খুনশুটি_ভালোবাসার পর্ব ২

0
2874

#খুনশুটি_ভালোবাসার 💞❤️💞
#Nishi_khatun (angel_frozen)
#02

-এই তুমি কেমন বোন?নিজেকে আমার বোন পরিচয় দিতে তোমার লজ্জা করছে না?কেউ তার ছোট বোন কে এভাবে পরপুরুষের কাছে পাঠাতে পারে?কথায় আছে নিজে বাঁচলে বাপের না।আর তুমি তো আমার আপন বোন না।তোমার জন্য কেনো আমি সুইসাইড করতে যাবো?

আনিসা :-তুই বা কেমন বোন?সারাদিন নিজেকে এতো কাজের বলে দাবী করিশ আর কাজের বেলা ফাঁকা কলসি।

অনু :-আমি মোটেই এমন না আপু!

আনিসা :-তুই যদি ঐ ছেলের সাথে দেখা করতে না যাস তাহলে আমি হারপিক খেয়ে সুইসাইড করবো দেখেনিস।

অনু:-ভালো মানের বিষ ব্যবহার করতে পারো।এসব টয়লেট পরিষ্কার করার জিনিষ কেনো খেতে যাবে?

আনিসা :-তুই বোন নামের কলঙ্ক।তাই বলে অনুর হাতে একটা এড্রেস দিয়ে সেখান থেকে আনিসা চলে যায়।

অনু হাতে থাকা কাগজটা খুলে দেখে এটা একটা রেস্টুরেন্টের ঠিকানা।আল্লাহ জানে এই খানে গিয়ে আজ সে কোন বিপদে পড়বে।

কপালে যাই থাক সমস্যা নেই!বোনের উপকার তো তাকে করতেই হবে।

তাই সে চুপচাপ রেডি হয়ে হাতে থাকা রেস্টুরেন্টের ঠিকানাতে পৌঁছে যায়।

অনু রেস্টুরেন্টের ভেতরের প্রবেশ করে অবাক।আল্লাহ আমি এ কোথায় চলে আসছি।এতোবড় রেস্টুরেন্ট।পুরো রেস্টুরেন্ট ফাঁকা।কোনো মানুষের নাম নিষানা নেই।তাহলে এখানে থাকার মানে হয় না।ফাঁকা স্থান মানে শয়তানের বাড়ি।এসব ভেবে বাহিরে যাবে এমন সময় রেস্টুরেন্টের একজন কর্মচারী সেখানে প্রবেশ করে।অনুকে বলে,”ম্যাম আপনি কি আনিসা ম্যাডাম?”

অনু মাথা এক বার দুদিকে ঘুড়িয়ে না বলে!তারপর আবারো মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যা বোঝায়।

সেই লোকটা অনুকে রেস্টুরেন্টের দোতালা তে চলে যেতে বলে।সেখানে তার জন্য কেউ একজন অপেক্ষা করছে।

অনু মনের মাঝে অনেক সাহস নিয়ে সোজা দোতালাতে চলে যায়।সেখানে গিয়ে দেখে একটা টেবিলে একজন পুরুষ মানুষ বসে আছে।
তবে তার চেহারাটা ঠিক দেখা যাচ্ছে না।
কারণ সে লোকটা মুখের সামনে একটা ফাইল নিয়ে তার ভেতরে ডুবে আছে।এসবে অনুর কেনো মাথা ব্যাথা নেই।সে যে কাজ করতে আসছে তা করে চলে যাবে।

সেই অনুযায়ী অনু লোকটার টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে গড়গড় করে বলতে শুরু করে!এটা কি মগেরমুলুক পেয়েছেন?বাচ্চা একটা মেয়েকে বিয়ে করবেন?আমরা কি বুঝি না?ওসব খুব ভালো করে বুঝি বিয়ের পর বউ কে ঠিকি সাথে রাখতে নিজের বাড়ি নিয়ে যাবেন।তখন লেখাপড়া সব চুলতে যাবে।তাই আপনি এই বিয়ে করতে রাজী থাকলেও আমরা রাজী নাহ।বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলর।

এদিকে নিজের মুখের সামনে থেকে ফাইল টা সরিয়ে সামনে বসে থাকা মেয়েটাকে দেখে চিৎকার করে বলে,”তুমি এখানে কেনো?”

অনু সামনের মানুষটার দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বলে,”আ-রি-য়া-ন ভভভাইয়া আপনি এখানে?”

আরিয়ান বলে,”তুমি এখানে কেনো আসছো?আর আনিসা কে নিভাবে চেনো?সে কোথায়? তুমি বিয়ে নিয়ে পাকনামি করতে আসছো তোমার বাড়ির মানুষেরা জানে?”

