ধ্রুবতারা পর্ব_১৩ পুষ্পিতা_প্রিমা

ধ্রুবতারা
পর্ব_১৩
পুষ্পিতা_প্রিমা

সারারাত চেয়ারে বসে ঘুমোলো রোয়েন। রাহা আলুথালু হয়ে এমনভাবে ঘুমোচ্ছে যেন কয়েক বছর ঘুমোয়নি। রোয়েনের ঘুম ভাঙলো অনেক আগেই। মসজিদ থেকে ফিরে দেখলো সোরা আর তাননাকে। সকাল সকাল নাশতা বানানোর কাজে লেগে গেছে ওরা। রোয়েন ফিরতেই সোরা দৌড়ে এল।
‘ মুননা রাহা কি খাবে?
রোয়েন বলল
‘ ঝাল ছাড়া সব খাবে।
তাননা এসে বলল
‘ তুই না হয় ঝাল খাস না। তারমানে রাহা ও কি খাবে না? আশ্চর্য!
রোয়েন বলল
‘ আমি কি জানি? তুই গিয়ে জিজ্ঞেস করে আয়।
তাননা বলল
‘ তোর বউ, এখন তোর সব জানতে হবে। বিরক্ত হলো রোয়েন। হনহনিয়ে চলে গেল। ততক্ষণে রাহা ঘুম থেকে উঠে বসেছে। রোয়েনকে চোখ কচলাতে কচলাতে বলল
‘ এই বর আমাকে ফেলে কোথায় গিয়েছিস?
রোয়েন বলল
‘ বর ডাকতে কে বলেছে?
‘ ওই কালকে, সাদা পোশাক পড়া মেয়েগুলো বলেছে তুই নাকি আমার বর।
রোয়েন বলল
‘ তুই তুকারি বন্ধ করো।
রাহা বলল
‘ কিভাবে বন্ধ করে?
রোয়েন বলল
‘ ওয়াশরুমে যাও। ফ্রেশ হয়ে এসো। মুখ হাত ধুঁয়ে নাও। খেতে হবে।
রাহা বলল
‘ তুই কোথাও যাবি না কেমন?
রোয়েন বলল
‘ ঠিক আছে।
রাহা চলে গেল। কিছুক্ষণ পর এসে বলল
‘ এই বর আমি তোর কে?
রোয়েন বলল
‘ কেউ না। মুখ মুছে নাও। নিচে যেতে হবে।
রাহা বলল
‘ তুই আমার বর। আমি তোর কেউ না। আচ্ছা।
রোয়েন বলল
‘ নিচে গেলে কাউকে মারবে?
রাহা কিছু ভাবলো। মাথা নাড়িয়ে বলল
‘ মারব না।
রোয়েন বলল
‘ ঠিক আছে। আসো আমার পিছু পিছু।
রাহা গেল। মাথার দুপাশে দুই বেণী ধরে হাঁটতে হাঁটতে গেল। সোরা মেয়েকে দেখে তব্দা মেরে দাঁড়িয়ে রইল। কোথায় গিয়ে একটু জড়িয়ে ধরবে!
রোয়েন রাহার হাত ধরে টেবিলের কাছে নিয়ে গেল। রাহা সবাইকে ঘুরেফিরে দেখে টেবিলের কাছে গেল। সোরার দিকে প্লেট ছুঁড়ে মেরে বলল
‘ তুই আমার দিকে তাকাস কেন?
রোয়েন জোরে ডাক দিল
‘ রাহা?
সোরাকে নাহিল সরিয়ে ফেলল। আঁতকে উঠে গড়গড় করে কেঁদে দিল সোরা। রাহা তার কান্না দেখে রোয়েনের দিকে তাকালো ভীত চোখে। বলল
‘ এই বর, রাগিস না।
রোয়েন হাত ধরে ফেলল রাহার। টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল
‘ চলো। তোমাকে এখানে আনা যাবে না। রুমে বন্দী থাকবে তুমি।
রাহা কাঁদতে কাঁদতে বলল
‘ আল্লাহ আমি হাতে ব্যাথা পাচ্ছি। ছাড়।
রোয়েন রাহাকে রুমে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করল। রাহা রাগে টেবিলের ফাইলপত্র সব রোয়েনের দিকে ছুঁড়ে মারলো। গিজগিজ করতে করতে এটা ওটা খুঁজতে লাগলো। রোয়েন দিশেহারা হয়ে পড়লো। দৌড়ে গিয়ে রাহাকে আষ্টেপৃষ্টে ধরে ফেলে বলল
‘ রাহা স্টপ। কি করছ তুমি? কি হয়েছে তোমার?
