ধ্রুবতারা
পর্ব_৪
পুষ্পিতা_প্রিমা
হঠাৎ কারো গুনগুন গানের আওয়াজ কানে এল রোয়েনের। সে থেমে গেল। দু পা পিছু হেঁটে এসে দেখল ওড়না ঝুলছে। পিলারের সাথে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়িয়েছে কোনো একটা মেয়ে। লম্বা চুল গুলো ও দৃশ্যমান। আধোআধো অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে তা৷ রোয়েন এগোলো না। কফির মগে চুমুক দিয়ে বলল
‘ কে?
রাহা পিলারে ভালোভাবে পিঠ ঠেকিয়ে সুর টেনে গাইলো
‘ আমি সেই ধ্রুবতারা।
রোয়েন কৌতুহল নিয়েই এগোলো। ভেবেছিল তাননা হবে। কিন্তু আলো আধারিতে এই রমনীকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভড়কালো সে। তা তবে তা তার চেহারায় স্পষ্ট না। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে তাকালো সে। পকেটে এক হাত রেখে। অন্য হাতের কফির মগে দ্বিতীয় চুমুক দিল সে। রাহা আঁড়চোখে তাকালো তারদিকে। বাঁকা হাসলো। রোয়েন সেই বাঁকার মর্মার্থ বুঝে আর দাঁড়ালো না। চলে যেতেই সে আবার থমকে গেল৷
‘ এত তাড়াতাড়ি কেন ফিরেছেন?
রোয়েন সেই প্রশ্নের উত্তর দেবে কি দেবে না ভেবেই সময় কাটালো অনেক্ক্ষণ। কফির নেশা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। চোখদুটো মেঝেতে বদ্ধ করে রেখে কফি অর্ধেক শেষ করল সে। এত জঘন্য কফি কখনো খায়নি সে। এত তেঁতো হওয়ার নয়। রোয়েন হেঁটে গেল রাহার কাছে। ভার গলায় বলল
‘ এসবের মানে কি রাহা?
কিছু মুহূর্ত না যেতেই হেসে উঠল রাহা৷ বলল
‘ আমার প্রশ্নের আনসার আপনি দেননি। আমি ও দেব না।
রোয়েন বিরক্ত হলো। চাপা গলায় বলল
‘ ইয়ার্কি আমার পছন্দ না রাহা। ইচ্ছে করে কফি তেঁতো বানিয়ে ফেলেছ। তোমার আমার সম্পর্ক ইয়ার্কির নয়।
আবারও হাসলো রাহা।
‘ আপনি আমার চাইতে অতটা ও বড় নন। মাত্র আড়াই-তিন বছরের বড়। ইয়ার্কি করা যায়।
গটগট পায়ে হাঁটা ধরল রোয়েন। দৌড়ে রান্না ঘরে গেল রাহা। আলাদা করে রাখা কফির মগটা নিয়ে দিল দৌড়। রোয়েন স্যুটকেস থেকে কাপড়চোপড় বের করছিল। বের করা হয়নি। রাহা দরজায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল
‘ আসতে পারি?
রোয়েন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো না। বলল
‘ কি দরকার?
রাহা ঘরে ডুকে আসতেই নিচ্ছিলো । ক্লিন স্প্রে নিয়ে এগিয়ে গেল রোয়েন। রাহার হাতে পায়ে মেরে বলল
‘ হুটহাট চলে আসবে না রাহা।
মুখ মোচড়ালো। ওররে পরিষ্কার!
রাহা কফির মগ নিয়ে রোয়েনের সামনে ধরে বলল
‘ কফি। এটা ভালোভাবেই বানিয়েছি। যেভাবে আপনি খান।
রোয়েন ফিরে চাইলো রাহাকে।
‘ তাই নাকি? তুমি জানো কিভাবে আমি এভাবেই খাই?
‘ শিখে নিয়েছি আম্মার কাছ থেকে। আপনি বড় ভাই বলে কথা!
শেষের কথাটা ব্যঙ্গ করে বলল বলে মনে হলো রোয়েনের। যা তার একদম সহ্য হয়না। প্রচন্ড বিরক্ত লাগে।
কফি নিলনা রোয়েন। রাহা বলল
‘ সুইজারল্যান্ড থেকে ফিরেছেন, কি এনেছেন আমার জন্য?
