ধ্রুবতারা পর্ব_১১ পুষ্পিতা_প্রিমাv

ধ্রুবতারা
পর্ব_১১
পুষ্পিতা_প্রিমা

রূপসা গ্রামের গ্রাম্য পুলিশদের নানান ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন রোয়েন। রাহাকে উদ্ধার করার পর তাড়াতাড়ি হসপিটালে এডমিট করানোর তাড়া রোয়েনের। সেখানে পুলিশদের অযৌক্তিক প্রশ্ন বেশ বিরক্তিকর। রাহা বেঁচে আছে রোয়েনের কাছে এই মুহূর্তে এটার চাইতে বড় কিছু নয়। রাহাকে সুস্থ করার পর বাকিসব। মাথা ফাটার রক্ত শুকিয়ে গেছে। রাহার পুরো মুখে, কাঁধে, গলায় সেই রক্ত লেগে আছে। রোয়েন পুলিশদের কথা সম্পূর্ণরূপে অবজ্ঞা করল। তার কাছে জায়িদের নাম্বারটা নেই নইলে ফোন করে সব জানিয়ে দিত। সে হসপিটাল থেকে ছুটে এসেছে। রাহার নিথর শরীর তার কোলে। হসপিটালে ডুকে হাঁক ছাড়লো রোয়েন। নার্স আর ডাক্তার ছুটে আসলো। স্ট্রেচারে করে নিয়ে গেল রাহাকে। ডাক্তার এসে জানালো রাহার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। মস্তিষ্কে লোহার রডের আঘাতের কারণে জখম হয়েছে। ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছে। অবস্থা ক্রিটিক্যাল। রোয়েন বলল
‘ রক্ত? ডাক্তার ওকে যেভাবে হোক সেভাবেই সুস্থ করুন। ওকে এই অবস্থায় ওর মা বাবা দেখতে পারবেনা। ওদের কাউকে কিছু বলতে পারবো না আমি।
ডাক্তার বলল
‘ রক্ত যোগাড় করুন শীঘ্রই। নাহলে বাঁচানো মুশকিল হয়ে পড়বে।
রোয়েন বেকায়দায় পড়ে গেল। অন্যদিকে পুলিশের জেরা। পুলিশ অনবরত প্রশ্ন করে যাচ্ছে
‘ রোগী কে হয় আপনার?
রোয়েন বলল
‘ আমার কাজিন। আর কিছু জানার আছে?
পুলিশ সন্দিগ্ধ গলায় বলল
‘ কাজিন? তাহলে এই মেয়ে জঙ্গলে কি করছিল? আপনি জানেন কি করে এই মেয়ে জঙ্গলে আছে। কোনো কুমতলব ছিল না তো?
রোয়েন রেগে গেল।
বলল
‘ আরেকবার বাজে মন্তব্য করলে খবর আছে।
গ্রাম্য পুলিশ অফিসার জমির দাঁত খেলিয়ে হাসলো। পানের পিচকিরি ফেলে বলল
‘ কি খবর আছে? নষ্টামি করার আগে মনে ছিলনা, এই মেয়েকে মেরেছিস কেন সেটা বল আগে।
রোয়েন বলল
‘ দেখুন, মুখের ভাষা ঠিক করুন৷ আমার মামা ইশতিয়াক তালুকদার শহরের বড় থানার হেড। দুইদিন আগেই জঙ্গলের কাছে অনেক বড় একটা মিশন হয়েছে হয়ত আপনারা জানেন না। না জেনে মন্তব্য করবেন না। পথ ছাড়ুন। আমাকে যেতে হবে।
জমির কলার চেপে ধরলো রোয়েনের। বলল
‘ যেতে পারবি না। থানায় চল। তোকে সন্দেহ হচ্ছে।
রোয়েন শান্ত গলায় বলল
‘ কলার ছাড়ুন।
জমির কলার ছাড়লো না। বলল
‘ থানায় চল।
রোয়েন বলল
‘কলার ছাড়তে বলেছি।
কলার ছাড়লো না জমির
রোয়েন ধাক্কা মারলো। অন্য পুলিশরা দৌড়ে আসতেই রোয়েন জমিরের কলার চেপে ধরে ঘুষি বসিয়ে বলল
‘ ছাড়তে বলেছি নাহ? আমি কি তোর বাপের খাই? না তোর বাপের পড়ি? যে তোর কথামতো চলবো? ভালো কথা বলেছি কানে ডুকেনি?
অন্য পুলিশরা এসে ধরে ফেলল রোয়েনকে। সাথে সাথে পুরো গ্রামে রটে গেল শহুরে ছেলে পুলিশের গায়ে হাত তুলেছে। রোয়েন দিশেহারা হয়ে পড়লো। অপারেশন রুমে কোনোমতে ছুটে গিয়ে দেখলো রাহা শ্বাসপ্রশ্বাস উঠানামা করছে। রোয়েন ডাক্তারকে ডেকে বলল
‘ আমার রক্ত দেওয়া যাবে? আমি এখন রক্ত কোথায় পাব?
ডাক্তার বলল
‘ আপনার রক্তের গ্রুপ পেশেন্ট সাথে ম্যাচ?
রোয়েন বলল
‘ হয়তো। দেখুন, কিন্তু তার আগে পুলিশকে ম্যানেজ করুন। ওরা আমাকে নিয়ে যাবে। বলুন রক্ত দেওয়া শেষ হলে আমি নিজেই থানায় গিয়ে সবটা বলব, প্রমাণ ও দেব। প্লিজ।
ডাক্তার বলল
‘ জ্বি, আমি দেখছি।
ডাক্তার যেতেই রোয়েন অপারেশন রুমে ডুকে পড়ল। রাহার রক্তের গ্রুপ চেক করে রাহার কাছে ছুটে গিয়ে রাহার হাত তুলে কপালে রেখে বলল
‘ রাহা কিসের শাস্তি দিচ্ছ এত? বিয়ে করিনি বলে? উফফ রাহা এত বাচ্চামো তোমায় সাজেনা। সাজেনা রাহা৷ তাড়াতাড়ি উঠো, আমায় উদ্ধার করো। এইবার তোমাকে চোখে চোখে রেখে বিয়ে দেব আমি। আমাকে জ্বালানোর শাস্তি দেব।তাড়াতাড়ি উঠো।

