পারমিতা” পর্ব-১৮

0
1830

#পারমিতা
পর্ব ১৮
_নীলাভ্র জহির

রোদ পারমিতার দিকে এগিয়ে আসছে। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছে পারমিতা। মুখে লাজুক হাসি মিশ্রিত। রোদের পরনে আজকে একটা কালো রঙের টি শার্ট। সাধারণ একটা ছেলের পোষাকেই রোদকে বেশি অসাধারণ দেখাচ্ছে। পারমিতা গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এলো। রোদ যখন ওর সামনে এলো তখনই একটা দমকা হাওয়া এসে দোলা দিয়ে গেলো দুজনের গায়ে। পারমিতার চুল উড়তে লাগল। রোদ হাসতে হাসতে বলল, সত্যিই তো আজকের সন্ধ্যাটা অপূর্ব। এখানে না এলে বুঝতেই পারতাম না। হাওয়া গায়ে লাগানোর সুযোগ দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ম্যাডাম।
ল্যাম্পপোস্টের আলোর নিচ দিয়ে ওরা হাঁটতে লাগল। সংসদের পাশের ফুটপাত দিয়ে বসার অভিনব জায়গা। সাড়ি সাড়ি বেঞ্চ বানানো। গাছের গোড়ায় গোল করে বাঁধানো শানের বেঞ্চি৷ লোকজন বসে আড্ডা দিচ্ছে। কোথাও আবার গান বাজনা হচ্ছে। কেউ বসে মানুষের পোর্টেট এঁকে দিচ্ছে। রোদ বলল, হঠাৎ এদিকে?
– এমনিই।
– মাঝেমাঝে ঘুরতে যাওয়া ভালো। ছুটির দিনকে ছুটির মতো না কাটাতে আর গুরুত্ব থাকলো কই। আচ্ছা পারমিতা, আমি কি বেশি কথা বলছি?
– না তো।
– আপনি কিন্তু তুলনামূলক কম কথা বলছেন। আমাকে লজ্জা পান? নাকি আপনি এমন স্বভাবেরই?
– ধরে নিন দুটোই।

একটা বকুল গাছের নিচে এসে পারমিতা বসতে চাইলো। রোদ ওকে বসতে বলল। গাছের নিচে অনেক গুলো বকুল ফুল বাতাসে ঝরে পড়েছে। রোদ ফুল কুড়াতে লাগল। পারমিতা মুগ্ধ হয়ে দেখছে রোদকে। এক হাতে ফুল কুড়িয়ে অন্য হাতের তালুতে জমাচ্ছে রোদ। হাতের মুঠো বকুল ফুল ফিয়ে ভর্তি হয়ে গেলে এগিয়ে গেল পারমিতার দিকে। হাত বাড়িয়ে ফুল গুলো দিয়ে বললো, নিন।
পারমিতা দুহাত পেতে রোদের কাছ থেকে ফুলগুলো নিলো। ধন্যবাদ জানালো ও। রোদ ওর পাশে বেঞ্চিতে বসে পড়ল। পারমিতার গা থেকে আজকে এক ধরনের মিষ্টি স্মেল আসছে। এমনিতে অফিসে ও পারফিউম লাগিয়ে আসে না। খুব হালকা একটা স্মেল। রোদ বলল, আপনার বান্ধবী আসেনি?
পারমিতা খানিকটা চমকে গেছে। বলল, এসেছিল। চলে গেছে।
– আপনাকে রেখে চলে গেলো?
– না আসলে…