মামুনিকে দিয়েছি। নিয়ে নিও।
ঠোঁট গোল করে বলল রাহা।
‘ ওহহহ।
‘ রাত হয়েছে রাহা। যেতে পারো। আমি ঘুমোবো।
রাহা ধপ করে আওয়াজ করল দরজার। কফির মগ মেঝেতে ঢেলে দিয়ে যেতে যেতে বলল
‘ আপনার সাথে থাকতে আসিনি।
ঘাড় ফিরিয়ে দরজার কাছাকাছি চাইলো রোয়েন। কফি গড়াতে গড়াতে রুমে ছড়িয়ে পড়ছে। অব্যবহৃত একটি শার্ট নিয়ে এসে কফির উপর দিয়ে দিল রোয়েন। পরিষ্কার করল। মেজাজ বিগড়ে গেলে ও শান্ত থাকার চেষ্টা করল।
রুমে গিয়ে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ল রাহা। হাসতে হাসতে মুখ লুকোলো বালিশে। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে একদম শেষ করে ফেলবে সে। রাহাকে অবহেলা করার ফল ভয়ংকর বুঝবে রোয়েন আহম্মেদ।
_____________
সকাল সকাল নিচে এত হৈচৈ চেঁচামেচি শুনে বিরক্তি নিয়ে নিচে নেমে এল রোয়েন। জুনিত নোহা আর রিহানের চেঁচামেচি। জিশান ও সাথে।
রোয়েনকে দেখে সবাই ঠান্ডা হয়ে গেল। নোহা লুকিয়ে পড়লো।
আনহা সোফায় বসে পান ধুঁকছিল। কিছুক্ষণ আগেই এসেছে সে। রোয়েন আনহার পাশে গিয়ে বসলো। বলল
‘ সকাল সকাল কেউ এত চেঁচামেচি করে?
আনহা হাসলো। বলল
‘ এদের সাইজ করা দরকার মুননা।
সালেহা বেগমের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো রোয়েন। সালেহা তার চুলের ভেতর হাত গলিয়ে দিয়ে বলল
‘ ভাই এইবার একটা বউয়ের কথা ভাবো। তোমাকে বিয়ে করায় দিয়ে যেতে পারলে মরে শান্তি পাব।
চোখ বন্ধ করল রোয়েন। সালেহা ডাকল
‘ ভাই? মুননু?
রোয়েন চোখ বন্ধ অবস্থায় বলল
‘ বিয়ে শব্দটাই প্রচন্ড বিরক্তিকর দাদু। সবাই বিয়ে করবে এমন কোনো কথা নেই। তাছাড়া আমার পড়ালেখা এখনো শেষ হয়নি। আর ও পড়তে হবে।
আনহা হেসে ফেলল। বলল
‘ তোমাকে না পড়তে কে বলেছে? আমাদের ও বৌমা লাগবে আব্বা। তোমার মেডিক্যালের ডাক্তারণীদের দেখো।
চোখ আর গাঢ় ভাবে বুঁজলো রোয়েন। সালেহা চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলে
‘ ভাই, তোমার দাদার মতো নারীবিদ্বেষী হইওনা আবার।
চমকে চোখ খুললো রোয়েন।
‘ আই রেসপক্ট ওমেন দাদু।
সালেহা হেসে ফেলল। বলল
‘ তোমার বাপের মতো কাউকে পছন্দ করে ফেলো। তোমার বাপ তো তোমার মাকে বিয়ে বাড়িতে দেখে পছন্দ করছে। তুমি তো কত বিয়ে বাড়িতে যাও, হসপিটালে কত মেয়ে দেখো। পছন্দ হয়না?
রোয়েন উঠে বসলো। মাথার চুল ঝাঁকিয়ে বলল
‘ দাদু বিরক্ত হচ্ছি। প্লিজ টপিক পাল্টাও।
আনহা হাসলো। সোরা থেমে থেমে আসলো। সোরাকে দেখে আনহা বলল
‘ আমাদের রাহামণি আছে। রোয়েনের জন্য হয়ে যাবে। বাইরের মেয়ে দেখার কি দরকার?