ডাক্তার এসে বলল
‘ পেশেন্ট কি আপনার গার্লফ্রেণ্ড?
রোয়েন মাথায় হাত দিয়ে বলল
‘ এসব কেমন বাজে কথা?
ডাক্তার বলল
‘ হসপিটালের বাইরে গ্রামের মানুষ জড়ো হয়েছে। আপনি নাকি পুলিশের গায়ে হাত তুলেছেন? তাছাড়া ওরা বলছে নষ্ট মেয়ের চিকিৎসা ওরা এই হসপিটালে হতে দেবেনা।
রোয়েন দাঁতে দাঁত পিষে বলল
‘ রাহা নষ্টা নয়। এসব ভুল ধারণা। গ্রামের মানুষ এত মূর্খ কি করে? রাহাকে এখন বাঁচানো দরকার। তারপর বাকিসব। আমি তো রাহাকে তাড়াতাড়ি ট্রিটমেন্ট দেওয়ার জন্য এখানে নিয়ে এসেছি। নাহলে শহরে নিয়ে যেতে পারতাম। ডক্টর বুঝার চেষ্টা করুন। আমি সব প্রমাণ দেব। কিন্তু এখন না, আগে রাহা সুস্থ হয়ে উঠুক। আমি পুলিশের গায়ে হাত তুলেছি বলে এরা এসব গুজব রটাচ্ছে। ওরাই আমাকে বাধ্য করেছে। গ্রামের পুলিশগুলো আসলেই ঘুষখোর। ছিঃ।

ডাক্তার বলল
‘ আমি নিরুপায় মিঃ রোয়েন। আপনার পেশেন্টর ট্রিটমেন্ট করলে আমার বিরুদ্ধে কেস হতে পারে। আমি নিরুপায়।

রোয়েন বলল
‘ তাহলে? এখন কি হবে? রাহাকে নিয়ে কোথায় যাব আমি? শহরে পৌঁছানোর আগেই যদি ওর কিছু একটা হয়ে যায়?

