ধ্রুবতারা
পর্ব_২৮
পুষ্পিতা_প্রিমা
রোয়েনের কথা সে বিয়ে করবে কোনো প্রকার ধুমধাম ছাড়া। একদম চুপিসারে। অত রং ঢং তার পছন্দ না। ওসব করে শুধু শুধু টাকা খরচা ছাড়া বৈকি অন্য কিছু না। তার এ কথায় কেউ মত দিতে পারলো না। সবার আগে তাননা বলেছিল
‘ তোর বিয়ে তো একবার দিচ্ছি মুননা৷ নাকি আবার কাউকে বিয়ে করবি?
মুননা সেসময় কিছু বলেনি। মনে মনে শুধু বলেছে
‘ আরেকটা বিয়ে! কি করে সম্ভব? এক বউ সামলাতে তার কেয়ামত হয়ে যাবে আবার আরেকটা বিয়ে! যত্তসব ফালতু কথা তাননার মুখে। মাইর খেয়েছে দেরী হয়েছে।
নাহিল আর জায়িদ ও রাজী হলো না। জায়িদ বলল
‘ তোমার হসপিটালের ডাক্তারদের ইনভাইট করলে ভালো দেখাবে? বন্ধুবান্ধব না আসলে ভালো দেখাবে? উকিল, পুলিশ, ডাক্তার আর সিমেন্টেবাহিনী না আসলে কি ভালো দেখাবে? নোহার শ্বশুর বাড়ি, তাননার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ওদের দাওয়াত না করলে কেমন দেখায়? আর কখন জুনিত আর রিহানের বিয়ে নামবে? তাছাড়া জুননু কি ভাববে আমায়? তার মুননুর বিয়ে আর আয়োজন হবে না? এটা কি মানা যায়?
রোয়েন তাদের মুখে কাছে টিকতে না পেরে পালালো। সব রাহার দোষ।
বাড়িভর্তি মানুষ। রাহাকে তালুকদার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেটি কনের বাড়ি। নোহা আফসোসর সুরে বলল
‘ রাহাপু তোমার বাপের বাড়ি যেটা শ্বশুর বাড়ি ও সেটা।
রাহাপু গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। পা নাড়াতে লাগলো আনমনা হয়ে। তাননা বলল
‘ ও-ই আমি তোর শ্বাশুড়ি, আমিই তোর শ্বশুর। আমার কথামতো চলবি। বুঝেছিস?
রাহা হ্যা না কিছুই বলল না। আনমনা হয়ে ভাবতে লাগলো ডাক্তারকে লুঙ্গি পড়লে ঠিক কেমন লাগবে? বেচারা লুঙ্গি খুলে পড়ে যাওয়ার ভয়ে ও তো পড়বে না। সোয়েভ ভাইয়া যা দুষ্টু। টান মেরে কেলেংকারী ঘটাতে ও পারে।
রাহাকে মুচকি হাসতে দেখে তাননা ডাকলো
‘ ওই?
