পারমিতা” পর্ব-১৫

0
1759

#পারমিতা
পর্ব ১৫
_নীলাভ্র জহির

রোদ লিখেছে-
তুমি সাধারণ হয়েও অনন্য, তুমি হাজারও নক্ষত্রের মাঝে জ্বলজ্বল করতে থাকা সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটি। তুমি আমার মনের আকাশে একমাত্র চাঁদ। তোমার আলোয় আমার ভুবন আলোকিত করো হে।

লেখাটা দেখে পারমিতার বুক ধকধক করছে। ওর কেন যেন মনে হচ্ছে এই লেখাটা রোদ ওকেই উদ্দেশ্য করে লিখেছে। কিন্তু এটা নাও হতে পারে। সে তো অনন্যা নয়। সে অতি সাধারণ। তবে রোদ লিখেছেন, তুমি সাধারণ হয়েও অনন্য। হার্টবিট বাড়ছে পারমিতার। রোদের টাইমলাইন স্ক্রল করতে করতে অন্য আরেকটা পোস্ট ওর চোখে পড়ল। পোস্ট যেদিন করেছে সেদিন ছিল ওর জন্মদিন।
“আমি জানিনা অজান্তেই কেন মানুষকে কষ্ট দিয়ে ফেলি। কোমল একটা মনের মানুষকে আজ দুঃখ দিয়েছি। অকারণে দেয়া দুঃখ। এই দুঃখ আমি দিতে চাইনি। আমি তো চেয়েছিলাম দিতে প্রেম, প্রেমের সুখ। কিন্তু দুঃখ দিয়ে ফেলেছি।আমাকে ক্ষমা করো নন্দিনী।”

পোস্টের কমেন্টে একজন লিখেছে, দুঃখ করোনা প্রিয়। নন্দিনীকে বুঝিয়ে বলো।
রোদ সেখানে রিপ্লাই করেছে, নন্দিনী আমাকে সবসময় দূরে সরিয়ে রাখে। তাকে বোঝাবার সাধ্য আমার নেই।

পারমিতা এবার নিশ্চিত রোদ তাকেই উদ্দেশ্য করে পোস্ট গুলো দিয়েছে। কারণ জন্মদিনের দিন পারমিতাকেই কষ্ট দিয়েছে সে। আর পারমিতারকাছেই ক্ষমা চেয়েছে। এই দুটো পোস্ট পারমিতার হৃদয়ে নাড়া দিয়ে গেল। রোদ কি তাকে ভালবাসে? নাকি এটা শুধুই আবেগ? তার উচিৎ বিষয়টা ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখা। নানান এলোমেলো ভাবনায় বুঁদ হয়ে রইল পারমিতা।

সকাল থেকেই ওর টেনশন হচ্ছে একটা কাজের মেয়ের জন্য। এ শহরে ওর তেমন পরিচিত কেউ নেই। একটা মেয়েকে কোথায় পাবে ও?
অফিসের একজন কলিগকে বলে রাখল তার পরিচিত কেউ থাকলে যেন পারমিতাকে জানায়। একদিন পরেই সামান্তা চলে যাবে। তখন প্রীতুলকে নিয়ে অফিস করাটাই দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে ওর জন্য।
হঠাৎ রোদের আগমন ওর ডেস্কে। কি ব্যাপার আপনাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে?
– না, তেমন কিছু না।
– আরে বলুন না। কোনো সমস্যা?
– না। আই এম ফাইন।

রোদ ভ্রু কুঁচকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইল। তারপর চলে গেল সেখান থেকে। পারমিতা মনেমনে ভাবল, রোদকে কি একবার বলে দেখবো কথাটা? না থাক। রোদ আমার কেউ না। ওকে মিছেমিছি বিরক্ত করার দরকার নেই।

মাথাটা বড্ড ধরেছে। কাজে মন দিতে পারছে না ও। এমন সময় মাহতাব স্যার এসে বললেন, এনি প্রবলেম মিস পারমিতা?
– না স্যার। মাথাটা ধরেছে একটু।
– শরীর খারাপ লাগলে আপনি বাসায় চলে যান।
– না না স্যার, ইটস ওকে।
– চিন্তা করবেন না। আমাদের প্রজেক্টে যারা আছে, তাদের ছুটি নিয়ে প্রবলেম হবে না। আমি সামলে নেবো। আপনি বাসায় যেতে পারেন। আর হ্যাঁ, আগামীকাল আপনাকে আরেকটা ফ্যাক্টরিতে যেতে হবে। আমি বিস্তারিত ফাইল দিয়ে যাচ্ছি।

