এবং_তুমি পর্ব ২০

0
930

গল্পের নাম— #এবং_তুমি❤️
লেখিকা— #সোনালী_আহমেদ
পর্ব– ২০

আমার শরীর ছেড়ে দিলো। সম্পূর্ণ শক্তি যেনো খুইয়ে দিয়েছি। ইশান আমার কথা বিশ্বাস করছেন না? কথাটা আমার হজম হচ্ছে না। ততক্ষণে তিনি আমাকেসহ চাদরের ভেতর নিজেকে মুড়িয়ে নিলেন। খুব শক্ত করে জড়িয়ে বললো,

— তুমি এত নরম কেনো? কেনো এত সফ্ট?
সবাই বলে তুলো নাকি সবচেয়ে নরম। আমি বলবো, কেউ যদি তোমাকে দেখে তাহলে নিশ্চই বলবে কে বলেছে তুলো নরম?সবচেয়ে নরম তো প্রভাতি। কিন্তু আমি তা হতে দিবো না। তোমাকে আমি ছাড়া কেউ ছুঁতে পারবে না। শুনো,সজীব কোনো বারবার তোমার খবর নেই বলো তো? আমার সহ্য হয় না। তাই আমি ওকে কাজ থেকে বের করে দিয়েছি। তুমি রাগ করো নি তো?

ইশান কথা বলছে কম আমাকে স্পর্শ করছে বেশি। সজীব ভাইয়ের ব্যাপার টা এখন কেনো বলছে? বলুক। তাকে প্রথমে আমার অসুখের কথা বলতে হবে। আমি বললাম,

—আপনি বাবাকে ফোন দিন। জিজ্ঞেস করুন আমার কোনো অসুখ হয়েছে কি না। তারপর নাহয় বলবেন আমি মিথ্যা বলছি কি না?

—তোমার বাবা! ভালো কথা মনে করেছো। শুনো, তোমার বাবা ফোন দিয়েছিলেন। আমি তাকে কিছু কঠিন কথা শুনিয়ে ব্লক করে দিয়েছি। ভালো করেছি না বলো?

—কিহ। আপনি কীভাবে এমন করতে পারেন? এখন আমি কীভাবে আপনাকে বিশ্বাস করাবো? আমার রিপোর্ট, ফাইল সবকিছু তো বাবার কাছে। আজব,আপনি বিশ্বাস কেনো করছেন না? আমি সত্যি বলছি তো।

ইশান আমার কথা পাত্তা দিলেন না। সে আরো গাঢ় ভাবে আমার সংস্পর্শে আসলো। আমার রাগ উঠে যাচ্ছে। বিশ্বাস কেনো করছে না? আমি কেনো মিথ্যা বলবো? এদিকে আমার ব্যাথা বাড়ছে। কাল থেকে ঔষধ খাই নি। ইভেন ডায়বেটিসের ঔষধও না। শরীর টা তীব্র খারাপ হচ্ছে। তলপেটের ব্যাথা সকাল থেকেই করছিলো। ইশানকে কীভাবে বুঝাবো? সবচেয়ে বড় কথা ও বুঝতে কেনো চাইছে না? আমার নিশ্চই উনার সাথে রসিকতার সম্পর্ক নয়।

আমি কাতর স্বরে বললাম,

—আপনি বুঝতে পারছেন না…

তিনি শুনলেন না। আমাকে চুপ করিয়ে দিলেন। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। আমি জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিলাম। এ স্পর্শ নাকি স্বর্গসুখ? আমার মন মষ্তিকে প্রশ্ন ভেসে উঠলো। ইশানের গা থেকে কড়া পারফিউমের সুভাস আসছে। এ ঘ্রাণ টা আমার পরিচিত! অতি পরিচিত। আমি তাকে অনেকবার বলার চেষ্টা করলাম। সে শুনলো না। বরং বিরক্তিতে স্ল্যাং ইউজ করলেন। এক পর্যায়ে আমি নিজ থেকেই চুপ হয়ে গেলাম। সবকিছু ছেড়ে দিলাম প্রকৃতির উপর। কোথাও না কোথাও তো আমিও তাকে পাবার তৃষ্ণায় কাতর ছিলাম। কিন্তু আমাদের এ মিলন বেশিক্ষণ স্থায়ী থাকতে পারলো না। আমার অবস্থা খুবই খারাপ পর্যায়ে চলে গেলো। ইশান বোধহয় টের পাচ্ছেন না।ডাক্তার শিলা বলেছিলেন,’ অপারেশন না করা পর্যন্ত যাতে ফিজিক্যালি এট্টাচ না হই। এতে আমার প্রবলেম হবে।’ আমি হেসে বলেছিলাম,’ হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। আমাদের মধ্যে তো সম্পর্ক ই নেই।’ অথচ,অথচ আমি আজকের এ দিনটির কথা কল্পনাতেও আনি নি। আমার ব্যাথা এত পরিমাণ বেড়ে গেলো যে গলা দিয়ে স্বশব্দে চিৎকার চলে আসলো। চোখের পানি তো সেই কখন থেকেই পড়ছে। আমার আওয়াজ ইশানের কান পর্যন্ত পৌঁছাতেই সে থেমে গেলো। এত অন্ধাকারেও আমি স্পষ্ট ইশানের চিন্তিত মুখ দেখতে পেলাম। বাহিরে বৃষ্টির ঝুমঝুম আওয়াজ বেড়ে গেলো। জোরে জোরে বজ্রপাত হতে লাগলো। ইশান উদ্বিগ্ন গলায় বললো,

