মনের কিনারে তুই
লেখিকা:Tarin Niti
পর্ব: ৪২
কেটে গেছে এক সপ্তাহ।ইশার বাবা এখন একটু সুস্থ। কিছুদিন পর পর ডাক্তার এসে চেকআপ করে যায়।আশা করা যায় কয়েক মাসের মধ্যেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে।ইশা আর আরিয়ানের সম্পর্কটা এখনো আগের মতোই আছে।তবে আরিয়ান এখন ইশাকে একটু বেশিই জালাচ্ছে।যখন তখন এসে রুমে চলে আসে।যেদিন থেকে জেনেছে ইশা ওর চাচাতো বোন সেদিন থেকে আরিয়ান ইশাকে আরো বেশি করে জালাচ্ছে।
ইশার মা-বাবা আরিয়ানকে কিছু বলেনা। এ নিয়ে ইশা আরও বিরক্ত।তবে আরিয়ানের মা-বাবা মাঝে মাঝে আরিয়ানকে বকা দেয়।ইশা তখন খুশিতে বাকবাকুম হয়ে যায়।ইশারা ওদের ওই বাসা থেকে সব জিনিসপত্র নিয়ে এসেছে। যদিও এই বাসায় সবই আছে।
ইশা সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যালকনিতে যায়।ওর রুমের ব্যালকনি টা অনেক বড়।তাছাড়া ব্যালকনি থেকে সামনের বাগান থেকে শুরু করে একদম রাস্তা পর্যন্ত দেখা যায়।ইশা আড়মোড়া ভেঙ্গে ব্যালকনিতে দাঁড়ায়।ওর চুলগুলো এলোমেলো,চোখ মুখ ফুলে রয়েছে ঘুমানোর জন্য।পরনে একটা টি শার্ট আর প্লাজু।ইশা নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে আরিয়ান ওর বাবাকে ধরে ধরে হাঁটতে সাহায্য করছে। ইশা একদৃষ্টিতে দিকে তাকিয়ে থাকে।
ডাক্তার বলেছে প্রতিদিন এভাবে এক্সারসাইজ করলে ইশার বাবা আরো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে। ইশার মা প্রায় এই কাজটা করে। মাঝে মাঝে আরিয়ান আর ওর বাবাও ধরে ধরে হাঁটায়। আজকে আরিয়ান সাহায্য করছে।
আরিয়ানের পরনে একটা গ্রে কালার টি শার্ট আর কালোটা টাউজার।আরিয়ান ইশার বাবাকে ধরে ধরে হাঁটাচ্ছে তখন হঠাৎ আরিয়ানের ইশার দিকে চোখ যায়।আরিয়ান হেসে হাতের ইশারায় ইশাকে নিচে যেতে বলে। ইশা একটু মিষ্টি হেসে ইশারা আসছি বলে রুমে চলে আসে।তারপর চোখে মুখে পানি দিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে ওরনা নিয়ে নিচে চলে যায়।
বাগানে এসেই ইশা জুতো খুলে ঘাসে ওর খালি পা রাখে। সকালে খালি পায়ে নরম ঘাসে হাটার মজাই আলাদা। ইশা কি ওর বাবাকে ধরে বলে,
“আব্বু তুমি তো খুব ভালো হাঁটতে পারছো আর কিছুদিন পর একদম ফিট হয়ে যাবে”
ইশার বাবা হেসে বলে, ” হ্যাঁ তাইতো দেখছি। আরিয়ান যেভাবে ট্রিট করছে আমি সুস্থ হবোই হবো”
“আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে আর উনার প্রশংসা করতে হবে না, চলো এবার আমি তোমাকে হাঁটাই”
তখন আরিয়ান বলে, “কেনো?আমি চাচ্চুকে সাহায্য করছি তো”
ইশা কোমরে হাত দিয়ে বলে, “আমি করলে সমস্যা?”
“তুমি তো নিজেরই ব্যালেন্স রাখতে পারেনা অন্যকে কি ধরবে!”
