নীল অপরাজিতা পার্টঃ৭

0
737

#নীল_অপরাজিতা
#পার্টঃ৭
#Rifat_Amin

নিস্তব্ধ রোডে প্রাণপণে দৌড়ে চলেছে মেয়েটি। যেভাবেই হোক এখান থেকে পালাতে হবে আমাকে। আমার পেছনে এলাকার মাস্তান ছেলেপেলেরা ধাওয়া করছে। একবার ধরে ফেললেই আমার নিস্তার নেই। বিয়ের শাড়ি পড়া অবস্থায় একদম দৌড়ানো যাচ্ছেনা,। কেনো যে বিয়ে থেকে পালাতে গেলাম। না পালিয়েও তো উপায় ছিলো না। এরকম মানুষকে বিয়ে করার থেকে মরে যাওয়াও ভালো। বিকালের দিকে কিছু ভালো না লাগার কারণে একটু পার্কের দিকে ঘুরতে আসছিল রিশিতা। তারপর অনেক ঝামেলার পর এখন এই অবস্থা। দৌড়াতে দৌড়াতে গলা একদম শুকিয়ে গেছে, আর দৌড়ানো যাচ্ছেনা। শরীরের ভার আর নেওয়া যাচ্ছেনা। তবুও থেমে থাকলে চলবেনা, একটু দূরেই আবীর চৌধুরী আর তার ছেলেপেলেরা দৌড়ে আসছে। শেষ পর্যন্ত হোচট খেয়ে মেইন রোডে পড়লো রিশিতা, মাথায় চোট পাওয়ার কারণে হালকা রক্ত বেরিয়েছে। জ্ঞান হারানোর আগে লক্ষ্য করলো তার সামনে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে।

ঘড়িতে রাত ১২ টা ৩৯। কদমতলি রোডে একটি মেয়েকে এভাবে পড়ে যেতে দেখে সিএনজি থেকে নেমে এগিয়ে গেলো সৌমিত্র, মিষ্টি আর অভি। তার পেছনে মাহিন আয়েশ করে কোক খাচ্ছে আর মিথিলা দাঁড়িয়ে সৌমিত্রর এগিয়ে যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।
ইতোমধ্যে আবীর তার দলবল নিয়ে জ্ঞানহীন রিশিতার সামনে উপস্থিত। সেখানে পৌঁছায় হাঁফাতে থাকে দলের প্রতিটা লোক। রিশিতার পরে যাওয়া দেখে অট্টোহাসিতে ফেটে পড়লো আবীর। তার বড়ো ভাইয়ের বিয়ের কনে এভাবে পালিয়ে যাবে বিয়ে থেকে তা তো হয় না। এটা অসম্ভব।
কিন্তু সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দুইটা ছেলে আর একটা মেয়েকে দেখে হাসি থামালো আবীর। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট ধরালো। সেখানে একটা টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললো —

‘ কে’বে তোরা? এখানে কি মরতে এসেছিস?? যায়গা ছেড়ে দিয়ে কেটে পর ‘

ছেলেটার কথা শুনে মিষ্টির গলা শুকিয়ে গেলো। এর হাবভাব এ পুরো মাস্তান লাগছে। তবে পাশে অভি, সৌমিত্র থাকায় এতোটাও ভয় পেলোনা মিষ্টি। সৌমিত্রর কাছে আবীরের এটিটিউড সেই ইন্টারেস্টিং লাগছে। সে এগিয়ে গেলো আবীরের কাছে, গলায় ঝোলানো চেইনের দিনে তাকিয়ে বললো বললো —

‘ চেইনটা কি স্বর্ণের ভাইয়া?? ‘

সৌমিত্রর এহেন আচরণে স্তব্ধ হয়ে গেলো মিষ্টি আর মিথিলা। এমন ছেলেদের সাথে ঝামেলায় জড়াতে চায় নাকি সৌমিত্র?? মিথিলা ঝটপট এগিয়ে আসলো অভির দিকে। অভি শুধু হাসছে সৌমিত্রর কথায়। সৌমিত্রর কথায় জ্বলে উঠলো আবীর —

‘ মজা করছিস আমার সাথে?? আমাকে চিনিস তোরা?? ইরফান আমার বড়ভাই। এখানে আমার ভাইয়ের কথায় পুরো শহর চলে। ”

