এক গুচ্ছো কদম পর্বঃ১৫

0
1355

#এক_গুচ্ছো_কদম
#পর্বঃ১৫
লিখাঃসামিয়া খান

নিজের স্ত্রীর অধরে অন্য একটা পুরুষের অধরের স্পর্শ হয়তো পৃথিবীর কোন স্বামীর জন্য কাম্য নয়।নিজের চোখে অন্য এক পুরুষের সাথে নিজ স্ত্রী রোদসীর চুম্বনরত দৃশ্য দেখে যেনো পুরো পৃথিবীটা ঘুরে গেলো মৃদুলের।রোদসী রোজ বাইরে কোথায় যায় তা কোনদিন খোঁজ নেয়না মৃদুল।কিন্তু ইদানীং রোদসীর বিহেভিয়ারে বাধ্য হলো মৃদুল রোদসীর পিছন পিছন আসতে।মৃদুলের নিজের কাছে খারাপ লাগলো রোদসীর পিছন পিছন আসাতে। দুই একবার ভেবেছেও যে সে ফিরে যাবে।অবশেষে নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে রোদসীর পিছন নিয়েছে মৃদুল।

পা গুলো অসম্ভব প্রকারের কাঁপছে মৃদুলের।ভালোভাবে খেয়াল করে দেখে রোদসীর সাথে পুরুষটা আর কেও না আহাদ।আহাদ আর রোদসী দামী একটা রেস্তোরাতে এসেছে।বেশ অন্ধকার পরিবেশটা।যার দরুন খুব সহজে নিজেদের নোংরামি চালিয়ে যেতে পারছে রোদসী আর আহাদ।

মৃদুল কোন প্রকার শব্দ না করে ওখান থেকে চলে আসলো।এখন যদি মৃদুল ওখানে কোন কথা বলে তাহলে সস্মানহানী হবে।নিজের কথা শুধু ভাবলে চলবেনা মৃদুলের পরিবার ও মাদিহার কথাও ভাবতে হবে।চার দেয়াল বলতে একটা কথা আছে।পুরো লোকালয়ের সামনে ঝামেলা করার থেকে মৃদুল ঘরের চার দেয়ালে ঝামেলা করাটা সমীচিন মনে করলো।কোন রকমে শুধু একটা সিএনজি ডেকে তাতে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্য যাত্রা করলো মৃদুল।সে কাঁদছে না বা মুখে কষ্টের কোন অভিব্যাক্তি প্রকাশ করছেনা।পকেট থেকে ফোনটা বের কাকে যেনো কল করলো মৃদুল।দুবার রিং হওয়ার পর ওপর পাশ থেকে ফোনটা রিসিভ হলো।ফোনটা কানে রেখে মৃদুল শুধু একটা কথাই বললো,,

“আগামী দুই ঘন্টার ভিতরে বাড়ীতে আসবি।আর আমি না শুনতে চাইনা।”

কোন কথা না শুনে ফোনটা রেখে দিলো মৃদুল।কেমন যেনো চোখ জ্বলে যাচ্ছে তার।

,
,
,
“হঠাৎ মৃদ কেনো তোমাকে ডেকে পাঠালো আহাদ?”

“জানিনা গো রোদসী।কতো সুন্দর একটা রোমান্টিক মোমেন্ট উপভোগ করছিলাম।ফর দ্যা ফাস্ট টাইম আই ফিল ইওর সফট লিপস ইন মাই মাউথ।বাট মৃদু রুইন্ড এভিরিথিং।”

কথাগুলো বলে কেমন যেনো এক বিরক্তিমাখা অভিব্যাক্তি আহাদের মুখে ভেসে উঠলো।আহাদের মুখশ্রী এখন এমন লাগছে যে একটা ছোট বাচ্চার হাত থেকে তার প্রিয় চকলেটটা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।আহাদের দিকে তাঁকিয়ে রোদসী উচ্চস্বরে হেসে ফেললো।রোদসীর এতো হাসিতে আরো বিরক্তিপ্রকাশ করলো আহাদ,,

“ডোন্ট লাফ ওকে। ”

“আচ্ছা আর হাঁসবো না।কিন্তু এখন তো যেতে হবে বাসায় কারণ তোমাকে কী বলবে মৃদ তা তো একবার শুনতে হবে।”

“আচ্ছা আমি তোমাকে ড্রপ করে দিচ্ছি।”

“নাহ আমাদের একসাথে যাওয়া যাবেনা।”

“আরে পাগলী একসাথে কই যাবো।তুমি আগে ঢুকবে বাড়ীতে তারপর আমি।গাড়ীটা একটু দূরে পার্ক করবো।”

“তা করা যায়।”

কথাটা বলে রোদসী কী যেনো একটা চিন্তা করলো।তারপর হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে আহাদকে জিজ্ঞেস করলো,,

“এই আহাদ,, মৃদ তো তোমার সাথে ওই হিমাদ্রিকে বিয়ে করতে বলবে না তোমাকে?”