পারমিতা অবাক চোখে অনেক্ষণ মাহতাবের দিকে তাকিয়ে রইল। মাহতাব স্যার বললেন, যান বাসায় গিয়ে রেস্ট করুন। আগামী কালকের জন্য প্রস্তত হোন।
– এপ্লিকেশন দেবো স্যার?
– নো নিড।

পারমিতার জন্য ভালোই হল। বাসায় গিয়ে একটা ফ্রেশ ঘুম দেবে ও। এত অশান্তি লাগছে ভেতরে। হাতে মাত্র একটা দিন। কীভাবে একটা কাজের মেয়ে জোগাড় করবে ও?
দ্রুত বাসায় ফিরে গোসল করে ভাত খেয়ে শুয়ে পড়ল পারমিতা। আকাশে মেঘ করেছে। যেকোনো মুহুর্তে বৃষ্টি নামতে পারে। প্রীতুল ঘুমাতে দিচ্ছে না। গল্প শোনার বায়না করছে। পারমিতা গল্প শোনাতে গিয়ে বেশ কয়েকবার ঘুমে চোখ ব্বন্ধ হয়ে আসছিল। প্রীতুল আবারও ধাক্কা দিয়ে বলল, মা গল্প বলো
– এইতো বাবা। বলছি।
সামান্তা পারমিতাকে দেখেই বাসা থেকে বেরিয়েছে। পার্লারে যাবে, শপিংয়ে যাবে। সামান্তাকে এখন কিছুটা ছুটি দেয়া দরকার। মেয়েটা ওর জন্য অনেক করেছে। এই বিশেষ দিনে সামান্তার কাজে লাগতে না পারলে আজীবন এর দায় বয়ে বেড়াতে হবে।

পারমিতা ওর এক বান্ধবীকে ফোন করে জানালো বিষয়টা। মেয়েটা ওকে আশ্বস্ত করে বলল, আমি অবশ্যই খোঁজ নেবো।
পারমিতা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। প্রীতুল বিছানায় বসে খেলছে। বেশ কয়েকবার মাকে ধাক্কা দিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে দিলো প্রীতুল। পারমিতার আজকে রাগ হচ্ছিল। বাচ্চাটা যেন তার একার। ওকে নিয়ে এত দুশ্চিন্তা, এত কষ্ট পোহাতে হচ্ছে ওকে। তার বাবা তো ডিভোর্স দিয়েই শান্তিতে আছে। আর কোনো টেনশন নেই। সব দুশ্চিন্তা, সব দায় শুধু পারমিতার।

পারমিতাকে কাঁদতে দেখে প্রীতুল আর বিরক্ত করল না। হা করে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল প্রীতুল। পারমিতা ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম ভাংল সন্ধ্যাবেলা। প্রীতুল ঘরের মেঝেতে বসে খেলছে। পারমিতা প্রীতুলকে ডেকে কাছে বসালো। বুকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু খেয়ে বলল, এতক্ষণ কি করছিল আমার বাবাটা?
– খেলছিলাম।
– আমার লক্ষী আব্বু। খিদে লেগেছে?
– হ্যাঁ। আমি চিপস খাবো।
– চিপস খেকে তো পেট ভরবে না আব্বু।
– তাও খাবো।

পারমিতা মুখ ধুয়ে এসে প্রীতুলকে নিয়ে বাইরে বের হলো। বাসার নিচের দোকান থেকে চিপস ও বিস্কুট কিনে দিলো ছেলেকে। কিছুক্ষণ রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করতে লাগল মা ও ছেলে। হঠাৎ একটা দৃশ্যে পারমিতার চোখ আটকে যায়। একটা লোক বাচ্চা ছেলেকে নিয়ে খেলা করছে। ছেলেকে ছোট্ট সাইকেলে চড়িয়ে চালানো শেখাচ্ছে উনি। প্রীতুল বলল, আম্মু আমাকেও ওরকম একটা সাইকেল কিনে দাও। দিবা?
– হ্যাঁ বাবা দেবো। হাতে টাকা আসলেই একটা সাইকেল কিনে দেবো।
– আম্মু তুমি আমাকে চালাইতে শেখাবা?
– হ্যাঁ শেখাবো।

