#পারমিতা
পর্ব ১৬
_নীলাভ্র জহির
অফিস শেষে পারমিতা রোদের সঙ্গে দেখা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই ছুটি পর্যন্ত কাজ করবে ভাবছে। কিন্তু মাহতাব এসে জানালেন, পারমিতার ছুটি মঞ্জুর হয়ে গেছে। এখনই তাকে বাসায় চলে যেতে।
পারমিতা ঠিক কি করবে বুঝে উঠতে পারল না। ও ভেবেছিল ছুটির পর গেটের সামনে থেকেই একটা রিকশায় উঠে পড়বে। রোদকে ফোন করে এসব পাগলামির কারণ জিজ্ঞেস করা যাবে। কিন্তু এইমুহুর্তে রোদের সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাতের কোনো ইচ্ছেই নেই ওর। যদিও এতসব সারপ্রাইজ পারমিতা আশা করেনি। কিন্তু এসব করেছে যে মানুষটা, তার সঙ্গে দেখা না করে চলে যাওয়াটা নিতান্তই অকৃতজ্ঞতা ও অভদ্রতা। পারমিতা চিন্তায় পড়ে গেল। মাহতাব স্যার বললেন, শুনলাম অফিসের সব কলিগকে ট্রিট দিয়েছেন। আমাকে তো দিলেন না। এনিওয়ে, ট্রিটটা কিন্তু পাওয়া রইলো। এখন বাড়ি যান। আনন্দ করুন। বার্থডে সেলিব্রেট করুন।
পারমিতা অবাক চোখে স্যারের দিকে তাকিয়ে রইলো। মাহতাব স্যার খানিকটা ঝুকে এসে বললেন, আরে এত দ্বিধাদন্দ্বে ভুগছেন কেন? এনজয় ইয়োর লাইফ।
স্যার চলে গেলেও ওনার বলা কথাটা পারমিতার কানে বাজতে লাগল। এখন বাজে তিনটা বিশ। অফিস ছুটি হতে অনেক সময় বাকি। নিশ্চয়ই রোদ বাইরে অপেক্ষা করছে। ওকে একটা ফোন করতে বলেছিল। পারমিতা কি ওকে ফোন করবে নাকি করবে না?
কথাটা ভাবতেই হঠাৎ ওর মনে পড়ল, আচ্ছা মাহতাব স্যার আজকে কোনো কারণ ছাড়াই ছুটি দিলেন কেন? উনি তো জানেনও না আমার জন্মদিন আজ। ট্রিটের ব্যাপারটা নাহয় জেনে গেছেন। কিন্তু আমার জন্মদিন বলেই আমাকে নিজ দায়িত্বে ছুটি দিতে হবে কেন? কই এর আগেও তো দু একজনের জন্মদিন পার হয়েছে। কাউকে তো নিজ দায়িত্বে অফিসের কেউ ছুটি দিয়েছে বলে মনে পড়ে না। নাকি এখানে রোদের হাত আছে? রোদ কি মাহতাব স্যারকে ছুটি দিতে বলেছেন? সবকিছু এলোমেলো লাগছে পারমিতার।
রোদের সঙ্গে আজকে দেখা করতেই হবে। তাকে অনেক কিছু জিজ্ঞের করার আছে। তার এসব পাগলামির কারণ জিজ্ঞেস করতে হবে। যদি সত্যিই সেই মাহতাব স্যারকে ছুটির ব্যাপারে বলে থাকেন, তাহলে ধরে নিতে হবে পারমিতার এই প্রজেক্টে কাজের জন্য রোদই মাহতাব স্যারকে বলেছে। সবকিছু পরিষ্কার করতেই হবে আজ। পারমিতা আর কোনোকিছু না ভেবেই রোদকে কল দিলো। জানালো, সে অফিসের সামনে অপেক্ষা করবে।
পারমিতা অফিস থেকে বের হয়ে রোদকে কোথাও দেখতে পেলো না। কয়েকবার এপাশ ওপাশ তাকিয়ে ও আবারও কল দিলো রোদের নাম্বারে। এমন সময় একটা গাড়ি এসে পারমিতার সামনে থামলো। ভেতরে কে আছে দেখা যাচ্ছে না। কালো রঙের কাঁচে ঢাকা। ড্রাইভার নিজে এসে দরজা খুলে দিয়ে পারমিতাকে গাড়িতে উঠতে বললো।
পারমিতা জিজ্ঞেস করল, এটা কার গাড়ি?
