#খুনশুটি_ভালোবাসার💞❤️💞
#Nishi_khatun (Angel_Frozen)
#part:_04
অনু নিজের রুমে এসে হাতে থাকা ব্যাগটা সোজা বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
অনুর এমন কান্ড দেখে স্নেহা পড়ার টেবিল থেকে উঠে এসে বলে,”তোমার সমস্যা কী আপু?এই রুমে আমিও যে থাকি সে কথা ভুলে যাও কেনো?”
অনু :-তুই আছিস তা ভুলি নাই দেখে তো বিছানার উপর ছুড়েছি।তোর উপর তো ছুঁড়ে দেয় নি ব্যাগটা।
স্নেহা :-তোমার মেজাজের তাপমাত্রা দেখে মনে হচ্ছে আরিয়ান ভাইয়া ভালোই বাশ দিয়েছে।
অনু রেগে বলে,”হ্যা রে আরিয়ানের চামচি।কোনোদিন ও আমার সাপোর্ট করিস নাই।কেন রে?আমি কি তোর বোন না?আর ঐ আরিয়ানের প্রতি তোর এতো দরদ কেন রে?”
স্নেহা বলে,”ওমা দরদ দেখাবো না কেনো?ওনার মতো সুন্দর স্মার্ট পোলার সাথে যুদ্ধ করে নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতো বোকা মেয়ে আমি তো নই।”
অনু বিছানার উপর মুখ গোমড়া করে বসে থাকে।
স্নেহার ফোনে ম্যাসেজ আছে।স্নেহা একটু ফোন টিপাটিপির পর অনুর পাশে বসে বলে,”বাহ আপু এই না হলে তুমি আমার বোন!”
অনু স্নেহার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে।
স্নেহা সেদিকে খেয়াল না করে বলে,”আজ রাতে যে তুমি আরিয়ান ভাইয়ার সাথে ডেটিং এ যাচ্ছ সে কথা আগে কেনো বলো নাই?”
অনু রেগেমেগে বলে,”ঐ শালার সাথে ডেটিং এ যাবে আমার জুতা।মরে গেলেও তো যাইতাম না।
ফাজিল পোলা আমাকে ফাঁসিয়ে শাস্তি দিতে নিয়ে যাওয়ার প্লান করছে।”
স্নেহা বলে,”হুম ভালো তো!যাও এবার ফ্রেশ হয়ে রেডি হতে শুরু করো।রাতের আকাশের সূর্য উপভোগ করবা তাও আমার সাধের আরিয়ান ভাইয়ার সাথে।”
অনু স্নেহা কে মারতে যাবে তখন অনুর মা এসে স্নেহা কে বলে,”এই স্নেহা তুই আমার সাথে নিয়ে আয় এখুনি!
তোরে কিছু কাজ করতে হবে।”
স্নেহা বোনের হাতে মা’র খাবার থেকে মায়ের সাথে কাজ করাটা বেশি ভালো মনে করে চলে যায়।
অনু বসে বসে নিজের চুল ছিঁড়তে থাকে।
এমন সময় অনুর ফোনে আরিয়ান কল দিয়ে বলে,”আমার উপর রাগ করে অযথা নিজের এতো সুন্দর চুল গুলো ছিঁড়ে নষ্ট করিও না।বিয়ের সময় কেউ টাকলু মাথার বউ নিবে না।এই বলে দিলাম বলে টুং করে লাইন কেটে দেয়।”
অনু নিজের ফোনটা কে আছাড় দিতে যেয়ে দেয় না।নিজেকে বলে,”বাপের টাকার ফোন নষ্ট করে লাভ নেই।যখন বিয়ে করবো তখন জামাইয়ের টাকার ফোন ইচ্ছা মতো নষ্ট করবো বলে নিজেকে শান্তনা দেয়!”
