কেউ কোনোদিন জানবে না পর্বঃ২

কেউ কোনোদিন জানবে না পর্বঃ২
#Tasfiya Nur

হাসপাতালের রোগীদের ওয়ার্ড এ পাচটা বাচ্চা ভর্তি করা।তাদেরই দেখতে এসেছে রুহাশা।কারোর হাতে ইন্জুরি কারো বা পায়ে দুজনপর মাথায় ব্যান্ডেজ। একটা বাচ্চার বেডের পাশে টুলে বসে আছে।তার পাশেই দারিয়ে আছে রাতুল আর তার বোন রাত্রিয়া। বাচ্চাদের সাথে কথা বলা হয়ে গেলে রুশা ডক্টরের সাথে কথা বলে নেয়।তারপর রাত্রিয়াকে রেখে যায় তাদের দেখে রাখার দায়িত্বে।রাতুলকে সাথে নিয়ে হসপিটালের সামনে একটা কফিশপে যায় রুহাশা। কফি অর্ডার করে তাকায় রাতুলের দিকে, হালকা শ্যামবর্ণের ছেলেটার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ।মূলত সে রুহাশাকেই ভয় পাচ্ছে কারণ রুশাকে না বলেই সে বাচ্চাদের নিয়ে লংড্রাইভে যাওয়ার প্ল্যান করে।রাস্তার ধারে গাড়িটা সাইড করে বাচ্চাদের জন্য আইসক্রিম কিনতে গিয়ে একটা ট্রাক এসে গাড়িটাকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কাটা জোড়ে না দেয়ায় হালকা কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সবার।রাতুল বাইরে থাকায় তার তেমন কিছু হয়নি কিন্তু সবাইকে সেফ করে বাইরে আনায় মাথায় হালকা ব্যাথা পেয়েছে সে। কপালের কোণে ছোটোখাটো ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগানো।এসব হয়েছে সকালে সাতটার দিকে, রুশাকে কল করে তখন রাতুল এসবই জানায়। তখনই প্রিন্সিপালকে বলে ছুটি নেয় রুহাশা আর বেরিয়ে পরে হসপিটালের উদ্দেশ্যে।রুশা পারেনা ফোনেই রাতুলকে মারে কিন্তু এ বেচারারই না কি দোষ। এর মাঝেই ওয়েটার এসে কফি দিয়ে যায়।তাই কিছু না বলে গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কফির মগটা হাতে নিয়ে রাতুলের উদ্দেশ্যে বলে রুহাশা,
যা জানলাম খোজ নিয়ে দেখ কে এসব করলো নয়তো গাড়ি সাইড করে রাখা সত্বেও গাড়িকে ধাক্কা দেওয়া নিশ্চিত ন্যায়সংগত না।তুই তো গাড়িটার নাম্বারটা খেয়াল করেছিলি তাইনা?
রাতুল রুহাশার দিকে তাকিয়ে একটু অবাকই হয় এতকিছুর পরও রুশা শান্তস্বরে কথা বলছে কেমন অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থাকে রুশার দিকে আর কফি খেতে থাকে কিন্তু কথা বলা যেন ভুলে গেছে এমন অবস্থা। তার কথার কোনো উত্তর যেন রাতুলের কাছে এমন একটা ভাব।রুহাশা রাতুলের এমন ভ্যাবলাকান্ত মার্কা চাহনী সহ্য করতে না পেরে টেবিলের উপর জোড়ে একটা থাপ্পড় দেয়। তারপর রাতুলে সামনে হাত দিয় চুটকি বাজিয়ে বলে,
মহোদয় আপনার ভাবনা শেষ হলে একটু আমার কথার উত্তরটা দিবেন?
এই রে ঘুমন্ত রাগকে জাগিয়ে দিলাম কথাটা মনে মনে ভেবে রাতুল আমতা আমতা করে উত্তর দেয়,
হ্যা খেয়াল করেছিলাম আর মনেও আছে। তুই দুটোদিন সময় দে আমি সব ইনফরমেশন বের করে হাজির হবো তোর সামনে।
আচ্ছা ঠিক আছে পারলে আরও তাড়াতাড়ি করিস। আর বাকিরা কই সাদিফ রাদিফ তাহুন ওরা কোথায়? এতকিছু হলো ওদের খবর নেই বাহ!এই আমি তোদের সব দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত ছিলাম। নিজের উপর এখন নিজেরই রাগ লাগছে।
তুই ভুলে কেন যাচ্ছিস রুশা আমাদের এনজিও তে আরও পঁচিশজন বাচ্চা আছে তাদেরও তো খেয়াল রাখতে হয় আর বাকিরাও তোর মতো সন্ন্যাসী জীবন পার করছেনা সাদিফের বউ আছে ওরা সবাই ও কিন্তু জব করে আমার মতো বাপের হোটেলে বসে খায়না।
রুশা রাতুলের কথায় চোখ ছোটো ছোটো করে তাকায় রাতুলের দিকে।আর রাতুল দাত দিয়ে ঠোঁটে কামড় দিয়ে অন্যদিকে তাকায়। কার সামনে কি বলে ফেললো এবার তো আৃায় কাচায় চিবিয়ে খাবে এই মেয়ে।কিন্তু না রাতুলকে অবাক করে দিয়ে রুশা বলে,
ডক্টরের সাথে কথা হয়েছে বাচ্চা গুলোকে নিয়ে এনজিওতে চলে যা। ডক্টর রিলিজ করে নিয়ে নেওয়া যাবে বলেছে।রাত্রিকে বলিস আমার বাসায় যেতে আমি সব ক্যাশ পাঠিয়ে দিবো ব্যাংক ফাকা করে রেখেছি।মায়ের নামে একাউন্ট তো ভাইয়া যখন খুশি সাইন করে নিয়ে টাকা নিয়ে যায়।
ঠিক আছে কাল সকালে পাঠিয়ে দিবো। এখন তো বিকেল হয়ে গেছে।বাচ্চাদের নিয়ে এনজিওতে যাওয়া সবার রাতের খাবার ঠিক করা সময় লাগবে।
ওকে ফাইন আজ তবে উঠা যাক আর শুন খোজটা ঠিকঠাক এনে দিস নয়তো তোর একদিন কি আমার যেকদিন লাগে।আমার এনজিওর পিছনে আগের অনেকে লেগেছে আজ আবারও লাগলো। সমাজের কারোর ভালো যেন কেউ দেখতেই পারেনা।
রাতুল রুশার কথার কোনো প্রতুত্তর করেনা। কাউন্টার এ গিয়ে কফির বিল দিয়ে রুশাকে নিয়ে বেরিয়ে পরে। রুশা যায় বাসার দিকে আর রাতুল হসপিটালের দিকে।

