তোমার_নেশায়_নেশাক্ত_আমি পার্ট:১৩+১৪

তোমার_নেশায়_নেশাক্ত_আমি
পার্ট:১৩+১৪
#পিচ্চি_লেখিকা

কয়েকঘন্টা আগে বিয়ে করা নিজের স্বামীকে এমন মাতাল অবস্থায় দেখে আরো বেশি রেগে গেলো আরিয়া,,লেহেঙ্গাটা ধরে নিচে নেমে দ্রুত পায়ে গিয়ে তার বরের কলার চেপে ধরলো,,,

“”” সব কিছু হয়েছে আপনার জন্য,,,আজ আপনার জন্য আমার এই অবস্থা,,,কেন করছেন আমার সাথে এরকম?চলে যান আমার লাইফ থেকে,,,আপন…

আরিয়াকে থামিয়ে দিয়ে ঠোট উলটে আরুশ বলে উঠলো,,

“” বউজান তুমি আমাকে বকছো?

আরিয়া আরুশের কথায় থতমত খেয়ে যায়,আরিয়া অনেক কিছু বলার জন্যই এসেছিলো কিন্তু আরুশের ঠোট উলটিয়ে বউজান বলাতে আরিয়া ভড়কে গেলো,,,কলার ছেড়ে দিয়ে কিছু পা পিছিয়ে মাথা নিচু করে দাড়ায়,,আর আরুশ ঢুলতে ঢুলতে আরিয়ার একটু কাছে এসে বলে,,,

“”” ওই বউজান,,,তুমি আমাকে বকা দাও কোনো সমস্যা নাই কিন্তু আমাকে ছেড়ে যেও না,,,

আরিয়া আরুশের মুখের দিকে তাকায়,,,আরুশ ঠোট উলটে বাচ্চাদের মতো করছে,,,

“” বউজান….

অস্পষ্ট স্বরে এটুকু বলেই ঢুলে পড়ে আরিয়ার গায়ে,,,জিম করা বডি আরিয়া কি সামলাতে পারে? কোনো রকমে আরিয়া আরুশকে বেডে শুইয়ে দেয়,,তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে,,,,

আমরা দেইখা আসি আরিয়ার বিয়ে কেমনে হইলো,,,আরিয়া আর আরুশের বিয়ে হয়ে গেলো সবাই না জানলে হয়,,,

ফ্ল্যাশব্যাক____

যখন আরিয়া আর শুভর বিয়ে পড়ানো শুরু হতে যাবে তখনই আরুশ,রাসেল
আর তাদের গার্ড ঢুকে আসে,,,সবাই ওদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে,,,আরুশের মাথায় ব্যান্ডেজ,,,সেদিন হুট করে পড়ে যাওয়ায় ওর মাথায় কেটে যায়,,,আরিয়া কান্না থামিয়ে আরুশের দিকে লাল চোখে তাকায়,,,কাদতে কাদতে বেচারি চোখ মুখের অবস্থা খারাপ করে ফেলছে,,,আরুশের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে,,কপালের রগ ফুলে আছে,,,আরুশ থমথমে মুখে বললো,,,,

””বিয়ে বন্ধ করুন,,,

আরিয়া তো এমনিও রেগে ছিলো আরুশের উপর,,, আরুশের এই কথায় আরো রেগে যায়,,,

“” আপনি কে?আমার বিয়ে বন্ধ করতে বলার কে আপনি?বেড়িয়ে যান এখান থেকে,,,

“” আমি কে?আমি কেউ না মানলাম,,,কিন্তু এই বিয়ে হবে না,,,

“” আজ এখানে বিয়ে হবে,,,আপনি চলে যান প্লিজ,,,আর কত নিচে নামাবেন আমাদের,,আপনার জন্য আজ আমি সবার চোখে খারাপ,,আপন মানুষ গুলো অবিশ্বাস করে আমাকে,,,

“” এতে আমার কি দোষ আরুজান?কি করেছি আমি?এমন তো না এসব আমি ছড়িয়েছি,,,নিজেরও তো সম্মান আছে বলো,,,তুমি বিয়েটা বন্ধ করো,,,

আরুশের কথা শুনে শুভ এবার মুখ খুললো,,

“”” আরুশ ভালোই ভালোই যা এখান থেকে,,,

“” যাবো আমি,,,তবে বউ নিয়েই যাবো,,

“”” মানে?

