ধ্রুবতারা পর্ব_১৮ পুষ্পিতা_প্রিমা

ধ্রুবতারা
পর্ব_১৮
পুষ্পিতা_প্রিমা

থানা থেকে মাত্রই ফিরলো জায়িদ। আনহার মুখে সবটা শুনে থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো সে। ডিভোর্সের কথা তার কানে এসেছে ঠিক কিন্তু এটা এত তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে ঘূর্ণাক্ষরেও টের পায়নি জায়িদ। মেজাজ বিগড়ে গেল তার। জাহেদা এসে মাথা চাপড়ে বলল
‘ শেষ করে দিল মুননু। সব শেষ করে দিল। ছোটবেলায় ভালো ছিল সে। কিছু করতে না পেরে মাটিতে গড়াগড়ি খেত সে ভালো ছিল।

আনহা জায়িদকে বলল
‘ আমি মাত্রই এলাম। সোরার কান্নার জন্য ওখানে যাওয়া যাচ্ছে না। সোরা আঘাত পেয়েছে ভীষণ। ওরা এমন কেন করলো?

জায়িদ হনহনিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। আহম্মেদ বাড়িতে পা রাখার সাথে সাথে সবাই তাকালো জায়িদের দিকে। জায়িদ নাহিলের সামনাসামনি গিয়ে বলল
‘ সব মিটমাট করেছিস?
নাহিল চুপ করে থাকলো। জায়িদ বলল
‘ মুননা কোথায়?
তাননা বলল
‘ বের করে দিয়েছি। কোথায় গিয়েছে জানি না। ফোন দাও।
জায়িদ ফোন দিল। ফোন কানে লাগিয়ে সিঁড়ির দিকে তাকাতেই গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে থাকা রাহাকে দেখলো। নাকমুখ ফুলে আছে রাহার। জায়িদ বলল
‘ ফোন তুলছে না মুননা। তুলবে ও না।
তাননা বলল
‘ থাক, আসবে সময় হলে। আর ফোন দিওনা মামা।
জায়িদ রাহাকে ডাকল। রাহা দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে দাঁড়ালো জায়িদের সামনে। মাথা নামানো অবস্থায় বললো
‘ জ্বি আঙ্কেল।
জায়িদ বলল
‘ তুমি রোয়েনের সাথে থাকতে চাওনি? সত্যি করে বলো। চাওনি? তাহলে ডিভোর্স লেটারে সাইন করলে কেন?
রাহার মাথা নামানো। জায়িদ ধমকাতেই মাথা তুললো রাহা।
‘ না চাইনি আঙ্কেল। তাই ডিভোর্স দিয়েছি।
জায়িদ নাহিলের দিকে তাকালো। বলল
‘ বাহ এই হচ্ছে তোমাদের ইয়াং জেনারেশনের ভালোবাসা?
রাহা চোখ তুলে তাকালো। বলল
‘ আমি আপনার বোনের ছেলেকে কখনো ভালোবাসিনি।
নাহিল ডাক দিল।
‘ রাহা মুখে মুখে তর্ক কোথা থেকে শিখেছ?
তাননা গিয়ে রাহাকে নিয়ে গেল। জায়িদ নাহিলকে বলল
‘ এইসব তাড়াতাড়ি মিটমাট কর ভাই। এত অশান্তি নিয়ে ঘুমাস কি করে? এই দুইজনকে দুই দিকে বিয়ে দে।
তাননা বলল
‘ মামা শান্ত হও।
জায়িদ বলল
‘ আরেহ কি শান্ত হবো? কি শুরু করেছে মুননা? আজ জুননু থাকলে এসব হতো কখনো? হতো? হতো না। তারমানে কি দাঁড়ায়?
নাহিল বলল
‘ রাগারাগি কেন করছ? ডিভোর্স হয়ে গেছে মানে হয়ে গেছে। থাকুক ওরা ওদের মতো। আমরা কোনোকিছু চাপিয়ে দিতে পারিনা ওদের উপর।
জায়িদ নাহিলের দিকে কোণাচোখে তাকিয়ে হনহনিয়ে চলে গেল। নাহিল চলে গেল। সোরা জ্ঞান হারিয়েছে কাঁদতে কাঁদতে। তাননা ও চলে গেল। নোহা রিহান আর সালেহা সোরার জ্ঞান ফেরানোর জন্য ব্যতিব্যস্ত। রাহা নরম পায়ে হেঁটে এসে দাঁড়ালো দরজার কাছে। সোরার মুখের দিকে তাকাতেই বুক ভার হয়ে উঠলো। ওড়না টেনে মুখের কাছে দিল রাহা। আম্মার এই দশা তার জন্য। তার একটাই দোষ সে কেন বিয়ের দিন পালিয়ে গেল? কেন একটা গোঁয়ার মানুষকে মন দিল? এর প্রায়শ্চিত্ত সে করবে এবার। কিন্তু আম্মা ক্ষমা করবে তো তাকে?