রাহা কেঁদে বসে পড়ল নিচে। রোয়েন চোখ বন্ধ করে আবার খুললো। বলল
‘ রাহা তুমি যদি এমন করো। তোমাকে রেখে চলে যাব আমি। মনে থাকবে?
রাহা বলল
‘ নাহ যাবিনা।
রোয়েন বলল
‘ যাব যদি আর এমন করো। আর করবে?
রাহা ঘনঘন মাথা নাড়িয়ে বলল
‘ আমাকে ওভাবে দেখে কেন?
রোয়েন বলল
‘ উনি তোমার আম্মা। তুমি ওনার হাতে খেতে আগে। রাহা ওনাকে আম্মা ডাকবে। তুমি বলবে। তুই না।
রাহা বলল
‘ নাহ।
রোয়েন বলল
‘ তাহলে আমি চলে যাচ্ছি। আর আসবো না।
রাহা বলল
‘ যাহ। তোকে লাগবে না।
রোয়েন দাঁড়িয়ে পড়লো। বলল
‘ ঠিক আছে।
দরজা খুলে বের হয়ে গেল রোয়েন। রাহা কিছুক্ষণ পর দাঁড়িয়ে দৌড়ালো রোয়েনের পিছু পিছু। রোয়েনের পিছু পিছু নিচে নেমে গেল। ডাকলো
‘ এই বর যাস না। তোর কথা শুনবো। এই বর?
রোয়েন বলল
‘ তাহলে টেবিলে বসে চুপচাপ খাও।
রাহা টেবিলে বসলো। প্লেট টেনে বলল
‘ এই বর আমি খেতে জানিনা।
তাননা দূর থেকে দাঁড়িয়ে ইশারায় বলল
‘ তুই খাইয়ে দে।
রোয়েন বলল
‘ পারব না।
রাহা পাউরুটি দুইহাতে মোঁচড়াতে মোঁচড়াতে বলল
‘ বর তুই খাবি?
রোয়েন ধমক দিয়ে বলল
‘ কি করছ রাহা?
রাহার বদলে সোরা কেঁদে উঠে। রোয়েন তা দেখে শান্ত গলায় বলল
‘ রাহা? এভাবে কেউ খাবার নষ্ট করে?
রাহা চুপ করে বসে থাকলো। রোয়েন চেয়ার টেনে বসলো।
‘ পাউরুটিতে জেলি লাগিয়ে দিয়ে ধরে বলল
এভাবে ধরে খাবে। বুঝেছ?
রাহা মাথা দুলালো। রাহাকে খাইয়ে দিল রোয়েন। রাহা মাথা দুলিয়ে খেতে খেতে বলল
‘ এই বর তুই খাহ।
রোয়েন বলল
‘ এখন খাবো না।
‘ আচ্ছা।
রাহাকে ঔষধ খাইয়ে দিল রোয়েন। রাহা রুমের দিকে না গিয়ে গ্লাস নিয়ে চলে গেল সোফার দিকে। সোফায় জিশান বসা ছিল। তাননা চেঁচিয়ে উঠে। জিশান রাহাকে দেখে চিল্লিয়ে কেঁদে উঠে ডাকে
‘ আম্মা,, আম্মা খালামুণি আমাকে মারবে। আম্মা।
রোয়েন গিয়ে কোলে তুলে নেয় জিশানকে। শান্ত করে বলে
‘ মারবে না মামা। মামা আছি। চিন্তা নেই।
রাহা বলল
‘ এই বর। বাবুটাকে আমাকে দে। মারি।
রোয়েন বলল
‘ চড় দেব রাহা। ও বাচ্চা।
তাননা গালে হাত দিয়ে বলল
‘ ভাই আমার বাচ্চাটাকে এদিকে নিয়ে আয়।
রোয়েন নিয়ে গেল। তাননা জিশানকে নিয়ে চলে গেল তাড়াতাড়ি।
রাহা নাহিলকে দেখে বলল
‘ তুই আমাকে আবার জ্বালাতে এসেছিস? মেরে ফেলবো তোকে।
আঁতকে উঠে সোরা। রোয়েন রাহার হাত ধরে ফেলল। টেনে উপরে নিয়ে যেতে যেতে বলল
‘ রাহা ওনি তোমার আব্বা। তুমি ওনাকে মারবে? রাহা ফিরে তাকিয়ে বলল
‘ মেরে ফেলব একদম।
রাহা যেতেই সোরা হাউমাউ করে কেঁদে মেঝেতে বসে পড়ে। নাহিল তাকে ধরে বলে
‘ সোরা রাহা সুস্থ না তাই এসব বলছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।

