ধ্রুবতারা পর্ব_৩ পুষ্পিতা_প্রিমা

ধ্রুবতারা
পর্ব_৩
পুষ্পিতা_প্রিমা

রান্নাঘরে গুনগুন করে গান গাওয়া রাহার পেছনে এসে দাঁড়ালো নাতাশা বেগম। রাহা বুঝে গিয়েছে এই বৃদ্ধা এখন হাঁক ছাড়বে। ঠিক তাই হলো।
‘ রাহা তোমার আম্মাকে গিয়ে ডেকে আনো। তাড়াতাড়ি যাও। রোয়েন ফোন দিয়েছে।
রাহা দাঁড়িয়ে থাকলো। গেল না। নাতাশা আবার চেঁচালো।
‘ রাহা?
রাহা ঘাড় ফিরিয়ে বলল
‘ কে ফোন দিয়েছে সেটা আমাকে বলে লাভ কি? তোমার আদরের নাতি কোথায়? তাকে গিয়ে বলো না? মাছের বড় টুকরো খুঁজো নাতির জন্য, আপেলের বড় টুকরোটা তার জন্য কই কাজের সময় তো তাকে ডাকোনা।
নাতাশা ক্ষেপে গেল। এই মেয়ে মুখেমুখে কথা বলে তার। নাতাশা বেগম সর্বশক্তি দিয়ে চিল্লিয়ে ডাকল
‘ রিহান? রিহান কোথায় তুমি?
রিহান দৌড়ে এল। হাতের ক্রিকেট ব্যাট। এসেই বিরক্ত কন্ঠে বলল
‘ কি হয়েছে দাদু?
‘ তোমার আম্মা আব্বাকে ডেকে আনো। যাও।
রাহা আবার পেয়াজ কাঁটা শুরু করল। আজ নিজের হাতে পিৎজা বানাবে। নাহিল এল পিছু পিছু সোরা।
সোরা বলল
‘ কি হয়েছে ছোট মা?
নাতাশা বলল
‘ তোমার মেয়ে আমার মুখে মুখে কথা বলে। এভাবে যদি চলতে থাকে দেখবে শ্বশুরবাড়ি থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবে ওকে।
নাহিল বলল
‘ মা এসব কি কথা? তুমি সবসময় ওকে নিয়ে পড়ো কেন?
রাহা পেঁয়াজ কাটতে ব্যস্ত। নাতাশা বলল
‘ তুই এখন আমাকে ধমকাবি? আমাকে?
সোরা বলল
‘ রাহা কি করেছ তুমি?

রাহা পেঁয়াজ কাটতেই লাগলো। জবাব দিল না। সোরা ধমকে বলল

‘ রাহা?

রাহ ফিরল না। কিছু বলল ও না। সোরা রাহাকে টেনে ফেরালো। রাহা বলল

‘ ওনাকে জিজ্ঞেস করো আম্মা। আমি যা বলেছি একদম ঠিক বলেছি।
সোরা ডাক দেয়

‘ রাহা!

রাহা বলল

‘ আমাকে কেন বকছ? সবসময় আমাকে কেন বকো? এই মহিলা যে আমার প্রতি অবিচার করে সেটা দেখোনা?

সোরা কষে চড় বসায় রাহার গালে। নাহিল খেঁকিয়ে উঠে। রাহাকে নিজের কাছে টেনে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে

‘ সোরা বাড়াবাড়ি করছ তুমি। ওর গায়ে হাত তুললে কেন?
সোরা শুনলো না। রাহার হাত টেনে ধরল। বলল
‘ আসো। রাহা আসো বলছি।
রাহা ডুকরে কেঁদে উঠলো নাহিলকে আঁকড়ে ধরে। নাহিল বলল
‘ সোরা ও যাবেনা কোথাও। ছাড়ো।
সোরা ছাড়লো না। রাহাকে টেনে নিয়ে গেল। নাতাশা বলল
‘ যেমন মা তেমন ঝি। কিছু বলা যায় না।
নাহিল বলল
‘ তুমি রাহার সাথে কেন এমন করো মা? কেন? রিহানের সাথে তো এমন করোনা।
‘ রিহান আমার নাতি।
‘ আর রাহা?
নাতাশা চুপ মেরে রইলেন।