ডাক্তার বলল
‘ পুলিশ কি বলে দেখুন। ক্ষমা চাওয়ার হলে চেয়ে নিন।
রোয়েন বলল
‘ ঠিক আছে। ডাকুন ওনাদের।
ডাক্তার বলল
‘ আসুন আমার সাথে। রোয়েন ব্যস্ত পায়ে হেঁটে গেল। গ্রামের মানুষ জড়ে হয়েছে। একে অন্যের সাথে ফিসিরফাসুর শুরু হয়েছে। রোয়েনকে দেখে বলল
‘ পোলা তো দেখতে ভালা। এমন কাম কি কইরা করলো?
রোয়েনকে দেখে জমির অগ্নিচোখে তাকালো। বলল
‘ মেয়েটাকে নষ্ট করে এখন নিজে ভালো সাজতে এসেছে। আবার আমাকে বড় পুলিশের ভয় ও দেখায়। নিজে বাঁচার জন্য ভালো মানুষ সেজেছে।
রোয়েন আঁড়চোখে তাকিয়ে থাকলো। পারছেনা জমিরকে খুন করতে। চোয়াল শক্ত রোয়েনের। পুলিশ বলল
‘ কিছুদিন আগে ও একটা ঘটনা হয়েছে। কলাবাগানে এরকম শাড়ি পড়া একটা মেয়ের লাশ পড়েছিল। আমরা গিয়ে উদ্ধার করেছি। ঘটনাসূত্রে জানা যায় মেয়েটি নিজের ছেলেবন্ধুর সাথে দেখা করতে কলাবাগানে গিয়েছিল। এরা ও এমনই হবে।

রোয়েন বলল
‘রাহা আমার কাজিন। ও বিয়ে করবে না বলে পালিয়েছিল আর আমি!
জমির হো হো করে হেসে উঠে বলল
‘ এই তো আসল কথায় আয়। আয়। মেয়েটাকে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে আসতে বলে তারপর মেরে ফেলতে চেয়েছিলি না?
রোয়েন গর্জে বলল
‘ আমি যদিই ওকে মারতে যেতাম তাহলে এখন বাঁচাতে নিয়ে এলাম কেন?
জমির বলল
‘ কেন আবার? ভালো সাজার জন্য। যখন দেখছিস তোর আর পালানোর জায়গা নেই তখন ভালো সাজতে এসেছিস।
রোয়েন তেড়ে গেল জমিরের দিকে। জমির চেয়ারে বসা ছিল। রোয়েন জমিরের মুখ বরাবর পা বসিয়ে দিল। জমির চেয়ারসহ উল্টে পড়ে গেল।
রোয়েন খেঁকিয়ে উঠে বলল
‘ কুত্তার বাচ্চা ভালো কথার দাম নেই তোর কাছে। কতবার বলেছি আমি রাহাকে বাঁচাতেই এখানে এনেছি। কতবার বলেছি?
আশেপাশের সবাই হায় হায় করে বলে
‘ ছিঃ কেমন বেয়াদব ছেলে। ছিঃ।
রোয়েন বসে পড়লো শেষমেশ। ডাক্তারকে বলল
‘ এদের ইশতিয়াক তালুকদারের সাথে কথা বলতে বলুন প্লিজ।
ডাক্তার সবার উদ্দেশ্যে বলল
‘ দেখুন একজন মানুষের জীবনমরণ প্রশ্ন। আমরা এসব না ভেবে, আগে রোগীকে বাঁচায়।
জমির উঠে বলল
‘ না, এই হারামির বাচ্চাকে আগে জেলে পুড়ি। তারপর!
রোয়েন উঠে জমিরের আরেক ঘুষি বসিয়ে বলল
‘ হারামির বাচ্চা কাকে বললি? কত্তবড় সাহস আমার আম্মা আব্বাকে গালি দিলি? কত্তবড় সাহস তোর?
জমির উল্টো ঘুষি বসালো রোয়েনের মুখে। রোয়েন এবার পা দিয়ে জোরে লাতি বসালো জমিরের হাঁটুতে। হাঁটু ধরে বসে পড়লো জমির। রোয়েন মুখ মুছে বলল
‘ খোদার কছম আমার আম্মা আব্বাকে তুলে গালি দিলে জীবন্ত কবর দেব তোকে। মনে রাখবি, আমি তোর মতো বেজন্মা নই।
অন্য পুলিশগুলো এসে ধরতে চাইলে রোয়েন হুংকার ছাড়ে। বলে
‘ ইশতিয়াক তালুকদারকে ফোন দে। তারপর আমার সাথে কথা বলতে আসবি। যাহ।
ডাক্তার আপনাকে বলছি আমি। যদি রাহার কোনোকিছু হয়, যাবজ্জীবন জেলের ঘানি টানবেন আপনি। আমার কথা মনে রাখবেন।
পুলিশ কনস্টেবল জায়িদকে ফোন দেয়। যে ফোন তুলে তাকে বলে
‘ আমরা ইশতিয়াক তালুকদারের সাথে কথা বলতে চাইছি। ওনাকে পাওয়া যাবে।
‘ জ্বি, লাইনে থাকুন।

