ধ্রুবতারা পর্ব_২৭ পুষ্পিতা_প্রিমা

ধ্রুবতারা
পর্ব_২৭
পুষ্পিতা_প্রিমা

সাদা ধবধবে পাঞ্জাবি আর মাথায় টুপি পড়া ইমাম সাহেব মাথা ঝুঁকে কাগজের দিকে চোখ রেখে বসে রইলেন সোফায়। সবার মুখে চাপা চিন্তার রেশ। নাহিল এই তৃতীয়বার বলে উঠলো
‘ ইমাম সাহেব ওভাবে কি দেখছেন? কিছু তো বলুন। ভয় হচ্ছে। ওদের বিয়ে কি জায়েজ হবে?
ইমাম সাহেব মাথা তুললেন অনেক্ক্ষণ পরে। জায়িদ বললেন
‘ ভালো কিছু শোনাবেন প্লিজ।
ইমাম সাহেব বললেন
‘ তালাক নামা তো বহুপ্রকার হয় মিঃ আহম্মেদ। কারণ হিসেবে তালাক হয়। যেমন অনেকে সাময়িক সময়ের জন্য ও তালাক নামা চায়। কেউ রাগের বশে দিয়ে দেয়। কেউ কেউ অকারণ বশত। কারণের উপর ভিত্তি করে আমি ফায়সালা করতে পারি। তবে নমুনা ডিভোর্স লেটার যেহেতু মেয়ের কাছ থেকে গিয়েছে সেহেতু সেখানে উল্লেখ নেই এক তালাক না তিন তালাক। আপনাদের ছেলে কি মুখে তালাক দিয়েছিল?
নাহিল বলল
‘ নাহ। জাস্ট সাইন করেছে লেটারে। যদি ও অনিচ্ছাকৃত। একটা ভুল বুঝাবুঝির কারণে এমনটা হয়েছে।
ইমাম সাহেব বললেন
‘ শরিয়ত মোতাবেক তিন তালাক হলে তাদের ক্ষেত্রে আবার বিবাহের জন্য হিল্লা বিয়ের প্রয়োজন হয়। তিন তালাক হয়ে গেলে সম্পর্ক বৈধতা হারায়। কিন্তু এক তালাক কিংবা দুই তালাক হয়ে গেলে ও ইদ্দতের আগে কিংবা পরে আবার বিয়ে করা যায়। আপনাদের বড় মেয়ে তো আইনজীবী। উনি ও জানেন যে উকিলরা যে লেটার রেডি করেন সেটা ধর্মীয় মোতাবেক না। সেটা আইনের উপর ভিত্তি করে। আইন সবার জন্য এক। সনাতন ধর্মের, বৌদ্ধ ধর্মের, খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী সবার জন্যই এক ধরণের ডিভোর্স লেটার রেডি করা থাকে। কিন্তু ধর্মভেদে বিয়ে ভাঙার নিয়ম কিন্তু একেকরকম। যেমন ইসলাম ধর্মে একরকম৷ সনাতন ধর্মে একরকম, বৌদ্ধ ধর্মে একরকম, খ্রিষ্টান ধর্মে একরকম৷ তাহলে বুঝায় যায় শরিয়ত মোতাবেক সেই ডিভোর্স লেটার রেডি করা হয়নি। বস্তুত নমুনা ডিভোর্স লেটার গুলিতে তিন তালাকের কথা উল্লেখ থাকেনা। ওখানে শুধু বলা হয় তাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। আর অন্যদিকে তিন তালাক মানেই একে অপরের জন্য তারা হারাম হয়ে যাওয়া।

নাহিল বলল
‘ তারমানে কোর্টে যে ডিভোর্স গুলো হয় ওগুলো শরিয়ত মোতাবেক তালাক হয় না?