রাহা হকচকিয়ে বলল
‘ বলো।
তাননা কিছুই বললো না। রাহাকে সাজানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আত্মীয় স্বজন এল দলে দলে। ডাক্তার, নার্স, উকিল, জর্জ, পুলিশ, গোয়েন্দা সবই আসলো। বাড়িভর্তি পিঁপড়ের মতো মানুষ দেখে গা রি রি করলো রোয়েনের। এত জমকটমক তার পছন্দ না। সে ঠান্ডা মানুষ। ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশ পছন্দ করে। ঠান্ডা বউ ও পছন্দ করে। কিন্তু যাকে বিয়ে করছে সে একটা আগুনের লাভা। রোয়েনের আফসোসের শেষ নেই। তার ঘরে আর ও একজন এসে রাজত্ব করবে। সব বিরক্তিকর। এত এত মানুষের কোলাহল হচ্ছে রাহার জন্য। তাকে এত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রাহার জন্য। ভারী শেরওয়ানি গায়ে দিতে হবে রাহার জন্য। সবই রাহার দোষ।
কিন্তু রাহা আসার আগে তার ফেসওয়াশ, চিরুনি, পারফিউম সব লুকিয়ে রাখতে হবে। বলা যায় না রাহা সব ইউজ করে ফেলে। চিরুনিতে লম্বা চুল লেগে থাকবে। তখনকার মতো চুল আঁচড়ে দিতে হবে। মাথায় ক্লিপ আটকে দিতে হবে। কাপড় চোপড় ধুঁয়ে দিতে হবে। আবার শুকিয়ে ভাঁজ করতে হবে। উফফ রাহা তাকে খুব জ্বালাবে। সেজন্য কাল সারারাত তার ঘুম হয়নি। রোয়েনের গিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে
‘ ওহহ রাহা ফাহা টাহা তোমাকে আমি বিয়ে করব কিন্তু আমার ঘরে জায়গা দেব না।
রাহা তখন উত্তরে কি বলবে রোয়েন সেটা ও ভেবে নিল। রাহা তার চিকনচাকন ঠোঁট জোড়া বিচ্ছিরি ভাবে নেড়ে বলবে
‘ মনে জায়গা পেলাম আর ঘরে পাব না? এটা কোনো কথা মুননুসাহেব ?
যাক বাবা রাহার আবার তাকে মুননু ডাকবে। তারপর সে রেগে রাহাকে ঘর থেকে বের করে দেবে। অবশ্য লাভ ও আছে। একদম ঘর থেকে বের করে দেবে। আর সে আরামে ঘুমোবে। নাক ডেকে ঘুমোবে। নাক ডাকতে না জানলে ও শিখে নেবে। রাহা তাকে শান্তি দেয় না। সে ও দেবে না।
মেহেদী সন্ধ্যায় খয়েরী রঙের একটা পাঞ্জাবি পড়লো মুননা। বসে রইলো যেখানে দর্শক বসেছে সেখানে । সবাই তাকে দেখে হেসে কুটিকুটি। সালেহা বেগম বলল
‘ ভাই তুই তো দুলা। তুই ওখানে কেন?
রোয়েন বলল
‘ অনুষ্ঠান শুরু হোক। আমি এখানে বসে দেখব। ওখানে ফুলের গন্ধে মাথা ঘুরছে।
সবাই আরেকদফা হেসে কুটিকুটি। রোয়েন রেগে গেল কিন্তু চাপা দিল। সবসময় রাগ করা ভালো, কিন্তু দেখানো ভালো না। রোয়েন ভালো ছেলে। স্কুল, কলেজ, মেডিকেলের স্যারেরা এটাই বলতো। আম্মা বলতো, আব্বা ও বলতো। জুননু আর গুড্ডুর ছেলে খারাপ হতেই পারে না।
মুননাকে টেনে টেনে স্টেজে তুললো তাননা। রোয়েন তাননা আর নোহাকে দেখে
‘ তোদের দেখতে লাগছে কেমন? ছিঃ জঘন্য।
তাননা বলল
‘ তোর বউ তো আর ও বেশি সেজেছে।
রোয়েন বলল
‘ শেষ করে দিল সব। হসপিটাল থেকে যারা এসেছে সবাই বলবে ডক্টর রোয়েনের বউ দেখতে বিচ্ছিরি। আগে যেমন ছিল তেমন থাকতো কি হতো? রাহার কোনো প্রেস্টিজ নেই।
তাননা আর নোহা ঠোঁট টিপে হাসলো। সোয়েভ এসে বলল
‘ দারুণ লাগছে জামাইবাবু।
রোয়েন বুক ফুলিয়ে বলল
‘ সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমি রাহার মতো কালো নই যে অত সাজবো।
অনুষ্ঠান শেষের একপর্যায়ে। রোয়েনকে রাহার কাছে টানতে টানতে নিয়ে এল ঈশান আর সোয়েভ। রোয়েন গায়ে হলুদের শাড়ি পড়া মেয়েটার দিকে তাকালো না । সে জানে রাহাকে বিচ্ছিরি লাগছে। ছিঃ তার বউ বিচ্ছিরি ব্যাপারটা মানা যাচ্ছে না। রাহা বলল
‘ অাম্মা কোথায়?