—কি হয়েছে? কি হয়েছে?

কান্না আর ব্যাথার চোটে কথা বের হচ্ছিলো না আমার। বাম পাশের টিউবে পরিমানে একটু বেশি ব্যাথা হচ্ছিলো। বিছানায় ব্লাডের ছড়াছড়ি। ইশান উঠে লাইট জ্বালালেন। দূর্ভাগ্যের বিষয় কারেন্ট নেই। সে হাতড়ে আবার সুইচ দিলো। এবার লাইট জ্বললো। সৌর বিদ্যুৎ। এ বাড়ীতে সৌর ও আছে! আমার দিকে তাকাতেই ইশান আঁতকে উঠলো। তার চেহারা ভীবষৎ হয়ে গেলো। কান্নামাখা গলায় বললো,

— ওহ, গডড…..

ইশান একপ্রকার দৌড়েই আমার নিকটে আসলেন। আমার ডান গালে হাত রেখে বললেন,

—এমন করছো কেনো? কষ্ট হচ্ছে?

আমি ইশানের হাতের উপর হাত রাখলাম। রীতিমত খামছে ধরলাম। নখ বোধহয় ওর হাতে গেঁথে যাচ্ছিলো। আমি তখন কি পরিমান কান্না করছিলাম তা বলতে পারবো না। ইশান তো আমার কান্না দেখে কেঁদেই দিলেন। আমার কপালে হাত বুলিয়ে আমাকে থামানের চেষ্টা করছিলেন। আমি শ্বাস ফেলে ফেলে বললাম,

—বা্ বা্ বাবাকে ফ্ ফোন দিন। ডাক্তার,ডাক্তার

ইশান ভয়মিশ্রিত কন্ঠে বললেন,

— তোমার সত্যিই ট্ টিউমম

তার কথা সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই আমি জোরে মাথা ঝাঁকালাম। সাথে সাথে তার মুখশ্রী ধূসর হয়ে গেলো। উন্মাদের মতো ফোন হাতড়ে বাবার নাম্বার ব্লক খুলে ফোন দিলেন। কিন্ত ভাগ্য আমার সহায় হলো না। বাবা ফোন তুলেন নি। সে আরো অন্যান্য নম্বরে ফোন দিচ্ছিলো। আমি দেখতে পাই নি। আমার ব্যাথা পলকে পলকে বাড়ছিলো। এমন নয় যে এ প্রথম ব্যাথা উঠেছে। এর পূর্বে আরো অনেকবার আমার ব্যাথা হয়েছিলো। আমি দাত চেপে সংবরণ করেছিলাম। কিন্তু এবার ব্যাথার পরিমাণ তীব্র হয়ে উঠছে। মাথা টা ঘোলাটে লাগছে। গত দুরাত ঘুম হয় নি। ডায়াবেটিস নিশ্চই বেড়ে গেছে। ইশান আমার কপালে বারবার চুমু দিচ্ছেন আর বলছেন, ‘কিচ্ছু হবে না। একটু ধৈর্য্য ধর।’ আমি কি ধৈর্য্য ধরবো সে নিজেই পারছিলো না। কেঁদে কুদে অস্থির। ঝড়ের আওয়াজ বেড়ে যাচ্ছিলো। কালো কালো মেঘগুলো যেনো আমায় ডেকে বলছে, ‘আজ তোমার শেষ দিন। শেষ দিন!

