পারমিতা” পর্ব-৫

0
2210

#পারমিতা
পর্ব ৫
_নীলাভ্র জহির

রোদ সুদর্শন একজন যুবক। যেমন সুন্দর তেমনই স্মার্ট। ও কোথায় কাজ করে সেটা জানতে ভীষণ ইচ্ছে করছিল পারমিতার। তথাপি ওর পাশে চুপচাপ বসে রইল। কিছুক্ষণ আগে ওর সঙ্গে যে অন্যায়টা হতে যাচ্ছিল সেই ভেবে ওর অস্বস্তি হচ্ছে থেকে থেকে।
রোদ বলল, আপনি ভিজবেন?
চমকে উঠলো পারমিতা।
রোদ বলল, বৃষ্টিতে। ভিজবেন?
রোদ ভ্রু নাচিয়ে ওকে প্রশ্নটা করল। পারমিতা কি উত্তর দেবে ভেবে পেলো না। ওর মানসিক অবস্থা ভালো নেই। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, ওর খুব ইচ্ছে করছে এই বৃষ্টিতে ভিজতে। আকাশের সাথে ওরও খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
রোদ বলল, এতকিছু ভাববেন না তো। যদি মন চায় তাহলে আসুন। আর না চাইলে থাক।
পারমিতা অবাক চোখে রোদের দিকে তাকিয়ে রইল। রোদ ওর চোখে দেখতে পেলো শঙ্কা। এখনো শঙ্কিত মুখে চেয়ে আছে পারমিতা। রোদ ওকে সাহস জোগানোর চেষ্টা করার জন্য বলল, আপনার কি এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না?
– কি?
– আমাকে? আমি মিথ্যে বলেছি কিনা সেটা ভাবছেন?
– না মানে কিসের কথা বলছেন বুঝতে পারছি না।
– এইযে সাইমুন খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলবো ফলে আপনার বিপদ হতে পারে। কিন্তু আমি আপনাকে পরে আর চিনবো না, সেটা ভাবছেন?
– না না। আপনাকে আমার সেরকম মনে হয় নি।
– তাহলে আমাকে বিশ্বাস করা যায়?
– হুম যায়।
– থ্যাংক ইউ।

সুইমিংপুলের আশেপাশে কেউ নেই। লোকজন সব ভেতরে। রাত বেড়েছে। নিঝুম রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে দিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। থইথই করছে চারদিক। জলের স্রোত একদিকে গড়িয়ে নেমে যাচ্ছে। পারমিতা আশেপাশে খেয়াল করে বলল, আপনি ভিজবেন না?
– হ্যাঁ ভিজবো। আমি মূলত বৃষ্টিতে ভেজার জন্যই বের হয়েছিলাম। করিডোরে আপনাকে দেখতে পেলাম।
– ও।
– তাহলে আপনি বসুন। আমি ভিজি।

রোদ উঠে গেল ভেজার জন্য। বসে রইল পারমিতা। প্রীতুলের কথা মনে পড়ে গেল। ছেলেটা রাতে কান্নাকাটি করে কিনা কে জানে। সামান্তা ওকে শান্ত করতে পারবে তো? চাকরিটা যখন চলেই যাবে তখন আর এখানে থেকে লাভ নেই। আগামীকাল এখান থেকে চলে যাবে পারমিতা। রোদ ওকে চাকরির ব্যবস্থা করে দিক বা না দিক তাতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু রোদের কথা শোনার পর পারমিতার মাঝে এক ধরণের বোধ জন্মেছে। তৌশিক বা সাইমুন খানের মতো ওরকম দুশ্চরিত্র লোকের আন্ডারে কাজ করার আগ্রহ মরে গেছে ওর। ওরা লোক ভালো নয়। রোদ যদি কোনো পদক্ষেপ নাও নেয় তারপরও কোনো না কোনোভাবে তৌশিক ওকে বিপদে ফেলতে পারে। ওই অফিসে কালকেই কাজ ছেড়ে দেবে পারমিতা। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে একটা চাকরি নিশ্চয়ই পেয়ে যাবে।