সোরা কোথাথেকে যেন দৌড়ে এল। বলল
‘ এই তো নিয়ে এসেছি। কাস্টার্ড খাবে নাকি ফালুদা?
রাহা নাকমুখ কুঁচকে বলল
‘ খিদে পেয়েছে আম্মা। ওসবে কি পেট ভরে? বিরিয়ানি খাব। শেষ?
সোরা হাসলো। বলল
‘ নাহ। অনেক আছে।
রাহা বলল
‘ আনো খাব। খিদে লেগেছে।
রোয়েন রাগসমেত রাহার দিকে তাকিয়ে থাকলো। রাহা বলল
‘ আমি জানি আমাকে সুন্দর লাগছে। ওভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে না। আমার লজ্জা লাগে।
‘ ওহহ তোমার লজ্জা ও আছে? লজ্জা থাকলে কেউ এভাবে খাওয়ার কথা বলে? ডিজগাস্টিং রাহা।
রাহা মুখ মোচড়ালো। যেতে যেতে বলল
‘ মুননু হেব্বি লাগছে।
রোয়েন একমুহূর্ত ও দাঁড়ালো না। গটমট পায়ে হেঁটে আহম্মেদ বাড়ির দিকে পা বাড়িয়ে মনে মনে বলে গেল
‘ বিয়ে করব না আমি।
সেটা রাগের কথা রোয়েন জানে। সে আর ও ভালো করে জানে রাগের বশে মিথ্যে ও বলা যায়। সমস্যা না, কেউ শুনছে না৷
অতঃপর বিয়ের দিন। রাহার জন্য নিজে পছন্দ করে শাড়ি কিনেছিল রোয়েন। নিজের শেরওয়ানিটা নিজের পছন্দের। সে যাইহোক শাড়ি শেরওয়ানি মূল কথা না। মূল কথা হচ্ছে রোয়েনকে নিয়ে। বেচারা সেইরকম চিন্তায় আছে রাহা আজকে ও আবার ভূত পেত্নীর মতো সাজবে না তো? তাহলে তার ইজ্জত সম্মান যতটুকু আছে ততটুকু এক্কেবারেই চলে যাবে।
যখন বিয়ের সময় এসে উপস্থিত হলো রোয়েনকে রেডি করাতে আসলো সোয়েভ আর ঈশান। রোয়েন নিজে নিজে রেডি হয়েছে। ইয়াক তাকে এত কালো লাগছে কেন? বিয়ের দিন কি সুন্দর বর ও কালো হয়ে যায় নাকি? আর কালো বউ সুন্দর?
রোয়েন কয়েকবার মুখ ধুঁয়ে নিল। ভাবলো টেনশনে ফেনশনে বোধহয় কালো হয়ে গেছে। ভালো করে ঘুম দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
ফিতা কাটার সময় এক ঝামেলা বাঁধিয়ে বসলো ঈশান আর সোয়েভ। তারা বলল
‘ জুনিত আর রিহান তো বরবাবুকে ভয় পাচ্ছে তাই তারা আসছে না। তাদের বদলে আমরা। টাকা বের করুন বরবাবু।
রোয়েন তার আশপাশে বন্ধুদের দিকে তাকালো। তারপর গিয়ে বসে থাকলো একটা চেয়ারে। অনিক, অনির্বাণ, সোহেল আর বাকিদের সাথে তর্কবিতর্ক চললো ঈশান আর সোয়েভের সাথে । সোয়েভ তাদের বলল
‘ শালা আমি আজ এই দুইবাড়ির জামাই বলে নইলে এতক্ষণে!
