এক গুচ্ছো কদম পর্বঃ১১

0
1299

#এক_গুচ্ছো_কদম
পর্বঃ১১
লিখাঃসামিয়া খান

“কালকে রাতে এতো লেট আসার কারণটা কী জানতে পারি রোদসী?”

রোদসী কোন জবাব দিলো না।চুপচাপ টাওয়াল দিয়ে নিজের চুল মুছতে লাগলো।রোদসীর এই রকম বিহেভিয়ার মৃদুলের একদম পছন্দ হলোনা।কিন্তু নিজেকে যথা সম্ভব ঠান্ডা রাখলো।

“আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি রোদসী?”

“কী জিজ্ঞেস করেছো।”

“আমি বলেছি কালকে এতো রাত হলো কেনো বাসায় আসতে তা কী একটু জানতে পারি।”

“না তো।তুমি কেনো জানতে যাবে।”

“আজব তো আমি তোমার হাজবেন্ড। তুমি কেনো এতো রাত পর্যন্ত বাসার বাইরে ছিলে তা জানা আমার অধিকার।”

“জানতে চাওয়া যেমন তোমার অধিকার,, তেমনি উত্তর দেওয়া আমার অধিকার।”

“বাহ ভালো তর্ক করতে পারো তো।”

“আচ্ছা তুমি যে আমাকে এতো জিজ্ঞেস করছো আমি কেনো এতো রাত পর্যন্ত বাড়ীর বাইরে ছিলাম।অথচ আমি কী একবারোও জিজ্ঞেস করেছি যে এতো রাতে তোমার হাতে মাথা দিয়ে হিম কেনো শুয়ে ছিল।”

“সব বিষয়ে হিমকে টেনে নিয়ে আসা তোমার স্বভাব হয়ে গিয়েছে তাই না রোদসী?”

“তোমার থেকেই শিখেছি মৃদ।তুমিই সব বিষয়ে হিমকে নিয়ে আসো।”

“তোমাকে বোঝাতে বোঝাতে ক্লান্ত আমি।”

“তাহলে বোঝাতে কেনো আসো।”

রোদসীর কথায় কোন জবাব দিলো মৃদুল।শুধু মাদিহাকে শোয়া থেকে উঠিয়ে নিজের কোলে টেনে নিলো।মাদিহা বেশ ছটপট করা শিখে গিয়েছে। তার জন্যই তো মৃদুলের কোলে বেশীক্ষণ বসে থাকলো না।কোল থেকে নেমে বিছানায় হামাগুড়ি দিয়ে নিজে নিজে এক জায়গায় বসে পড়লো।মাদিহাকে এভাবে বসতে দেখে বেশ অবাক হয়ে গেলো রোদসী।বিস্ময় প্রকাশ করে বললো,,

“মাদিহা বসতে শিখলো কবে?”

রোদসীর কথায় একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো মৃদুল।

“কেমন মা তুমি যে নিজের সন্তান বসতে শিখে গিয়েছে তাই জানোনা?”

“অপমান নাকী খোঁটা দিচ্ছো কোনটা?”

“তুমি যা মনে করবে।”

মুখে বিরক্তিভাব তুলে মাদিহার কাছে এসে মাদিহাকে কোলে তুললো রোদসী।চলে যেতে নিলে ক্ষপ করে রোদসীর হাত ধরে নিজের পাশে বসালো।মৃদুল নিজের ডান হাতটা রোদসীর গালে ঠেকালো।এবং বেশ ঠান্ডা স্বরে বলতে শুরু করলো,,

“কী হয়েছে তোমার রোদসী?আমার উপর রাগ করে রয়েছো?আমি কী কিছু করেছি?”

“কই নাতো। কিছুই করোনি।”

“তাহলে এমন কেনো করছো তুমি। আমি তো তোমাকে কোনদিন বকা পর্যন্ত দেয়নি”।

” আমি জানি মৃদ।”

“তাহলে!প্লিজ এমন আর করো না।তুমি বাইরে যাও তাতে আমার কোন সমস্যা নেই।শুধু টাইম মতো ফেরত এসো।আর মাদিহা তো এখন অনেক ছোট।তাই ওর আশেপাশে থাকবে ঠিক আছে।”

“হুম।”

মৃদুল হেসে রোদসীর কপালে ছোট করে একটা ভালোবাসার পরশ দিলো।

“ভালোবাসি। ”