ইশা একটু রেগে বলে, “আমি নিজের ব্যালেন্স রাখতে পারিনা?”
আরিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে, “না পারো না তো।কিছুক্ষণ পরপর ঠাস ঠাস করে পড়ে যাও”
ইশা ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলে, “আব্বু দেখলে উনি আমাকে কি বলে?”
আরিয়ান বলে, “যেটা সত্যি সেটাই তো বললাম”
ইশার বাবা এবার হেসে বলে, “আচ্ছা হয়েছে হয়েছে।তোরা সকাল-সকাল ঝগড়া শুরু করে দিয়েছিস! আর ইশা তোর আমাকে ধরতে হবে না”
“তুমিও উনার দলে!যাও তোমাকে সাহায্যই করবো না”
ইশা একটু রাগে দেখিয়ে গিয়ে পাশের দোলনায় বসে। আরিয়ান ইশার দিয়ে তাকিয়ে একটা বিজয়ীর হাসি দেয়। ইশা হাত ভাঁজ করে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে।সকালের মিষ্টি রোদ ইশার মুখে এসে পড়ছে। ওকে খুব মায়াবী লাগছে।এমনিতে ইশার চেহারায়।মায়া দিয়ে ভরা,তার উপর হালকা মিষ্টি রোদ!
আরিয়ান ইশার বাবাকে সাহায্য করছে আর কিছুক্ষণ পর পর ইশার দিকে তাকাচ্ছে।
অনেকক্ষণ পর ইশার বাবা আর আরিয়ান এসে ইশার পাশে বসে।ততক্ষণে ইশার রাগ চলে গিয়েছে।ইশা ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখে।ইশা বাবা মেয়ের পাগলামি দেখে হাসছে।তারপর ওরা।কিছুক্ষন গল্প করে ভেতরে চলে যায়।ইশা উপরে চলে যেতে নে তখন ইশার মা বলে,
“ইশা নাস্তা করে যা”
ইশা উপরে উঠতে গিয়ে ওর মা’র কথা থেমে যায়। তারপর ফিরে এসে টেবিলে বসে।আরিয়ান এসে ইশার পাশের চেয়ারটায় বসে পড়ে।ইশা এখনো বাগানের কথা ভুলে নি। ও আরিয়ানের দিকে রাগী চোখে তাকালে আরিয়ান বলে,
“কি হলো?এভাবে কি দেখছো?
ইশার টেবিল থেকে একটা ফল কাটার ছুরি নিয়ে বলে, “আমার ইচ্ছা করছে এখন আপনাকে পিস পিস করে কাটতে!”
আরিয়ান একটু ভয় পাওয়ার অভিনয় করে বলে, “ওমা কেনো?”
ইশা ছুড়িটা আবার আগের জায়গায় রেখে বলে, “জানিনা”
“ইশা তুমি সবসময় আমার উপরে এতো রেগে থাকো কেনো বলতো?”
“জানিনা”
“কি জানো?”
“কিচ্ছু জানিনা”
আরিয়ান এবার জোরে হেসে দিলো।ইশা আরিয়ানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়।তখন আরিয়ানের মা এসে বলে, “কি নিয়ে এতো হাসাহাসি হচ্ছে? ”
আরিয়ান ইশার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলে, “জানিনা!”
ইশার ইচ্ছা করছে কান্না করে দিতে। এই ছেলেটা যখনই সুযোগ পায় তখনই ওকে জ্বালায়।সবাই আসলে ওরা একসাথে নাস্তা করে।
নাস্তা করে ইশা উপরে চলে যায় ভার্সিটির জন্য রেডি হতে।
আরিয়ান এখন প্রায় সময়ই ইশার সাথে ভার্সিটি যায়।কিন্তু ইশা মাঝে মাঝে লুকিয়ে চলে যায় তাই আরিয়ানকে গাড়ি করে যেতে হয়।আজকেও ইশা লুকিয়ে বাসা থেকে বের হয়। তারপর রিকশায় উঠে একটা বিজয়ী হাসি দে।আজকের আরিয়ান ইশার সাথে যেতে পারবেনা!