জ্ঞান ফেরার সাথে দুহাত দিয়ে কপাল চেপে ধরে হু হু করে কেঁদে দিল সোরা। রিহান গিয়ে মায়ের পাশে বসে মায়ের শাড়ির আঁচল ধরে বসে থেকে বলল
‘ আম্মা প্লিজ কেঁদোনা। আম্মা!
সোরা কেঁদে উঠে দরজার কাছে রাহাকে দেখিয়ে দিয়ে বলল
‘ ওই মেয়েকে সরতে বলো আমার চোখের সামনে থেকে। দূর হতে বলো। আমি তো ভাগ্যদোষে এক ঘর ছেড়ে এই ঘরে এসে সংসার পেতেছি। আর এই মেয়ে তো নিজ হাতে নিজের ঘর ভাঙলো। এখন লোকে ভালো করে বলতে পারবে মেয়ে ঠিক মায়ের মতো হয়েছে। ঘরভাঙা মেয়ে।

নোহা বলল
‘ আন্টি বকবক করা বন্ধ করো। পানি খাও। শান্ত হও।
সোরা পানির গ্লাস ফিরিয়ে দিল। বলল
‘ আমি থাকবনা এই বাড়িতে। চলে যাব। এদের সাথে একঘরে থাকবো না আমি। ও মেয়ে নয় আমার।

রাহা দরজা কাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। সালেহা বেগম উঠে গেল। রাহার কাছে এসে বলল
‘ কাঁদিস না বোন। তোর আবার মাথায় আঘাত লাগবে। নিজের ঘরে যাহ।
রাহা নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো। তাকে লোকে ঘরভাঙা মেয়ে ডাকবে? সব দোষ ওই লোকটার। তাকে কেন বিয়ে করে দয়া দেখালো? আবার কেন ডিভোর্স দেওয়ার জন্য এত তাড়া?

সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরলো রোয়েন। সোরার ঘরে গেল প্রথমেই। সোরা তাকে দেখে আঁড়চোখে তাকালো। রোয়েন সোরার দিকে তাকিয়ে থাকলো তারপর খাটের পাশে গিয়ে মেঝেতে হাঁটুগেড়ে বসলো। সোরার হাত হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো
‘ আমাকে ক্ষমা করো মামুনি। আমি তোমাকে আঘাত করতে চাইনি।। সোরা হাতটা নিয়ে ফেলে বলল
‘ ভালো কাজ করেছ। রাহাকে মানায় না তোমার পাশে। তোমার মতোই কাউকেই মানায়। নিজের পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে করে নাও। রাহাকে ও বিয়ে দেব আমি।
রোয়েন চেয়ে রইলো। সোরার গাল বেয়ে জল পড়তে লাগলো। রোয়েন কিছু না বলে চলে এল।

রাতে সাদিদ এল। সোরা আসতে বলেছে। সকাল হতে না হতেই রিহানকে নিয়ে গ্রামে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তঃ নিল সোরা। নাহিল কত অনুনয়-বিনয় করলো। সোরা অনঢ় তার সিদ্ধান্তে। তার ছেলেকে নিয়ে চলে যাবে সে। সোরা বোরকা গায়ে দিয়ে লাগেজ নিয়ে চলে এল। সালেহা বলল
‘ তুই ও কি বাচ্চা হয়ে গেলিরে সোরা?
সোরা বলল
‘ আমাকে আটকিওনা বড় মা। আমি থাকব না।
রাহা দৌড়ে এসে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো সোরাকে। কেঁদে দিয়ে বলল
‘ আম্মা যেওনা। আমাকে ও নিয়ে যাও। আমি থাকবো না এই বাড়িতে।
সোরা দূরে ঠেলে দিয়ে ঠাসস করে চড় বসায় রাহার গালে। আঙুল দেখিয়ে বলে
‘ খবরদার আম্মা ডাকবি না আমায়। আর আমার সাথে যাওয়ার কথা ভুলে ও বলবি না। তুই মেয়ে নস আমার। মরে গেছে আমার মেয়ে।
রাহা আবার সোরার হাত থেকে লাগেজ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো। সোরা আরেকটা চড় বসিয়ে বলল
‘ যেতে বলেছি। আরেকবার বাঁধা দিতে আসলে চড় মেরে দাঁত ফেলে দেব।