আরুশ কিছু গার্ডকে ইশারা করলে তারা গিয়ে শুভকে ধরে রাখে,,,শুভ চেষ্টা করছে ছুটার কিন্তু পারছে না,,,

“”” হ্যা তো আরুজান কি বলছিলে বিয়ে তুমি বন্ধ করবে না,,,ঠিক আছে বন্ধ করো না,,,কাজি সাহেব বিয়ে পড়ান তবে বরের নামের জায়গায় শুভ চৌধুরী হবে না,,,আরুশ আরফান হবে,,,

আরুশের কথায় আরিয়া চোখ বড় বড় করে তাকায়,,,

“”” কখনোই না,,,আমি আপনাকে বিয়ে করবো না,,,শুভই ঠিক আছে আমার জন্য,,,আপনি চলে যান প্লিজ,,,

“”” সরি আরুজান,,,ভেবেছিলাম তুমি ভালোবাসলেই তোমাকে বিয়ে করবো কিন্তু তুমি তো অন্য কাউকে বিয়ে করছো,,,এটা কি করে মানি বলো?আর এখন আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি তোমাকে আজকেই বিয়ে করবো আর এখনি,,,আমি চলে গেলে আবার চুপি চুপি বিয়ে করে নিলে আমার কি হবে,,,

রাসেল কে উদ্দেশ্য করে আরুশ বলে,,,

“”” রাসেল বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দে আমার আজ বিয়ে,,,বউ নিয়েই বাড়ি যাবো,,,

“”” ওকে বস,,,

আরিয়ার রাসেলের দিকে করুন চোখে তাকায় রাসেল একটা মুচকি হাসি দিয়ে বাড়ি ফোন করে বলে দেয়,,,শুভ ওই দিকে চিৎকার করে উঠছে,,,

“”” আরুশ চলে যা বলছি,,,এর পরিনাম কিন্তু খুব খারাপ হবে,,,

আরুশ শুভর কথায় পাত্তা না দিয়ে গার্ডদের উদ্দেশ্যে বললো,,,

“”” কেউ ওর মুখ বেধে এখান থেকে নিয়ে যা,,,ফালতু চেচায় শুধু,,,

আরুশের অর্ডার শুনে কয়েকটা গার্ড শুভর মুখ বেধে নিয়ে যায়,,,,

“”” তো আরুজান বলো নিজে থেকে রাজি হবে নাকি আমি কিছু করবো?

আরিয়া কিছু বলার আগেই আরিয়ার মামা হুংকার দিয়ে বলে উঠে,,,

“”” কি শুরু করেছো তোমরা?তোমাদের জন্য তো আমাদের মানসম্মান এমনিও ধুলোই মিশে গেছে আর কত করবে এসব,,,আমি এক্ষুনি পুলিশ কে ফোন দিচ্ছি,,,

আরুশ ডেভিল স্মাইল দিয়ে বললো,,,

“”” করুন শ্বশুর মশাই আমি এখানেই আছি,,,

বলতে বলতে একটা গান(gun) সামনের ছোট্ট টি টেবিল টাই রাখলো,,,গান দেখে আরিয়ার মামি সহ সবাই ভয় পেয়ে যায়,,,আরিয়ার মামি আরিয়ার মামাকে থামিয়ে দেয়,,,আরিয়া বলে উঠে,,,

“”” আপনার মতো জঘন্য লোক কে আমি বিয়ে করবো না,,,চলে যান আপনি,,,

“”” আমি জঘন্য লোক?আচ্ছা তাহলে কিছু করা যাক,,,

আরুশ গার্ড দের ইশারা করতেই সবাই গিয়ে আরিয়ার মামা,মামি,তিনা,আইরা আর তন্ময়ের মাথায় গান ঠেকালো,,,ভয়ে তো তিনা আর আইরা কেদে দিয়েছে,,,,আরিয়া অবাক চোখে আরুশের দিকে তাকায়,,,আরুশ চোখ মেরে বলে,,

“” বিয়ে কি করবে নাকি সবাই কে শুট করে দেবো কোনটা?

“”” আপনি এতটা বাজে ছি,,,আমার জন্য ওদের মারতে আপনার হাত কাপবে না?