ইমাম সাহেব বললেন

‘ বিষয়টা ওরকম না। যখন ডিভোর্স লেটার রেডি করা হয় তখন আগে কারণ জেনে নেওয়া হয়, আপনারা জেনে থাকবেন আদালত অব্ধি গড়ায় ডিভোর্স ইস্যু। এক এক ডিভোর্স লেটারে এক এক কারণ উল্লেখ থাকে। তাই যারা শরিয়তে বিশ্বাসী তারা বলেই রাখে আমি এত তালাক দিয়েছি। তারা তো তালাক দিয়েই দিয়েছে মুখে। ডিভোর্স লেটার তো আনুষ্ঠানিকতা। আর যারা তালাকের কথা উল্লেখ করেনা তাদের তালাক হয় না। আইন অনুযায়ী যে বিয়ে হয়েছে শুধু সেই বিয়েটায় ভেঙে যায়। যাকে বলে বিচ্ছেদ। আশা করি বুঝতে পেরেছেন ব্যাপারটা।
তাছাড়া উকিল সাহেব ডিভোর্স লেটারে নির্দিষ্ট কোনো কারণ লিখেনি এখানে। লিখেছেন স্বামী তার স্ত্রীর কাছ থেকে সাময়িক মুক্তি চেয়েছে। তিনবার কবুল বলে যে বিয়ে করা হয় সেই বিয়ে তিনবার তালাক বলে ভাঙতে হয়। নমুনা ডিভোর্স লেটারে তালাক সহিত সাইন দিলে তবেই বিয়ে নাজায়েজ হয়ে যায়। শুধু সাইন করলে তালাক হয় না। এক্ষেত্রে ওদের পুনঃ বিবাহ হতে পারে। সম্পূর্ণ জায়েজ৷

সালেহা বেগম আর জাহেদা বেগম আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন ইমাম সাহেবের কথা। শেষমেশ স্বস্তি পেল তারা।
সোয়েভ যেন কোথাথেকে দৌড়ে আসলো। হাতের মিষ্টির প্লেট। ইমাম সাহেবের কাছে নিয়ে গালে পুড়ে দিলেন। বললেন
‘ হুজুর মিষ্টি খান। বিয়ের মিষ্টি। ওদের বিয়ে আবার আপনিই পড়াবেন।
ইমাম সাহেব মিষ্টি গালে নিয়ে হাসলো। সোয়েভ জায়িদের কাছে এসে মিষ্টি হাতে নিয়ে বলল,
‘ শ্বশুর আব্বা হা করুন।
জায়িদ বলল
‘ নাহ নাহ।
সোয়েভ বলল
‘ আরেহ হা করুন তো। হা করুন।
জায়িদ বলল
‘ একটুখানি দাও।
সোয়েভ পুরোটা গালে পুড়ে দিল জায়িদের। নাহিলের কাছে নিয়ে গিয়ে বলল
‘ আঙ্কেল হা করুন। তাড়াতাড়ি।
নাহিল বলল
‘ নাহ নাহ এখন নাহ। পরে পরে।
সোয়েভ বলল
‘ এখন মানে এখন। হা করুন তো।
নাহিল হা করল। সোয়েভ মিষ্টি পুড়ে দিল। নাহিল গালে নিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। সোয়েভ মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে চলে গেল সালেহা বেগম আর জাহেদার কাছে। সালেহা বেগম আর জাহেদা পালায় পালায়। নাতজামাই মিষ্টি খাওয়ায় তাদের মারার প্ল্যান করছে। সোয়েভকে দেখে দুজনই পালালো। নোহা ওদের পালাতে দেখে অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। কিছুটা এগোতেই দেখলো সোয়েভকে। বলল
‘ কি হয়েছে? দাদুরা পালালো কেন?
সোয়েভ হেসে ফেললো। বলল
‘ পালিয়েছে মিষ্টি খাওয়ার ভয়ে।
নোহা বলল
‘ আপনি ও পারেন।
সোয়েভ এগিয়ে গেল। নোহার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল
‘ মিষ্টি খাইয়ে দেন তো। বউয়ের হাতে মিষ্টি খাওয়ার মজাই আলাদা। কেউ নেই। দেখছে না। তাড়াতাড়ি খাইয়ে দেন।
নোহা হেসে মিষ্টির একটুখানি নিল। সোয়েভ বলল
‘ সেইরকম কিপটা আপনি।
নোহা হেসে বলল
‘ আহারে। কয়টা গিলেছেন আমি কি জানি না। দেখে মনে হচ্ছে এখন খাচ্ছে।
সোয়েভ বলল
‘ বুঝলেন কি করে?
নোহা বলল
‘ বুঝি বুঝি। আপনি রোয়েন ভাইয়ার মতো মিষ্টি পাগল আমি কি জানিনা?
সোয়েভ মিষ্টি খেল। বাকিটা নোহাকে খাইয়ে দিয়ে বলল
‘ দুইভাগ করে মিষ্টি খেলে নাকি ভালোবাসা বাড়ে। বাড়ুক না। ক্ষতি কি?
নোহা মিঠে হাসলো। সোয়েভ নাক কপাল দিয়ে দুম করে বাড়ি দিয়ে বলল
‘ শ্বাশুড়ি মা কোথায়?
নোহা হেসে বলল
‘ আন্টি আর আম্মা রান্নাঘরে। ওখানে যান।
সোয়েভ যেতে যেতে গলার স্বর টেনে ডাকলো
‘ মাআআআআ,,,
নোহা বলল
‘ উফফ আপনি এত পাজি কেন?
সোয়েভ আবার ডাকলো
‘ শ্বাশুরি মাআআআআ,
নোহা কপাল চাপড়ে বলল
‘ উফফ।