রোয়েন হাঁক ছাড়লো। এই তোদের হলো?
তারা সবাই মাথা নাড়লো। রোয়েন হেঁটে হেঁটে এগিয়ে আসলো। পেছনে হাত দিয়ে গলা কাত করে দাঁড়িয়ে কান্ড দেখতে লাগলো। বেশকিছুক্ষণ পার হতে না হতেই ফিতা না কেটে মাথার উপর তুলে পার হয়ে হাঁটা ধরলো সোজা। সবাই তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভ্যাবাছ্যাঁকা খেল। রোয়েন যেতে যেতে বলল
‘ ফিতা না কাটলে বিয়ে হয় না এটা তোদের কে বলেছে?
ঈশান বলল
‘ ওররে যোদ্ধা। বউ জয় করতে যাচ্ছে ফিতা না কেটে।
রোয়েনকে একা একা বাড়িতে ঢুকে আসতে দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে থাকলো। সোয়েভ দৌড়ে এল। তার হাতে রোয়েনের পাগড়ি। নোহা এসে বলল
‘ সমস্যা কি?
সোয়েভ বলল
‘ আপনার ভাই টাকা দিল না। ফিতা কাটলো না। চলে এল। যেন তার বউ কোথায় ও পালিয়ে যাচ্ছে।
নোহা বলল
‘ এজন্যই ওনার নাম মুননু ওরফে রোয়েন। আহা রাহাপু কত্ত লাকি!
সোয়েভ ভ্রু উঁচিয়ে থাকলো। নোহা হেসে বলল
‘ নোহা খুব লাকি৷
সোয়েভ অবশেষে হাসলো।
কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। রাহাকে আনা হলো অনেক্ক্ষণ পর। বিয়ে পড়া শেষ হলো। কবুল বলতে বললো রাহাকে। রাহা কবুল বললো। রোয়েনকে বলতে বলল
‘ রোয়েন বলল, বলেছি।
‘ মুখে তিনবার বলুন।
রোয়েন বক
‘ বলেছি।
কাজী বলল
‘ উচ্চারণ করুন।
রোয়েন বিরক্ত হলো প্রচন্ড। তারপর কবুল বলল। বাপরে বাপ লজ্জা শরম ফালায় দিতে হয় বিয়ে করার সময়। অতগুলো মানুষের সামনে কবুল বলা কি চারটে খানি কথা! তাকে এত এত লজ্জায় পড়তে হলো। সব রাহার জন্য।
বিয়ে পড়ানো শেষে রোয়েন চলে গেল তার বাড়িতে। নিজের ঘরে গিয়ে দেয়াল থেকে নিয়ে নিল একটি ছবি। নিজের বুকের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বিড়বিড় করলো
‘ আম্মা আজকের দিনে তোমরা থাকলে খুব ক্ষতি হতো না। কেন আমাকে আর তাননাকে ছেড়ে চলে গেলে তুমি আর আব্বা? আমি তোমাদের কথা মনে না উঠার জন্য কতকিছু করলাম। কিন্তু পারলাম না। আমায় দোয়া করো। আমি যাতে এই বাড়ি আর বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষকে ভালো রাখতে পারি। তাদের মুখের হাসিটুকু যাতে কখনো না মুছে। তোমরা ও ভালো থেকো।
তাননা এসে কখন দাঁড়ালো খেয়াল করলো না রোয়েন। সে ফিরতেই তাননা দৌড়ে এল। ভাইকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। প্রায় অনেকটা সময় পর জোরে কেঁদে উঠে বলল
‘ মুননা আম্মা আব্বা আজ খুব খুশি হতো। তাদের হাসিটা কেন দেখতে দিল না আল্লাহ? আল্লাহ এ কেমন ভালোবাসলো আমাদের? আম্মা আব্বাকে কেন নিয়ে গেল?