পারমিতা রোদের দিকে তাকালো। দূরে দাঁড়িয়ে পাগলের মতো ভিজছে রোদ। যেন তার জীবন থেকে সব দুঃখ ভাসিয়ে দিচ্ছে। পবিত্র হয়ে যাচ্ছে সে। ওর দেখাদেখি পারমিতারও ইচ্ছে করছে ভিজতে। কত তৃপ্তি নিয়েই না বৃষ্টিতে গোসল করা যায়। সেটা রোদকে দেখেই মনে হচ্ছে।
রোদ সুইমিংপুলে ঝাপিয়ে পড়ল। সাতার কাটলো কিছুক্ষণ। নীল জলে ওর ফর্সা দেহ অসম্ভব সুন্দর লাগছিল। সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো পারমিতা।
রোদ কিছুক্ষণ সাতার কেটে উঠে এসে বলল, ভিজবেন?
– না।
– ওকে। আমি রুমে যাবো এখন। আপনি?
– আমিও যাই।

পারমিতা উঠে দাড়াল। রোদ ভেজা গায়ে হোটেলের ভেতর ঢুকলো। পারমিতা ভিজলে কখনোই এভাবে যেতে পারতো না। সংকোচে মরে যেতো নিশ্চয়ই।
পারমিতাকে ওকে রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে বিদায় নিলো রোদ। পারমিতাকে বলল, কেউ ডাকলেও দরজা খুলবেন না। আমি যা করার করবো। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।
– আপনাকে..
পারমিতার কথার মাঝখানে ওকে থামিয়ে দিলো রোদ। বলল- ধন্যবাদ তাই তো? লাগবে না। আমি আসছি। ওহ হ্যাঁ, যদি কোনো দরকার হয়… আমার নাম্বারটা রাখুন।
পারমিতা মোবাইল নিয়ে দেখল তৌশিক দুই বার কল দিয়েছে। ওর মুখ অন্ধকার হয়ে উঠলো। রোদ জানতে চাইলো, কি হয়েছে?
– উনি কল দিয়েছে দুইবার।
– এটা নিয়ে ভয় পাবেন না। আমার নাম্বারটা রাখুন। কোনো ঝামেলা হলে একটা কল বা এসএমএস দিলেই হবে।
– বলুন।
– জিরো ওয়ান…

ফোন নাম্বার দিয়ে বিদায় নিলো রোদ। দরজা বন্ধ করে বিছানার ওপর এসে বসলো পারমিতা। এত সুন্দর হোটেলের রুমটাকেও ওর এখন অসহ্য লাগছে। ইচ্ছে করছে ছুটে এখান থেকে পালিয়ে যাই।
এখন রাত একটা বাজে। সামান্তা ও প্রীতুল হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। পারমিতা অনেক্ষণ বিছানায় এপাশ ওপাশ করে ঘুমিয়ে পড়ল।

পরেরদিন সকালবেলা তৌশিকের কল পেয়ে ঘুম ভাংলো পারমিতার। পারমিতা ফোন রিসিভ করে নি। ও চুপচাপ শুয়ে রইলো। একটা ওয়েটার এসে নাস্তা কি খাবে সেটা জিজ্ঞেস করলো পারমিতাকে। পারমিতার কিছু খাওয়ার মুড নেই। কিন্তু অনেক খিদে লেগেছে। তাই দুটো পরোটা ও ডিমের ওমলেট দিতে বললো।
নাস্তা করে গুম মেরে বসে রইল পারমিতা। কি করবে বুঝতে পারছে না। স্যারের সামনে যাবে কি না সেটা নিয়ে দ্বিধায় ভুগছে। একবার রোদকে কল দিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবে কিনা তাও বুঝতে পারছে না। সামান্তাকে কল দিয়ে প্রীতুলের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ফোন রেখে দিলো পারমিতা। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর সিদ্ধান্ত নিলো আগে রোদকে ফোনে জানাবে সে চলে যেতে চায়। তারপর সোজা চলে যাবে। পরেরদিন অফিসে গিয়ে চাকরি ছাড়ার দরখাস্ত জমা দেবে সে।
রোদকে একবার কল দিলে সে ধরলো না। দ্বিতীয়বার কল হলে রিসিভ করে বলল, হ্যালো। সরি ওয়াশরুমে ছিলাম। কে বলছেন?
– আমি পারমিতা।
– পারমিতা কে?
– গতরাতে..
– ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ চিনতে পেরেছি। আচ্ছা আপনি কোথায়? নাস্তা করেছেন?
– হ্যাঁ করেছি। শুনুন, আমি বাসায় চলে যাচ্ছি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি চাকরিটা আর থাকুক বা না থাকু তাতে যায় আসে না। আমিই চাকরিটা ছেড়ে দিচ্ছি।
– আচ্ছা। এসব নিয়ে সামনাসামনি কথা হবে। আমি এখনো নাস্তা করি নি। ক্যান্টিনে আসুন। চা খেতে খেতে কথা বলি।