রুহাশা তাহুন রাতুল সাদিফ রাদিফ পাচজন ফ্রেন্ডসার্কেল। ভার্সিটি লাইফ শেষ করে যে যার মতো ব্যাস্ত হয়েছিলো নিজেদের লাইফে।নিয়ম করে মাসে চারদিন ওফডে তে মিট করতো ওরা কোনো একটা রেস্টুরেন্টে। কিন্তু যেদিন থেকে রুহাশার লাইফে রুহাশ আসে তারপর দিনই রুশা সবাইকে ইমার্জেন্সি মিট করতে বলে।তারপর সবার সামনে পথশিশুদের নিয়ে কাজ করার কথা বলে।সবারই ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগে তাই দ্বিমত করেনি।একটা এনজিও দেয় ওরা। যেটার কাজ হলো নিজ নিজ দায়িত্বে শহরের অলিগলিতে পরে থাকা গরীব অসহায় বাচ্চাদের দুবেলা দু মুঠো খাবার দেওয়া আবার অনেকের পড়াশোনার ব্যবস্থাও করে দেয়।রুহাশা নিজ আগ্রহে তার জন্মদিনে বাবার গিফট করা জমিতে এনজিও টা দেয়।সেখানে তুলে এনেছে বাবা মা হীন তিরিশটা বাচ্চা।প্রথমদিকে কারোরই তেমন কাজ ছিলো না বলে অনেক সময় দিতো। কিন্তু সময় তো থেমে থাকেনা। সবারই জীবনের প্রয়োজনে চাকরি নেওয়া তারমাঝে আবার সাদিফ আর রাদিফ বিয়ে করেছে আর তাহুনের বিয়ে হয়ে গেছে। সাদিফ আর রাদিফ জমজ ভাই বলে একসাথেই বিয়ে করেছে।বিয়ে করেনও শুধু রাতুল আর রুহাশা।রাতুল ভবঘুরে যখন যা মন চায় করে।তার বাবা একজন কাপড় ব্যবসায়ী।ছেলেকে চাপে ফেলেও বিয়ে করাতে পারেনি।তাই রাতুল সবসময়ই বাচ্চাগুলোর সাথে থাকে।রাত্রিয়া রাতুলের বোন সেও খুব সাপোর্ট করে এসবে।আর বাকিরা সারাদিন কাজ শেষে সুযোগ বুঝে রাস্তায় ঘুরে খুজে বের করে পথশিশুদের যে যতটুকু পারে তা দিয়ে হেল্প করে।রুহাশার এই কাজের জন্য অনেক বার বিভিন্ন ভাবে শিশুপাচার কারী কিংবা বিভিন্ন উচু পদের নেতাদের দ্বারা বিপদে পরেছে কারণ হিসেবে দেখা গেছে শিশুদের দিয়ে শিশুশ্রমের মতো জঘন্য আইনী অপরাধ। কারণ রুহাশা অনেক সময় এমন শিশুদের পেয়েছে যাদের থেকে জানা গেছে তাদের বিভিন্ন নেতারা ভালো থাকার কথা বলে নিয়ে গিয়ে বাসায় কাজ করিয়েছে আর ভুল হলে করেছে বিভিন্ন অত্যাচার।যার জন্য রুহাশা পরে সেইসব নেতাদের মুখোশ জনসম্মুখে আইনের সাহায্য নিয়ে উন্মোচন করেছে। যেকারণে তার এনজিও-র পিছনে সবসময়ই কেউ না কেউ লেগে থাকে যেন রুহাশা এসব বন্ধ করে দেয়। কিন্তু রুহাশা তো নিজের মতোয় চলছে যে লাগতে এসেছে ব্যর্থ হয়েছে কিন্তু এবার কে লাগলো এটাই রুহাশা ভেবে পাচ্ছে না।