– রোদ স্যারের। স্যার আপনাকে উঠতে বলেছেন।
গাড়ির ভেতরে কেউ নেই। পারমিতা উঠে বসল। রোদকে বিশ্বাস করে সে। কিন্তু আজকাল ওনার পাগলামি গুলো বড্ড বেড়ে গিয়েছে। এসবের কোনো মানেই হয় না।
গাড়ির এসি বাড়িয়ে দিলো ড্রাইভার। পারমিতা রোদকে ফোন করবে কিনা ভাবছে। তাকে নেবার জন্য রোদ গাড়ি পাঠিয়েছে যখন, তাকে আর ফোন করার প্রয়োজন নেই। পারমিতা সবসময় রোদকে এভোয়েড করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
কয়েক মিনিট সময় লাগল একটা রেস্টুরেন্টে পৌঁছাতে। ড্রাইভার গাড়ির দরজা খুলে দিলো। পারমিতা গাড়ি থেকে নামতেই দেখল রোদ দাঁড়িয়ে। হাসিমুখে পারমিতাকে বলল, আসুন।
হাসিমুখে অভ্যর্থনা। রোদের পরনে একটা নীল রঙের স্যুট টাই। অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে ওকে। সদ্য গোসল সেরে এসেছে মনে হচ্ছে। দারুণ ফ্রেশ ও তরতাজা লাগছে। পারমিতা এক পলক দেখেই চোখ নামিয়ে ফেলল৷ নিজের দিকে তাকালো ও। আজকে সকাল থেকে ওর মন ভয়ংকর খারাপ ছিল। সাধারণ একটা থ্রিপিস আর ফ্ল্যাট জুতা পরেছে ও। হাতে ঘড়িও দেয়নি আজ। প্রীতুলকে তৈরি করে ডে কেয়ারে যেতে হবে, সেখানে আদৌ প্রীতুলকে রাখতে পারবে কিনা, না পারলে অফিসে চলে যেতে হবে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে, এসব ভাবনায় ও আজকে এতটাই টেনশনে ছিল যে, মুখ ধুয়ে মুখে ক্রিমও লাগায় নি। অন্যান্য দিন হালকা ক্রিম বা পাউডার লাগায়। আজকে নিশ্চয়ই মুখ ঘেমে-নেয়ে একদম অসহায় অসহায় দেখাচ্ছে ওকে। নিজের জন্য করুণা হচ্ছে ওর। রোদের জামাকাপড় আর এই দামী রেস্তোরাঁ, সবকিছু যেন ওকে উপহাস করছে। কান্না পাচ্ছে পারমিতার।
রোদ রেস্তোরাঁর ভেতরে একটা বেশ সুন্দরমতো জায়গায় ওকে নিয়ে এলো। বড় বড় দুটো সোফা মুখোমুখি। একদিকে টেবিল ও আরামদায়ক বসার চেয়ার। আশেপাশে সুন্দর লাইটিং, গাছের টব আর বিরেশী শোপিস। আর কোনো চেয়ার নেই এ জায়গায়। অনেক দূরে আবার একইরকম দুটো সোফা ও চেয়ার। প্রাইভেট স্পেস হয়তো। নিশ্চয় এখানে খেতেও অনেক পয়সা লাগে। তাকে এতটা সম্মানিত কেন করছে রোদ, বুঝতে পারছে না পারমিতা।
রোদ বলল, বসুন প্লিজ।
সোফায় মুখোমুখি বসলো ওরা। পারমিতা একটা নিশ্বাস ফেলল। আজকে ওকে দৃঢ় হতে হবে। আবেগ প্রবণ হয়ে কিছু করা যাবে না। রোদকে কঠিন কিছু কথা বলতে হবে ওর।
পারমিতা কিছু বলার আগেই ওদের সামনে খাবার চলে এলো। পারমিতা অবাক হয়ে গেল ভীষণ। ইয়াম্মি দেখতে দুটো ডেজার্ট, দু ধরনের ড্রিংকস ও একটা অচেনা খাবার।
রোদ বলল, লাঞ্চে কি খেয়েছেন?