.
ইশা ভার্সিটিতে গিয়ে দেখে রাইমা এখন আসেনি কিন্তু রাইমার তো এতক্ষণে চলে আসার কথা।ইশার একা একা ক্লাসে বসে থাকতে ভালো লাগছে না তাই একটু বের হয়।হাঁটতে হাঁটতে লেকের পাড়ে এসে ইশা কোমরে হাত দিয়ে সামনে তাকিয়ে থাকে।
রাইমা আর রিহান একটা বেঞ্চে পাশাপাশি বসে আছে।এখন ওদের মধ্যে যাওয়া উচিত না তবুও ইশা রাইমাকে জ্বালানোর জন্য ওদের কাছে যায়।ইশা রাইমার কাছে গিয়ে মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলে,
“তুই এখানে প্রেম করেছিস আর আমি তোকে পুরো ভার্সিটি খুঁজে বেড়াচ্ছি”
রাইমা অবাক হয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে ইশা কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে।রাইমা মুখ কুচকে ফেলে বলে,
“প্রেম করছি যখন দেখতে পাচ্ছিস তাহলে আমাদেরকে একটু প্রাইভেসি দেওয়া উচিত না?এই মেনার্স টুকু নেই তোর?”
“ওই বিল্লি তুই আমাকে মেনার্স শিখাস?জানিস আমার মতো মেনার্সওয়ালা মেয়ে এই বাংলাদেশে আর একটাও নেই হুম”
রাইমা কিছু বলতে যাবে তখন রিহান বলে, ” আরে ইশা কেমন আছো?”
ইশা একটু হেসে বলে, “জী ভাইয়া ভালো, আপনি কেমন আছেন?”
“তোমার বান্ধবীর যেমন রেখেছে।আসো তুমিও আমাদের সাথে বসো”
ইশা গিয়ে রাইমার পাশে বসে। রিহান বলে, “তোমার আর আরিয়ানের সম্পর্কটা দেখলে না মাঝে মাঝে হাসি পায়। এই দেখো, প্রথমে ভালোবাসা তারপর আরিয়ান কি একটা কাজ করলো এখন আবার তোমরা নাকি চাচাতো ভাই বোন!”
রিহান হাসি থামিয়ে রাখতে পারছে না। জোরে জোরে হেসে দিলো।রিহানের সাথে রাইমাও হাসে। ইশা একটু রাগ দেখিয়ে বলে,
” হ্যাঁ আপনাদের তো হাসি পাচ্ছে আর এদিকে উনি প্রতিদিন আমাকে জ্বালিয়ে মারছে।ভালো লাগেনা”
“জ্বালায় যখন রাজি হয়ে যাও না।তুমি তো ওকে ভালোবাসো আর ও কতবার ক্ষমাও চেয়েছে”
“আপনার বন্ধু একটা পাজি।একে ভালোবাসা সম্ভব না”
ইশার কথা শুনে রিহান আবার হাসে তারপর ফোন বের করে বলে,
“এই দেখো রেকর্ড করেছি।এটা কিন্তু আরিয়ানকে শোনাবো আমি”
ইশা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে, “যান যান শোনান। আমি ওনাকে ভয় পাই নাকি?”
ওদের কথা শুনে রাইমা তো হাসতে হাসতে শেষ।তারপর অনেকক্ষণ গল্প করে পর রাইমা আর ইশা চলে যায় ক্লাস করার জন্য।
ক্লাসে শেষে ইশা আর রাইমা মাঠে বসে বসে গল্প করছে। তখন একটা ছেলে এসে ইশাকে বলে,
“শুনছেন? ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট কোন দিকে একটু বলতে পারবেন?”
ইশা পেছনে তাকিয়ে ছেলেটাকে দেখে। ছেলেটাকে আগে কখনো দেখেনি ভার্সিটিতে,মনে হয় নতুন।
ইশা একটু হেসে বলে, ” নিউ স্টুডেন্ট?”