‘”””না,,,আরুশ আরফান যা বলে তাই করে,,,তুমি কি বিয়ে করবে নাকি ওদের…

আরিয়া রাগে দুঃখে দাত দাত চেপে বলে,,,

“”” করবো আমি বিয়ে,,,

আরুশ যদিও আরিয়াকে পাবে এই খুশিতে তার নাচার কথা কিন্তু আরুশের গম্ভীরতা স্পষ্ট,,সে তো চায়নি এভাবে আরিয়াকে,,সে তো চায়নি জোড় করতে,,,সে চেয়েছিলো আরিয়া নিজে থেকে তার জন্য বউ সাজবে,,,কি থেকে কি হয়ে গেলো,,,,আরুশ আরিয়ার বিয়েটা হয়ে গেলো,,কিন্তু মামা মামিরা কেউ খুশি না,,,আরুশ চেয়েছিলো আইরা কে নিয়ে যেতে কিন্তু তার মামা মামি দেয়নি,,,,সারা রাস্তা কেদেছে আরিয়া কিন্তু আরুশ কিছুই বলতে পারে নি,,,আরিয়ার উপর তার রাগ ক্ষোভ জেদ জেগেছে,,,আরিয়া বড়ি পৌছাতেই তানিয়া তাকে রিসিভ করে এতে আরিয়া বেশ অবাক হয়,,,কারন সে ভাবতো তানিয়া আরুশের ফিয়ন্সে….

আরিয়া ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে এসে চিন্তা করে কোথায় ঘুমাবে,,,শেষে আরুশের বেডেই এক পাশে শুয়ে পড়ে,,,

____________

সকাল বেলা আবছা আলোরা আরিয়াকে বিরক্ত করে ঘুম ভাঙাই,,,আরিয়া আড়মোড়া কেটে উঠে দেখে আরুশ বাচ্চাদের মতো হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে,,,কিন্তু রোদেরা তার সেই ঘুম নষ্ট করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে,,,আরিয়া একটু ঝুকে আরুশের মুখের দিকে যায়,,,তখন আর রোদ লাগে না,,,আবার একটু সরে যায় তখন আবার রোদ লাগে আর আরুশ চোখ মুখ কুচকে ফেলে,,আরিয়ার বেশ হাসি পাচ্ছে আরুশের এই অবস্থায়,,,কয়েকবার এমন করার পরই আরুশ হঠাৎ করেই চোখ মেলে তাকায়,,,আর আরিয়া আরুশের তাকানোর ফলে ভড়কে যায় তাড়াতাড়ি সরে এসে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়,,আর আরুশ কিছু না বলে গম্ভীর চোখ মুখ নিয়ে উঠে বসে,,,আরুশ কাল রাতে ড্রিংক করে ফিরেছিল,,,কিন্তু আরিয়া কি রিয়েক্ট করেছিলো তার সেইটা মনে নেই,,কাল অনেক বেশি ড্রিংক করে ফেলেছিলো আরুশ,,,আরুশ উঠে বারান্দায় দাড়ায়,,,আরিয়া ফ্রেশ হয়ে আসতেই আরুশও রুমের ভিতরে এসে কাবাড থেকে একটা শাড়ি বের করে দেয়,,,

“”” বিয়ের পরেরদিন আমাদের বাড়িতে নতুন বউরা শাড়ি পড়ে রাতে ফুপি বলে দিয়েছে,,,যদি শাাড়ি পড়তে পারো তাহলে পড়ে নিও আর না পারলে তোমার যা ইচ্ছা তা পড়ো,,

আরুশ এটুকু বলেই ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো,,আর আরিয়া আরুশের যাওয়ার দিকে তাাকিয়ে আছে,,,একবার ভাবলো পড়বে না শাড়ি পরে কি যেন ভেবে পড়ে নিলো,,,সুন্দর করে শাড়ি পড়ে চুল গুলো খোপা করে বসে পড়লো বেডে,,,একটুপর আরুশ ফ্রেশ হয়ে এসে আরিয়াকে এক পলক দেখে চোখ সরিয়ে মিরোরের সামনে গিয়ে দাড়ায়,,,আরিয়া ঠিক মতো খেয়াল করে দেখলো আরুশের চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে,,তার মানে আরুশ গোসল করছে,,,আরিয়া আরুশকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,

“”” চুল থেকে পানি পড়ছে ভালো করে মুছে নিন,,,নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে,,,

“”” সেইটা তোমার না ভাবলেও চলবে,,,

আরিয়া আরুশের কথায় ভেংচি কেটে ওকে ব্যাঙ্গ করে বলে,,,

“”” সেইটা তোমাল না ভাবলেও চলবে,,হুহ,,,উনার যেন ১০ টা বউ আমি না ভাবলে অন্য রা ভাববে,,,,(বিড় বিড় করে)হায় হায় আরু তুই ভাবছিস এসব,,,এই গুন্ডা টা তোকে জোড় করে বিয়ে করছে,,,যা ইচ্ছা করুক তাতে তোর কি উফফ,,,

