এবং_তুমি পর্ব ২৩

0
857

গল্পের নাম— #এবং_তুমি❤️
লেখিকা— #সোনালী_আহমেদ
পর্ব– ২৩.

ইশান, ডক্টর নিধির সাথে চলে যেতেই আপা এসে আমায় চেপে ধরলেন। তিনি বললেন,

—এসব কি ধরনের অভদ্রতা প্রভা? তুই ওভাবে রিয়েক্ট কেনো করেছিস? তোর ভাব কত বিরক্তিকর ছিলো তুই জানিস?

—তুমি জানো তিনি কে?

—হু, ইশান ভাইয়ের ফ্রেন্ড। মাত্রই তো বললো।

—নো,ইশান স্যারের এক্স।

আপা চোখদুটো বড় করে ফেললো। আমি বললাম,

—-ইশান স্যার নিজে বলেছেন।

—তো, তাই বলে তুই এভাবে কথাবার্তা বলবি? দুদিন আগেও তো আমার সাথে উনার রিলেশন /বিয়েটিয়ে ইত্যাদি ইত্যাদি করিয়ে দিচ্ছিলি তখন?

— তখন আমি ছোট ছিলাম।

—এখন বড় হয়ে গেছিস? মাত্রই তো ইশান ভাইকে যেতে দিতে চাইলি না। কেমন ন্যাকামি করেছিলি।

আমি শান্ত স্বরে বললাম,

— শুনো আপা, আমার হ্যাসব্যান্ডের এক্স নিয়ে আমার জ্বলবেই। আমি কোনো সাধু মেয়ে না যে এক্সকে দরদ দেখিয়ে স্বামীর সাথে হাত ধরাধরি করে চড়ে বেড়াতে দিবো। তোমার যদি মনে হয়, আমি ন্যাকা বা বিরক্তিকর কিংবা অস্বাভাবিক আচরণ করছি তাহলে হ্যা আমি করছি। কারণ আমি পরে বাবার মতো পস্তাতে চাই না। তুমি নিশ্চই মা-বাবার কাহিনী জানো? জানো না? কি ভুলে গেছো? মনে নেই কি হয়েছিলো -বাবা যখন আনোয়ার চাচার দরদকে প্রশ্রয় দিয়েছিলো। একসাথে খাওয়া,কথা বলা, আড্ডা দেওয়া এসবে যখন মাকে আর আনোয়ার চাচাকে প্রশ্রয় দিয়েছিলো তখন দেখো নি,কীভাবে বাবার সংসার ভেঙ্গে মাকে নিয়ে চলে গেছিলো? তুমি কি চাও আমার লাইফে আমিও বাবার মতো সেই ভুল করি।

—ডক্টর নিধি আনোয়ার চাচার মতো নন।

—সেটাই তো সমস্যা। সে উনার মতো নন। যদি উনার মতো খারাপ হতেন তাহলে এত চিন্তা হতো না কারণ ইশান জানতেন তিনি খারাপ।তাই তাদের ২য় বার মিল হওয়ার সম্ভাবনা ই নেই।কিন্তু ডক্টর নিধির ব্যবহার বলছেন উনি যথেষ্ট ভালো যার অর্থ ইশান ২য়বার উনার প্রতি দূর্বল হয়ে যেতে পারেন। কি গ্যারান্টি আছে যে তিনিও মায়ের মতো ভুল করবেন না? শুনো আপু আমাদের প্রেমের বিয়ে নয়, জোরপূর্বক বিয়ে। যা জোড়া লাগতে যেমন সময় লাগে নি ভাংতেও সময় লাগবে না। তাই আমার সচেতনা বা অনুভূতি গুলো তোমার নিকট ন্যাকামি মনে হলো আমার সত্যিই কিছু করার নেই। এটা তোমার মানসিকতার সমস্যা। আমি কেনো তার জায়গায় নিজেকে বসাবো? হোয়াই? তার কর্মের জন্য সে দায়ী। আমি নিজের কথা বাধ দিয়ে উনার কথা কেনো ভাববো? সে করে কেনো প্রেম? তার দোষ, এর দায়ভার আমি কেনো নিবো? শুনো বিয়ের পর তুমি তোমার স্বামীকে তার এক্সের সাথে বিদেশে পাঠাই দিয়ো,দরকার পড়লে তাদের জন্য রান্নাবান্না করেও পাঠাই দিয়ো।