_______

নোহা দেখতে এল রাহাকে। আনহা আর জাহেদা ও এসেছে। রাহা তখন ঘরবন্দী। রোয়েন বাইরে গিয়েছে। তাই রাহাকে ঘরবন্দী করে রেখে গেছে। রাহার কান্নার আওয়াজ শুনে সোরা দরজা খুলে দিল। রাহা দৌড়ে ঘর থেকে বের হলো। নোহা আনহা তাননা লুকিয়ে পড়লো রাহাকে দৌড়ে আসতে দেখে। রিহান আর জুনিত ও লুকিয়ে পড়লো। সালেহা সোফায় বসে পান ধুঁকছিল। রাহা সালেহার দিকে এগিয়ে গিয়ে দুম করে কিল বসালো পিঠে। নাহিল দৌড়ে গেল। রাহা হামান দিস্তা নিয়ে ফেলে বলল
‘ বর কোথায়? বল।
নাহিল বলল
‘ ওটা তোমার দাদু রাহা। এমন কেউ করে? মরে যাবে।
নাতাশা লুকিয়ে থেকে বলে
‘ কি ভয়ংকর মেয়েরে বাবা।
সোরা নিচে চলে আসে। নাহিল বলল
‘ কেন দরজা খুলে দিলে সোরা?
হামান দিস্তা দূরে ছুঁড়ে মারে রাহা। আঁতকে উঠে সবাই। সালেহার গলা চেপে ধরলো রাহা। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে বলল
‘ আমার বর কোথায়? আমাকে ফেলে চলে গেছে।
সোরা দূরে দাঁড়িয়ে বলল
‘ তোমার বর, আছে। এক্ষুণি আসবে। আমি ফোন দেই?
রাহা বলল
‘ দে।
‘ তুমি কাউকে মারবে না তো?
রাহা বলল
‘ নাহ।
সোরা ফোন নিল। কাঁপা-কাঁপা হাতে রোয়েনকে ফোন দিল। রোয়েন ফোন তোলার সাথে সাথে বলল
‘ কি হয়েছে মামুনি?
সোরা ঝরঝরে কেঁদে দিয়ে বলল
‘ মুননা রাহা?
‘ কি হয়েছে রাহার?
‘ রাহা তোমার দাদুর গায়ে হাত তুলেছে।
রেগে গেল রোয়েন।
‘ ওকে বের করলো কে?
‘ আমি। ও বেশি কাঁদছিল তাই।
রোয়েন বলল
‘ ওহ শিট। আমি আসছি এক্ষুণি। সাবধানে থেকো।

সোরা রাহার মুখে হাত বুলিয়ে বলল
‘ তোমার বর এক্ষুণি আসছে। আর পাগলামি করবে না কেমন?
রাহা ছুঁড়ে ফেলল সোরার হাত। টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ফেলে বলল
‘ মেরে ফেলবো। আমাকে ছুঁবিনা।
সোরা কেঁদে উঠে চলে গেল। নোহা আড়ালে দাঁড়িয়ে বলল
‘ ওরেব্বাপ রাহাপু কি ভয়ংকর হয়ে গেল?

রোয়েন আসতে না আসতেই রাহা দৌড়ে গেল। ঝাপটে রোয়েনকে জড়িয়ে ধরে পিঠে দুমদাম কিল বসিয়ে বলল
‘ তুই আমাকে ফেলে চলে গিয়েছিস?
রোয়েন শান্ত গলায় বলল
‘ ছাড়ো। সবাই আছে। এভাবে কেউ ধরে?
রাহা ছেড়ে দিল। গালে আঙুল দিয়ে বলল
‘ আমি ওদের মেরেছি।
‘ কেন মেরেছ?
‘ রাগ উঠেছিল তাই। বুড়িকে মেরেছি।
রোয়েন সালেহার কাছে দৌড়ে যায়। বলে
‘ দাদু বেশি ব্যাথা পেয়েছ?
সালেহা বলল
‘ না রে ভাই। তোর বউরে ধরে রাখ। কি থেকে কি হয়ে গেল।
রোয়েন রাহাকে নিয়ে চলে গেল। রাহা রুমে ডুকে রোয়েনের পকেটে হাত দিয়ে বলল
‘ বর চকলেট?
রোয়েন চুপ করে থাকলো। রাহা হাত ভর্তি চকলেট পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হলো। দুইহাতে রোয়েনকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে তারপর দূরে সরিয়ে দিয়ে বলল
‘ বাজে বর এখন ভালো বর।
রোয়েন বিদ্রুপ করে বলল
‘ ভালো পাম্প দিতে জানো।
রাহা হেসে বলল
‘ আচ্ছা।