“”” রাজ্যের চিন্তা না করে নিচে চলো,,ফুপি ওয়েট করছে,,,

আরুশ নিচে যাওয়ার জন্য হাটা লাগালো,,,আরিশা আর কি করবে পেছন পেছন গেলো আরুশের,,,নিচে যেতেই আরিয়া অবাক,,,কালকে তেমন খেয়াল করেনি,,,আর তেমন সাজানোও হয়নি কাল,,,সকাল থেকে রাসেল আর গার্ড রা মিলে বাড়িটা সাজিয়েছে,,,শুধু সাজিয়েছে বললে ভুল হবে অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে,,,আরিয়া নিচে আসতেই তানিয়া আর আয়ান আসে,,,আয়ান আরিয়াকে দেখে খুব খুশি,,,আয়ান আর তানিয়া কে দেখে আরিয়া মুচকি হেসে বললো,,,

“”” গুড মর্নিং,,,

“” গুড মর্নিং,,(দুজন একসাথে)

“”” এই আয়ান সর তো,,(তানিয়া)

“”” কেন?সরবো কেন?এইটা তো আমার ভাবিপু হয়,,আমি থাকবো,,,

“”” আরে দাড়া,,,

তানিয়া আরিয়াকে নিয়ে একটু সরে ফিসফিস করে বলে,,,

“”” কেমন কাটলো বাসর?

আরিয়া চোখ বড় বড় করে তাকায়,,,

“”” বুঝছি বুঝছি থাক আর তাকিয়ো না,,,

“” এই আপু কি বলো তুমি ভাবিপু কে,,,

আরিয়া মুচকি হেসে আয়ানকে জিজ্ঞেস করে,,,

“”” ভাবিপু কি আয়ান?

“””আসলে তুমি তো আমার আপুও হও ভাবিও হও,,আর আমার নিজেরও কোনো আপু নেই,,,সো ভাবি+আপু=ভাবিপু,,,

আরিয়া আয়ানের লজিক শুনে হেসে দেয়,,,তারপর তানিয়া আর আয়ান আরিয়াকে বসিয়ে গল্প করতে শুরু করে দেয়,,,তার মধ্যেই ডাক পড়ে ব্রেকফাস্টের জন্য,,,সবাই ডাইনিং এ বসলে আরুশের ফুপি বলে উঠে,,,

“”” তোরা যেভাবে মেয়েটাকে জালাচ্ছিস তাতে দেখিস মেয়েটা পালিয়ে না যায়,,,

ফুপির কথা শুনে সবাই হেস উঠে,,,তানিয়া তার মায়ের কথায় বলে উঠে,,,

“” আরে মাম্মাম কি যে বলো না,,,আরিয়া পালালেই আরুশ ধরে নিয়ে আসবে,,,সো চিল নো প্যারা,,,

আরিয়া ওদের কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে কিছুই খাচ্ছে না,,,আরুশ খেয়াল করে দেখে আরিয়া খাচ্ছে না৷,,,

“”” খাচ্ছো না কেন?নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতে হবে নাকি,,,খাবার না নেড়ে চুপচাপ খাও,,,

আরিয়া সবার সামনে কিছু বললো না,,,চুপচাপ খেতে লাগলো,,,তানিয়া ঠোট টিপে হাসছে,,,ব্রেকফাস্ট শেষে সবাই আড্ডা দিতে লাগলো,,,আরিয়া হঠাৎ দরজায় তাকাতেই অবাক হয়ে যায়…..

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন❤️❤️পুরোটা না পড়ে মন্তব্য করা ঠিক না,,,ভালো না লাগলে এড়িয়ে যান কিন্তু বাজে মন্তব্য করবেন না,,,কাল আমি আরিয়ার বিয়ে হওয়া লিখছি ঠিক কিন্তু বিয়ের পর একবারো শুভর নাম নেইনি,,,যদি শুভর সাথেই বিয়ে হয় তাহলে শুভর নাম কেন লেখিনি?সব জায়গায় বর কেন লিখছি?আপনারা তা না বুঝে আমাকে বকা দেন,,,আমি নাকি ফাজলামি করছি,,,লেখিকা কিছু লিখলে তা ভেবেই লেখে)