আপা পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে বললেন,

—আচ্ছা শান্ত হও।এত উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছিস কেনো? তোর শরীর খারাপ করবে তো। অপারেশনের গা এখনো শুকায় নি। এই নে পানি খা। রিলেক্স, এত সিরিয়াস হচ্ছিস কেনো? আমি তো এমনিই বললাম।

— এমনি কেনো বলবা আপা? তুমি তো শুরু থেকেই জানো বাবা আর মায়ের কাহিনী। এরপরেও বলছো, আমি আমার হ্যাসব্যান্ডকে অন্য মেয়ের সাথে ধরাধরি করে চলে যেতে বলি? তুমি কেনো ওই মেয়ের স্থানে নিজেকে বসাচ্ছো? আমার স্থানে কেনো নয়? আমি একজন স্ত্রী, আর তিনি প্রাক্তন। তুমিও কারো প্রাক্তন তাই তুমি তার দিকটা ভাবছো, কেউ তোমার সাথে এমন করলে তোমার কেমন লাগতো সেটা ভাবছো। কিন্তু আমি? আমি কারো প্রাক্তন নই তাই আমি সেদিক ভাবছি না। আমি আমার দিকটা ভাবছি। আমার স্থানে নিজেকে বসালে দেখবে আমি একদম সঠিক।

আপা মাথা নাড়ালেন। আমি পানি টা খেলাম। শরীর ঠান্ডা হয়ে আসলো। আপার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি। এটা আমার ভুল।খুব বড় ভুল। কিন্তু আমি এভাবে বলতে চাই নি, আপা ওইসব কথা বলায় আমার মাথা ঠিক ছিলো না। খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু এবার এটা আমার ঠিক হয় নি। একদম ঠিক হয় নি। আমি অপরাধী কন্ঠে বললাম,

—-সরি আপা।আমাকে মাফ করে দাও। আমি তোমার সাথে এভাবে কথা বলতে চাই নি। একদম না। আমি সত্যি এভাবে বলতে চাই নি। আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও। তুমি ওভাবে বলায়, জানি না কীভাবে মুখ দিয়ে এসব বেরিয়ে গিয়েছে। আমার মাথা টা একদম ঠিক নেই। হঠাৎ ই উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছি, হঠাৎ ই ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছি। কেনো এমন করছি বুঝতে পারছি না। শরীর খুব খারাপ খারাপ লাগছে। সরি সরি আপা,প্লিজ মাফ করে দাও।

—মারবো একটা। তুই আজ এভাবে বলেছিস দেখেই আমি খুশি হয়েছি। তুই সবসময় চুপচাপ থাকতি, কোনোকিছুর বিপরীতে কথা বলতি না। জানিস, আমার কত চিন্তা হতো তোকে নিয়ে। আজ সে চিন্তা গায়েব করে দিলি। আই এম প্রাউড অফ ইউ!

মাধবি আপা আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমিও আপাকে জড়িয়ে ধরলাম। অপরাধবোধ কাটছিলোই না। এবার একটু কম লাগছে। কিছুক্ষণ পরপরই ইশান , ডক্টর নিধির সাথে খাবার নিয়ে আসলেন। আমি চুপচাপ বসে রইলাম। আপা যদি মনে করে থাকে আমি ন্যাকামি করছি তাহলে যাও আর কিছুই বলবো না। ওরা একসাথে ঘুরঘুর করলেও কিছু বলবো না। মনে মনে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম।

খাবার টা মুখে দিতেই তেতো ঠেকলো। খেতে চাইলাম না, রেখে দিলাম। গলা দিয়ে খাবার নামছে না। আপার কথা গলায় আটকে আছে। এসব শুনলে কার ভালো লাগবে জানা নেই। আমি হয়তো সত্যি বেশি রিয়েক্ট করে ফেলছি। ইশান কৌতুহল নিয়ে বললেন,

—কি হলো তুমি খাচ্ছো না কেনো?

ডক্টর নিধি বললেন,

— খাবার ভালো হয় নি? কিছু উল্টাপাল্টা হয়েছে?