পারমিতা আমতা আমতা করতে লাগল। রোদ বলল, বুঝেছি। নিশ্চয়ই হাজবেন্ডকে নিয়ে এসেছিল?
– হ্যাঁ। আপনি কিভাবে জানলেন?
– ধারণা করে বললাম। বিবাহিত মেয়েদের বেলায় এমন হয়। মনে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই।
পারমিতা কিছু বললো না। রোদ হয়তো সামান্তাকে বিবাহিত মেয়ে ভাবছে। আর প্রীতুলকেও হয়তো সামান্তারই ছেলে ভাবে। যেদিন সত্যিটা জানবে, সেদিন ওর প্রতিক্রিয়া কি হবে সেটা ভেবেই বুক কাঁপল পারমিতার। ও বলল, এক কাপ চা খাবো। কিছুক্ষণ আগেও এখানে চায়ের দোকানদার ছিল।
– তাহলে উঠি। একটা চায়ের দোকানে নিয়ে যাই আপনাকে।
– কোথায়?
– আসুন। গেলে দেখতে পাবেন।

হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর এলো ওরা। রাতের আলোয় পাশাপাশি হাঁটতে পারমিতার ভালো লাগছে। দীর্ঘ একাকীত্বের পরে জীবনে কাউকে সঙ্গী হিসেবে পেলে সবকিছুকেই অন্যরকম লাগতে শুরু করে। ওর জীবনটাকেও এখন অন্যরকম লাগছে। এ যেন নতুন করে ভ্রমর আসার মতো।
রোদ গাড়ির সামনে এসে দরজা খুলে দিলো। পারমিতা বলল, গাড়িতে যেতে হবে? ওই তো ওখানেই চা পাওয়া যায়।
– আমার সঙ্গে যেতে আপত্তি আছে?
– না নেই।
– তাহলে আসুন।

পারমিতা গাড়িতে উঠে বসল। আজকে ড্রাইভার আসেনি। রোদ একাই গাড়ি নিয়ে এসেছে। পারমিতা রোদের পাশের সিটে বসলো। গাড়ি ড্রাইভ করছে রোদ। পারমিতা হঠাৎ করে অন্যমনস্ক হয়ে পড়লো। রাসিফের কথা মনে পড়ল ওর।
একদিন রাসিফের সঙ্গে লং ড্রাইভে বের হয়েছিল ও। রাসিফের গাড়ি নেই। অফিসের গাড়ি নিয়ে এসেছিল একদিনের জন্য। ঢাকা থেকে মাওয়া হাইওয়েতে ড্রাইভ করতে গিয়েছিল ওরা। রাসিফ পাশের সিটে বসে কতরকম দুষ্টুমি করছিল। বারবার পারমিতার গালে চুমু খেয়ে বলছিল, এত সফট কেন এটা? কেক খাচ্ছি মনে হচ্ছে।
পারমিতা রেগে বলত, চুপচাপ গাড়ি চালাও। মনযোগ দাও রাস্তায়, আমার দিকে নয়।
রাসিফ হাসতে হাসতে বলত, পাশের সিটে এত ইয়াম্মি একটা কেক বসে থাকলে কি চুপচাপ গাড়ি চালানো যায়? কেক খেতে ইচ্ছে করবে না?
পারমিতা রাসিফের গায়ে কিল ঘুষি মারতো। কতই সুন্দর ছিল ওদের সম্পর্ক। সবাই হিংসে করতো ওদের। এই সুন্দর সম্পর্কটা কেন বেশিদিন স্থায়ী হল না? কেন সবকিছু হঠাৎ চেঞ্জ হয়ে গেল। কেন?
পারমিতার মুড সুয়িং হচ্ছে। বাইরে তাকিয়ে একদৃষ্টে রাস্তা দেখছে ও। একটুও নড়াচড়া করছে না দেখে রোদ বলল, হ্যালো। কি হল?
– হুম।
– চুপচাপ যে?
– এমনিই।
পারমিতার মন খারাপ ব্যাপারটা রোদও ধরতে পেরেছে। কিন্তু বেশি কিছু জানতে চাইলো না রোদ। একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি পার্কিং করিয়ে পারমিতাকে নামতে বলল।
রেস্টুরেন্টের ভেতরে গিয়ে বসল ওরা। চারপাশ ঝলমল করছে। শার্ট প্যান্ট পরিহিত মেয়েদেরকে দেখলেই পারমিতার কেমন যেন লাগে। নিজেকে সেখানে তুচ্ছ মনে হয়। মন খারাপ হয়ে যায়। রোদের কাছে নিজেকে বেমানান লাগে। সবকিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিলো পারমিতা। রোদ ওকে নিয়ে একটা টেবিলে এসে বসলো। পারমিতা পুরো মুহুর্ত একটা কথাও বললো না। মৃদু সুরে গান বাজছে। গান শুনতে শুনতে চা খেতে খেতে ওর মন ধীরেধীরে ভালো হতে শুরু করলো। কিন্তু পরক্ষণেই আবারও মন খারাপ হয়ে যেতে লাগল। মুড সুয়িং এত খারাপ একটা বিষয়, একবার হলে আর সহজে ভালো হতে চায় না।
পারমিতা মুখ ফসকে বলেই ফেলল, সরি। আমার মুড সুয়িং হচ্ছে। কিছু মনে করবেন না।
– আরে ইটস ওকে। আমাকে আগে বললে কি হতো?
– বিরক্ত করতে চাইনি। আমি বাসায় যেতে পারি?
– শিওর। আমি নামিয়ে দিয়ে আসবো বাসায়?
– তার দরকার নেই।
– পারমিতা..
– হুম।
– আমি কি মন ভালো করে দেয়ার চেষ্টা করতে পারি?