জায়িদ ফোন তোলার সাথে সাথে পুলিশ কনস্টেবল বলল
‘ আমরা রূপসা গ্রামের থানা থেকে বলছি স্যার। এখানে একটি ছেলে রোয়েন, হ্যা মিঃ রোয়েন আহম্মেদের নামে অভিযোগ তোলা হয়েছে। কিন্তু ওনার বক্তব্য আপনি সব জানেন।
জায়িদ বলল
‘ কি হয়েছে রোয়েনের? রোয়েন আমাদের ছেলে। কোথায় রোয়েন?
‘ স্যার সব জানার জন্য আপনাকে একটু গ্রামে আসতে হবে।
জায়িদ বলল
‘ শীঘ্রই আসছি। রোয়েনের যাতে কোনোরূপ ক্ষতি না হয়। আসছি আমি।

নাহিল আর ঈশানকে নিয়ে রূপসা গ্রামের দিকে পা বাড়ায় জায়িদ। এদিকে রাহার চিকিৎসার চলতে থাকে। জমিরকে ও হসপিটালে এডমিট করানো হয়। নাক দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ হচ্ছেনা তার।

ক্লান্ত, দুর্বল শরীরে হসপিটালের করিডরে বসে থাকে রোয়েন। রাহাকে রক্ত দেওয়ার পর ডাক্তার তাকে ডাব এনে দিল। ফলমূল এনে দিল। রোয়েন ডাবের পানি খাওয়া ছাড়া অন্য কিছু খেলো না। চিন্তায় মাথার রগ দপদপ করছে। সন্ধ্যার দিকে ডাক্তার এসে জানালো রাহা বিপদমুক্ত। তবে জ্ঞান ফেরা অব্ধি কোনো কিছু বলা যাচ্ছেনা। রোয়েন এতটুকু শুনে স্বস্তি পেল। খন্দকার বাড়িতে গিয়ে উঠলো সে। সোরা রাতুলের বাড়িটাতে দুঃস্থ অসহায় মহিলাদের জন্য একটি সংস্থা খুলেছে। সেখানে রাহার পরিচয় দিতেই তারা রাহাকে শহরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিল। হসপিটালের বিল পে করে দিল।

জায়িদ আসার আগেই রাহাকে নিয়ে শহরে পাড়ি দিল রোয়েন। রাহার আর ও উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। জায়িদ এসে সব শুনে মাথায় হাত দিল। থানায় সব মীমাংসা খোলাসা করল। জমির কেন রোয়েনের সাথে এমন করলো তার জন্য তদন্ত করতে বলল। ততদিন জমিরকে তার কাজ থেকে বরখাস্ত করা হলো।