সোরা তাকালো রোয়েনের দিকে। উঠে দাঁড়ালো রোয়েন। জিশানকে ডেকে বলল
‘ জিশু? মামা আসো তো বাইরে যাই। আসো।
জিশু দৌড়ে এল। রোয়েনের আঙুল ধরে বলল
‘ ডক্টরবাবুর চুল এত লম্বা কেন?
হাসলো রোয়েন।
‘ আর ও বড় হতে হবে জিশু। তখন বুঝবে।
আনহা সোরার দিকে তাকালো। ফিসফিসিয়ে বলল
‘ সোরা আমি কি ভুল কিছু বলে ফেললাম?
রোয়েন দরজার দিকেই এগোচ্ছিল। রাহা লাফিয়ে লাফিয়ে নিচে নেমে এলো। আনহাকে বলল
‘ ফুপী যাকে তাকে আমি বিয়ে করব না। তোমরা বললেই হবে না।
আনহা চোখ বড় বড় করে তাকালো।
‘ রোয়েন যাকে তাকে হলো রাহা? আমার আব্বার মতো ভালো ছেলে পাবি কোথায় তুই?
সোরা থামিয়ে দিল। রোয়েন কি বলল শুনোনি তোমরা?
ওরা দুইজন দুদিক থেকে বিয়ে করবে। শুধু শুধু বাড়ির ভেতরে কেন ঝামেলা বাড়াচ্ছ বলো তো।
রাহা খুশি হতে পারলো না মায়ের কথায়। সোরা বলল
‘ রাহার তো বিয়ে ঠিক আছে। ইন্জিনিয়ার সাহেবের ছেলেরও সব ঠিকঠাক। কালই তো ওনার সাথে কথা বলেছিল তোমার ভাই। রাহার এখন এক্সাম চলছে। এক্সামের পরেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আর রাহা তুমি রোয়েন ভাইয়ার সামনে হুটহাট আজেবাজে কথা বলবে না।
সোফায় গিয়ে বসলো রাহা। বলল
‘ আমি বিয়ে করব না আম্মা।
সালেহা বলল
‘ রোয়েন ও এইকথা বলে গেল। সমস্যা কি তোদের?
আনহা বলল
‘ ওদের কথায় সব হবে নাকি? ঘাড় ধরে করাবো বিয়ে।
নোহা মুখ ফুলিয়ে আসতে আসতে বলল
‘ রাহাপু তুমি তাড়াতাড়ি বিয়ে সেড়ে নাও তো। আমার সিরিয়াল আসবে।
আনহা ডাক দিল
‘ নোহা!
ভড়কে গেল নোহা।
‘ সরি আম্মা।
সালেহা হেসে বলল
‘ আমার বোনের বিয়ের শখ জেগেছে আনু। তোর জামাইকে বলে দিস তার মেয়ের জামাই লাগবে।
নোহা বলে উঠল,
‘ না না না আম্মা। আব্বাকে কিছু বলবে না। পুলিশ অফিসার লজ্জা দেবে আমায়। আম্মা না।
আনহা বলল
‘ দাঁড়াও। বলব আমি।
নোহা কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল
‘ নাহ আম্মা নাহ।
হেসে উঠল সবাই। শুধু হাসলো না রাহা। নাহিল নিচে নেমে এল। এতগুলো ব্যবসার দায়ভার বাপ, ভাই, জ্যাঠা তাকে গিয়ে গেল। সব তাকে একা হাতে সামলাতে হয়। রোয়েন ও হসপিটালে। তারপর ও সে আশ্বাস দিল নাহিলকে। দরকার হলে সে ও দেখবে। তারপরও দাদার গড়ে তোলা ব্যবসা দেউলিয়া হতে দেবেনা।
সোরা টিফিন বক্স আনতে গেল। রাহা দৌড়ে এসে নাহিলের গলা ধরে ঝুুলিয়ে পড়ে ডাকলো
‘ আমার আব্বা!