আঁতকে উঠে সবাই।

সালেহা বেগম এসে রাহাকে নিয়ে যেতে যেতে বলল
‘ কাঁদিস না বোন অসুস্থ হয়ে পড়বি। যেতে দে তোর মাকে।
রাহা বলল
‘ নাহ।
সোরা সাদিদের সাথে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসলো। রিহান সোরাকে বলল
‘ আপুকে ও নিয়ে আসো আম্মা।
সোরা বলল
‘ কে তোর আপু? কোনে আপু টাপু নেই। কারো কথা বলবি না আমাকে।
সাদিদ বলল
‘ আপা আর রাগারাগি করো না তো।
সোরা নাকমুখ মুছে গাড়িতে ভালো করে বসলো। রোয়েন এসে দেখলো সোরা গাড়িতে উঠে বসেছে। রোয়েন একপর্যায়ে দৌড়ে এল। সোরার হাতের লাগেজ ধরে ফেলে বলল
‘ কি হচ্ছে মামুনি? তুমি কোথায় যাচ্ছ?
সোরা বলল
‘ জাহান্নামে। এই বাড়ি থেকে ভালো অন্তত।
রোয়েন বলল
‘ তুমি চলে গেলে এই বাড়ি,,,
সোরা বেশি বলতে দিলনা রোয়েনকে। ধমকে বলল
‘ আমার কথার কোনো মূল্য নেই এই বাড়িতে। কার জন্য থাকব আমি? থাকুক সবাই সবার মতো। সোরাকে ছাড়া সবার দিনকাল ভালোই চলবে।
গাড়ি ছেড়ে দিল। রোয়েন হাজার চেষ্টা করে ও আটকাতে পারলো না। সোরা যেতে না যেতেই রাহা কান্নায় ভেঙে পড়লো। কেঁদে উঠে বলল
‘ আম্মাকে আঘাত করেছি আমি।

রোয়েন ঘাড় ঘুরিয়ে রাহার কান্না দেখলো। সব কেমন যেন হয়ে গেল মুহূর্তে। তারমানে রাহাকে ডিভোর্স দেওয়া ঠিক হয়নি? অবশ্য সে দেওয়া না দেওয়ারই বা কে?

সোরা যাওয়ার তিন চারদিন পার হলো। রান্নাঘর সামলালো তাননা আর সালেহা বেগম। রাহা ও টুকটাক করে। সোরা না থাকায় সব এলোমেলো। রান্নাঘরটা সে সামলায়। রোয়েনের কফিটা ও সে বানায়। সে না থাকায় সবার আগে রোয়েনের বেশি অসুবিধা হলো। তাননা উল্টাপাল্টা বানায়। খাওয়া যায় না। রোয়েন বিরক্ত হয়ে তাই নিজেই কফি করে নিতে গেল। রান্নাঘরে ঢুকতেই থেমে গেল সে। রাহা গরম পানি নিয়েছে মগে। তার ঔষধটা গরম পানি মিক্স করে খেতে হয়। রোয়েন রান্নাঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলো। রাহা পানি নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়াতেই রোয়েনকে দেখলো। রোয়েন রান্নাঘরে ঢুকে কফি বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। রাহাকে উদ্দেশ্য করে বলল

‘ প্যাকেটা কোথায় রাখা?

রাহা পানির মগ রেখে প্যাকেট খুঁজে রেখে দিল রোয়েনের সামনে। তারপর হেঁটে বেরিয়ে গেল। রোয়েন রাহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে কপাল কুঞ্চন করলো।

