নীল অপরাজিতা পার্টঃ৮

0
599

#নীল_অপরাজিতা
#পার্টঃ৮
#Rifat_Amin

থাপ্পড়ের কথা শুনে সৌমিত্র চমকে উঠলো। সদ্য চোখে এটে আসা নিদ্রা মহূর্তেই উধাও হয়ে গেলো। পাশেই ঘুমে ঢুলছে মিষ্টি আর মিথিলা। মিষ্টির কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে মাহিন। সৌমিত্র সচকিত হয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে তাকালো৷ সাথে সাথেই মুখে হাসি ফুটলো অভি আর সৌমিত্রর। অভি চেয়ার থেকে উঠে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। ছেলেটার মুখেও যেনো হাসি বাঁধ মানছেনা। আজ কতদিন পর দেখা হলো? ঠিক মনে করতে পারছেনা ছেলেটা।

‘ কেমন আছো নীরব? ‘

নীরব নম্রভাবে উত্তর দিলো —

‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাই। আগে বলেন এত রাতে হাসপাতালে কেন? সাথে সৌমিত্র দাদা’ও দেখছি। ‘

অভি সব ঘটনা সংক্ষেপে বললো নীরবকে। নীরব চিন্তিত স্বরে বললো–

‘ ভাই, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না আমি এক্ষুনি একটা হোটেল ম্যানেজ করে দিচ্ছি। যেখানে সবার থাকা কোনো ব্যাপার না। ‘

অভি কিছুটা চিন্তামুক্ত হলো। সে চাইলেই এতরাতে হোটেল ম্যানেজ করতে পারতো। কিন্তু নিজের সিকিউরিটির জন্য আর যাওয়া হলো না। সব দোষ মিষ্টির। সে যদি বাহাদুরি করে এত রাতে না বের হতো, তাহলে আজ এই দিন দেখতে হতো না। অবশ্য বেড়িয়ে ভালোই হয়েছে। একটা মেয়েকে অন্তত বিপদ থেকে রক্ষা করতে পেরেছি। কিছুক্ষণ পর নীরব কোথা থেকে এসে একটা ঠিকানা হাতে ধরায় অভির।

‘ এই হোটেলে দুইটা রুম বুক করে ফেলেছি। গিয়ে শুধু আমার কথা বললেই হবে। আর এখানকার কোনো চিন্তা করতে হবে না। আমার বড়ভাই চিফ ডক্টর এই হসপিটালের। মেয়েটা অনেক ভালো আছে। আর কাল তো আসবেন’ই। ভাইয়ার সাথে জরূরী কাজে দেখা করতে এসেছিলাম এখানে কাজ শেষে আপনার সাথে দেখা হয়ে ভালোই হলো। যাই হোক, অনেক রাত হয়েছে। চলেন, বড়ভাইয়ের গাড়িটা বাইরে’ই আছে। ওটা দিয়েই পৌঁছে দিচ্ছি আমি। ‘

কৃতজ্ঞতায় অভি কি বলবে বুঝতে পারছে না। শুধু অস্ফুটে স্বরে বললো-

‘ধন্যবাদ। চলো যাওয়া যাক। ‘
____________

গাড়িতে উঠে রিশিতার ফোন চেক করলো অভি। বাড়িতে জানিয়ে দেয়া দরকার। কিন্তু ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে, হয়তো চার্জ নেই নাকি? মিষ্টির দিকে তাকিয়ে অভি বললো–
‘ তোর ব্যাগ থেকে পাওয়ার ব্যাংকটা দে তো। ‘
মিষ্টি নিরুত্তর থেকে ব্যাগ থেকে পাওয়ার ব্যাংক বের করে দিলো। কিছুক্ষণ চার্জ হবার পর ফোন খুললো রিশিতার। মহুর্তেই লক স্ক্রিনে রিশিতার ছবি ভেসে উঠলো। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো পাসওয়ার্ড নিয়ে। তার থেকে সিমটাই খুলে নিলে ভালো হয়। অতঃপর নিজের ফোনে সিম ঢুকিয়ে বাসায় জানিয়ে দিলো অভি। সাথে হাসপাতালের ঠিকানাও দিয়ে দিলো।
হোটেলে পৌঁছে আরেকবার ঘড়ি দেখে নিলো অভি। রাত ২ঃ৫০। নীরবের জন্যই এই যাত্রায় রাতটা ভালোভাবে কেটে যাবে। অভির মনে পড়লো একবছর আগের নীরবকে দেয়া থাপ্পড়টার কথা। নীরব একমাত্র ছেলে যাকে মারার পর সরি বলেছিল অভি। দোষ ছাড়া কারো গায়ে হাত দিতো না সে। কিন্তু একদিন ভুলবসত একজনকে মারতে গিয়ে নীরবকে মেরেছিল অভি। অবশ্য এখন সেই থাপ্পড়ের জন্য কোনো অনুশোচনা হচ্চে না।