পারমিতা রোদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। একটুও পলক ফেলতে পারলো না। রোদের মুখটা বাচ্চাদের মুখের মতো নিষ্পাপ। সাবলীল মায়াবি চেহারা ওর। রোদকে যেকোনো মেয়েই ভালবাসার বন্ধনে ফেলতে পাগল হয়ে থাকার কথা। সেই রোদ তার জন্য এত সময় দিচ্ছে কথাটা ভাবতেই পারেনা ও।
রোদ ওয়েটারকে ডেকে একটা মিউজিক দিতে অনুরোধ করলো। রোদে অনুরোধের মিউজিক বাজালো ওয়েটার। মিউজিকটা সুন্দর। পারমিতার মন ভালো করার এই চেষ্টা খুব একটা সফল হলো না।
রোদ বলল, উঠুন। বাইরে যাবো।

গাড়ি পার্কিংয়ে রেখে ওরা রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগলো। অনেক্ষণ কেউ কোনো কথা না বলে হেঁটেই গেল। আশেপাশে আবাসিক এলাকা। রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাঁকা। হাঁটতে ভালোই লাগছে। রোদ চুপচাপ দেখে পারমিতা বলল, আপনাকে কি অযথা বিরক্ত করছি?
– আমি বিরক্ত হচ্ছি মনে হচ্ছে?
– না মানে চুপ করে আছেন তো।
– চুপ করে তো আপনিও আছেন। তারমানে কি আপনি বিরক্ত?
– আরে না না।
হেসে ফেলল পারমিতা। রাস্তার পাশের একটা আইসক্রিমের দোকান থেকে রোদ পারমিতাকে আইসক্রিম কিনে দিলো। কোন আইসক্রিম খাবে সেটাও প্রশ্ন করে জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়েছে। এতটা কেয়ারিং একটা মানুষকে ঠকাচ্ছে ভেবে পারমিতার কষ্ট হচ্ছিল। তবে মন ভালো হয়ে গেছে ওর।
দুজনে বহুদূর হেঁটে এসে আবারও পিছনে ফিরলো। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলো গাড়ির কাছে। গাড়ির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আরও কিছুক্ষণ গল্প করলো ওরা। গল্পে গল্পে পারমিতার মন ভালো হয়ে গেছে। কখন যে রাত দশটা বেজে গেছে খেয়ালই হয়নি ওর। সামান্তা কল দিয়ে যখন জানালো ওরা বাসায় পৌঁছে গেছে, তখন হুশ ফিরল।
পারমিতা বলল, আমি বাসায় যাবো। সারে এগারোটায় বাসার গেট বন্ধ করে ফেলবে।
– সারে এগারোটা বাজতে অনেক দেরি।
– এখন রওনা দেয়া দরকার।
– ওকে। চলুন। আজকে কি খুব বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে?
পারমিতা রোদের মুখের দিকে তাকালো। সত্যিটা হচ্ছে ওর একদমই বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না। মন চাইছে সারা রাত রোদের সঙ্গে গল্প করে কাটিয়ে দিতে। এভাবে রাস্তায় হাঁটতে, গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। কিন্তু দশটা বেজেছে, আর কতক্ষণ এভাবে থাকা যায়? তাছাড়া লজ্জারও একটা ব্যাপার আছে।
পারমিতা উত্তর দিলো না। ওর নির্দেশনা অনুযায়ী রোদ ওকে বাসার সামনে নিয়ে এলো। গেটের সামনে আসতেই দারোয়ান দৌড়ে এসে দেখার চেষ্টা করলো কে এসেছে।
পারমিতা বলল, মামা উনি আমার গেস্ট।
দারোয়ান কিছু বললো না। কিছুক্ষণ এদিক সেদিক তাকিয়ে কেউ আছে কিনা দেখার চেষ্টা করলো। বলল, আপা গাড়ি তো এলাউ না ভেতরে। গেস্টের গাড়ি বাইরে রাখতে হবে।
রোদ বলল, আমি ভেতরে যাবো না। আপনি তাহলে যান।
পারমিতা অনুরোধ করে বলল, প্লিজ এক কাপ চা খেয়ে যাবেন। আমার বাসার নিচ থেকে চলে যাবেন সেটা আমার ভালো লাগবে না।
– আপনি ব্যাচেলর থাকেন না?
– না। ফ্ল্যাট নিয়ে থাকি। কোনো অসুবিধা নেই। গাড়ি বাইরে থাকুক।