________

নোহার এক্সাম চলছে। এক্সাম তার উপর বিকেলে পড়েছে। বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা সন্ধ্যা ভাব চলে আসে চারপাশে। পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে রাস্তার কাছে এসে দাঁড়ালো সে। রিকশা নেই খালি। সব পাসেন্জারে ভর্তি। নোহাকে আর ও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। রাস্তার ওপাশে বাইকের উপর বসা ছেলেটি হাত নাড়লো নোহাকে দেখে। নোহা মুখ ফিরিয়ে একটি খালি রিকশা দেখে ডাক দিল
‘ এই রিকশা?
রিকশাচালক ঘাড় ঘুরিয়ে বলল
‘ আমার ভাড়া আছে আপা।
নোহা বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। সোয়েভ রাস্তা পার হয়ে হেঁটে এল। শার্টের কলার ঝাঁকিয়ে বলল
‘ রিকশাওয়ালাদের আজকাল আরেক ভাব। বাপরে বাপ পারা যায় না এদের সাথে।
নোহা দূরে সরে গেল হাঁটতে হাঁটতে। সোয়েভের মনে হলো এই মেয়ে তাকে এভয়ড করছে। সোয়েভ বলল
‘ রিকশাচালক সাথে এই ভার্সিটির মেয়েগুলো। এদের ভাব দেখে বাঁচিনা।
নোহা নাক ফুলিয়ে তাকালো। বলল
‘ সমস্যা কি আপনার?
সোয়েভ বলল
‘ সমস্যা কোথায়? সমস্যা নেই তো। আপনি কি রেগে আছেন আমার উপর?
নোহা বলল
‘ রাগ করার মতো কিছু করেছেন?
সোয়েভ তোতলালো।
‘ কই কিছু করিনি তো!
নোহা ধমক দিয়ে বলল
‘ ঘটক পাঠিয়েছেন বাড়িতে? কেন? আমার আব্বার মতো সৎ পুলিশ অফিসার পছন্দ আমার। অন্য প্রফেশন পছন্দ না।
সোয়েভ বলল
‘ প্রফেশন পছন্দ না সেটা বলছেন কেন? বলুন মানুষটা পছন্দ না।

বলেই গটগট পায়ে হেঁটে চলে গেল সোয়েভ। নোহা রিকশা ও পেয়ে গেল। রিকশায় উঠে বসলো। নোহা ভেবে পাইনা মানুষ কি পায় এসব করে? কেউ পাওয়ার জন্য পাগলামি করে? আবার কেউ ছাড়ার জন্য। রাহাপু আর রোয়েন ভাইয়ার বিচ্ছেদ দেখে ভালোবাসা শব্দটা আজকাল মিথ্যে ঠেকে নোহার কাছে। এ শব্দটা মানুষকে কষ্ট ছাড়া অন্য কিছু দিতে পারে না। নোহা কখনো কাউকে ভালোবাসবে না। ভালো না বেসেই বিয়ে করবে। বিয়ের পর ও ভালোবাসবে না। ভালোবাসলেই বিচ্ছেদ হয়। ভালোবাসলেই ক্ষতি। ভালোবাসলেই ধ্বংস হয়।

বাড়ি ফিরে জায়িদের মুখোমুখি নোহা। জায়িদ বলল
‘ স্যার দেখতে চাইছে তোমাকে। উনি আর উনার ওয়াইফ আসবেন। তোমাকে দেখে চলে যাবে।
নোহা বলল
‘ আমাকে তো ওনারা অনেকবার দেখেছে আব্বা। আবার কি দরকার?
জায়িদ বলল
‘ সব কেন’র উত্তর হয় না। তুমি কি আমার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আছ? মন দিতে পারছো না?
নোহা বলল
‘ তেমন কিছু না।
জায়িদ বলল
‘ ঠিক আছে। তাহলে যা বলছি তা করো। তোমার অন্য কোথাও পছন্দের কেউ থাকলে বলতে পারো।
নোহা বলল
‘ নেই।
জায়িদ বলল
‘ ঠিক আছে। আমাকে আমার কাজ করতে দাও। আমি আব্বা তোমার। ভালো চাই সবসময়।
নোহা রুমের দিকে পা বাড়ালো। আনহা সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। নোহা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল
‘ আম্মা বিয়ে হলেই কি বিচ্ছেদ হয়?
আনহা বলল
‘ নাহ। একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য দুপক্ষেরই স্যাক্রিফাইজ করা লাগে। একে অপরের প্রতি বিশ্বাস থাকা লাগে। সম্পর্কের প্রতি যত্নশীল থাকতে হয়। শ্রদ্ধা থাকতে হয়। নইলে বিচ্ছেদ ঘটে।

নোহা বলল
‘ আমার ভয় হয় আম্মা। রাহাপুর মতো যদি হয়?
আনহা বলল
‘ হবে না। কেউ ভালোবাসলে তার মর্যাদা দেবে। ভালোবাসতে না পারো আঘাত করবে না কখনো। মনে রেখো।
নোহা মাথা নাড়ালো।