———–

‘তুই মেয়েটাকে কোলে নিয়েছিলি কেন?? ওখানে সৌমিত্র ছিলো না। ও’তো নিতে পারতো ‘

ফ্রেস হয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হবে এমন সময় মিষ্টির কন্ঠে থেমে গেলো অভি। দরজার পাশে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। মুখে হালকা রাগের আভা৷ অভি বললো-

‘ মিথিলার সামনে সৌমিত্র ঐ মেয়েকে কোলে নিবে নাকি? আর তুই কে যে তোকে এসব বলবো। ‘

‘ ঢং। ভাবিস না তোর প্রেমে পড়ে গেছি বলে এসব বলছি। আন্টি বলেছিল তোকে দেখে রাখতে। ‘

মিষ্টির কথা শুনে অভি হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারলো না। তোয়ালেটা বিছানার উপর রেখে বললো —

‘ ওলে ওলে ময়না’টা। কত কেয়ার করে আমার। ‘

অভির কথায় ক্ষেপে গেলো মিষ্টি। তোয়ালেটা হাতে নিয়ে মারতে উদ্যত হলো সে। কিন্তু মারলো না। তোয়ালেটা গলায় পেচিয়ে রাগে গজগজ করতে বললো–

‘ আমাকে তুই ময়না বলবি না কখনো। হাদারাম। আমার নাম মিফতাহুল জান্নাত মিষ্টি। ওয়াও! হাউ সুইট নেম। ‘

‘ কতটা সুইট জানা আছে।

অভি আড়চোখে মিষ্টির পুরো শরীর স্কেন করলো একবার। ব্লু জিন্স এর উপর ব্লাক ফুল স্লিভ লেডিস শার্ট, মাথায় হোয়াইট হুডি পড়েছে সে। সুন্দর লাগছে অনেক। দেখে মনে হচ্ছে কোথাও ঘুরতে যাবার প্রস্তুতি।

‘ কি পড়ছিস এগুলা?? মাথা ঠিক আছে তোর??’

মিষ্টি যেনো হতাশ হলো অভির কথায়। কন্ঠে দুঃখী দুঃখী ভাব এনে বললো —

‘ বিয়ে হচ্ছেনা দোস্ত। বিয়ে হলে জামাইর সাথে যেতে পারতাম সাজেক, বান্দরবান, কক্সবাজার। সারা বাংলাদেশ ঘুরতে পারতাম। তুই তো কখনো নিয়েই গেলিনা। তাই এই পোশাক পড়ে নিজেকে শান্তনা দেই যে ট্রে ‘

‘ আমি তোর জামাই লাগি নাকি?? ‘

‘ জামাই না লাগলে লাগতে হবে। একবার জামাই হতে না পারলে বারবার চেষ্টা করতে হবে। ‘

বলেই জিভ কাটলো মিষ্টি। ঝোঁকের মাথায় কি সব উল্টাপাল্টা বললাম ধুর। অভি বললো–

‘ মাথার তার কি লুজ হয়ে গেছে নাকি?? কি সব বলছিস?? ‘

‘ কিছু না। কালকে কখন জাফলং যাচ্ছি বল। ‘

‘ কাল সকালেই যাবে ভাবছি। মেয়েটার বাবা-মা কে বলে দেয়া হয়েছে। ওরা একটু পর হসপিটালে আসবে৷ আর নীরব তো ওখানে আছেই। জ্ঞান ও ফিরেছে শুনলাম। ‘

‘ ওহ আচ্ছা। ‘

বলেই অভির বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়লো মিষ্টি। অভি ফিরে তাকিয়ে আবার বললো–

‘ সৌমিত্রকে দেখছি না যে?? ‘

‘ ওরা দুজন খাচ্ছে আর গল্প করছে। তাই ভাবলাম তোর এখানে আসি। আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলবি?? ‘

অভি একবার মিষ্টির দিকে তাকালো। সে কি জানতে চায় অভি তা জানে। কিন্তু কি উত্তর দেয়া যায় সেটাই ভাবছে অভি।

‘তোরা তলে তলে মাফিয়া টাফিয়া না তো??’