পারমিতা দারসয়ানকে বলল, গাড়িটা দেখে রাখেন। উনি একটু পরেই চলে যাবেন।
– এগারোটা তো বাজে আপা। গেট বন্ধ করে দেবো সারে এগারো টায়।
– আজকে একটু দেরিতে বন্ধ করলে সমস্যা কোথায়? উনি বেশিক্ষণ দেরি করবেন না। এক্ষুনি চলে যাবেন। ততক্ষণ গাড়িটা দেখে রাখুন।

পারমিতা রোদকে নিয়ে বাসায় চলে এলো। সামান্তা নেই, ঘর অগোছালো হয়ে আছে। রোদ ভেতরে ঢুকে আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। পারমিতা ইতস্তত বোধ করছে স্পষ্ট বুঝতে পারলো রোদ।
ও বলল, ব্যস্ত হবেন না। আমি এসে ঝামেলাই করে ফেললাম মনে হচ্ছে।
– কিসের ঝামেলা? যে মানুষটা আমার এত বড় উপকার করেছে তাকে এক কাপ চা খাওয়াবো না? ঝামেলা হয়ে যাবে বুঝি?
– শুধু উপকার? মানুষটা আর কিছুই করছে না?

রোদের প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসলো পারমিতা। ও দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে চুলায় পানি তুলে দিলো। রোদ বসে আছে। পারমিতা বলল, সবকিছু এলোমেলো। কিছু মনে করবেন না।
হাসলো রোদ। ওর এই এলোমেলো ঘরটাকেই ভালো লাগছে। সবকিছুতে একটা মায়া জড়িয়ে আছে। ছোট্ট ডাইনিং এরিয়া। একটা ডাইনিং টেবিল আর দু একটা ছোট তাক ভর্তি জিনিসপত্র। আর তেমন কিছু নেই। দূরে একটা বাচ্চার খেলনা পড়ে আছে।
রোদ বসে রইলো। চা ও বিস্কুট নিয়ে ছুটে এলো পারমিতা। ঘরে কিছু শুকনো খাবার ছিল প্রীতুলের। সেখান থেকে পিরিচে করে কিছু খাবার এনে টেবিলে রাখলো।
রোদ বলল, এত ব্যস্ত হচ্ছেন কেন?
– গেট আটকিয়ে ফেলবে।
রোদ ঘড়ি দেখে বলল, আরও পনেরো মিনিট আছে। এরমধ্যে চা খাওয়া হয়ে যাবে।
– ধীরেসুস্থে খান। সমস্যা নেই। মাঝেমাঝে বারোটার দিকে গেট বন্ধ হয়।