রাহা হাত ছাড়িয়ে নেয় সোরার কাছ থেকে। বলে
‘ আমার সাথে কেন এমন করছ আম্মা? আমি আব্বার মেয়ে নই বলে আমার সাথে দাদু অমন করে। বুঝি আমি। আমাকে মেরে ফেলোনি কেন? অবহেলা আমার সহ্য হয় না একদম। আব্বা আমাকে মেয়ে বললে ও আমি মেয়ে নই তার। ওনি ও আমার আব্বা নয়। আমার আব্বা তো মারা গেছে।
সোরা ক্ষেপে উঠে অগণিত চড় বসায় রাহার গালে। নাহিল দরজার কাছে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কানে দ্বিতীয় বার বাজে, ওনি আমার আব্বা নয়, আমার আব্বা তো মারা গেছে।
সোরা আর ও জোরে চড় মেরে চড় বসাতে গিয়ে আটকে যায়। নাহিল ধরে ফেলে তার হাত।
সোরা নাহিলকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে
‘ আমার আর আমার মেয়ের মাঝখানে আসবেন না।
নাহিল কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলো।
বলল
‘ ঠিক আছে আসব না। তোমার আর তোমার মেয়ের মাঝখানে। আসব না।
নাহিল চলে যেতেই যাচ্ছিল। রাহা ডাক দিল
‘ আব্বা?
নাহিল চলে গেল। রাহা নিজের চুল টেনে ধরে বলে
‘ আব্বা আমি তো রাগের মাথায় বলেছি। আব্বা?
সোরা দরজা বন্ধ করে চলে আসে। রাহা দরজা ধাক্কাতে থাকে।
সোরা নিজের রুমে চলে এসে কাঁথা ভাঁজ করতে থাকে। কাঁথার উপর ফোঁটা ফোঁটা নোনাজল গড়ায়। নাহিল বসে থাকে খাটের ওপাশে। সোরা গাল মুছে বলল
‘ ওই ঘরের দরজা খুলবেন না।
নাহিল বলল
‘ না মারলে ও পারতে।
‘ আমার মেয়ে।
নাহিল তেড়ে এল তার দিকে। হাতের বাহু খামচে ধরে ঠেলে দিয়ে বলল
‘ এই এককথা আর কতবার বলবে সোরা? কতবার? আমার মেয়ে বলে কি বুঝাতে চাও তুমি?
সোরা আবার কাঁথা ভাঁজ করতে করতে বলে
‘ কিছুনা।
নাহিল বলল
‘ তোমরা মা মেয়ের কাছে আমি আজ ও পর রয়ে গেলাম সোরা। বেশ খুশি আমি৷
রিহান ঘরে ডুকে এল৷ মুখ গোমড়া করে বলল
‘ আম্মু আপুটা কাঁদে। দরজা খুলে দিয়ে আসি?
সোরা শক্ত গলায় বলল
‘ নাহ।
রিহান নাহিলের দিকে তাকায়। বলে
‘ আব্বু কি হয়েছে সবার? ধুর ভাল্লাগেনা।
নাহিল বলল
‘ তুমি খেলতে যাও। এসবে মাথা না ঘামালে ও চলবে।
রিহান বলল
‘ কিন্তু আপু?
নাহিল কড়া কন্ঠে বলে
‘ যেতে বলেছি।
রিহান মন খারাপ করে চলে যায় নাতাশার কাছে। রুক্ষ গলায় বলে
‘ দাদু দিলে তো ঝামেলা বাঁধিয়ে। আপুকে কিভাবে মেরেছে আম্মু।
নাতাশা বলল
‘ তুমি ওসব কানে নিয়োনা তো ভাই। ওই মেয়ে বজ্জাত হয়ছে বেশি। তাকে কি আদর সোহাগ করিনি ছোটবেলায়। এখন তোমাকে করি ওসব সহ্য করতে পারেনা। ত্যাড়া মেয়ে একটা।
সালেহা কোরআন পড়ছিল। এত চেঁচামেচি শুনে তিনি চলে এলেন ধীরপায়ে। নাতাশাকে দেখে বলল
‘ কি হয়েছে ছোট?
নাতাশা বলল
‘ রাহার সাথে ঝগড়া হয়েছে।
‘ তুই কি বাচ্চা ছোট? আমার ভাইটাকে বুঝলি না কোনোদিন, এখন নাহিলকে অন্তত বোঝ।
নাতাশা মাথা নিচু করে বসে থাকে। সাজেদ সাহেব মারা গিয়েছে দুইবছর হচ্ছে। মুননা বিদেশ পাড়ি দেওয়ার দুইবছরের মাথায় মারা গিয়েছে। নাতাশা বলল
‘ রাহাকে কি ধুরছাই করি আপা? ওই মেয়ে কথায় কথায় টেনে আনে সে আমার নাতনি নয়।
সালেহা আর কিছু বলল না। রাহার রুমে গিয়ে দরজা খুলে দিতে গেলে সোরা এসে আটকায়। সালেহা ধমকে বলে
‘ চড় দেব সোরা। যাহ এখান থেকে।
সোরা চলে আসে। সালেহা দরজা খুলে দিতেই রাহা দৌড়ে আসে। সালেহাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে বলে
‘ অবহেলা সহ্য হয়না আমার দাদু। সবাই আমাকে অবহেলা করে। সবাই। এখন আব্বা আমার সাথে রাগ করে বসে আছে। আমি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।
সালেহা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে
‘ সব ঠিক হয়ে যাবে বোন। আর কাঁদিও না।
রাহা বলল
‘ আমি নানুর বাড়ি চলে যাব। রূপসা গ্রামে। বেড়াতে যাব৷
সালেহা হাসলো। বলল
‘ আচ্ছা, নাহিলকে বলব দিয়ে আসার জন্য।