আনহা আর সোরা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো সোয়েবের ডাকে। সোয়েভ আনহাকে দেখে ডাকল
‘ আপনাকে খুঁজছি মাআআ।
আনহা হেসে ফেললো। এত ছেলে এত দুষ্টু! নোহা সামলায় কি করে?
সোরা হেসে ফেললো। বলল
‘ মাআআআকে কিজন্য খুঁজছ?
সোয়েভ বলল
‘ হা করো আন্টিইই। মিষ্টি খাও৷ মেয়ের বিয়ের মিষ্টি। ডাক্তার আর রাহাবুবুর বিয়ে।
আনহা বলল
‘ ইমাম সাহেব এসেছেন?
সোয়েভ বলল
‘ চলে ও যাচ্ছে। বিয়ের ফুল ফুটে গেছে শ্বাশুরি মাআআ।
আনহা সোয়েভের পিঠে চাপড় দিয়ে বলল
‘ যাহ পাজি ছেলে। সারাক্ষণ দুষ্টুমির তালে থাকে ।
সোয়েভ গাল এলিয়ে হাসলো। আনহাকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে বলল
‘ আল্লাহুমা আমিন।
সোরা আর আনহা হাসলো সোয়েভের প্রতিক্রিয়া দেখে।

সোয়েভ রান্নাঘর থেকে বের হয়ে ডাকল
‘ গোয়েন্দার বউ? জিশুর আম্মাজান কই?
নোহা এসে মিষ্টির প্যাকেট কেড়ে নিল। বলল
‘ আপু তো বাইরে গেছে। রাহাপু ভার্সিটি যাবে, তাননা আপু শপে।
সোয়েভ বলল
‘ প্যাকেট ওভাবে কেড়ে নিলেন কেন? খাব না?
নোহা রেগে বলল
‘ আর কয়টা খাবেন? সিমেন্ট খান বসে বসে। মিষ্টির নাম একদম নেবেন না। মিষ্টি দেখলে রাক্ষসের মতো করেন।
সোয়েভ মুখ অন্ধকার করে ফেলে বলল
‘ আমি রাক্ষস?
নোহা নাক ফুলিয়ে বলল
‘ মুখটা বাংলা পাঁচের মতো করে ফেলেছেন কেন? একদম,,,,
সোয়েভ কথা বলল না। চলে গেল। নোহা তার পিছু যেতে যেতে বলল
‘ আরেহ কি বলেছি? ওমা? অ্যাই সিমেন্টওয়ালা?
সোয়েভ হনহনিয়ে ঘরে চলে গেল। রুমের দরজা বন্ধ করার আগে নেহা একহাত ঢুকিয়ে দিল দরজায় ফাঁকে। সোয়েভ তাই দরজা বন্ধ করতে পারলোনা। নোহা রুমে ঢুকে মিষ্টির প্যাকট টেবিলে রাখলো। বলল
‘ কি সমস্যা?
সোয়েভ খাটের উপর বসলো। বলল
‘ কোনো সমস্যা না। আগামী একঘন্টা আমার সাথে কথা বলবেন না। যান।
নোহা হেসে ফেললো। খাটে উঠে শুয়ে পড়লো সোয়েভের কোলে মাথা রেখে। সোয়েভের হাত টেনে মাথায় রেখে বলল
‘ বিলি কেটে দেন তো। আগামী একঘন্টা কোনো কথা ছাড়াই ঘুমায়। দেন দেন। অ্যাই সিমেন্টওয়ালা।
সোয়েভ কথা বলল না। নোহা বলল
‘ বিলি কাটেন। ঘুমায়।
সোয়েভ বলল
‘ পারব না। সরেন। আপনার মাথাটা ভার।
নোহা চোখ তুলে চাইলো। চোখে একগাদা রাগের আভাস। সোয়েভ ভুরু কুঁচকে চাইলো। বলল
‘ আমাকে যা তা বলেন তখন আমার রাগ হয় না?
নোহা উঠে বসলো। বলল
‘ এক্ষুণি আমার ঘর থেকে বের হয়ে যান। যান বলছি।
সোয়েভ বলল
‘ আপনার ঘর তো ওই বাড়িতে। এটা আমার ঘর। শ্বশুরবাড়ি। আপনার ঘর একটা। আমার ঘর দুইটা। একটা এখানে, আরেকটা ওখানে।
নোহা বলল
‘ কে বলেছে? আমার বাড়ি দুনোটা। এটা আমার মামার বাড়ি। আমি আসলে এই ঘরে থাকি। বের হোন এই ঘর থেকে। যান।
সোয়েভ কপাল কুঞ্চন করল। বলল
‘ রাগ করার কথা আমার। আর রাগ করে বসে আছেন আপনি। এটা কোনো কথা?