পারমিতা চোখ ওপরে তুলে একপলক রোদকে দেখল। লাঞ্চের জন্য রোদ বিরিয়ানি পাঠিয়েছিল ওর টেবিলে। পারমিতা খায়নি। রোদের ওপর রাগ করেই খায়নি ও। বিরিয়ানিটা অফিসের দাড়োয়ানকে দিয়ে দিয়েছে। দাড়োয়ান অনেক খুশি হয়েছে। তখন ওর মনে হয়েছিল, বিরিয়ানি খেয়েও হয়তো এতটা আনন্দ পেতো না ও। রোদের ওপর রাগ করে থাকতে পারেনি আর। কিন্তু এখন রাগ হচ্ছে। বিরিয়ানি পাঠিয়ে আবার জানতে চাওয়ার মানে হয়?
পারমিতাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রোদ বলল, ওকে। বলতে হবে না। মুখ দেখে মনে হচ্ছে কিছুই খাওয়া হয়নি। কেউ না খেয়ে থাকলে আমি বুঝতে পারি। খালি পেটে সুইট না খাওয়াই ভালো। আগে এটা নিন।
রোদ নিজের হাতে পারমিতার দিকে একটা প্লেট তুলে ধরলো। কিছু না বলে প্লেট তুলে নিলো পারমিতা। ওকে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে।
পারমিতা বলল, এসব কেন করছেন?
– করতে ভালো লাগছে বলে। আপনি চান না আমার ভালো লাগুক?
– আপনার ভাল লাগা বা না লাগায় আমার কিছুই যায় আসে না। আমি শুধু বলতে চাইছি, আমার জন্য এসব কেন করছেন? আমাকে জড়াচ্ছেন কেন?
– কি করলাম?
– মানে কি?
– রাগ হবেন না তো। রাগলে আপনাকে ভালো দেখায় না। খাবারটা খান, মাথা ঠাণ্ডা করুন। তারপর বলছি।
পারমিতা নিজেকে সংযত করলো। রোদ খেতে খেতে বলল, টেস্টি না?
– হুম।
– আচ্ছা একটা কথা বলুন তো, আমার সঙ্গে আপনার বেশ অনেকদিনের পরিচয়। আমাকে কি আপনার ছ্যাঁচড়া, দুশ্চরিত্র লোক মনে হয়?
– না। সেরকম মনে হবার মতো আচরণ আপনি করেননি।
– করিনি। কারণ আমি সেরকম লোক নই। সেটা কি আলাদাভাবে আমাকে প্রমাণ করতে হবে?
পারমিতা মাথা ঝাঁকালো, না।
– তাহলে আপনি কি বিশ্বাস করতে পারেন?
– বিশ্বাস তো করি। করি বলেই আপনার গাড়িতে উঠে এখানে এসেছি।
– ওকে। তাহলে আমার ওপর বিশ্বাসটা রাখুন। আমি আপনার কোনো ক্ষতি করছি না।
পারমিতার ভালো লাগল রোদের এই ইমপ্রেস করার ব্যাপারটা। ছেলেটা তো দারুণ স্মার্ট!
পারমিতা বলল, কিন্তু একের পর এক আমার উপকার করছেন। এসবের কারণ কি?
– বারে, ক্ষতি করলে মানুষ জানতে চায় আমার এত বড় ক্ষতি কেন করলেন? এখন দেখছি উপকার করলেও জানতে চায়।
রোদের জোকস শুনে পারমিতা হাসলো না। রোদের মুখ হাসি। পারমিতা রোদের চোখে চোখ রেখে বললো, আপনি বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যাবেন না।
– যাচ্ছি না। উত্তর দিচ্ছি।
– কোথায়? একটার পর একটা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।
– ব্যাখ্যা থেকে উত্তর খুঁজে নিন না।
– আমাকে সিমপ্যাথি দেখাচ্ছেন না তো?
রোদ উত্তর দিলো না। নিষ্পলক চোখে পারমিতার দিকে তাকিয়ে রইলো। রোদের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারল না পারমিতা। মাথা নিচু করে রইল।
রোদ বলল, আপনার ওপর সিমপ্যাথি কেন দেখাবো?