#তোমার_নেশায়_নেশাক্ত_আমি
#পার্ট:১৪
#পিচ্চি_লেখিকা

আরিয়া দরজার দিকে তাকাতেই দেখে দিশা আর আইরা,,,আইরা তো দৌড়ে এসেই আরিয়াকে জড়িয়ে ধরে,,কান্না করতে করতে চোখ মুাখ ফুলিয়ে ফেলেছে নাক গুলো লাল হয়ে আছে,,,আরিয়া চেষ্টা করছে থামানোর কিন্তু আরিয়া থামতে নারাজ,,,সে কিছুতেই থামবে না,,,একাধারে কেদেই চলেছে দিশা এগিয়ে এসে নাক মুখ ফুলিয়ে বলে,,,

“”” বাহ রে বোন কে পেয়ে আমাকে ভুলে গেলো,,,এ কেমন বিচার,,

“” ওই তেতুল গাছের শাকচুন্নি মাইর কখনো খাইছিস নাকি খাবি কোনটা?

“”” মাইর তো প্রচুর খাইছি তবে আম্মুর খুন্তি,হাতা,বেলনা,ঝাড়ু এগুলোর এক্সপিরিয়েন্স বেশি,,কিন্তু তোর মাইর এখন খেতে পারবো না,,,অনেক ক্লান্ত আমি,,,

দিশার কথা শুনে আরিয়া তানিয়া আয়ান হেসে উঠে,,,আরিয়া কোনো রকম আইরা কে শান্ত করিয়ে সোফায় বসাই,,তারপর পানি এনে খাওয়ায়,,,আয়ান এক ধ্যানে আইরাকে পর্যবেক্ষণ করছে,,,কেদে কেদে নাক লাল করে রেখেছে,,,পিচ্ছি একটা মেয়ে তবুও কি মায়াবী চেহারা,,আরিয়া দিশার পাশে বসতে বসতে বলে,,,

“” তোরা এখানে?কিন্তু কিভাবে? আর আইরা কে মামা মামি আসতে দিলো?

“”” আরে আইরা অনেক কান্না কাটি করছিলো,,,তাই আরুশ ভাইয়ায় দুজন কে এনেছে,,,

“” ওহ আচ্ছা,,তুই কিভাবে জানলি আমার বিয়ে হয়ে গেছে আর আরুশ আমার হাজবেন্ড,,,

“”” কেন রে আমি জেনেছি বলে কি তোর কষ্ট লাগতেছে,,বাই দ্যা ওয়ে আমি তোর ওপর রেগে আছি,,

“”” এ্য্যাাা🙄,,,এতক্ষণ পর তুই রেগে আছিস?

“””এতক্ষন পর না তোর বাড়ি আসার আগে থেকেই রেগে ছিলাম,,,কিন্তু দেখাতে মনে ছিলো না,,,যায় হোক সেইটা ভুল ছিলো এখন আমি রেগে আছি ব্যাস,,,

“”আচ্ছা রেগে কেন আছিস বল?

“”” আবার জিজ্ঞেস করিস,,,তুই বিয়ে করে নিলি আর আমাকে ইনভাইট টা তো করলি না বিয়ে করছিস সেইটা বললিও না,,,কোথায় ভেবেছিলাম একমাত্র বেষ্ট ফ্রেন্ডের বিয়েতে চেটে পুটে খাবো আর তুই?কিপটি একটা,,,

“”” আমার বিয়ে আমি নিজেই তো জানতাম না,,,বর যদি বলিস ইনভাইটের কথা তাইলে আমি নিজেই তো পায়নি তোরে কি দিমু?আচ্ছা যাউক গা,,,পরের বার ইনভাইট করমুনি আইসা চাইটা পুইটা খাইয়া নাইচা যাইস,,,

আরিয়ার কথা শুনে দিশা ভ্রু কিঞ্চিত কুচকে বললো,,,

“”” আরো একটা বিয়ে করবি বুঝি?তা আরুশ ভাইয়া জানে এটা?

আরিয়া থতমত খেয়ে মুখে আবুল মার্কা হাসি টেনে বলে,,,

“”” না মানে আম আমি তো আইরার বিয়ের কথা বলতেছিলাম,,,ওর বিয়েতে চেটে পুটে খেয়ে যাস আর কি,,,

আরিয়ার কথা শুনে আইরা চেতে উঠে বলে,,,

“”” এই আপু একদম আমাকে এসবে টানবি না বলে দিলাম,,,তুই বিয়ে করেছিস কর,,,আরো কর আমি এসবে নাই,,,আমি সারাজিবন তোর কাছে থাকতে চাই,,,

“”” আচ্ছা থাকিস,,,তোর বিয়ে করার দরকার নাই,,,

২ বোন কে থামিয়ে দিশা বলে উঠে,,,

“”” ওই তোরা থাম,,আমার আর বিয়ে খাওয়া লাগবে না,,,আরু চল তো কথা আছে তোর সাথে,,,

“”” কোথায় যাবো?