প্রীতুল পারমিতার হাত ধরে দাঁড়িয়ে রইল। একদৃষ্টে চেয়ে দেখল ছেলেটার সাইকেল চালানো শেখার দৃশ্যের দিকে। অনেক্ষণ পর বলল, আম্মু জানো ওই লোকটা ছেলেটার কি হয়?
– কি হয়?
– আব্বু। ওর আব্বু ওকে সাইকেল চালানো শেখাচ্ছে। আমার আব্বু নেই কেন?
পারমিতা চমকে উঠল। এরকম প্রশ্ন কখনো করেনি প্রীতুল। স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়ার পর প্রীতুলের মধ্যে অনেক কিছু বোঝার ক্ষমতা চলে এসেছে। তারচেয়ে বড় কথা, ছেলেটা বড় হচ্ছে। তাই এখন অনেক কিছুই বোঝে। কিন্তু এই প্রশ্নের জবাব কিভাবে দেবে ও?

পারমিতার চোখ ফেটে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। দ্রুত প্রীতুলকে নিয়ে বাসায় ফিরল ও। প্রীতুল বসে চিপ্স খাচ্ছে। ঘরে ঢুকে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল পারমিতা। আর কতদিন এই যুদ্ধ? ছেলে বড় হলে প্রতি মুহুর্ত বাবার আদর মিস করবে। সবার বাবা আছে, ওর বাবা নেই। কি জবাব দেবে ও ছেলেকে?
রাতে সামান্তা বাসায় ফিরলে প্রীতুল সামান্তার কোলে উঠে বলল, খালামনি একটা কথা বলি?
– হ্যাঁ বাবা বলো।
– আমার আব্বু নেই কেন?

সামান্তা পারমিতার দিকে তাকালো। চোখ বড় বড় হয়ে গেছে ওর। কিন্তু তৎক্ষনাৎ বুদ্ধি খাটিয়ে উত্তর দিলো, তোমার আব্বু একটা জায়গায় গেছে। কাজ করতে। তোমার জন্য অনেক খেলনা আনবে, অনেক খাবার আনবে। তুমি যা যা চাও সব আনবে। সেজন্য কাজ করতে গেছে।
– আমাকে একটা সাইকেল কেনে দেবে?
– হ্যাঁ।
– আমাকে গাড়ি কিনে দেবে? রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি? ইয়া বড়?
– হ্যাঁ স্পনা, দেবে।

প্রীতুল সামান্তার কোল থেকে নেমে গেল। পারমিতার মোবাইল নিয়ে এসে ইউটিউবে ঢুকে বলল, দাঁড়াও গাড়িটা দেখাচ্ছি।
পারমিতা বলল, তুই ওকে ইউটিউব দেখিয়েছিস?
– আমি তো কার্টুন বের করে দেই ইউটিউবে।
– ছেলেটা পেকে যাচ্ছে কিন্তু সামান্তা।
– সব বাচ্চারাই এখন কার্টুন দেখে।
– কার্টুন দেখার অভ্যাস ভালো না। আর কখনো ওকে ইউটিউব দেখাবি না। ফোনও দিবি না।
প্রীতুলের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে গেল পারমিতা। কাঁদতে শুরু করল প্রীতুল। সামান্তা ওকে অনেক কিছু বুঝিয়ে কান্না থামাতে হল।

পরদিন একটা ফ্যাক্টরিতে গিয়ে কাজ শেষ করে সোজা বাসায় ফিরল পারমিতা। আজকে অফিসে যেতে ইচ্ছে করছে না। কাজের রিপোর্ট আগামীকাল জমা দেবে। বাসায় ফিরে বিশ্রাম নিয়ে একবার ওর বান্ধবীকে কল করলো ও। সামান্তা আজকেও বাইরে গেছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার। চলে যাবে সামান্তা। এরমধ্যে একটা কাজের বুয়া না পেলে সামান্তা যাবে না। দুশ্চিন্তায় কিছু ভালো লাগছে না। নয়তো প্রীতুলকে সঙ্গে নিয়েই অফিসে যেতে হবে ওর।