নাহিল বলল
‘ রাহাকে চোখের দেখা ও দেখতে পারলাম না। আমি বুঝতে পারছিনা কি হচ্ছে এসব?
ঈশান বলল
‘ রোয়েন নিশ্চয়ই ভালো কিছুর জন্য রাহাকে নিয়ে গিয়েছে। এখানে ভালো চিকিৎসা নেই আঙ্কেল। চিন্তা করবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
জায়িদ বলল
‘ রোয়েন শহরে পৌঁছে নিশ্চয়ই আমাকে ফোন দেবে। চিন্তা নেই, আমরা ফিরে যাই।

সেন্ট্রাল হসপিটালে রাহাকে এডমিট করিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল রোয়েন। বাড়িতে গিয়ে কারো সাথে কোনো কথা বলল না সে। নিজের শার্ট পাল্টে ব্যাংকের কাগজপত্র নিয়ে বের হয়ে এল সে। সোরা তাননা বাড়ির বাকিসবাই কতকিছু জিজ্ঞেস করল, কাউকে কিছু বলল না রোয়েন। রাহার কাছে ফিরে গেল।

গাড়ি থেকে নেমে দোকান থেকে পানির বোতল কিনল সে। ঢকঢক করে পানি খেয়ে বসে পড়ল রাস্তার পাশে থাকা বাইকের উপর। হসপিটালের দোতলায় চোখ গেল হঠাৎ। দোতলার বারান্দায় লাইটের আলোয় মাথার মোটা সাদা ব্যান্ডেজ পরিহিত একটি মেয়েকে দেখলো। পানির বোতলের পানি আর ও খেল রোয়েন। বোতলটা দূরে ছুঁড়ে ফেলে দৌড়ে উঠলো সিঁড়ি বেয়ে। একটি দৌড়ে আসা নার্স থমকে গেল রোয়েনকে দেখে। বলল
‘ সরি স্যার। পেশেন্ট জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে পাগলামি করছিল। মারধর করছে। আমরা ধরে রাখতে পারিনি। সরি স্যার।
রোয়েন বলল
‘ আমি দেখেছি ওকে।
বলেই দৌড়ে গেল রোয়েন। রাহা বলে ডাকতেই রাহা ফিরল।
মাথার লম্বা চুল অনেকটা কেটে ফেলা হয়েছে। দুই পাশে দুটো বেণী ফিতায় মুড়ানো। রোয়েন বলল
‘ রাহা! এখনো জ্বালানো শেষ হয়নি? এবার একটু শান্তি দাও প্লিজ।
রাহা এদিকওদিক তাকালো। নরম পায়ে হেঁটে রোয়েনের কাছে এগিয়ে এসে কলার টেনে ধরলো রোয়েনের। হাত ছুঁড়তে ছুঁড়তে মুখ দিয়ে অদ্ভুত শব্দ বের করলো। তার মাথায় মোটা ব্যান্ডেজের উপর দুহাত দিয়ে চেপে কেঁদে উঠলো আওয়াজ করে। রোয়েন শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। নার্স দুজন এসে রাহাকে ধরে ফেলে বলল
‘ স্যার, আপনার কাজিনকে মেন্টাল হসপিটালে এডমিট করতে বলা হয়েছে। প্লিজ স্যার কিছু একটা করুন। উনি ভীষণ আক্রমণাত্মক।
রোয়েন বলল
‘ মাথা খারাপ? ওকে মানসিক হাসপাতালে? নাহ?
ডাক্তার নাফিস এসে বলল
‘ রোয়েন তুমি বোকার মতো কথা বলবেনা এটলিস্ট।
রোয়েন মাথার চুল টেনে ধরলো একহাত দিয়ে। রাহা দাঁতে দাঁত গিজগিজ করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। ডাক্তার নাফিজ বলল
‘ ওর মাথায় জখম হয়েছে রোয়েন। ওর মাথায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় ভারসাম্য হারিয়েছে।
রাহাকে নিয়ে যাওয়া হলো। রোয়েন বসে থাকলো হসপিটালের করিডোরে। সে ভেবেছিল বাবাই আর মামাকে সব বলবে। কিন্তু এখন?
রোয়েনের কোনো সম্মতি না পেয়ে হসপিটালের পাশেই মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো রাহাকে। তবে রাহার পাগলামোর কারণে ওকে ছাড়তে পারলোনা। নিজের হাতের উপর নিজের দাঁত বসাচ্ছে রাহা। মানুষ দেখলেই জিনিস ছুঁড়ে মারছে। শেষমেশ শিকলবন্দী করা হলো রাহাকে। রাহা মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে ডাকতে লাগলো রোয়েনকে।