রোয়েন শেষমেশ বোনের কান্না থামানোর জন্য বলল
‘ তোর সব সাজগোছ তো নষ্ট তুননু। তাননা মাথা তুললো। রোয়েন সযত্নে তার গাল মুছে দিয়ে বলল
‘ বোন আমার আম্মা আব্বা বেশিদূরে না তো। ওই ছাদের কোণায় সন্ধ্যার আকাশে তাদের প্রায়ই দেখা যায়। আমি দেখি। দেখি তারা টুনাটুনি খুব খুব ভালো আছে। অবশ্য তারা তো ভালো থাকার জন্যই একসাথে চলে গিয়েছে। ভালো থাকবে না কেন?
তাননা বলল
‘ তুই চলে এলি কেন? রাহাকে নিয়ে আয়।
রোয়েন বলল
‘ বিয়ে হয়ে গেছে। রাহা নিজে নিজে আসুক। রাহা কি হাঁটতে জানে না।
তাননা বলল
‘ পারে কিন্তু তোর হাতে তাকে তুলে দেওয়া দরকার।
হাসলো রোয়েন।
‘ ওসব তো আনুষ্ঠানিকতা।
তাননা তাকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল
‘ আনুষ্ঠানিকতা সেড়ে আয়।
রোয়েনকে দেখে নাহিল বলল
‘ এভাবে কেউ চলে যায় আব্বা?
রোয়েন বলল
‘ ওই আম্মা আব্বার কাছে গিয়েছিলাম।
নাহিলের হঠাৎ মনে পড়লো ভাইয়ের বিয়ের সেই দিনটা। যেদিন ভাই শেরওয়ানি পড়েছিল। আর পাগড়িটা নাহিল পড়ে বসেছিল। ভাইকে রাগিয়ে দেওয়ার জন্য কতকিছু করলো নাহিল। ভাই সেই নাহিল বলে ডাক দিয়ে আবার চুপ হয়ে যেত। শাসন ওই অতটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো। বকার পর পরে এসে আবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিত অগোচরে। এত ভালোবাসার ভাইটা নাহিলকে দায়িত্ববান পুরুষ হয়ে উঠার জন্য বোধহয় ফেলে চলে গেছে। ভাই কি দেখে তার ছোট ভাইয়ের এই রূপ?
ছলছল করে উঠলো নাহিলের দুচোখ। রোয়েন তাকিয়ে থাকলো নাহিলের সেই দুচোখের দিকে। রাহাকে নিয়ে এল নাহিল। সোরা ও এল পিছুপিছু। একই বাড়িতে থাকবে কিন্তু মনে হচ্ছে কিছু একটা খালি খালি হয়ে যাচ্ছে নাহিলের। রাহার হাত রোয়েনের হাতের উপরে তুলে দিল নাহিল। বলল
‘ জানিনা আমি রাহার আব্বা পুরোপুরি হতে পেরেছি কিনা। তবে একজন বাবার কাজ তার মেয়েসন্তানকে একজন যোগ্য ছেলের হাতে তুলে দেওয়া। আমি আমার ভাইয়ের রেখে যাওয়া সেই মানিকের হাতে তুলে দিলাম মেয়েকে। আমার দায়িত্বের মধ্যে কোনো ফাঁকফোকর থাকতো দিওনা মুননা। রাহাকে ভালো রেখো। তুমি ভালো থেকো৷ আর যাইহোক না কেন কখনো একে অপরের হাত ছেড়ো না। আমি জানি আমার ভাইয়ের ছেলে ঠিক তার আব্বার মতোই হবে। তার আব্বা যেমন তার আম্মাকে ভালোবেসেছিল সে ও ভালোবাসবে। ভালো রাখবে।
রোয়েন নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল
‘ বাবাই প্লিজ চোখ মুছো। আমার ভালো লাগেনা।
নাহিল হাতের কব্জি দিয়ে চোখ মুছলো। রাহার মাথা নিচে ঝুঁকানো। টপটপ পানি পড়লো পায়ের আঙুলের কাছে। নাহিল ডাকল
‘ রাহা?