সোয়েভের বাবা মা দেখতে এল নোহাকে। রাহা নিজ হাতে শাড়ি পড়িয়ে দিল নোহাকে। বলল
‘ তুই বউ সাজবি নোহা! আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।
নোহা রাহার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। বলে
‘ তুমি জানো এরা কেন এত তাড়াহুড়ো করছে বিয়েটা হওয়ার জন্য?
রাহা শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দিতে দিতে বলল
‘ কেন?
নোহা বলল
‘ রোয়েন ভাইয়ার জন্য। ভাইয়া শীঘ্রই পিএইচডি নিতে চলে যাবে। তার আগেই নিজের বন্ধুর সাথে আমাকে জড়িয়ে দিয়ে ফরজ কাজটা সেড়ে নিচ্ছে।
রাহা কুঁচি ঠিক করে দাঁড়িয়ে বলল
‘ এইবার ঠিক আছে। মুখটা একটু হাসিখুশি কর। পেঁচির মতো করে আছিস কেন? আমার মতো হাস।
নোহা বলল
‘ তোমার মতো অভিনয় পারিনা আমি। ঢং করবে না আমার সামনে। রাহা বলল
‘ চিল্লাস না নোহা। আমি ছাদে যাচ্ছি, আম্মাকে ফোন দিয়ে সুখবরটা জানায়। সে সুবাদে আম্মা কথা বলবে আমার সাথে। কতদিন কথা বলিনা।
নোহা বলল
‘ আমার প্রশ্ন এড়িয়ে চলে যাচ্ছ কেন? ভীতুরা এভাবে পালায়।
রাহা চলে গেল ছাদে। সোরার ফোনে ফোন লাগলো সাথে সাথে। সোরা রিসিভ ও করলো। রাহা কাঁদোকাঁদো গলায় ডাকল
‘ আম্মা? ফোন কেটোনা আম্মা।
সোরা শক্ত গলায় বলল
‘ কি জন্য ফোন দিয়েছ?
রাহা বলল
‘ আম্মা কবে ফিরবে তুমি? আমার উপর রেগে থেকোনা আম্মা।
সোরা বলল
‘ কারো উপর রেগে নেই আমি। মায়ের মতো কপাল নিয়ে জন্মেছ কি আর করার?
রাহা চুপ করে থাকলো। সোরা বলল
‘ আমি ফিরছিনা আপাতত। ফোন কম দেবে। আমার অত সময় কোথায় কথা বলার?
রাহা বলল
‘ নোহার বিয়ে। তুমি আসবে না?
সোরা চুপ করে থাকলো। কিছুক্ষণ পর বলল
‘ আসবো। বিয়ে খেয়ে আবার চলে আসবো। ওই বাড়িতে দমবন্ধ লাগে আমার।
রাহা গাল মুছলো নীরবে। সোরা বলল
‘ ফোন রাখো।
রাহা ফোন রাখার আগে সোরা নিজেই রেখে দিল। রাহা ডাকল
‘ আম্মা কথা শোনো।
সোরাকে ফোন দিতে গিয়ে ও দিল না রাহা। তবে ওই বাড়ির ছাদে এসে ফোনে কথা বলতে থাকা ছেলেটাকে দেখে কিছুটা সরে দাঁড়ালো রাহা।
ছেলেটা তার দিকে একবার তাকিয়ে আবার ও ফোনে বলতে লাগলো,

‘ আমি আপনাকে বারবার বলেছি হার্টের রোগীদের কোলেস্টরল এবং লিপিড নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। সাধারণত ভাত এবং শর্করা জাতীয় খাদ্য কম খেতে হয়। কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণের জন্য ফুলক্রিম দুধ, সর, ঘি, গরুর মাংস ইত্যাদি খাদ্য শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দেখুন পেশেন্ট যদি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কিংবা রুলস গুলো ফলো না করে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের কি করা যেতে পারে?

অনেক্ষণ ধরে একপ্রকার কথা কাটাকাটি করে ফোন রাখলো রোয়েন। চোখ তুলে দৃষ্টি ফেললো তালুকদার বাড়ির ছাদে। রাহা ফোনে মনোযোগ দিয়ে চলে আসতেই নোহা চলে এল। রোয়েনকে না দেখেই জিজ্ঞেস করল
‘ ভালোবাসা কি রঙ বদলায় রাহাপু?
রাহা চমকালো এমন প্রশ্নে। রোয়েন থাকায় ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে গেল। নোহা রোয়েনকে দেখে চমকালো। উসখুস করতে করতে বলল
‘ ভাইয়া?
রোয়েন নোহাকে শাড়ি পড়া দেখে হাসলো কিঞ্চিৎ। বলল
‘ আনসারটা আমার কাছে আছে। শুনবে?
রাহা পিছু করে দাঁড়ানো। রোয়েন বলল
‘ এই যে বললে ভালোবাসা, এটার কোনো রঙই থাকে না। বদলাবে কি করে?
নোহা বলল
‘ সত্যি?
রোয়েন বলল
‘ হ্যা। পিচ্চি নোহা অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। ভালো থেকো সবসময়।
নোহা বলল
‘ আচ্ছা।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here