#নিশি_রাতের_ডাক
#পর্ব 7
#সুমাইয়া_আক্তার
দুইদিন পর আমাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়েছে… এখন মোটামুটি সুস্থ আছি…সারাদিন রাত মা আমার পিছনে লেগে থাকে….এক মুহূর্তের জন্যও কাছ ছাড়া করে না…
বিকেলে বসে বসে টিভি দেখছিলাম…আম্মুর ফোনে কল আসে…স্কুলের হোস্টেলের নাম্বার থেকে কল আসছে…কল রিসিভ করতেই রিদিতা কেঁদে বলল,,,ফাহমিন আমি আর এই হোস্টেলে থাকবো না… একের পর এক লাশ পাওয়া যাচ্ছে…কোন কারণ তো নিশ্চয়ই আছে…
কি বলছিস তুই??কার লাশ পাওয়া গেছে আবার???
কার না কাদের লাশ বল….
মানে???
একটা ছেলে আর দুইটা মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে…একটা মেয়ে হচ্ছে আমাদের হোস্টেলের তানিয়া…
আর দুইজন অজ্ঞাত… ওদের কেউ চিনেনা…
রিদিতা সমানে কেঁদেই চলেছে….আমি কোনভাবে শান্ত করতে পারছিনা রিদিতা কে….আমি রিদিতা কে থামিয়ে বললাম,,,আচ্ছা শোন তুই ভয় পাস না…আমি কয়েকদিনের মধ্যেই হোস্টেল আসবো…
এই কথা বলে ফোন রেখে দিলাম….আমার মামার সাথে আবার কথা বলতে হবে…এরকম চলতে থাকলে তো হোস্টেল টাই বন্ধ হয়ে যাবে…আর আমাদের মান সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে….
আমি আম্মুর ফোন থেকে মামা কে কল করলাম……বললাম,,,মামা তুমি একটু বাড়িতে আসবে???
কেন??কি হয়েছে???
না কিছুনা এমনি… আসবে???
হুম…আসছি…আমার একমাত্র ভাগ্নি বলেছে আর আমি না করতে পারি?? আসছি আমি….
আর টিভি দেখতে ভালো লাগছে না…টিভি বন্ধ করে নিজের রুমে এসে শুয়ে আছি…বাড়িতে খুব বোরিং লাগে…আম্মু সারাদিন কাজ করে আর আব্বু ও অফিসে চলে যায়…বাড়ি একদম ফাকা থাকে….
শোয়া থেকে উঠে বসলাম…ভাবছি ছবি আঁকবো… বসে বসে প্রাকৃতিক দৃশ্য আঁকছি…. হঠাৎ পানি টপটপ করে পড়ার মতো আওয়াজ হচ্ছে…আমি দেখার জন্য বাথরুমে গেলাম…আওয়াজ টা বাথরুম থেকেই আসছিল…
ওমা একি আমি তো পানির কল কখনো ছেড়ে রাখিনা…. তাহলে পানির কল ছাড়লো কে???
আমি পানির কল বন্ধ করে আবার আকায় মনোযোগ দিলাম…আবার ও সেই একই শব্দ…
বাথরুমে গেলাম…পানির কল বন্ধ করে এসে আবার আকতে বসলাম…মা ডেকে বললেন,,,,এও ফাহমিন,,, গোসল করে নে… তারপর খেয়ে নিবি…আর শোন সাবধানে বাথরুমে যাবি…জানিস তো তোর পায়ের ব্যাথা…
আমি বললাম,,আচ্ছা মা..
আমি গোসল করতে ঢুকতেই পা পিছলে পড়ে যাচ্ছিলাম…হঠাৎ কেউ আমার হাত ধরে টেনে আমাকে সোজা করে দাড় করিয়ে দেয়….বাথরুমে তো কেউ নেই…তাহলে কে বাঁচালো আমাকে???
ভাগ্য ভালো পা পিছলে পড়ে যাইনি…না হয় পড়ে গিয়ে মাথা ফাটিয়ে ফেলতাম…
টাওয়েল নিতে ভুলে গেছি…এখন টাওয়েল দিবে কে.????তাই মাকে ডাক দিলাম,,, মা আমার টাওয়েল দেও তো…
বাথরুমেরর দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছি…হাত বাড়িয়ে টাওয়েল টা নিলাম…
থ্যাংকস মা…বাহির থেকে কোন জবাব আসে নি….মা তো কখনো এমন করেনা…হয়ত ব্যস্ত আছে তাই কিছু না বলেই চলে গেছে…
আমি মুখ মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গেলাম….আয়নার দিকে তাকাতেই আমি ভয়ে দু পা পিছিয়ে আসলাম…
আয়নায় কারো প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে…কিন্তু কার প্রতিচ্ছবি তা স্পষ্ট করে দেখা যাচ্ছে না….
আয়নায় থাকা প্রতিচ্ছবি টা বলে উঠলো,,,আজ তো তোমাকে মেরেই ফেলতাম আমি…. কিন্তু একজনের কথায় তোমাকে আর মারি নি…বেঁচে গেলে তুমি….
এই কথা বলেই ,,, আয়না থেকে প্রতিচ্ছবি টা অদৃশ্য হয়ে গেলো….আমি ভয়ে ঘামতে থাকি…
এর মধ্যেই মা ডাক দিয়ে বলল,,,ফাহমিন তাড়াতাড়ি আয় তোর মামা এসেছে….