“”” চিপায় যাবো চল,,,

“” ধ্যাত তুই যা আমি যাবো না,,,

“”” আরু চল না কথা আছে,,,রুমে চল অন্তত,,

“”” আচ্ছা চল,,,আইরা তুই তানিয়া আপু আর আয়ানের সাথে গল্প কর আমরা আসছি,,,

আরিয়া আর দিশা এক প্রকার মারামারি করতে করতে রুমে গেলো,,,,রুমে ঢুকতেই দিশা অবাক চোখে সবটা দেখছে,,,অনেক সুন্দর করে রুম সাজানো,,,রুমের সব গুলো পর্দা সাদা আর নীল সংমিশ্রণে,,,বেডের চাদর টাও সাদা,,,

“”” এটা তোদের রুম?

“”” আরুশ আরফানের রুম আমার না,,,

“”” দেখ আরু এরকম জেদ করিস না প্লিজ,,,

“” কিসের জেদ দিশু,,,ওই লোকটা আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করেছে,,,

“”” সব জানি আমি,,,

“”” সব জানিস বাহ,,,ভালো তো,,,

“”” দেখ আরু মাথা ঠান্ডা করে আমার কথা শোন,,,দেখ তুই তো কখনো বিয়ে করতেই চাস নি কিন্তু তবুও তোর মামা মামির জন্য ওই শুভ কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলি,,,শুভ তো তোকে জাস্ট ওর বেড পার্টনার করতো আর কিছুই না,,,আর আরুশ ভাইয়া?সে তোকে সত্যি ভালোবাসে তাই তোকে অন্য কারো হতে দেয়নি,,,সদ্য আঘাত নিয়েও তোকে নিজের করতে গেছে,,,দেখ বিয়ে যখন হয়েই গেছে,,,তখন ভাইয়া কে আপন করে নে,,,দেখবি আর কোনো কষ্ট নেই,,,আর একটা কথা ধরে রাখতে শেখ নয়তো হারিয়ে ফেলবি আর তখন আফসোস ছাড়া কিছুই করতে পারবি না,,,যাই হোক ভেবে দেখিস কথা গুলো,,,,

আরিয়া ভাবছে সত্যি তো আরুশ যখন তাকে বিয়ে করেছে তার মানে সে তার হাজবেন্ড,,,সে যেভাবেই বিয়ে হোক বিয়ে তো হয়ছে,,,পবিত্র একটা বন্ধনে তো জড়িয়েছে,,,তাহলে মানতে কেন পারবে না?মানতে তো হবেই,,,

“”” কি রে কি ভাবছিস?আমার মনে হয় সম্পর্ক টাকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত তোর,,,

“”” হুম,,,ভেবে দেখি,,,

“”” আচ্ছা চল আমি বাড়ি যায়,,,

আরিয়া আর দিশা নিচে আসলো তারপর আইরাকে নিয়ে চলে গেলো,,,অবশ্য আইরা যেতে চাইনি কিন্তু তবুও আরিয়া ওকে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিলো,,,তারপর তানিয়া আর আয়ানের সাথে আড্ডা দিয়ে রুমে চলে আসলো,,অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলো এই সম্পর্ক কে একটা সুযোগ দেবে,,,

আরুশ সারাদিন বাসায় ফিরে নি,,,অনেক রাত হয়ে গেছে তাও ফিরার নাম নেই,,,আরিয়াও জেগে বসে আছে,,,সবাই ঘুমিয়ে গেছে,,,বারান্দা দিয়ে আরুশের গাড়ি আসতে দেখে দৌড়ে নিচে আসলো,,,আজ ঝগড়া করার চিন্তায় আছে আরিয়া,,,কিন্তু দরজা খুলতেই চোখ কপালে উঠলো,,,আরুশ এতটাই ড্রিংক করেছে যে ঠিক মতো দাড়াতেও পারছে না,,,একটা মেয়ের কাধে আরুশের হাত আরিয়া মেয়েটাকে পরখ করে নিলো,,,ওয়েস্টার্ন ড্রেস একদম সর্ট মেয়েটাও ড্রাংক তবে আরুশের মতো এতোটাও না,,,আরিয়ার ধ্যান ভাঙিয়ে মেয়েটা বলে,,,

“”” এই যে হ্যালো সরো সামনে থেকে,,,

আরিয়া মেয়েটার কথা না শুনে আরুশকে ধরতে গেলেই মেয়েটা আরিয়াকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়,,

“”” এই মেয়ে কে তুমি,,,আমার আরুশের গায়ে হাত দেও কেন?