– আমি গরীব বলে।
– গরীব বলে? টাকা পয়সা দিয়ে দিলেই হয়। তাকে ভালবাসলেও সেটা সিমপ্যাথি হয়ে যায়?
– কিহ!
পারমিতা হা হয়ে গেলো। চোখ বড়বড় করে রইল ও।
রোদ বলল, মানুষ কি মানুষকে ভালবাসতে পারে না? বন্ধু কি বন্ধুকে ভালবাসতে পারে না? আমি আপনার বন্ধু নই মানছি। কিন্তু শত্রুও নই। শত্রু না হলেই বন্ধু। এটা তো ধরে নিতেই পারেন।
– হয়েছে। আর আমাকে উল্টাপাল্টা ব্যাখ্যা দিতে হবে না। এতদিন যা যা ঘটেছে, সবকিছু আমি ভুলে যাচ্ছি। কিন্তু এর পর থেকে আপনি আর কোনোরকম পাগলামি করবেন না। আমাকে প্রমিস করুন।
– ওকে। করবো না। আপনি পারমিশন দিলে তারপর করবো।
পারমিতা এবার আর হাসি চেপে রাখতে পারল না। ফিক করে হেসে ফেলল। রোদ বলল, আপনার হাসিটা কিন্তু সুন্দর।
– অনেকদিন পর হাসলাম।
– তাই? তাহলে আরেকটু পাগলামি করাই যায়। কি বলেন?
পারমিতা আবারও হাসলো। আচ্ছা লোক তো। পারমিতা মনেমনে চেয়েছিল অনেক কঠিন আচরণ করবে। অনেক কঠিন হয়ে থাকবে। কিন্তু না, পারলো না সেটা করতে। রোদ এমন একটা মানুষ, যার সঙ্গে কঠিন হয়ে থাকাই যায় না। এতদিন অনেক চেষ্টা করে কঠিন আচরণ করলেও আজ পারলো না পারমিতা।
রোদ একটার পর একটা খাবার এগিয়ে দিচ্ছিল। পারমিতা অবাক হয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে। তার বিস্ময় রোদকে দেখাতে চাইছে না। রোদ বলল, আপনি বই পড়েন?
– হুম পড়ি তো। কেন?
– এমনি জানতে চাইলাম।
– ওহ আচ্ছা।
পারমিতা বলল, আপনি বই পড়েন?
– হুম। আমার খুবই পছন্দের একটা কাজ বই পড়া। ভীষণ ভালবাসি বই পড়তে।
– ছেলেরা বই পড়ে এমন খুব কম শুনেছি।
রোদ মুচকি হাসলো। বলল, আমার বাসায় লাইব্রেরি আছে। আমার ব্যক্তিগত লাইব্রেরি। আপনি চাইলে একদিন ঘুরে আসতে পারেন।
– থ্যাংকস। আমি চাইছি না।
রোদ হাসলো। ওয়েটার টেবিলের ওপর একটা কেক নিয়ে এসে রাখল। বার্থডে কেক। লাল রঙের অসম্ভব সুন্দর দেখতে কেকটা। সঙ্গে কিছু গোলাপ ফুল আর ক্যান্ডেল লাইট। টেবিল ডেকোরেশন করছে ওরা।
পারমিতা বলল, এসব কি!
বিস্ময়ে অনেক্ষণ চোখের পলক ফেলতে পারছিল না পারমিতা। রোদ বলল, জীবনে কখনো কাউকে সারপ্রাইজ করার সুযোগ পাইনি। কাউকে যখন পেয়েছি, সুযোগটা ছেড়ে দেবো কেন?
পারমিতা সোফা থেকে উঠে দাঁড়াল। টেবিলের সামনে এসে মাথায় হাত দিয়ে বলল, ওহ মাই গড! এসব কেন করলেন আপনি?
রোদ লাজুক হাসলো। পারমিতা দুই হাতে মুখ ঢেকে রেখেছে। এত লজ্জা লাগছে ওর। এত সংকোচ লাগছে। কি বলবে এই ছেলেটাকে ও?