বলেই সিগারেটে আরেকটা টান মারলো আবীর। সৌমিত্র ছেলেটার কথায় একবার অভির দিকে তাকালো। সব এলাকার ছোটোখাটো মাস্তান নিজেকে এলাকার ডন ভাববে এটাই স্বাভাবিক। অতঃপর আবার আবীরের দিকে তাকিয়ে নাটকের স্বরে বললো —

‘ প্রচুর ভয় পেয়েছি ভাইয়া। অভি,রে এরা তো মাস্তান। এদের সাথে ঝামেলা পাকাতে আসলাম কেনো ভাই?? ‘

বলেই হাসিতে ফেটে পড়লো সৌমিত্র। অভি এমন এন্টারটেইনমেন্ট ফ্রিতে দেখতে পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছে। এদিকে মিথিলার ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। মিষ্টিরও সেম অবস্থা। মিথিলা ভয়ে ভয়ে সৌমিত্রর দিকে তাকিয়ে বললো—

‘ পাগল হয়ে গেছো নাকি সৌমিত্র। কি করছো এসব?? ‘

রাস্তায় পরে থাকা মেয়েটার অর্ধেক শরীর রাস্তায় আর অর্ধেক মিষ্টির কোলে। তেমন গুরুতর আহত হয়নি। কিন্তু ভয় পেয়ে হয়তো অজ্ঞান হয়ে গেছে। অভি এতোক্ষণ চুপ থাকলেও এবার আর চুপ থাকতে পারলো না। আবীরের দিকে তাকিয়ে বললো —

‘ দেখ ভাই, মেয়েটা তোর কি হয় নাহয়, আমার এতো কিছু জানার সময় নেই। তবে মেয়েটা এখন আমাদের কাছে থাকবে। ঠিক আছে??’ বলেই সৌমিত্রর দিকে ইশারা করে বললো ‘ মেয়েটাকে কোলে নে সৌমিত্র। আশেপাশের হসপিটালে এডমিট করতে হবে। ‘

অভির কথায় ফু্ঁসে উঠলো আবীর চৌধুরী। বললো

‘ মামার বাড়ির আবদার পেয়েছিস নাকি? বেশী বাড়াবাড়ি করলে এখানেই লাশ ফেলে দিবো ‘

সৌমিত্র চোয়াল মুখ শক্ত করে আবীরের মুখ থেকে সিগারেট বের করে মাটিতে ফেলে দিলো। অতঃপর পা দিয়ে পিশে ফেললো সিগারেট। আবীরের পকেট থেকে ফোন বের করে আবীরকে বললো ‘
যেখানে সেখানে সিগারেট খাওয়া নিষেধ বাবু আর এখন তোমার ভাইয়াকে ফোন লাগাও । কথা বলবো ‘

সৌমিত্রর এহেন সাহসে ভয় পেয়ে গেলো আবীর। যেখানে পুরো শহর আমার ভাইয়ের কথায় চলে সেখানে এই ছেলের সাহস দেখে অবাক হওয়া ছাড়া উপায় রইলো না আবীরের। সে নিজের সাহস পুরোদমে জমিয়ে আবার বললো —

‘ আমার সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে ভালো করলি না তোরা। দেখে নিবো তোদের। ‘

সৌমিত্র আরেকটু এগিয়ে গিয়ে আবীরের কানে
ফিসফিসিয়ে বললো –‘ তোর ভাইকে বলবি অভিরাজ এসেছিলো। যম ‘
অতঃপর আবীরের শার্টের কলার ঠিক করে দিতে দিতে বললো ‘ যা এখন ‘

আস্তে আস্তে সেখান থেকে চলে গেলো আবীর চৌধুরী আর তার সাথে থাকা দুই সাঙ্গোপাঙ্গো। এদিকে সৌমিত্রর এমন বিহেবে হতবাক, বিমুঢ়, স্তব্ধ হয়ে গেলো মিষ্টি আর মিথিলা। কথা বলার শক্তি পর্যন্ত যেনো হারিয়ে ফেলেছে দুজন। মৌনতা কাটিয়ে অভি, সৌমিত্রর দিকে তাকিয়ে বললো ‘ ভালোই একটিং করেছিস। এখন মেয়েটাকে কোলে নিয়ে সিএনজিতে তোল। আশেপাশে ভালো হসপিটালে নিতে হবে। আশা করা যায় কোনো গুরুতর আঘাত পায়নি। ‘