______________

পার হলো দশ পনের দিন।

ডাক্তারের কাছে দৌড়াদৌড়ি, সারাদিন রাহার আবদার পূরণ, রাগ সামলানো, রাহার যত্ন নিতে নিতে হাঁপিয়ে উঠলো রোয়েন। নিজের প্রতি বিরক্ত বাড়লো তরতর করে। তার একটা ভুলের জন্য রাহার আজ এই দশা। হুটহাট রেগে যাওয়া রাহার রোগটা আগের চাইতে সামান্য কমেছে। সেদিন ও জুনিত আর রিহানের উপর প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়েছে। পরে রোয়েন বুঝালে ভাই ভাই ডেকে আবার ডাকলো তাদের। জিশানের পাশে খেললো অনেক্ক্ষণ। জিশান ভয় পাওয়া বাদ দিয়ে রাহার কাঁধে চড়ে বসলো। রাহা তাকে কোলে তুলে নিয়ে নিজের রুমে চলে এল। বিছানার উপর বসিয়ে দিয়ে আপেল দিল, কমলা দিল, আঙুর দিল। যখন জিশান খেতে চাইলো না। রেগে গেল রাহা। জোর করে খাওয়ালো জিশানকে। ভাগ্যিস রোয়েন চলে এসেছিল নইলে কি যে হতো?
রাহাকে উত্তেজিত না করার জন্য বারবার বারণ করেছে ডক্টর। মাথার আঘাতপ্রাপ্ত স্থান রিকোভার হয় তাহলে ধীরেধীরে সুস্থ হয়ে উঠবে রাহা। তবে বেশ সাবধানে থাকতে হবে রাহাকে। বেশি চাপ নেওয়া যাবে না। মাস একটা যেতেই রাহা হুটহাট রেগে যাওয়ার রোগ একেবারেই কমে এল। সবার সাথে ভাবসাব। সোরা ধরে ধরে শেখালো কাকে কি ডাকতে হবে।
রাহা সোফায় হাত পা গুটিয়ে বসে। সবার সাথে গল্প জুড়ে দিয়ে বলে
‘ বর আমাকে কাল চুল আঁচড়ে দিয়েছে। আমি যখন নড়াচড়া করেছি, চোখ লাল করে বকা দিয়েছে।
সবাই হেসে কুটিকুটি হয়। নোহা এসে রাহার কানে কানে বলল
‘ আর কি করে তা ও বলে দাও রাহাপু।
রাহা মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল
‘ আর? আর?
সবাই আরেকদফা হাসে। সোরা আর নাহিল চলে যায় সেখান থেকে। নোহা বলল
‘ আর কি করে রাহাপু?
রাহা বলল
‘ বর আমাকে ঔষধ খাওয়ায়। ভাত খাওয়ায়। চুলে তেল দিয়ে দেয়।
সালেহা বেগম হেসে বলে
‘ আহা তুই কত জ্বালাস আমার নাতিটারে।
রাহা হাত তুলে বলল
‘ জ্বালায় না।
সালেহা বলল
‘ ঠিক ঠিক। জ্বালাস না।