অনু বলে,”আপনি বা কেমন মানুষ!লেখাপড়া কমপ্লিট না করে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছেন?বিয়েে পর বউ কে কী খাওয়াবে পড়াবেন?বিয়ের পর তো বউয়ের দায়িত্ব স্বামীর হয়।”

আরিয়ান বলে,”আমি এক বারো বলেছি?আমি এখানে কনে দেখতে আসছি?বিয়ে করবো কি না সেই সিদ্ধান্ত জানতে এসেছি।আনিসার মতামত জানার পর সিদ্ধান্ত নিবো।”

অনু বলে,”আনিসাপু আপনার সাথে দেখাও করতে চাই না।সে এই বিয়েটা করতে চাই না।তাই তার মাধ্যম হয়ে আমি এসেছি।”

আরিয়ান বলে,”সবে মাত্র এস এস সি পরিক্ষা দিয়েছো!এতো ছোট বয়সে পাকনামি করার কী খুব দরকার তোমার অনু?একটা নিজের বয়সী মেয়েদের মতো চলাফেরা করলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে?”

অনু এসব কথা কানে তুলছে না,,আরিয়ানের কথার উওর না দিয়ে বলে,”আপনি যে বিয়ে করছেন সে কথা কি আমার ভাইয়াকে বলছেন?আপনি যখন আপনার কলিজার টুকরো দোস্ত কে বলেন নাই।তখন আমি যে আনিসাপুর স্থানে আসছিলাম তা কাউকে বলবেন না।নয়তো ভাইয়া কে বলে আপনাদের দুজনের মাঝে ভেজাল বাধিয়ে দিবো।আর হ্যা যতো যাই হোক এই বিয়েটা ভাঙ্গবেন আর এমন ব্যবস্থা করবেন যাতে আনিসাপুর গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট না হাওয়া পর্যন্ত তার বাড়ির মানুষেরা বিয়ে না দিতে চাই।”

আরিয়ান বলে,”তা যার জন্য এতো পাকনামি করছো সে তোমার কে হয়?কী সম্পর্ক তার সাথে তোমার?”

অনু:-আনিসা আপু বলছি তাতেও বোঝেন না সে আমার বোন হয়।

আরিয়ান বলে,”তুমি যে আমাকে তোমার কথার তলোয়ার দিয়ে অপমান করছো এর জন্য তোমাকে আমি শাস্তি দিতে পারি!”

অনু বলে,”আচ্ছা শাস্তি যা ইচ্ছা দিবেন! এসব নিয়ে আমি ভয় করি না।এখন আপনি বিয়েটা ভেঙ্গে দিবেন ব্যাস এটাই সমাধান। ”

আরিয়ান বলে,”আবির কে বলতে হবে ওর বোন অনেক বড় হয়ে গেছে বিয়ে দিতে হবে।”

অনু :-নিজেও তো বিয়ের জন্য মরে যাচ্ছেন।আপনি বিয়ে করেন আমার বিয়ে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।

আরিয়ান :-এতো বাড়াবাড়ি কিন্তু মোটেই ভালো না!দেখো এর ফল আবার সারাজীবন ভোগ করতে না হয় তোমাকে?

অনু :-সমস্যা নেই ঐ ফলের জুস করে আপনাকে খাওয়াবো বলে চলে যায়।

সেদিন অনু তার আনিসাপুর বিয়টা ভাঙ্গতে এসে নিজেই নিজের কবর খুঁড়ে চলে যায় নিজে মোটেও বুঝতে পারে না।

আরিয়ান সে বিয়েটার কি পরিণাম করে তা অনু ভালোয় জানে।সেদিনের পর থেকে আরিয়ানের দুই চোখের সুঁই হয়ে যায় অনু।আরিয়ান সেদিনর পর থেকে অনুকে নরকভোগ করাতে থাকে।

অনু ধড়ফড় করে ঘুম থেকে উঠে বলে,”আল্লাহ কেন যে সেদিন পণ্ডিতি করে আরিয়ান আর আপুর বিয়েটা দায়িত্ব নিয়ে ভাঙ্গতে গিয়েছিলাম।সেদিনের খারাপ ব্যবহারের জন্য আরিয়ান ভাইয়া আমাকে আজও মাফ করে নাই।তার আমার ব্যবহারের থেকেও বেশি খারাপ লেগেছিল এটা যে এতো ছোট মেয়ে কেনো বিয়ের মতো একটা বিষয়ে পাকনামি করতে যাব?আল্লাহ সেই পাকনামির আমার সারাজীবনের কাল হয়েছে।

কাল আবার কেন যে ভাব দেখাতে গিয়ে ইরাদ ভাইয়া আর রাজ কে চড় দিয়েছি।আমার জীবনে কি আজরাইলের অভাব ছিলো?নতুন করে বিপদের দাওয়াত দিয়েছি।

আহারে কাল ভার্সিটিতে প্রথম দিন ছিলো আমার। কিন্তু এতো মানুষের সামনে আমাকে সে আমাকে থাপ্পড় দিয়েছে!রাগ নিজের স্থানে কিন্তু সে আমাকে থাপ্পড় দেওয়ার আগে একবার ও স্থান দেখবে না?