এদিকে আবির তার বাবা মা’র কাছে আরিয়ান অনুর ঘুরতে যাবার কথা বলে।তাতে তার বাবা মা কেউ আপত্তি করে না।বরং তারা স্নেহা কে বলে তোমার ইচ্ছা হলে তুমিও আরিয়ানের সাথে ঘুরতে যেতে পারো।
স্নেহা সোজা না করে দেয়।সে অন্য কোনোদিন যাবে।
অনু রাতের বেলা না চাইতেও রেডি হয়ে বসে থাকে।কারণ সে জানে আরিয়ান যখন বলছে সাথে করে নিয়ে যাবে তখন যেভাবে হোক নিয়ে যাবে।তাই জলে থেকে কুমিরের সাথে অনু ঝগড়া করতে চাইছে না।আর কোনো লাভ হবে না।
একটুপর আরিয়ান এসে বাড়ির সামনে এসে গাড়ির হর্ণ বাজাতে থাকে।অনু বাহিরে এসে বলে,”হঠাৎ বাইক রেখে গাড়ি আনছেন কেনো?”
আরিয়ান শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,”বাইকে তো রাতের আকাশের সূর্য ভালোমতো দেখা যাবে না তাই।এতো কথা না বলে সোজা গাড়িতে বসে পড়ো।”
অনু চুপচাপ সামনের সিটে বসে পড়ে।
তারপর আরিয়ান গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করে।
দুজনে চুপচাপ কেউ কোনো কথা বলছে না।অনেক টা সময়পর আরিয়ান গাড়িটা থামিয়ে দেয়।তারপর অনুকে সাথে করে হাটতে শুরু করে।অনু এবার কথা বলে।আমরা এতো রাতে নদীর তীরে কেনো এসেছি?
আরিয়ান কিছু বলে না।শুধু অনুকে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে।
অনু ভদ্র মেয়ের মতো নদীর তীরে রাতের নীরবতা অনুভব করছে।নদীর তীরের বাতাসে সে যেনো কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে গভীরে।
এভাবে অনেকটা সময়পর আরিয়ান বলে,”দেখো নদীর পানিতে চাঁদের আলোছায়ার খেলা।”
অনু অবাক হয়ে নদীর পানি দেখে চাঁদের আলোতে পরিপূর্ণ।চারিদিক চাঁদের আলোতে আলোকিত হয়ে আছে।পরিবেশ টা অন্যরকম সুন্দর লাগছে।মনে মনে ভাবে আরিয়ান খারাপ হলেও তার এই কাজটা ভালোই লেগেছে।”
হুট করে আরিয়ান অনুকে পানিতে থাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে গিয়ে ওর হাত ধরে বলে,”না ধরলে তো পানিতে পড়ে যেতে।মেয়ে মানুষের এতোটা বেখেয়ালি হলে চলে বলো?”
অনু রেগে আরিয়ান কে কিছুমিছু বলবে তার আগেই আরিয়ান অনুর মুখ বন্ধ করে বলে,”বলেছিলাম না রাতের আকাশে দিনের সূর্য দেখাবো?”
অনু:-হ্যা! তো কই সে সূর্য?
আরিয়ান চাঁদের দিকে ইশারা করে বলে,”চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই।সূর্যের থেকে আলো ধার করে সে সারা পৃথীবিকে আলোকিত করে।দেখো এটাই সেই সূর্যের আলো! যে সূর্য দিনে অসহনীয় তাপ দেয়।আর তার আলোতে চাঁদ রাতের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়।পৃথীবিতে তেমন কিছু মানুষ আছে যারা বাহিরে থেকে খুব শক্ত ভেতরটা খুব নরম।”
অনু বলে,”চাঁদের সাথে সূর্যের সম্পর্কের কথা বুঝলাম। কিন্তু এদের দুজরের সাথে মানুষের সম্পর্ক কোথায়? ”
আরিয়ান অনুর থামায় গাট্টা মেড়ে বলে,”তোমার মতো মাথা মুটির মাথায় কিছুই ঢুকবে না।চলো এখন বাড়িতে যেতে হবে।”
অনু বলে,”আর একটু থাকি এখানে?”