____________

মাস দুই পার হলো এভাবে। অসুস্থ, ভারসাম্যহীন রাহার যত্ন নেওয়া রোয়েনের নিত্যকার কাজ হয়ে দাঁড়ালো। রাহা আগের চাইতে শান্ত চুপচাপ। প্রয়োজনের চাইতে বেশি কথা ও বলতে চায় না। রোয়েনের চিন্তার কারণ এটাই। রাহাকে কম কথা কেন বলে? আগে বকবক করে করে মাথা খেত। হাত পা গুটিয়ে রুমের এককোণে বসে থাকে ইদানীং। রোয়েন ঘুরতে ফিরতে বললে ও রাহা যায় না। রোয়েন একদিন জিজ্ঞেস করল রাহাকে। রাহা উত্তরে বলল
‘ আমাকে সবাই পাগল বলে কেন ডাক্তার?
রোয়েন হকচকিয়ে যায়। বলে
‘ কে ডেকেছে?
‘ ওই নিচে সোরা মা। আর তার বর। বুড়ি। বাবুর মা।
রোয়েন বলল
‘ তুমি পাগল না। এগুলো মিথ্যে কথা রাহা। ওগুলো কানে নেবে না কেমন?
রাহা কেঁদে ফেলে বলল
‘ নাহ আমি পাগল। আপনি পাগলের বর?
রোয়েন হেসে ফেলল। রাহার সামনে বসে পড়ে বলল
‘ হ্যা। আমি ও আরেক পাগল। তুমি বানিয়েছ।
রাহা বলল
‘ আমরা পাগল?
রোয়েন বলল
‘ সবাই তো এখন সেটাই বলে। হসপিটালে গেলে ও সবাই পাগলই ডাকছে আমাকে। বলছে পাগল বউ সামাল দিতে গিয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছি।
বলেই হাসলো রোয়েন। রাহা বলল
‘ আপনার হাসি খুব সুন্দর।
রোয়েন বলল
‘ তাই নাকি? কেমন সুন্দর?
রাহা মাথা নামিয়ে বলল
‘ রাহার মতো সুন্দর।
রোয়েন বলল
‘ যাক বাবা, এখানে ও নিজেকে উপরে রাখলে।
রাহা বলল
‘ রাহা সুন্দর নয়?
রোয়েন বলল
‘ হ্যা হ্যা সুন্দর।
রাহা বলল
‘ যাহ, আমার শরম করে।
রোয়েন আওয়াজ করে হেসে ফেললো। বলল
‘ তোমার লজ্জা ও আছে? জানতাম না।
রাহা বলল
‘ আছে। আমার দিকে ওভাবে তাকালে আর ও বেশি লজ্জা লাগে।
রোয়েন দূরে সরে পড়ে বলল
‘ রাহা উঠো উঠো, মেঝেতে বসে থেকোনা।
রাহা উঠে দাঁড়ায়।

রোয়েন তাননাকে ডাক দেয়। তাননা ব্যস্ত পায়ে হেঁটে এসে বলল
‘ কি হয়েছে?
রোয়েন বলল
‘ রাহাকে পাগল কে বলেছে?
তাননা বলল
‘ আমি কি জানি?
রাহা রোয়েনের পেছনে দাঁড়িয়ে বলল
‘ তুমি ও বলেছ।
রোয়েন বলল
‘ রাহাকে পাগল বলবি না আর।
তাননা হেসে বলল
‘ ঠিক আছে।
রাহা বলল
‘ আমার বরের সাথে কথা বলবে না।
কেশে উঠলো তাননা। রোয়েন বলল
‘ কেন বলবে না?
রাহা বলল
‘ওর বর নেই?
তাননা যেতে যেতে বলল
‘ আমার আর কাজ নাই? তোর ঘাড়ত্যাড়া বরের সাথে কে কথা বলে?
রোয়েন রাহার দিকে ফিরে বলল
‘ এসব কেমন কথা রাহা?
রাহা বলল
‘ আমি কি ওর বরের সাথে কথা বলি? ও আমার বরের সাথে কেন কথা বলবে?
রোয়েন ভ্রু কুঁচকে বলল
‘ রাহা তুমি কি আসলেই পাগল? নাকি পাগল হওয়ার ভান করো?
রাহা বলল
‘ এত কঠিন প্রশ্ন কেন বর?
রোয়েন বলল
‘ থাক, উত্তর দেওয়ার দরকার নেই।