রাত বাড়ছে। সকালে অফিসে যাওয়ার সময় সামান্তাকে কি জবাব দেবে সেই চিন্তা করতে করতে পাগল হয়ে যাচ্ছিল পারমিতা। মনেমনে প্রার্থনা করতে লাগল যেন একটা সমাধান পেয়ে যায়। প্রার্থনা কবুল হয়েছে ওর।
কিছুক্ষণ পর কল এলো ওর বান্ধবীর নাম্বার থেকে। পারমিতা রিসিভ করে বলল, কাউকে পেয়েছিস?
– শোন, তুই একটা কাজ কর। যেহেতু পরিচিত মেয়ে পাওয়া যাচ্ছে না। তুই বাবুকে ডে কেয়ারে রেখে যেতে পারিস।
– সেটা আবার কি?
– আমি তোকে ঠিকানা দিচ্ছি। সকালে একবার বাবুকে নিয়ে ওখানে যা। খুব সুন্দর পরিবেশ৷ ওখানে তিনজন মহিলা বাচ্চাদের দেখাশোনা করে। খেলনা আছে, ভালো ভালো ব্যাপার আছে সময় কাটানোর মতো। আই থিংক, তোর বাচ্চা ওখানে থাকতে পারবে।

পারমিফা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো। তিনদিন পর টেনশন ফ্রি একটা ঘুম হলো ওর। পরেরদিন সকালে সামান্তাকে পারমিতা বলল, তোর সব গোছানো হয়ে গেছে?
– হ্যাঁ। কিন্তু তোর মেয়েটা তো এলো না।
– ও শনিবারে আসবে।
– তাহলে আমি আগামীকাল যাই। আজকে প্রীতুল কার কাছে থাকবে?

পারমিতা হেসে বলল, আজ ওকে অফিসে নিয়ে যাবো।
– সত্যি! তুই তো কখনো প্রীতুলকে অফিসে নিয়ে যাস নি।
– আজ আমার এক জায়গায় কাজ আছে। ওখানে নিয়ে যাবো। অফিসে না। প্রয়োজন হলে অফিসেও নিয়ে যাবে। ছেলে আমার বড় হয়েছে। আর চিন্তা নেই।

পারমিতার ফ্রেশ মুড দেখে সামান্তা চিন্তামুক্ত হল। সামান্তাকে বিদায় দিতে অনেক কষ্টই হচ্ছিল পারমিতার। সামান্তা বলল, আমি এর ফাঁকে প্রায়ই আসবো। বিয়ের আগ পর্যন্ত যে কয়দিন আসতে পারি।
– তুই ভালো করে বিয়েটা কর। অনেক করেছিস আমার জন্য।
দুই বান্ধবী একে অপরকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদল। বিদায়ের মুহুর্ত যেন জগতের সবচেয়ে দুঃসহ কঠিন মুহুর্ত হয়ে উঠল। সামান্তা দুপুরে রওনা দেবে বাড়ির উদ্দেশ্যে। রাতে পৌঁছে যাবে। পারমিতা প্রীতুলকে সঙ্গে নিয়ে বান্ধবীর দেয়া ঠিকানায় চলে এলো।
পরিবেশটা সত্যিই ভালো লাগল ওর। যদিও অপরিচিত একটা জায়গায় প্রীতুলকে রেখে যেতে মন সায় দিচ্ছিল না। প্রীতুল থাকবে কিনা সেই টেনশন তো আছেই। অন্যদিকে আজকে বাসায় ফিরে আর সামান্তার সঙ্গে দেখা হবেনা, ভাবতেই পারছে না পারমিতা। প্রীতুলকে অনেক খেলনা দিয়ে, অনেক কিছু বুঝিয়ে পারমিতা বের হল অফিসের জন্য।

অনেক কষ্ট বুকে নিয়ে আজকে অফিসে প্রবেশ করল পারমিতা। চোখের কোণে এখনো লেপ্টে আছে কান্নার ছাপ। তীব্র মন খারাপ ওর। কিন্তু অফিসে প্রবেশ করেই একের পর এক চমক অপেক্ষা করছিল ওর জন্য।
কলিগ’রা একে একে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে ওকে। কেউ আবার ফুল নিয়ে এগিয়ে আসছে। কেউ এনে দিচ্ছে কলম গিফট। কেউ আবার হাসিমুখে বলছে, শুভ জন্মদিন।
আজ পারমিতার জন্মদিন সেটা নিজেই ভুলে গিয়েছিল। কিন্তু অফিসের সবাই কি করে ওর জন্মদিনের কথা জানলো? সবাই এখন ট্রিট চাইছে ওর কাছে। পকেটে যে টাকা আছে, তাতে তো ট্রিট দেয়া সম্ভব না। লজ্জায় পড়ে গেল পারমিতা। ডেস্কে বসে চিন্তিত হয়ে পড়ল। যদিও ট্রিট আরেকদিন দেবে বললেও চলে। কিন্তু তারপরও ওর মন ভেঙে যাচ্ছে। সবাই ওকে এভাবে সারপ্রাইজ করে দিলো আর ও কারও জন্য কিছুই করতে পারবে না। সবাইকে চকোলেট খাওয়ানোর বয়স টা তো এখন নেই। ভালো কিছু ট্রিট দিতে হবে।