পারমিতা চুপ করে রইল।
রোদ বলল, হ্যালো। কোনো সমস্যা?
– না। ওকে আসতেছি।

টেবিলে মুখোমুখি হয়ে বসলো রোদ ও পারমিতা। রোদ পরোটা খেলেও পারমিতা অস্বস্তিতে ভুগছে। যদি তৌশিকের সাথে দেখা হয়ে যায় তাহলে ঝামেলাটা আরও বাড়বে। ওর ভালো লাগছে না কিছুই। মাস প্রায় শেষ হতে চললো, বেতন পেতে আরও সপ্তাহ খানেক বাকি। এদিকে হাতে তেমন টাকা পয়সা নেই। এই সময় চাকরি ছাড়লে ভোগান্তিতেও পড়তে হবে। এতকিছু ভেবে আর ভালো লাগছে না তার।

রোদ বলল, এখন বলুন তো কি সমস্যা?
পারমিতা বলল, আমি চাকরিটা আর করছি না।
– খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। আপনাকে তো বলেছি ওটা আর করারও দরকার নেই। আমি আপনাকে এসএমএস করে একটা মেইল এড্রেস পাঠিয়ে দিচ্ছি। আপনি ওই মেইলে আপনার সিভি পাঠাবেন।
– আচ্ছা। থ্যাংক ইউ। আমি এখন বাসায় চলে যেতে যাচ্ছি।
– কেন? আজকের প্রোগ্রামে থাকুন। আজকে সাংবাদিকরা আসবে। সবার সামনে আপনি মুখোশ উন্মোচন করে দেবেন। পারবেন না?
– না। আমি ওসব ঝামেলায় যেতে চাই না। ওরা অনেক প্রভাবশালী।
– সেকি। রাতেই তো বললেন আপনি চান না আর কোনো মেয়েকে এমন বিপদের মধ্যে দিয়ে যেতে হোক। আবার এখন অন্য কথা বলছেন।

পারমিতা কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইল। ও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কি করবে।
রোদ বলল, শুনুন। আপনি সরাসরি যখন সত্যিটা তুলে আনবেন তখন তৌশিকের চাকরি তো যাবেই পাশাপাশি ওরা আর কখনো এ ধরনের অন্যায় করার সুযোগ পাবে না।
– কিন্তু যদি তৌশিক আমার কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে?
– দুর্নীতিবাজদের খেলা আজীবন চলবে। এসব ভয় পেয়ে চুপ করে থাকলে আপনার মতো আরও হাজারও মেয়েকে জীবন নিয়ে হুমকিতে পড়তে হবে। বুঝতে পেরেছেন?
– হুম।
– এইযে গরম গরম এক কাপ চা খান। তারপর সিদ্ধান্ত নেন কি করবেন। আপনি প্রেসের সামনে সবকিছু খুলে বললে অন্যান্য কোম্পানিরাও সচেতন হয়ে যাবে।
– ভাবছি।

পারমিতা গম্ভীর মুখে বসে ভাবতে লাগল। এমন সময় কল দিলো সামান্তা। প্রীতুল নাকি কাল সারাদিনে একবারও কান্না করেনি। রাতে ভালোভাবে ঘুমিয়েছে। মায়ের কথা বলে একটুও জ্বালাতন করেনি। সব শুনে পারমিতা ওকে ধন্যবাদ জানালো। সামান্তা বলল, তোর কি হয়েছে পারু?
– কিছু না রে।
– আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে। কেমন যেন লাগতেছে তোর কথা, গলা।

পারমিতা অবাক হলো। সামান্তার কাছে কখনো কিছু লুকানো যায় না। মায়েরা যেমন মেয়েদের সব ব্যাপার ধরতে পারেন, সামান্তাও কিভাবে যেন পারমিতার ব্যাপার গুলো বুঝে যায়। কণ্ঠ শুনলেই বুঝতে পারে পারমিতা একটা বিপদে আছে।
পারমিতার মনে হল সামান্তাকেই সবকিছু খুলে বলা উচিৎ। ও নিশ্চয়ই ভালো কোনো পরামর্শ দেবে। তাই সামান্তাকে সবকিছু খুলে বললো পারমিতা। সামান্তা সব শুনে বলল, আচ্ছা শোন। তুই ওই রোদ না কি নাম বললি লোকটা, ওনার কথাই শোন। আমার মনে হচ্ছে ভালো কিছু হবে। উনি তোকে চাকরি দেবে কিনা জানিনা। কিন্তু এটলিস্ট আর কেউ এভাবে ফাঁদে পড়বে না। তুই টেনশন করিস না। চাকরি আরেকটা ঠিকই ম্যানেজ হয়ে যাবে।
– কিন্তু এই মাসের বেতন এখনো পাইনি। বাকি মাসটা কীভাবে..
– তুই ভাবিস না। আমি আছি না? আমি থাকতে তোর এত চিন্তা কিসের পারু?