আরিয়ান বলে,”আমার সাথে তো আসতেই চাইছিলে না এখন বেপারটা কি?এখানে সারাজীবন থেকে যাওয়ার ইচ্ছা আছে না কি?”
অনু :-এমন পরিবেশে তো সারাজীবনের জন্য থাকতে ইচ্ছা করছে।
আরিয়ান :-তোমার ইচ্ছা থাকলেও আমার নেই।তাই অযথা ঝামেলা না করে বাড়ির পথে রওনা দেও।”
অনু মুখ গোমরা করে হাটতে শুরু করে দেয়।গাড়ির কাছে এসে কোনো কথা না বলে সোজা গাড়িতে বসে পড়ে।আরিয়ান গাড়ি ড্রাইভ করে ফিরে আসতেই মাঝপথে গাড়ির ইঞ্জিন গরম হয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে।মাঝপথ কী করবে কোনো উপায় না পেয়ে আরিয়ান তার বাড়িতে ফোন করে ড্রাইভার কে বাইক নিয়ে আসতে বলে।
অনু গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার পাশে আরিয়ানের সাথে ঝগড়া বাধিয়ে নেয়।এতোরাতে রাস্তার পাশে আপনার সাথে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে পারবোনা।আমাকে বাড়িতে রেখে আসেন বলছি।
আরিয়ান :-এই তুমি কি কানমাথা খেয়ে বসে আছো?দেখছো না তুমিও রাস্তায় আমিও রাস্তায়?
এমন সময় সেখানে একটা গাড়ি এসে থামে।গাড়ি থেকে দু জন বয়স্ক মানুষ বলে,”তোমাদের দুজনের মধ্যে কী সম্পর্ক জানতে পারি?”
অনু রেগে বলে,”মাঝরাতে দুজন ছেলে মেয়ে একসাথে মানে কী খারাপ সম্পর্ক হবে?think be positive!”
আরিয়ান অনুর দিকে তাকিয়ে দাঁতের উপর দাঁত চেপে বলে,”হ্যা একদম হালাল সম্পর্ক। ‘”
গাড়ির মধ্যে থাকা বয়স্ক মহিলা বলে,”এতোরাতে এভাবে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছো যে?”
আরিয়ান কোনো ত্যাড়া কথা না বলে সোজা বলে আমাদের গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে তাই অপেক্ষা করছি।বাড়ি থেকে গাড়ি আসছে সেই গাড়ির।
তারপর তারা আর কোনো কথা না বলে চলে যায়।
গাড়িটা চলে যাবার পর অনু তাদের উদ্দেশ্য করে গালি দিতে শুরু করে।অনুর এমন পাগলামি দেখে আরিয়ান হাসতে শুরু করে দেয়।
অনু বলে,”১০০ পাটি দাঁত বাহির করে হাসেন সমস্যা নেই।কে বেয়াদব লোকজন আমাদের বিপদে দেখে সাহায্য করার কথা না বলে মজা নিয়ে চলে গেছে।”
আরিয়ান বলে,”যুগ বদলে গেছে!এখন মানুষের কাছে কোনো কিছুর আশা না করাই উওম।কেউ বিপদে পড়লে তাকে দেখে সবাই মজা নিতে পারে কিন্তু তাদের সাহায্য করার জন্য বাড়িয়ে দেওয়া হাতের বড়ই অভাব।”
একটুপর ড্রাইভ মিস্তিরি কে সাথে করে আরিয়ানের বাইক নিয়ে চলে আসে।ড্রাইভার গাড়ি ঠিক করে বাড়িতে নিয়ে যাবে।আরিয়ান অনুকে নিয়ে বাইকে করে রওনা দেয়।দিনের মতো রাতে আর অনুকে ডিস্টার্ব করে না।রাতের বেলা ফাঁকা স্থানে বাইকে চলার মজাই অন্যরকম। অনু আজ অনেক কিছুই উপভোগ করছে।
অনুকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আরিয়ান সোজা তার বাড়িতে চলে যায়।
(গঠনমূলক মন্তব্য আশা করবো)
‘
‘
‘
চলবে…..