতটা নিজের বুকের সাথে চেঁপে ধরলো আহাদ।আহাদ রোদসীর থেকে কী চাচ্ছে তা বুঝতে সময় লাগলো না রোদসীর।তাড়াতাড়ি করে সোফা থেকে উঠে দাড়ালো সে।

“আমি এখন চলে যাবো।আবার কালকে আসবো।”

“ওহ কামন রোদসী।আমি তো তোমাকে ভালোবাসি তাইনা?তারপর ও কেনো এতো দূরে দূরে থাকো।”

“আমি বিবাহিত আহাদ।সাথে আমার একটা মেয়েও আছে।তোমার সাথে কথা বলস পর্যন্ত আমার সীমাবদ্ধতা।”

রোদসীর কথাগুলো শুনে রোদসীর সামনে গিয়ে দাড়ালো আহাদ।রোদসীকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো।

“লুক রোদসী।আই রেলী লাভ ইউ।প্লিজ আমি তোমাকে পুরোপুরিভাবে চাই।তুমিও তো চাও তাইনা?”

“হুম চাই কিন্তু আমি মৃদুলকে কীভাবে ঠকাবো।”

“মৃদুলও তোমার সাথে তেমন ভালো করেনি।সো আমাকে প্রমিজ করো তুমি মৃদুলকে খুব তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিবে?”
কিছুসময় রোদসী কিছু একটা চিন্তা করলো।
কিছুটা সংশয় নিয়ে আহাদকে প্রমিজ করে বসলো সে।মুচকী হেসে আহাদ রোদসীকে গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ করলো।
,
,
,
“আপ জো ইস তারা সে তারপায়েংগে,,
অ্যাসে আলাম মে পাগাল হো জায়েংগে,,

“আপ জো ইস তারা সে তারপায়েংগে,,
অ্যাসে আলাম মে পাগাল হো জায়েংগে,,

” ভো মিল গায়া জিসকী হামে কাভসে তালাশ থি,,

বেচান সি ইন স্বাসোমে জনমোসি তালাশ থি””

জিসমে সে রুহ ম্যে উতার নে লাগে”

জিসমে সে রুহ ম্যে উতার নে লাগে!

ইস কাদার আপসে হামকো,, মোহাব্বত হুয়ি!

ইস কাদার আপসে হামকো,, মোহাব্বত হুয়ি!

টুট কে বাজুও ম্যে বিখার নে লাগে””

আপকে প্রার ম্যে হাম সাভার নে লাগে,,

ইস কাদার আপসে হ্যামকো মহাব্বত হুয়ি””

টুট ক্যে বাজুও ম্যে হাম সাভার নে লাগে””

আপকি প্রার ম্যে হাম সাভার নে লাগে!!

,
,
,
ফোনের রেকর্ডিং থেকে অনবরত এই গানটা বাজিয়ে চলেছে সৃষ্টি। গানটা দুর্জয় গেয়েছে। দুর্জয় অনেক ভালো গান গাইতে পারতো।এমন কী সে শুনেছে দুর্জয়রা তিন ভাই অনেক ভালো গান গাইতে পারে।সৃষ্টির অনেক খারাপ লাগে এই গানগুলো শুনলে।তারপর ও বারবার শুধু দুর্জয়ের কণ্ঠ স্বর শোনার জন্য গানগুলো শুনে।

গান শোনার মধ্যে মেহেলতা সৃষ্টির রুমে প্রবেশ করলো।

“সৃষ্টি তুই কী একটু মাদিহাকে নিজের কাছে রাখবি।আমি মৃদের জন্য আমি একটু ঝাল করে খিচুড়ি বানাতাম।জ্বরের মুখতো ভালো লাগবে।

” সমস্যা নেই ভাবী তুমি আমার কাছেই দেও।এই পুতুলটাকে কোলে রাখতে ভালোই লাগে।”

“দাড়া আগে বিছানা করে ওকে শুইয়ে দেই”।

মেহেলতা মাদিহাকে বিছানায় শুইয়ে দিলে সৃষ্টি ওর দিকে একটু টেনে নিলো মাদিহাকে।

“ভাবী দেখো কত নরম মাদিহা।”

“বাবুরা তো নরমই হয়।”

“আমার বাবুগুলোও এতো নরম হবে তাইনা?”

মেহেলতা খেয়াল করলো কথাটা বলার সময় এক আলাদা খুশীর ঝলক সৃষ্টির চোখে মুখে।মেহেলতার হঠাৎ মনটা বড্ড খারাপ হয়ে গেলো।মা হওয়ার যে একটা অদম্য ইচ্ছা সেই ইচ্ছাটা তার ভিতরে নাড়াচাড়া দিয়ে উঠলো।

“হ্যাঁ হবে তো।কিন্তু ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করবি তাহলে বাবু গুলো একটু নাদুসনুদুস হবে।”

“আমার ছেলে হলে তার সাথে আমি মাদিহার বিয়ে দিবো।এতো ভালো লাগে আমার ওকে।”

“ধুর পাগলী তোর ছেলের সাথে কীভাবে বিয়ে দিবি।মাদিহা তো বড় ”

“ওভাবেই দিবো।তুমি দেখে নিও।”

“আচ্ছা দেখা যাবে।এখন চুপচাপ মাদিহাকে নিয়ে শুয়ে থাক।উঠার দরকার নেই।”

“মৃদ ভাইয়ার কী খবর?জ্বর কমেছে? ”

“হ্যাঁ একটু কমেছে। ”

“আর রোদসী ভাবী আসেনি।”

“না এখনো আসেনি।তাও ভালো বাবা বাড়ী নেই। রোদসীর এসব কাজ দেখলে খুব রেগে যেতেন।”
,
,
,
গাড়ী থেকে নেমে নিজেকে একবার লুকিং গ্লাসে দেখে নিলো রোদসী।(লিখাঃসামিয়া খান)রাত দশটা বেজে গিয়েছে। অনেকটা রাত হয়ে গিয়েছে আসতে আসতে।মৃদুল কী বলবে তা নিয়ে বেশ ভয়ে আছে সে।আসলে তখন আহাদ ওকে আটকে না দিলে ঠিকই চলে আসতে পারতো।

অনেকটা চোরের মতো সে বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করলো।বেডরুমের দরজাটা অনেকটা খোলা হয়ে রয়েছে। তাই কোন কিছু না ভেবেই ভিতরে প্রবেশ করলো।ভেতরে প্রবেশ করেই ভ্রু কুঁচকালো রোদসী।মৃদুল ঘুমিয়ে রয়েছে। এবং মৃদুলের ডানপাশে মাটিতে বসে মাথাটা মৃদুলের হাতের ওপর রেখে হিমাদ্রি ঘুমিয়ে আছে।ওদের এ অবস্থায় দেখে যথেষ্ট রাগ হলো রোদসীর।মুখ দিয়ে শুধু একটা শব্দ বের হলো রোদসীর।

“বেহায়া মেয়ে একটা।”

চলবে,,

আমি যে কথা দিয়ে কথা রাখিনা এটা তার প্রমাণ। বলেছিলাম আজকে গল্পটা দিবো না।কিন্তু ঠিকই দিলাম।অনেক তাড়াতাড়ি করে লিখেছি তাই পর্ব ছোট হয়েছে।তার জন্য দুঃখিত🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here