রোদ বলল, হ্যাপি বার্থডে পারমিতা।
অনেক্ষণ পর মুখ থেকে হাত সরাল পারমিতা। ওর চোখ ছলছল করছে। রোদ এ বিষয়ে কিছু জানতে চাইলো না।
পারমিতা বলল, আমার বার্থডে আপনি কি করে জানলেন?
– সার্টিফিকেটে লেখা ছিল।
– ওখানে তো ভুয়া ডেট থাকে। আমারটা যে সত্যি সেটা কিভাবে জানলেন?
– আপনার ফেসবুক আইডি বলেছে।
– মাই গড! আপনি আমার আইডিও চেনেন?
রোদ মুচকি হেসে ওয়েটারকে বলল, এক্সকিউজ মি। ছবি তুলে দেবেন প্লিজ।
পারমিতাকে টেবিলে এসে দাঁড়াতে বলল রোদ। ওর পাশেই দাড়াল রোদ। পারমিতা স্তব্ধ হয়ে আছে।
রোদ বলল, আমি ছবিতে থাকলে অসুবিধা আছে?
পারমিতা রোদের দিকে তাকালো কিন্তু উত্তর দিলো না।
রোদ বলল, আপনার ফোনটা দিন।
পারমিতা ফোন এগিয়ে দিলো। রোদ পারমিতার ফোনটা ওয়েটারকে দিয়ে বলল, এই ফোনে তুলুন।
পারমিতা এবার আরও অবাক হলো। ছেলেটা এত ভালো কেন! অন্য কেউ হলে অবশ্যই নিজের ফোনে তুলতো ছবি। সে পারমিতার ফোনে তুলে দিচ্ছে যাতে পারমিতা যখন তখন ডিলিট করতে পারে। অদ্ভুত!
রোদ একটা ছুঁড়ি এগিয়ে দিলো পারমিতার দিকে। জ্বালিয়ে দিয়েছে মোমবাতি। এতটা চমৎকার ভাবে ওর জীবনে কখনোই জন্মদিন আসেনি। সুখে, আনন্দে বুক ভরে যাচ্ছে। চোখে চলে আসছে পানি। আবার অন্যদিকে প্রীতুলের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। পারমিতা নিজেকে সামলে নিলো। রোদের অনুরোধে কেক কাটতে শুরু করল ও।
রোদ হাততালি দিয়ে বলতে লাগল, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ..
পারমিতা কেক কাটার পর লজ্জায় পড়ে গেল। রোদকে তুলে খাওয়াতে হবে নাকি? না না, এটা পারবে না ও।
রোদ এক লিস কেক তুলে নিজেই পারমিতার মুখের সামনে ধরলো। এই প্রথম রোদ ওকে কিছু তুলে খাওয়াচ্ছে। পারমিতা এমন পরিস্থিতিতে কি করবে বুঝে উঠতে না পেরে বাধ্য হয়েই হা করলো। ওয়েটার বলল, স্যার একটু ধরে রাখুন। ছবি তুলছি।
হা করেই রইল পারমিতা। রোদ ওর মুখে কেক তুলে ধরে আছে। চোখাচোখি হয়েছে দুজনের। তাকিয়ে আছে একে অপরের দিকে। পারমিতা চাইলেও মাথা নিচু করতে পারছে না। আবার চাইলেই দৃষ্টি সরাতে পারছে না। রোদ এমনভাবে তাকিয়ে আছে, মনে হচ্ছে রোদ ওর সবচেয়ে আপনজন। বুকের ভেতর উথাল পাথাল ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। পারমিতার শরীর কাঁপছে, মৃদু কাঁপুনি টের পেলো রোদ। দ্রুত হাত সরিয়ে নিলো ও। তারপর টিস্যু পেপার দিয়ে হাত মুছতে মুছতে অন্যদিকে চলে গেল। ভাগ্যিস চলে গেছে। নয়তো ওকে কেক তুলে খাওয়াতে হতো। পারমিতা এটা পারতো না। ওর লজ্জায় মরে যাওয়ার মতো অবস্থা। চেয়ারে বসে মাথা নিচু করে কেকের দিকে তাকিয়ে রইল ও। ভীষণ সুন্দর কেকটা ওর দিকে তাকিয়ে যেন হাসছে আর বলছে, ভালবাসায় রঙিন হও পারমিতা।
চলবে..