রোয়েন অবাক হয়ে রাহাকে দেখলো। চিনাপরিচিত রাহা নয় এ? সব তার জন্য হয়েছে। সে রাহাকে বিয়ে করে নিলে এতকিছু হতো না। রাহা বাড়ি ছেড়ে পালাতো না। এত বিপদ হতো না। আর এই ভুলের এখন মাশুল দিয়ে ও শেষ হচ্ছেনা। আর কত মাশুল দিতে হবে?

রোয়েন বের হয়ে গেল। রাস্তায় নেমে পড়ে তাকিয়ে থাকলো দূর আকাশের দিকে। বিড়বিড় করল
‘ আমার সাথে এসব কি হচ্ছে আম্মা? আজ তোমরা থাকলে বোধহয় এমন কিছু হতো না।
আমি রাহাকে ভালোবাসিনা ঠিক কিন্তু রাহার খারাপ হোক তা কখনো চাইনি। কখনো চাইনি আম্মা। সবার কাছে এখন আমি অপরাধী। তাননার গায়ে হাত তুলেছি আমি। রাহার শেষপর্যন্ত এই দশা। ওকে পাগলাগারদে রাখতে বলছে ডাক্তার। এসব কেন হচ্ছে আম্মা। আমি মামুনিকে কি বলব? কিভাবে বলব তার মেয়েকে পাগলাগারদে রেখে এসেছি।