‘ নাহ, সিমেন্টওয়ালার মাথা। বের হন বলছি।
সোয়েভ উঠলো ও না। দাঁড়ালো না। বের ও হলো না।
নোহাকে টেনে কোলে শোয়ালো। চুল টেনে ধরে বলল
‘ আসুন বিলি কেটে দিই।
নোহা হাত ছুঁড়তে ছুঁড়তে বলল
‘ ছাড়েন। একদম ছুঁবেন না।
সোয়েভ হাত দুটো ধরে ফেললো। শক্ত করে ধরে রেখে বলল
‘ এবার কি করবেন?
নোহা নড়াচড়া করলো। বলল
‘ ছাড়েন। ধরেছেন কেন? আমার মাথাটা না ভার? ভার মাথা আবার কোলে রেখেছেন কেন? কার মাথা ভার কম তারটা নিয়ে বসে থাকেন।
সোয়েভ ফোকলা হাসলো। বলল
‘ একটা কাজ নিয়েছি। রিসোর্টের। ওই রিসোর্টের মালিকের মেয়েটার মাথার সাইজটা ছোট, ভার কম হবে বলে মনে হয়। নাহ?
নোহা হো হো করে হাসলো। বলল
‘ তাই নাকি? তো কোলে নিয়ে বসে থাকেন নি কেন?
নোহার হাসি দেখে সোয়েভ ভ্যাবাছ্যাঁকা খেল। কোথায় কি ভেবেছে? আর এই মেয়ে?
নোহা শেষমেশ দুম করে কিল বসালো সোয়েভের বাহুতে। বলল
‘ সরেন। যার মাথা ভার কম তারটা কোলে নিয়ে বসে থাকেন। আমাকে ছুঁতে ও আসবেন না। খবরদার।
সোয়েভ নোহার মাথার নিচে হাত গলিয়ে একটু উপরে তুলে নিল তাকে । মাথা নামিয়ে নাকে নাক ঘষে বলল
‘ ছুঁলাম। কি করবেন?
‘ ছুঁবেন না।
সোয়েভ কপালে কপাল মিলালো৷ বলল
‘ কি করবেন?
নোহা বলল
‘ মামলা করব৷ ছাড়েন৷
সোয়েভ টুপ করে চুমু খেল অধরে। নোহা চোখ বড় বড় করে চেয়ে রইলো। সোয়েভ হেসে বলল
‘ নতুন করে মামলা কিভাবে করবেন? আমি আপনি নামক মামলায় যে একবার ফেঁসেছি রক্ষে পেলাম কই? এখনো তো হাজতবাস করছি।
আহা ভারী লজ্জায় লাল নীল হলো নোহা। সোয়েভের বুকে মুখ গুঁজতে গুঁজতে বলল
‘ করেন। ছাড়া পাবেন না। মুক্তি নেই আর।