অনেকদিনের রাগ আজ ও ভাঙাতে পারলোনা রাহা। নাহিলের কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বলল
‘ আব্বা সরি। সো সরি। ফরগিভ মি আব্বা প্লিজ । লাভ ইউ আব্বা।
নাহিল কিছু বলল না। রাহা শক্ত করে জড়িয়ে ধরল এবার। আনহা হেসে উঠে বলল
‘ ভাইডি মাফ করে দাও না। মেয়ের সাথে কেউ এভাবে রাগ করে?
নাহিল বলল
‘ রাহা ছাড়ো।
রাহা তাকে আর ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
‘ আব্বা আদর দাও। ছেড়ে দিব। নইলে যেতে দেবনা।
সোরা টিফিনবক্স নিয়ে আসলো। রাহা এভাবে ধরে থাকতো ছোটবেলায় ও। নাহিল বেরোনোর আগে সে কি কান্না!
সোরা হেসে বলল
‘ আপনি ও পারেন।
নাহিল বলল
‘ মাফ করব কিন্তু একটা শর্ত। কাল তো এক্সাম শেষ হচ্ছে। এবার বিয়ের পিড়িতে বসতে হবে। কোনোপ্রকার ঝামেলা করতে পারবে না।
চুপ হয়ে গেল রাহা । নাহিলের বুকের কাছে নিজের নিজের চোখজোড়া চেপে ধরে বলল
‘ ঠিক আছে। কোনো ঝামেলা করব না আব্বা।
রাহার মাথায় হাত রাখলো নাহিল। সোরা তাকালো নাহিলের দিকে। এ কেমন শর্ত!
নাহিল রাহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। মুননা রাহাকে কস্মিনকালেও ভালোবাসবে না। হয়ত নাহিলের কথায় বিয়ে করতেই পারে, কিন্তু রাহা সুখী হবেনা। দুজনই ভালো থাকবে না।
তাননা সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে চেয়ে রইল রাহাকে। তারপর ধীরপায়ে হেঁটে নিচে নামে। নাহিলকে ডাকে
‘ বাবাই?
নাহিল তাকে ডাকে। তাননা গিয়ে জড়িয়ে ধরে নাহিলকে। বেশ শক্ত করে ধরে বলে
‘ রাহাকে অন্য কোথাও বিয়ে দেবেনা। প্রমিজ করো।
নাহিল বলল
‘কিন্তু?
‘ রাহাকে মুননা বিয়ে করবে।
সোরা বলল
‘ তাননা এমন আবদার করতে নেই।
তাননা বলল, করব। রাহাকে মুননা বিয়ে করবে। আমি রাজি করাবো মুননাকে। রাহা চেয়ে রইল তাননার দিকে। তারপর চলে গেল।
তাননা সবাইকে বলল
‘ রাহা যেভাবে আমার ভাইকে বুঝবে সেভাবে একটা বাইরের মেয়ে না ও বুঝতে পারে। আর আমার আম্মা আর আব্বার ও ইচ্ছে ছিল রাহাকে মুননার বউ করবে। আম্মার নীলকুঞ্জ ডায়রির এক অংশে আম্মার লিখাটা আছে। ভালো করলে বুঝা যাবে আম্মা এটাই চেয়েছিল।
সালেহা খুশি হয়ে বলল
‘ গুড্ডু চেয়েছিল?
তাননা বলল
‘ হ্যা। ওখানে আম্মা আব্বাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিল তাননার জন্য লাল টুকটুকে বর আর মুননার জন্য রাহার মতো গোলগাল একটা পুতুল বউ আনবো গুড্ডুসাহেব। যেমনটা আপনি বলেছিলেন।
নাহিল অবাকসুরে বলল
‘ সত্যি?
তাননা বলল
‘ হ্যা। যদি আম্মা আব্বা থাকতো তাহলে মুননুকে কি করতো বলো? কান ধরে বিয়ের পিড়িতে বসাতো।
আনহা বলল
‘ এখন আমরা বসাবো। হেসে উঠল তাননা।
বলল
‘ রাহাকে অন্য কোথাও বিয়ে দেওয়ার কথা ভেবোনা বাবাই। নাহিল বলল, কিন্তু এতগুলো বছর যে ওদের ঘুরালাম।
তাননা বলল
‘ মেয়ে কি কম পড়েছে ওদের ? অন্য মেয়ে দেখতে বলো।
আনহা বলল
‘ ঠিক, বলো রাহা রাজি নেই।
নাহিলকে চিন্তিত দেখালো। চলে গেল সে।
সোরার চিন্তা গেল না।
______
জুনিত রিহান আর জিশানের সাথে খেলছে রোয়েন। পড়নে ঢিলেঢালা শার্ট আকাশি রঙের শার্ট । প্যান্ট গোটানো গোড়ালির উপরে। জুনিত আর রিহানের চোখেমুখে উপচে পড়া খুশি। রোয়েন ভাইয়া তাদের সাথে খেলছে!