আমি ড্রেস পরে তাড়াতাড়ি বাথরুম থেকে বেরিয়ে গেলাম….মামা কে কেমন যেন বিষন্ন দেখাচ্ছে….বুঝতে পারছি হোস্টেল এ যেসব ঘটনা ঘটছে সেসব নিয়েই চিন্তায় আছে মামা…
আমি মামার কাছে গিয়ে বসলাম…মামা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলল,,,হঠাৎ আসতে বললি…??
না মামা তেমন কিছুনা…কিন্ত হোস্টেল এ যেসব ঘটনা ঘটছে সেসব কি তোমার কাছে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে???আমাদের মান সম্মান তো কিছুই থাকবে না….
মামা হালকা কেশে বললেন,,,,আসলে আমি নিজেও বুঝতে পারছিনা…কে করছে এসব???কে শত্রু আমার??
আমি মামার কাঁধে হাত রেখে বললাম,,,চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে….মামা সন্ধ্যার দিকে চলে গেলেন…খুব চিন্তিন্ত ছিলেন…সত্যি বলতে মামার জন্য খুব খারাপ লাগছিলো….
আমি মাকে দুপুরে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা বললাম,,মা তুমি কোন কথা বললে না কেন???
মা অবাক হয়ে বললেন,,, কি বলছিস তুই???আমি তো তোকে টাওয়েল দেই নি…
আমি আর ও এক দফা অবাক হই….কি হচ্ছে আমার সাথে….???আমি কয়দিন পর পাগল হয়ে যাবো…উফ আর সহ্য হচ্ছেনা আমার..
রাগে মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করতেছে…
ইশ ছাদে কাপড় আছে…একদম ভুলে গেছি….এদিকে সন্ধ্যা ও হয়ে গেছে…ভয় লাগছে ছাদে যেতে…. মাকে বললে যেতে দিবে না..মায়ের আবার হাটুতে ব্যাথা আছে…তাই মাকে না বলেই গেলাম ছাদে….
ওমা ছাদে আবার কে দাঁড়িয়ে আছে???আমাদের বাড়িতে তো আর কেউ নেই…. তাহলে ছেলেটা কে???
আমি জিজ্ঞেস করছি,,, কে এখানে???আপনি এখানে কি করে এলেন???আর কি করছেন এখানে???
ছেলে টা কালো শার্ট আর জিন্স প্যান্ট পরিহিত ছিলো..তার শার্টে রক্তের দাগ বোঝা যাচ্ছে.আর ঘাড় বেয়ে রক্ত গুলো হাত পর্যন্ত এসে থেমেছে…বোঝাই যাচ্ছে যে রক্ত গুলো অনেকক্ষণ আগের…তাই এভাবে জমাট বেধে আছে… ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে ছেলেটা…মুখ দেখা যাচ্ছেনা…সামনের দিকে মুখ ফিরিয়েই বলল,,,তুমি তোমার মামাকে যতটা ইনোসেন্ট ভাবছো তিনি ততটা ইনোসেন্ট না….তুমি যদি তোমার মামা কে বিশ্বাস করো তাহলে তুমিই পস্তাবে…
এই কথা বলেই ছেলেটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো….কে ছেলে টা???ছেলেটার সাথে মামার কি সম্পর্ক??? কেনই বা ওরা একে একে আমাকে দেখা দিচ্ছে???
আমি কাপড় নিয়ে রুমে চলে আসি….আর ভাবতে থাকি ছেলেটার কথা…ছেলেটার নাম কি???
অনেকদিন ধরে চুল আঁচড়ানো হয়না….চুলে অনেক জট বেধে আছে…তাই আয়নার সামনে গিয়ে চুল আআচড়াচ্ছিলাম….
হঠাৎ আয়নায় আবার ও সেই ছেলেটাকে দেখতে পেলাম…কিন্তু ছেলেটার মুখ দেখতে পারলাম না….আমি পিছনে ফিরতেই ছেলেটা গায়েব হয়ে গেছে….
আমি চুল আঁচড়ানো তে মনোযোগ দিলাম….ছেলেটার কথার আওয়াজ পেলাম….ছেলেটা বলছে… কি দোষ করেছিলাম আমরা???যার কারণে আমাকে আর আমার ভালোবাসার মানুষ কে এভাবে মরতে হলো???
আমি জিজ্ঞেস করলাম,,কে আপনি???আর কেই বা আপনার ভালোবাসার মানুষ??? কে মেরেছে আপনাদের????
ছেলে টা কিছু না বলেই আবার ও অদৃশ্য হয়ে গেলো….. তারপর চোখের সামনে তিনটা মানুষের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠলো….
একজন কে আমি চিনি… সে হলো তানিয়া…ওকে এত বিশ্রী ভাবে কে মেরেছে???আর কেনইবা মারলো???
আর একজন হলো মেয়ে… শাড়ি পরিহিত…শাড়িতে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যাচ্ছে…আর মেয়েটাকে গলা টিপে মারা হয়েছে….
আর একজন হচ্ছে এতক্ষন যে ছেলে কথা বলল,,সেই ছেলেটা…
শুধুমাত্র তানিয়ার চেহারা ছাড়া আর কারো মুখ দেখা যাচ্ছেনা….
আমি আওয়াজ দিলাম,,,,আপনি কি আছেন????থাকলে প্লিজ সাড়া দেন….
তখনি সেই ছেলেটা বলে উঠলো,,,,এত তাড়া কিসের???আস্তে আস্তে জানতে পারবে সব….
ছেলেটা কিছু না বলেই চলে গেলো….
(চলবে)