রাহা চোখ তুলে চাইলো। চোখের পানিতে এবার গাল ভিজলো। নাহিল তা মুছে দিয়ে বলল
‘ আব্বা কি হতে পেরেছি?
রাহা হু হু করে কেঁদে দিল। ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো নাহিলকে। সোরা অন্যদিকে ফিরে তাকিয়ে রইলো। মনে হচ্ছে যেন বহুদিন পর শান্তি অনুভব হলো তার। কোথাও একটা পাথর চাপানো ছিল। শুরু থেকে শেষ, শেষ থেকে শুরু অব্ধি যে মানুষগুলো ভালোবেসে যায়, ভালোবাসে তাদের কি বলে সে জানেনা। তবে নাহিলের প্রতি তার ঋণের শেষ নেই। মানুষটা তাকে একমুহূর্তের জন্য ও ভালো না বেসে থাকেনি। থাকার চেষ্টা করেনি। সোরা সে অনুযায়ী কিচ্ছু দিতে পারেনি নাহিলকে। কিচ্ছু না।
রাহার হাতটা টেনে এনে রোয়েনের হাতের উপর শক্ত করে চেপে ধরলো তাননা। দুজনের মাথায় চাটি মেরে বলল
‘ মুননা রাহাকে এবার শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাহ। খবরদার আমাদের বাড়িতে নিবি না। ওয়ান, টু, ত্রি গো।
কি হলো যাহ।
মুননা রাহার হাতে চাপ দিল। রাহা ফিরলো তার দিকে। রোয়েন বলল
‘ রাহা একদম সোজা চলে যাও তোমাদের বাড়িতে। তোমাকে নিয়ে যাব না আমি। যাও যাও নিজের ঘরে যাও।
রাহা দোটানায় পড়লো।
নোহা এসে বলল
‘ ভাইয়া রাহাপুকে নিয়ে যেতে দেব না। ফুলের গাড়ি করে নিয়ে যাও, নয়তো কোলে করে।
সবাই সম্মতি দিল। ঠিক ঠিক।
রোয়েন পড়লো মহাঝামেলায়। অবশ্য রাহা আস্ত একটা ঝামেলা।
সে সিদ্ধান্ত নিল রাহাকে কোলে করে নিয়েই যাবে। অবশেষে রাহাকে কোলে তুলে নিল। যেতে যেতে বলল
‘ শান্তি দিলেনা রাহা।
রাহা হেসে বলল
‘ আপনার শান্তি নেই।
রোয়েন চোখ নামিয়ে তাকালো রাহার দিকে। পরক্ষণেই চোখ সরিয়ে বলল
‘ শোনো রাহা , তোমাকে আমি ভালো টালো ওসব বাসিনা কিন্তু। একদম দামে উঠবে না।
বিয়ে করেছি মানে ভেবোনা তোমার প্রেমে আমি হাবুডুবু খাচ্ছি।
রাহা হাসলো। বলল
‘ আমি ও ভালো টালো বাসিনা আপনাকে। অতটা দামে উঠবেন না।
জাহেদা আর জায়িদ উঁকি দিয়ে তাকালো বাইরে। রোয়েনকে দেখে মনে পড়লো সেই আগের ঘটে যাওয়া একটি দৃশ্য। সাহিল ও বিয়ের দিন জিনিয়াকে এভাবেই কোলে করে নিয়ে গিয়েছিল তার বাড়িতে।
চলবে,
ইদানীং ভীষণ ব্যস্ততায় দিন যাচ্ছে। মানসিক চাপে ও আছি। লেখার একদম সুযোগ পাচ্ছিনা। যা লিখেছি তা মনের মতো না। ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন সবাই। করবেন মানে করবেন। লাইক কমেন্ট কম করেন কিন্তু দোয়া বেশি বেশি করবেন। ভালো থাকবেন।