“হলেও হতে পারে।”

“মানে কী?তাহলে কী তুমি সত্যি সত্যি হিমকে বিয়ে করবে?”

“মাথা খারাপ তোমার রোদসী।এসব আজগুবি চিন্তাভাবনা বন্ধ করো।এখন আসো তো যতোটুকু সময় আছে তাতে অসম্পূর্ণ কাজটা সম্পূর্ণ করি।ইউ নো আই ডোন্ট লাইক ইনকমপ্লিট ওয়ার্কস।”
,
,
,

হাতে থাকা ডায়েরিটার দিকে এক ধ্যানে তাঁকিয়ে আছে হিমাদ্রি। ডায়েরীটা আজ সকালে কুরিয়ার করে তার কাছে এসেছে।প্রেরকের নাম দেখে বেশ অবাক হয়েছে হিমাদ্রি। কারণ প্রেরক আর কেও না সে হলো দুর্জয়।ডায়েরীর প্রথম পেইজটা উল্টালো হিমাদ্রি। তার চোখের সামনে চকচক করে উঠলো নীল কলমে দুর্জয়ের লেখা গুলি,,

“কেমন আছিস হিমাদ্রি?এটা হয়তো একটা আজব প্রশ্ন হলো।কারণ তুই যখন ডায়েরীটা হাতে পাবি তখন তুই কেমন আছিস তা হয়তো জানার মতো পরিস্থিতি আমার নেই।হয়তো যখন তোর হাতে ডায়েরী তখন আমার দেহের শেষভাগও পোকার দখলে।যাক সেসব কথা বাদ দে। আমার সৃষ্টির খেয়াল রাখছিস তো?জানি আমি খুব স্বার্থপরের মতো কাজ করলাম।তোর উপরে সৃষ্টির বোঝা দিয়ে।কিন্তু কী করবো বল?মেয়েটা যে এতিম।আমার বাবুটা হয়তো এখনও তার মাতৃগর্ভে।দেখ কী ভাগ্য। মা যেরকম এতিম বাবুটাও এতিম।কিন্তু আমি জানি তুই এতিম হতে দিবিনা।

আমার আর তোর বিয়ে হয়েছে আজ থেকে তিন বছর আগে।তখন কেবল কেবল আমি সৃষ্টির প্রেমে পরেছি।মৃদ ভাইয়ার বিয়ের ঝামেলা হওয়ার জন্য আমি কোন প্রতিবাদ করিনি আমাদের বিয়েতে।কিন্তু সৃষ্টিকে ছাড়তে পারিনি।তোকে সবসময় এড়িয়ে চলতাম।জানিস সৃষ্টির সাথে আমি আমার জীবনের সব থেকে সুন্দর মূহুর্ত কাঁটিয়েছি।সৃষ্টির সাথে বিয়ে হওয়ার পর আমি ভেবেছিলাম তোকে ডিভোর্স দিবো।

কিন্তু যখন তোর কাছাকাছি থাকার সুযোগ হলো আমার মধ্যে একধরণের একটা গিল্ট ফিল হলো।আমি দুটো মেয়ের মন নিয়ে
খেলেছি।এদিকে সৃষ্টি মা হবে অন্যদিকে তোর আর আমার বিয়ে।বিশ্বাস কর আমি মৃত্যু ছাড়া আর কোন পথ খোলা পাচ্ছিনা।আমি মরলেই হয়তো সব ঠিক হবে।”

হাত দিয়ে যখন পরের পৃষ্ঠাতে যাবে এমন সময় নিচ থেকে বেশ চিৎকার শোনা গেলো।তাড়াতাড়ি করে ডায়েরীটা রেখে হিমাদ্রি নিচের দিকে ছুঁটে চললো।

চলবে,,

সরি আজকের পর্ব ছোট হলো।আর আজকের পর্ব পড়ে কার কী অনুভূতি তা একবার বলবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here