অভি ভেবেই রেখেছিস প্রশ্ন করার সাথে সাথেই একটা হাসি দিবে। কারণ সিরিয়াস মহুর্তে হাসলে প্রশ্ন কর্তা বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। সেটাই প্লে করলো অভি। মিষ্টি জিজ্ঞেস করলো —

‘ হাসছিস কেন?? ‘

‘ হাসির মতো প্রশ্ন করলে হাসবো না?? আমরা আর মাফিয়া?? হাহাহা। আমরা শুধু ভার্সিটিতেই হিরো। বুঝলি।’

‘ তাহলে রাস্তায় ওসব কি করলি?? আমি কিছু বুঝিনা ভেবেছিস?? ‘

‘ ধুর ওসব বাদ দে। খাওয়া দাওয়া হয়ে থাকলে ঘুমাতে যা। তোর বাহাদুরির কারণে জাফলং ট্যুর টাই কেমন জানি ফ্যাকাসে হচ্ছে। পদে পদেই ঝামেলা। ‘

‘ ওহহহ। এখন তো সব আমার দোষ হবে। নিজের দোষ তো আর দেখিস না। ‘

‘ আমি আবার কি দোষ করলাম, আজব তো। রুম থেকে এখন বের হ প্লিজ। আমার খিদা লাগছে। খেয়ে ঘুমাবো। ‘

মিষ্টি সুযোগ পেয়ে গেলো ডিস্টার্ব করার। সে শোয়া থেকে উঠে বসে অভির দিকে তাকালো —

‘ আমারো খিদা লাগছে। ভালোই হলো। দে এখন খাইয়ে দে। ‘

অভি মুচকি হাসলো। পকেট থেকে ফোন বের করে বললো –

‘ মা’কে জিজ্ঞেস কর এজীবনে কাউকে খাইয়ে দিছি কিনা?? তবে শুধু মা’য়ের হাতেই খাইছি। আর বিয়ের পর বউয়ের হাতে খাবো। ‘

বলেই চোখ টিপলো অভি। মিষ্টি অভির দিকে এতক্ষণ তাকিয়ে ছিলো। চোখ টেপার পর মহুর্তেই চোখ সড়িয়ে নিলো সে। অভি নিজেও বিছানায় বসে বললো–

‘ তার থেকে একটা কাজ করলে তোর সুবিধা হয়। বিরিয়ানির প্যাকেটটা খুলে নিজে খা। আমাকেও খাইয়ে দে। বিয়ের পর তোর কাজে লাগবে। ধন্যবাদ দিতে হবে না। ‘

‘ আমি কখনই তোকে খাইয়ে দিবো না। তোর মতো গাধাকে খাইয়ে দেয়ার থেকে উগান্ডা যাওয়া ভালো। ‘

‘ না দিলে নাই। যা এখান থেকে। শান্তিমত খাইতে দে।’

মিষ্টির এই মহুর্তে একদম রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে ইছা করছে না। যতক্ষণ না সৌমিত্র আসছে, ততক্ষণ এখানেই থাকবো। একদম যাওয়া চলবে না। মিষ্টিকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে অভি আবার বললো —

‘ কি’রে যাচ্ছিস না কেনো? তার থেকে এখন হাসপাতালে যে মেয়েটা আছে , ওর হাতে খেয়ে নিবো পরে । ‘

মিষ্টির এই মহুর্তে অভিকে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারতে ইচ্ছা করছে। কিছুক্ষণ নীরবে রাগ কনট্রোল করে বিরিয়ানির প্যাকেট টা খুললো সে। টি টেবিলে প্লেট, গ্লাস, সব সুসজ্জিত ভাবে সাজানো। জগ ভর্তি পানির ব্যাবস্থাও আছে। মিষ্টি একটা প্লেটে বিরিয়ানি নিয়ে অভির সামনে ধরলো। মিষ্টির এহেন কান্ঠে হতবাক হয়ে গেলো অভি। সে ভেবেছিল, আর যাই হোক, মিষ্টি কখনো খাইয়ে দিবে না।
অভি বিষ্ময়স্বরে বললো–

‘ সত্যি সত্যি খাওয়াবি?? ‘

‘ না। গিলাবো তোরে। ‘

‘ বেঁচে থাক দোস্ত। দাঁড়া আমি গেমে ঢুকি। গেম খেলবো আর খাবো। আচ্ছা, এইটা নিয়ে একটা ব্লগ বানালে কেমন হয় বলতো?? ‘

‘ তোর মাথা হয়। ‘

আকস্মিক সেখানে সৌমিত্র এসে উপস্থিত হলো। রুমে প্রবেশের পূর্বে যেমন অনুমতি নেয়া প্রয়োজন পড়ে সেভাবেই হালকা কাশি দিলো সে। চমকে উঠলো অভি আর মিষ্টি। সৌমিত্র ঝাঁপিয়ে পড়লো বিছানায়। অভির কানের কাছে গিয়ে বললো —

‘ টেম্পু চালাবি নাকি দোস্ত? ‘

চলবে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here