ছেলেটা বলে, “জী আপু”
ছেলেটার কথা শুনে রাইমা হেসে দে।ইশাও একটু হেসে বলে, “আমাদেরকে আপু বলার দরকার নেই।আমারও ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি”
“ওহ তাই? আসলে আমি এতদিন ঢাকায় ছিলাম না তাই ভার্সিটি আসা হয়নি”
“ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট সোজা গিয়ে একটা বট গাছ আছে তার বাঁ দিকে”
“থ্যাংক ইউ আপু.. সরি আপনাদের নামটা?”
“আমি ইশা আর ও রাইমা।তোমার নাম?সরি তুমি করে বলে ফেললাম”
ছেলেটা হেসে বলে, “না না ঠিক আছে।আমরা তো এক ইয়ারেই পড়ি।আমার নাম রাহাত”
ইশা হেসে বলে, “ওহ নাইস নেইম”
“থ্যাংক ইউ।আচ্ছা আমি আসছি বাই ইশা,বাই রাইমা”
রাইমাও হেসে রাহাতকে বাই বলে।রাহাত চলে যাওয়ার সাথে সাথে আরিয়ান ঝড়ের বেগে ইশার সামনে আসে।এসেই ইশাকে বলে, “ছেলেটা কে?”
আরিয়ানের রাগ দেখে ইশা অবাক হয়ে যায়
আরিয়ান আবার দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ছেলেটা কে??? ”
ইশা একটু আমতা আমতা করে বলে, “রাহাত!”
“কে রাহাত?ছেলেটার সাথে তোমার কী সম্পর্ক?”
আরিয়ানের কথা শুনে ইশার মুখ হা হয়ে যায়।তারপর বলে,
“সম্পর্ক মানে?ওর সাথে আজকে প্রথম দেখা হলো, ইংরেজি ডিপার্টমেন্ট টা কোন দিকে জানতে চেয়েছিলো”
“কেনো?তোমার কাছে কেনো জানতে চাইবে আর কেউ নাই?”
“আরে আজব আপনি এরকম করছেন কেনো?”
আরিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ” তুমি কোনো ছেলের সাথে কথা বলবে না”
ইশা এবার রেগে বলে, “আমি কি ওর সাথে প্রেম করছি নাকি জাস্ট ইংরেজি ডিপার্টমেন্ট কোন দিকে সেটাইতো বলে দিয়েছি”
ইশার কথা শুনে আরিয়ানের রাগ উঠে যায়।একটু চেঁচিয়ে বলে, “তোমার কাছে কেনো জানতে চাইবে?আর স্টুডেন্ট নেই?তুমি আর কখনো কোনো ছেলের সাথে কথা বলবে না ইশা”
ইশা আর রাইমা প্রায় সময়ই নিরিবিলি জায়গায় বসে। তাই এদিকটায় খুব বেশি স্টুডেন্ট নেই।রাইমা তো হা করে দুজনকে দেখছে।একজন রেগে থাকলে আর একজনকে শান্ত থাকতে হয়।আর এদিকে আরিয়ান ইশা দুজনেই রেগে আছে!
আরিয়ানের কথা শুনে ইশা রেগে বলে, “আপনি কে যে আমাকে আপনার কথায় চলতে হবে!আপনি আমার উপর কিসের অধিকার দেখান?”
আরিয়ান চোখ মুখ শক্ত করে ইশার দিকে।তাকিয়ে বলে, “আমি তোমাকে ভালোবাসি আর আমি চাইনা আর তুমি কোনো ছেলের সাথে কথা বলো”
“বলবো কথা!একশোবার ছেলেদের সাথে কথা বলবো।তাতে আপনার কি?”
আরিয়ান রেগে ইশার দিকে এগিয়ে যায়।ইশা ভয় পেয়ে একটু পিছিয়ে যায়।আরিয়ান ইশার দিকে একপলক তাকিয়ে তারপর হনহন করে চলে যায়।
রাইমা একবার ইশাকে দেখছে আর একবার আরিয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।দুটোই অবুঝের মতো আচরণ করছে।এদেরকে সামলাবে কে!!
চলবে…