ছাদে ফুল টবের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে রাহা। অনেক্ক্ষণ হয়েছে। সে দেখতে ব্যস্ত ওই নিচে বাচ্চাদের সাথে ফুটবল খেলা ছেলেটিকে । উফ ছেলেটা এভাবে ছোটাছুটি করছে ভালো করে দেখতে ও পারছেনা রাহা। ফুলগাছ থেকে ছিঁড়ে সে একটি ফুল নিল। নিচে ছুঁড়ে মেরে বলল
‘ এই ডাক্তার ফুলটা ধরুন। আমি পাঠিয়েছি।
রিহানকে ঠেকিয়ে গোল দিল রোয়েন। জিশান চেঁচিয়ে উঠে হাত দুটো উপরে দিয়ে বলল
‘ জিও মামা।
রোয়েন হাতে হাত মিলালো জিশানের। জুনিত আর রিহানের মন খারাপ হলো। রোয়েন বলল
‘ আরেহ মন খারাপের কিছু নেই। এবার তোমরা দেবে।
জিশান কোমরে হাত দিয়ে বলল
‘ নো মামা। আমরা দেব।
রোয়েন হাসলো। বল পা দিয়ে উপরে তুলে হাঁটুতে ঠেকায়। হাঁটুতে ঠেকিয়ে উপরে তুলে মাথা,দিয়ে মেরে পাঠায় জুনিতের কাছে। তারপর পরই চোখ গেল ছাদের দিকে। রাহা ফিরে গেল রোয়েনকে তাকাতে দেখে। পিছু করে দাঁড়ায় রেলিংয়ে ঠেস দিয়ে। কানের পেছনে হাত দিয়ে চুল টানে। রোয়েন কপালে ভাঁজ ফেলে তাকায়। জুনিত ফিসফিসিয়ে রিহানকে বলল
‘ রোয়েন ভাইয়া ছাদে কি দেখে?
রিহান বলল
‘ বউ দেখে, দেখিস না আপু দাঁড়িয়ে আছে।
জুনিত কোমরে হাত দিয়ে বলল
‘ ডাল মে কু কালাহে!
রাহা ভাবলো রোয়েন ফিরে গিয়েছে তাই সে আবার ফিরল। দেখল রোয়েন একইভাবে কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে। লজ্জায় হাত পা কাঁপল রাহার। বুক ধড়ফড়িয়ে উঠলো। মনের কোণে সুপ্ত ছোট্ট কোকিল কুহু কুহু করে ডেকে সংবাদ দেয় বসন্তের আগমনী বার্তা। বুকে হাত দিয়ে বারকয়েক ঢোক গিলে রাহা। ভালোবাসার তীব্র অনুভূতিগুলো বুঝি এতটা প্রখর হয়? সামান্য তাকানোতে তোলপাড় করে ফেলে মনমস্তিষ্ক। একেই ভালোবাসা বলে? তারমানে রাহার অনুভূতি গুলো আবেগ ছিল না।
নোহা এসে রাহাকে নিশপিশ করতে দেখে বলল
‘ কি হয়েছে রাহাপু?
রাহা কিছু বলল না। দৌড়ে চলে গেল। নোহা নিচে তাকালো। রোয়েনকে তাকিয়ে থাকতে দেখে যা বুঝার বুঝে গেল। রাহার পেছন পেছন দৌড় লাগিয়ে বলল
‘ ওহ রাহাপু তুমি ছাদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রেম করছিলে? আমাকে ডাকোনি কেন? প্রেম কিভাবে করে একটু শিখে নিতাম। তোমরা না শেখালে শেখাবে কে? ধুর বাবা।
চলবে