পারমিতা কাজ শুরু করল। সবার সঙ্গে হাসিমুখেই ডিল করল ও। কাজের ফাঁকে একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটল। রীতিমতো আশ্চর্যজনক! তখন বেলা বারোটা বাজে। পিয়ন একটা ট্রলিতে করে খাবারের প্যাকেট নিয়ে সবার ডেস্কে পৌঁছে দিচ্ছে। পারমিতা বুঝতে পারছিল না আজকে অফিসে কিসের খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। উৎসুক হয়ে রইল ও।
সবাই পারমিতার দিকে তাকিয়ে ধন্যবাদ দিচ্ছিল। কিছুই বুঝতে পারছে না ও। যখন পিয়ন পারমিতার টেবিলে এসে বলল, এটা আপনার জন্য। স্পেশাল।
পারমিতার আর বুঝতে বাকি রইল না এটা কিসের জন্য। বিরিয়ানির প্যাকেট দেয়া হয়েছে সবাইকে। তাও আবার ভালো একটা রেস্টুরেন্টের বিরিয়ানি। লাঞ্চের আগে সবার ডেস্কে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। পারমিতার জন্মদিনেএ ট্রিট হিসেবে। সবাই ভীষণ সারপ্রাইজড হয়েছে। এরকম ট্রিট হুট করে পাওয়াটা সত্যিই আনন্দের। কিন্তু পারমিতা বিস্ময় আঁটকাতে পারছে না। সবাই তার জন্মদিনেএ কথা জানলো কিভাবে, আর ট্রিট টাই বা দিলো কে?
রোদ!
রোদ ছাড়া এই পাগলামি আর কারোই না। বিস্ময়ে, লজ্জায়, আবেগে পারমিতা কি করবে বুঝতে পারল না। পিয়ন বলল, ম্যাডাম আপনার খাবারের জন্য থ্যাংক ইউ।
সবাই এভাবে ধন্যবাদ দিয়েছে ওকে। কিন্তু সে তো এসবের কিছুই জানে না। তবে!

পারমিতা রোদের চেম্বারে চলে এলো। দরজায় দাঁড়িয়ে বলল, মে আই কাম ইন?
রোদ ল্যাপটপে কাজ করছিল। মুখ তুলে বলল, ইয়েস। আসুন।
রোদের মুখে হাসির ঝিলিক। পারমিতা বলল, আপনি এসব কি করছেন?
– কি করলাম আবার?
– সবাইকে বলেছেন আজকে আমার জন্মদিন। আবার ট্রিটও দিয়েছেন আমার নামে। কেন?
রোদ অবাক হওয়ার ভান করে বলল, আজকে আপনার জন্মদিন বুঝি!
– জানেন না? মজা করছেন?
– জানি না তো।
– আমি ভালো করেই জানি এটা আপনার কাজ।
– জানেনই যখন, চুপ থাকুন।
– কেন?
– অফিস থেকে তারাতাড়ি বের হওয়া যাবে? বাড্ডে গার্ল। একটা ট্রিট দিতে হবে।
– আর কত পাগলামো করবেন আপনি?

রোদ হাসল। মুচকি হেসে বলল, উফফ থামুন তো। আপনি লাঞ্চ করে কাজ শেষ করুন। বিকেলেই বের হবেন অফিস থেকে। বের হয়ে আমাকে ফোন দেবেন। আমি বাইরে অপেক্ষা করবো। এখন যান।

পারমিতা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
রোদ বলল, যান তো। যা বলেছি মনে থাকে যেন।

ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে লাগল রোদ। এমন একটা ভাব করতে লাগল যেন কিছুই ঘটেনি। পারমিতা অবাক হয়ে রোদের দিকে তাকিয়ে রইল। লোকটা এমন কেন!

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here