অর্ধেক পথ হেঁটে এসে আবার ফিরে গেল রোয়েন। রাহার কাছে গিয়ে শিকল খুলে দিতে গিয়ে আবার রাহার দিকে তাকিয়ে বলল
‘ রাহা! আমাকে চিনতো পারছো না?
রাহা চেঁচিয়ে বললো
‘ এটা খুলে দে । তাড়াতাড়ি দে । মেরে ফেলব সবাইকে।
রোয়েন বলল
‘ রাহা! আমার কথা শুনো। প্লিজ রাহা?
রাহা পিটপিট করে তাকালো। বলল
‘ তুই কে? মেরে ফেলবো একদম। মাথায় ব্যাথা লাগছে। আহঃ।
রোয়েন বলল
‘ রাহা আমি তোমার রোয়েন ভাইয়া। চিনতে পারছো না? দেখো একটু চেষ্টা করো চিনতে পারবে তুমি। চেষ্টা করো।
রাহা পা ছুঁড়ার চেষ্টা করে বলল
‘ সর সর। যাহ।
রোয়েন মাথায় হাত দিল। বলল
‘ ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি।
রাহা ডাকল
‘ এই এটা খুলে দে। খুলে দে।
রোয়েন বলল
‘ দেব না। দিলে তুমি আমার কথা শুনবে?
রাহা বলল
‘ হ্যা, শুনবো। খোল।
রোয়েন শিকল খুলে দিল। সাথে সাথে রোয়েনকে শিকল দিয়ে জোরে বাড়ি মারলো রাহা। নার্সগুলো দৌড়ে আসতে চেয়ে ও ভয়ে পারলোনা। শুধু বলল
‘ স্যার সরে আসুন। মেরে ফেলবে আপনাকে।
কপালে হাত দিয়ে রাহার দিকে চেয়ে রইলো রোয়েন। বলল
‘ আরও মারবে? মারো। নাও মারো। মারছো না কেন?
রাহা শিকল তুলল৷ নার্স মেয়েটি চেঁচিয়ে বলল
‘ রাহা নাহ? মেরোনা। উনি তোমাকে ভালোবাসে। তোমার যত্ন করে। তোমার জন্য চিন্তা করে। উনাকে মেরোনা। শিকল হাতে পেঁচাতে চায় রাহা। রোয়েনের দিকে আবার ছুঁড়ে মেরে নিজে নিজে চিল্লিয়ে উঠলো। রোয়েন কপালে হাত দিয়ে বসে পড়লো। রাহা শিকল দূরে ছুঁড়ে ফেলে হাত পা গুঁজে বসে থাকলো। রোয়েন মাথা চেপে ধরে ধসে পড়লো। নার্স মেয়েদুটো এসে রোয়েনকে ডাকতে ডাকতে বলল
‘ স্যার, ওহ গড। রাহা কি করলে এটা? কি করলে? শেষমেশ এই মানুষটাকে ও ছাড়লে না?
রোয়েনকে নিয়ে যেতেই রাহা দাঁড়িয়ে পড়লো। পেছন পেছন দৌড়ে গেল। রোয়েনকে একটি কেবিনে ডুকাতেই রাহা ও ডুকে পড়লো। সবাইকে শিকল দেখিয়ে বলল
‘ এটা দিয়ে মেরে ফেলবো সবাইকে এই বাজে ছেলের কাছে যেতে দে। সর। যাহ।
রাহা হাতের শিকল দিয়ে আরেকটা মারে রোয়েনকে। রোয়েন কেঁপে উঠে। জ্ঞান ফিরে যায়। নার্স মেয়েদুটো গালে হাত দিয়ে ভয়ে চুপসে গিয়ে এককোণায় দাঁড়িয়ে থাকে। রোয়েন যন্ত্রণায় দগ্ধ হয়ে বলে
‘ আর কত করবে রাহা? আমার আর সহ্য হচ্ছে না। নাও মারো। মরে যায় আমি। মারো।
বলতে না বলতে বেডে শুয়ে পড়ে রোয়েন। উপুড় হয়ে শুয়ে পড়তেই রাহা বেডের উপর উঠে বসো। পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে বলে
‘ নাহ নাহ আমার সাথে কথা বল। তোকে আরও মারবো। রোয়েন বলল
‘ আমি ভীষণ অসুস্থ রাহা। তুমি তার উপর শিকল দিয়ে মেরেছ আমাকে।
রাহা এদিকওদিক তাকিয়ে নিজের হাতের উপর কামড় বসালো। দাঁত বসে গেল হাতে। রোয়েন তাকে ছাঁড়িয়ে নিয়ে গালে কষে চড় বসিয়ে বলল
‘ সিস্টার একে গরাদে রেখে এসো। নিয়ে যাও। এ রাহা নয়।
রাহা তার শার্ট ধরে রাখে। বলে
‘ নাহ নাহ আমি কোথাও যাব না। এই বাজে ছেলে আমাকে ধর।
রোয়েন বলল
‘ তুই তুকারি শুরু করেছ?
রাহা গালে আঙুল দিয়ে বলল
‘ আর বলবো না ছেলে। তুই, নাহ তুমি রাগ করবে না কেমন?
রোয়েন বলল
‘ মেরে পাম্প দিচ্ছ রাহা? ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার।
রাহা শিকল তুলে নার্সগুলোর দিকে ছুঁড়ে মারলো। গর্জে বলল
‘ তোদের ও মারবো। মেরে ফেলবো।
রোয়েন চেঁচিয়ে বলল
‘ সিস্টার একে গরাদে রেখে এসো। যাও।
কয়েকজন একসাথে এসে রাহাকে নিয়ে গেল। রাহা যেতে যেতে চিৎকার করে কাঁদলো। বলল
‘ বাজে ছেলে আমার সাথে রাগিস না। তোকে আর মারবো না।
রোয়েন চোখ বন্ধ করতে করতে বলল
‘ তোমার বিশ্বাস নেই রাহা।

চলবে

🙂🙂 বলে যান কিছু, গল্প এরপর দ্রুত এগোবে। তারপর শেষ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here