সালেহা গিয়ে নাহিলকে বলল। নাহিল রাহাকে নিয়ে রূপসা গ্রামে দিয়ে আসলো। রাহা কত কান্নাকাটি করলো নাহিলের মন গললো না। শুধু বলল
‘ তুমি আমাকে আব্বা ডেকোনা।
রাহাকে রেখে নাহিল চলে আসলো। রাহা গ্রামে থেকে গেলো।

________

সামান্য সামান্য শীত অনুভূত হচ্ছে। তেমন গাঢ় শীতের দেখা নেই। তারপরও ব্যাগ থেকে সোয়েটার বের করে জিশানকে পড়িয়ে দিল তাননা। বয়স সাড়ে তিনের কোটায়। সোয়েটার গায়ে দিতেই কপালে ভাঁজ পড়ে গেল জিশানের। নানাপ্রকার প্রশ্নের মুখোমুখি করল তাননাকে। তাননা বিরক্তি ছাড়াই সব প্রশ্নের উত্তর দিল। মাথার চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হলো ঈশান। মা ছেলের এত বকবকানি শুনে বলল
‘ সকাল সকাল মা ছেলে শুরু করে দিয়েছেন?
তাননা বলল
‘ কি শুরু করেছি?
ঈশান গামছা বেডের উপর রেখে বসে বলে
‘ বকবক পকপক।
জিশান ফুটবল নিয়ে বলল
‘ মাম্মা নিচি যাই?
তাননা বলল
‘ যান, সাবধানে।
তাননা বেডের উপর থেকে গামছাটা নিয়ে নিল। বলল
‘ আপনার সমস্যা কি? বেডের উপর কেউ ভেঁজা তোয়ালে রাখে? আশ্চর্য!
ঈশান তোয়ালেটা টেনে ধরে। তাননা বলল কি সমস্যা?
ঈশান কপাল কুঁচকে গামছা ধরে জোরে টান দেয়। তাননা গিয়ে পড়ে তার উপর। দুমদাম মেরে বলে
‘ আরেহ ছাড়ুন তো।
ঈশান তার পিঠের উপর দুহাত দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করে আর ও কাছে টানে। তাননা হেসে ফেলল ।
‘ সকাল সকাল প্রেম জেগেছে গোয়েন্দা সাহেব?
‘ ইয়েস উকিল ম্যাডাম।
তাননা হাসলো আবার। নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলল
‘ ছাড়ুন। দরজা খোলা।
ঈশান ছাড়ল না বরং নিজেই তাননাকে ফেলে মুখের ভর দিল হাতে। তাননা আর ও দুমদাম দিল। ঈশান গালে হাত দিয়ে চেয়ে রইল তাননার দিকে। বলল
‘ ম্যাডাম রোয়েন আসার আগেই আরেকটা প্রিন্সেস আসা দরকার। নইলে ডাক্তার বাবু,
তাননা বলল
‘ আরেহ ফালতু কথা রাখেন। সরেন মা চলে আসতে পারে। সরেন সরেন।
ঈশান সরল না। তাননাকে চুপ করিয়ে দিল। নিজের ভেজা চুলের ছুঁয়ে দিল তাননার গলায়।