রোদ একটা বিস্কুট, একটা মাল্টা খেয়ে চায়ে চুমুক দিলো। পারমিতাকে বলল, আপনি ভালো চা বানান তো।
– কারো হাতে চা খেলে প্রশংসা করতেই হবে নাকি? এটা কি নিয়ম?
– নিয়মের বাইরে বলেছি। চা আসলেই ভালো হয়েছে। আমার এরকম একজন চা বানানো লোক দরকার।
– লোক? খুঁজে দেবো?
রোদ হেসে বলল, হ্যাঁ। দিলে ভালো হয়। সকাল, দুপুর, মধ্যরাত যখন তখন এরকম চা বানিয়ে খাওয়াবে।
– বেতন কত?
– সবকিছু বেতনে পরিমাপ করা যায় পারমিতা?

পারমিতা লাজুক হাসলো। আর উত্তর দিলো না ও। রোদ বলল, একা একটা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকেন?
– না। আমার বান্ধবী ছিল। ও চলে গেছে।
– চলে গেছে কেন?
– ওর সামনে বিয়ে। তাই..
– আপনি কবে করছেন?
– কি?
– বিয়ে…

পারমিতার মুখ কালো হয়ে গেলো। সে যদি অবিবাহিত হতো, আজকে আনন্দের সঙ্গে উত্তর দিতো, বিয়ে করতেই হবে বুঝি? সেখানে আজকে অন্ধকার মুখে বলল, বিয়ে করবো না।
রোদ কিছু একটা বলতে গিয়েও বললো না। পারমিতাকর আজকে মুড সুয়িং। তারমধ্যে এসব নিয়ে কথা না বলাই ভালো। রোদ বলল, আমি তাহলে আসি।
পারমিতা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো। ভদ্রতার সঙ্গে বলল, দিনের বেলা একসময় দাওয়াত রইলো। রাত হয়েছে তো। গেট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই খাবার খেয়েও যেতে বলতে পারছি না।
রোদ বলল, আপনি অনেক সরল মনের মানুষ পারমিতা। আপনার ভেতর কোনো লুকোচাপা, প্যাঁচগোছ নেই।
পারমিতা একপলক চোখ তুলে তাকালো। রোদ উঠে দাঁড়াল চলে যাওয়ার জন্য। একটু একটু করে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ও। পারমিতা পেছন থেকে গুটি গুটি পায়ে রোদের কাছে এলো। রোদ পারমিতার দিকে ফিরলো। বলল, আসি তাহলে।
– আই এম সরি।
– কেন?
পারমিতা চুপ করে রইলো। রোদ অবাক হয়ে গেছে। হঠাৎ সরি কেন বলছে ও? মন খারাপ বলে? পারমিতাকে একটা আদুরে ছোট্ট বাচ্চা মনে হচ্ছে। বাচ্চারা যেমন মুখ কালো করে থাকে, সেরকম। রোদ আলতো করে পারমিতার বাহুতে হাত রাখতেই কি হয়ে গেল বুঝে উঠতে পারল না দুজনের কেউই। উভয়ের দেহে এক ধরনের বিদ্যুৎ খেলে গেলো। কয়েক মুহুর্তে সময় লাগল সবকিছু স্থান্ত হতে। পারমিতা বুঝতে পারল সে রোদের বুকে। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে। দুজনেই একসঙ্গে কখন উভয়কে জড়িয়ে ধরেছে বুঝতে পারেনি কেউই। কিন্তু বুঝতে পারার পরও কেউই ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা না করে হরং জড়িয়ে ধরেই রইল। যেন এরমধ্যে সব ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাচ্ছে রোদ। আর সব কষ্ট থেকে বেরিয়ে আসছে পারমিতা।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here