মিষ্টির এখনো বিষ্ময় কাটছে না। এমন করলো কেনো দুজন? তাহলে কি অভি ও এমন কোনো মাস্তান ?এতোদিনেও কি অভিকে চিনতে পারিনি৷ আমি? এদিকে সৌমিত্র অভির কথায় দ্বিধায় পরে গেলে। গার্লফ্রেন্ডের সামনে অন্য মেয়েকে কোলে নেওয়াটা নিশ্চই ভালো দেখায় না। সৌমিত্র একটু ভাব মেরে বললো ‘ আমি আমার বউকে ছাড়া কাউকে কোলে নেই না বুঝলি। তুই সিঙ্গেল মানুষ। তুই নে এই লবণের বস্তা। ‘

অভি কথা না বাড়িয়ে চটপট মেয়েটাকে কোলে নিয়ে সিএনজিতে উঠলো। তবে মেয়েটাকে কোলে নেওয়ায় সন্তুষ্ট হতে পারলো না মিষ্টি। সিএনজিতে উঠেই ড্রাইভারকে বললো ‘ মামা, এখন আর জাফলং এর উদ্দেশ্য না রওনা হই। মেয়েটাকে একটা হসপিটালে নিয়ে চলুন আশেপাশের। চিন্তা করবেন না, আপনার পূর্ণ ভাড়া দিয়ে দেবো। ‘

সিএনজি ড্রাইভার হয়তো এতোটা ভালো ব্যাবহার আশা করেনি। কিছুক্ষণ আগে যে ঘটনা দেখলো তাতে অভিকে গুন্ডা মাস্তান ভেবেছিলেন তিনি। অভি ড্রাইভারের মনের অবস্তা বুঝতে পেরে বললো ‘ মামা আমরা গুন্ডা মাস্তান নই। ‘অতঃপর সৌমিত্রর দিকে ইশারা করে বললো ‘ এই ছেলেটা ভালোই অভিনয় জানে। তাই অভিনয় করে ওদের ভাগিয়ে দিলো। সিএনজি ড্রাইভার যেনো কলিজায় পানি ফিরে পেলো। বললো’ আর কইবেন না ভাই। এই এলাকায় এদের ভয়ে রাইতবিরাতে গাড়ি বাইর করিনা। কিন্তু অভাবের তাড়নায় বাইর হইছি। মেলা ভয়ংকর মানুষ এরা। ‘

ড্রাইভারের কথায় ঠোঁট কামরে তাচ্ছিল্লের হাসি হাসলো সৌমিত্র। তারপর ছুটে চললো গাড়ি সিলেটে। ভালো একটা হসপিটালের খোঁজে।

———–

মিষ্টির আকুল আবেদনে রাত ৯ টার দিকেই মামা বাড়ি থেকে যাওয়ার পারমিশন পেয়েছিলো সে। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে মিথ্যা বলতে হয়েছে মিষ্টিকে। বলেছে রাতে সিলেটে থাকবে তারপর সকাল সকাল জাফলং এর উদ্দেশ্যে রওনা হবে। তবুও মিষ্টির মামা নারাজ। এভাবে এত রাতে আত্মীয়কেযেতে দেয়া চলে না। তাও আবার ছেলেমানুষ সবাই। পরে কোনোভাবে ম্যানেজ করে নিয়েছে মিষ্টি।
হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে মেয়েটিকে । ডক্টররা যখন জানালো কোনো বিপদের আশঙ্কা নেই, তখন চিন্তামুক্ত হলো সবাই। বিপত্তি ঘটলো রাতে থাকার জায়গা নিয়ে। হসপিটালে এত মানুষ থাকা যাবেনা কোনো ভাবেই আর এই মহুর্তে কোনো হোটেল পাওয়া যাবে কি’না সন্দেহ।
তখন হঠাৎ একটা লম্বাচওড়া ছেলে এসে বললো ‘আরে অভি ভাই না?? ‘

অভি সম্ভিত ফিরে পেয়ে পিছনে তাকালো। ছেলেটাকে ঠিক চিনতে না পেরে বললো —

‘ আমাকে বলছেন ভাই?? ‘

ছেলেটা বোধহয় অভির কথায় সন্তিষ্ট হতে পারলো না। বললো–

‘ আমি নীরব, ভাইয়া। ভার্সিটিতে একদিন আমাকে থাপ্পড় মারলেন যে। মনে নেই??

থাপ্পডের কথা শুনে পাশে ঘুমে ঢুলতে থাকা সৌমিত্র চমকে উঠলো —

#চলবে -??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here