এয়ারপোর্টে দাড়িয়ে আছে মিসেস শিরিন সাথে তার মেয়ে জারিফা। তার আরও একজন মেয়ে আছে কিন্তু তার কোনো খোজ এই মুহুর্তে তাদের কাছে নেই। সে নিজের মতো থাকতে ভালোবাসে পরিবারের খবর তার না জানলেও চলে আজ মিসেস শিরিনের ছেলে রিজভী আহমেদ ফিরছে কাতার থেকে।ফ্লাইট ও ল্যান্ড করেছে শুধু রিজভীর বাইরে আশার অপেক্ষা। রিজভী আহমেদ পেশায় একজন ডক্টর। চারবছর আগেও সে দেশেই ছিলো কিন্তু তার জীবনের একটা কমতি সেটা ভোলার বৃথা চেষ্টায় এতদিন মামার বাসা কাতারে ছিলো। তার মামারা কাতারেই সেটেল্ড। রিজভীর বাবা মিঃ জাহিদুল আহমেদ বিভিন্ন জায়গা কিনে ফ্লাট বানিয়ে বিক্রি করেন এটাই তার পেশা।মোটকথায় কনস্ট্রাকশন কোম্পানি।

কেমন আছো মা?
রিজভীর মা ছেলের গলা পেয়ে হাতের ঘড়ির থেকে চোখ সরিয়ে তাকান ছেলের দিকে। জারিফা ভাইকে দেখে জড়িয়ে ধরে।রিজভী বোনকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে কথা বলতে শুরু করে শুরু করে মা আর বোনের সাথে। তারপর গাড়িতে উঠে রওনা দেয় বাসার উদ্দেশ্য।

সময়টা রাত ন’টা, রহমান ভিলায় একপ্রকার নিরবতা পালন হচ্ছে ঠিক এই মুহুর্তে। মিসেস সায়লা আর শারমিনের সামনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে রায়হান সাথে আরও একটি মেয়েকে নিয়ে,মেয়েটা তার দুঘন্টা একুশ মিনিট আগে বিয়ে করা বউ।চিন্তা সেটা নয় চিন্তা এটা মেয়েটাকে দেখলে রুশার কি রিয়েকশন হবে।এটা ভাবতেই সবার অবস্থা ঘেমেনেয়ে একাকার। মেয়েটা যে রুহাশার জীবনের কালো অতীতের জন্য দায়ী যে মানুষ সেই মানুষটা বোন।সোফায় গালে হাত দিয়ে বসে আছে দাদী তার কোলে ছোট্ট রুহাশ চকলেট খাচ্ছে। রুশা বাসায় এসে রাতুলের কল পেয়ে আবার চলে গেছে।টাকার সমস্যা দেখা দিয়েছিলো এজন্য। এখন সবাই অপেক্ষা করছে কখন রুশা আসে।রায়হান সবার দিকে একনজর তাকিয়ে বিয়ে করা বউকে নিয়ে সোফায় গিয়ে বসার জন্য পা বাড়াতেই মিসেস শারমিন ধমকে বলে উঠেন,
কোথায় যাচ্ছিস থাক ওখানে দাড়িয়ে রুশা না আসা অব্দি ওখানেই থাক এটা তোদের আমাদেরকে না জানিয়ে বিয়ে করার শাস্তি।
মায়ের কথায় অসহায় চোখে তাকায় রায়হান আর রায়হানের দিকে তাকায় তার সদ্য বিয়ে করা বউ।

কাকে ধমকাচ্ছো ছোটোমা?
কথাটা রুশা গেট দিয়ে বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে জিগাসা করে রুশা।

চলবে?
(আসসালামু আলাইকুম, ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,বাসায় মেহমান ভরপুর সময় হচ্ছে না ফোন হাতে নেওয়ার এটুকু টাইপ করা ছিলো তাই দিয়ে দিলাম সরি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here