আরিয়া এবার রেগে গিয়ে বলে,,,

“”” ওহ হ্যালো অন্যের হাজবেন্ড কে আপনার বলতে লজ্জা করে না,,,আমি আমার হাজবেন্ড কে ধরবো এতে আপনার লাগে কেন?

মেয়েটা এবার হো হো করে হেসে উঠে,,,

“”” হাউ ফানি,,,আরুশ তোমার মতো মেয়ের হাজবেন্ড?
বাই দ্যা ওয়ে তুমি তো আরুশের পি.এ,,,

আরিয়া কথা না বাড়িয়ে এক ঝটকায় মেয়েটা কে ছাড়িয়ে মেয়েটা কে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়,,,মেয়োটা রাগে ফোসস ফোসস করছে,,,তাতে আরিয়ার কি,,,আরিয়া দরজা লাগিয়ে খুব সাবধানে আরুশ কে রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলো,,,,

“”” বাবা গো বাবা এই গুন্ডা টা এত ভাড়ি কেন?জিম করে এতো ভাড়ি হয়ে গেছে,,,উগান্ডার খচ্চর একটা,,,,

আরুশ কে শুইয়ে দিয়ে চলে আসতে গেলেই হাতে টান পেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে আরুশ হাত ধরে আছে আর নেশার ঘোরেই কেমন করে হাসছে আর ফিসফিস করে কিছু বলছে,,,আরিয়া হাত ছাড়াতে গেলেই আরুশ টান দিয়ে বুকের ওপর ফেলে,,,আর এমন শক্ত করে ধরে যে আরিয়া নড়তেও পারছে না,,,আরুশ তখনও বকে যাচ্ছে,,,

“”” বউজান কেন করো আমার সাথে এরকম?জানো তোমায় আমি এত্তওওওও ভালোবাসি কিন্তু তুমি বোঝোই না,,,

আর কিছু বলতে পারেনি আরুশ ঘুমিয়ে গেছে,,আরুশের মুখে বউজান শব্দটা আরিয়ার মনে তোলপাড় শুরু করে দেয়ে নিজেকে আর না ছাড়িয়ে ওভাবেই আরুশের বাহুডোরে ঘুমিয়ে পড়ে,,,,

রোদের মিষ্টি আলোতে ঘুম ভাঙে আরুশের,,,আজ আরুশ আরিয়ার আগেই ঘুম থেকে উঠে গেছে,,,আরিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে তৃপ্তি নিয়ে গুটি সুটি মেরে আরুশের বাহুডোরে ঘুমাচ্ছে,,,আরুশ কিছুক্ষণ আরিয়াকে পরখ করে দেখে মুচকি হেসে আরিয়ার কপালে নিজের ওষ্ঠ ছুইয়ে দিলো,,সে ছোয়ায় নড়ে চড়ে উঠলো আরিয়া,,,ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে আরুশ এক নজরে তাকিয়ে আছে তার দিকে,,,আরিয়া চটপট সরে আসে আরুশের কাছ থেকে,,,একটু সরলেই আরুশও উঠে পড়ে,,আরিয়া লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে,,,আরুশ ওয়াশরুমে ঢুকে গেলে আরিয়া দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বেডে বসে পড়ে,,,আবছা আবছা রোদ আসছে রুম টা তে,,,আরিয়া এক ধ্যানে বসে আছে,,ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজে সামনে তাকায়,,,আরুশ খালি গায়ে কাধের উপর টাওয়াল রেখে এক হাত দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে আসছে,,,আরিয়া বোঝে না সকাল সকাল শাওয়ার নেয়ার কি আছে,,লোকটা বিছানায় কি কিছু করে টরে নাকি ইয়াক ছি ছি কি ভাবসে সে আসলেও তার মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে,,,আরিয়া মাথাটা নিচু করতে গিয়ে আবারও কিছু একটা তে ওর চোখ আটকে যায় বুঝতে পারছে না কি সেইটা,,,তাই আরিয়া উঠে আরুশের সামনে গিয়ে দাড়ায় আরিয়া হঠাৎ সামনে আসায় আরুশ ভড়কে যায়,,,তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই আরিয়ার,,,আরিয়া হাত টা নিয়ে আরুশের দিকে বাড়ায়,,,ওর এমন ব্যবহার আরুশকে অবাক করে দিচ্ছে,,,আরিয়া আরুশকে আরো অবাক করে আরুশের পেটে হাত রেখে টাওয়েলটা সরিয়ে ক্ষত জায়গায় হাত দেয়,,,সদ্য ক্ষত দেখে আরিয়া আতকে উঠে জিজ্ঞেস করে,,,