_________

পড়ার টেবিলে দুইভাইবোনের ঝগড়া লাগলো। আনহা এত চিল্লাচিল্লির পরেও থামাতে পারলো না। তাদের পুলিশ বাপের জন্য গায়ে হাত তোলা ও যায় না। জাহেদা গিয়ে বলে আসলো জায়িদকে। দেখ তোর দুইটা কিভাবে মারামারি লাগিয়েছে। জায়িদ সোফায় বসে ফাইলে চোখ বুলাচ্ছিল। জাহেদা এসে বলতেই মোটা বেত খুঁজে নিল। আনহা ভড়কে গেল জায়িদকে ওভাবে এগোতে দেখে। দৌড়ে রুমে ডুকে বলল
‘ আসছে আসছে, আজ কপালে শনি আছে তোদের।
জাহেদা জায়িদের থমথমে মুখ দেখে বলল
‘ মারিস না আব্বা। এখনো নরম গা। একটু বুঝিয়ে বল।
জায়িদ গিয়ে থেমে যায় দরজার কাছাকাছি। নোহা জুনিতের চুলে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে বলছে
‘ চকলেটসগুলো আমাকে দে না। দে, দে।
জুনিত মজা নিচ্ছে। না না দেবনা।
নোহা জোরে চড় বসালো জুনিতের মাথায়। জুনিত চেঁচিয়ে ডাকলো
‘ আম্মো,,,
আনহা রুমের এককোণায় দাঁড়িয়ে থাকলো।
জায়িদ চেয়ে রইল দুই ভাইবোনের কান্ড। এই চকলেটের জন্য জুননুর হাতে কত মার খেত সে। তার নয় বছর পর জুননু এসেছিল। কত আদরের বোনটা তার। কোথায় বোনটা?
জায়িদের পিছু এসে দাঁড়ায় জাহেদা। জায়িদের পিঠ ছুঁয়ে ডাকে
‘ জায়িদ?
জায়িদ হকচকিয়ে পিছু ফিরে। জাহেদা ভড়কে যায় ছেলের চোখ দেখে। জায়িদ বলল
‘ আমি ওদের কি মারবো আম্মা? এরকম দুষ্টুমি তো আমি আর জুননু ও করতাম। খাবার টেবিলে ওর মাছ মাংস কেড়ে নিতাম। ওর চকলেট নিজে খেয়ে নিতাম৷
জাহেদা শাড়ির আঁচল টেনে মুখে গুঁজে। চলে যায় নিজের ঘরে। জায়িদ মায়ের যাওয়া দেখে হাতের কব্জি দিয়ে চোখ মুছে। যে বোন হোঁচট খাবে বলে সে সারাদিন চিন্তিত থাকতো। সেই বোন আজ মাটির ঘরে শুয়ে আছে। আল্লাহ বোনের মতো নেয়ামতটা কেন কেড়ে নিল? এত বড় আঘাত যেন আর কোনো ভাই না পায়। ভালো থাকুক বোনেরা। ভাই বোনের রাখিবন্ধনের জোর আরও মজবুত হোক। জাহেদা ঘরে গিয়ে বালিশের তলা থেকে একটি ছবি বের করে। ছোট্ট বেলার জুননু আর তার বাবার ছবি। মেয়ে বাবার কাঁধ ঝুলিয়ে ধরে হাসছে। কি মায়াবী সেই হাসি!
এই বাবা পাগল মেয়েটা নিয়ে গেল তার আব্বাকে। আর মেয়ে পাগল মানুষটা ও চলে গেল মেয়ের পিছুপিছু। রেখে গেল তাদের! কত সুন্দর সংসার ছিল তার! কত সুন্দর!

জায়িদ ধীরপায়ে হেঁটে নিচে নেমে আসে। আনহা অবাক হলো। লোকটা রেগে এল, ঠান্ডা হয়ে চলে গেল কেন? আনহা জায়িদের পিছুপিছু গেল। বলল
‘ অফিসার আপনার কি শরীর খারাপ?
জায়িদ বলল
‘ নাহ। ওই এমনি জুননুর কথা মনে পড়লো হঠাৎ ।
আনহা চুপ হয়ে গেল। ভাইগুলো বোধহয় এমনি হয়? জায়িদের সাথে প্রথম দেখায় কত নাম করল জুননুর। এই বোন পাগলা মানুষটার একটা অংশ ছিল জুননু। সেই ভাইটাকে নিঃস্ব করে চলে গেল মেয়েটা। কেন এমন হয়?
জায়িদের ফোন বেজে উঠল। সে ফোন রিসিভ করে কানে দিয়ে বলল
‘ মামা?
ওপাশে মুননা বলল
‘ হ্যা মুননা বলছি মামা। সবাই ভালো আছে?
‘ হ্যা।
জায়িদের সাথে দীর্ঘক্ষণ আলাপ চলে মুননার। সে জানায় দেশে ফিরছে সে। জায়িদ খুশিতে পাগলপারা হয়। মুননা বলল
‘ গিয়ে আম্মা আব্বার বছরের মেজবান দেব মামা।
জায়িদ নিচু গলায় বলল
‘ আচ্ছা।
মুননা ফোন রেখে দেয়। জায়িদ বলল
‘ আনহা সেইদিনটা তো সামনেই। যেদিন অন্ধকার নেমেছিল এই দুই বাড়িতে।
আনহা গিয়ে ধরে জায়িদকে। বলল
‘ অফিসার আপনি বসুন তো। ওসব আর মনে করবেন না। আপনার বোন বন্ধু মিশে আছে এই বাড়ির আনাচে কানাচে। কোথাও হারায়নি তারা।