সাত সকালে অনু ঘুম থেকে উঠে এসব ভাবছিল।তার বেশি বাহাদুরি বিপদের কারণ।

এমন সময় অনুর মুঠোফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। মুঠোফোন হাতে নিয়ে দেখে স্কিনের উপর আজরাইল লেখা নামটা ভেসে আছে।

তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে বলে,”আসসালামু আলাইকুম!”

অপরপাশে থেকে “ওয়া আলাইকুমুস সালাম”বলে ওঠে,”কালকের থাপ্পড় নিয়ে এতো বেশি চিন্তা করতে হবে না।তুমিও ভেজাল করার আগে যেমন কোন স্থান দেখো তা দেখোনা।ঠিক তেমন তোমাকে ঠিক করার জন্য আমিও মাঝেমধ্যে তোমার মতো হয়ে যায়।”
বলে লাইন কেটে দেয়।

অনু মুঠোফোন শক্ত করে ধরে নিজের কপালের সাথে বারি দিতে থাকে আর বলতে থাকে,”এই আজরাইল সব সময় ফোন দিয়ে আমাকে কথা শোনাচ্ছে। আমি কেনো যে সুযোগ পাই না।যেদিন সুযোগ পাবো সেদিন এতোগুলো বছরের অপমান সুদেআসলে ফেরত দিয়ে দিবো।”

অনু রেডি হয়ে নিচে এসে দেখে আবির আজ এখনো ভার্সিটিতে যায় নি।

আবির অনুকে দেখে বলে,”যাক তাহলে অবশেষে মহারানী নিচে আসছেন। তা আজ কি ভার্সিটিতে যাবি?না কি বাড়িতে থাকার ইচ্ছা আছে?”

অনু :হ্যা ভার্সিটি তে যাবো।কিন্তু তুমি এখনো বাড়িতে যে?

আবির : সকালে আরিয়ান ফোন দিয়ে বলছে আমি যেনো এখন থেকে রেগুলার তোকে সাথে করে ভার্সিটিতে নিয়ে যায়।আমি যে তোর ভাই তার জন্য তো।কিছু দায়িত্ব পালন করা দরকার।

অনু খাবার টেবিলে বসতে বসতে বলে,”আজকাল বোনের প্রতি ভাইয়ের দায়িত্ব শেখানোর জন্য বাহিরের মানুষের থেকে পরামর্শ নিতে হচ্ছে?”

অনুর মা এসে বলে,”এসব কোন ধরনের কথা অনু?আরিয়ান ও আমাদের কাছে আবিরের মতো।আরিয়ান কেনো বাহিরের মানুষ হতে যাবে?তুই আমাদের বাড়ির মেহমান। ”

অনু:-“আমি মেহমান মানে কী’?

অনুর মা:-তোকে এতো বড় করছি তো পরের বাড়িতে পাঠানোর জন্য।তুই তো আমাদের বাড়ির মেহমান।এটা আমাদের তৈরি করা নিয়ম না।বিয়ের সম্পর্ক আল্লাহর রহমত বরকতে পরিপূর্ণ সম্পর্ক।

অনু আর কিছু না বলে আবিরে সাথে ভার্সিটিতে চলে যায়।
ভার্সিটিতে প্রবেশ করার পর ইরাদের সাথে দেখা হয় অনুর।
অনু ইরাদ কে দেখে মুচকি হাসি দেয়।ইরাদ বুঝতে পারছে না অযথা তাকে দেখে হাসার কি আছে?মেয়েটা কি কালকে থাপ্পড় দিয়েছে তাই বিদ্রূপ করে হাসছে?

অনু একটু এগিয়ে গিয়ে ইরাদের সামনে নিজের কান ধরে বলে,”দুঃখিত ভাইয়া!আমার কালকে আপনার গালে চড় দেওয়া উচিৎ হয়নি।তবে কি করবো বলেন আপনাদের দোষ ছিলো।সে যাই হোক আমি ছোট মানুষ আর ছোটদের কোনো অধিকার নেই বড়দের গায়ে হাত উঠানোর।আপনি আমার ভাইয়ার মতো তাই ছোট বোন মনে করে আমাকে মাফ করে দিয়েন।”

(গল্পটা কি আপনাদের ভালো লাগছে না??আপনাদের রিসপন্স দেখে আমি হতাশ)



চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here