“”” এই আঘাত কিভাবে লাগলো?দেখে তো মনে হচ্ছে গুলি লেগেছে,,,

আরুশ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,,,

“”” জানো না?

আরিয়া অবাক চোখে আরুশের দিকে তাকায়,,,

“”‘আমি কিভাবে জানবো?কিভাবে লাগলো বলেন?

“”” তোমার জানতে হবে না,,,

আরিয়া এবার তেতে উঠে ঝাঝালো কন্ঠে বলে,,,

“””” আমার জানতে হবে না মানে কি,,,আমি আপনার বউ আপনার সব জানার অধিকার আছে ওকে বলেন কি হয়ছে?

আরুশের ওপর অধিকার খাটানো দেখে আরুশের যেমন ভালো লাগছিলো তেমনি কোনো এক কারণে মুখে তাচ্ছিল্যের হাসিও ছিলো,,,সেই হাসিতে বেদনার স্পষ্ট ছাপ,,,জড়িয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে উঠলো,,,

“”” এরকম না করলেও পারতে আরুজান,,,

আরুশের এমন জড়িয়ে যাওয়া করুন কন্ঠে আরিয়া একটু পিছিয়ে দাড়ায়,,তবে কি সব জানে আরুশ তাহলে এই বিয়ের কি মানে,,,আরুশ আরিয়াকে সরিয়ে মিরোরের সামনে দাড়ায়,,,আরিয়া তব্দা খেয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে কিছু একটা ভেবে আরুশের কাছে যায়,,,,

“””” আজ থেকে ড্রাংক হয়ে বাড়ি ফিরলে রুমে তো দুর বাড়িতেই ঢুকতে দেবো নাা,,,

আরুশ ভ্রুযুগল কুচকে বললো,,,

“””” আমার বাড়িতে আমাকে ঢুকতে দেবে না?

“””না দেবো না,,,

“”” কেন?

“”” কারন আমি আপনার বউ ওকে,,,

আরুশ কেমন করে যেনো হাসলো,,,তারপর কাবাড থেকে একটা মেরুন কালার শার্ট বের করে পড়তে লাগলো,,,,শার্টের উপর ব্লেজার জড়িয়ে হাতা ফোল্ড করছিলো তখন আরিয়া আবারও বলে উঠলো,,,

“”” কালকের মেয়েটা কে ছিলো?

আরিয়ার কথা আরুশের বোধগম্য হলো না তাই ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,,,,

“”” কোন মেয়ে?

“”” এ্যাা নেকা শষ্ঠী কাল রাতে যার কাধে পড়ে ঢলতে ঢলতে এসেছিলেন তার কথায় বলছি,,,

আরুশ বুঝলো না কার কথা বলছে কারন কাল ফিরছে কখন সেটাই তার মনে নাই আর তাছাড়া যখন সে বাড়ি ফিরেছে তখন তার সেন্স ছিলো কি না সেটাও মনে করতে পারছে না,,,,হঠাৎ মনে হলো তার লাস্ট টাইম সে লিজার সাথে ছিলো তাহলে কি লিজাই বাসায় আনছে,,,

‘””হয়তো লিজা ছিলো,,,কেন বলো তো?কিছু কি হয়ছে?

“””কিছু না,,,ওর থেকে দুরে থাকবেন,,,

“”” কেন?জ্বলছে নাকি তোমার?

আরিয়া কিছু বলতে যাবে কিন্তু আরুশের বাকা হাসি দেখে থেমে যায়,,,আর কথা বাড়ায় না……

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️❤️অনেক অসুস্থ ছিলাম তার জন্য গল্প লিখতে পারিনি,,,এখন থেকে প্রতিদিন দেবো ইনশাহআল্লাহ 🥰❤️)

হ্যাপি রিডিং❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here