___________

সবাই তখন ড্রয়িংরুমে আলাপ আলোচনা করছিল। জায়িদ ও ছিল। রাহা চুপচাপ বসে আছে সোরার পাশে। নাহিল কয়েকবার মেয়েকে দেখে চোখ সরিয়ে নিল। সোরার মুখে হাসি ফুটেছে মেয়েকে স্বাভাবিক আচরণ করতে দেখে। কিন্তু নাহিলের চিন্তা অন্য কোথাও। রোয়েন উপর থেকে দেখলো রাহা কোথায়? রাহাকে সোরার পাশে দেখে স্বস্তি মিললো। তার কাজ শেষের দিকে। রাহাকে সুস্থ করে দিতে পারলেই হলো। নাহিল ডাকায় নিচে নেমে এল রোয়েন। সবার সামনে জিজ্ঞেস করল
‘ রাহাকে বিয়ে কতদিনের জন্য করেছ মুননা?
রোয়েন ভড়কালো। এলোমেলো গলায় বলল
‘ এটা কেমন প্রশ্ন?
নাহিল বলল
‘ রাহাকে সুস্থ করানোর জন্যই কি বিয়ে করেছ? আর রাহা সুস্থ হলে?
রোয়েন কিছু বলল না।
সালেহা বলল
‘ বিয়ে কি ছেলেখেলা? এগুলো কোনো কথা হলো?
নাহিল বলল
‘ নাহ, রাহাকে যদি বিয়ে করতেই হতো মুননা আগে করেনি কেন?
রোয়েন বলল
‘ রাহার উপর নির্ভর করবে তারপরে কি হবে? রাহা থাকতে চাইলে থাকবে, থাকতে না চাইলে থাকবেনা। আর আমার মনে হয় রাহা দ্বিতীয়টাই করবে। এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।
জায়িদ বলল
‘ এবার আর কোনো ঝামেলা নয় মুননা। রাহা তোমার স্ত্রী। রাহা সুস্থ হলে তোমাদের ধুমধাম করে আবার বিয়ে হবে।
রোয়েন বলল
‘ তার আর প্রয়োজন নেই।
জায়িদ চুপ হয়ে গেল। তাননা রোয়েনের পিছু পিছু রুমে গেল। বলল
‘ তোদের মাঝে স্বামী স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক নেই না?
রোয়েন বলল
‘ তাননা এখান থেকে যাহ।
‘ রাহাকে বিয়ে করেছিস সবার মুখের কথা থেকে বাঁচতে ?
রোয়েন চুপ করে থাকলো।
তাননা বলল
‘ তোর মনে হচ্ছে না তুই সবাইকে ঠকাচ্ছিস?
রোয়েন জবাব দিল না। তাননা বলল
‘ রাহা সুস্থ হয়ে গেলে কি করবি? ছেড়ে দিবি? শুনেছি তুই নাকি পিএইচডি করবি? সুইজারল্যান্ডে ফিরে যাবি।
রোয়েন রাহার কাপড়গুলো বিছানা থেকে নিয়ে ভাঁজ করতে করতে জবাব দিল
‘ ঠিক শুনেছিস। আমি পিএইচডি করব।
তাননা গিজগিজ করল রাগে। বলল
‘ যাহ। তবে যাওয়ার আগে রাহাকে ভালো করে দিয়ে যাবি। এমনভাবে সুস্থ করবি ওকে, যাতে ভুলে ও তোর মতো পাষাণের কথা মনে না পড়ে।
রোয়েন জবাব দিল না। তাননা বের হয়ে যেতেই রাহা এসে দরজার কাছে দাঁড়ালো। মুখটা শুকনো, পাংশুটে। রোয়েন ডাকল
‘ রাহা তোমার লাল রঙের ড্রেসটা কোথায় ?
রাহা মাথা নিচে নামিয়ে ফেলে বলল
‘ ডাক্তার আমি কি সুস্থ নই?
এগিয়ে গেল রোয়েন।
‘ কে বলেছে এসব? তুমি সুস্থ রাহা।
রাহা দু পা সরে গিয়ে বলল
‘ আমি সুস্থ হলে আপনি চলে যাবেন?
রোয়েন বলল
‘ আমি এসব কখন বলেছি রাহা? আরেহ শোনা কথা নিয়ে এত কাহিনি করো কেন? আমার পছন্দ না রাহা। আমি তোমাকে কখনো বলেছি?
রাহা বলল
‘ নাহ।
‘ তাহলে, তুমি কাঁদছ কেন? গাল মুছো। কান্না বন্ধ করো।
রাহা এসে ঝাপটে ধরলো রোয়েনকে। শক্ত করে ধরে রেখে বলল
‘ আমি আপনার সাথে যাব।
রোয়েন সেচ্ছায় এই প্রথম হাত দিয়ে আগলে ধরে রাহাকে। সান্ত্বনা দিয়ে বলে
‘ রাহা ছাড়ো। এভাবে হুটহাট ধরতে বারণ করেছি।
রাহা ছাড়লো না।

চলবে

মন না বসায় গল্পটা খাপছাড়া হয়ে গেছে। পাঠকদের বলতে হচ্ছেনা আমি নিজেই বুঝতে পারছি গল্পটা ভীষণ এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আবার অর্ধেকে থামিয়ে ও দিতে পারছিনা। জোরপূর্বক হলেও শেষ করতে হবে। ভুলভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি কিন্তু আপনাদের জন্যই লিখি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here