___________

রাহা আর তাননা একসাথেই বাড়ি ফিরলো। তাদের পিছু পিছু রোয়েন। হসপিটাল থেকে নেয়ে ঘেমে ফিরলো সে। বিরক্তি চোখেমুখে। বাড়ির দরজার সামনে এভাবে দুইজন মহিলা এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার কোনো মানে হয়?
সোয়েভ দুজনকে দাঁড় করিয়ে রেখে মিষ্টি আনতে গেল। কাঁটা চামচে মিষ্টি তুলে নিয়ে রাহার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল
‘ রাহা আগে তুমি খাও। অবশেষে তোমার বিয়ের ফুল ফুটে গেছে।
রাহা কপালে ভাঁজ ফেলে তাকিয়ে আছে। তাননা খুশিতে বাকুম বাকুম হয়ে মিষ্টিটা পুরো খেয়ে নিল। সোয়েভের হাত থেকে মিষ্টির প্যাকেট কেড়ে নিয়ে একটা মিষ্টি তুলে রাহার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল
‘ রাহারে তাড়াতাড়ি খা।
রাহা একটুখানি খেল। তাননার তখনি চোখ গেল বাইরে।
আরেহ মুননা তুই? আয় আয়। ভাইরে ভাই মিষ্টি খাহ। তোর পছন্দের মিষ্টি।
এদিকে আয়।
রোয়েন বলল
‘ দরজায় এভাবে কেউ দাঁড়িয়ে থাকে?
রাহা সরে গেল। উপরে চলে গেল।
তাননা রাহার আধখাওয়া মিষ্টিটা রোয়েনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল
‘ খাহ মিষ্টি।
রোয়েন খেতে চাইলো না। বলল
‘ এসব খাই না আমি।
তাননা বলল
‘ ওমা তুই তো মিষ্টি পছন্দ করিস।
‘ একদম না। পছন্দ করি না। অপছন্দ। সর।
তাননা সরে দাঁড়ালো। রোয়েন গটগট পায়ে হেঁটে চলে গেল। সবাই ঠোঁট টিপে হাসলো। তাননা বলল
‘ মুননু বিয়ে করে বউ কোথায় রাখবি? তোর বউকে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাবি না।
রোয়েন রুমে ডুকে ধপ করে দরজা বন্ধ করলো। বিড়বিড় করে বলল
‘ মাথায় রাখব। যত্তসব। বিয়ে করব না এটা ও বলা যায় না। করব এটা ও বলা যায় না। সবকিছুতে তাদের সমস্যা। ননসেন্স।

সোয়েভ মিষ্টি খেতে খেতে বলল
‘ আরেহ তাননা তুই যা-ই বল। এদের বিয়ের সবকিছু আমাদের করতে হবে বুঝলি। দশটাকার বাজার করে বলব বিশ টাকার করেছি। মাঝখান থেকে দশ টাকা আমাদের। কি বলিস?
তাননা বলল
‘ সর হারামি। কলেজে ও ঠিক এমনটাই করতিস তুই। পাঁচ টাকার বাদাম খাইয়ে বলতো দশটাকার। হারামির বাচ্চা হারামি।
সোয়েভ বলল
‘ মুখ সামলে কথা কইস বইন। আমি এখন এই বাড়ির জামাই লাগি।
তাননা ভেংচি কেটে।
‘ আরেহ ধুরর অফ যাহ ভাই।
সোয়েভ বলল
‘ যাইতাছি বইন।
জিশান পিটপিট চোখে তাননার দিকে তাকিয়ে বলল
‘ আম্মা খালামুণির বিয়ে?
তাননা বলল
‘ জ্বি।
‘ মামার বউ?
‘ জ্বি।
‘ আবার?
তাননা হেসে বলল
‘ জ্বি, আবার।
সোয়েভ জিশানকে কোলে তুলে নিল। বলল
‘ এই তুননু তোর ছেলেরে মেয়ে জামাই বানামু।
তাননা বলল
‘ আহারে কোথায় মেয়ে? কোথায় ছা? সর।
সোয়েভ বলল
‘ আসিতেছে শুভদিন।
তাননা হো হো করে হেসে ফেললো। নোহা পেছনে দাঁড়িয়ে থাকলো। তাননা বলল
‘ কবে আসিতেছে শুভদিন?
নোহা বলল
‘ আমি কি জানি? যত্তসব বেয়াদব মার্কা কথাবার্তা।
তাননা আর সোয়েভ একসাথে হাসলো।