আমি বললাম,

—উহু, খাবার খুব ভালো হয়েছে। তবে সমস্যা হলো এত ভালো আমি হজম করতে পারি না।

শেষের কথাটা বিড়বিড় করেই বললাম। কেউ বোধ হয় শুনতে পান নি। আমার মন-মেজাজ খুব খারাপ হতে লাগলো। মাথা ঘুরাচ্ছে, পেটে চিনচিন সুক্ষ ব্যাথাও হচ্ছিলো। কিন্তু কাউকে বললাম না। দেখা যাবে অন্য একজন এসে বলবে, এসব তো নরামালি হয়, এমন ন্যাকামি করার কি দরকার? জানি অন্য কেউ নেই। তবুও বলতে কতক্ষণ? কিছু কথার এত ধার থাকে যে সেটা কাউকে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতে সম্ভব। ব্রেইনের উপর বিরাট প্রভাব ছড়িয়ে ফেলে মুহূর্তেই। অনেকেই হয়তো অজ্ঞাত যে ‘কথার আঘাতেও মানুষের মৃত্যু হয়, যা চোখে দেখা যায় না।’

স্বাভাবিকভাবে যখন আমি হাল ছেড়ে মাথাটা এলিয়ে দিচ্ছিলাম,ঠিক তখন ডক্টর নিধি ইশানের প্লেটে চিংড়ি দিয়ে রান্না মিষ্টি কুমড়ো তুলে দিলেন। রিনরিন কন্ঠে বললেন,

—টেস্ট ইট, ইউর ফ্যাবারিট রেসিপি।

সাথে সাথে আমি উঠে গেলাম। পারলাম না আপার কথা গায়ে মাখতে। বেহায়া-বেলাজার মতো ইশানের প্লেট টা ছিনিয়ে নিয়ে নিলাম। হেসে বললাম,

—আমি এটা খাবো। কুমড়ো আমার খুব প্রিয়। দেখি, দেখি কেমন মজা? মুখে খাবার নিয়েই বললাম, ‘অসাধারণ।’

পরপর দুটো মিথ্যা কথা বললাম। প্রথমত মিষ্টি কুমড়া আমার পছন্দ নয়, তরকারী হবে ঝাল-ঝাল। আর মিষ্টি কুমড়া হলো মিষ্টি মিষ্টি। এটা নিশ্চই প্রিয় হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, খেতে মোটেও অসাধারণ নয়, আমার কাছে সেই প্রথমবারের মতো তেতো ঠেকেছে। মিস নিধি আর আপা হা করে তাকিয়ে রইলেন। ইশান মিষ্টি হেসে বললো,

—ভালো লেগেছে? দাও, আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

আমি এক্ষুণি প্লেটে হাত ধুতেই নিচ্ছিলাম, কিন্তু ইশানের কথাশুনে পারলাম না। সে তার এক্সের সামনে আমাকে খাইয়ে দিবে, এর থেকে মজার বিষয় কিছু আছে? ইচ্ছা না থাকা স্বত্ত্বেও রাজি হয়ে গেলাম। হাসিমুখে তার হাত থেকে খেতে লাগলাম। গিলতে কষ্ট হচ্ছিলো তবুও ইশানের হাত চেটে খেতে ভুলিনি। ডক্টর নিধি অস্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। আমি গায়ে মাখলাম না। কি কষ্টের পরিস্থিতিতেও আমি হাসিমুখে খাচ্ছিলাম তা বোধহয় কোনোদিন ভুলবো না। ডক্টর নিধি হুট করেই উঠে বললেন,

— আই এম ডান। আমি যাচ্ছি।

সে চলে গেলো। তার নিশ্চই খারাপ লেগেছে। লাগুক। জনসেবা আর জামাইসেবা দুটো আলাদা জিনিস। ব্যাপারটা স্বামী নিয়ে না হলে আমি কখনো এমন করতাম না। মুখ ফুলিয়ে মুখ মুছে নিলাম। তখনই কোথা থেকে হড়বড় করে অনেকগুলো মানুষ ঢুকে পড়লেন। আমি বড়বড় চোখ করে সবার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার শশুড়বাড়ীর একটা লোক বাদ রইলো না। ইভেন ফোনকোলে ফুফুমা আর দাদীও রয়েছেন। আমার ভয় লাগতে শুরু করলো। বড় ভাবী ডক্টর নিধিকে দেখতেই বললেন, ‘নিধি,তুমি?’ তার চোখদুটো অন্যরকম দেখাচ্ছিলো।

.

#চলবে…….

®সোনালী আহমেদ

[ গঠনমূলক মন্তব্য করলে আজকে বোনাস পর্ব দিতে পারি। 😐বেশি পর্ব নেই হয়তো। রি-চেক করি নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here