মৃদুলের মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা শুনে মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেলো রোদসীর।তার মনে একটা অপরাধবোধের সৃষ্টি হলো।
,
,
,
অনেকটা তাড়াতাড়ি হাত চালাচ্ছে হিমাদ্রি। যতো দ্রুত সম্ভব মৃদুলের জন্য খাবার তৈরী করছে।মৃদুলের জ্বর কমার পর ও হিমাদ্রির হাতে তৈরী আলুর পরটা খেতে চেয়েছে।কিন্তু হিমাদ্রির আজকে একটা বিশেষ কাজ রয়েছে। একটু বের হতে হবে।তাও মৃদুলের জন্য নিজের হাতে আলুর পরটা তৈরী করছে সে।দ্রুত হাত চালিয়ে তিনটা পরটা নিয়ে ডাইনিং টেবিলে মৃদুলের সামনে নিয়ে রাখলো।সামনে থাকা প্লেটের দিকে একবার তাকিয়ে মৃদুল হিমাদ্রির দিকে তাকালো।

“কীহলো আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছো কেনো।খাও।”

“তুই দেখতে পারছিস না হিম।আমার কোলে মাদিহা।একটু খাইয়ে দিবি?”

“তুমি কী মাদিহার সমান যে তোমাকে খাইয়ে দিতে হবে?”

“এতো কথা কেনো বাড়াস হিম।একটু খাইয়ে দিলে কী হয়?”

হিমাদ্রি আর কোন কথা বাড়ালো না।প্লেট থেকে পরটা ছিড়ে মৃদুলের মুখের দিকে এগিয়ে ধরলো।

“এতো তাড়াতাড়ি কেনো দিচ্ছিস।একটু তো চাবাতে দিবি?”

“প্লিজ মৃদ একটু তাড়াতাড়ি খাও আমার কাজ আছে।”

“কেনো কোথাও যাবি নাকী?”

মৃদুলের এ প্রশ্ন শুনে হিমাদ্রির মুখটা কালো হয়ে গেলো।এখন আবার তার মৃদুলকে মিথ্যা কথা বলতে হবে।

“হ্যাঁ এমনি একটু দরকার ছিল তাই বাইরে যাবো।”

“কী দরকার?”

“পার্সোনাল।”

“আমি কী যেতে পারি সাথে?”

“না।”

“ঠিক আছে না গেলাম।কিন্তু তুই কিন্তু গাড়ী নিয়ে তারপর কোথাও যেতে হলে যাবি।”

“ঠিক আছে।”

মৃদুল আর কোন কথা বললো না।চুপচাপ খেতে লাগলো।দূর থেকে এ দৃশ্য ঠিকই রোদসীর চক্ষুগোচর হলো।সে শান্ত ভঙিতে গিয়ে ডায়নিং টেবিলে বসলো।

“হিম আমার ক্ষুদা লেগেছে আমাকে খাবার দেও।”

মৃদুলের মুখে একটা গ্রাস তুলে দিয়ে হিমাদ্রি জবাব দিলো,,
“একটু বসো আপু। তোমার ওটস এখনো বানায়নি।আর ভাবী ঠিকমতো বানাতে পারেনা।মৃদকে খাইয়ে করে দিচ্ছি।”

“মৃদ কী ছোট বাচ্চা যে ওকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতে হবে?”

“রোদসী এটা কেমন কথা?”

“ঠিক কথা।তোমার তো হাত আছে তুমি নিজের হাতে খেতে পারোনা?আর হিম তুমি না বিধবা! বিধবা হয়ে নিজের ভাসুরকে মুখে তুলে খাওয়াতে লজ্জা করেনা।”

“রোদসী কথায় সীমাবদ্ধতা রাখো।আমিই হিমকে জোর করেছি আমাকে খাইয়ে দিতে।”

“কেনো আমি কী মরে গিয়েছি? আমার হাতে খাওয়া যায় না?”

“বাহ তুমি খাইয়ে দেওয়াবে আর আমাকে। বিয়ের এতোসময় কী কোনদিন দিয়েছো?”