কথায় আছে যাদের বিয়ে তাদের হুঁশ নেই, পাড়াপড়শির চোখে ঘুম নেই। যাদের বিয়ে তাদের হু হা ও শোনা গেল না। আর অন্যরা বিয়ে নিয়ে কত মাতামাতি! বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষের প্যানপ্যানানি শুনে ঘরে থাকা গেল না রোয়েনের। ফলসরূপ দিনের অর্ধভাগ সে কাটায় হসপিটালে। কে বলে ভাই বিয়ে টিয়ে এসব করতে? এমন প্যারাময় জিনিসটা না থাকলে কি হতো না? যত্তসব আজাইরা কাজকারবার।
নিচে যখন খেতে গেল সবাই তখন আলাপ সারছিল বিয়ের বাজার নিয়ে। রোয়েন খেতেই পারলো না ভালো করে। সালেহা বেগম বলে উঠলেন
‘ ভাই তুই বিয়ে করছিস। তুই আর তোর বউ গিয়ে বাজার সেড়ে আয়। তোদের পছন্দ বাকিরা জানে নাকি?
রোয়েন সরাসরি বলে দিল
‘ পারব না। বিয়ে করছি এটাই অনেক।
সোয়েভ বলল
‘ ঠিক আছে। আমরা করব। লুঙ্গি পড়বি?

রোয়েন রেগে গেল। সোয়েভ বলল
‘ নাহ, রাহা বলল তোকে লুঙ্গিতে সেইরকম মানাবে।
রোয়েন দাঁত চেপে বলল
‘ রাহা?
নাহিল বলল
‘ আরেহ না। মজা করছে।
রোয়েন বলল
‘ মজা করছে না। রাহা এমনটা বলেছে। লুঙ্গি ওকে পড়তে বলো।
সোরা বলল
‘ ওমা অত রাগার কি আছে। মজা ও বুঝো না?
রোয়েন চুপ করে থাকলো। সালেহা বেগম বলল
‘ ভাই তুই তো আগে রাহাকে পছন্দ করতি না? তো এখন?
রোয়েন খেতে খেতে বলল
‘ করতাম না। এখন করি।
সবাই চুপ করে শুনলো। সোয়েভ হাসি চেপে রাখলো।
সালেহা বেগম বলল
‘ আগে তো ভালোবাসতি না?
‘ তো কি হয়েছে। এখন বাসি। এত প্রশ্ন করো কেন? খাচ্ছি না?
সবাই হা হু করে হেসে উঠলো। সোয়েভ টেবিলে চাপড় দিয়ে বলল
‘ কেয়া বাত মামা! জাস্ট ফাটিয়ে দিয়েছিস।
রোয়েন হা করে তাকিয়ে থাকলো। যখন বিষয়টা বোধগম্য হলো ফট করে দাঁড়িয়ে গেল। চট করে হাত ধুঁয়ে বলল
‘ জীবনে ও যদি আর খেতে ডাকো এখানে?খবর আছে।
সবাই অনুতপ্ত চোখে তাকালো। ঠোঁট চেপে হাসি আটকালো।
রোয়েন যেই না রুমে যাবে। তখনি ঘটলো আরেক বিপত্তি। জিহ্বা বের করে দিয়ে একটা মেয়ে তাকে মুখ ভাঙাচ্ছে। রোয়েন মনে মনে ভাবলো
‘ আচ্ছা। আমার ও দিন আসবে। বিয়েটা হোক। আমাকে পঁচানোর মজা দেখাবো।
রাহা আর মুখ মোঁচড়ালো। রোয়েন রাগে থাকতে না পেরে চিল্লিয়ে বলল
‘ রাহা চড় মেরে দাঁত ফেলে দেব একদম।
সবাই উপরে তাকালো। রাহা দ্রুত সরে গেল। মনে হলো গালে যেন চড় এসে পড়েছে।
রোয়েন রুমে চলে গেল। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো
‘ শীতের রাতে রাহাকে সে কম্বল দেবে না। গরমের দিনে এসির রিমোট দেবে না। এটাই রাহার শাস্তি।
পরে ভাবলো নাহ শাস্তি কম হয়ে যাচ্ছে।
সে জীবনে ও রাহার সাথে কথা বলবে না। জীবনে ও না। এটাই বড় শান্তি। হ্যা ঠিক। এটাই।

,,

এক, দুই, তিন, চারদিন যেতে যেতে বিয়ে বিয়ে রব চলে এল বাড়িতে। আহা কি আনন্দ চারিপাশে! কি খুশবু বাতাসে বাতাসে!

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here