সাতদিনের মাথায় দেশে ফিরল মুননা। তাননা পাগলের মতো হন্য হয়ে এল মুননার কাছে। দৌড়ে এসে ঝুলিয়ে পড়ল ভাইয়ের গলা ধরে। কেঁদে কেঁদে বলল
‘ মুননু তুই আর আমি তো টুইন কিন্তু তুই এত লম্বা কেন?
মুননা টলমলে চোখে বোনের কথায় হাসে। নিজের ঘরে গিয়ে দেখে সাড়ে চার বছর আগের সেই ঘরটা আগের মতোই আছে। পুরো ঘরেই তার আম্মা আব্বার স্মৃতি। মুননা ছুুঁয়ে দেয় সেগুলো। বুকে জড়ায়, ঠোঁট ছুঁয়ায়। বলে
‘ জুননু পুঁচা কেন? গুড্ডু দুষ্টু কেন?
তাননা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ভাইকে দেখে।

বিশাল বড় মেজবানের আয়োজন করে মুননা। এতিমখানার বাচ্চাদের খাওয়ায়। সেই অনাথ আশ্রমের বাচ্চাগুলোকে ও খাওয়ায়। যেই অনাথ আশ্রমটা সাহিল তাননা মুননার নামে করে গিয়েছিল। আম্মা আব্বার কবর জিয়ারত করিয়ে আসে। নাহিল আর জায়িদের লাগানো ফুলগাছগুলোতে ফুল ফুটেছে। পাশাপাশি দুজনের কবর। এদের বন্ধনটা এত জোরালো!
মুননা দুজনের কবরে হাত বুলায়। বলে
‘ আমায় দোয়া করো আম্মা৷ দোয়া করো আব্বা।

রাহা ফিরল প্রায় মেজবানের রাতে। রোয়েন ফিরেছে শুনে এতদিন ইচ্ছে করে ফিরেনি। তখন বাড়িভর্তি লোকজন ৷ মেহমান। বড়আম্মা আর বড়আব্বার মেজবানের দিন পুরো বাড়িটা নিস্তব্ধ থাকে। এরা বোধহয় বাড়িটার সবকিছু ছিল!
রাহা ফিরতেই নিজেকে ঘরে বন্দী করে। দেখা হয়না তার আর রোয়েনের। অবহেলা নামক বস্তুটির সংস্পর্শে যেতে ভয় হয় তার। সোরা এসে খাইয়ে দিয়ে গেল। বলল
‘ পুরোনো কথা ভুলে যাও। রোয়েন ভাইয়ার সাথে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করবে।
রাহা মাথা নাড়ায়।
‘ স্বাভাবিক? এত সোজা? এর শেষ দেখে ছাড়বে সে।

__________

তখন মধ্যরাত। রোয়েন নিজের রুমের দিকে এগোলো হাতে কফির মগ নিয়ে । কফি নিতে রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো কফি বানানোই আছে। নিশ্চয়ই মানুনি বানিয়ে রেখেছে। এই কফির নেশা ছাড়ার নয়। হঠাৎ কারো গুনগুন গানের আওয়াজ কানে এল রোয়েনের। সে থেমে গেল। দু পা পিছু হেঁটে এসে দেখল ওড়না ঝুলছে। পিলারের সাথে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়িয়েছে কোনো একটা মেয়ে। লম্বা চুল গুলো ও দৃশ্যমান। আধোআধো অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে তা৷ রোয়েন এগোলো না। কফির মগে চুমুক দিয়ে বলল
‘ কে?
রাহা পিলারে ভালোভাবে পিঠ ঠেকিয়ে সুর টেনে গাইলো
‘ আমি সেই ধ্রুবতারা।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here