“এখন খোঁটা দিচ্ছো।ভালো। হিম তাও তোমার লজ্জা নেই।নাকী চার বছর আগের মতো আবার করতে চাও।”

এবার বেশ চেঁচিয়ে উঠলো মৃদ।
“রোদসী তোমাকে আর কতোবার বলবো যে চার বছর আগে হিমাদ্রির কোন দোষ ছিলনা।”

“আর বলতে হবেনা।তুমি তো কানা তাই তুমি কিছু দেখতে পাওনা।আমি ঠিকই এই মেয়ের মতলব বুঝি।”

কথাটা শুনে বেশ কতোগুলো কথা শুনিয়ে দিলো মৃদ রোদসীকে।রোদসীও চুপ ছিলনা।নিজের বাবা মার এতো জোরে জোরে কথা বলতে দেখে মাদিহা কান্না করে দিলো।(লিখাঃসামিয়া খান)আর হিম সে তো নির্বাক।কান্নাগুলো মনে হয় দলা পাঁকিয়ে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে হিমের ভেতর থেকে।

“মৃদ আর রোদসী আপু আর কোন কথা বলোনা তোমরা।আমাকে নিয়ে এতো সমস্যা আমি আর মৃদের কাছে আসবো না।তাও তোমরা ঝগড়া করোন।”

কথাগুলো বলে হিমাদ্রি আর এক সেকেন্ড ও দাড়ালো না সেখানে।দ্রুত নিজের রুমে চলে গেলো।
,
,
,

“আপমি মৃদুকে না জানিয়ে এক্সাম দিতে চাচ্ছেন। তাইতো প্রজাপতি?”

“হ্যাঁ।প্লিজ আপনি মৃদকে কিছু বলবেন না আহাদ। ”

“ঠিক আছে বলবো না।কিন্তু আপনি মৃদুকে দেখে এতো ভয় কেনো পান?”

“ভয় পাইনা আমি।কিন্তু মৃদ এমন একটা মানুষ যার গুরুত্ব বলে বোঝাতে পারবো না আমি।”

“আপনি না বোঝাতে পারলেও আমি বুঝতে পারি প্রজাপতি।কিন্তু যদি এক্সামটা ক্লিয়ার করেন তাহলে মৃদুকে কী জবাব দিবেন।”

নিজের হাতের ঘড়ি তে নখ খুঁটতে খুঁটতে হিমাদ্রি জবাব দিলো।

“আমি ঠিক মৃদকে এ বিষয়ে বুঝিয়ে নিতে পারবো।সেক্ষেত্রে আগে এক্সামটা ক্লিয়ার করতে হবে।”

“অবশ্যই করবেন প্রজাপতি।এটা আমার বিশ্বাস।”

“আপনার এই ল্যাবটা অনেক ভালো লেগেছে আমার।এরকম একটা ল্যাবে কাজ করার খুব ইচ্ছা আছে আমার।”

“সেটা তো এখুনি পসিবল না। আপনার লাস্ট সেমিস্টার ছিল তো এইটা?”

“জ্বী।রেজাল্ট সামনের মাসে।”

“আর এক্সাম এই মাসে।ওহ যদি একবার আপনি ড.ভৌমিকের ইউনিভার্সিটিতে পড়েন তো আপনার কপাল খুলে যাবে।”

“ড.ভৌমিক?”

“ড.ভৌমিক ইজ এ রিয়েল জেম।মাইক্রোবায়োলজি সম্পর্কে অনেক গভীর জ্ঞান রয়েছে তার।এবং এতো এতো রিসার্চ করেছে সে এ বিষয়ে তা বলার বাইরে?”

“ওহ আচ্ছা।”

“যদিও তার আশেপাশে কোন মেয়ে টিকতে পারেনা।”

“কেনো?”

“হি ইজ লাইক এ প্রিন্স।যে কোন মেয়ের মনে প্রেম জোগাতে সক্ষম।বাট মোস্ট এলিজিবল ব্যাচিলর অলসো।”

“কেনো মেয়ে ঘৃণা করে?”

” নারী জাতকে ঘৃণা করে।কেনো করে তা কেও জানেনা।দাড়ান আমি তার ছবি দেখাচ্ছি।”

“সে কী হিন্দু ধর্মের?”

“নো হি ইজ এ Atheist।বাট তার ফ্যামিলি হিন্দু।লুক হি ইজ ড.ভৌমিক।”

হিমাদ্রি ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠা ছবিটার দিকে তাকালো।ফর্মাল লুকে চমৎকার একটা সুপুরুষ দাড়িয়ে রয়েছে। কোলে একটা বিড়াল।দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ তুলতুলে বিড়ালটা।লোকটাকে দেখেই হিমাদ্রির মনে হলো খুব কড়া। বাট চোখে মুখে একটা কোমলতা রয়েছে।

চলবে,,

কালকে যদি একদিনের এক্সট্রা পর্ব পোস্ট করবো।আর আজকে চিন্তা করতে থাকেন এই ভৌমিকের কী অবদান হিমাদ্রির লাইফে।😅

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here