ইশান যেনো কাকে ফোন দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলেন। সে একদম ভেঙ্গে গিয়েছিলো। ফোনে শুধু বললো, — হ্যালো,নিধি। নিধি.. এম্বুলেন্স পাঠাতে পারবে? আমি লোকেশন সেন্ড করছি। আমি জানি না কেনো তোমাকে ফোন দিয়েছি? কেন তোমাকেই মনে পড়েছে। প্লিজ, হেল্প মি। আমার লাইফের প্রশ্ন…. ব্যাস আর বলতে পারলো না ইশান। স্বশব্দে কেঁদে দিলেন। লোকেশন সেন্ড করেছেন কি না জানি না। তবে বিশ মিনিটের মধ্যেই এম্বুলেন্স এসেছিলো। এ কয়েক মিনিট আমি শুধু ইশানকে জড়িয়েই রেখেছিলাম। কতশত যে চুমু খেয়েছি জানা নেই। ইশান নিজেও আমার কপালে চুমু দিচ্ছিলেন। তার চোখেমুখে ছিলো অপরাধবোধ। বিশাল অপরাধবোধ। তিনি নিশ্চই নিজেকে দায়ী করছেন? করবার ই কথা। আমি তাকে বারণ করলাম কাঁদতে। কিন্তু সে কি শুনে? হুহু করে চোখের জল ফেলছিলো। তার কান্না দেখে আমার মনের কোনো এক কোণে প্রশান্তি লেগেছিলো। স্ত্রী হিসেবে বোধহয় স্বামীর থেকে এটাই প্রত্যাশা করছিলাম। ইশান আমাকে ঠিকঠাক করে আমার জামা টা পরিয়ে দিলেন। সে নিজেই আমাকে কোলে নিয়ে গাড়ীতে উঠিয়েছিলো। হাসপাতালের কাউকে আমাকে ছুঁতে দেয় নি। দুটো ছেলে যখন আমাকে কোলে নিতে গিয়েছিলো। ইশান তো তখন রেগে অস্থির। খুবই নিকৃষ্ট শব্দে ওদের ফিরিয়ে দিয়েছিলো। সবচেয়ে অস্বস্তি আর দমবন্ধকর পরিস্থিতি এম্বুলেন্সের ভেতরে হয়েছিলো। শরীরের অভ্যন্তরীণ ব্যাথা আমি কমাতে পারছিলাম না। ইচ্ছে করছিলো হাত দিয়ে ব্যাথায় আক্রান্ত স্থান টি ছুঁড়ে ফেলে দেই। কিন্তু আমি তখন ছুঁতে পারছিলাম না। বাহিরের হালকা ব্যাথা হলেও চোখে পড়ে অথচ ভেতরে কঠিন ব্যাথা করলেও দেখানো যায় না। আমি কাঁদতে কাঁদতে ইশানকে বললাম,

—আমি আপনাকে ছেড়ে যেতে চাই না।

ইশান আমার হাত তার গালে ছুঁইয়ে চুমু খেলেন। তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো নোনাজল। আমার হাত টি তার বুকে স্পর্শ করিয়ে বললো,

—আমিও তোমাকে যেতে দিবো না। একদম না! জানো, আমার এখানে ঠিক এখানে ব্যাথা করছে। তীব্র ব্যাথা। কি যে জ্বলা-জ্বলছে আমি বলতে পারছি না। এত বেশি ব্যাথা কেনো লাগছে বলো না? তোমার এ কষ্ট দেখার পূর্বে আল্লাহ তায়ালা আমাকে নিয়ে যান নি কেনো? কেনো নিয়ে যান নি? আমি তখন কেনো তোমার কথা শুনি নি? হোয়াই? আমার নিজেকে শেষ করে ফেলতে ইচ্ছা করছে। কি করবো আমি বলো না?

ইশান কেঁদে দিলেন। তার কান্না আমার ব্যাথার পরিমাণ দ্বিগুণ করে দিলো। আমি বুঝতে পারছি আমার ব্যাথা সাধারণ নয়। কেননা এর পূর্বের ব্যাথাগুলো অল্প কতগুলো সেকেন্ড স্থায়ী হতো। অথচ আজ অনেক বেশি হচ্ছে। চোখদুটো ঝাপসা হচ্ছে, মাথা টাও ঘোলাটে লাগছে।

#চলবে…

®সোনালী আহমেদ

[ আমি যথাসম্ভব মার্জিত ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন।
পূর্বে থেকেই সম্পূর্ন গল্প টি আমার সাজানো। আমি পয়েন্ট টু পয়েন্ট লিখছি।আপনারা দয়া করে, ধৈর্য্য ধরুন ধীরে ধীরে শেষ করছি। অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।♥]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here