পারমিতার চোখে পানি এসে গেল। ও বলল, তুই মায়ের মতো ভালো রে। তুই খুব ভালো।
– হইছে এখন গুণগান গাইতে হবে না। তুই ওনার কথামতো কাজ কর। লোকটাকে আমার ভালো মনে হচ্ছে।

পারমিতার স্বস্তি হচ্ছে এখন। ফোন রেখে রোদের সামনে এসে বসলো ও। রোদ বলল, সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
– জি।
– কি ভাবলেন?
– আমি ওদের বিরুদ্ধে কথা বলবো।
পারমিতার তেজী গলা শুনে চমকে উঠলো রোদ। এই মেয়ের ভেতর এত তেজ ছিল সেটা ওর জানা ছিল না। ও অবাক হয়ে বলল, গুড, ভেরি গুড। চা খান। ঠান্ডা হয়ে গেল।
পারমিতা সহজ বোধ করলো। চা নিয়ে চুমুক দিলো। রোদ নাস্তা খাওয়া শেষ করে এখন চা খাচ্ছে। এমন সময় মোবাইলে টুং করে এসএমএস এলো রোদের। রোদ ফোন বের করে মেসেজ দেখে হাসলো।
তারপর দ্রুত সেটা রিপ্লাই করে দিলো। মুহুর্তেই কল এলো মোবাইলে। পারমিতা ইচ্ছা না করলেও ওর চোখ চলে গেল মোবাইলের স্ক্রিনে। একটা সুন্দরী মেয়ের অপূর্ব একটা ছবি ভাসছে। ইনকামিং কল। রোদ কল রিসিভ করতে করতে পারমিতাকে বলল, ওয়ান মিনিট প্লিজ।
রোদ ফোনে কথা বলার জন্য উঠে গেলো। পারমিতা একটা নিশ্বাস ফেলে বসে রইল। হায় জীবন! ওরও ইচ্ছে করছে ফোনে কথা বলতে। মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে এসএমএস করতে, কারও সাথে চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত থাকতে। কেউ যদি ফোন করে খোঁজ নিতো। কিন্তু কথা বলার মতো ওর কোনো মানুষ নাই। জীবন ওকে ভীষণ একা করে দিয়েছে।
পারমিতা আর চা খেতে পারলো না। রোদ অনেক্ষণ ধরে ফোনে কথা বলার পর এসে বলল, সরি।
– ইটস ওকে। আজকে প্রোগ্রাম কখন শুরু হবে?
– তিনটা থেকে।
– ওহ গড!
পারমিতা আঁতকে উঠে বলল, আমার আজকে প্রেজেন্টেশন আছে। আমি কীভাবে দেবো ওটা!
– কেন? সময়মত প্রেজেন্টেশন দেবেন। আপনার প্রেজেন্টেশন অন্যকেউ দেয়ার মতো কেউ আছে?
– না। শুধু তিনজন এসেছি আমরা।
– তাহলে আপনিই দেবেন। প্রেজেন্টেশন দেয়ার পর সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আপনার অভিযোগ গুলো তুলে ধরবেন। পারবেন?

পারমিতা চোখ বড়বড় করে ফেললো। রোদ ওর দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে রইল যে, না করার সাহস হয় না। কিন্তু সত্যিই কী এত বড় বড় কোম্পানির সামনে সেই অভিযোগ গুলো তুলে ধরতে পারবে পারমিতা? এতটা সাহস কি আছে ওর? মিডিয়ার সামনে ওসব বলতে পারবে তো? পারমিতা ঢোক গিললো। ওর দ্রুত হৃদ স্পন্দিত হচ্ছে।
রোদ বলল, পারমিতা আপনাকে পারতেই হবে। আপনি না বললে আরও অনেক মেয়ে এই ঝামেলায় পড়বে। আপনি পারবেন।
পারমিতা দ্রুত শ্বাস নিতে নিতে বলল, আমার ভয় করছে!

চলবে..

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1356930984688667&id=439669216414853

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here